৩১ই আগস্ট, ১৯৯৭, ফ্রান্সের প্যারিসে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ব্রিটেনের মানুষের কাছে "Princess of Heart" হিসেবে পরিচিত এই সুন্দরী রাজবধু।
অফিসিয়াল স্টোরি এমনটি হলেও ব্রিটিশ প্রচারমাধ্যমগুলোর জরিপে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে, It was not an ordinary accident. It was a murder.
এখন প্রশ্ন হল, কেন কেউ ডায়না'কে খুন করবে? .... আসুন কিছু পেছনের ঘটনা আলোচনা করি। অবাক হতে পারেন। অবাক হবার যথেষ্ট কারণ আছে।
শুরু করি ডায়ানা'কে দিয়ে।
>> ১ই জুলাই, ১৯৬১ সালে এক aristocratic পরিবারে ডায়না জন্মগ্রহন করে। তাঁর বাবার নাম John Spencer
সেই হিসেবে ডায়ানার জন্মসুত্রে প্রাপ্ত নাম ডায়ানা স্পেনসার।
>> Spencer পরিবারের সাথে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও গভীর।
যেমন ডায়ানার নামকরণ করেছিলেন তাঁদের ফ্যামিলির ২২০ বছর আগের এক সদস্য Diana Spencer, Duchess of Bedford (1710 –1735) এর নামের সাথে মিল রেখে। ২২০ বছর আগের সেই লেডি ডায়ানা তখনকার Prince of Wales, Frederick- কে বিয়ে করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছিলো। পরে Lord John Russell কে বিয়ে করার পর নাম বদলে রেখেছিলো Diana Russell.
কাকতালীয়ভাবে ১৯৬১ সালে জন্ম নেয়া ডায়ানার বিয়ে হয় এখনকার Princess of wales, চার্লসের সাথে।
>> ডায়ানার মা বাবার ডিভোর্স হয় যখন তাঁর বয়স ৮ বছর। ডায়ানার দুই বোন ও একভাই আছে। ডায়নার ছোটবেলা কাটে নিচের এই বাড়িটিতে।
এটি Norfolk, England –এর Sandringham House
(বাড়িটির মালিক খোদ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ) ডায়ানার পরিবার বাড়িটিতে ভাড়া থাকতো।
এখানে ডায়ানার ছোটবেলা কাটে।
তাঁর ছেলেবেলার খেলার সাথী’দের ভেতর ছিলো খোদ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছোট দুই পুত্র Andrew(জন্মঃ 1964) এবং Edward (জন্মঃ 1960) ….
এরা বয়সে ডায়ানার সমসাময়িক। একারনেই খেলার সাথী।
ডায়নার ভবিষ্যৎ স্বামী, (অর্থাৎ Edward আর Andrew এর বড় ভাই), -- Prince Charles (জন্মঃ 1948) ডায়ানার চাইতে বয়সে ১৩ বছরের বড়।
>> লেখাপড়ায় ভালো ছিলো না ডায়ানা। ও-লেভেল পরীক্ষায় দুইবার ফেল করেছিলো। তবে আগ্রহ ছিলো মিউজিক আর ব্যালে নাচে।
>> ডায়ানার বড় বোন Sarah Spencer(জন্মঃ ১৯৫৫) প্রেম করত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বড় ছেলে প্রিন্স চার্লসের সাথে।
(হা, ঠিকই ধরেছেন। ডায়ানার ভবিষ্যৎ স্বামী, প্রিন্স চার্লস)
১৯৭৭ সাল থেকে Sarah এবং চার্লসের প্রেম চলতে থাকে।
ডায়ানার সাথে প্রিন্স চার্লসের প্রথম যখন হয় দেখাশোনা হয় ১৯৭৭ সালে, কার্যত তখন চার্লস তাঁর বড় বোনের প্রেমিক।
ডায়ানার পরিবার এক রকম নিশ্চিত ছিলো যে চার্লস সাথে সারাহ'র বিয়ে হবে।
>> চার্লস ছিলো প্লে বয়। তাঁর কেবল তখন সারাহ নয়, আরো সম্পর্ক ছিলো ক্যামিলা পার্কারের সাথে।
( আরো কত মেয়ের সাথে গোপনে সম্পর্ক ছিলো, তা অজানা। ক্যামিলা আর সারাহ বড় পরিবারের মেয়ে হবার কারণে তাঁদের ব্যাপারে মিডিয়া জানতো )
** Related info: ইনিই সেই ক্যামিলা পার্কার যাকে ২০০৫ সালে বুড়ো বয়সে প্রিন্স চার্লস বিয়ে করেছে।
>> তো সারাহ'র সাথে একসময় চার্লসের ব্রেক আপ হল। মুলত ডায়ানা ছিলো বেশি সুন্দরি। চার্লসের জীবনে দেখা যে কারো চেয়ে বেশি সুন্দরী।
কাজেই যখন ফ্যামিলি থেকে চার্লসকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেয়া হল, তখন চার্লস সুযোগ বুঝে ডায়ানার দিকে হাত বাড়ালো।
একে তো রাজপুত্র, তাঁর উপর গুরুগম্ভীর গলার আওয়াজ, ডায়ানার হৃদয়ে জায়গা তৈরি করতে বেশি সময় নিলো না চার্লস।
৬ই ফেব্রুয়ারি,১৯৮১, রাজপুত্র চার্লস বিয়ের অফার দিলো ডায়ানা’কে। রাজরানী হবার শখ কার না থাকে। ডায়ানারও ছিলো।
>> ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১ সালে ডায়ানার এনগেজমেন্ট হল। wedding ring টি দেখছেন নিচের ছবিতে।
১৪ খানা ডায়মন্ড একটা Ceylon sapphire (শ্রীলংকান নীলকান্তমণি) পাথরের চারিদিকে। মুল ফ্রেম white Gold দিয়ে তৈরি। এটার বর্তমান বাজার মুল্য ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
>> ২৯ জুলাই, ১৯৮১, ডায়ানা আর চার্লসের বিয়ে হয়। রীতিমত fairytale wedding
কার্যতই এক স্বপ্নের সুন্দরী ডায়ানাকে সেদিন টিভি পর্দায় দেখেছিলো রেকর্ড ৭৫০ মিলিয়ন মানুষ।
>> ২১শে জুলাই, ১৯৮২ সালে ডায়ানার প্রথম ছেলে উইলিয়ামসের জন্ম হয়।
