Monday, February 22, 2016

বাংলাদেশের BCS vs ভারতের CSE


আমাদের যেমন BCS ,
ভারতের তেমন CSE
অর্থাৎ ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা।
কতটুকু মিল, আর কত বিশাল অমিল, এসব নিয়ে এবারের আলোচনা।
মুল আলোচনাটা পরীক্ষা পদ্ধতির ভেতরই সীমাবদ্ধ রাখবো। একজন ভারতীয় ক্যাডার কি ধরণের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আর একজন বাংলাদেশী ক্যাডার কি ধরণের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে, এই ধরণের তুলনা এখানে থাকবে না।
মুল আলোচনা থাকবে পরীক্ষা পদ্ধতি তথা সিলেকশন নিয়ে।

এই নোট লিখাটি তার জন্য বুঝতে সুবিধা হবে যার বাংলাদেশের বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে নুন্যতম কিছু ধারণা আছে।
তো, বাংলাদেশের বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (BPSC)
আর ইন্ডিয়াতে CSE পরীক্ষা আয়োজন করে UPSC (union public service commission)

বাংলাদেশের মত ইন্ডিয়াতেই পার্মানেন্ট বুরোক্রেসি। বাংলাদেশ আর ইন্ডিয়ার প্রশাসনিক কাঠামো একই ধরণের। বাংলাদেশের বিসিএস ক্যাডারদের যেমন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন, সেখানেও তেমনই। মন্ত্রী বদল হয়, কিন্তু আমলাতন্ত্র একই থাকে।
যাই হোক, আসল কথাতে আসি।

গতবছর ২৩শে আগস্ট ভারতের সিভিল সার্ভিস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। হা, ঠিক আমাদের মত সেখানেও প্রথমে প্রিলি, এরপর রিটেন এবং ভাইবা অনুষ্ঠিত হয়।

গতবারের সার্কুলার হওয়া সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে ভারতের সিভিল সার্ভিসে মোট ১১২৯ জন নিয়োগ পাবে। (এখনও পরীক্ষা চলতেছে। কেবল রিটেনের রেসাল্ট দিয়েছে)

১১২৯ জনের ভেতর ২৯ জন শারিরীক প্রতিবন্ধী কোটা। এছাড়া পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু রিজার্ভেশন করা হয়।

বাংলাদেশে যেমন সারা দেশ জুড়ে বিসিএস প্রিলি আয়োজন করা হয়,
ভারতেও তেমন।
বাংলাদেশে যেমন ছেলেমেয়েরা অ্যাডমিন, ফরেন, পুলিশ, রাজস্ব সহ নানান ক্যাটাগরি চয়েজ দেয়, ভারতীয়রাও তেমনই করে।

ক্যান্ডিডেটকে অবশ্যই স্বীকৃত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী হতে হবে। ছয়বারের বেশি কেউ প্রিলি’ দিতে পারবে না। অর্থাৎ যতদিন বয়স আছে, দিয়েন যাবেন, এমন হবে না। (শারিরীক প্রতিবন্ধী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য, অর্থাৎ কোটাধারীদের জন্য অবশ্য ছয়বারের এই লিমিট শিথিল করা হয়েছে)

এবার আরো একটা গুরুত্বপুর্ন পয়েন্ট লক্ষ করুণ।
কেউ যদি ভারতের অ্যাডমিন বা ফরেন ক্যাডারে কর্মরত থাকে, বা আগের কোনো সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে যদি এই দুই ক্যাটাগরি’তে চান্স পেয়ে থাকে, তাহলে সে আর নেক্সট টাইম কোনো সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিতে পারবে না।
বাংলাদেশে যেমন কেউ এডমিন পেলে পরের বছর ফরেন পাবার জন্য আবার পরীক্ষা দেয়, তেমন ধান্দা ইন্ডিয়াতে কেউ করতে পারবে না।
তবে ফরেন এবং অ্যাডমিন ছাড়া, অর্থাৎ পুলিশ, অডিট, রাজস্ব সহ আরো বাকি যত ক্যাটাগরি আছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ কেউ অডিটে চাকরি করে, সে হয়ত নেক্সটবার আবার পরীক্ষা দিয়ে ফরেন বা অ্যাডমিনের জন্য ট্রাই করতে পারে। তাতে বাধা নেই।

