Monday, August 5, 2019

ভেনিজুয়েলা পাঠ


হাইপোথেট্যিকাল এক পরিস্থিত। কাল্পনিক এক চরিত্র আবুল। ১০ বিঘা জমির মালিক। এই দশ বিঘা জমিতে ফসল ফলিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে আবুলের সংসার চলে।
তো ১০ বিঘা জমিতে ধরে নিন একটা নির্দিষ্ট পরিমান ধান গড় অনুপাতে সারা বছরে উৎপাদন সম্ভব। যেহেতু গল্পটা কাল্পনিক এবং বোঝানোর সুবিধার জন্য লিখা, এজন্য ধরে নিন প্রতি মন ধানের বাজার মূল্য ১০০ স্বর্নমুদ্রা !!
হঠাৎ বাজারে ধানের দাম বাড়তে শুরু করলো। ওদিকে প্রতি মন ধানের উৎপাদন খরচ অপরিবর্তিত রইল। ফলে উৎপাদিত ধান বিক্রি করে অধিক মুনাফা লাভ করতে শুরু করলো আবুল।
ধানের দাম যত বাড়ে, আবুলের মুনাফাও তত বাড়ে। একসময় মন প্রতি ধানের বাজার মূল্য গিয়ে দাড়ালো ৫০০ স্বর্ণমুদ্রা !
অর্থাৎ আয় বেড়ে গেল পাঁচগুন।
আয় যত বাড়তে শুরু করলো, আবুলের জীবনযাত্রার মানও তত বাড়লো। আগে আবুল মোটর সাইকেলে ঘুরতো। সেটা বাদ দিয়ে গাড়ি কিনলো।
আবুলের আয় যত বাড়ে, খরচও তত বাড়ে। লাইফ স্টাইলের উন্নতি ঘটে।
আবুলের বৌ ছিল একজন। টাকা পয়সার মালিক হবার পর দ্বিতীয় বিয়ে করলো আবুল। পকেটে পয়সা বেড়ে গেলে পয়সার গরমও বাড়ে। জুয়া খেলতে শুরু করলো আবুল।
বাসায় কর্মচারী নিয়োগ দিলো সেবাযত্নের জন্য। আগে নিজের কাপড় নিজে ধুইতো, এখন কাপড় ধোয়ার জন্য একজন আলাদা লোকই আছে তার।
আবুলের লাইফ স্টাইলের এই বিশাল পরিবর্তন এসেছে বাজারে ধানের দামের ক্রমবৃদ্ধির কারণে। ধানের দাম যত বেড়েছে, আবুলের আয় তত বেড়েছে। ফুটানিও তত বেড়েছে।
হঠাৎ যদি ধানের দামের পতন হয়, হঠাৎ যদি বাজারে প্রতি মন ধানের মূল্য ১০০ স্বর্ণমুদ্রায় নেমে আসে, আবুলের এই জাঁকজমক মুহুর্তেই মিলিয়ে যাবে। যে বিশাল খরুচে সিস্টেম দাড় করিয়ে ফেলেছে সে, সেটা বেসামাল হয়ে যাবে। ৫০ জন কর্মচারী না হয় ছাটাই করতে পারবে, কিন্তু ইতিমধ্যে ২টা বিয়ে করেছে, ১৫টা সন্তানের জন্ম দিয়েছে, তাদের তো ছাটাই করতে পারবে না !!
যখন সুসময় ছিল, আবুল ভালোভাবেই এদের মেন্টেন করেছে, কিন্তু এবার?
আবুল যেটা করেছে, সেটা হল মিসম্যানেজমেন্ট। যখন গোলা ভরা ধান ছিল, তখন রেধেছে আর খেয়েছে। ভবিষ্যতের কথা ভাবেনি।

এবার পরিস্থিতি ভয়াবহ। আবুলের অবস্থা বেসামাল।

এবার আসি ভেনিজুয়েলার কথায়।



অনেকে ভেনিজুয়েলার বর্তমান সিচ্যুয়েশন যেভাবে এনালাইসিস করে, সেটা অনেকটা আমার বানানো কাল্পনিক এই গল্পটার মত যা উপরে লিখলাম।
দক্ষিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলা বাংলাদেশের চেয়ে আয়তনে প্রায় আটগুণ বড়। মূলত স্প্যানিস ভাষাভাষীর মানুষের বসবাস সেখানে। তবে স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা আছে ২৬টি। জনসংখ্যা সাড়ে তিন কোটির কাছাকাছি। মেজরিটি ক্যাথেলিক খ্রিস্টান।



কিন্তু এসবকিছুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি হল, পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় তেলের মজুদ আছে ভেনিজুয়েলার মাটির নিচে। এখানে শুরুতেই একটা কথা বলি। তেলের মজুদ থাকা এক জিনিস। আর সেই তেল তুলতে পারার, রিফাইন করার ক্ষমতা, এসব আরেক জিনিস।



https://www.worldatlas.com/articles/the-world-s-largest-oil-reserves-by-country.html

৩০ হাজার কোটি ব্যারেলের অধিক তেলের মজুদ আছে ভেনিজুয়েলার মাটির তলে।

কাগজে কলমে ভেনিজুয়েলা পৃথিবীর সবচেয়ে বিত্তশালী দেশগুলোর ভেতর পড়ে। কিন্তু সম্পদ শুধু থাকলেই হয় না, সেই সম্পদ কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং হবে, সেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভেনিজুয়েলার Lake Maracaibo অঞ্চলে তেলের সন্ধান পাওয়া যায়। ফলে, দ্রুতই কৃষিপন্ন রপ্তানি নির্ভর ছোট অর্থনীতি থেকে সরে গিয়ে তেল রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতির দিকে ঝুঁকে পড়ে ভেনিজুয়েলা। রাতারাতি গুপ্তধন পাবার মত ব্যাপার। আঙ্গুল ফুলে বটগাছ।
ভেনিজুয়েলার মানুষের জীবনযাত্রার মানের ব্যাপক উন্নতি হতে থাকে। এবং এই উত্তরণ ১৯৮০ সাল পর্যন্ত চলেছে। ছোটখাটো হোচট খেলেও বড়কোনো ডিজাস্টার হয়নি। কখনো সরাসরি ডিক্টেটরশিপের আন্ডারে আবার কখনো গনতান্ত্রিক লেবাজধারী ডিক্টেটরশিপের আন্ডারে পরিচালিত হয়েছে ভেনিজুয়েলা। হয়েছে ব্যাপক দূর্নীতি। হয়েছে Mismanagement.
কিন্তু উপরে বলা সেই আবুলের গল্পের মত, যতদিন ধানের দাম ক্রমবর্ধমান ছিল, ততদিন আবুল যা ইচ্ছা করেছে। জুয়া খেলেছে, মদ খেয়েছে, ছয়নয় করেছে, কিন্তু এরপরও সংসার চলেছে আরামছে। কারণ টাকা তো প্রচুর আয় হচ্ছিলো। সুতরাং এদিকসেদিকে অপচয় হলেও ব্যাপারটা তখন গায়ে লাগেনি।

আমি ডিটেইলস ইতিহাসে যাবো না, কারণ আলোচনা আরো জটিল হয়ে যাবে। দ্রুত ইতিহাসের কিছু অধ্যায় তুলে ধরে বর্তমানে আসার চেষ্টা করবো।

তো যা বলছিলাম। ১৯৭৬ সালে ভেনিজুয়েলার সরকার ভেনিজুয়েলার Oil Industries জাতীয়করণ শুরু করে। বেশকিছু ওয়েল ইন্ড্রাস্ট্রি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রনে চলে যায়। তবে সব নয়।
সোজা বাংলায় বলি জাতীয়করণ বা রাষ্ট্রীয়করণ ব্যাপারটা। ভেনিজুয়েলাতে তেল ও গ্যাসের সবই তুলতো বিদেশী কোম্পানিগুলো। আফটার অল, বিদেশী কোম্পানিগুলোই ভেনিজুয়েলাতে তেলের সন্ধান পেয়েছিলো এবং তেল তুলে প্রক্রিয়াজাতকরণের মত টেকনিক্যাল knowhow এবং এক্সপার্টিজ বিদেশীদেরই ছিল।
ভেনিজুয়েলার সরকার বেশকিছু তেল স্থাপনা নিজ দায়িত্ব নিলো।
একটা ভিন্ন উদাহরণ টেনে আনি।
ইরানের মাটির নিচে প্রথম তেলের সন্ধান পাওয়া যায় ইরানের আবাদান এলাকায়। তো সন্ধান পেলেই শুধু হবে? তুলতে হবে না? আর তুলতে গেলে তো টেকনোলজি লাগবে। তখন ব্রিটিশরা এগিয়ে আসলো। তাদের কাছে আছে প্রযুক্তি। ইরানকে বললো, আসো, দুজন মিলে একটা কোম্পানি খুলি। তবে শর্ত যা আয় হবে, ৮৪% আমার, বাকি ১৬% তোমার !
এখন ইরান কি অফার ফিরিয়ে দেবে? চিন্তা করে দেখুন, নাই মামার চেয়ে তো কানা মামা ভালো। আফটার অল, মাটির তলে তেলের ভান্ডার রেখে লাভ কি যদি কাজেই না আসে, তুলতেই না পারে। সুতরাং অফার মেনে নিতেই হবে। মন্দের ভালো। সুতরাং নিজ দেশের তেল অথচ ভাগের ভাগ মাত্র ১৬%
চিন্তা করেন অবস্থা !! তো ইরান আর ব্রিটিশরা মিলে খুলে ফেললো Anglo Persian Oil Company Ltd.
অনেকদিন পারস্য অঞ্চলে ব্যবসা করেছে এই কোম্পানি।
এরপর ১৯৫২ সালে ইরানে বিপ্লব হল। ডক্টর মোহাম্মদ মোসাদ্দেক ক্ষমতায় এলো। এবং ইরানের তেলকুপ ও তেল শোধনাগারগুলো জাতীয়করণ করলো। অর্থাৎ ইরানের সম্পদ এবার ইরানিরাই দখলে নিলো। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ব্রিটিশদের বের করে দিলো। এরপর সেই Anglo Persian Oil Company নাম পরিবর্তন করে হয়ে গেল ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম অর্থাৎ বিপি।

