Saturday, January 23, 2021

ইসরাইলের নিউক্লিয়ার প্যারানোয়া

 ইসরাইলের নিউক্লিয়ার প্যারানোয়া



ছবির সাদা বৃত্তে যাকে মার্ক করেছি, তাকে অনেকেই চেনেন। কল্পনা চাওলা। স্পেস স্যাটল কলম্বিয়া দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত হবার কারণে আমাদের কাছে তার নামটি অনেক পরিচিত। কিন্তু আজকের লিখার বিষয় তাকে নিয়ে নয়। বরং একেবারে ডান সাইডে হলুদ পেন্টাগনে যাকে মার্ক করা হয়েছে, তাকে মনে রাখুন। তার নাম Ilan Ramon

 

শুরু করা যাক প্রয়াত ইরাকি নেতা সাদ্দাম হোসেন’কে দিয়ে।

বলা হয়ে থাকে, সিআইএ’র কাধে ভর দিয়েই বার্থ পার্টির নেতা সাদ্দাম ক্ষমতার মসনদে বসেছিলো। তো সাদ্দামের পক্ষে তখন সবাই ছিলো। সাদ্দামের ইরাক ছিলো আমেরিকার বন্ধু।

সাৎআল আরব নিয়ে ইরানের সাথে যুদ্ধটা শুরু হয়েছিলো একরকম আমেরিকার ইশারাতে। আমেরিকার শত্রু ইসলামিক রিপাবলিক ইরান’কে শায়েস্তা করতে সাদ্দামের হাতে কেমিক্যাল, বায়োলজিক্যাল, সবধরণের অস্ত্রই তুলে দিয়েছিলো আমেরিকা,  যুদ্ধের শুরু থেকেই।

 

সাদ্দামের সাথে তখন ইউরোপের সবগুলো দেশেরই সম্পর্ক বেশ ভালো।

ইরাকি অর্থনীতি তখন ফুলেফুপে উঠেছে। সাদ্দামের গ্যাস বোমাতে ঝলসে যাচ্ছে ইরানের সেনারা। ওদিকে কুর্দিরা এই সুযোগে ইরানের সাথে হাত মিলিয়ে ইরানকে ইন্টেলিজেন্স সহায়তা দিতে শুরু করে। তাদের উদ্দেশ্য, কুর্দিস্থান স্বাধীন করা। একারণেই কুর্দিদের প্রতি সাদ্দামের রাগ ছিলো। এই রাগের বহিঃপ্রকাশ আশির দশকের শেষদিকে সাদ্দাম করেছিলো কুর্দি গনহত্যা চালিয়ে। সেগুলো সম্পর্কে আমরা কমবেশি অবগত আছি। সেসব অস্ত্র সাদ্দাম পেতো আমেরিকা ও তার ইউরোপিয়ান বন্ধুদের কাছ থেকেই। যাই হোক, এসব ভিন্ন ডাইমেনশন। আমাদের মুল আলোচনা এগুলো নয়।

মুল আলোচনা আজ ইসরাইল’কে নিয়ে।

 

সাদ্দামের ক্ষমতায় আসাটা একটা দেশ শুরু থেকেই মেনে নিতে পারে নি। আর সেটা হল ইসরাইল। ইসরাইলের সাথে সাদ্দামের ছিল সাপেনেউলে সম্পর্ক। ঝামেলা আরো গভীর হয়, যখন সাদ্দাম নিউক্লিয়ার বোমা তৈরির দিকে ঝোঁক দেন।

এবং সাদ্দামের নিউক্লিয়ার ইচ্ছাপুরনে এগিয়ে আসে ফ্রান্স। জি হা... ফ্রান্স।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জ্যাক সিরাক সাদ্দামকে প্যারিসে আমন্ত্রন জানান। এখানে গোপনীয়তার কিছু ছিলো না। প্রকাশ্যেই সাদ্দাম নিউক্লিয়ার রিয়াকটর বানানোর জন্য ফ্রান্সের সাথে চুক্তি করে। নগদ ক্যাশে চুক্তি বাস্তবায়ন হয়। সমগ্র টাকাটা ফ্রান্স অগ্রীম দাবি করে।

 