ভারতে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রিলি রেজিস্ট্রেশন ফি ১০০ রুপী মাত্র।


কেবলমাত্র অ্যাডমিন, ফরেন এবং পুলিশ ক্যাডারের জন্য পরীক্ষার্থীকে ভারতীয় নাগরিক হতেই হবে। অন্যগুলোর জন্য ভারতীয়, নেপালি, ভুটানি হলেও চলে।
এছাড়া তিব্বত থেকে ১৯৬২ এর আগে যারা মাইগ্রেশন করে এসেছে ভারতে, এছাড়া পাকিস্তান, উগান্ডা, ইথিওপিয়া, ভিয়েতনাম সহ আরো বেশকিছু দেশ থেকে যারা পার্মানেন্টলি ইন্ডিয়াতে থাকার জন্য মাইগ্রেশন করেছে, তারাও পরীক্ষা দিতে পারবে।

আবেদনকারীর বয়সসীমা হতে হবে ২১ থেকে ৩২ বছর।


তো এবার পরীক্ষা পদ্ধতিতে চলে আসি।
প্রথমে প্রিলি।


প্রিলি হয় ৪০০ মার্কের।


প্রিলি’র মার্ক ফাইনাল মেরিট লিস্টে কাউন্ট হয় না। অর্থাৎ আমাদের মতই। প্রিলি’তে একটা কাট অফ মার্ক নির্ধারণ করা হয়। সেটার উপরে পেলে রিটেন দিতে পারবেন। আর না হলে আউট।
রিটেন এবং ভাইবার মার্ক দিয়েই মেরিট লিস্ট তৈরি হয়।
যদি কোনো বছর ১০০০ শূন্য পদের জন্য পরীক্ষা হয়, তাহলে প্রিলি’তে সে বছর টেকানো হবে ১২ থেকে ১৩ হাজার। অর্থাৎ শূন্য পদের বারো থেকে তেরো গুন।

প্রিলি হবে দুই পেপার। প্রথম পত্র এবং দ্বিতীয় পত্র।
দুই অংশে ২০০ মার্ক করে মোট ৪০০
দুই ঘন্টা করে মোট চার ঘন্টা।

প্রথম পত্র হল General
আর দ্বিতীয় পত্র aptitude test ( দ্বিতীয় পত্রকে বলা হয় CSAT or Civil Services Aptitude Test )

দ্বিতীয় পত্র আপনার reasoning and analytical ability টেস্ট করবে। দ্বিতীয় পত্র ৩৩% মার্ক অর্থাৎ ৬৬ মার্ক পেতেই হবে। অন্যথায় প্রথমপত্রে আপনি ১০০% মার্ক পেলেও প্রিলি’তে ফেল করবেন।

প্রতিটি প্রশ্নের জন্য আবার নেগেটিভ মার্কিং আছে। প্রথম পত্রে ১২০ টা, আর দ্বিতীয় পত্রে ৮০ টা MCQ প্রশ্ন থাকে।
একটি সঠিক উত্তর দিয়ে যত মার্ক পাবেন, তিনটা ভুল উত্তর দিলে তত মার্ক হারাবেন।


প্রথম পত্রের সিলেবাসটা নিচে দিলাম।

Syllabus of Paper I - 200 marks Duration: Two hours

• Current events of national and international importance.
(অর্থাৎ সমসাময়িক বিশ্ব নিয়ে সে কতটুকু জানে। মুলত পেপার পড়ে কিনা, দুনিয়া সম্পর্কে খবর রাখে কিনা, সেটা যাচাই)

• History of India and Indian National Movement.
(নিজ দেশের ইতিহাস নিয়ে ধারণা আছে কিনা)

• Indian and World Geography - Physical, Social, Economic Geography of India and the World.
(মানচিত্র, ভুগোল, সমাজনীতি নিয়ে ব্যাসিক একটা ধারনা আছে কিনা, সেটা যাচাই)

• Indian Polity and Governance - Constitution, Political System, Panchayati Raj, Public Policy, Rights Issues, etc.
(রাজনীতি বা বুরোক্রেসি, সংবিধান নিয়ে মৌলিক ধারণা রাখে কিনা, সেটা যাচাই)