তো ফিরে আসি ভেনিজুয়েলা প্রসঙ্গে। ১৯৭৬ সালে ভেনিজুয়েলা তাদের পেট্রোলিয়াম ইন্ড্রাস্ট্রিগুলো রাষ্ট্রয়ত্বকরণ শুরু করার পর থেকে ভেনিজুয়েলার সরকার আয় গেল বেড়ে। (তবে মোট প্রোডাকশন রেট কমে গেল। কারণ remainging foreign/ international oil Company গুলো নিজেদের অবস্থান নিয়েই চিন্তিত হয়ে পড়লো। তারা ইনভেস্টমেন্ট ও ডেভলপমেন্ট কমিয়ে দিলো)
স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করুন। আগে আপনি ভাগের ভাগ পেতেন ১০ থেকে ২০%। হঠাৎ যদি ৮০% দখলে পান, তাহলে আয় তো বাড়বেই। এখন সরকারের হঠাৎ আয় বেড়ে গেলে সরকারও হয়ে যায় উপরের গল্পের সেই আবুলের মত।
সরকার এবার বেশিবেশি পাবলিক স্পেন্ডিং শুরু করলো। বাজেট বাড়ালো। ব্যয় বাড়ালে। টেকসই উন্নয়নের দিকে না গিয়ে শর্ট টার্ম ফটকাবাজিতে ঝোক ছিল বেশি।

ধাক্কা খেলো আশির দশকে এসে। তেলের দাম গেল ধপাস করে নেমে।
১৯৮৫ সালে সৌদি’রা মার্কিনীদের সাথে পরামর্শ করে তেলের প্রোডাকশন ব্যাপক বাড়িয়ে বাজার তেলে সয়লাব করে দিলো। চাহিদার তুলনায় বাজারে যোগান বাড়িয়ে দাম কমিয়ে দিলো।
সৌদিদের আবার তেল তোলার ক্ষমতা ভেনিজুয়েলার চেয়ে অনেক অনেক বেশি। আফটার অল, পশ্চিমা বড়বড় তেল কোম্পানি এবং মার্কিন সরকার সরাসরি সেখানে টেকনিক্যাল সাপোর্ট এবং এক্সপার্টিজ দিতো। সৌদিতে মার্কিন ইনভেস্টমেন্টেরও অভাব হইতো না। হয়ও না এখনো।
তেলের এই প্রোডাকশন বাড়ানোর পেছনে সৌদিরা অফিসিয়ালি যা বলেছিলো, সেটা হল, OPEC দেশগুলো গোপনে গোপনে প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত কোটার চেয়ে বেশি পরিমান তেল তুলে বিক্রি করতেছিলো বেশি পয়সা কামানোর ধান্দায়। তাদের শায়েস্তা করতে সৌদিরা বাজারে তেলের দাম কমিয়ে দেবার জন্য একাজটি করেছিলো।
তবে নিন্দুকেরা বলে, মূল লক্ষ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনীতিতে আঘাত করা। সেসময় আফগান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া সোভিয়েত’রা অর্থনৈতিকভাবে নাজুক পরিস্থিতির ভেতরে ছিল।
যাই হোক, ১৯৮৫ সালের ভেনিজুয়েলার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ফিরে আসি। বারবার মূল টপিক্স বাদ দিয়ে এদিকে সেদিকে লাফ দিচ্ছি। এজন্য দুঃখিত।
তো, এসময় পরিস্থিত সামাল দেবার জন্য যেসব ইকোনমিক্যাল মেজার্স নেবার দরকার ছিল, ভেনিজুয়েলার সরকার তা নিতে ব্যর্থ হল। ভুলভাল পলিসির ইমপ্লিমেন্টেশনের কারণে সিচ্যুয়েশন গেল আরো খারাপ হয়ে। শুরু হল প্যানিক।
একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন, ভলাটাইল ইকোনমিক্যাল সিচ্যুয়েশন থাকলে দূর্নীতি যেমন বেশি হয়, বিদেশে অর্থ পাচারও তেমন বেড়ে যায়। কারণ মানুষ তার অর্জিত ধনসম্পদ হেফাজত করতে চেষ্টা করে। এটা মানুষের স্বাভাবিক প্রবনতা।
আপনি যদি জানেন, আপনার ব্যাংকে জমানো ১০ লক্ষ টাকা ক্রমশ মূল্য হারাবে, উচ্চ মুদ্রাস্ফিতি তথা ইনফ্লেশনের কারণে, তাহলে আপনি হয় বৌ’এর জন্য সোনাদানা বা গয়না কিনে ঘর ভরে ফেলবেন, আর না হয় টাকাপয়সা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করবেন।
যে দেশে সোশ্যাল সিকিউরিটি নেই,
সেই দেশে মানুষ দূর্নীতি প্রবন বেশি হবে। সোশ্যাল সিকিউরিটি, অর্থাৎ বেকার ভাতা, পেনশন, মেডিকেল বা হেলথ ইন্সুরেন্স, এসব না থাকলে মানুষ দেখবেন সবসময় টাকা জমানোর দিকে ঝুকবে। বাংলাদেশে আমরা যেমন করি। সবসময় ভবিষ্যতের চিন্তা করি। একটা বড়সড় অসুখ হতে পারে। বিপদ আপদ আসতে পারে। হেলথ ইন্সুরেন্স নেই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যেও কিছু জমিয়ে যেতে হবে। কারণ রাষ্ট্র দায়িত্ব নেবে না। এরকম সিচ্যুয়েশনে মানুষ টাকা জমিয়ে নির্ভার হয়।
আর জমানো টাকার হেফাজত করতে কে না চায়? তো দূর্নীতি সবচেয়ে বেশি করে রুলিং ক্লাস। ক্ষমতাবানেরা। উচ্চবিত্তরা। দূর্নীতির টাকা নিজ দেশে রাখা বিপদজনক। কারণ হিসাব দেখাতে হবে, উৎস দেখাতে হবে। অন্যথায় পুলিশে বা দুদকে ধরবে। এজন্য এই টাকা হয় নামে বেনামে রাখবে, অন্যথায় বিদেশে পাচার করে দেবে। বিদেশে পাচার করে দেয়াটা দূর্নীতিবাজদের জন্য নিরাপদ।
যেমন আমাদের দেশে আমরা হরহামেশা শুনি, হাজার কোটি টাকা মালেয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে চলে যাচ্ছে। সুইস ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। তো এসব পাচার করে সমাজের উচ্চবিত্ত, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
আবার এসব প্রভাবশালী বা ক্ষমতাবানেরা তাদের দূর্নীতি এবং বিত্ত পাচার চালিয়ে যেতে রাষ্ট্রযন্ত্রের ইনিস্টিটিউশনগুলো, যেমন দূর্নীতিদমক কমিশন, পুলিশ, প্রশাসন, বিচারবিভাগ, ইত্যাদি ধ্বংস করে অথবা করাপ্টেড করে ছাড়ে, অথবা ইন-ইফেক্টিভ করে রাখে।
কারণ চিন্তা করুণ। দূর্নীতিদমন কমিশন যদি শক্তিশালি থাকে, তাহলে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদগনের দুর্ণীতি বা টাকা পাচার ধরে ফেলবে, জেলে ভরবে, তখন তাদের খেল খতম।
এজন্য এরা এসব প্রতিষ্ঠানকে কখনোই ইফেক্টিভ হতে দেয় না। এসব দেশে দুর্ণীতি দমন কমিশন কেবল লোক দেখানো কিছু সরকারি আমলা পাকড়াও করবে দুর্নীতির অভিযোগ। পুটি মাছ ধরবে। কিন্তু কখনোই রাঘব বোয়ালের দিকে চোখও দেবে না।
এগুলো একটার সাথে আরেকটা ইন্টারকানেক্টেড।
একটা বাড়লে অন্যটা বাড়ে। একটার জন্য অন্যটা দায়ী।

তো Capital Flight বলে একটা টার্ম আছে। দেশের ধনী এবং মধ্যবিত্ত শ্রেনী যখন দেখবে, দেশে টাকা পয়সা রাখা নিরাপদ নয়, তখন সেই সম্পদ বিদেশে পাচারের প্রবনতা বাড়বে।
আশির দশকের শুরুতে তেলের দামের পতনের পর ভেনিজুয়েলাতে বেশকিছু পলিটিক্যাল চেঞ্জ এলো। পলিটিক্যাল সিস্টেম ডি’সেন্ট্রালাইজ করা হল। কিন্তু পরিস্থিত সবসময় থাকতো ভলাটাইল।
আন্দোলন, ক্যু, দাঙ্গাহাঙ্গামা লেগেই থাকতো। ১৯৯৮ সালে আরেক দফা তেলের দামের ভয়াবহ পতন হল।
সেইসাথে ১৯৭৬ সালে Oil industries জাতীয়করণ শুরু করার পর থেকে Oil industry গুলোর অবস্থাও খারাপ। Venezuelan state-owned oil company Petróleos de Venezuela S.A. (PDVSA) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৬ সালে। আমাদের দেশের পেট্রোবাংলার মত।
সরকারি খাতে গেলে যা হয় আরকি !! যেমন বাংলাদেশের রেলওয়ে, বিআরটিসি সহ আরো যত সরকারি মালিকানাধিন সেক্টর আছে, সবগুলোর অবস্থা চিন্তা করুণ এবং ব্যাপারটা অনুমান করতে পারবেন।
আমরা যেমন হরহামেশা বলি, সরকারি খাতে কোনোকিছু থাকলে সেগুলো ভালোভাবে চলে না। ম্যানেজমেন্ট ঠিক থাকে না। লোকসানে চলে। এবং সার্ভিসের মানও খারাপ হয়ে যায়। ব্যাপারটা তেমন।

