Saturday, January 23, 2021

হিটলারের সোনা চুরি

 গত ২০০ বছরে ইউরোপের একটি দেশ নিজেকে যুদ্ধ হানাহানি থেকে একেবারেই দূরে রেখেছে। ইন্টারেস্টিং বিষয় হল, ইউরোপে যুদ্ধ হলেই এই দেশটি নানাভাবে গুটিবাজি করে লাভবান হয়।

 

আসুন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনার আলোকেই দেশটির বিতর্কিত ভুমিকা আর গুটিবাজির কাহিনী বলি।

 

জার্মানিতে নাৎসি বাহিনী ক্ষমতায় আসার সাথেসাথেই হিটলারের বিরোধীরা, বিশেষ করে নাৎসি বাহিনীর মুল টার্গেট, ইহুদীরা ভয় পেতে শুরু করে। ইহুদীরা ছিলো অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী।

 তো তারা টাকা পয়সা জার্মানি থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করে ১৯৩৩ সালের পর থেকেই। এখন প্রশ্ন, টাকা সরিয়ে কোথায় রাখবে? বুঝতেই পারতেছেন কোথায় ! সুইজারল্যান্ড। অর্থাৎ সুইস ব্যাংকগুলোতে।

কেবল ইহুদীরাই নয়, হিটলারের বিরোধিতা করা দলগুলোও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করে। বিশেষ করে যখন নাৎসি বাহিনী পূর্ণ কর্তৃত্ব নিতে শুরু করে জার্মানিতে।

একসময় আগ্রাসী নাৎসিরা ইহুদীদের ব্যবসা বানিজ্য প্রতিষ্ঠান জোর দখল করে নেয় এবং নিজেদের দলের ভেতর ভাগভাটোয়ারা শুরু করে। ইহুদীরা জীবন বাঁচাতে পানির দামে রাষ্ট্রের কাছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তুলে দিতে বাধ্য হয়। একে বলা হত, “Robbery on a massive Scale”

 

লূই ডি রথচাইল্ডের মত ক্ষমতাধর ব্যক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও কেড়ে নেয় সরকার। ধনী ইহুদীরা জার্মানি ছাড়তে শুরু করে। ক্ষমতাধর ইহুদি ও নাৎসি বিরোধিরা তাদের জামানত বিদেশে সরিয়ে নিতে শুরু করে। এবং বড় অংশ রাখে সুইজারল্যান্ডে। কারণটা সবার জানা। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকের কড়া গোপনীয়তা, নিরাপত্তা আইন। আপনি সুইস ব্যাংকে টাকা রাখবেন। আপনার একাউন্টে কোনো নামধাম খোঁজখবর তারা গোপন রাখবে। (এতে কিছু ঘাপলাও আছে। সেই ব্যাপারে পরে বলবো ) বিষয়টি জটিল।

 

তো জার্মানির ধনী ইহুদিদের টাকা পয়সা জমা হতে থাকে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে। আবার হিটলারের নাৎসি বাহিণীও টাকা জমানো শুরু করে সুইজারল্যান্ডে। কি? ঘোলাটে হয়ে গেলো ব্যাপারটা? Clear করতেছি।

১৯৩৮ সালে জার্মানি অস্ট্রিয়া দখল করে নেয়। (ভুলে যাবেন না, অস্ট্রিয়া কিন্তু হিটলারের জন্মভুমি। তার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিলো অস্ট্রিয়া আর জার্মানিকে এক করার) তো হিটলারের জার্মান বাহিণী অস্ট্রিয়া দখল করে বিনা বাধায়। অস্ট্রিয়া আর জার্মানি, দুই দেশের (কিন্তু একই জাতের) মানুষ খুশি হয় অস্ট্রিয়া ও জার্মানির একীভূতকরনে।

হিটলার অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে লিকুয়েডেট করে। ফলে ভিয়েনার সেন্ট্রাল ব্যাংকের যাবতীয় সম্পত্তি (অর্থাৎ সোনা আর টাকা পয়সা) সরিয়ে নেয়া হয় জার্মানির কেন্দ্রীয় ব্যাংক Reichsbank (রাইশ ব্যাংক) এর ভল্টে। (অর্থাৎ একদেশ। সেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংকও একটি হবে)

৯০ হাজার কেজি সোনা আর বিলিয়ন ডলারের সমমুল্যের সম্পত্তি সরিয়ে নেয়া হয় ভিয়েনা থেকে জার্মানিতে।



 

অর্থাৎ বুঝতেই পারতেছেন, অস্ট্রিয়া জার্মানির একীভূতকরন হিটলারের জন্য কেবল পলিটিক্যাল সাফল্যই ছিলো না। এটা ছিলো নাৎসি জার্মানির জন্য আর্থিকভাবেও লাভজনক।

 

তো, লোভ এক ভয়ঙ্কর জিনিস।

সেইবছরের অক্টোবরেই চেকোস্লোভাকিয়ার সংখ্যালঘু জার্মানদের রক্ষাকরার অজুহাত দেখিয়ে হিটলার চেকোস্লোভাকিয়া দখল করে নেয়। খুবই সহজে। চেক সরকার হিটলারের হাত থেকে তাদের asset বাঁচানোর জন্য চেকোস্লোভাকিয়ার রাজধানী প্রাগের সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে সোনা আর টাকা পয়সা ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডে সরিয়ে নিতে শুরু করে। যদিও লাভ হয় নি। নাৎসিরা চেক সরকারকে চাপ দিয়ে আবার সব প্রাগে ফিরিয়ে আনে। সেখান থেকে যথারীতি সোনা আর অর্থের গন্তব্য হয় জার্মান সেন্ট্রাল ব্যাংকে। সেই আমলের ৬৬ মিলিয়ন ডলার মুল্যের সোনা ও অর্থ।

 

অর্থাৎ ভিন্নদেশ দখল করা হিটলারের জন্য বেশ লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হতে শুরু করে। একটা দেশ দখল করো, এরপর সেইদেশটিকে নিজ সম্রাজ্যে একীভূত করো। এবং সেই দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংক লিকুইডেট করো। সোজা হিসাব। সরল লুটপাট।  

 

১৯৩৯ সালের শুরু থেকেই ইউরোপের আকাশে যুদ্ধের আভাস ভাসতে শুরু করে। বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর জার্মানির ভেতর করা “মলোটভ-রিবেনটপ প্যাক্ট” একরকম যুদ্ধের দোয়ার খুলে দেয়। এটা মুলত ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়ন আর জার্মানির ভেতর ইউরোপ নিয়ে ভাগাভাগির প্রথম পর্বের হিসাব কিতাব।

 

তো যাই হোক, হিটলার পোলান্ড আক্রমন করার মাধ্যমে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ব্রিটেন এবং ফ্রান্স, জার্মানিকে বারবার সতর্ক করেছিলো পোলান্ড আক্রমনের ব্যাপারে। কিন্তু হিটলার সেই হুমকি উপেক্ষা করে পোলান্ড আক্রমন করলে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ব্রিটেন এবং ফ্রান্স অফিসিয়ালি জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

হিটলার পোলান্ড দখলের পর প্রথম ধাক্কা খায়। পোলান্ডের রাজধানী warshaw এর সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে পোলিশরা সোনা সরিয়ে রোমানিয়া আর তুরস্ক ঘুরে পাঠিয়ে দিয়েছে ফ্রান্সে। অর্থাৎ পোলান্ড দখল করে পোলিশ সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে কিছুই পান নি হিটলার।

 

এরপর ১৯৪০ সালের মে মাসে নেদারল্যান্ড আক্রমন করে হিটলার। ভয়াবহ লুটপাট চালায় সেখানে। নেদারল্যান্ডের সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে ১৬৩ মিলিয়ন ডলারের সমমুল্যের সোনা লুটপাট করে জার্মানি। নেদারল্যান্ড ছিলো একেবারেই অপ্রস্তুত। জার্মানির নেদারল্যান্ড আক্রমনটা ছিলো আনএক্সপেক্টেড।

 

এরপর বেলজিয়ামের পালা।

কিন্তু বেলজিয়াম অনুসরন করেছিলো পোল্যান্ডকে। ফলাফল, বেলজিয়ামের সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে হিটলার কিছুই পেলো না।