• Economic and Social Development - Sustainable Development, Poverty, Inclusion, Demographics, Social Sector initiatives, etc.
(অর্থণীতি ও সামাজিক সেক্টরগুলো নিয়ে নুন্যতম ধারণা রাখে কিনা, সেটা যাচাই)

• General issues on Environmental Ecology, Bio-diversity and Climate Change - that do not require subject specialisation General Science.
(বিজ্ঞানের মৌলিক কিছু ধারণা আছে কিনা)



আমার কাছে প্রথমপত্রের এই সিলেবাস যথেষ্ট রিজনেবল মনে হয়েছে। একজন সচিবের বা আমলার অন্তত যে যে বিষয়ে নুন্যতম ধারণা থাকা দরকার বলে তারা মনে করেছে, ঠিক সেই সেই বিষয়গুলোকে ফোকাস করা হয়েছে। আজাইরা কোনো কিছু এখানে রাখা হয়নি।

এবার আমাদের দেশের কথা চিন্তা করুণ।
আমি বুঝি না, ণত্ব বিধান বা ষত্ব বিধান, সমাস প্রত্যয়, অর্থাৎ ব্যাকরণ নিয়ে কার কত জ্ঞান, সেটা একজন আমলার ক্ষেত্রে কতটুকু দরকারি। অথচ আমাদের দেশের বিসিএস পরীক্ষার প্রিলি প্রশ্নটা দ্যাখেন। এসব জিনিস দিয়ে ভরা।
বাংলা ব্যাকরণ পড়তে পড়তে আমাদের দেশে একটা ছেলে বা মেয়ের জীবন ঝালাপালা হয়ে যায়। এগুলো ছেলেপেলে মুখস্ত করে। আবার ভুলে যায় কিছুদিন পর। প্যারিচাদ মিত্রের এক লাইন লিখাও যে ছেলে পড়ে নি, বিসিএসের জন্য সে প্যারিচাদ মিত্রের লিখা বইগুলোর টাইটেল মুখস্ত করে।
ফররুখ আহমেদের অমুক লিখনীর তমুক দুই লাইন, বা বঙ্কিমচন্দ্রের তমুক উপন্যাসের অমুক কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম মুখস্ত করে। অথচ এসব উপন্যাস কিন্তু সে পড়তেছেনা। জাস্ট প্রিলি’তে উত্তর দেবার জন্য মুখস্ত করতেছে। এটা অদ্ভুত একটা ব্যাপার।

একজন মানুষের পক্ষে ২০-৩০ বছর বয়সে কখনোই বাংলা ভাষার সকল লেখকদের বই পড়া সম্ভব না। আপনি তারাশঙ্করের লিখা পড়েছেন, আমি পড়িনি, এটা আমার দোষ না। আমার ভালো নাও লাগতে পারে। আপনার মানিক বন্দোপাধ্যায়ের লিখা ভালো লাগতেই পারে। আমার হয়ত লাগে না। আমি হয়ত পড়িও না। কারো পক্ষে তো সকল উপন্যাস পড়া সম্ভবও না। অথচ বিসিএস প্রিলির জন্য আমাকে যেমন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মসাল, গ্রামের বাড়ির ঠিকানা, কিছু উপন্যাসের নাম, চরিত্র, এসব মুখস্ত করতে হচ্ছে,
তেমন আপনাকেও হয়ত বঙ্কিমের উপন্যাসের নাম মুখস্ত করতে হচ্ছে। আপনি বাধ্য হচ্ছেন।

সিয়েরা লিওনের রাজধানী কি? এটা জানাটা আপনার নলেজ। আপনি জানলে ভালো। না জানলে ক্ষতি নেই। অনেক বিদেশী বাংলাদেশের নামও জানে না। জানে না, বাংলাদেশ কোথায়।
এটা ওই বিদেশের লিমিটেশন। ভুগোল সম্পর্কে আর দুনিয়ার ইতিহাস নিয়ে নুন্যতম ধারণা থাকলে বাংলাদেশ চেনার কথা ছিলো তার।
অমুক বিদেশী বাংলাদেশ চেনে না, এর মানে হল সে ভুগোল সম্পর্কে খুব কম ধারণা রাখে।
কিন্তু অমুক বিদেশি হুমায়ুন আহমেদ পড়ে নি, সেটার জন্য আমি কিছুতেই বলতে পারি না যে সে সাহিত্য বোঝে না। অমুক বিদেশি রবীন্দ্রনাথ পড়েনি, সেটার জন্য আমি কিছুতেই বলতে পারি না যে সে সাহিত্য বোঝে না। সে হয়ত তার দেশের কোনো সাহিত্যিকের বই পড়ে। সে হয়ত আলেকজ্যান্ডার পোপ বা পার্সি শেলীর লিখা কবিতা পড়ে মুগ্ধ হয়।