১৯৭৬ সালে থেকে তেলের প্রোডাকশন কমে যায়। ১৯৭০ সালে ভেনিজুয়েলা সর্বোচ্চ তেল তুলেছিলো ৩.৫ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিন। এবং অবাক হবার মত বিষয় হল, তেল তোলার সর্বোচ্চ লিমিট বা ক্ষমতা আজ পর্যন্ত বাড়েনি।
১৯৮৯ সালে IMF-backed austerity মেনে নিতে হয় ভেনিজুয়েলাকে।



১৯৮৯ সালে থেকে তেলের উৎপাদন আবার উর্ধমুখি হলেও মানুষের জীবনযাত্রার মানের এই পতনের কারণে ১৯৯৯ সালে Bolivarian Revolution শুরু হল। হুগো স্যাভেজ ক্ষমতায় এলো।
ইতিহাসের অনেককিছু আমি স্কিপ করে গেলাম। অতীত ইতিহাস নিয়ে বেশি ডিটেইলসে যাবো না।

হুগো স্যাভেজের সোশ্যালিস্ট সরকারি সিস্টেম ক্ষমতায় এসে ভাগ্যের সহায়তা পেলো শুরুতেই। চিত্রটা নিচে দিচ্ছি।


খেয়াল করে দেখুন, যে বছর হুগো স্যাভেজ ক্ষমতায় এলো, অর্থাৎ ১৯৯৯ সাল... তখন থেকে তেলের দাম বেড়ে ১৯ ডলার প্রতি ব্যারেল থেকে লাফাতে লাফাতে ৯৭ ডলারে গিয়ে থেমেছে ২০১৩ সালে।
অর্থাৎ ক্ষমতা গ্রহনের পর থেকে ২০১৩ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হুগো স্যাভেজের শাসনামলে তেলের দাম বেড়েছে।
(২০০৮-০৯ সালে গ্লোবাল ইকোনমিক ক্রাইসিসের কারনে একটু পতন হয়েছিলো। কিন্তু সেটা আবার ঠিকই বেড়েছে দ্রুত)
তেলের এই দাম বৃদ্ধির সুফল স্যাভেজ পেয়েছে।
প্রচুর সরকারি হাসপাতাল, স্কুল কলেজ, সোশ্যাল ওয়েল ফেয়ার প্রোজেক্ট, হাউজিং প্রজেক্ট, এটাসেটা, নানান প্রজেক্ট গর্ভমেন্ট ফান্ডিং’এ করেছে তেল বিক্রি করা টাকায়।
সৌদি আরবের মত ভেনিজুয়েলার কোনো Social Welfare Fund (SWF) ছিল না। সৌদি আরব যেখানে ১০ টাকা আয় করলে ৭ টাকা ব্যয় করে ৩ টাকা ভবিষ্যতের আপদকালিন সময় মোকাবেলার জন্য SWF ফান্ডে রাখতো, সেখানে ভেনিজুয়েলা তেলখাতে আয় করা রেভিনিউ পুরোটাই ব্যয় করতো।

এরপরও তেলের ক্রমবর্ধমান মুল্যের কারণে, হুগো স্যাভেজের এই সময়কালে ভেনিজুয়েলার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালোই ছিল।
ইনফ্যাক্ট তখন দেশে বিদেশি ভেনিজুয়েলার প্রশংসা শোনা যেত তথাকথিত সোশ্যাল ডেমোক্রেটদের মুখে।
যেমন, https://www.youtube.com/watch?v=5OqXBdCHJDc The times that Corbyn and his allies praised socialist Venezuela লিখে গুগলে সার্স দিলে উপরের ভিডিওটি পাবেন। ২০১১ সালে ব্রিটিশ পলিটিসিয়ান Jermy Corbyn ভেনিজুয়েলার সোশ্যালিস্ট সিস্টেমের অনেক প্রশংসা করেছিলাম। উপরের ভিডিওটি দেখতে পারেন।
২০১৩ সালে হুগো স্যাভেজ মারা গেলে তিনি টুইটও করেছিলেন।
https://twitter.com/jeremycorbyn/status/309065744954580992?lang=en


এমনকি বার্নি স্যান্ডার্সের মত মার্কিন পলিটিসিয়ানরাও সরাসরি নাম উল্লেখ না করেও ইনডাইরেক্টলি হুগো স্যাভেজের প্রশংসা করেছিলেন।
২০১১ সালে স্যান্ডার্স বলেছিলেন,
“These days, the American dream is more apt to be realized in South America, in places such as Ecuador, Venezuela and Argentina, where incomes are actually more equal today than they are in the land of Horatio Alger. Who's the banana republic now?”

এখন ইন্টারেস্টিং ব্যাপারটি হল, তেলের এই দামের উর্ধ্বগতির জন্য দায়ী ছিল আমেরিকা। প্রথমে আফগান যুদ্ধ, এবং পরে ইরাক যুদ্ধ। এই দুইটা যুদ্ধের কারণে তেলের দাম একসময় ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলার অতিক্রম করেছিলো।
আর এই সময়টার সুফল পেয়েছে ভেনিজুয়েলা আর রাশিয়ার মত দেশ।

হুগো স্যাভেজের বিভিন্ন সোশ্যালিস্টিক প্রোগ্রামের কারনে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেনীর কাছে হুগো স্যাভেজের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি হয়েছিলো। এই সময়টাতে ইকোনমি ডাইভার্সিফাই করলে ইন দা লং রান ভেনিজুয়েলার জন্য ভালো হত। কিন্তু হুগো স্যাভেজ সেই সিস্টেমটি দাড় করিয়ে যেতে পারেননি। বরং তার আমলে যে ইকোনমিক বাবল তৈরি হয়েছিলো, তার মৃত্যুর কিছুকাল পরই সেটা ফেটে গিয়ে আজকের অবস্থায় নিয়ে এসেছে ভেনিজুয়েলাকে।


এবার দেখুন ২০১৪ সালের পর থেকে তেলের দামের পতন। ৯৩ ডলার থেকে কমে পরের বছর হয়েছে ৪৮ ডলার। প্রায় অর্ধেক কমেছে। এবং সেটা আগের মত রিকোভার করেনি।
সেই ৯০+ ডলার প্রতি ব্যারেল তেলের দামের যুগ আর নেই। হগো স্যাভেজের রেখে যাওয়া সেই সিস্টেমের অবস্থা আবার সেই উপরের গল্পের আবুলের মত।
আবুলের কমে গেছিলো ধানের দাম। আর ভেনিজুয়েলার তেল।
লিমিটেড গর্ভমেন্ট আর বিগ গর্ভমেন্টের এটাই পার্থক্য।
আর হুগো সাভেজের আমল থেকে অর্থনীতি ডাইভার্সিফাই হয়নি। বরং আরো তেলের উপর নির্ভরশীল হয়েছে। সোজা বাংলায়, তারা মাটি থেকে তেল তোলে। বিক্রি করে। আর সেই টাকা দিয়ে আবুলের মত চলে।


উপরের Graphical depiction of Venezuela's product exports দেখলেই বুঝতে পারবেন অবস্থা। ভেনিজুয়েলার রফতানি খাত প্রায় পুরোপুরিই পেট্রোলিয়াম আর প্রেট্রোলিয়ামজাত পণ্য নির্ভর।
ভেনিজুয়েলার জিডিপির মাত্র ৩% কৃষি নির্ভর। ওয়ার্কফোর্সের মাত্র ১০% কৃষিখাতে নিযুক্ত। খাদ্রে ভেনিজুয়েলা আত্মনির্ভরশীল নয়। তিনভাগের দুইভাগ খাদ্র ভেনিজুয়েলাকে বাইরের থেকে ইমপোর্ট করতে হয়। এবং ভয়াবহ ব্যাপার হল, এই আমদানিকৃত খাদ্যের তিনভাগের একভাগ আসে আমেরিকার কাছ থেকে যারা কিনা ভেনিজুয়েলার শত্রু ভাবাপন্ন দেশ।
আর ভেনিজুয়েলাকে চলমান ভয়াবহ সংকটের শুরুটা এই খাদ্য নিয়েই। সেগুলো একটু পর বলবো।

