Saturday, January 23, 2021

Current World of espionage through Spy Cables

 ২০০৭ সালের ঘটনা।  

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া’তে অবস্থিত Pelindaba Nuclear Research Center

সত্তরের দশকে এই গবেষণাগারে দক্ষিণ আফ্রিকার পারমানবিক বোমা তৈরি করা হয়। এখানেই পারমানবিক বোমা’র জ্বালানী মজুদ করে রাখতো তখনকার দক্ষিণ আফ্রিকা।  (**নব্বয়ের দশকের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকা পারমানবিক বোমা বর্জন করে )

 

তো Pelindaba Nuclear Research Center এর নিরাপত্তাও সর্বোত্তম। কিন্তু ২০০৭ সালে চারজন ব্যক্তি এই হাইলি ক্লাসিফাইড ফ্যাসিলিটিতে প্রবেশ করে। দক্ষিণ আফ্রিকার Nuclear Energy Corporation (NECSA) এর তথ্যমতে, এই চারজন ব্যক্তি highly skilled operative (চোর)

এবং বেশ কয়েকটি সিকিউরিটি লেয়ারকে ডিএকটিভেট করে অনায়াসে তারা কনট্রোলরুমে প্রবেশ করে। ১০ হাজার ভোল্টের electric fence, সিসি ক্যামেরা, মিলিটারিগ্রেড নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সবকিছুকে ফাঁকি দিয়ে এরা প্রবেশ করে অনায়াসে। ভেতরের নিরাপত্তারক্ষীদের সাথে গোলাগুলি করে ৪৫ মিনিট কনট্রোল রুমে অবস্থান করে। বুকে গুলিবিদ্ধ আহত একজন কর্মী সামহাউ এলার্ম বাজিয়ে দেয়। তখন চারজন ব্যক্তি ঠিক যেভাবে এসেছিলো, দ্রুত সেভাবেই, সেই পথ দিয়েই সিনেমেটিক স্টাইলে পালিয়ে যায়।

অর্থাৎ ভেতরের ফ্যাসিলিটি সম্পর্কে ভীষণ ভালো ধারণা ছিলো এসব highly skilled operative দের।

 

এই ঘটনাটি মার্কিন মিডিয়াও অনেক গুরুত্বের সাথে তুলে ধরে। প্রচার করে।

তখন মার্কিনীদের ভয় ছিলো, আল কায়দা হয়ত নিউক্লিয় ফুয়েল চুরি করতে এমনটি করেছে।

 

কিন্তু রিসেন্ট ফাঁস হওয়া স্পাই কেবল বলে ভিন্ন কথা। এরা ছিলো চীনের গোয়েন্দা সংস্থা MSS এর অপারেটিভ।

Pelindaba Nuclear Research সেন্টারে Velbed Small modular Reactor এর গবেষণা চলতেছিলো। এই রিয়াকটরের মডেল ডিজাইন চুরি করতেই এসেছিলো MSS এর চার সদস্য।

 

( ** খেয়াল করুণ, চীনও কিন্তু ব্রিকসের সদস্য। দক্ষিণ আফ্রিকার বন্ধু দেশ )

 

 

 

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া’তে অবস্থিত “South African State Security Agency” হেডকোয়াটারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোনো অভাব নেই।

ইলেকট্রিক fence দিয়ে ঘেরা, এবং ভেতরে সিংহ ছেড়ে দিয়ে রাখে। জি হা, কুকুর নয়, রীতিমত সিংহ।

হেডকোয়াটারে চারটি আলাদা আলাদা স্টেট সিকিউরিটির অফিস।

The National Intelligence Coordinating Committee (NICOC).

The National Intelligence Agency (NIA).

The South African Secret Service (SASS).

The Crime Intelligence Division of the South African Police Service (SAPS).

 

এগুলো হল স্টেট সিকিউরিটি এজেন্সি। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার মিলিটারি সিকিউরিটি এজেন্সি আছে। SANDF

 

মিলিটারি সিকিউরিটি আর স্টেট সিকিউরিটি এজেন্সি আবার একটি অপরটির সাথে কোনো সমন্বয় রক্ষা করে না। সম্পূর্ণ আলাদা ও স্বাধীন।

দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দাবাহিনীকে যথেষ্ট শক্তিশালি হিসেবেই গড়ে তোলা হয়েছে।