সুতরাং সিয়েরা লিওনের রাজধানী না জানা এক জিনিস।
আর চন্দ্রকুমার দে রচিত মহুয়া’র কেন্দ্রীয় চরিত্র কে ছিলো, সেটা না জানা একেবারে ভিন্ন জিনিস।

এখন আপনি হয়ত বলতে পারেন, এমন জিনিস পড়ে লাভ কি যা ইন্টারনেটে গুগলে লিখে সার্চ দিলে পাওয়া যায়?
ভাইরে, ইন্টারনেটে সার্চ দিলে দুনিয়ার সবই পাওয়া যায়। আপনি এমন কোনোকিছুই জানেন না যা ইন্টারনেটে সার্চ দিলে পাওয়া যাবে না। আপনি বই পড়ে যা ছয় মাসে শিখেছেন, আজকাল সুন্দর এনিমেশনে সেই জিনিস এক ঘন্টায় বুঝিয়ে দেবারও ব্যবস্থা আছে। সুতরাং আবালের মত এই কথাটা বইলেন না।

আর আইন্সটাইনের নাম ভাঙিয়ে একটা ফেক গল্প আছে। সেটা হল আইন্সটাইন একবার নাকি বলেছিলেন, আমি এমন কিছু মাথায় ভেতর রাখি না যা বই ঘাটলেই পাওয়া যায়।
ইয়ে মানে, আপনার যদি মনে হয়, ফিজিক্সের কঠিনসব হিসাব কিতাব লাইন বা লাইন করার আগে আইনস্টাইন প্রতিবার বই ঘাটাঘাটি করতো, তাহলে সেই ধারণা নিয়ে বসে থাকেন। বেস্ট অফ লাক।


এবার আসি, দ্বিতীয় পত্রের সিলেবাস নিয়ে।

Syllabus for Paper II-(200 marks) Duration: Two hours

• Comprehension

• Interpersonal skills including communication skills;

• Logical reasoning and analytical ability

• Decision-making and problem solving

• General mental ability

• Basic numeracy (numbers and their relations, orders of magnitude, etc.) (Class X level),

and Data interpretation (charts, graphs, tables, data sufficiency etc. - Class X level)



উপরের এই অংশটা তো বুঝতেই পারতেছেন। কিছুটা GRE বা SAT টাইপের। IBA-এর MBA ভর্তি পরীক্ষার মতও চিন্তা করতে পারেন।
এতো সহজ না। বিশেষ করে যখন সময় লিমিটেট।
এখানে আপনাকে ৩৩% মার্ক পেয়ে পাস করতেই হবে।


তো, এই হল প্রিলি।

একটা কাজ করা যাক। কিছু স্যাম্পল প্রশ্ন দেখুন। এই নোট আমার ফেসবুকে শেয়ার করা থাকবে। সেখানে কমেন্ট বক্সে কিছু স্যাম্পল প্রশ্ন লিংক দেয়া থাকবে।

যেমন, নিচে দেখতেছেন ২০১৪ সালে প্রথম পত্র (প্রিলি) অর্থাৎ general studies সেগমেন্টের প্রথমদিকের কিছু প্রশ্ন।
অনেক বিশাল হয়ে যাবে বলে সম্পুর্ন প্রশ্নটি তুলে দিলাম না।








এবার দেখুন, দ্বিতীয় পত্র, অর্থাৎ apptitude test এর প্রশ্নের নমুনা।
সোজা বাংলা হয়, আপনি চোখ বুজে মুখস্ত করে, গাইড বই হজম করে টিকতে পারবেন না।







এবার আসি রিটেনের ব্যাপারে।


রিটেনের দুই অংশ।
একটা হল, Paper A
আরেকটা হল Paper B…

ইন্টারেস্টিং বিষয়। লক্ষ করুণ।

Paper A তে ৬০০ মার্ক। কিন্তু এই মার্ক আপনার মেরিট লিস্টে কাউন্ট হবে না। এখানে আপনাকে জাস্ট একটা নুন্যতম মার্ক নিশ্চিত করে, অর্থাৎ কাট অফ মার্ক তুলতে হবে।
তো কি আছে, পেপার লিস্টে?