হুগো সাভেজের পলিসিগত বেশকিছু ভুল ছিল যেগুলো সুসময়ে বোঝা যায়নি। ক্ষমতাগ্রহনের তিন বছরের মাথায় তিনি সকল সরকারি সেক্টরে নিজের অনুগত লোকজন বসানো শুরু করেন। ভেনিজুয়েলার মেজরিটি মানুষের জীবন জীবিকা তেল ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। সুতরাং স্বাভাবিকভাবে সরকারি তেল কোম্পানি PDVSA ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ২০০২ সালে হুগো সাভেজ কোম্পানির বড়বড় হর্তাকর্তাদের সরিয়ে সেখানে নিজের অনুগত লোকজন এবং লয়ালিস্ট বসাতে শুরু করেন। ফলে শ্রমিক সংগঠনগুলো হরতাল ডাকে। হুগো সাভেজের পলিটিক্যাল অপনেন্টরা সেখানে বাতাস দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই একসময় আন্দোলন শুরু হয়। পলিটিক্যাল ক্রাইসিস দেখা দেয়। মিলিটারি ক্যু, প্লাটা ক্যু পর্যন্ত হয়। বেশকিছু মানুষের প্রাণ ঝড়ে পড়ে। কিন্তু সাভেজ ঠিকই ক্ষমতায় টিকে থাকে। পলিটিক্যাল অপজিশনকে সাভেজ দেশের শত্রু, আমেরিকার দালাল, জাতীয় বেইমান টাইপের ট্যাগ দেয়া শুরু করে।
PDVSA তে meritocracy বাদ দিয়ে দলীয় আজ্ঞাবহ “ইয়েস স্যার” লয়ালিস্ট নিয়োগ শুরু হয় ঢালাওভাবে। আন্দোলনে সম্পৃক্ত ট্রেড ইউনিয়নের নেতা কর্মী থেকে শুরু করে PDVSA এর স্কিল ওয়ার্কারদের পর্যন্ত অপসাহর করা শুরু হয় আন্দোলন এবং অপজিশন পার্টির সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে। ২০,০০০ কর্মী ছাটাই হয় একদিনে।
আর এইসময় থেকেই সাভেজের সাথে মার্কিন সরকারের সম্পর্ক ব্যাপকহারে খারাপ হতে শুরু করে।

২০০৩ সালে Capital Flight এবং ইনফ্লেশন ঠেকানোর জন্য হুগো সাভেজ প্রাইস কন্ট্রোল শুরু করে। ব্যাপারটা সংক্ষেপে বলি। ধরুণ বাংলাদেশে আলুর দাম ১০ টাকা প্রতি কেজি। (কথার কথা)। ভারতে আলূর দাম ৮ রুপি প্রতি কেজি। কথার কথা,
বাংলাদেশের ১০ টাকা ভারতের ৮ রুপির সমান।
তো বাংলাদেশ সরকার যদি এখন, আলুর দাম ৫ টাকা প্রতি কেজি নির্ধারিত হারে বেধে দেয়,
তখন কৃষক আলু ইন্ডিয়াতে ব্ল্যাক মার্কেটে পাচর শুরু করবে। কারণ একই আলু ইন্ডিয়াতে বেশি দামে বিক্রি হবে। সুতরাং লাভও সে বেশি পাবে।
এবং এই জিনিসটা কেবল আলু’তে নয়, আরো অনেককিছুতেই হবে। হয়েছে। কিন্তু এরপরও সমস্যা হয়নি, কারণ তখন তেলের দাম ছিল ক্রমবর্ধমান। সুতরাং খাদ্যে ভর্তুকি দিয়ে খাদ্য রফতানি করেছে সাভেজ। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে ভর্তুকি দিয়ে সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার প্রোগ্রাম চালিয়ে দরিদ্রমানুষের ভেতর জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং ভোটেও জিতেছে।
তেল বেচা টাকা যতদিন এসেছে ভুড়িভুড়ি, কোনো সমস্যা হয়নি।
কিন্তু সবকিছু এতো ফ্রি দেয়া সবসময় ভালো হয় না। কর্মসংস্থান তৈরি না করে, জনগনের মাঝে প্রোডাক্টিভিটি না বাড়িয়ে, খালি ফ্রি ফ্রি সুবিধা দিয়ে ভোট পেয়ে গেছে সেসময়।

আগে আসুন, চলমান ভয়াবহ পরিস্থিতিটা তথ্য উপাত্ত দিয়ে তুলে ধরি।
প্রথমেই আসি, ভেনিজুয়েলার হাইপার ইনফ্লেশন প্রসঙ্গ। মনে আছে, ২০০৬-০৯ সালের জিম্বাবুয়ের কথা? এক হালি ডিম কিনতেও মিলিয়ন জিম্বাবুয়িয়ান ডলার খরচ করতে হইতো। সেগুলো নিয়ে মানুষ ঠাট্টা তামাশা করতো। কিছু ছবি দিচ্ছি সেইসময়কার জিম্বাবুয়ের।
জিম্বাবুয়ের হাইপার ইনফ্লেশন এমন পর্যায়ে পৌছেছিল যে, জিম্বাবুয়ের দশ মিলিয়ন ডলারের সমান ছিল আমেরিকার মাত্র ১০ ডলার।
একটা মুর্গী কিনতে হলেও বস্তা ভরে টাকা নিয়ে যেতে হত।
ফকিরেরা ভিক্ষা পেতো মিলিয়ন ডলার। টাকা না গুনে ওজন করে লেনদেন হত। কারণ এতো টাকা গোনার সময় নেই।


অর্থাৎ টিস্যু পেপারের চেয়েও কারেন্সির মূল্য কম।
হাইপার ইনফ্লেশন এতটাই ভয়াবহ জিনিস।
২০১৮ সালে ভেনিজুয়েলার ইনফ্লেশন রেট প্রায় ১০ লক্ষ পারসেন্ট অর্থাৎ ১০,০০,০০০% এর কাছাকাছি হয়ে যায়। অর্থাৎ টোটাল ডিজাস্টার।



ইনফ্লেশন বা মুদ্রাস্ফিতি ব্যাপারটা সহজভাবে বলি। আপনার দেশের মুদ্রাস্ফিতি যদি প্রতিবছর ৫% হারে থাকে, তাহলে আপনার হাতে মজুদ ১ লক্ষ টাকার যে পারসেসিং পাওয়ার, বা ক্রয় ক্ষমতা, সেটা ১৪ বছরে অর্ধেক হয়ে যাবে।
উল্টোভাবে বললে, আজ যেটার দাম ১ লাখ টাকা, ১৪ বছর পর সেটার দাম হয়ে যাবে ২ লাখ টাকা।
এটাই মুদ্রাস্ফিতি।
কমপাউন্ড ইন্টারেস্ট রেটের ম্যাথমেটিক্যাল ইকুয়েসন ইউজ করে আপনি এটা বের করে পারেন সহজেই।
আপনার দেশের বার্ষরিক মুদ্রাস্ফিতির হার যদি টানা ১০ বছর ৭% হারে থাকে,
তাহলে দশ বছর পর সবকিছুর দাম ডাবল হয়ে যাবে।
এবার চিন্তা করুন, আপনি আমাকে ১ লাখ টাকা ধার দিবেন কিনা এই শর্তে যে আমি ঠিক দশ বছর পর আপনাকে ১ লাখ টাকা রিটার্ন দেব। হাহাহা। অথবা ১ লাখ টাকা মাটির ব্যাংকে রেখে দেবেন কিনা, দশ বছর পর ব্যাংক ভেঙ্গে ইউজ করার স্বপ্নে।

এজন্য দেখবেন, ত্রিশ বছর আগে মানুষ ৮০০ টাকা বেতন পেয়ে সংসার চালিয়েছে, আর আজ ৮০ হাজার টাকা বেতন দিয়ে চলতেও হিমসিম খাচ্ছে। যাই হোক। বাংলাদেশ, ভেনিজুয়েলা এবং গ্লোবাল ওভারঅল ইনফ্লেশন রেট নিচের গ্রাফে তুলে ধরলাম।


ভেনিজুয়েলার অবস্থা কি ভয়াবহ, এই গ্রাফ সেটা তুলে ধরে। Y axis লগারিদমিক স্কেলে। কারণ লিনিয়ার স্কেলে গ্রাফে আটাতে পারেনি। হাহাহাহা।



২০১৩ সালে হুগো স্যাভেজের মৃত্যু পর নিকোলাস মাদুরো ক্ষমতায় আসে। ভেনিজুয়েলার এই ভয়াবহ সিচ্যুয়েশনের জন্য তার প্রশাসনকে অনেকাংশে দায়ী করা হয়। কেউ আবার সরাসরি সোশ্যালিস্ট সিস্টেমকে দায়ী করে।
অন পেপার, সোশ্যালিস্টিক প্রোপজালগুলো জনবান্ধব এবং শুনতে ভালো শোনালেও প্রোপার ম্যানেজমেন্ট এনসিওর না হলে অন্য যেকোনো ইকোনমিক্যাল সিস্টেমের মত এটাও ভয়াবহ পরিনতি বয়ে নিয়ে আসতে পারে, ভেনিজুয়েলা সেটারই প্রমাণ।
অনেকে ভেনিজুয়েলার এই পরিস্থিতির জন্য মোটা দাগে তেলের মূল্য পতন ও ইকোনমিক্যাল মিসম্যানেজমেন্টকে দায়ী করেছে।
কেউ আবার সোশ্যালিস্ট সিস্টেমকেই সবসমস্যার মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরেছে।