>> ১৫ই সেপ্টেম্বর, ১৯৮৪ সালে ডায়ানার দ্বিতীয় সন্তান হেনরি’র জন্ম হয়।
এই হেনরি’কে নিয়ে অনেক পড়ে ঝামেলা বাধে। বিশেষ করে যখন ব্রিটিশ আর্মির মেজর James Hewitt এর সাথে ডায়ানার পরক্রিয়া প্রেমের কথা ফাঁস হয়। জেমস হিউট রাজপরিবারের সদস্যদের ঘোড়সওয়ার শেখাতেন।
সেই হিসেবে ডায়ানার সাথে তাঁর পরিচয় হয়। ১৯৯৪ সালে বিবিসি’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে ডায়ানা জেমস হিউটের সাথে তাঁর সম্পর্কের কথা স্বীকার করে।
সেইসাথে বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে তাঁদের সম্পর্ক তৈরি হয়। হেনরির জন্মের পর। সুতরাং হেনরি’র বাবার পরিচয় নিয়ে ছড়ানো গুজব ভিক্তিহীন।
তবে মিডিয়া নানান গুজব রটাতেই থাকে। বিশেষ করে হেনরি যত বড় হতে থাকে, মিডিয়া তাঁর চেহারার সাথে জেমস হিউটের চেহারার মিল খুঁজতে শুরু করে। তাঁদের সন্দেহ একেবারে উড়িয়ে দেবার মত কিন্তু নয়।
(Related Info: ১৯৯২ সাল নাগাদ ডায়ানা আর জেমস হিউটের ব্রেক আপ হয়। আসলে ব্রেক আপ শব্দটা বলাটা মনে হয় ঠিক হবে না। কারণ যে সম্পর্কে গোপনে শুরু হয়েছিলো, সেটা গোপনেই শেষ হয়েছিলো। ২০০৩ সালে জেমস হিউট তাঁকে দেয়া ডায়ানার ৬৪ টি খানা প্রেমপত্র নিলামে বিক্রি করার চেষ্টা করে। যদি রয়েল ফ্যামিলি ও ডায়ানার পরিবারের চাপের কারণে হয়ে ওঠে নি)
এই ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত মতামত হল, রয়েল ফ্যামিলি এতো বোকা না। তাঁরা অবশ্যই গোপনে হ্যারির ডিএনএ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছে। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেলে ব্রিটেনের রাজা হবে ডায়ানার স্বামী প্রিন্স চার্লস। সে মারা গেলে ডায়ানার বড় ছেলে উইলিয়ামস। সে মারা গেলে রাজা হবে হ্যারি।
সুতরাং Game of Throne রেসে হ্যারি আছে তিন নম্বরে।
>> ১৯৯২ সালে Diana: Her True Story, by Andrew Morton বইটিতে জেমস হিউটের সাথে ডায়ানার পরক্রিয়া প্রেমের কাহিনী প্রথম ফাঁস হয়।
Andrew Morton ছিলেন Daily Sun পত্রিকার সাংবাদিক। ডায়ানার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিলো তাঁর। ডায়ানার ব্যক্তিগত খবর তিনি যোগাড় করে বই আকারে বের করেন। ফলাফল, বিপদে পড়ে যায় ব্রিটিশ রাজপরিবার।
রীতিমত রয়েল স্ক্যান্ডাল।
এর কিছুদিন পর audio tape leaked হয় টিভি অভিনেতা James Gilbey আর ডায়ানার মধ্যকার ব্যক্তিগত ফোনালাপের।
মিডিয়াতে রীতিমত ঝড় তোলে এসব জিনিস।
এসব থেকে জানা যায়, ডায়ানা পারিবারিক জীবনে মোটেও সুখী ছিলেন না। চার্লসের সাথে তাঁর সম্পর্ক বিয়ের অল্প কিছুদিন পর থেকেই খারাপ হতে থাকে। মুল কারণ ক্যামিলা পার্কার।
আগেই বলেছিলাম চার্লস প্রথম থেকেই ছিলো প্লে বয়। এক সময় ডায়ানার বড় বোনের সাথে যেমন রিলেশন ছিলো, আরো ছিলো ক্যামিলা পার্কারের সাথে। ডায়ানার সাথে বিয়ে হবার পরও ক্যামিলা ও চার্লসের গোপন সম্পর্ক অটুট ছিলো।
( ** এবং এখনও আছে। ২০০৫ সালে বুড়ো বয়সে চার্লস ক্যামিলা বিয়ে করেছে )
>> শুধু তাই নয়, ১৯৮৪ সালের পর Tiggy Legge-Bourke নামের মহিলা, যে ডায়ানার দুই ছেলে’কে দেখভাল করতো, (nanny), তাঁর সাথেও চার্লস গোপন শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৫ সালে বিবিসি’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই তথ্য ফাঁস করে খোদ ডায়ানা।
ডায়ানা ভক্ত ব্রিটিশদের কাছে এই দুই মহিলা একরকম "fairytale's Witch" এর মত। আজও।
এসবে ডায়ানা মানুসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলো। তাঁর মধ্যে আত্মহত্যার ইচ্ছাও জাগে।
সত্যি বলতে, চার্লসের চারিত্রিক এসব ব্যাপার স্যাপার ব্রিটিশরা আগে থেকেই হালকা পাতলা জানতো। আর ডায়ানা ছিলো ব্রিটিশদের “হৃদয়ের প্রিন্সেস” অর্থাৎ Princess of heart
ডায়ানা তখন তাঁর সৌন্দর্য, ব্যক্তিত্ব আর সমগ্র বিশ্বে চ্যারিটেবল কর্মকাণ্ডের জন্য রীতিমত হলিউডের সেলিব্রিটিদের মত জনপ্রিয়। ইনফ্যাক্ট, তাঁদের চাইতেও অনেক বেশি জনপ্রিয়।
কাজেই এতোকিছুর পরও মানুষ তাই ডায়ানার পক্ষ নিয়েছিলো। তাঁরা রাজপরিবারকেই ব্লেম করে সবকিছুর জন্য।
>> অর্থাৎ খোদ ডায়ানাই এক সময় রাজপরিবারের জন্য এক চরম মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাড়ায়। রাজপরিবারের ভেতরের কাহিনী একের পর এক মিডিয়ার আসতে থাকে। আসতে থাকে স্ক্যান্ডালের পর স্ক্যান্ডাল।
১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর মাসে বিবিসিকে দেয়া ডায়ানার ইন্টারভিউটির পর রাজপরিবার দেখলো enough is enough. ...