কিন্তু সদ্য ফাঁস হওয়া স্পাই কেবল বলে, আমজনতার হাত থেকে আড়ালে রাখলেও দক্ষিণ আফ্রিকার মিলিটারি, সরকার, প্রশাসন এবং গোয়েন্দাসংস্থার রন্ধে রন্ধে ঢুকে গেছে ফরেন স্পাই এজেন্সির সদস্যরা।

দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ইন্টেলিজেন্স মিনিস্টার Ronnie Kasrils এর ভাষায়, বিদেশী গোয়েন্দাসংস্থাগুলোর কাছে দক্ষিণ আফ্রিকা একরকম Sitting Duck for espionage

 

সদ্য ফাঁস হওয়া স্পাই কেবল বলে, দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের ধারণা ১৪০ জনেরও বেশি active spy বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার ভেতর সক্রিয়।

আমেরিকার CIA, রাশিয়ার SVR+FSB, চীনের MSS, ইসরাইলের মোসাদ, ব্রিটেনের MI6 সহ দুনিয়ার বড়বড় গোয়েন্দাসংস্থাগুলোর বাড়তি নজর আছে দক্ষিণ আফ্রিকার উপর। 

প্রথমত, দক্ষিণ আফ্রিকা রিজিওনাল পাওয়ার। আফ্রিকার সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি, সেইসাথে ব্রিকসের সদস্য দেশ। আফ্রিকার দেশগুলোর উপর তার প্রভাব অনেক। এসব কারণে দূরের ক্ষমতাধর দেশের বাড়তি নজর দক্ষিণ আফ্রিকার উপর আছে।

অনেক আগে থেকেই আছে।

১৯৯৯ সালে মাল্টি বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কেনাবেচায় ফরেন স্পাই’রা বেশ ভালোভাবেই প্রভাবিত করেছিলো অস্ত্র ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির লোকজন’কে। এটা নিয়ে সেই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার পত্রপত্রিকাতে আলোচনার ঝড় ওঠে।

 

তবে রিসেন্ট সময়ে স্পাই এক্টিভিটি চলতেছে গত শতাব্দীর স্নায়ু যুদ্ধের মত।

দক্ষিণ আফ্রিকার সাইবার সিকিউরিটি যে কতটা ভলনারেবল, সেটা হাতে নাতে প্রমান পেয়েছে তারা কিছুদিন আগে। বেলারুশের একটি সিকিউরিটি কোম্পানিকে দিয়ে তারা তাদের মিলিটারি কম্পিউটারগুলোকে পরীক্ষা করে কোনো কোনো কম্পিউটার থেকে ৮-১০ টি malicious software খুঁজে বের করেছে যেগুলো বিভিন্ন দেশের স্পাই এজেন্সিগুলো অপারেট করে। অর্থাৎ সাইবার espionage চালাচ্ছে তারা আরামছে। দেখার কেউ নেই।

 

Spy cable থেকে জানা যায়, ব্রিকসের সদস্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম বন্ধু’দেশ রাশিয়ার Aerospace Defense force দক্ষিণ আফ্রিকার বসেই Kondor Satellite System তৈরি করতেছে দক্ষিণ আফ্রিকার মিলিটারি গোয়েন্দাবাহিনী SANDF এর জন্য। সেইসাথে তাদের নিজেদের প্রয়োজন তো আছেই।

এই অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট সিস্টেম দিয়ে গোটা আফ্রিকা মহাদেশ, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যেও গোয়েন্দাগিরি করতে পারবে রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা।   

 

এই highly classified project টি কেবল জানে দক্ষিণ আফ্রিকার মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স SANDF.. ও দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের উপর মহলের অল্পকিছু ব্যক্তিবর্গ।   এটাকে দক্ষিণ আফ্রিকার State Security সার্ভিসগুলোর কাছ থেকেও গোপনীয় রাখা হয়েছে leak যাতে না হয় সেকথা ভেবে।

কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার State Security ঠিকই তাদের military security এর উপর স্পাইগিরি করে এই প্রোজেক্টের তথ্য উদ্ধার করেছে।

এবং এই তথ্য তারা পেয়েছে নয় হাজার কিলোমিটার দুরের দেশ রাশিয়ার ক্রেমলিনে থাকা তাদের নিজেদের এক স্পাই’এর কাছ থেকে। (অর্থাৎ চোর পুলিশ খেলার মত ) lolz….