১৯৪০ সালের জুন মাসেই নাৎসি বাহিনীর হাতে ফ্রান্সের পতন হয়। প্যারিসের পতনের আগে ফ্রান্স তার ভল্টের সোনার একটা বড় অংশ পাঠিয়ে দেয় পশ্চিম আফ্রিকার ডাকার আর ক্যারিবিয় ফ্রেন্স কলোনিতে।

১৯৪২ সালে ভিসি ফ্রান্সের পাপেট সরকারকে দিয়ে হিটলার এসব সোনাদানার একটা বড় অংশ ফিরিয়ে আনে। হিটলার হয়ত গোল্ডের সমগ্র মজুদই নিজের কুক্ষিগত করতে পারতো, কিন্তু মিত্রবাহিনী ধীরে ধীরে জয় পেতে শুরু করে। প্রথমে আফ্রিকাতে, এবং পরে ইউরোপে।

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরে যায় স্তালিনগ্রাডের যুদ্ধের পর। এরপর ফ্রান্সে মিত্র বাহিনীর ল্যান্ডিং। সবমিলিয়ে হারতে শুরু করে হিটলারের পরাক্রমশালী বাহিনী। ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো সবারই হয়ত জানা। পূর্বে সোভিয়েত আর্মি, পশ্চিমে মার্কিন, ব্রিটিশ’দের মত সম্মিলিত মিত্র বাহিনীর কাছে জায়গা হারাতে শুরু করে নাৎসিরা।  

এবার উল্টো হিটলার ব্যাকফুটে চলে যায়।

এবার দেখুন ইন্টারেন্সটিং ব্যাপারটা।

সমগ্র বিশ্বযুদ্ধে একটি দেশ একেবারে নিউট্রাল ছিলো। সেটা হল সুইজারল্যান্ড। যেহেতু সে নিউট্রাল, সেহেতু সেই হিটলারের সাথে বিজনেস করতে পারবে। (ব্যাপারটা খেয়াল করুণ) সে যদি হিটলারের সাথে বিজনেস না করে, তাহলে সেটা হবে মিত্র বাহিনীর পক্ষে অবস্থান নেয়া। আবার সে মিত্র বাহিনীর সাথেও বিজনেস করবে। কারণ যদি সে মিত্র বাহিনীর সাথে বিজনেস না করে, তাহলে তার নিউট্রাল অবস্থান নষ্ট হবে। সে তখন হয়ে যাবে হিটলারের পক্ষের। অর্থাৎ নিউট্রালিটির নামে আসলে সে দুই ঘাটের পানিই খাবে। খেয়েছেও তা।

নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচতে প্রথম দিকে ইহুদীরা যেমন তাদের টাকা পয়সা সুইস ব্যাংকে জমা করতে শুরু করে, তেমন যখন হিটলার একটার পর একটা দেশ দখলে ব্যস্ত, তখন সেইসব দেশের মানুষেরাও তাদের টাকা পয়সার নিরাপত্তার জন্য সুইস ব্যাংকের শরণাপন্ন হয়। আবার যুদ্ধের শেষ দিকে যখন হিটলার আর তার নাৎসি জার্মানি ব্যাকফুটে চলে যায়, তখন তারাও তাদের টাকা পয়সার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শরনাপন্ন হয় সুইজারল্যান্ডের। অর্থাৎ গোটা বিশ্বযুদ্ধে সুইজারল্যান্ডের খালি লাভই হয়েছে। টাকা আর টাকা। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সোনা মজুদ হয়েছে সুইস ব্যাংকের ভল্টে।

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পরার পর হিটলারের সাথে ইউরোপের প্রায় সবগুলো দেশের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। দীর্ঘ বিশ্বযুদ্ধ চালাতে হিটলারের প্রচুর অস্ত্রের দরকার পড়তে থাকে। সবটা জার্মানিতে প্রস্তুত করতে হিমশিম খেতে থাকে জার্মানি। ফলাফল, সুইজারল্যান্ডের কাছে ক্যাশের বদলে আর্টিলারি সেল কিনতে শুরু করে জার্মানি। (এতেও সুইজারল্যান্ডের নিউট্রালিটি খোয়া যায় নি। তার কথা, নিউট্রালিটি রক্ষায় সে হিটলারের সাথে বিজনেস করতে বাধ্য। বিজনেস না করলেই সেটা হবে মিত্র বাহিনীর পক্ষে অবস্থান নেয়া)

 

আবার জার্মান ও ইউরোপের অন্যসব দখল হয়ে যাওয়া দেশ থেকে ইহুদিরা প্রাণে বাঁচতে সুইজারল্যান্ডে আশ্রয় নিতে গেলে সেখানেও সুইজারল্যান্ড নিউট্রালিটি রক্ষায় ধুয়া তুলে হাত পরিষ্কার রাখে। নাৎসিরা ইহুদিদের পাসপোর্টে “J” লিখে দিতো। এই পাসপোর্টধারীদের সুইজারল্যান্ড সরকারকে আশ্রয় দিতে নিষেধ করেছিলো হিটলার। অপরদিকে আমেরিকা ও ব্রিটেন অনুরোধ করেছিলো সুইজারল্যান্ড’কে আশ্রয় দিতে। এবার সুইজারল্যান্ড নিউট্রালিটির বদলে ‘নিরাপত্তার’ অজুহাত দিলো। অর্থাৎ হিটলারের বিরুদ্ধে গেলে হিটলার সুইজারল্যান্ড আক্রমন করতে পারে। এই ভয়।

অর্থাৎ কখনো নিউট্রালিটি কখনো নিরাপত্তার অজুহাতে সুইজারল্যান্ড ফায়দা তুলেছে। হাত পরিষ্কার রেখেছে।

 

এই টুকু পড়ার পর হয়ত আপনাদের মাথায় দুইটা প্রশ্ন জেগেছে। এক, হিটলার তো গোটা সুইজারল্যান্ড দখল করে নিলেই খেলা চুকে যেতো।

উত্তর, নাহ। সুইজারল্যান্ডকে হিটলার ব্যাকআপ হিসেবে রেখেছিলো। হিটলারের আগ্রাসনের কারণে গুটি কয়েক দেশ ছাড়া সবাই জার্মানির সাথে সম্পর্ক বাতিল করে। হিটলার তখন সুইজারল্যান্ডকে মিডেলম্যান হিসেবে ব্যবহার করে। জার্মান বিজনেসম্যানরা সুইজারল্যান্ডকে ভায়া করে লেনদেন চালাতে শুরু করে।

ব্যাপারটা clear করি। ধরুন, আপনার হাতে ১০ কেজি স্বর্ণ আছে। তো আপনি ভারত থেকে কিছু জিনিস কিনতে চান। কিন্তু ভারতের সাথে আপনার সম্পর্ক খারাপ। আর সরাসরি সোনা বা টাকায় লেনদেনও করতে পারবেন না। তখন আপনি সুইজারল্যান্ডে ১০ কেজি স্বর্ণ জমা রাখলেন। টাকা জমা করলেন। এবার সুইস ফ্রাঙ্কে (সুইজারল্যান্ডের currency) তে সুইজারল্যান্ডের কোনো মিডেলম্যান মারফৎ ভারতের ব্যবসায়ীর সাথে লেনদেন করলেন। এই যা।

এটা একটা দিক। আরো একটা দিক হল, হিটলার যদি in case, যুদ্ধে হারতে থাকে, তাহলে নাৎসিদের নিজেদের টাকা পয়সার হেফাজতের জন্যেও সুইজারল্যান্ড দরকার। অর্থাৎ সুইজারল্যান্ড দরকার সবার। মিত্রবাহিনী হোক, বা নাৎসি বাহিনী। Switzerland is the safe Heaven of foreign money, after all.

 

আরেকটি প্রশ্ন আসতে পারে, ইহুদীরা তো সুইজারল্যান্ড যেতেই পারলোনা। তাহলে অর্থ রেখেছিলো কিভাবে?