বাংলাদেশে যেমন বাংলায় ২০০ নাম্বার এবং ইংরেজি’তে ২০০ নাম্বারের রিটেন হয়, অর্থাৎ মোট ১১০০ নাম্বারের রিটেন পরীক্ষাতে ৪০০ নাম্বার থাকে বাংলা এবং ইংরেজি’তে,
ইন্ডিয়াতে সেখানে ৬০০ নাম্বার। কিন্তু টুইস্ট হইলো, এই ৬০০ নাম্বার তারা কাউন্ট করে না। অর্থাৎ মেরিট লিস্টে এই ৬০০ নাম্বারের কোনো ভ্যালু নাই। .

Paper A তে দুইটা সেগমেন্ট।
৩০০ নাম্বারের ইংরেজি পরীক্ষা।
আর ৩০০ নাম্বারের অন্য একটি ভাষা ভিক্তিক পরীক্ষা যা ইন্ডিয়াতে প্রচলিত। অর্থাৎ সেটা হিন্দি হতে পারে, গুজরাটি, বাংলা, তেলেগু, মারাঠা সহ নানান ভাষা থেকে যেকোনো একটা। আপনার মাতৃভাষা যদি তামিল হয়, তাহলে তামিল নেবেন। ৩০০ মার্কের পরীক্ষা।

Paper A তে এই ৬০০ মার্ক। আবারও বলছি, এখানে একটা নুন্যতম মার্ক পেলেই চলবে। এখানকার মার্ক মেরিট লিস্টে যোগ হবে না।
যেখানে বাংলাদেশে হয় উল্টা। বাংলাদেশে ১১০০ মার্কের ৪০০ মার্কই থাকে বাংলা আর ইংরেজিতে।

তাহলে এবার আসা যাক, Paper B তে।
এটাই মুলত আসল। এটাই মেরিট লিস্ট তৈরি করবে।
তো, কি আছে এখানে?

আসুন, নিচে দেখা যাক।

( Papers to be counted for merit)

Paper-I Essay.................................. 250 Marks


Paper-II General Studies-I................. 250 Marks
(Indian Heritage and Culture, History and Geography of the World and Society)


Paper-III General Studies -II.............. 250 Marks
(Governance, Constitution, Polity, Social Justice and International relations)

Paper-IV General Studies -III ............ 250 Marks
(Technology, Economic Development, Bio-diversity, Environment, Security and Disaster Management)

Paper-V General Studies -IV............... 250 Marks
(Ethics, Integrity and Aptitude)

Paper-VI Optional Subject - Paper 1...... 250 Marks
Paper-VII Optional Subject - Paper 2...... 250 Marks


এই সাত পেপারে মোট ১৭৫০ নাম্বার।

খেয়াল করুণ, paper vi এবং paper vii এ মোট ৫০০ নাম্বারের অপশন্যাল সাবজেক্ট। তো এখানে আপনি নিচের বিষয়গুলো নিতে পারেন।
(i) Agriculture
(ii) Animal Husbandry and Veterinary
Science
(iii) Anthropology
(iv) Botany
(v) Chemistry
(vi) Civil Engineering
(vii) Commerce and Accountancy
(viii) Economics
(ix) Electrical Engineering
(x) Geography
(xi) Geology
(xii) History
(xiii) Law
(xiv) Management
(xv) Mathematics
(xvi) Mechanical Engineering
(xvii) Medical Science
(xviii) Philosophy
(xix) Physics
(xx) Political Science and International
Relations
(xxi) Psychology
(xxii) Public Administration
(xxiii) Sociology
(xxiv) Statistics
(xxv) Zoology
(xxvi) Literature of any one of the follow-ing languages:
Assamese, Bengali, Bodo, Dogri,
Gujarati, Hindi, Kannada, Kashmiri,
Konkani, Maithili, Malayalam, Manipuri,
Marathi, Nepali, Oriya, Punjabi, Sanskrit,
Santhali, Sindhi, Tamil, Telugu, Urdu and
English.