এদের পক্ষে এরা যেসব যুক্তি দেখায়, সেগুলো কিছু তুলে ধরি।

শুরুতেই একটা গল্প বলি ছোট করে।
এক রাজনীতিবিদের ব্যাপারে শুনলাম, তার আশেপাশে নাকি স্থানীয় কলেজ পড়ুয়া ছেলেপেলে ঘুরাঘুরি করে। অর্থাৎ পলিটিক্যাল চ্যালাপুলো।
ছেলেগুলোকে প্রতিমাসে দশ হাজার টাকা করে হাতখরচ দেয়া হয়। কোনো কাজ করুক আর না করুক।
প্রতিমাসে ফ্রি ফ্রি একটা ছেলেকে যদি অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা আপনি ধরিয়ে দিতে শুরু করে, তাহলে তার লাইফ স্টাইলে পরিবর্তন আসবে। সে অতিরিক্ত ১০ হাজার ফাউ টাকা তার লাইফ স্টাইলে ইনক্লুড করে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
তখন এই টাকার সোর্স যদি অফ হয়ে যায়, তাহলে ছেলেটি বিপদে পড়ে যাবে। এমতাবস্থায় ওই পলিটিসিয়ানের উপর ছেলেটি ডিপেন্ডেবল হয়ে যাবে। এই সুযোগে ওই পলিটিসিয়ানও ছেলেটিকে দিয়ে ঝোপ বুঝে কোপ মারার মত কোনোএকটি কাজ করিয়ে নিতে পারবে।
নির্ভরশীলতা এভাবেই তৈরি হয়। টাকা দিয়ে, মাদক দিয়ে। নানানভাবে।
মানুষকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ালে মানুষের কাজ করার ক্ষমতা কমে যাবে, এটাই স্বাভাবিক।
সেইসাথে কম্পিটেটিভ ইনভায়রমেন্টও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
মানুষ তথাকথিত “ভালো স্কুল” বা “ভালো কলেজে” ছেলেমেয়ে কেনো পড়ায়? এই প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের জন্যই।
ধরুণ আপনি স্কুলে পড়েন।
গেলেন এমন একটি স্কুলে, যেখানে ফাস্ট বয় ৬০% মার্ক পেয়ে ফাস্ট হয়। সেকেন্ড বয় ৫০% মার্ক পেয়ে সেকেন্ড হয়।
এমন একটা স্কুলে গেলে ফাস্ট হবার জন্য ৬১% মার্ক পেলেই আপনার যথেষ্ট।
সুতরাং আপনার চেষ্টাটাও থাকবে ৬১% মার্কের জন্য।

আবার যদি এমন স্কুলে ভর্তি হন, যেখানে ফাস্ট বয় ৯৮%, সেকেন্ড বয় ৯৭% মার্ক পায়, অর্থাৎ হাইলি-কম্পিটেটিভ ইনভায়রমেন্ট, সেখানে আপনি আপনার সর্বোচ্চ বা বেস্ট পারফর্মেন্স দিয়েই ৯৯% মার্ক তোলার চেষ্টা করবেন। হয়ত ব্যর্থ হবেন। কিন্তু আপনি আপনার সাধ্যের পুরোটাই দেবেন।

সিস্টেম খুব গুরত্বপূর্ণ। জার্মানির লোকেরা এতো পরিশ্রমী, গ্রিসের লোকেরা তেমনটি নয়। কেন এমন হয়? শুধুই কি জাতিগত? নাকি সিস্টেমের ব্যাপারস্যাপার জড়িত?
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অবশ্যই সিস্টেম।
ভেনিজুয়েলার সোশ্যালিস্ট ইকোনমিক্যাল পরিবেশ স্বাভাবিকভাবেই বিগ গভর্মেন্ট নির্ভর। এখানে মানুষের কাছ থেকে সর্বোচ্চ আউটপুট আশা করাটা কঠিন। আপনি বাংলাদেশের দিকেই তাকান। বাংলাদেশের সরকারি যেসব সেক্টর আছে,
সরকারি টেলিকমিউনিকেশন, সরকারি পোস্টাল সার্ভিস, রেলওয়ে, সরকারি ট্রান্সপোর্টেশন, এটাসেটা, যা কিছু সরকারি মালিকানাধিন বা সরকার নিয়ন্ত্রিত, সেসবকিছুতে সার্ভিসের মান দেখুন, আর প্রাইভেট সেক্টরে একই ধরণের খাতে সেবার মান তুলনা করুণ। বুঝবেন।
আপনি সরকারি ব্যাংকগুলোতে যান। জনতা, পুবালি, রুপালি, আরো যা যা আছে। এগুলোতে গিয়ে একটা হেল্প চান। সার্ভিস দেখুন। আর বেসরকারি কোনো ব্যাংকে গিয়ে সার্ভিস দেখুন। আকাশ পাতাল ব্যবধান।
অথচ যে মানুষটা সরকারি সেক্টরে নিযুক্ত, সেই একই মানুষকে যদি আপনি বেসরকারি সেক্টরে নিয়োগ দেন, অবশ্যই সে বেটার পারফর্মেন্স দিবে। দিতে বাধ্য। কারণ সেখানে বেটার পারফর্মেন্স না দিলে তার চাকরি যাবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কম্পিটিশন করে টিকে থাকে (ব্যতিক্রম ব্যতিত) । তাদের বেটার সার্ভিস দিতেই হবে।
এখন চিন্তা করুণ, একটা দেশে নামকাওয়াস্তে প্রাইভেট সেক্টর। বাকিসবকিছু চলে সরকারি খাতে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি খুব একটা ভালো হয় না। তবে ব্যতিক্রম আছে। কিছুকিছু জাতি বা রাষ্ট্রের উদাহরণ আপনি চাইলে দেখাতে পারবেন। তবে সেটা এক্সেপশন্যাল হিসেবেই পাবেন।

অন্যদিকে বিগ গভর্মেন্টের সমস্যা হল, এটা যদি ডিক্টেটর দিয়ে পরিচালিত হয়, তাহলে সেই পুরনো কথা।
Power tends to corrupt; absolute power corrupts absolutely.
এটারও এক্সেপশনাল আপনি খুঁজে পাবেন। কিন্তু এক্সেপশন ইজ নট এন এক্সাম্পল।

ভেনিজুয়েলা ভয়াবহ করাপশনে ডুবে আছে গত শতাব্দীর পুরোটা জুড়েই। এবং এখন পর্যন্ত।
Venezuela has been ranked one of the most corrupt countries on the Corruption Perceptions Index since the survey started in 1995. The 2016 ranking placed Venezuela at number 166, out of 178 ranked countries in government transparency.
Similarly, the World Justice Project ranked Venezuela 99th out of 99 countries surveyed in its 2014 Rule of Law Index.

এখানে বিষয়গুলো ইন্টার কানেক্টেড। এখানে resource curse বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করে।
ব্যাপারটা সহজে বলার চেষ্টা করি।
মধ্যপ্রাচ্যের উদাহরণ দেখুন। যখন মধ্যপ্রাচ্যে তেল ছিল না, অর্থাৎ মধ্যযুগে। তখন দেশবিদেশের জ্ঞানীগুনী ব্যক্তিরা জ্ঞান অর্জনের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে আসতো। ইনবে সিনা, জাবির ইবনে হাইয়ানদের সময়কালগুলো দেখুন। তখন তো মাটি খুড়ে এতো সম্পদ বের হতো না। কিন্তু জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চাটা তখন ঠিকই হত। মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতাও এখনকার চেয়ে বেশি ছিল।
আর এখন এতো অর্থ সম্পদ। এতোকিছু। অথচ একটা ভালো ইউনিভার্সিটি খুঁজতে গেলে হারিকেন লাগে। জ্ঞানীগুনী ব্যক্তিদের মধ্যপ্রাচ্যে এখন আর দেখা যায়না। আর গবেষনা তো বহুত দূর কি বাত।
মোটা দাগে কারণ এই রিসোর্স অভিশাপ।
মাটির তলে তেল আছে। সুতরাং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সরকারের রেভিনিউ জেনারেট করতে মানুষের ইনকামের উপর ট্যাক্স বসানোর খুব একটা বেশি দরকার নেই। তেল তোলো। বিক্রি করো। পয়সা কোষাগারে জমা করো। সেই টাকা দিয়ে রাস্তাঘাট উন্নত করো। মিলিটারি পুষে জনতা নিয়ন্ত্রন করো। উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়ে ভোগ বিলাস, আমোদ ফুর্তি করো। সহজ হিসাব। জনগনের মন জুগিয়ে চলার দরকার নেই।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তেল আছে। জনসংখ্যা কম। সুতরাং তাদের অন্তত বিল গেইটস, স্টিভ জবস, সার্গে ব্রাইন, ইলোন মাক্স’দের মত লোকের দরকার নেই। আমেরিকার অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় কন্ট্রিবিউটার যদি গুগল, Apple, Microsoft হয়, তাহলে চিন্তা করে দেখুন, এগুলো সবই নলেজবেইজড বিজনেস। এদের মালিকেরা টেকনোক্র্যাট। মাটি ফুড়ে তেল তুলে বিক্রি করতে অনেকেই পারে। কিন্তু এসব টেকনোক্র্যাট, জ্ঞানীগুনী মেধা তৈরি করতে সবাই পারে না। মধ্যপ্রাচ্যের ডিক্টেটরদের জন্য এসব ইন্টেলেকচুয়াল লোকের দরকার নেই। আর সেই পুরনো কথা তো আছেই। হীরক রাজার দেশের ডায়লগ, “এর যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে”
সেইসাথে সোশ্যালিস্ট করাপ্টেড ডিক্টেটরিয়াল গভর্মেন্টের কারণ প্রাইভেট সেক্টর বলে কার্যত কিছু নেই।
একটা উদাহরণ দেয়া যাক।
কিছুদিন আগে একটা নিউজ দেখলাম,
আমেরিকার বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান Amazon গতবছর কোনো ট্যাক্স দেয়নি।
ওদিকে Amazon এর মালিক দুনিয়ায়র শ্রেষ্ঠ ধনী।
প্রশ্ন হল, এমাজন কি ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছে? ব্যাপারটা তেমন নয়।
এখানে, ইনসেন্টিভ (incentive) জড়িত।
ইনসেন্টিভ হল a thing that motivates or encourages someone to do something.
আপনি বিশাল করপোরেশনের জন্য একটা ইনসেন্টিভ চালু করলেন। বললেন, যদি ১০ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারো, তাহলে তোমার জন্য ট্যাক্স মাফ। তো চিন্তা করেন এরপর কি হবে। সেই করপোরেশন নিজের ব্যবস্থা প্রসারের জন্য সর্বশক্তি দেবে। কারণ ব্যবসা বড় করলে তার যেমন কোনো ক্ষতি নেই, উল্টো লাভ।
ওদিকে সরকার ১০ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করলো।
আবার যদি সরকার বেকুবের মত বিশাল ট্যাক্স বসিয়ে দেয় করপোরেশনের উপর, তাহলে বড়বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেশ ছেড়ে ভাগবে। ভিন্ন দেশে, যে দেশে কর্পোরেট ট্যাক্স কম, দরকার হয় সেই দেশে গিয়ে ব্যবসার রেজিস্ট্রেশন করাবে।
এমন তো হরহামেশা হচ্ছে। হয়।
সুতরাং আপনাকে ব্যবসা বান্ধব ইনসেন্টিভ দিতে হবে।
করপোরেশনের ট্যাক্স কাট দিলেন, এতে কর্পোরেশন যদি তিন ডাবল কর্মসংস্থান তৈরি করে, তাহলে সেটা তো বেশি লাভ। সরকার তখন কর্মচারীদের ইনকাম থেকে ট্যাক্স ঠিকই পাবে। আর আয় রোজগেরে মানুষগুলো অর্থনীতিতেও কনট্রিবিউট করবে।
সুতরাং লাভ তো বাড়বে। কমবে না।