উত্তর, সুইজারল্যান্ডে টাকা রাখার জন্য আপনার আসলে সুইজারল্যান্ড যাবার দরকার নেই। আপনি বাংলাদেশে বসেই কাজটি করতে পারেন। সেসব নিচে বলতেছি।

 

 

তো যা বলতেছিলাম।

হিটলার সুইজারল্যান্ডে লুটপাট করা সোনা দিতো। আর বিনিময়ে hard currency পেতো। যা দিয়ে অস্ত্র বানাতো বা কিনতো।

সুইজারল্যান্ডের অস্ত্র কোম্পানিগুলোও হিটলারের কাছে অস্ত্র বেচতো। অর্থাৎ সবদিক দিয়েই দুহাত ভরে কামাতে শুরু করে সুইজারল্যান্ডে।

আমেরিকা ব্রিটেন সবই বুঝতো। জানতো। সুইস অস্ত্র ফ্যাক্টরিতে তারা বোমা বর্ষণ করতে চেয়েছিলো। যদিও শেষ মুহূর্তে বিরত থেকেছে সেই সুইস নিউট্রালিটির কারণে। আর দিনশেষে সুইজারল্যান্ডকে তো তাদেরও দরকার !!  

 

মুলত ১৯৪৩ সালের বসন্তেই হিটলারের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন হাওয়াই মিলিয়ে যায়। সোভিয়েত বাহিনীর কাছে সলিল সমাধি হতে শুরু করে হিটলারের আর্মি ডিভিশনগুলো। হিটলারের একসময়ের স্ট্রাটেজিক্যাল মিত্র স্তালিন এবার হায়নার মত ধেয়ে আসতেছে জার্মানির দিকে। হিটলারের ভালো করেই জানে, সে যদি শয়তান হয়, স্তালিন শয়তানের বাপ !! ( হিটলারের একটা বড় ভয় ছিলো স্তালিনের হাতে হিউমিলিয়েট হবার )

তো সে অন্য ব্যাপার।

 

তো, ১৯৪৩ সালের শেষদিকেই নাৎসিরা বুঝতে পারে তারা হেরে যাবে এবং জার্মানি দখল হয়ে যাবে। ফলে এবার রাইশ ব্যাংকের টাকা পয়সা তারা সরাতে শুরু করে সুইজারল্যান্ডে। থার্ড রাইটের পতন হলেও ফোর্থ রাইটের উত্থানের কথা তারা আগেই ভেবেছিলো। এবং ভবিষ্যৎ ফোর্থ রাইটের উত্থান যাতে সহজ হয়, সেইজন্য আগে থেকেই সুইস ব্যাংকে টাকা জমাতে শুরু করে নাৎসিরা।



 

১৯৪৪ সালে ব্রিটিশ মার্কিন গোয়েন্দা দল এইসব লেনদেনগুলো ট্রেস করতে শুরু করে। শুরু হয়, Operation safe heaven

 

১৯৪৫ সালে নাৎসি বাহিনীর পতনের আগ পর্যন্ত ৬০ বিলিয়ন ডলারের লেনদেন ট্রেস করেছিলো মার্কিন আর ব্রিটিশ গোয়েন্দারা। (ধারণা করাই যায় যে এটা মুল লেনদেনের একটা অংশ মাত্র)

ট্রেস করা ৬০ বিলিয়ন ডলারের একটা অংশ রাখা হয়েছিলো হিটলারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী Joachim von Ribbentrop এর একাউন্টে। ১৯৪৬ সালে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়। ফাঁসির মঞ্চে সে বলেছিলো, “God protect Germany. God have mercy on my soul. My final wish is that Germany should recover her unity and that, for the sake of peace, there should be understanding between East and West. I wish peace to the world."

 

৩০ জনেরও বেশি সুইস উকিল ব্যারেস্টারদের নাম ছিলো Operation safe Heaven ডকুমেন্টেসে। এসব সুইস উকিলের একাউন্টে নাৎসি অর্থ জমা ছিলো। (অর্থাৎ আপনি আপনার টাকা সুইজারল্যান্ডের কোনো বিশ্বস্ত বন্ধুকে দিলেন। সে তার নামে সুইস ব্যাংকে সেই টাকা জমা রাখলো। আপনার প্রয়োজনে তাকে বললে সে টাকা তুলে পাঠিয়ে দেবে। ব্যাপারটা এমন )

 

নুরেমবার্গে যখন নাৎসি বাহিনীর কুখ্যাত নেতাদের বিচার শুরু হয়, তখন এরা নিজেদের পক্ষে বড়বড় উকিল ব্যারেস্টার নিয়োগ দিয়েছিলো মুলত এই টাকার জোরে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জার্মানিতে ফোর্থ রাইট গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা করে গিয়েছিলো নাৎসিরা তাদের পতনের ঠিক অন্তিমক্ষণে। নেদারল্যান্ড ও ডেনমার্কে নাৎসি মতাদর্শ অনুসরনকারী ব্যবসায়ীদের নামে সুইসব্যাংকে টাকা জমা করা হয়েছিলো। উদ্দেশ্য ছিলো নতুন জার্মানিতে গোপনে গোপনে ইন্ডাস্ট্রিয়াল কম্পেক্স গড়ে তোলা হবে। ফোর্থ রাইটের ফাইনান্সিয়াল শক্তি বাড়ানো হবে। এরপর সময় সুযোগ মত আবার রাজনৈতিকভাবে মাথাতুলে দাঁড়াবে নাৎসিরা।

(আমাদের দেশে জামায়াতি ইসলাম কিন্তু এইকাজে সফল। তারা একাত্তরে এতো অকাম কুকাম করে, স্বাধীনতার বিরোধিতা করেও ঠিকই আজ চার দশক পর অর্থনৈতিকভাবে বেশ ভালোমতই প্রতিষ্ঠিত )

 

জার্মানিতে নাৎসিরা এইকাজটা করতে গিয়েও করতে পারে নি Operation safe heaven এর কারণে। নাৎসিদের ভবিষ্যৎ প্ল্যানগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে বেশ খানিকটা সক্ষম হয়েছিলো পশ্চিমারা )

 

নাৎসি বাহিনী রাইশ ব্যাংকের ভল্টের সোনার একটা অংশ ব্যাভেরিয়াতে ট্রাকে করে নিয়ে পাহাড়ের গুহায় লুকিয়ে রেখেছিলো। এসব পরে মিত্রে বাহিনী গিয়ে উদ্ধার করে।

এই লুকানোর দায়িত্বে নিয়োজিত একজন Nazi কর্নেল Freidrich Josef Rauch মার্কিনীদের সাথে আতাত করে লুকিয়ে থাকা সোনার খোঁজ দেয়। সেই সোনা মাটি খুড়ে তুলতে তিন সপ্তাহ লেগেছিলো। (এটা কিন্তু লুকানো সোনার একটা অংশ )

রাইশ ব্যাংকের বিশাল স্বর্ণ ভান্ডারের এক বিশাল অংশ তখন সুইজারল্যান্ডের অজানা কোনো আকাউন্টে। নুরেমবার্গে বড়বড় নাৎসি নেতার বিচার ও মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হলেও তাদের ব্যক্তিগত অর্থ সম্পদ নিরাপদেই ছিলো সুইস ব্যাংকে।



 

তো যাই হোক, আবার সুইস ব্যাংকে ফেরা যাক।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে আমেরিকা ও ব্রিটেন আলোচনায় বসে সুইস সরকারের সাথে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া জার্মানি আবার নতুন করে গড়ে তোলার জন্য প্রচুর টাকার দরকার। সুইস সরকার বলে, রাইশ ব্যাংকের ৪০০ মিলিয়ন ডলার মুল্যের স্বর্ণ মজুদ আছে তাদের কাছে। (এটা ছিলো আসল হিসাবের অনেক অনেক কম) (সুইস সিক্রেসি বলে কথা ! )

৬০ মিলিয়ন ডলার সুইজারল্যান্ড তুলে দিতে রাজি হয় মিত্র বাহিনীর হাতে।

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ৬০ মিলিয়ন ইহদিকে হত্যা করা হয়। এদের অনেকের টাকা পয়সা জমা ছিলো সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে বেঁচে থাকা ইহুদীরা তাদের মৃত আত্মিয় স্বজনের জমানো টাকা তুলতে চাইলে বাধে বিপত্তি। অনেক ইহুদি তাদের উত্তরাধিকারসুত্রে রেখে যাওয়া ন্যায্য সম্পদ উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। সুইস সরকার ইচ্ছাকৃত নানান গরমিল দেখাতে শুরু করে। তারা মৃত স্বজনের Death certificate চায়। এটা ছিলো এক চুড়ান্ত রসিকতা। কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিহত মানুষদের Death Certificate কিভাবে থাকবে ? !!!    