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ নিজে চার্লস আর ডায়ানাকে চিঠি দেয় দ্রুত ডিভোর্সের জন্য। চার্লস আর ডায়ানা রাজি হয়।
ফলাফল, ডিভোর্স হয়। রাজ পরিবারকে এজন্য ১৭ মিলিয়ন ডলার দিতে হয় ডায়ানাকে।
ডিভোর্সের পর রাজপরিবারের নিয়ম অনুসারে ডায়ানা “Her royal Highness” স্ট্যাটাস হারানোর পরও কিন্তু রাজপরিবারের সদস্য থেকে যায়। কারণ সে ভবিষ্যৎ রাজা, উইলিয়ামস আর হ্যারির মা। এই সম্পর্কে তো আর মুছে ফেলা যায় না। কাজেই ডায়ানা থেকে যায় Princess of wales
এর কিছুদিন পর নতুন কাহিনী করে বসে ডায়ানা। বিবিসি’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রিন্স চার্লস Legge-Bourke কে গর্ভবতী করে ফেলেছিলেন। রাজপরিবারের চাপে Legge-Bourke গর্ভপাত করতে বাধ্য হয়।
>> ডায়ানার নিন্দুকেরাও বলে, ডায়ানা তাঁর দুই ছেলেকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। অবশ্যই এই বিষয়টিতে ডায়ানার স্বামী চার্লসকেও ক্রেডিট দিতে হবে। (দোষে গুনেই তো মানুষ)
চার্লস যেমনই হোক, হোক সে প্লে বয়, কিন্তু নিজের বাচ্চাদের সে সময় দিতো। নিজে দিতে না পারলেও ডায়ানাকে কখনো বাচ্চাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেন নি। বাচ্চাগুলোকে কোলে করে আদর করা, আর দশটা মা বাবা বাচ্চা নিয়ে যা যা করে, তা তা করা, বিদেশে ভ্রমনে গেলে সাথে নিয়ে যাওয়া, সবই করতেন ডায়ানা আর চার্লস।
তো, ডায়ানা চার্লসের যখন ডিভোর্স হয়, তখন তাঁর বড় ছেলের বয়স ১৪ আর ছোটটার ১২
ডিভোর্সের পরও ডায়ানা তাঁর সন্তান’দের কাছেকাছেই রাখার চেষ্টা করতেন। যদিও Buckingham Palace অর্থাৎ রাজপ্রাসাদের দরজা তাঁর জন্য বন্ধ হয়ে গেছিলো।
ডায়ানার দুই ছেলে তাঁর মা’কে ভীষণ ভালোবাসতো।
Prince William comforted his mother, and he was said to have wanted to let her have the style of “Her Royal Highness” again.
He was reported to have said: "Don't worry, Mummy, I will give it back to you one day when I am King."
>>> ডিভোর্সের পর Kensington Palace –এ থাকতেন ডায়ানা। ১৯৯৬ সালের দিকে নতুন করে সম্পর্কে জড়িয়ে যান ডায়ানা।
এবার একজন ডাক্তার। নাম Hasnat Khan
হাসনাত খান পাকিস্তানি বিখ্যাত ক্রিকেটার ইমরান খানের cousin
হাসনাত খান যদিও ইংল্যান্ডে থাকতেন, তাঁর পরিবার থাকতো পাকিস্তানে। এসময় হাসনাত খানের পরিবারের সাথে দেখা করার জন্য ডায়ানা লাহোর যান। পাকিস্তানের ক্রিকেটার ইমরান খান তাঁকে আমন্ত্রন জানিয়েছিলেন।
তো হাসনাত খান’কে ডায়ানা বলতেন “Love of her life”
কিন্তু কোনো এক কারণে ডায়ানা ১৯৯৭ সালের মধ্যভাগে এসে হাসনাত খানের সাথে ব্রেক আপ করেন। হয়ত তখন ডায়ানার মনে নতুন কেউ স্থান করে নিয়েছে !!
(অফটপিক, একটা ব্যাপার clear করি। উপরে ডায়ানার যেসব relationship গুলো লিখলাম, এগুলো আলোচিত এবং ডায়ানার আত্মস্বীকৃত। কিন্তু মিডিয়া গসিপ আর পাপারাজ্জিদের মারফৎ তখন ডায়ানার আরো অনেক নামকরা ব্যক্তিদের সাথে ক্ষণস্থায়ী প্রেমের কাহিনী প্রকাশ হত। ১৯৮৫ থেকে ৯৭... এই ধারা চলতেই থাকে )
>>>
ডায়ানা তাঁর জীবনের শেষ ও আলোচিত সম্পর্কে জড়ান বিলিয়নিয়ার মিশরীয় বংশোদ্ভুত ইউরোপিয়ান ব্যবসায়ী Mohammed Al Fayed এর ছেলে Dodi Al Fayed এর সাথে।
দোদির বাবা Mohammed Al Fayed ফ্রান্সের Hôtel Ritz Paris-এর মালিক।
১৯৯৭ সালের মধ্যভাগে দোদির সাথে ডায়ানার সম্পর্ক মিডিয়ায় প্রকাশ পায় (স্বাভাবিকভাবেই ধারনা করা যায় যে আরো আগে থেকে দোদির সাথে তাঁর পরিচয় ও সম্পর্কে গড়ে উঠেছিলো)
তো এবার মধ্যপ্রাচ্যে ডায়ানার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় বহুগুন। একজন মিশরীয় বংশোদ্ভুত মুসলিম ডায়ানার প্রেমিক !!