সরকারকে এজন্য ইনসেনটিভ দিতে হয়। সেইসাথে কম্পিটেটিভ পরিবেশও তৈরি হয়। জিডিপির গ্রোথ রেট বাড়ে।
সোশ্যালিস্ট অনেক এজেন্টা শুনে ভালো লাগে, কিন্তু আউটকাম ভালো নাও আনতে পারে।
সবসময় মাথায় রাখবেন, পলিটিসিয়ানরা লাভ ব্যাতিত কোনো কিছুর জন্য ফাইট করে না। উইথআউট এনি বেনিফিট, একটা টিনেজ ছেলে হয়ত কিছু করতে পারে, কিন্তু একটা ত্রিশোর্ধ ব্যক্তি বেনিফিট না থাকলে এক পা সামনেও আগায় না আজকাল।
বার্নি স্যান্ডার্সের মত মার্কিন সোশ্যাল ডেমোক্রেট পলিটিসিয়ানরা যখন মিনিম্যান ওয়েজ, অর্থাৎ শ্রমিকের নুন্যতম মজুরি ১৫ ডলার বেধে দিতে দাবি করে, তখন ভুলেও এটা মনে কইরেন না জনদরদি হয়ে মানুষের জন্য চিল্লাইতেছে।
খোঁজ নিয়ে দেখুন, তাদের পেছনে বিশাল বিশাল মেগা ডোনার কর্পোরেশন আছে। স্পেশ্যাল ইন্টারেস্ট ফান্ডিং দিতেছে তাদের। তাহলে মিনিম্যান ওয়েজ, বা নুন্যতম মজুরি ১৫ ডলার নির্ধারণ করলে এসব কর্পোরেশনের ফায়দা কি?

চিন্তা করে দেখুন। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে লিভিং কস্ট, আর লুইজিয়ানা স্টেটের লিভিং কস্ট এক কিনা। মোটেও এক নয়। লুইজিয়ানাতে যে শ্রমিক ১০ ডলার প্রতি ঘন্টা মজুরীতে সংসার চালাতে পারবে, সেই শ্রমিক কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়াতে গিয়ে ১০ ডলার প্রতি ঘন্টা মজুরিতে চলতেও পারবে না। কারণ ওখানে সবকিছুর দাম বেশি।
আমেরিকাতে আছে ৫০টা স্টেট । এখন ক্যালিফোর্নিয়াতে একটা প্রোডাক্ট তৈরি করলেন ১০ জন শ্রমিক’কে ১০ ঘন্টা খাটিয়ে। ১৫ ডলার প্রতি ঘন্টা মজুরী দিয়ে। অর্থাৎ ১৫০০ ডলার শ্রমিকের পেছনে ব্যয় হল প্রোডাক্ট তৈরিতে। অন্যদিকে একই প্রোডাক্ট লুইজিয়ানা’তে ১০ জন শ্রমিক ১০ ঘন্টা খাটিয়ে ৮ ডলার প্রতি ঘন্টা মজুরি দিয়ে তৈরি করা সম্ভব। অর্থাৎ শ্রমিক খাটানো বাবদ ব্যয় হল ৮০০ ডলার। অর্থাৎ ক্যালিফোর্নিয়ার চেয়ে ৭০০ ডলার কম।
কিন্তু খেয়াল করুণ, ক্যালিফোর্নিয়া আর লুইজিয়ানের শ্রমিকের লাইফ স্টাইল কিন্তু একই হবে। যদিও একজন ঘন্টা প্রতি আয় করে ১৫ ডলার, আরেকজন ৮ ডলার। ওই যে বললাম, ক্যালিফোর্নিয়া অনেক ব্যয়বহুল শহর।
তো স্বাভাবিকভাবেই লুইজিয়ানাতে প্রোডাকশন কস্ট কম। এজন্য একই প্রোডাক্ট লুইজিয়ানার কোনো কোম্পানি তৈরি করলে ক্যালিফোর্নিয়ার কোম্পানির চেয়ে সে বেটার পজিশনে থাকবে। হোক ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিষ্ঠানটি জায়েন্ট বিজনেস, এবং লুইজিয়ানার প্রতিষ্ঠানটি স্মল বিজনেস।
এবার ভেবে দেখুন, যদি গোটা আমেরিকাতে নুন্যতম মজুরি ১৫ ডলার প্রতি ঘন্টা আপনি নির্ধারন করে দেন, তাহলে কি হবে? এমাজন বা গুগলের মত বিগ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রতি ঘন্টা ১৫ ডলার মজুরি দেয়া সহজ। লোক ছাটাই করে অটোমেশন দিয়ে লেবার খরচের মোট হিসাব কমিয়ে রাখা এদের পক্ষে সম্ভব। কিন্তু স্মল বিজনেস সব শেষ হয়ে যাবে। বিগ কর্পোরেশনগুলো সম্ভাব্য প্রতিপক্ষগুলোকে খেয়ে দেবে।
কর্পোরেশনের উদ্দেশ্য থাকবে মনোপলি তৈরি করা। আর সরকারের উদ্দেশ্য থাকবে এই মনোপলি যাতে না হয়, সেটার ব্যবস্থা করা। স্মল বিজনেস, স্টার্ট আপ বিজনেসগুলোকে সুযোগ করে দেয়া। এই চেক এন্ড ব্যালান্স যদি থাকে, তাহলে সিস্টেম ভালোভাবে চলে। কম্পিটিশন থাকে।
হিলারি যখন নুন্যতম মজুরি ১৫ ডলার প্রতি ঘন্টা দাবি নিয়ে চিল্লাপাল্লা করে, তখন উনার লবিস্টদের স্বার্থ এখানে জড়িত থাকে।
আবার বাস্তবেই নুন্যতম মজুরি বাড়ানোর পক্ষেও যোক্তিক কারণ দেখানো যায়। যদিও অনেক রথি মহারথীরা দাবি করে, মুন্যতম মজুরি নির্ধারিত করার কিছু নেই। মার্কেটের উপর বিষয়টি নির্ভর করবে। কিন্তু তেমন করতে দিলে আবার হিতে বিপরীত হবার চান্স থাকে। যেমন আমাদের দেশের গার্মেন্টসের কথা চিন্তা করুণ। গার্মেন্ট মালিকেরা তো পারলে আমাদের দেশের মানুষকে মাগনা খাটাবে। সারাদিন অমানুবিক পরিশ্রম করিয়ে দিনশেষে ১০০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলবে, ভালো লাগলে নাও, না নিলে ভাগো। এক্ষেত্রে সরকারকে ইন্টারভিন করতেই হবে। পুঁজিবাদীরা অন্যথায় একচেটিয়া লাভ করবে। এদের অর্থের পিপাসা অনেক বেশি।
অর্থাৎ মুদ্রার দুই পিঠই আছে। পলিটিসিয়ানেরা অধিকাংশ সময় আপনাকে মুদ্রার এক পিঠ দেখাবে। অন্য পিঠ নিয়ে কথা বলবে না।
যেমন আমেরিকাতে যদি নুন্যতম মজুরি ১৫ ডলার প্রতি ঘন্টা ফেডারেল সরকার নির্ধারন করে দেয়, তাহলে মেক্সিকো থেকে আমেরিকাতে বৈধ অবৈধ অভিবাসন আরো বাড়বে।
আবার মুদ্রাস্ফিতিও বাড়বে। মুদ্রাস্ফিতি বাড়ানোর ব্যাপারটা কিছুদিন আগে ছোট একটা উদাহরণ দিয়ে একজনকে বুঝিয়েছিলাম।
ধরুণ একটি সরকারি আবাসিক কোয়াটার। তাতে ৩০০ অফিসার, ১২০০ স্টাফ থাকেন।
অফিসারদের মাসিক আয়ের নুন্যতম লিমিট ১০০০ টাকা, (কথার কথা)
আর স্টাফদের মাসিক আয়ের সর্বোচ্চ লিমিট ৫০০ টাকা।
এখন মাছের বাজারে ৮০০ টাকার দামের মাছটি হয়ত ঘুরেফিরে অফিসারেরাই ক্রয় করে।
তো হঠাৎ সবার স্যালারি বাড়িয়ে দেয়া হল। ফলে এবার অফিসারের মাসিক আয়ের নুন্যতম লিমিট ২০০০ টাকা,
আর স্টাফের ১০০০ টাকা।
ফলাফল, এবার স্টাফেরাও সেই ৮০০ টাকার মাছ ক্রয় শুরু করবে।
মাছের বিক্রেতা দেখবে, আগে তার ক্রেতা ছিল ৩০০ জন। এখন হয়ে গেছে ১৫০০ জন।
সুতরাং সে এবার মাছের দাম বাড়িয়ে ১৬০০ টাকা করে দেবে।
অফিসার এবার ১৬০০ টাকা দিয়ে সেই মাছ কিনবে।
সুতরাং যেই লাউ, সেই কদুই হয়ে গেল।
আগের ১০ টাকা আর এখনকার ২০ টাকা সমান।
যাই হোক,
সুতরাং সবকিছুরই প্রোস এন্ড কনস আছে।
জনতার যদি বিচার বুদ্ধি থাকে, জনতা যদি well informed থাকে, তখন জনতা হিসাব কিতাব করে ভালো মন্দ বিচার করে একটা ডিসিশনে যেতে পারে।
সবকিছুতে গভর্মেন্ট কনট্রোল ভালো না। আবার সবকিছুতে ছাড় দিলেও সমস্যা।
তবে একটা কথা সত্য, প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ না থাকলে সিস্টেমে সমস্যা হতে বাধ্য।