(ওই যে, উপরে বলেছিলো, বেশি সিক্রেসি, কিন্তু এর ঝামেলাও আছে। আমাদের বাংলাদেশের ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের ৭ বিলিয়ন ডলারের অর্থ সুইস ব্যাংকে আটকে আছে এখন। কেন আটকে গেছে, সেটা জানা যায় নি। কিন্তু সুইস ব্যাংকের অতিরিক্ত সিক্রেসি আর নানান জটিল নিয়ম কানুনের কিছু ঘাপলা তো আছেই। ৭ বিলিয়ন ডলার দিয়ে একটা পদ্মা সেতু ইজিলি বানানো যায়। মুসা বিন শমসের বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য চেয়েছে তার অর্থ ফিরে পেতে)  

 

সুইস সরকার এই কঠিন ব্যাংকিং সিক্রেসি আইন করেছিলো কিন্তু ১৯৩০ সালের দিকে। উদ্দেশ্য ছিলো সম্ভাব্য নাৎসি আগ্রাসনে ইহুদীরা যাতে তাদের সম্পদ নিরাপদে রাখতে পারে, সেটা। অদ্ভুত ব্যাপার হল, সেই একই সিক্রেসি আইনের বলে এবার তারা ইহুদিদের জমিয়ে রাখা সম্পদ ফিরিয়ে দিতে গড়িমসি  করতে শুরু করে।

প্রায় ৫০ বছর ধরে হাজার হাজার ইহুদীরা সুইস ব্যাংক থেকে তাদের অর্থ উদ্ধারে ব্যর্থ হয়। কিন্তু এই সময় ইহুদীরা সমগ্র বিশ্বে, বিশেষ করে মার্কিন মুল্লুকে অনেক প্রভাবশালী হয়ে ওঠে।

ফলাফল, এবার সুইস ব্যাংকের হিপোক্রেসি আর জারিজুরির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে আমেরিকার ক্ষমতাধর ইহুদীরা। Edgar Bronfman ছিলেন সাবেক World Jewish Congress এর প্রেসিডেন্ট। তিনি দীর্ঘদিন সুইস ব্যাংকের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছিলেন। ১৯৯৫ সালে Edgar Bronfman সুইজারল্যান্ডে গিয়ে নেগোসিয়েশন করেন। ফলাফল, ৩২ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি ফিরিয়ে দিতে সুইস ব্যাংক বাধ্য হয় শ’খানেক ইহুদি পরিবারের কাছে। কিন্তু একটা ছিলো ছোট একটা অংশমাত্র।

ফলাফল, ক্ষিপ্ত  Edgar Bronfman আমেরিকা ফিরে এসে মার্কিন সিনেটের ব্যাংকিং কমিটিকে দিয়ে wall Street এর সুইস ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।

সালটা ১৯৯৬।

ভীষণ বিপদে পড়ে যায় সুইজারল্যান্ড। ১৯৯৭ সালে মার্কিন সিনেট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্লাসিফাইড তথ্য জনগনের সামনে প্রকাশ করে। তাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর সাথে সুইজারল্যান্ডের লেনদেনের তথ্যচিত্র তুলে ধরা হয়। সুইসব্যাংকের লোকদেখানো নিউট্রালিটিকে জনসম্মুখে তুলে ধরতে থাকে। ফলে ইমেজ সঙ্কটে পড়ে সুইজারল্যান্ড। নাৎসি কলাবোরেটর হিসেবে ট্যাগ খাওয়াটা সুইজারল্যান্ডের জন্য হবে সর্বনাশ। মার্কিন সিনেট হিসাব দেখায়, ২৮০ টি ট্রাক লোডেড হয়ে জার্মান থেকে স্বর্ণ গিয়েছিলো সুইজারল্যান্ডে। জি হা, ২৮০ টি ট্রাক !

 

সোনা যে কেবল রাইশ ব্যাংকের ভল্ট, বা বিভিন্ন লুটপাট করা দেশের ব্যাংক ভল্ট থেকে এসেছিলো, তায় নয়, ইহদিদের বাড়ি থেকে লুটকরা সোনাদানা গলিয়েও সোনার বার বানিয়ে চালান করে দেয়া হয়েছিলো। সেই সময় বুড়োরা দাঁত বাধাতো সোনা দিতে। সেইসময় এটা ছিলো আভিজাত্যের ব্যাপার। কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে মানুষের বাধানো সোনার দাঁত খুলে খুলে গলিয়ে সোনার বার বানানো হয়েছিলো।

 

এসব তথ্য প্রকাশের পর সুইস ব্যাংকিং ইন্ড্রাস্টির বারোটা বেজে যায়। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন এবার সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। সুইস ব্যাংক এবার ১০ বিলিয়ন ডলার পূর্ব ইউরোপে বসবাসরত ইহুদিদের ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু এতেও আমেরিকা সন্তুষ্ট নয়।

 


১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে ৪১ টি দেশ আলোচনায় বসে সুইজারল্যান্ডের সাথে। সুইজারল্যান্ড রাজি হয় সব গচ্ছিত সম্পদ ফিরিয়ে দিতে। ৫ টন স্বর্ণ ফিরিয়ে দেয়া হয় পোলান্ডকে। নাৎসি সোনার বারের রাসায়নিক বিশ্লেষণ শুরু হয়। বেশকিছু সোনার বারে ছিলো উচ্চ লেভেলের মারকারির উপস্থিতি। অর্থাৎ এগুলো কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে মানুষের খুলে নেয়া বাধানো দাঁত গলিয়ে বানানো হয়েছিলো।  

১৯৯৮ সালে মার্কিন সরকার সফল হয়। সুইস ব্যাংক তাদের কাছে গচ্ছিতো ইহুদিদের অর্থ ফিরিয়ে দিতে শুরু করে।

তবে এখানে আসে আরেকটা টুইস্ট। ৪ বিলিয়ন ডলার মুল্যের সোনার হিসাব আবার লাপাত্তা। ইন্টারেন্সটিং বিষয় হল, আমেরিকা নিজেই নাৎসিদের সোনার একটা অংশ গায়েব করেছে। হজম করেছে। এই অবৈধ স্বর্ণ দিয়েই প্রথমে OSS এবং পরে CIA এর covert operation এর funding দিতো সাধু আমেরিকা। সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে স্নায়ু যুদ্ধে যেমন আমেরিকা নাৎসি বিজ্ঞানীদের ঠিকই ব্যবহার করেছে, ঠিক একইভাবে নাৎসিদের চুরি করা অর্থ সোনাদানাও নিজেরা ব্যবহার করেছে গোপনে।

এবার নিশ্চয় বুঝতে পারতেছেন, কেন আমেরিকা দীর্ঘ ৫০ বছর (অর্থাৎ যতদিন সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিলো) ততদিন সুইস ব্যাংকের গায়ে হাতও দেয় নি। সবই রাজনীতি।

 

 

তো এই হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সুইস ব্যাংকের ভুমিকা।

আজও আমরা শুনি, দেশের অমুক ব্যবসায়ী, তমুক রাজনীতিবিদ, অমুক মাফিয়া ডনের টাকা পয়সা সব সুইস ব্যাংকে। অর্থাৎ সমগ্র ব্যাপারস্যাপার সম্পর্কে আমাদের আইডিয়া কম হলেও এটা আমরা বুঝি, ক্ষমতাধর কেউ বিশাল অংকের টাকা লুকিয়ে রাখতে আজও সুইস ব্যাংক ব্যবহার করে। সুইস ব্যাংক বলতে আসলে সুইজারল্যান্ডের একটা ব্যাংক হয়, বেশকিছু ব্যাংককে বোঝানো হয়। যেমন, UBS, Credit Swiss, Julius Bar ইত্যাদি। সবচেয়ে নামকরা UBS… সুইজারল্যান্ডের সব ব্যাংকই সুইস সিক্রেসি act এর আয়তায় পড়ে।