আসলে কোনো দেশই অন্য কোনো দেশ’কে বিশ্বাস করে না। বন্ধু বলে আসলে কিছু নেই। সবই স্বার্থ তাদের কাছে।  সবাই সবার উপর গোয়েন্দাগিরি করে।  

 

তো ৩০ জন রুশ ইঞ্জিনিয়ার ও টেকনিশিয়ান এই প্রোজেক্টে জড়িত আছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এই বিশেষ military reconnaissance স্যাটেলাইট ২০১৪ সালের শেষ দিকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটি থেকে।

Spy cable এর এই তথ্য ফাঁসে সম্ভবত লাভ হবে পশ্চিমাদের। দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক বড় ক্ষতি হল। রুশ’রা জানতে পারলো, ক্রেমলিনে থাকা এক দক্ষিণ আফ্রিকান স্পাই’এর কথা।

 

এবার মধ্যপ্রাচ্যে আসি।

২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ইসরাইলী মিলিটারি গাজা’তে নারকীয় হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।

ফলাফল, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন (UNHRC)  একটা fact finding mission শুরু করে যার দায়িত্ব ছিলো ইসরাইল মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে কিনা !! সেটার ব্যাপারে তদন্ত করা। (বিষয়টি শুনলে হাস্যকর লাগে)

যাই হোক, সেই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক Richard Goldstone নামের এক ভদ্রলোক’কে


 


তো রিপোর্টে ইসরাইলের অসংখ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনকে উল্লেখ করা হয়।

Goldstone report পাবলিসের পর ইসরাইলের গোয়েন্দাসংস্থা মোসাদের প্রধান দক্ষিণ আফ্রিকার ইন্টেলিজেন্স চিফ’ফে কোন করে এই রিপোর্ট’কে ভোট আউট করে দেবার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার’কে অনুরোধ করে।  

সেখানে মোসাদ চিফ বলেছিলো, প্যালেস্টাইন লিগাল অথরিটি ( অর্থাৎ মাহমুদ আব্বাসের পিএলও) কে শক্তিশালি করতে এবং গাজায় হামাসের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিতে এই ধরনের অভিযানের দরকার আছে। এর ফলে কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও দীর্ঘমেয়াদে ইসরাইল ফিলিস্তিনি শান্তির জন্য বিষয়টি জরুরী।

অর্থাৎ হামাসকে দুর্বল করতে গাজাই ইসরাইলের এই হত্যাযজ্ঞে পশ্চিমতীরের মাহমুদ আব্বাস অথরিটির মৌন সায় আছে।


 


২০১১ সালে ইউনেস্কো প্যালেস্টাইনকে পূর্ণ রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়।

 ইউনেস্কোর এই সিদ্ধান্তকে বদলাতে মার্কিন ইসরাইলি যৌথ তৎপরতা ছিলো জোরেসোড়ে।



স্পাই কেবলে ফাঁস হওয়া ২০১২ সালের একটি ডকুমেন্ট বলে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা নিজে প্যালেস্টাইন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস’কে ফোন করে হুমকি দিয়েছিলো জাতিসংঘে Bid এর ব্যাপারে।

 

২০১৪ সালে অর্থাৎ গতবছর আবার ইসরাইল যখন গাজায় অভিযান চালায়, তখন পূর্ব জেরুজালেমের এক সিআইএ অপারেটিভ হামাসের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। এজন্য দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দাসংস্থার এক অপারেটিভের সাহায্য চেয়েছিলো সিআইএ। হামাসের নেতাদের সাথে সিআইএর যোগাযোগ করিয়ে দেবার বিনিময়ে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সাহায্য প্রতিদান হিসেবে দেয়া হবে দক্ষিণ আফ্রিকা’কে।   


সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথাটি নেতানিয়াহু বলেছে জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে।

পাশের ছবিটি অনেকেই দেখেছেন।



এটা নেতানিয়াহুর জাতিসংঘ ভাষণের সময় তোলা।

যাতে ইরানের নিউক্লিয় কর্মকান্ডের ব্যাপারে নেতানিয়াহু বিশ্ববাসীকে তার মন গড়া তথ্য দেন।

তিনি বলেছিলেন, ইরান আর অল্প কিছুদিনের ভেতর পারমানবিক বোমা তৈরির একেবারে কাছে চলে যাবে।

এবং ২০১৫ সাল নাগাদ ইরানের কাছে পারমানবিক বোম থাকবে।

মজার ব্যাপার হল, এই ভাষণের আগে নেতানিয়াহু তার গোয়েন্দা বাহিনীকে জিজ্ঞাস পর্যন্ত করেন নি। সম্পূর্ণ ভ্রান্ত, মিথ্যা, মনগড়া কাহিনী বলেছেন তিনি জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে।  