যাই হোক, শুরু হয় ইরাকের নিউক্লিয়ার রিয়াকটর তৈরির কাজ। এবং ফ্রান্সের টেকনিশিয়ানরা ইরাকিদের সাথে নিয়ে বাগদাদের মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে ওসিরাকে এই নিউক্লিয়ার রিয়াকটর তৈরির কাজ শুরু করে।  

আমেরিকা এতে সমর্থনও দেয় নি। নিষেধও করে নি। কারণ সাদ্দামকে তখন আমেরিকার ভীষণ দরকার। সাদ্দামের সব চাহিদায় আমেরিকা তখন মিটিয়ে দিচ্ছে। তার ইচ্ছামত অস্ত্র দিচ্ছে ইরানকে মারার জন্য। সেইসাথে আমেরিকার ট্রাকটর ও কৃষিযন্ত্রপাতি, সেইসাথে ফোর্ড আর ক্যাডিলাক গাড়ির বিশাল বাজারে পরিনত হয়েছে ইরাক। লাভ আর লাভ।

কিন্তু ইসরাইলে এটা অস্তিত্বের প্রশ্ন। যদিও আমেরিকা দাবি করে সাদ্দাম তাদের কনট্রোলে আছে, কিন্তু ইসরাইল কোনো ধরণের রিক্স নিয়ে চায় না।

সে ইরাকের নিউক্লিয়ার বোমার কার্যক্রম একেবারে বন্ধ করে দিতে চায়। ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট তখন মনোহম বেগিন। ইউরোপ আমেরিকা জুড়ে সে লবিং শুরু করে। পলিটিক্যালি  সমাধান করার চেষ্টা করে।  

ওদিকে ইসরাইলের কুখ্যাত গোয়েন্দাবাহিনী মোসাদ বসে নেই। পলিটিক্যাল সমাধান না হলে বিকল্প ব্যবস্থায় জন্য তৈরি থাকতে বলা হয় মোসাদকে।

 

সেইসময় ইরাকের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে হরহামেশা ইসরাইল ধ্বংসের ডাক দেয়া হত। এবং সাদ্দামও আরব বিশ্বে হ্যাডম হবার জন্য ইসরাইল’রে আচ্ছামত গালাগালি করতো মিডিয়ার সামনে। ইসরাইল ধ্বংসের বাসনা প্রকাশ করতো। অনেকটা হালআমলের আহমাদিনেজাদের মতই।

এটাই ইসরাইলের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 

ইসরাইল সরকার তার ডিপ্লোমেসি চালাতে থাকে। মোসাদের উপর দায়িত্ব পড়ে সাদ্দামের পারমানবিক বোমার কার্যক্রম delay করে দিতে।

মোসাদ সেটা করে তাদের নিজেস্ব নিয়মেই।

যেমন ফ্রান্স থেকে সেন্ট্রিফিউজ আনার জন্য ফ্রেন্স বন্দরের যে গোডাউনে সেগুলো রাখা হত জাহাজে তোলার আগে, সেই গোডাউনে স্যাবোটাজ করে মোসাদ। উড়িয়ে দেয় সেটা। ব্যস, ছয় মাসের জন্য বিলম্বিত হয়ে যায় সাপ্লাই।

 

ফ্রান্সের অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের এক মিশরীয় বিজ্ঞানীকে টার্গেট করে মোসাদ। তার চারিত্রিক দুর্বলতার সুযোগ নেয় মোসাদ। তার নারী ও টাকার প্রতি দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ক্লাসিক এসপিওন্যাজ করে তার কাছ থেকে ইরাকে তৈরি হতে থাকা নিউক্লিয়ার রিয়াকটরের গোটা মডেল হাতে পেয়ে যায় মোসাদ। লোকটি টেরও পায় নি।   কিন্তু এই বিজ্ঞানী কাজ করতেছিলেন সাদ্দামের গোয়েন্দাবাহিনীর পক্ষে হয়ে। তিনি যখনই বুঝতে পারেন, মোসাদ তাকে ফাঁদে ফেলেছে, তখনই তিনি কোঅপারেশন বন্ধ করেন ছদ্মবেশী মোসাদ স্পাইদের সাথে।