 

 

কিছুদিন আগে Wikileaks এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান আস্যাঞ্জ বলেছিলেন, সুইস ব্যাংকে থাকা টাকার একটা বড় অংশ আসে ইন্ডিয়ার মত দেশ থেকে।

ব্যবসায়ীরা তাদের লুটপাটের টাকা বা কালো টাকা নিরাপদে সুইস ব্যাংকে গোপন করে।

মিশরের সাবেক ডিক্টেটর হোসনী মোবাররকের পতনের পর সুইস ব্যাংক থেকে তার নামে রাখা ১১০ বিলিয়ন ডলার ফিরিয়ে আনা হয়েছিলো। অর্থাৎ বিল গেইটসের সম্পদের চেয়ে অনেক অনেক বেশি।

এই রকম বহুত আছে।

মধ্যপ্রাচ্যের আরব শেখ থেকে রাশিয়ার মাফিয়া ডনেরা। এদের টাকার গন্তব্য সেই সুইজারল্যান্ড।

 

ভারতের অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলো সুইস ব্যাংকের কথা। তিনি একটা ফোন নাম্বার সাংবাদিকদের দিয়েছিলো। ইন্ডিয়া থেকে ওই নাম্বারে ফোন করলে (আপনি যদি বড় কোনো পয়সাওয়ালা ব্যক্তি হন ) তাহলে পরদিন বিমানে করে সুইস ব্যাংকের লোকেরা চলে আসবে।

অর্থাৎ আপনি ভারতে বসেই সুইস ব্যাংকের কাজকর্ম সারতে পারবেন। সুইস ব্যাংকই আপনার কাছে আসবে। আপনাকে যেতে হবে না। আপনাকে কেবল পয়সাওয়ালা হতে হবে। এই যা।

অরবিন্দ কেজিরিওয়াল ভারতের সবচেয়ে ধনী ও ক্ষমতাধর ব্যবসায়ী মুকেশ আমভানির বিরুদ্ধে রীতিমত যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।

সংবাদ সম্মেলন করে, কখনো’বা টক শো’তে এসে তিনি মুকেশ আমভানির ব্যাপারে বলেছিলেন। তিনি দাবি করেন, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ভারত থেকে সুইস ব্যাংকে পাচার করেছেন মুকেশ ও মুকেশের মত রাঘব বোয়ালেরা। ভারতের ইনকাম ট্যাক্স বিভাগে কর্মরত অবস্থায় ধনুকুবদের এসব জারিজুরি নিজে দেখেছেন কেজিরিওয়াল।

 

 

যাই হোক, আজ এই পর্যন্ত থাক। ধন্যবাদ।


** আর্টিকেলটি প্রথম লিখেছিলাম ২০১৫ সালে। ফেসবুক নোটে। 

Read More »

পরীক্ষায় নকল করা কাহাকে বলে? কত প্রকার, কি কি?

 পরীক্ষায় নকল করা কাহাকে বলে? কত প্রকার, কি কি? চাইনিজ স্টুডেন্টরা প্রতিবছর National College Entrance Examination দেবার সময় সেটা দেখিয়ে দেয় :P

এই বছর ২৪৪০ জন পরীক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়েছে। কিন্তু তাদের নকল করার gadgets গুলো চীনের গোয়েন্দা বাহিনীকেও অবাক করে দিতে বাধ্য । যেমন নিচের ছবি’তে যেগুলো দেখছেন, এগুলো wireless hidden earpiece

কানের ভেতর দিলে বাইরে থেকে কেউ বুঝতেও পারবে না।



প্রায় চল্লিশজন বহিস্কার হয়েছে এই ডিজাইস ব্যবহার করার কারণে। 



এরা পরীক্ষার কেন্দ্রে এসে মোবাইল ঠিকই জমা দেয়। কিন্তু মোবাইল আসলে ভেতরে ভেতরে অন করা থাকে। এবং মোবাইলের সাথে কানের এই ইয়ারপিসের যোগাযোগ থাকে।

 

এই ছবি’তে দেখতেছেন শার্টের নিচে গেঞ্জির ভেতরে লুকানো স্পেশাল ডিভাইস।

It includes a wireless hidden earpiece, copper antenna to beam images, batteries to power the system, and a cheap mobile connected to the earpiece to get answers back.



একশো জনের বেশি বহিস্কার হয়েছে এই কারণে।

 

বাইরের থাকা নকলে সাহায্যকারী ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ ভালো মত মেইন্টেইন করার জন্য স্পেশাল ড্রোনও বানিয়ে এনেছে তারা। :P



 

নিচের ছবি'তে দেখছেন, পরীক্ষা কেন্দ্রর বাইরে থাকা  নিরাপত্তাকর্মী। নকল বন্ধ করতে তিনি রেডিও সিগন্যাল আছে কিনা চেক করতেছেন। হা হা হা ...





 

এই ছবি’তে দেখতেছেন লিখার কলমের ভেতর লুকানো স্পেশাল ক্যামেরা।

প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে পাঠিয়ে দেবে বাইরের সাহায্যকারীকে।



 

এই পুলিশ অফিসারের কাছে যে চশমাটা দেখতেছেন, তার ভেতরে ইঞ্জিনিয়ারিং করে একটা হিডেন ক্যামেরা বসিয়েছিলো এই ছাত্র। আর যে পয়সাটা দেখতেছেন, সেটা একটা রিসিভার।



 

এটাও নকল করার কলম। যাতে ক্যামেরা আছে। আবার ইরেজারের মত দেখতে রিসিভারও আছে।


 


 

এটা আরো একটা ড্রোন। নকল করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।


 


পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে পুলিশ নকল সরবরাহকারীদের কাছ থেকে কিছু যন্ত্রপাতি  সিজ করেছে :P


 


 

এই ঘড়ি দিয়ে যেমন ছবি তুলে বাইরে পাঠানো যায়, আবার বাইরে থেকে এতে উত্তর পাওয়া যায়।



 

এটা আরো একটা ডিভাইস। একধরনের কালি দিয়ে হাতে নকল লিখে আনে। সাথে যে কলম এনেছে, তার সাথে আলট্রাভায়োলেট লাইট আছে। এই লাইট মারলে হাতে লিখা নকল ভিজিবল হয়ে ওঠে।




মেয়েদের জন্য নকল করা কিছুটা হলেও ইজি। :P



১৩৫ কোটি মানুষের দেশে কলেজে ভর্তি পরীক্ষার জন্য একটাই পরীক্ষা হয়। বিশাল আয়োজন থাকে।



 

পরীক্ষার হলে রীতিমত চেক করে করেই পরীক্ষার্থী ঢোকানো হয়। কিন্তু তারা অনেক স্মার্ট। নকল ঠিকই আনে যার আনার ইচ্ছা থাকে।



 

ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিলে মা বাবা পরীক্ষার হলের বাইরে নানান ধর্মীয় আচার শুরু করে। বাচ্চার পরীক্ষা যাতে ভালো হয়, সেই জন্য।



 

পরীক্ষার হলে অস্ত্রধারী পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে সবসময়।



 

কিন্তু নকল কি আর থেমে থাকে ? 

 


চীন থেকে প্রতিবছর প্রচুর ব্রেন ড্রেইন হয়। মার্কিন মুল্লুকের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চাইনিজের পরিমাণ দিনদিন বাড়তেছে।

 



নকল করে যারা বহিস্কার হয়েছে, তারা কাজটি অন্যায় করলেও একটা কথা ঠিক। তাদের ট্যালেন্টের অভাব নেই। :P  হা হা হা ...

Read More »

পৃথিবীর কিছু আলোচিত ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি

 



  GRU (Main Intelligence Directorate) 

 

এটা রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি। এটা সরাসরি মিলিটারি দ্বারা পরিচালিত হয়। (under the Jurisdiction of Russian President ) 

রাশিয়ার বিখ্যাত KGB এর foreign operations directorate. (SVR) এর চেয়ে ছয়গুন বেশি এজেন্ট GRU এর আছে, যারা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে গুপ্তচর তথা গোয়েন্দাগিরি করে।

এর দৃষ্টিনন্দন সদর দফতর Khoroshevskoye shosse 76, Khodinka, Moscow তে অবস্থিত।



 

আমেরিকাতে এর সমতুল্য হতে পারে (MI + NSA ) ....