যাই হোক, ভেনিজুয়েলাও এই রিসোর্স অভিশাপ এবং সোশ্যালিস্ট ডিক্টেটরিয়াল সিস্টেমের অপরিনামদর্শী পলিসি মেকিংএর ভয়াবহ যুগলবন্দীর খপ্পড়ে আটকা পড়েছে।
ভেনিজুয়েলার ম্যানেজম্যান্ট, পলিসিমেকিং, কোনো জায়গাতেই যোগ্য ইন্টেলেকচুয়াল লোকের সুযোগ হয়নি। এই ভয়াবহ মিসম্যানেজমেন্টের জন্য সিস্টেম অবশ্যই দায়ী। তবে একমাত্র দায়ী নয়।
যেমন ২০১৪ সালে যখন তেলের দাম ধপাস করে কমে গেল, তখন আমেরিকার দেয়া অনেক অর্থনৈতিক অবরোধের পরও রাশিয়া কিন্তু ঠিকই টিকে ছিল। রাশিয়া ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু ধ্বসে পড়েনি। ঠিকই ঘুরে দাড়িয়েছে। এসময়কালে খুব গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করেছিলো রাশিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নর Elvira Nabiullina
এই ভদ্রমহিলার মত কেউ ভেনিজুয়েলাতে ছিল না। কোনো পদেই না।
অন্যথায় কেবলমাত্র তেলের দামের পতনের কারনে ভেনিজুয়েলার এমন অবস্থা হবার কথা না।
নিচের গ্রাফটি দেখুন।


https://www.worldometers.info/population/world/

সৌদি আরব ঠিক ভেনিজুয়েলার মতই। প্রায় কাছাকাছি জনসংখ্যা। এবং দুইটি দেশের অর্থনীতিই সিংহভাগ পেট্রোলিয়াম নির্ভর।
তাহলে সৌদি আরব ক্রাইসিসের ভেতর পড়লো না, ভেনিজুয়েলা কেনো পড়লো?

এবার এই লিখার শেষ অংশে ইন্টারকানেক্টেড ভেরিয়েবলগুলো এবং ঘটনাগুলোকে তুলে ধরবো।

কথার কথা, আমি একজন ভেনিজুয়েলান সিটিজেন।
বয়স ৩০ বছর। ব্যাংকে ৫০ লাখ বলিভার (ভেনিজুয়েলার মুদ্রা) মজুদ আছে।
ধরুণ এটাকে টাকা হিসেবে ধরলাম।
অর্থাৎ ব্যাংকে আছে ৫০ লাখ টাকা।
সাল ১৯৮৫। সৌদি আরব আর আমেরিকা মিলে যুক্তি করে তেলের দাম একেবারে কমিয়ে দিয়েছে। ফলে ভেনিজুয়েলার অর্থণীতি একেবারেই shrink করেছে। কারণ তেলের দাম কমে যাওয়াতে সরকারের রেভিনিউ কমে গেছে। বাজেট কমে গেছে। সুতরাং আমার দেশে ইনফ্লেশন শুরু হয়েছে।
আমার দেশের মানুষ এখন আমেরিকাকে ব্লেইম করে এই পরিস্থিতির জন্য।
আমার দেশের ইনফ্লেশন বাড়তে থাকার মানে কি?
যদি আমার দেশের ব্যাংকে সুদের হার ৫% হয়, এবং ইনফ্লেশন প্রতিবছর ২৫% হয়, তাহলে এভাবে চলতে থাকলে ৪ বছরেরও কম সময়ে আমার ক্রয় ক্ষমতা অর্ধেক হয়ে যাবে। গানিতিকভাবে আমার টাকা বাড়বে, কিন্তু সেই টাকা মূল্য হারাবে।
চার বছরে হবে অর্ধেক।
এমন পরিস্থিতিতে আমি কি করতে পারি? গয়না কিনে মজুদ করতে পারি। কিন্তু সেটা অনেক ডিফিকাল্ট। আমি যেটা করতে পারি, টাকাগুলো বিদেশে পাচার করে দিতে পারি। হেফাজত করতে পারি। সেক্ষেত্রে আমি হুন্ডি ধরে বাইরে টাকা পাচার করলাম। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে ১ ডলার = ১০ বলিভার না করে ১ ডলার = ১৫ বলিভার করলাম। কারণ হুন্ডি’রা এমনই রেট ধরবে। এটাই তাদের লাভ।
তো আমি না হয় এভাবে টাকা পাচার করলাম। কিন্তু এই কাজটা কেবল আমি না। করতেছে আমার মত আরো অনেকে। ফলে ভেনিজুয়েলার ইনফ্লেশন আরো বাড়তেছে। চেইন রিয়াকশনের মত।
এমনকি সবজি বিক্রেতাও তার ফসল ব্লাক মার্কেটে ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করতেছে। সেই ফসল চলে যাচ্ছে পাশের দেশ কলম্বিয়াতে। সেখানে গিয়ে কালোবাজারিরা ফসল বিক্রি করতেছে। কৃষক ডলার কামিয়ে নিজের ছেলেকে দিচ্ছে। ডলার হাতে দিয়ে বলতেছে, যা’রে খোকা। এই দেশে ভবিষ্যৎ নাই। এই ডলারগুলো নিয়ে পাশের দেশে পাড়ি জমা। সম্ভব হলে বর্ডার ক্রস করে আমেরিকা ঢোকার চেষ্টা কর। এই ডলারগুলো সাথে রাখ। দুনিয়ার যেখানেই যাবি, ডলারগুলো ঠিক গোল্ডের মত তোকে সাহায্য করবে। ডলার দুনিয়ার সবজায়গায় বিক্রি করে ভালো দাম পাবি।

আর এভাবেই আমরা সবাই মিলে ইনফ্লেশন আরো বাড়িয়ে দিলাম। এরপর যখন ১৯৯৬ সাল এলো, তখন ইনফ্লেশন ১০০% ছুয়ে গেল।
কিন্তু এরকিছুদিন পর সোশ্যালিস্ট বিপ্লব হয়ে হুগো সাভেজ ক্ষমতায় এলো।
কিন্তু সোশ্যালিস্টরা ক্ষমতায় এলো আরেক ঝামেলা বেধে গেল। সমাজের বিত্তবানেরা এবার সংকটে। সোশ্যালিস্ট সরকার তাদের উপর বিশাল বিশাল ট্যাক্স বসাবে। তাদের বিত্ত ধরে টান দেবে।
ফলাফল, বড়লোকেরা আরো মরিয়া হয়ে এবার ক্যাপিটাল ফ্লাইট, সোজা বাংলায়, টাকা পাচার করতে শুরু করলো আমেরিকার ফ্লোরিডায়, ব্রাজিলে, বা কলম্বিয়ায়।
ল্যাটিন আমেরিকা এমনিতেই ড্রাগ লর্ড’দের কার্যকালাপের জন্য বিখ্যাত। এখানে আন্ডার ওয়ার্ল্ড অনেক শক্তিশালি। সুতরাং হুন্ডি বা কালোবাজারি খুজলেই মেলে।
সহজ সুত্র হল, যতবেশি অর্থ বাইরে পাচার হবে, ডলারের বিপরীত বলিভারের ভ্যালু তত কমবে।
ফলে সরকারের আমদানি ব্যয় ততবেশি বাড়বে। আগেই বলেছি, ভেনিজুয়েলা প্রচুর খাদ্রদ্রব্য আমদানি করে। সুতরাং পরিস্থিতি আশা করি বুঝতে পারতেছেন।