 

এই ভাষণের মাত্র একমাস পর মোসাদ নেতানিয়াহুকে অফিসিয়াল রিপোর্ট করে ইরানের পারমানবিক কার্যক্রমের ব্যাপারে।

Spy cable এ ফাঁস হওয়া সেই মোসাদ রিপোর্টে বলা হয়, “Iran at this stage is not performing the activity to produce weapons”

 

আজ যখন এই নোট লিখতেছি, তখন গোটা দুনিয়াই জানে সত্যটা কি।

এর জন্য ফাঁস হওয়া তথ্যের আসলে কারোরই দরকার নেই।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন ইরানের সাথে নিউক্লিয়ার ডিলের দিকে যাচ্ছে। ইসরাইলের আপত্তি সত্ত্বে। এর পেছনে অবশ্য অন্য ব্যাপার স্যাপারও আছে। সেটা অন্যদিন লিখবো।

 

তো দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দাসংস্থাগুলো থেকে পাওয়া গোপন নথিপত্র ফাঁস হয় স্পাই কেবলে। তাতে দেখা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার ইরান দুতাবাস’কে কড়া নজরদারীর ভেতর রাখে দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দাসংস্থাগুলো।

প্রতিটি কর্মকর্তা, কর্মচারি এমনকি মালি বাবুর্চিদেরও চোখে চোখে রাখা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং তার নিকটবর্তী দেশগুলোতে বসবাসরত সন্দেহভাজন ইরানি নাগরিকদেরকেও নজরদারি করা হয়।

এতে বলা হয়, ইরান অত্যাধুনিক মিসাইল টেকনোলজি সংগ্রহ করতে যথেষ্ট তৎপর। দক্ষিণ আফ্রিকার বেসরকারি কিছু গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের সাথেও তারা যোগাযোগ করতেছে। একজন ডুয়েল ব্রিটিশ ও দক্ষিণ আফ্রিকান সিটেজেন এব্যাপারে অনেক বেশি তৎপর। যদিও তার ইরানি নাগরিকত্ব নেই।

স্পাই রিপোর্টে সেই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হয় নি।

তবে স্পাই কেবল অনুসারে, ব্রিটিশ গোয়েন্দাসংস্থা MI6 বারবার সতর্ক করে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ইরান সংক্রান্ত ব্যাপারে। এবং ব্রিটিশ সরকার ইরানের তৎপরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ও আতংকিত। ব্রিটিশ সরকার বিশ্বাস করে, ইরান দ্রুতই পারমানবিক বোমার দিকে যাচ্ছে। এবং রাশিয়া, উত্তর কোরিয়ার মত দেশ তাকে এব্যাপারে গোপনে সাহায্য করে যাবে। তবে ইরানের পারমানবিক বোম হবে গোটা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য আতঙ্কজনক। এতে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি দেশ নিউক্লিয় বোমা চাইবে। বিশেষ করে আমেরিকার মিত্র সৌদি এবং আরব আমিরাত।

 

 

স্পাই কেবলে ফাঁস হওয়া ডমুকেন্টে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাসংস্থাকে CIA বেশকিছু আলকায়দা সদস্য ও সন্দেহভাজন আল কায়দা সদস্যদের তালিকা সরবরাহ করে দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দাসংস্থাকে।

কারো কারো উপর নজরদারি করতে বলা হয়, কাউকে কাউকে নিউট্রালাইজড করতে বলা হয় তাতে।

 


স্পাই কেবলে উঠে আসে, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির গোপন তৎপরতা ও বিভিন্ন দেশের দুর্বলতা বুঝে সেগুলোকে নিজেদের অনুকুলে ব্যবহার করার কাহিনী।

Greenpeace এর মত পরিবেশবাদি সংগঠন’কে মোটেও ভালো চোখে দ্যাখে না পশ্চিমা গোয়েন্দাসংস্থাগুলো।

Greenpeace এর কাজ  climate change, deforestation, overfishing, commercial whaling, genetic engineering, and anti-nuclear issues. নিয়ে বিশ্বব্যাপী সামাজিক আন্দোলন তৈরি করা।

সেইসাথে Exxon mobil এর মত পশ্চিমা জ্বালানী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও তারা আন্দোলন করে। এসব কোম্পানির নানান অপকর্মের কথা বিশ্ববাসীকে তুলে ধরে।

CIA দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দাসংস্থাকে Greenpeace এর ডিরেক্টর Kumi Naidoo উপর চোখ রাখতে বলে।

  Kumi Naidoo দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক।

CIA তাকে ‘Dangerous’ person হিসেবে উল্লেখ করে। (ইনি আমাদের দেশের আনু মোহাম্মদ স্যারের মত )

 

তো কিসের জন্য Kumi Naidoo বিপদজনক? কার জন্য বিপদজনক ?