মোহাম্মদ আল ফায়াদ মাল্টিমিলিয়ন ডলারের ইয়ট কিনে দেন তাঁর ছেলে দোদি আর ডায়ানার অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটানোর জন্য। ডায়ানাকে ফ্রান্সে আমন্ত্রন করেন ফায়েদের পরিবারের সাথে সময় কাটানোর জন্য।
ডায়ানা আর দোদির অন্তরঙ্গ মুহূর্তের বেশ কিছু ছবি প্রচার হতে থাকে ব্রিটিশ মিডিয়া ও পত্রিকাতে...
তো হঠাৎ পাপারাজ্জিদের একটি ছবি বিশেষভাবে দুনিয়ার মানুষের নজর কাড়ে। নিচের ছবিটা... নিচের এই ছবিটার কারণে খবর প্রচার হতে থাকে, ডায়ানা প্রেগনেন্ট। বাবা হতে পারেন ডোডি, অথবা হতে পারেন হাসনাত খান... যদিও ডায়ানা ও তাঁর সেসময়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী এসব অস্বীকার করেন।
রাজপরিবার এক চরম পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়। কি হবে যদি সত্যি সত্যিই ডায়না ডোডি'কে বিয়ে করে?? সেক্ষেত্রে ব্রিটিশদের ভবিষ্যৎ রাজাদের (ডায়ানার ছেলেদের) থাকবে মুসলিম সৎ ভাই... !!!
কার্যত সেও রাজপরিবারের সদস্য হবে।
ডায়ানার প্রেগনেন্সির গুজব মধ্যপ্রাচ্যে প্রচার হলে তাঁরা খবরটিতে রীতিমত উল্লাসিত হয়েছিলো। বিশেষ করে মিশর !! যাদের সাথে ব্রিটিশদের তিক্ত ইতিহাস আছে। আর সেই মিশরীয় একজন ব্যক্তির সন্তান কিনা ব্রিটিশ রাজবধুর গর্ভে !!
সব মিলিয়ে রাজপরিবারের জন্য এর চেয়ে বড় হিউমিলিয়েশন আর দ্বিতীয়টি হতে পারে না।
এটা মধ্যযুগ হত, তাহলে অনেক আগেই রাজপরিবার ডায়ানার শিরচ্ছেদ করত রাজপরিবার !!
এই ছবি প্রকাশ হয় ডায়ানার মৃত্যুর সপ্তাহ দুয়েক আগে !!!
সুতরাং ডায়ানাকে খুন করার যথেষ্ট ইচ্ছা ব্রিটিশ পরিবারের অনেক আগে থেকেই থাকার কথা। এবং অবাক হবেন হয়ত, ডায়ানা সেই ১৯৯৩ সাল থেকেই আশংকা করত, রাজপরিবার তাঁকে খুন করতে পারে !!!
শুধু তাই না, specific ভাবে "car accident" এর মত sabotage করিয়ে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে বলে ডায়ানা আশংকা করেছিলো সেই নব্বয়ের দশকের শুরুতে। নিচের ছবিটি দেখুন। এটা 1993 সালে ডায়ানার তৎকালীন butler (পরিচালক) Paul Burrell-কে উদ্দেশ্য করে ডায়ানার নিজ হাতে লিখা চিঠি।
যাতে তিনি লিখেছেন,
"I am sitting here at my desk today in October, longing for someone to hug me and encourage me to keep strong and hold my head high.
This particular phase in my life is the most dangerous - my husband is planning 'an accident' in my car, brake failure and serious head injury in order to make the path clear for him to marry Tiggy. Camilla is nothing but a decoy, so we are all being used by the man in every sense of the word............."
ডায়ানার মৃত্যুর বেশ কিছু বছর পর চিঠিগুলো প্রকাশ করা হয়। verify করা হয় এর সত্যতা। এবং আসলেই এগুলো ডায়ানার নিজ হাতে লিখা। ফলাফল, টেলিগ্রাফ, মিরর, সান সহ ব্রিটেনের নামকরা পত্রপত্রিকাগুলোতে ২০০৩ সালের দিকে প্রথম পৃষ্ঠায় এই নিউজ প্রচার হয়।
তো, শেষ অংশে ডায়ানার শেষ দিনটি ও সেই দুর্ঘটনার কথা বলা যাকঃ
৩0 শে আগস্ট, ১৯৯৭, ডায়ানা ফ্রান্সে আসেন। রাতে প্যারিসের Hôtel Ritz-এ আসেন প্রেমিক দোদির সাথে ডিনার করতে।
Hotel Ritz এর মালিক দোদির বাবা মোহাম্মদ ফায়াদ।
সাংবাদিক, সেলিব্রিটি ফটোগ্রাফার, পাপারাজ্জিরা সামহাউ খবর পেয়ে হোটেলের সামনে ভিড় জমায়।
ডায়ানা আর দোদি সাংবাদিকদের ক্যামেরা’কে ফাঁকি দিয়ে হোটেলের পিছনের দরজা দিয়ে বের হবার সিদ্ধান্ত নেয়।
তো রাত ১২টার কিছু পর ( তখন ৩১তারিখ হয়ে গেছে) ডায়ানা আর দোদি হোটেল থেকে বের হন। উদ্দেশ্য apartment in Rue Arsène Houssaye
আগেই Henri Paul (হোটেলের সিকিউরিটি প্রধান) একটা black Mercedes-Benz গাড়ি হোটেলের প্রধান ফটকের সামনে বেশ কিছু সিকিউরিটি দিয়ে দাড় করিয়ে রেখেছিলো যাতে সাংবাদিকরা প্রধান দরজার সামনে ভিড় করে এটা ভেবে যে এই গাড়িতে ডায়ানা যাবেন। হোটেল সিকিউরিটিরাও সাংবাদিকদের বলেছিলো, ডায়ানা আর দোদি কিছু সময় পর বের হবেন।