 

GRU এর কাজ মুলত বিভিন্ন দেশ, (বিশেষ করে আমেরিকা আর Nato এর সামরিক কর্মকান্ডের উপর গোয়েন্দাগিরি করা ) এছাড়া কেজিবিকে মিলিটারে সাপোর্ট দিয়ে থাকে প্রয়োজনে।

 

 

Committee for State Security ( or better known, as KGB )

 

এহেন কোনো মানুষ নাই, যার ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি নিয়ে হালকা পাতলা ধারণা আছে কিন্তু সে কেজিবি'র নাম জানে না। 

It was the most famous intelligence agency ever known...  it's a benchmark for all the intelligence agency out there...

 

একসময় লেনিনের চেকা, সেই চেকা থেকে স্তালিনের ডান হাত হিসেবে পরিচিত ল্যাভরানতি বেরিয়ার হাতে গড়া NKVD, এবং স্তালিন মারা যাবার পর সেই NKVD হয়ে যায় KGB...

একসময় এই কেজিবির দায়িত্বে আসেন Yuri Andropov ...

আর কি লাগে !!

সোভিয়েত আমলে KGB প্রধানরা একরকম ছিলেন পর্দার আড়ালের রিং মাস্টার। রাজণীতি, অর্থনীতি, সামরিক, টেকনোলজি, ব্যবসা, এহেন কিছু নাই যা নিয়ে কেজিবি কাজ করতো না। 

CIA spy জাদুঘরটি বলতে পারেন একরকম কেজিবির জন্য  Tribute ... 

চিন্তা করে দেখুন, CIA ছিলো স্নায়ু যুদ্ধের কেজিবির প্রতিদ্বন্দ্বী। অথচ সিআইএ স্পাই মিউজিয়ামের ভেতরে যত নামফলক, লিখা আছে, সবগুলোকে উপরে ইংলিশ ও রুশভাষা একসাথে লিখা হয়েছে।

সিআইএ স্পাই মিউজিয়ামে একটা বাচ্চা ঢুকলে সে কেজিবির ফ্যান হয়ে বেরিয়ে আসবে, এমন এক অবস্থা। 

 

খোদ প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েও, শত্রুও হয়েও, হারানো সেই শত্রুর প্রতি সম্মান জানাতে CIA ভোলে নি।

স্পাই মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে এযাবত কালে যত স্পাই গ্যাজেট সিআইএ উদ্ধার করেছে কেজিবি এজেন্টদের ধরে ধরে। ( বলতে পারেন, এটা সিআইএরও সাফল্যের নিদর্শন ) :P

যাই হোক,

কেজিবি এখন ইতিহাস। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এটার দুইটি ভাগ আলাদা করা হয়।

একটা হল FSB ....   যেটা মুলত দেশের ভেতরের ব্যাপারস্যাপার নিয়ে কাজ করে। এটা মার্কিনীদের FBI এর মত। এর হেডকোয়ার্টার মস্কোতে।



 

আরেকটা হল SVR..... যেটা একেবারে classic spy agency .... এটার প্রধান অফিস মস্কো থেকে কিছুটা দুরে। আপনি স্পাই থ্রিলার বলতে যা যা বোঝেন, সেটাই প্রতিদিন করে SVR

 


 

রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ছিলেন একসময়কার কেজিবি কর্নেল। 

সামরিক বেসামরিক সব ধরনের লোক এতে কাজ করে।

সুটেট বুটেট মানুষ থেকে শুরু করে রাস্তার ফকির রুপী গুপ্তচর... সবই আছে।

এর ১৫ হাজার সদস্যের একটা বড় অংশ খোদ  রাশিয়ার নাগরিকই নয় :P 

 

Central Intelligence Agency ( CIA )

 

বলতেই হবে, এটা ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির ভেতরে সবার উপরেই থাকবে। 

বিশ্বজুড়ে মার্কিন আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে CIA কাজ করে যাচ্ছে, যাবে।

সিআইএর একটা জিনিস আছে যা অন্য সকল এজেন্সির সাথে এর পার্থক্য গড়ে দেয়। আর সেটা হল বিপুল পরিমান টাকা।

একটা কথা আছে,

everything is for sale, everyone can be bought, all you have to say is the right price

আর সিআইএ এই জিনিসটাকে খুব ভালোমত নিজেদের পক্ষে নিতে পারে টাকার জোরে ! টাকা দিয়ে হয় না এমনকাজ খুব কমই আছে বোধ হয় !

 

তো সিআইএ ছিলো। আছে থাকবে। ভবিষ্যতে আরো আগ্রাসী হবে। সেইসাথে যার বন্ধু হিসেবে Mossad আর shin bet আছে, তাঁর কাজ যে অনেক সহজ হয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রে, সেটাও বলাবাহুল্য।

ল্যাংলি, ভার্জেনিয়াতে CIA হেড কোয়ার্টার অবস্থিত।



 

 

NSA (National security agency )

 

তথ্য প্রযুক্তির এই দুনিয়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও হাইটেক ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি।

এরা মুলত দুনিয়ার সেরা ম্যাথামেটিসিয়ান, ক্রিপটোগ্রাফার, কম্পিউটার প্রোগ্রামার, বিজ্ঞানী, আইটি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে গড়া এক সংস্থা। 

সিগন্যাল, তথ্য, ডাটা মনিটরিং, এনালাইসিস, বাগিং,  এসবই এদের প্রধানকাজ।

আর একাজে তাঁরা ব্যবহার করে এমন এমন সব সুপার কম্পিউটার যার বিবরণ শুনলে কেবল অবাক হয়ে থাকতে হয়। এও কি সম্ভব !! এসবও কি আছে !!

 


 

এইরকম এজেন্সি আরো আছে ব্রিটেনের GCHQ আর রাশিয়ার FSO.... চীনের MSS এর একটি ইউনিট এই কাজ করে থাকে।

 

নিচের ছবিতে দেখছেন, ব্রিটেনের GCHQ এর হেড অফিস।



 

 

MI 5 and MI 6

 

MI-5 মুলত রাশিয়ার FSB বা আমেরিকার FBI এর মত। অর্থাৎ দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারস্যাপার নিয়ে কাজ করে।

আর MI-6 হল CIA বা SVR বা Mossad এর মত...

 

মুভিতে জেমস বন্ড MI-6 এর এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।

নিচের ছবিতে দেখছেন, হেডঅফিস।



 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অভুতপূর্ব সাফল্য পেয়েছিলো SOE (MI 6) .... তথ্য সংগ্রহ, সার্ভিলেন্স এন্ড স্যাবোট্যাজে সুনাম আছে MI-6 এর...

 

Inter-Services Intelligence ( ISI)

 

কুটনা পাকিস্তানের সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত বিতর্কিত গোয়েন্দাসংস্থা। এখন আমরা ISI বলতে যেটা বুঝি, সেটা মুলত জিয়াউল হক ক্ষমতায় আসার পর নতুন রূপ পাওয়া আইএসআই। জিয়াউল হক জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যুত করে পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসেন। তাঁর শাসনামত ছিলো extreme rule এর। জিয়াউল হক Lieutenant-General Hamid Gul কে দায়িত্ব দেন ISI এর। এর হাতেই নতুন এক আগ্রাসী রূপ পায় ISI....

হয়ে ওঠে ভয়ংকর এক গোয়েন্দা সংস্থা। পাকিস্তানের ভেতরে, ইরান, আফগানিস্তান, ভারত, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, হেন কোনো দেশ নাই, যে দেশে নাসকতামুলক কর্মকান্ড চালানোর অভিযোগ ISI কে নিতে হয় নি।

তবে Hamid Gul কে বলা হত "the father of taliban" ...

সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য আফগানস্তানকে ভিয়েতনাম বানিয়ে ফেলার পেছনে অন্যতম কারিগর ছিলো ISI.... কেবল সিআইএ-এর অস্ত্র তালেবান বা আলকায়দার হাতে তুলে দেয়া নয়, সরাসরি আফগানিস্তানের ভেতরে সোভিয়েত বিরোধী অভিযানে ভুমিকা রাখে ISI...