হগো সাভেজ এবার নানান কিসিমের আইন করে, control mechanism দিয়ে Capital Flight বা অর্থপাচার কমিয়ে দিলো।
সরকার সরাসরি মুদ্রা বাজারে হস্তক্ষেপ করলো। ডলারে থাকা ফরেন রিজার্ভ দিয়ে নিজ দেশের মুদ্রা কিনতে লাগলো। এতে ইনফ্লেশন কমে গেল। এটা মুলত ম্যানুপুলেশন। কারেন্সি রেট আর্টিফিসিয়ালি কনট্রোল করতে শুরু করলো। CADIVI চালু করলো ২০০৩ সালে। স্টেটরান এক্সচেঞ্জ ব্যুরো CADIVI বানিয়ে নিজ দেশের জনগনের কাছে বেধে দেয়া রেটে ডলার বিক্রি শুরু করলো। কিন্তু এখানে বেশকিছু শর্ত দিয়ে দিলো। যেমন, আমি (একজন ভেনিজুয়েলান) তখনই ডলার কিনতে পারবো, যখন আমি বাইরে ঘুরতে যাবো, অথবা ফরেন কিছু ইনপোর্ট করবো, অথবা ফরেন কোনো ব্যাংক’কে আমার পাওনা ঋণ ফেরত দেবো। ব্লাহ ব্লাহ।
এবং সরকারি বেধে দেয়া রেট ধরুণ, ১ ডলার = ৬ বলিভার।

তো এবার মানুষজন শুরু করলো অন্যকাহিনী। তারা প্লেনের টিকেট কাটলো বলিভারে। বোঝার সুবিধার জন্য, ধরুণ টাকায়। আপ ডাউন টিকেট কাটলো কারাকাস টু ফ্লোরিডা।
এরপর ক্রেডিট কার্ডে ১ ডলার =৬ টাকা এক্সচেঞ্জ রেটে ৩ হাজার ডলার এনডোর্স করে ফ্লোরিডা গেল। ফ্লোরিডা গিয়ে কিছুদিন আত্মীয় স্বজনের বাসায় ঘুরলো। এরপর সেখানে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ৩ হাজার ডলার ক্যাশ আউট করলো।
এরপর সেই ক্যাশ টাকা নিয়ে ভেনিজুয়েলায় ফিরে এলো। এসে সেই তিন হাজার ডলার, যেটা কিনা সরকারি ভাবে বেধে দেয়া ১ ডলার = ৬ টাকা এক্সচেঞ্জ রেটে তোলা,
সেটা ব্ল্যাক মার্কেটে বিক্রি করলো ১ ডলার = ৬০ টাকা হারে।
অর্থাৎ মোট ১৮,০০০ টাকার সমপরিমান ৩ হাজার ডলার এনডোর্স করিয়ে নিয়ে গেছিলাম। এবার সেটা দেশে এনে ৬০ টাকা/ডলার এক্সচেঞ্জ রেটে ব্ল্যাকমার্কেটে বিক্রি করলাম। ফলে আমার পকেটে এখন ১,৮০,০০০ টাকা। কি এক আজব ব্যবসা করে ফেললাম !!
অথচ এই ধান্দা করতেছে আরো অনেকে।
এবং এই ধান্দা করতে গিয়ে ব্ল্যাক মার্কেটেও ডলার প্রতি বলিভারের রেট বেড়ে যাচ্ছে।
ব্ল্যাক মার্কেটে ডলারের বিশাল চাহিদা।

এসবকিছুই সামাল দেয়া যাচ্ছিলো যখন তেলের দাম ভালো ছিল। কিন্তু যেই না তেলের দাম কমে গেল ২০১৩ সালে। ওমনি আবার ক্রাইসিস।
এবং মানুষ যত প্যানিকড হবে, অর্থপাচার তত বাড়তে থাকবে। মানুষের আস্থা যত কমতে থাকবে নিজ দেশের মুদ্রা এবং অর্থণীতির উপর, ততবেশি মুদ্রা বাজারে ধ্বস নামবে।
শেয়ার বাজারে যেমন গুজব রটিয়ে ধ্বস নামানো যায়, ব্যাপারটা তেমনই।
আপনি কালই যদি গুজব রটিয়ে দিতে পারেন, আগামীকাল দেশের অর্থনীতি কোনোএক কারনে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, ওমনি দেখবেন মানুষ হুমড়ি খেয়ে টাকা পাচার শুরু করবে। শেয়ার বিক্রি শুরু করবে। Chaos লাগিয়ে দেবে।
আর এই ব্যাপারটি ভাইরাসের মত কাজ করে। এবং এর ইফেক্ট হয় exponential


নিকোলাস মাদুরো নিজ দেশের আর্মিকে দায়িত্ব দিয়েছে খাদ্র রফতানির কাজে। সমস্যা হল, আর্মিতেও তো খারাপ মানুষ কম নেই। বেধে দেয়া ডলার রেটে খাদ্য কিনে আর্মিও ব্ল্যাকমার্কেটে খাবার বিক্রি করে ডলার কামাচ্ছে। ব্যবসা করতেছে।

চাকরি নেই। আর্থিক নিরাপত্তা নেই। খাদ্য নেই। হাইপার ইনফ্লেশন চরমে। এহেন পরিস্থিতিতে দেশের যুবসমাজ পালাচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ ভেনিজুয়েলা ছেড়ে পাশের দেশগুলোতে রিফিউজি হিসেবে পাড়ি দিচ্ছে। আর যতবেশি মানুষ বর্ডার ক্রস করে পাড়ি দিচ্ছে, সবার কাছে আর কিছু থাকুক আর না থাকুক, ডলার ঠিকই আছে। কারণ বাইরের একটা অপরিচিত দেশে যেতে গেলে ডলার দরকার।
এভাবে সিস্টেম গুণোত্তর হারে খারাপ হচ্ছে।
আর ডলারের ভ্যালু ব্ল্যাক মার্কেটে দিনের পর দিন বাড়তেছে।
সেইসাথে দেশে খাবার দাবার নেই।
ফলাফল, ভয়াবহ হাইপার ইনফ্লেশন।
হাইপার ইনফ্লেশন একেবার সহজ করে বলি। বছরের শুরুতে যে জিনিসের দাম ১ টাকা ছিল, বছরের শেষদিনে সেই জিনিসের দাম বেড়ে যদি ১৩০ টাকা হয়, থাওলে সেই দেশে হাইপারইনফ্লেশন শুরু হয়ে গেছে।
Too much money chasing too few products.

তো ভেনিজুয়েলার এই সিস্টেমের অন্যতম রুপকার Jorge Giordani


তিনি ভেনিজুয়েলার পরিকল্পনামন্ত্রী। এবং হুগো সাভেজের ডাই হার্ড সাপোর্টার। এই ফিক্সড কারেন্সি এক্সচেঞ্জ রেট সিস্টেমের অন্যতম প্রবর্তক তিনি।
২০১৩ সালে শুরুর আভাস দেখা দিলে নিকোলাস মাদুরো অর্থমন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলাম গণিতবিদ Nelson Merentes কে।


অর্থপাচার বা ব্ল্যাকমার্কেট মুলত রোগের লক্ষণ, কিন্তু মূল সমস্যা ভেনিজুয়েলার এই ফিক্সড কারেন্সি এক্সচেঞ্জ সিস্টেম, যাকে ফল্টি সিস্টেম হিসেবে চিহ্নিত করে এটা সংস্কার করার কথা ভেবেছিলেন তিনি। এই ফিক্সড এক্সচেঞ্জ সিস্টেমকে বাতিল করার জন্য কাজ শুরু করলে তখন তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়। সবচেয়ে বড় সমালোচক ছিলেন Jorge Giordani.
গিওর্দানি ছিলেন পলিটিক্যাল আইডিওলজি ড্রিভেন। পরিস্থিত না বুঝে বরং গোয়াড়ের মত হুগো সাভেজের ফিক্সড এক্সচেঞ্জরেটকে হুগো সাভেজের লেগাসি হিসেবে নিয়ে সেটাকেই রেখে দেয়া হয়। যুক্তি দেখানো হয়, ফিক্সড এক্সচেঞ্জ রেট তুলে দিলে হাইপারইনফ্লেশন শুরু হবে।
তো Nelson merentes কে অর্থমন্ত্রনালয় থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। ২০১৪ সালে যদিও তাকে আবার ডেকে এনে ভেনিজুয়েলার সেন্ট্রাল ব্যাংকের দায়িত্ব দেয়া হয়।
কিন্তু এতোকাল যে bubble ফুলে ফেপে উঠেছে,
সেটা ততদিনে brust হয়েছে।
তেলের দামের পতন, এবং সেই পতন লাগাতার চলতে থাকলে ক্রমশ ভেনিজুয়েলার অবস্থা তলানিতে যেতে শুরু করে। সেইসাথে ভয়াবহ করাপশন, মেরিটোক্রেসির অভাব, এবং পরিকল্পনার অভাব, ভেনিজুয়েলাকে আজকের অবস্থানে এনেছে।
আইডিওলজি ড্রিভেন এই সিস্টেমে সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বললে, সরকারের পলিসি নিয়ে সমালোচনা করলে সেটাকে দমন করা হয়, কখনো আবার মার্কিন দালাল ট্যাগ দেয়া হয়।
ফলাফল, এসব সমস্যার সমাধান তো হয়ই না, বরং সেগুলো আরো বাড়ে।
ভেনিজুয়েলার গল্পটা অনেকটা সেই ঘাসফড়িং আর পিপড়ার মতই। যা ছোটবেলা পড়েছিলাম।

পলিটিক্যাল মিসম্যানেজমেন্ট, দূরদর্শিতার অভাব, দূর্নীতি এবং মেরিটোক্রেসির অভাব একটি আপাত সম্পদশালী দেশকে তিলেতিলে কিভাবে শেষ করে দিতে পারে, তার ক্লাসিক উদাহরণ হয়ে থাকবে ভেনিজুয়েলা।

--
--
--
নানাবিধ রেফারেন্স উপরে লিখার ভেতরে ভেতরে প্রোভাইড করা হয়েছে।
(*** বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ এটিএম গোলাম কিবরিয়া ভাই এবং ক্ষিরোদ মোহন বোস স্যার )



Read More »