মজার ব্যাপারটা এখানেই। যেমন আমি একজন মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। আমি যদি পরীক্ষা দিতাম, তাহলে অপশন্যাল সাবজেক্ট হিসেবে মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ফিজিক্স বেছে নিতাম।
অর্থাৎ আমার ৫০০ নাম্বার থাকতো মেক্যানিক্যাল এবং ফিজিক্সে।

ওদিকে ধরূন আপনি একজন ইতিহাসবিদ, একইসাথে সমসাময়িক বিশ্ব নিয়েও আপনার বিস্তর পড়াশোনা।
তাহলে আপনি হয়ত বেছে নেবেন history এবং Political Science and International
Relations
দুইটা সাবজেক্টই কিন্তু লিস্টে আছে। অর্থাৎ আপনার ৫০০ মার্ক আপনি ঠিক আপনার মতই পেলেন। আমি যেমন পেয়েছি আমার মনের মতই।

আবার ধরুণ আপনি ভাষাবিদ। তাহলে আপনি xxvi অপশনে থাকা বাংলা এবং xxiii অপশনে থাকে sociology নিতে পারেন। অর্থাৎ আপনার মনের মত বিষয় আপনি উপরে পাবেন।
পরীক্ষা দিবেন আপনার পছন্দের বিষয়ে।

আবার ধরুণ, আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু আমি অর্থনীতি আর আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে ভালো জ্ঞান রাখি। তো আমি নিলাম ধরেন Economics এবং International relation
অর্থাৎ আমার যা ভালো লাগে, আমি সেটাই নিতে পারবো।


সমগ্র সিস্টেমটা বেশ ভালো লাগলো।


তো ৬০০ মার্কের Paper A তে পাস করবেন। মার্ক যোগ হবে না।
আর ১৭৫০ মার্কের paper B তে মনের মত লিখুন। মার্ক তুলুন। কারণ এই মার্কই মেরিট লিস্ট তৈরি করবে। Paper B তে যে যে বিষয়ে পরীক্ষা দিবেন, একজন আমলা হবার জন্য সেসব বিষয়ে ধারণা থাকার দরকার আছে।

সাথে থাকবে ভাইবা।
ভাইবা’তে ২৭৫ মার্ক।

অর্থাৎ মোট ২০৭৫ মার্কের পরীক্ষা।

এই হল ভারতের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা।

CSE পরীক্ষা ছাড়াও UPSC এর আন্ডারে
Railway Apprentices
Defence Services
CISF AC (EXE)
Indian Economic Service / Indian Statistical Service
Geo-Scientist & Geologist
ENGINEERING SERVICES
Medical Services
CAPF (AC)
Indian Forest Service
সহ আরো বেশ কিছু ক্যাটাগরির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।


Engineering Service পরীক্ষায় সিভিল, মেক্যানিক্যাল, ইলেক্ট্রিক্যাল, E&T ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেয়া হয়।
এখানে শুরুতেই একটা ২০০ নাম্বারের প্রিলি হয়। এই প্রশ্ন সকল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য একই।
general ability test যাকে বলে।
এখান থেকে চাহিদা মত আলাদা আলাদা ক্যাটাগরির ইঞ্জিনিয়ারদের টেকানো হয়।
এরপর হয় আলাদা আলাদা সাবজেক্ট বাই সাবজেক্ট MCQ
দুইটা আলাদা আলাদা পেপারে মোট ৪০০ মার্ক।
অর্থাৎ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কেবল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং রিলেটেড MCQ প্রশ্ন পাবে।
তেমনই ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার পাবে তার লাইনের প্রশ্ন।

এরপর তাদের আবার নিজ নিজ বিষয়ে ২০০ মার্কের দুইটা conventional রিটেন এক্সাম দিতে হবে।
তিন ঘন্টা করে মোট ছয় ঘন্টা ইঞ্জিনিয়ারিং রিটেন উত্তর দিতে হবে। এখানে প্রশ্ন আসে একেবারে বিশ্ববিদ্যালয়ের টার্ম পরীক্ষার মত।


Combined Medical Services অর্থাৎ ডাক্তারদের জন্য দুইটা পরীক্ষা।
দুইটাই MCQ
120 টা করে মোট ২৪০ টা প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।

সিস্টেমটা অনেক বেশি ফ্লেক্সিবল।
বেশ ভালোমতই আপনাকে যাচাই করা হবে।

ভারতের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে না।
এটা অনেক গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার।
সেইসাথে কোটা আছে, তবে সেটা একটা রিজনেবল পরিমাণে।