ব্যস... ১৪ই জুন, ১৯৮০, বিজ্ঞানী Yahya El Mashad কে খুন করে মোসাদ। ফ্রান্সের একটা নামকরা হোটেলে তিনি একজন প্রস্টিটিউটকে অর্ডার করেন। কিন্তু সেদিন যে প্রস্টিটিউট তাকে যৌনসেবা দিতে গিয়েছিলো, ধারনা করা হয় সে ছিলো মোসাদের এজেন্ট। যাই হোক, তার গলাকাঁটা লাশ পাওয়া যায়।

 

মোসাদের খুনোখুনি চলতেই থাকে।

নেক্সট তিনমাসে ইরাকের নিউক্লিয়ার রিয়াকটর তৈরির সাথে যুক্ত এক ডজনের বেশি বিজ্ঞানী খুন হয়, না হয় গায়েব হয়ে যায়। বিশ্বমিডিয়াতে তখন ব্যাপকভাবে মোসাদের সমালোচনা শুরু হয়। এমনিতেই মোসাদের রেপুটেশন ভয়াবহ। রীতিমত ভয়ঙ্কর।

কিন্তু এতোখুনোখুনী করেও লাভের লাভ কিছুই হয় নি। সাদ্দাম তার নিউক্লিয়ার বোমা বানিয়েই ছাড়বেন। ফলাফল, মোসাদ এবার ঠিক করে ব্যাপারটা ইসরাইলি বিমান বাহিনীর হাতে ছেড়ে দিতে। ইরাকে গোয়েন্দাগিরি শুরু করে মোসাদ। পারমানবিক রিয়াকটরের স্পেসিফিক অবস্থান, সেখানে কারাকারা কাজ করে, কখন করে, সবকিছুর খবর যোগাড় করে ইসরাইলি বিমান বাহিনীর হাতে ছেড়ে দেয় ব্যাপারটা।

 

জেনারেল ডেভিভ ইরভি ছিলেন অপারেশন ব্যাবিলনের কমান্ডার। মোট আটটি F-16 বিমানকে সিলেক্ট করা হয়। এগুলো কিছুটা মডিফাইড করে ইসরাইল।

৭ই জুন, ১৯৮১।

আটটি F-16 বিমান উড়ে আসে ইরাকে।

 



 

খেয়াল করুণ ফ্লাইট পথ।

তারা ঠিক জর্ডানের সীমান্ত ঘেঁষে সৌদি আরবে প্রবেশ করেছে। এরপর সৌদি আরবের অরক্ষিত মরু অঞ্চল, অর্থাৎ জর্ডান সৌদি সীমান্তের কাছ দিয়ে ইরাকে ঢুকেছে।

ইরাকে ঢুকে তারা বিমান উড়িয়েছে মাত্র ৩০ মিটার উপর দিয়ে !!

 



 

এতো নিচু দিয়ে বিমান উড়ানোর কারণে ইরাকী এয়ারডিফেন্স এদের ধরতে পারেনি। আর যেসময়ে তারা ইরাকে প্রবেশ করেছে বোমা মেরেছে, সেসময় নিউক্লিয়ার রিয়াকটরে কর্মীদের কাজের সিফট চেঞ্জ হচ্ছে। অর্থাৎ পারফেক্ট টাইমিং। একারণে বোমা হামলায় গোটা রিয়াকটর’টি ধ্বংস হয়েছে এবং মাত্র আটজন ইরাকি আর একজন ফ্রেন্স গবেষক মারা গেছেন।

ইরাকের আন্টিএয়ায় গানশিপগুলো গোলাগুলি করেছে অন্ধের মত। ইসরাইলি বিমানের infrared decoy flare সহজেই বোকা বানিয়েছে সাদ্দামের বাহিনীকে।

কোনো ধরণের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই আরামছে বোমা মেরে নিউক্লিয়ার রিয়াকটর গুড়িয়ে দিয়ে ইসরাইলি বিমান বাহিনী ফিরে এসেছে। একই পথ দিয়ে। এই বিমানবাহিনীর অপারেশনের একজন পাইলট ছিলেন Ilan Ramon… যার ছবি দিয়েছি সবার উপরে। 

 