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ু যুদ্ধ জয়ের পেছনে এই সংস্থার অবদান কম না।

 

কেবল তাই নয়, লাদেনকে যে দীর্ঘদিন লুকিয়ে রেখেছিলো ISI... এটা মার্কিনরা আগে না হলেও এখন জানে।

সিআইএ বা NSA এর মত সংস্থা যেখানে লাদেনকে ধরার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছে তাঁদের সমস্ত gadget and gear নিয়ে, সেখানে প্রায় ১০ টি বছর বিন লাদেন'কে তাঁরা লুকিয়ে রেখে চোর পুলিশ খেলেছে CIA এর সাথে। যাকে বলে double cross...

নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছে তাঁরা CIA কে...

 

CIA এর সাবেক প্রধান মাইক হেইডেন বলেছিলেন, তিনি ISI কে বিশ্বাস করতেন না। আবার অবিশ্বাস করার উপাও ছিলো না।

কারণ ২০০১ সালের পর যত বড় বড় আলকায়দা নেতা ধরা পড়েছে, সেটা খালিদ শেখ মোহাম্মদ থেকে ৯/১১ এর আগে ধরা খাওয়া রামজি বিন ইউসুফ, অধিকাংশকেই ধরেছে কিন্তু ISI... ধরে আমেরিকার কাছে দিয়ে দিয়েছে।

যখনই CIA বা মার্কিন প্রশাসনের সন্দেহ হইতো, তখনই আল কায়দা বা তালেবানের কোনো একজনকে ধরিয়ে দিয়ে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতো ISI...

 

তবে বিপত্তে বাধে ২০০৭ সালে...

ISI এর এক মহিলা এজেন্ট ( ball buster ) ... পল্টিমারে CIA তে...

মাইক হেইডেনের মতে, ISI এর double crossing কে মার্কিন প্রশাসন আর DOD কে বিশ্বাস করাতে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছিলো।

 

লাদেন হত্যার পর CIA আর ISI এর দুরত্ব আর অবিশ্বাস আরো বেড়েছে। পাকিস্তান নামক volatile দেশটি টিকে আছে মুলত তাঁদের এই গোয়েন্দাসংস্থার উপর ভর করে। তবে পাকিস্তানের অনেক ঝামেলার পেছনেও আছে এই ISI...

এটা চলে একরকম এর নিজেস্ব নিয়মে। খোদ সরকারের  ভালো নিয়ন্ত্রন এর উপর আছে কিনা, সেটা নিয়েই সন্দেহ আছে।

আবার এর ভেতরেও আছে নানান ফ্র্যাকশন।

সেইসাথে পাকিস্তানের ভেতরে রাজণীতিতে এটা নাক গলায়। পাকিস্তানের রাজণীতি কলুসিত হবার পেছনে হাজারটা কারনের একটি হল এই আইএসআই।

 

 

 

The Research and Analysis Wing (R&AW or RAW)

 

ভারতীয় গোয়েন্দাসংস্থা। 

এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ISI....

এটা মুলত মার্কিন CIA, বা রাশিয়ার SVR এর মত...

আর ভারতের অভ্যন্তরীণ ভীষণ ডিল করার জন্য এখন আছে NIA...

 

1968 সালে 'র' গঠিত হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিপুল পরিমান মানুষ রিফিউজি হয়ে ভারতে যায়। তাঁদের ট্রেনিং অস্ত্র আর লজিস্টিক দিয়ে সাহায্য করাটা ছিলো 'র' এর কাজ।

র এর প্রথম প্রধান ছিল জেনারেল কাউ।

জেনারেল কাও নিজে তরকারি বিক্রেতা সেজে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে এসেছিলেন সম্ভাব্য মিলিটারি কু- সম্পর্কে সতর্ক করতে।

জেনারেল কাউ এর আত্মজীবনীতে তিনি সবই লিখে গেছেন।

শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু হত্যার চক্রান্তের কথা RAW কিভাবে জেনে গিয়েছিলো, কে মুল পরিকল্পনাকারি ছিলো, কার বাসায় মুল পরিকল্পনা হয়েছিলো, সেটারও বর্ণনা আছে।

হুমায়ুন আহমেদের দেয়াল উপন্যাসে কাউ এর আত্মজীবনী থেকে সেই অংশ লিখে দেয়া হয়েছে হুবহু, কোটেশন দিয়ে। পড়ে দেখতে পারেন।

 

যদিও বঙ্গবন্ধু কাউ এর কথা বিশ্বাস করেন নি। উল্টা তামাশা বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর নিজ দেশের মানুষকে এতোটাই বিশ্বাস করতেন। এটাই ছিলো তাঁর বড় ভুল। তিনি বিশ্বাসই করতেন না যে তাঁর নিজ দেশের মানুষ তাঁর বুকে গুলি চালাবে। 

 

RAW এর যেমন অনেক সাফল্য আছে। আবার  ব্যর্থতাও আছে।

যেমন বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরিকল্পনা চলতেছে, এটা RAW জানতে পারলেও, নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধীকে যে হত্যা করার পরিকল্পনা চলতেছে ভারতের ভেতরে, সেটা সম্পর্কেই RAW অবগত ছিলো না। তাঁদের বন্ধু সংস্থা রাশিয়ার KGB ঠিকই ১৯৭৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধীকে সম্ভাব্য হত্যা চেষ্টার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলো।

 

যাই হোক, ভারতের সেভেন সিস্টারে, তামিলনাড়ু আর শ্রীলঙ্কাতে ভারতের স্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ড বন্ধ করতে 'র" গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।

যদিও ইন্দ্রিরা গান্ধীর মৃত্যু ঠিকই আততায়ীর গুলিতে হয়। এবং খুনি ছিলো তাঁর নিরাপত্তারক্ষী।

 

আবার ইন্দ্রিরা গান্ধির ছেলে রাজিব গান্ধীকে হত্যা করে তামিল টাইগাররা। "র" এটা ঘটনা ঘটার আগে জানতে পারলেও ব্যর্থ হয় আটকাতে।

 

মুলত ভারতের পররাষ্ট্রণীতি তেমন আগ্রাসী নয়। আর 'র" কোনো এগ্রেসিভ গোয়েন্দাসংস্থা না। যেমনটা ISI বা মোসাদ বা ইরানের সাভাক ...

আত্মরক্ষা ও ভারতীয় স্বার্থে কাজ করা যার ধর্ম। এটাই RAW এর Motto...

 

 

 

VAJA

 

1979 সালে ইসলামিক রেভোলিউশনের পর সাভাকের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় vavak... সেটা পরিবর্তন হয়ে এখন VAJA...

তবে যে নামেই ডাকুন, ইরানের গোয়েন্দাসংস্থাকে পশ্চিমারা এখনো সাভাক বলেই ডাকে।

 

যাই হোক, এর শত্রুর শেষ নেই। বিশেষ করে যখন আমেরিকা, ইসরাইল, সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের চক্ষুশূল ইরান। 

 

কিছুদিন আগে মোসাদ কিছু ইরানি নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানীকে মেরে ফেলে। বিজ্ঞানীরা গাড়িতে করে কাজ শেষ বাড়ি ফিরছিলো। মোটর সাইকেল আরোহি কিছু মোসাদ অপারেটিভ তাঁদের পিছু নেয়। একসময় একধরনের বোম চলন্ত গাড়ির পেছনে লাগিয়ে দেয়। ম্যাগনেটের মত এগুলো গাড়ির সাথে লেগে যায়। এরপর কিছুদূর যাবার পর বিস্ফোরণ।

তো এই ঘটনার বদলা নিতেও সাভাক দেরি করে নি।

ল্যাটিন আমেরিকাতে কিছু মোসাদ গুপ্তচরকে তাঁরা ঠিকই মেরে আসে।

এভাবেই মাইর দিচ্ছে। মাইর খাচ্ছে, এই করেই চলতেছে VAJA...