তো ডায়ানা আর দোদি বের হল পেছনের দরজা দিয়ে।
হোটেলের সিসি ক্যামেরায় দোদি আর ডায়ানার হোটেলের ভেতর লিফটে ওঠা, লবিতে নামা, এবং পেছনের দরজা দিয়ে বের হওয়া, এসব ফুটেজ ডায়ানার মৃত্যুর পর প্রকাশ করা হয়। সেটা থেকে কিছু screenshot. নিচে দেয়া হল –
১-নং ছবিতে দেখা যায় ৩০শে আগস্ট রাত ৯:৫১ মিনিটে ডায়ানা হোটেলে প্রবেশ করে। এরপর প্রবেশ করে দোদি আর তাঁর পেছনে Trevor Rees-Jones, ডায়ানার বডিগার্ড। (চিত্র-২)
৭৭ মিনিট পর, অর্থাৎ ৩০ তারিখ রাত ১১ টা ৮ মিনিটে দেখা যায় হোটেল লবি’তে দাড়িয়ে আছেন Head of hotel Security, Henry Paul (চিত্র-৩) ... কিছুসময় পর ডায়ানা আর দোদি আসেন (চিত্র-৪) ... প্রায় ১ ঘণ্টা পর বিশাল হোটেলের পেছনের দরজার সামনে দোদি আর ডায়ানা’কে এক ব্যক্তির সাথে কথা বলতে দেখা যায় (চিত্র-৫) তখন 00:06 অর্থাৎ ১২ টা ৬ মিনিট (৩১ তারিখ হয়ে গেছে )
চিত্র-৬ তে (১২:১৫ ) দোদি আর ডায়ানাকে পেছনের দরজার একেবারে সামনে দেখা যায়।
এরপর তাঁরা Mercedes-Benz W140 গাড়িতে ওঠে। চালক Henry Paul, সাথে সামনে বসে বডিগার্ড Trevor Rees
আর পেছনে ডায়ানা আর দোদি।
এত কিছু শর্তেও পাপারাজ্জি সাংবাদিকদের ফাঁকি দিতে পারেন নি ডায়ানা। সাংবাদিকরা তো আর বোকা না। আর এসবে তাঁরা অভ্যস্ত।
পেছনের দরজার সামনেও সাংবাদিকদের এক অংশ অপেক্ষায় ছিলো।
যেই না ডায়ানা আর দোদি বের হয়, ওমনি তাঁরা ছবি তোলা শুরু করে। কেউ আবার ফলো করে গাড়ি নিয়ে। ডায়ানা আর দোদি কোথায় রাত কাটায় এটা জানবার জন্য।
নিচের এই ছবিটি গাড়িতে উঠে বসার পর দাড়িয়ে থাকা পাপারাজ্জি ফটোগ্রাফারদের তোলা। ডায়ানা নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করছিলেন। নিয়তির পরিহাসে এগুলোই তাঁর শেষ ছবি।
( এপ্রসঙ্গে বলে রাখি, প্রিন্সেস ডায়ানা হলেন ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ফোটাগ্রাফ হওয়া নারী। তিনি ছিলেন সেই সময়ে দুনিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত নারী। তাঁর জীবনের কাহিনী আর ছবি বেঁচে তখন অনেক পাপারাজ্জি, ফ্রি ল্যান্সার সাংবাদিকরা রমরমা ব্যবসা করতো। অনেক পত্রিকা জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠেছিলো ডায়ানার নিউজ ছেপে ছেপে। ডায়ানা রাতে কি খাচ্ছে, শপিং-এ গিয়ে কোন জামা কিনছে, এসব তখন গোটা পশ্চিমা মুল্লুকের আলোচিত বিষয় ছিলো। there was no one like Diana at that time )
তো গাড়ি চলতে শুরু করল।
১২:২৩ এর দিকে গাড়িতে প্রবেশ করে Place de l'Alma underpass Tunnel এর ভেতর।
টানেলটিতে ঢোকার মুখে বামদিকে নিচু হয়ে বাক নিতে হয় গাড়িটিকে। অফিসিয়াল রিপোর্ট অনুসারে, গাড়ি চলছিলো তখন ঘণ্টায় ১০৫ কিমি গতিতে।
তো নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ডায়ানার গাড়ি ধাক্কা খায় টানেলের ভেতরে ডিভাইডারের উপর থাকা পিলারগুলোর একটিতে (specific ভাবে ১৩ নম্বর পিলারে) ধাক্কা খেয়ে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে পাশের দেয়ালে আছড়ে পড়ে।
দুমড়ে মুচড়ে যায় ডায়ানার গাড়িটি।
দুর্ঘটনা স্থলে প্রথম যান Romuald Rat নামের এক ফটোগ্রাফার। ইনি হোটেল থেকেই ডায়ানার পিছু নিয়েছিলেন।
প্রায় ৬০০ মিটার পেছনে ছিলো তাঁর গাড়ি। মিনিটের ভেতরই সে দুর্ঘটনাস্থলে আসে।
অবাক, বিস্মিত Romuald Rat ডায়ানার গাড়ির ধ্বংসবশেষের কাছে ছুটে যায়। বাকি তিনজনের অজ্ঞান থাকলেও ডায়ানার জ্ঞান ছিলো। তিনি আর্তনাদ করছিলেন। বিস্ময়কর ভাবে তাঁর শরীরে কোনো ফ্রাকচার ছিলো না।
কাকতালীয় ভাবে দুর্ঘটনাস্থলে এরপর ছুটে আসে একজন ডাক্তার। তিনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর নাম Dr. Frederic Mailiez
তিনি ডায়ানা’কে First aid দেবার চেষ্টা করছিলেন। মিনিট দুইয়েক পর মানুষ জমতে থাকে।
Ritz হোটেল অল্প দূরত্বে। আগে থেকেই ডায়ানার জন্য সেখানে শত শত সাংবাদিক পাপারাজ্জিরা অপেক্ষায় ছিলো। এদের ভেতর গোটা দশেক ডায়ানাকে ফলো করেছিলো। সুতরাং দ্রুতই দুর্ঘটনা স্থলে চলে আসে তাঁরা।