যাই হোক, সাদ্দামের পারমানবিক বোমার স্বপ্ন এভাবেই শেষ করে দিয়েছিলো ইসরাইল।

এই বোমা হামলায় ফ্রান্সের তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি। কারণ রিয়াক্টর বানানোর গোটা অর্থটা শুরুতেই সে আদায় করে নিয়েছিলো।ব্যাপারটা অনেকটা ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্টের ওয়ারেন্টির মত। আপনি টাকা দিয়ে টিভি কিনেছেন। সেই টিভি যদি পড়ে গিয়ে ফিজিক্যালি ড্যামেজ হয়, সেক্ষেত্রে বিক্রেতার তো কিছুই যায় আসে না। সে তো টাকা পেয়েই গেছে। বুঝলেন তো ব্যাপারটা।

 

আমেরিকা ব্যাপক চিল্লাপাল্লা শুরু করে। ইসরাইলের ব্যাপক নিন্দা করে। এবং বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক sanction আরোপের কথাও বলে !!!!!!!!!

 

এসব ছিলো মুখের বুলি। কারণে পর্দার আড়ালে ঠিকই প্রেসিডেন্ট রিগ্যান ইসরাইলি ফাইটার পাইলটদের প্রশংসা করে। তার ভাষায়, “boys will always be boys”

 

যাই হোক, আশির দশকের শেষদিকে সাদ্দাম একসময় আমেরিকার বিরুদ্ধে চলে যায়। সেসব ইতিহাস তো সবারই জানা। ১৯৯১ সালে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধে মার্কিন বাহিনী সহজেই ইরাককে হারিয়ে দেয়। সৌদি আরবের ঘাটি স্থাপন করে তখন থেকেই। সেই যুদ্ধে সাদ্দাম অন্ধের মত ইসরাইলে কিছু স্কাড মিসাইল নিক্ষেপ করে। ইসরাইল চুপ করে বসে ছিলো। আমেরিকা সাদ্দামকে গুড়িয়ে দেয় সেই যুদ্ধে।

এই যুদ্ধের পর আমেরিকান রাষ্ট্রদুত ইসরাইলকে ধন্যবাদ জানায়। আফটার অল, ১০ বছর আগে যদি ইসরাইল সাদ্দামকে নিউক্লিয়ার বোমা তৈরিতে না বাধা দিতো, তাহলে ইতিহাস হয়ত অন্যরকম হইতো।

 

এবার আসি অনেকদিন পরের এক ঘটনাতে।

 

 

২২শে এপ্রিল, ২০০৪ সাল।

নর্থ কোরিয়ার Ryonchon এলাকায় এক ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা বলাটা উচিৎ হবে না। আসলে, একটা ট্রেনের বগি বিস্ফোরিত হয়। এবং সেটা এতটাই ভয়াবহ, যে ৩.৬ রিক্টারস্কেলের একটা ভুমিকম্প তৈরি করে আশেপাশে। গোটা একটি এলাকা ধ্বংস হয়। ১০ হাজার মানুষের বসবাসের এলাকা নষ্ট হয়। শখানেক মানুষ মারা যায়। দুই হাজার হতাহত হয়।

এই ঘটনার পর গোটা নর্থ কোরিয়ার মোবাইল নেটওয়ার্ক ৫ বছরের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় !!

 

নর্থ কোরিয়ান সিক্রেসির কারণে বিশ্বমিডিয়াতে ঘটনাটা একটা দুর্ঘটনা হিসেবে আসলেও, বিদেশী গোয়েন্দাসংস্থাগুলোর নজরে এসেছিলো ভালোমতই।  

 

নর্থ কোরিয়ার সরকারের বক্তব্য হল, ট্রেনে লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম ছিলো। কিন্তু এই কথা আর যাই হোক, পশ্চিমা গোয়েন্দাসংস্থাগুলো মানতে নারাজ। এদের ভেতর বিশেষ একটি গোয়েন্দাসংস্থা বেশভালো মতই নজর রাখতেছিলো নর্থকোরিয়ার উপর।

সেটা হল, ইসরাইলি ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি। মোসাদ।

কারণটা সিরিয়ার বাশার আল আসাদ !!!!

২০০০ সালের পর থেকেই নর্থ কোরিয়ান ডিপ্লোমেটদের সাথে সিরিয়ান ডিপ্লোমেটদের যোগাযোগটা মোসাদের নজরে আসে। মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের সাথে নর্থ কোরিয়ার কি এমন যোগাযোগ থাকতে পারে ? বিশেষ করে সিরিয়ার?