 

 

 

Mossad and Shin bet

 

they are brutal... as simple as that... মোসাদ'কে বলা হয় "the most effective killing machine out there"

 

তখন চলতেছে স্নায়ু যুদ্ধ। সোভিয়েত পলিতব্যুরোতে ভাষণ দিচ্ছে নিকিতা ক্রুসচেভ। স্তালিন মরার পর তিনি ক্ষমতায় এসেছেন। স্তালিন বেঁচে থাকতে তাঁর নামে একটা নেগেটিভ কথা বলার সাহস সোভিয়েত ইউনিয়নে কেউ পেতো না। আর বললে  অবস্থা হত ভয়াবহ।

কিন্তু ক্রুসচেভ সেদিন ভাষণে একেএকে তুলে ধরে স্তালিনের নানান অন্যায়, অত্যাচারের লোমহর্ষক কাহিনী। যার অনেকগুলো আবার খোদ ক্রুসচেভ স্তালিনের আদেশে করতে বাধ্য হয়েছিলো।

কোনো সাংবাদিক ছিলো না পলিতব্যুরোতে।  শুধুমাত্র কমিউনিস্ট পার্টির অনুষ্ঠানে দেয়া সেই ভাষণে। 

কিন্তু এই ভাষণের audio কপি somehow হাতে পেয়ে যায় মোসাদ।

তুলে দেয় সিআইএর হাতে।

সিআইএ রীতিমত আমাবস্যার চাঁদ পেয়েছিলো সেদিন।

এটা রেডিও ফ্রি ইউরোপের মাধ্যমে তাঁরা প্রচার করে সমগ্র ইউরোপে। এটা ছিলো CIA এর জন্য অন্যতম প্রোপাগান্ডার লড়াইয়ের হাতিয়ার।

 

গায়ের জোরে ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, কৌশলে ইসরাইলি দখলদারিত্ব বজায় রাখা, তিনটা আরব ইসরাইল যুদ্ধে জয়ে অভুতপূর্ব অবদান রাখা, এসব মোসাদের অন্যতম success story...

১৯৬৭ সালের ৬ দিনের যুদ্ধে ইসরাইল যে চোখের নিমেষেই অধিক শক্তিশালী সম্মিলিত আরব দেশগুলোকে হারিয়ে দিয়েছিলো, এর পেছনে ছিলো মোসাদ...

 

মোসাদের আরেকটি বিশেষ দিক হল স্টানবাজি।

তাঁরা প্রচার করতে, প্রচারিত হতে ভালোবাসে।

তাঁরা নিজেদের website বানিয়েছে অসাধারণ ভাবে। এবং তাতে একরকম কম্পিটিশনের ব্যবস্থা করে রেখেছে। online recruitment পর্যন্ত হয়। এবং তাঁরা উৎসাহিত করে এটা।

বিশ্বের যে প্রান্তেই ইহুদি আছে, সেখানেই মোসাদ আছে।

আর ইসরাইলের স্বার্থ বিরোধী কেউ কিছু করলে মোসাদ তাঁকে খুঁজে বের করবে। এবং খুন করে আসবে।

তা সে দুনিয়ার যে প্রান্তেই থাকুক না কেন।

এক জার্মান বিজ্ঞানী একবার সাদ্দামকে শক্তিশালী স্কাড মিসাইলের উন্নয়নে সহযোগিতা করছিলো। ফলাফল, মোসাদ তাঁকে ইউরোপে গিয়ে মেরে আসে।

আবার কিছুদিন আগে এক অস্ত্র ব্যবসায়ী, যে কিনা হামাসকে অস্ত্র দিচ্ছিলো, তাঁকে মোসাদ দুবাইএর বিখ্যাত সাত তারকা হোটেল ব্রুজ আল খলিফাতে গিয়ে মেরে আসে।

মোসাদ ভালো করেই জানে, এটা ক্যামেরাতে ধরা পড়বে।

কিন্তু তাঁরা এসেছিলো সেখানেই। উদ্দেশ্য, একে তো মেরে যাওয়া। সেইসাথে মোসাদ চায় যে এটা দুনিয়াতে প্রচার হোক। fear factor তৈরি হোক।

 

মিউনিক ম্যাসাকারের পর এরসাথে যুক্ত ব্যক্তিদের মোসাদ দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে খুঁজে বের করে মারে। আবার  জীবিত Nazi criminal দের খুঁজে খুঁজে বের করে।

false flag অপারেশন, স্যাবোটাজ, খুন খারাপী রীতিমত নিত্যনতুন আর ইনোভেটিভ সব উপায়ে করে যাচ্ছে মোসাদ।

 

মোসাদের অনেক অপারেশন নিয়ে চলচিত্র বানানো হয়েছে। বই লিখা হয়েছে।

 দুনিয়ার অনেক দেশের গোয়েন্দাসংস্থার যেখানে website ই নেই :P সেখানে মোসাদেই website দেখার মত।

মোসাদের website এ লিখা থাকে,

History is not written, history is created.  এবং মোসাদ আর shin bet এটা করে যাচ্ছে অনরবরত।

 

 

....................................

 

শেষ কথা বললে, গোয়েন্দা সংস্থার কাজ অন্তত মুভি সিরিয়ালে যতটা thrilling মনে হয়, বাস্তবে ততটা না। অন্তত MI6 বা CIA এর মত সাবেক গোয়েন্দা সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত লোকেরা এমনই বলে মিডিয়াতে।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা একজনের পেছনে লেগে সার্ভিলেন্স চালানো, ঘণ্টার পর ঘণ্টা desk work করতে হয়।

গোয়েন্দা সংস্থা মানেই যে অস্ত্র নিয়ে শত্রু পেছনে ছোটা জেমস বন্ড, তেমনটি মোটই না।

এবং দুনিয়ার সেরাসেরা সব স্পাই দেখতেও মুভি বা সিরিয়ালের সেই মাসকুলার গুড লুকিং স্পাই এর মত না :P ...

একটা মোটা বেটে লোক, তাঁকে স্পাই হিসেবে সন্দেহ করার সম্ভাবনা কিন্তু কম। নিজেই একটু চিন্তা করে দেখেন ( lolz ) :P

স্পাই হিসেবে এমন লোকরাই সবচেয়ে ভালো ফলাফল দেয়। রেকর্ড তেমনই বলে।

গায়ের জোরের চেয়ে মাথার বুদ্ধি এতে বেশি লাগে।

সব গোয়েন্দা সংস্থাতে স্পাই থাকে, তবে গোয়েন্দা সংস্থা মানেই কেবল স্পাই না।

 

টাকা অনেক বড় ফ্যাক্টর।

অনুন্নত গরিব দেশে বা অভ্যন্তরীণ ঝামেলায় জর্জরিত দেশে ভালো স্পাই এজেন্সি তৈরি হয় না সাধারণত মুলত এই কারনেই। হলেও দেখা যায়, সেটা যতটা না স্পাই বা ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, তাঁর চেয়েও বেশি পুলিশ।

অর্থাৎ নিজ দেশে পুলিশি কর্মকান্ড চালাতেই তাঁদের সব শ্রম ও সময় ব্যয় হয়।

যেমন মিশরের গোয়েন্দাসংস্থা আদেও নামে একটা গোয়েন্দাসংস্থা হলেও  সেটা একটা পুলিশ ছাড়া আর কিছু না। দেশের স্বার্থ নয়, বরং জেনারেল সিসি'কে ক্ষমতায় রাখতে পারবে কি পারবে না, এটা নিয়েই তাঁর সব শ্রম ব্যয় হয়। আগে যেমন মোবাররকের জন্য করতো।

 

যাই হোক, it's a dirty business...

সাপ হয়ে দংশন করে, ওঝা হয়ে চিকিৎসা দিতে হয়। লাঠিকে সাপ, আর সাপকে লাঠি বানাতে হয়।

তবে সবচেয়ে ভালো স্পাই সেইই হয়, যে নিজেকে খুব ভালো স্পাই বা গোয়েন্দা হিসেবে মনে করে না।  আর সবচেয়ে সেরা স্পাই দেখতে জেমস বন্ডের মতও হয় না।

যাকে স্পাই এর মত দেখতে লাগে, সে কিভাবে স্পাই হবে বলুন !! ( lolz )

 

যাই হোক, পড়ার জন্য ধন্যবাদ।


** প্রথম এই আর্টিকেলটি লিখেছিলাম ফেসবুক ওয়ালে। ২০১৫ সালে। 

Read More »