নিচের ছবিটা নেয়া হয়েছিলো দুর্ঘটনা ঘটার ৭ মিনিট পর। অর্থাৎ ১২টা ৩০ মিনিটে।
এরপর পুলিশ আসে। জায়গা সিল করে। এমারজেন্সি ব্যাকআপ কল করে।
১২ টা ৪০-এ এ্যাম্বুলেন্স আসে। কিন্তু ধ্বংসাবশেষ থেকে দেহগুলো বের করা এতো সহজ ছিল না। সেই সাথে ছিল যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ।
তো অফিসিয়াল রিপোর্ট অনুসারে গাড়ির ভেতরের একজনও সিট বেল্ট পড়া অবস্থায় ছিলো না।
ড্রাইভার Henry Paul মারা গেছিলো অন স্পট। মুমূর্ষু অবস্থায় পাওয়া গেছিলো ডায়ানার প্রেমিক দোদিকে। (১টা ৩২ মিনিটে অফিসিয়ালে তাঁকে মৃত ঘোষণা করে ডাক্তাররা)
সামনে বসে থাকা ডায়ানার বডিগার্ড ট্রেভর রিস'কে মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
দাঙ্গা পুলিশ এসে সমগ্র জায়গা দ্রুত সিলঅফ করে দেয়। কেউ ভেতরে যেতে পারবে না, ভেতরে থাকলে বের হতে পারবে না।
আহত ডায়ানার ছবি বিক্রি হবে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারে। কাজেই নিউজ প্রচার হওয়া মাত্র দুর্ঘটনাস্থলে হুমড়ি খেয়ে পড়বে সাংবাদিক থেকে শুরু করে আমজনতা। এজন্য ফ্রেন্স সরকার মিডিয়া ব্ল্যাক আউট করার চেষ্টা করে। (যদিও তাতে লাভ হয় নি )
ভেতরে থাকা সব সাংবাদিক আর ফটোগ্রাফার দের আটক করে Criminal investigation Brigade
এর ভেতর ফ্রান্সের সেই সময়কার most respected photographer Jacques Langevin ছিলেন।
তো ১ ঘণ্টা লাগে ডায়ানার শরীর ধ্বংসাবশেষ থেকে বের করে stable করে এ্যাম্বুলেন্সে তুলতে !! রাত ১২:৪০-এ এ্যাম্বুলেন্স আসার পর ১:৪০-এ এ্যাম্বুলেন্স ছাড়া হয় ডায়ানাকে সাথে নিয়ে !! এরপর ২৫ মিনিট ড্রাইভ করে রাত ২ টা ৬ মিনিটে তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়। (Point to be noted)
দুর্ঘটনা ঘটার এক ঘণ্টা ৪৩ মিনিট পর ডায়ানা হাসপাতালে আসে !!!
অথচ নিকটবর্তী হাসপাতাল ছিলো ৭ মিনিট দূরের পথ।
সেটা না করে ফ্রান্সের সবচেয়ে নামকরা হাসপাতালে নেবার কথা বলে দুরের Pite Salpetriere হাসপাতালে নেয়া হয়েছিলো ডায়ানাকে। সেখানে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদুত আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন। (another point to be noted)
অথচ নিয়ম হল আগে নিকটবর্তী হাসপাতালে নেয়া। এই ব্যাপারটাকে ফ্রান্স সরকার ডিফেন্ড করে বলে, তাঁদের কোনো গাফিলতি ছিলো না। তাঁরা চেয়েছিলো ডায়ানা সেরা চিকিৎসাটা পাক। তাঁরা এ্যাম্বুলেন্সে ডায়ানার প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া শুরু করেছিলো। আর ডায়ানার কন্ডিশন stable না করে তাঁকে এ্যাম্বুলেন্সে তোলা সম্ভব ছিলো না।
ইন্টারেস্টিং বিষয় হল, ডায়ানার বডি গার্ড,ট্রেভর রিস, যে কিনা সামনে বসা ছিলো, এবং মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলো, হাড় হাড্ডি ভেঙ্গে গিয়েছিলো, তাঁকে কিন্তু ঠিকই নিকটবর্তী হাসপাতালে নেয়া হয়েছিলো। এবং তিনি আজও বেঁচে আছেন (point to be noted)
ভোর ৪ টা। দুর্ঘটনা ঘটার ৩ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট কেটে গেছে। এই সময়ে দুইবার হার্ট এট্যাক হয়েছে তাঁর। সেইসাথে ইন্টারনাল হেমারেজ।
মারা যান প্রিন্সেস ডায়ানা।
ভোর হতে না হতেই সমগ্র বিশ্বের মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়ে এই খবর।
তাঁদের “Princess of Heart” ডায়ানা মারা গেছে।
ওদিকে ফ্রেন্স পুলিশ যেসব সাংবাদিক আটক করেছিলো, তাঁদের কাছ থেকে সব ফটো জব্দ করে। এবং আরো যেসব সাংবাদিকের কাছে আহত ডায়ানার ছবি থাকতে পারে বলে মনে করেছে, তাঁদের বাসায় অভিযান চালায়।
কোনো সাংবাদিক, পাপারাজ্জি বা ফটোগ্রাফার যদি ডায়ানার ছবি কোনো সংবাদ মাধ্যম বা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয় বা বিক্রি করার চেষ্টা করে, তাহলে তাঁকে ইমিডিয়েট আটক করা হবে বলে ঘোষণা দেয়। এটা ডায়ানা ও রয়েল ফ্যামেলির প্রাইভেসির ব্যাপার, তাঁদের ভাষায়।