 

তো Ryonchon ট্রেন দুর্ঘটনার কিছুদিন পর নর্থ কোরিয়া থেকে সিরিয়াতে বিশেষ বিমানে কিছু কার্গো পাঠানো হয়। মোসাদ আড়িপেতে আবিস্কার করে, এগুলো কার্গো নয়, লাশ !!

সিরিয়ানদের লাশ !!

ঘটনা হল, সেই ট্রেন দুর্ঘটনার কিছু সিরিয়ান মারা গেছে। যাদের লাশ লেডের কফিনে ভরে সিরিয়াতে নিয়ে আসা হয়েছে। এবং রেডিয়েশন প্রোটেকশন গায়ে দিয়ে সিরিয়ান সেনারা সেই লাশগুলোকে বুঝে নেয় !!  

 

তো এসব জিনিস পর্যালোচনা করে কনক্লুশান টানতে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের চিফ Meir Degan এর খুব একটা সমস্যা হয়নি। ম্যায়ন ডাগান ইসরাইলি গোয়েন্দাসংস্থার ভ্যাটেরান। নামকরা ব্যক্তিত্ব।

তিনি বুঝে যান, সিরিয়ার উদ্দেশ্য কি। সিরিয়া নর্থ কোরিয়ার সাহায্য নিয়ে নিউক্লিয়ার বোমা বানানোর চেষ্টা করতেছে। কিন্তু প্রমাণ কই ? রিয়াক্টর কই ? বানানোই’বা হচ্ছে কোথায়?

 

ইন্টারেস্টিং বিষয় হল, তখন পশ্চিমা দুনিয়াতে বাশার আল আসাদের ভাবমুর্তি কিন্তু আজকের মত ছিলো না। আজকে ২০১৫ সালে এসে বাশার আল আসাদ পশ্চিমাদের শত্রু। কিন্তু সেইসময় বাশার’কে পশ্চিমারা আধুনিক হিসেবেই দেখতো। বাশারের স্ত্রী আসমা আল আসাদকে বলা হল মরু গোলাপ। কিন্তু বাশার যে ভেতরে ভেতরে পারমানবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করতেছে, এখবর খোদ সিআইএ’র কাছেও ছিলো না। সিআইএর কল্পনারও বাইরে ছিলো ব্যাপারটা। মেয়ার ডাগান তার কুখ্যাত গোয়েন্দাবাহিনী মোসাদ’কে লাগিয়ে দেন সিরিয়ার পারমানবিক কার্যক্রমের তথ্য উদ্ঘাটন করতে।

 

দুই বছর পরের কাহিনী।

লন্ডনের এক Bar…

সেখানে সিরিয়ান এক টপ অফিশিয়াল ডিপ্লোম্যাটের সাথে আলাপচারিতা শুরু করে এক সুন্দরী নারী। এই নারীর কাজ হল, লোকটি যতবেশিক্ষণ সম্ভব ব্যস্ত রাখা। ওদিকে মোসাদের একটি টিম ছদ্মবেশে হানা দিয়েছে সিরিয়ান ডিপ্লোম্যাটের হোটেলরুমে। সিরিয়ান এই ডিপ্লোম্যাটের নর্থ কোরিয়ান অফিসিয়ানদের সাথে যোগাযোগ রাখেন বলেই মোসাদের ধারনা ছিলো শুরু থেকেই। মোসাদ একে হাতেহাতে পেয়ে যায়। একে মোসাদ মারবে না। কারণ মারলে আসাদের সন্দেহ হবে। মোসাদের দরকার প্রমাণ। আর প্রমাণ সম্ভবত আছে ভদ্রলোকের ল্যাপটপে।  

ভদ্রলোকের হোটেল রুমে ফেলে রাখা ল্যাপটপ থেকে মোসাদের এজেন্টরা যাবতীয় ডাটা কপি করে। এরপর কোনো ধরণের আলামত না রেখেই কেটে পড়ে।

 

তেলআবিবের মোসাদ হেডঅফিসে সিরিয়ান ডিপ্লোম্যাটের গোটা হার্ডড্রাইভের অনুলিপি ডিক্রিপ্ট করা হয়।

এবং সেখান থেকেই প্রথমবারের মত মোসাদ সিরিয়ান নিউক্লিয়ার রিয়াক্টরের সন্ধান পায়। হবুহু নর্থকোরিয়ার পিয়ংইয়ং এর ইয়ংবিয়ং পারমানবিক রিয়াক্টরের আদলে সিরিয়াতে নিউক্লিয়ার রিয়াক্টর তৈরির কাজ চলতেছে। সিরিয়ার al kibar এলাকায়। দামাস্কাস হতে অনেকদূরে।