উত্তর, অবশ্যই মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থের জন্য।

 

এই রকম লক্ষাধিক ক্লাসিফাইড ফাইল ফাঁস করেছে spy cable…

Wikileaks যেমন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট, Edward Snowden যেমন NSA সংক্রান্ত ক্লাসিফাইড তথ্য বিশ্ববাসীর সামনে উন্মুক্ত করেছে, তেমন Spy cable ফাঁস করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দাসংস্থার লক্ষলক্ষ ক্লাসিফাইড ডকুমেন্ট।

নিশ্চিতভাবেই দক্ষিণ আফ্রিকা ও তার শত্রু মিত্র দেশগুলোর সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুদুরপ্রসারি প্রভাব ফেলছে এবং ফেলবে এসব ক্লাসিফাইড ডকুমেন্টস।

এদের ভেতর সবচেয়ে আলোচিতগুলো উপরে লিখা হল।

তবে দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দাসংস্থা নিয়ে বহু আগেই ব্রিটিশ দৈনিক The Guardian বলেছিলো, “it is politically factionalized and penetrated by foreign agencies”  

 

২০১২ সালে মিশরে নির্বাচনে মোহাম্মদ মোরসি জয়ী হলে ইসরাইল কেবল বার্তায় দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে তাদের কনসার্ন তুলে ধরে। আবার সিসি ক্ষমতায় এলে ইসরাইল আনন্দ প্রকাশ করে।

n January 2014, the respected Israeli military analyst Ehud Yaari hailed Sisi's "intimate" friendship with Israel.

 He said, "We have co-operation, unprecedented in scope and intensity and if I may say so, intimacy between Israel, the Egyptian military and the intelligence service"

সিসি’র সরকারকে সৌদি আরব আর আরব আমিরাত সর্বাত্মক ব্যাকআপ দিয়ে গেছে। গায়ের জোরে সিসি ঠিকই ক্ষমতায় আছে অন্তত এই নোট লিখার সময়ও।

 

ইথোওপিয়ার রাজধানীতে আফ্রিকার ইউনিয়নের সম্মেলনে আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারপারসন Nkosazana Dlamini-Zuma কে হত্যা করার চেষ্টা করে সুদানের গোয়েন্দাসংস্থার লোকেরা। যদিও শেষ মুহূর্তে কোনএক কারণে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

ব্যাপারটি স্পষ্ট নয়।

Diamini Zuma দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন।

 

স্পাই কেবল থেকে জানা যায়, মাঝে মাঝে এক সাথে কাজ করলেও দক্ষিণ আফ্রিকার স্পাই’রা ইসরাইলের মোসাদের স্পাই’দের পছন্দ করে না। তাদের ভাষায় মোসাদের অপারেটিভরা "extremely arrogant"

মোসাদের এজেন্টদের কাজকর্মও তারা গোপনে পর্যালোচনা করেছে দিনের পর দিন। এদের ভেতর একজন’কে তারা ২৪/৭ অনুসরণ করতো ২০১২ সালে।

তাকে অনুসরন করে দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দারা আবিস্কার করলো, দক্ষিণ আফ্রিকার ইহুদি কমিউনিটি থেকে শুরু করে একেবারে প্রেসিডেন্ট অফিস, সবজায়গায় তার ইনফরমেশন সোর্স আছে।

মোসাদের এই স্পাইকে একদিন ডেড ড্রপের মাধ্যমে এক ব্যক্তিকে কিছু তথ্য দিতে দ্যাখে দক্ষিণ আফ্রিকানরা। যারা স্পাই বিজনেস সম্পর্কে আইডিয়া রাখেন, তাদের জানার কথা ‘ডেড ড্রপ” মানে কি।

তো যে ব্যক্তিকে মোসাদ তথ্য দিচ্ছিলো, অবাক করা ব্যাপার হল সে মুসলিম অরিজিনের। অর্থাৎ কোনো এক মুসলিম দেশের গোয়েন্দা সংস্থার লোক।

এই রিপোর্ট ফাঁস হবার মুহূর্তে দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দারা এটা আবিস্কার করতে পারে নি যে মুসলিম দেশটি স্পেসিফিকলি কোনটি।