তখন ক্যামেরা ফোন বা ডিজিটাল ক্যামেরার যুগ ছিলো না। কাজেই এই কাজটা তখন খুব সহজেই সফলভাবে করতে পেরেছিলো পুলিশ ও গোয়েন্দাসংস্থাগুলো। আজও তাই ডায়ানার আহত শরীরের বা লাশের কোনো ছবি পাবেন না।
দুর্ঘটনা স্থলের ছবিগুলোকে পুলিশ অবশ্য রেহায় দিয়েছে। কিন্তু ডায়ানার ছবি সম্বিলিত ছবিগুলো সব siege করেছে।
ডায়ানার মৃত্যুর পর প্রিন্স চার্লস আর ডায়ানার দুই ছেলে ফ্রান্সে ছুটে যায়। ডায়ানার লাশ ইংল্যান্ডে আনে। ময়নাতদন্ত হয়।
অফিসিয়াল ময়নাদন্তের রিপোর্টের একটা খবর খুব ফলাও করে প্রচার করা হয়। সেটা হল ডায়ানা মারা যাবার সময় প্রেগনেন্ট ছিলেন না।
(বুঝতে হবে কার চিন্তা কি নিয়ে )
যাই হোক, ব্রিটিশ সরকারের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট কি হল সেটা খোদ ব্রিটিশদের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। রাজপরিবার যা ইচ্ছা একটা রিপোর্ট বানাতে পারে। এটা তাঁদের জন্য ডালভাত।
ডায়ানার মৃত্যুর পরদিনই প্রচার মাধ্যমগুলোতে ব্লেম করা হয় সাংবাদিক আর পাপারাজ্জিদের। সম্ভবত এরা ডায়ানার গাড়ি চেজ করার কারণে ড্রাইভার হাই স্পিডে গাড়ি চালিয়েছিলো। এজন্য দুর্ঘটনা ঘটে। হয়ত পাপারাজ্জিদের গাড়ি ভুল বসত ধাক্কা দিয়েছিলো ডায়ানার গাড়িকে।
নানান স্পেকুলেশন শুরু হয়।
সব দোষ চাপানো হয় সাংবাদিকদের উপর।
বিবিসি, সিএনএনে পাপারাজ্জিদের রীতিমত পাপারাজ্জিদের ভিলেন বানিয়ে টক’শোর পর টক’শো চলতে থাকে। রীতিমত scapegoat
Westminster Abbey তে ৬ ই সেপ্টেম্বর ডায়ানার ফিউনারেল অনুষ্ঠিত হয়।
সেটা বিশ্বের ২০০ টি দেশের রেকর্ড ২.৫ বিলিয়ন মানুষ লাইভ দেখেছিলো। স্যার এলটন জন গেছিলেন তাঁর বিখ্য্যাত candle in the wind গানটি। আমি ও আমার বাসার সবাই টিভিতে দেখেছিলাম সেই অনুষ্ঠানটি।
আমার আজও মনে আছে ডায়ানার কফিনের উপর একটা ছোট কার্ডে লিখা ছিলো, “I love you Mommy” লিখেছিলো সম্ভবত ডায়ানার বড় ছেলে।
ফুলে ফুলে ভেসে যায় ডায়ানার স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো। Kensington Palace এর সামনের মাইল খানেক জায়গা ৫ ফিট পুরু ফুলের আস্তরণে ঢেকে যায়।
১৮ মাস পর ফ্রেন্স সরকার তাঁদের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে।
রিপোর্ট অনুসারে, ডায়ানার ড্রাইভার হেনরি পল মাতাল ছিলেন। তাঁর শরীরে প্রচুর পরিমাণ এলকোহলের নমুনা পাওয়া গেছে। মুলত এই কারণে ট্যানেলে ঢোকার মুখে তিনি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বসেন।
কিন্তু এটা ব্রিটিশদের বিশ্বাস করানো সম্ভব হয় নি। বিশ্বাস করেন নি দোদির বাবা মোহাম্মদ আল ফায়েদ। যিনি শুরু থেকেই বলে আসছেন এর পেছনে রাজ পরিবার আর তাঁদের বিখ্যাত গোয়েন্দাসংস্থা MI6 এর হাত আছে।
বিশেষ করে হোটেল থেকে বের হবার আগে যে সিকিউরিটি ক্যামেরার ফুটেজ রিলিজ দেয়া হয়, তাতে Henry Paul কে যথেষ্ট স্বাভাবিক মনে হয়েছে। তাঁকে বেশ কিছু সময় ফুটেজে ধারন করা হয়েছিলো। মাতালের কোনো লক্ষন তাতে ছিলো না। তিনি সবার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করেছিলেন।
(আর মাতাল হলে নিশ্চয় ডায়ানা আর দোদি তাঁর গাড়িতে উঠত না )
ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচার হতে থাকে।
>> রাজপরিবারের জন্য ডায়ানা ছিলো এক মাথাব্যাথা। তাঁকে হত্যা করার অভিপ্রায় জাগাটা রাজপরিবারের জন্য বেশ স্বাভাবিকই ছিলো সেই সময়। এসব আমি উপরে লিখেছি।
>> নব্বয়ের দশকের শুরুতে সার্বিয়ার নেতা Slobodan Milošević কে হত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলো ব্রিটিশদের বিখ্যাত গোয়েন্দাসংস্থা MI6 ….
এবং শুনে অবাক হবেন, ১৯৯২ সালের দিকে ঠিক ডায়ানার car accident এর মত দুর্ঘটনা সৃষ্টি করে মিলোসেভিচ’কে খুন করতে গিয়েছিলো MI6 !!!
কিভাবে??
ঠিক যেভাবে প্যারিসের একটি টানেলে রাতের বেলা ডায়ানা দুর্ঘটনার স্বীকার হয়েছে, ঠিক একই ভাবে। একটা সার্বিয়ান টানেলে !!