 





 

ইসরাইলি স্যাটেলাইট সমগ্র জায়গায়টিতে নজরদারী শুরু করে।

 

মোসাদ যখন মার্কিনিদের সিরিয়ান নিউক্লিয়ার প্রোগ্রামের ব্যাপারে অবহিত করে, তখন মার্কিনীরা আকাশ থেকে পড়ে।

বাশার আল আসাদ এতোটাই গোপনীয়তার সাথে বিষয়টিকে চালিয়ে গিয়েছে এতোদিন, মার্কিনিদের ও তুর্কিদের কোনো সন্দেহই হয়নি।

ফলাফল, তারা জানেই না, রিয়াক্টরের বর্তমান অবস্থা কি!! অর্থাৎ রিয়াক্টরটি এখন চালু আছে কিনা।

কারণ যদি চালু থাকে, তাহলে সর্বনাশ।

এতে বোম্বিং করা অনেক ঝুঁকিপূর্ন হবে সেক্ষেত্রে। রেডিওএকটিভ ফলআউট গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে যাবে।

মার্কিনিরা ইসরাইলিদের লাইসেন্স দেয়, বিষয়টিকে টেক কেয়ার করার জন্য।

ভুলে যাবেন না, তখন ২০০৬ সাল। ইরাকে মার্কিন সেনা উপস্থিত। কিন্তু তবুও আমেরিকানরা বিষয়টিতে জড়াতে চাচ্ছিলো না। কারণ বাশার আল আসাদের সিরিয়ার সাহায্য তখন দরকার ছিলো। হা... কথাগুলো বলতে এখন অবাক লাগে। ২০১৫ তে এসে !!

 

 

ইসরাইলিরা এবার অপারেশনের পরিকল্পনা শুরু করে। তবে তার আগে জানতে হবে, রিয়াক্টরের ভেতরে কি হচ্ছে !! সেটা আদেও চালু আছে কিনা। নাকি নির্মানাধিন।

 

দায়িত্ব নেয় Sayeret Matkal    

 



 

এরা ইসরাইলের সবচেয়ে এলিট স্পেশ্যাল ফোর্সের একটা। আমেরিকার ডেল্টাফোর্সের মত।

ঠিক লাদেনকে যেভাবে আমেরিকা পাকিস্তানে ঢুকে মেরেছিলো রাতের আধারে, ঠিক একইভাবে Sayeret Matkal রাতের আধারে সিরিয়ার ভেতরে স্টেলথ হেলিকপ্টার নিয়ে ঢুকে পড়ে।

এদের উপর দায়িত্ব হল, দরকার না হলে কোনো ধরণের গোলাগুলিতে যাওয়া যাবে না। গোপনে গিয়ে al kibar nuclear reactor এর নিকটবর্তী মাটির নমুনা সংগ্রহ করে আসতে হবে। জায়গাটা মিলিটারে প্রোটেক্টেড। সুতরাং অভিযানটা এতো সহজ ছিলো না।

কিন্তু তবুও sayeret Matkal সেইরাতে সিরিয়া থেকে মাটির স্যাম্পল নিয়ে আসে। একটা গুলিও খরচ করতে হয়নি। সিরিয়ার আর্মি টেরই পায় নি।

 

সেই মাটির নমুনা পরীক্ষা করা হয় তেলআবিবে। মাটির রেডিয়েশন পরিমাণ করে মোটামুটি নিশ্চত হয় ইসরাইলিরা যে সিরিয়ান নিউক্লিয়ার রিয়াক্টর এখনো চালু হয়নি। সুতরাং বোম্বিং করে উড়িয়ে দিতে সমস্যা নেই।  

ব্যস... ৫ই সেপ্টেম্বর ২০০৭ সালে।

মধ্যরাতে। ১০ জন পাইলটের একটি দল ইসরাইলের ramat David Airbase থেকে F-16 এবং F-15 বিমানে করে ৫০০ পাউন্ড ওজনের এজিএম ৬৫ বোমা নিয়ে উড়ে যায় সিরিয়াতে।  