মোসাদের এজেন্টদের অদ্ভুত জীবনযাপন নিয়ে আলোচনা হত দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দাদের মাঝে।

 

২০১৪ সালে ইসরাইল গাজা’তে আবার যখন নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়, তখন দক্ষিণ আফ্রিকাতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। দক্ষিণ আফ্রিকা ঐতিহাসিকভাবেই প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে থাকে। যেটা ইসরাইল খুব ভালো চোখে দ্যাখে না।

২০১৪ সালে ইসরাইলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে দক্ষিণ আফ্রিকাতে শুরু হয় “ইসরাইলের পন্য বয়কট” আন্দোলন।

এসময় মোসাদ দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার’কে সরাসরি হুমকি দেয়, “যেভাবেই হোক এই আন্দোলন বন্ধ করো। অন্যথায় Stuxnet ভাইরাস দিয়ে যেভাবে ইরানের নিউক্লীও কার্যক্রমকে আঘাত করা হয়েছিলো, সেভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাংকিং ইন্ড্রাস্ট্রিকে ধসিয়ে দেয়া হবে”

 

দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দাসংস্থা দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারকে এই বলে সতর্ক করে যে, “ইসরাইল দক্ষিণ আফ্রিকার সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেলে মোসাদ অফেনসিভ এসপিওনাজ শুরু করবে। দক্ষিণ আফ্রিকার ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিগুলো এই মুহূর্তে যথেষ্ট ভলনারেবল বড় ধরনের সাইবার আক্রমন সামাল দিতে”

 

অর্থাৎ দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার একরকম রণেভঙ্গ দিতে বাধ্য হয় ইসরাইলের হুমকি ধামকির কাছে। ফলাফল, “ইসরাইলের পন্য বয়কট” আন্দোলনকে সরকার কৌশলে বন্ধ করে।

 

যে আমেরিকা’কে যেকোনো দেশে নির্বাচনের পর্যবেক্ষণ হিসেবে না ডাকলে আজকাল সেই দেশের নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় না, lolz… স্পাই কেবল থেকে দেয়া যায়, আফ্রিকান ইউনিয়নের নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মোটা অংকের টাকা ঢেলে নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে বেশ জোরেসোড়ে।

 

ব্রিটিশ গোয়েন্দাসংস্থা MI6 একজন নর্থ কোরিয়ার এজেন্টকে মোটা টাকার বিনিময়ে নিজেদের পক্ষে এনেছে। সেই ব্যক্তির দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিকত্বও আছে। ফলাফল, MI6 এর অনুরোধে তাকে দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে নর্থ কোরিয়াতে পাঠানো হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দারা ব্যাপারটি মনিটর করে।

(** অথচ ব্রিটিশ আইনে কোনো ফরেন ব্যক্তিকে ঘুষ দিয়ে গোয়েন্দাগিরি করানো আইনত নিষিদ্ধ)

কিন্তু বাস্তব দুনিয়াতে কি আর এসব আইনকানুনে কাজ চলে ? চলে না।

 

স্পাই কেবলে ফাঁস হওয়া এই রকম অজস্র তথ্য দক্ষিণ আফ্রিকা’কে যথেষ্ট বিপদে ফেলেছে। এই বিপদ থেকে হয়ত বের হতে সময় লাগবে। বিশেষ করে মিত্র দেশগুলোর বিশ্বাস ফেরাতে তাকে কাজ করতে হবে।

তবে এটা ঠিক, আমরা পর্দায় যা দেখি, টেলিভিশনে যা শুনি, এসবের পেছনে এক ভিন্ন দুনিয়া আছে। যে দুনিয়ার খবর পেতে গেলে Edward Snowden বা ব্রাডলি ম্যানিং এর মত কাউকে না কাউকে তথ্য ফাঁস করতে হয়। জীবনের ঝুকি নিয়ে।

তবে আমাদের উপকার কি ?

আমাদের উপকার এই যে, শক্তিধর দেশগুলো মুখোশের আড়ালে নিজ নিজ চেহারা লুকিয়ে রাখে, এব্যাপারে কিছুটা হলেও ধারণা পাওয়া। আর আসল চেহারাটা কিছুটা হলেও অনুমানের চেষ্টা করা।


(আর্টিকেলটি প্রথম লিখেছিলাম ২০১৫ সালে আমার ফেসবুক নোটে) 

No comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.