MI6 এর দুই সদস্য পাপারাজ্জি ফটোগ্রাফার সেজে রাতের বেলা সার্বিয়ান নেতা মিলোসেভিচের গাড়ির পিছু নেয়। ঠিক পিছু নেয়া বলা যাবে না, মিলোচভিচের গাড়ির সামনে চলতে থাকে।
MI6 এর একজন গাড়ি চালাচ্ছিলো, আর পেছনের জন ক্যামেরা নিয়ে পেছন ফিরে পেছনে আসতে থাকা মিলোসেভিচের গাড়ির ছবি তুলছিলো। পাপারাজ্জিরা যেভাবে সেলিব্রিটিদের চলন্ত গাড়ির সামনে থেকে ছবি তুলে !!
মিলোসেভিচের গাড়ি যেই একটি টানেলে ঢোকে (আবন্ধ জায়গায় + রাতের বেলা), ওমনি MI6 এর গাড়ির ফটোগ্রাফার ছদ্মবেশী এজেন্ট তাঁর special Spy Camera থেকে বিশেষ ধরনের Powerful Flash মারলো মিলোচেভিচের গাড়ির ড্রাইভারের চোখে।
সাধারণ ক্যামেরা ফ্ল্যাশেই অনেক সময় দেখবেন যার ছবি তোলা হয়, সে চোখ বন্ধ করে বসে। আর এক্ষেত্রে MI6 এর ওই ফ্ল্যাশটি ছিলো স্পেশালি বানানো।
তো মিলোসেভিচের ড্রাইভার এক আচমকা আলোর ঝটায় নিয়ন্ত্রন হারালেন। যদিও শেষ মুহূর্তে তিনি গাড়িটিকে গুরুত্বর দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলো। সে যাত্রায় বেঁচে গেছিলেন মিলোসেভিচ।
অতীতের এই ব্যর্থ অভিযান তখন আবার আলোচনায় আসে।
ডায়ানার ঘটনাতেও আছে টানেল, রাতের বেলা মৃদু আলোতে ১০৫ কিমি/ঘণ্টা বেগে চলতে থাকা গাড়ি, পিছু নেয়া পাপারাজ্জি, ক্যামেরা, ফ্ল্যাশ, দুর্ঘটনা ইত্যাদি ইত্যাদি।
দোদির বাবা মোহাম্মদ আল ফায়েদ এক রকম নিশ্চিত বিশ্বাস নিয়েই বলতে থাকেন, ডায়ানা’কে MI6 ঠিক এভাবেই হত্যা করেছে।
মোহাম্মদ আল ফায়েদ একজন প্রভাবশালী ক্ষমতাবান ব্যবসায়ী। সমগ্র ঘটনাটি পর্যালোচনায় জন্য তিনি আমেরিকার বড় বড় প্রাইভেট ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিকে নিয়োগ দেন।
তাঁরাও মুলত এসব এলোমেলো ডট গুলো মেলাতে শুরু করে। তাঁরাও বলেন, যদি MI6 সত্যি সত্যিই ডায়ানাকে খুন করতে চায়, তাহলে পাপারাজ্জি সেজে Milosevic killing attempt এর মত কিছু একটা করাটাই তাঁদের জন্য ছিলো সবচেয়ে সহজ উপায়।
সেইসাথে ছিলো ডায়ানার দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বিলম্ব করা।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে ধ্বংসাবশেষ দ্রুত সরিয়ে নিয়ে মাত্র ২৪ ঘণ্টার ভেতর টানেলটি আমজনতার জন্য আবার চালু করে দেয়া।
অথচ এই ধরনের ঘটনার পর, বিশেষ করে যখন এতো বড় নামকরা কেউ জড়িত, তখন দুর্ঘটনাস্থল তদন্তের জন্য আরো বেশ সময় সিলঅফ করে রাখাটাই স্বাভাবিক ছিলো।
ফ্রান্স সরকার এটাকে ডিফেন্ড করে বলেছিলো, তাঁদের সব আলামত জোগাড় হয়ে গেছিলো। টানেলটি প্যারিসের ব্যস্ততম জায়গা। সুতরাং জনজীবন স্বাভাবিক করতে তাঁরা দ্রুত টানেলটি পরিষ্কার করে আবার গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় !!!
এক ধূম্রজাল তৈরি হয় ডায়ানার মৃত্যুকে ঘিরে। কেউ আবার সিস্টেম্যাটিকভাবে গাড়ির ব্রেক ফেলিয়োর করে দেয়ার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দেন।
২০০৩ সালে Daily Sun পত্রিকা এক জরিপে দেখা যায়, ৮৫% এরও বেশি মানুষ বিশ্বাস করে, Princess Diana was systematically murdered by The Royal Family
সেদিন কি হয়েছিলো, তাঁর সবচেয়ে বড় সাক্ষী যে হতে পারতো, সামনে সিটে বসেও বেঁচে যাওয়া ডায়ানার বডি গার্ড ট্রেভর রিস, সে এখন স্মৃতিশক্তিভ্রষ্ট।
Specially সেই দিনের কোনো স্মৃতি নাকি তাঁর মনে নেই। সে এখন ইংল্যান্ডে থাকে।
তাঁর মুখ প্ল্যাস্টিক সার্জারি করে রিপেয়ার করা হয়।
ডায়ানার মৃত্যু রহস্য আজও আলোচিত।
সর্বশেষ ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে Scotland Yard আবার নতুন করে ডায়ানার কেস ওপেন করে। গুজব রটে, বেশ রিলায়েবল সোর্স থেকে তথ্য পেয়ে আবার পুলিশ এই কেস ওপেন করতে বাধ্য হয়েছে। এবং সোর্স খোদ রাজপ্রাসাদের ভেতরের কেউ।
হয়ত একদিন ডায়ানার মৃত্যু রহস্য উন্মোচিত হবে। হয়ত...
This post is dedicated to the memory of Princess Diana
**** পোস্টটি প্রথম লিখেছিলাম ২০১৪ সালে। আমার ফেসবুক নোটে।
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.