শেষ করবো, কোটা রিলেটেড কিছু কথা বলে।

কিছুদিন আগে আমার আম্মুর সাথে তার এক প্রতিবেশির কথা হচ্ছিলো। তো তিনি নাকি আমার আম্মুকে বলেছেন, এবার বুয়েটে আন্ডারগ্রাডুয়েট ভর্তি পরীক্ষাতে সাড়ে তিন হাজার পর্যন্ত ডেকেছে।

আমার আম্মু এই কথা আমাকে বললে, আমি বললাম, “পাগল হয়েছো নাকি?”

আম্মু বললো, “ওই ভদ্রমহিলা তো নিশ্চিতভাবেই বললো। এবার নাকি বুয়েটে ওয়েটিং লিস্ট থেকে সাড়ে তিন হাজার পর্যন্ত ডেকেছে”

What? !!!!

তবে কিছুক্ষণ পর ব্যাপারটা ধরতে পারলাম। ওই ভদ্রমহিলা টেকনিক্যালি রাইট। ঠিকই বলেছেন।

বুয়েটে Engineering এবং URP মিলে ৯৭৫ টা সিট আছে। সেহেতু মেরিট লিস্টে ১২০০ ক্রস করার কথা না। এবং হয়েছেও সেটাই। যে ম্নেরিট লিস্টে ১১১৮ হয়েছে, সে কিন্তু ভর্তি হতে পারেনি।
যদিও কোটার কারণে সত্যি সত্যিই ৩৪৯৩ তম ব্যক্তিও বুয়েটে চান্স পেয়েছে। অর্থাৎ ওই ভদ্র মহিলা ঠিকই বলেছিলেন।
বুয়েটে কোটা আছে। কিন্ত অল্প। রিজনেবল। আমি এটার পক্ষে। এই কোটা দেশের আদিবাসী সমাজের জন্য। যারা নানানভাবে বঞ্চনার স্বীকার হচ্ছে। এবং পিছিয়ে পড়তেছে।
বুয়েটে বর্তমানে Engineering এবং URP তে ৯৭৫ টি আসনের ভেতর তিনটি,
এবং স্থাপত্য বিভাগে ৫৫ টি সিটের ভেতর ১ টি,
অর্থাৎ মোট ৪ টি আসন “ক্ষুদ্র জাতিভুক্ত” জনগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত। সংখ্যাটি রিজনেবল।
বুয়েটের prospectus ‘ক্ষুদ্র জাতিভুক্ত” শব্দ ব্যবহার করলেও আমি “আদিবাসী” শব্দটি ব্যবহারের পক্ষে।
যাই হোক, এটা ভিন্ন ব্যাপার।
তো বুয়েটের ছেলেমেয়েরা বুয়েটের ভর্তি কার্যক্রম নিয়ে গর্ব করে। নিট এন্ড ক্লিন ভর্তি পরীক্ষা হয়। আমি বুয়েটিয়ান। একারণে বুয়েটের কথা বলতেছি। অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সিস্টেমও একই। এবং সুন্দর।

আচ্ছা, বিসিএসের মত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় আসুন কোটা সিস্টেমের দাবি করি। কি করবেন?
ভেবে বলুন তো?

মনে হয় না করবেন। উল্টা চিল্লাপাল্লা শুরু করবেন। বলবেন, আমার বিশ্ববিদ্যালয় রসাতলে যাবে।

তো ভাই, আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আপনার এতো ভালোবাসা, আর আপনার দেশ চালাচ্ছে যে আমলাতন্ত্র, সেটা নিয়ে আপনার মাথাব্যাথা নেই?

জানি। এসব নিয়ে কথা কইতে ভয় পান। ভয় পাবার নানান কারণও আছে।
ভয় মানুষের অনেক বড় শত্রু।

কোটা থাকুক, তবে সেটা অবশ্যই রিজনেবল সংখ্যক।


Anyway…. আশা করি একটা ব্রিফ ধারণা দিতে পারলাম ভারতের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার ব্যাপারে।
সময় পেলে হয়ত ভারতের প্রশাসন নিয়েও লিখবো।
ধন্যবাদ, আপাতত।





Read More »