এবং এবার তাদের ফ্লাইট পাথটি আবার লক্ষকরুণ। অর্থাৎ সেই আগের মতই।

 



 

সিরিয়ান এয়ারডিফেন্স টেরই পায় নি। 

গুড়িয়ে দেয়া হয় সিরিয়ার নিউক্লিয়ার রিয়াক্টর আর বাশার আল আসাদের নিউক্লিয়ার বোমার স্বপ্ন।


 


বোমা হামলার পর সিরিয়ান এয়ারডিফেন্স কিছু সার্ফেস টু এয়ার মিসাইল ছুড়েছিলো। কাজ হয় নি। আরামছে ইসরাইলি বিমান ফিরে আসে মিশন শেষ করেই।

 

এই ঘটনার পর পশ্চিমাদের সাথে বাশারের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। বাশার এতোটাই বিব্রত হয়েছিলো যে সে না পারতেছে ইসরাইল’রে গালি দিতে, না পারতেছে দুনিয়ার সামনে ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে। কারণ অভিযোগ করলেই প্রথম যে প্রশ্ন তাকে করা হবে, সেটা হল সিরিয়াতে নিউক্লিয়ার রিয়াক্টর আপনি কেনো বানাচ্ছিলেন গোপনে ?

 

বাশার পরিবার ইসরাইলের চিরশত্রু।

ইসরাইলের সাথে যে কয়টি দেশের সীমানা আছে, তাদের মধ্যে ইসরাইলের প্রতি সবচেয়ে শত্রুভাবাপন্ন বাশার আল আসাদের পরিবার। বাশার পরিবার ইসরাইলের বিরুদ্ধে অতীতে যেমন যুদ্ধ করেছে, তেমন লেবাননের হিজবুল্লাহ আর ইরানের ভেতরে একটা সংযোগ হিসেবে কাজ করেছে।

 

আসাদ যেমন হিজবুল্লাহকে ফান্ডিং দিয়েছে, তেমন ইসরাইলের বিরুদ্ধেও কাজ করেছে দীর্ঘদিন। লেবাননের হিজবুল্লাহকে আমেরিকা আর ইসরাইল সন্ত্রাসী সংঘঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু দিনশেষে হিজবুল্লাহ ৩৫ হাজার সদস্যের একটা মিলিশিয়া দল ছাড়া আর কিছুই না। আর লেবাননে মেজরিটি খ্রিস্টানরা। ওখানে খ্রিস্টান মিলিশিয়াও আছে।  যারা আবার ইসরাইলের প্রতি বন্ধুত্বভাবাপন্ন। সুতরাং ওটা ইসরাইলের জন্য ম্যানেজেবল। (লেবাননে ২৭% শিয়া, ২৭% সুন্নি, আর ৪০% খ্রিস্টান। ইসরাইলের মুল জ্বালাতন মুলত ২৭% শিয়া লেবানিজ) 

কিন্তু সিরিয়া ? বাশার ? এটা তো আস্ত একটা দেশ। আস্ত একটা দেশের মিলিটারি। প্রফেশন্যাল সেনাবাহিনী। তারউপর এদের রুশ সাপোর্ট আছে। চীন, ইরানও এদের অস্ত্র দেয়। পশ্চিমাদেশের সাথেও এদের ব্যবসায়ীক সম্পর্ক আছে। সুতরাং বাশার অনেক বড় থ্রেট।

তার উপর জানা গেলো, বাশারের নিউক্লিয়ার বোমার এম্বিশন আছে !! সুতরাং ইসরাইল এবার রীতিমত প্যারানয়েড হয়ে গেলো। যে করেই হোক বাশার’কে সাইজ করতে হবে।

 

প্রথম প্রশ্ন হল, বাশার কিভাবে এতো গোপনে নিউক্লিয়ার রিয়াক্টর বানাতে পারলো সবার আগোচরে ? নর্থ কোরিয়ার ট্রেন বিস্ফোরন না হলে তো কেউ জানতেই পারতো না। এতোদিনে হয়ত বাশার পারমানবিক বোমা বানিয়ে বসে থাকতো। এবং সেটা সে ইসরাইলের উপরই হয়ত মারতো।

এরকমই চিন্তা করতে শুরু করে মেয়ার ডেগান।

কিভাবে বাশার এটা পারলো? সিআইএ, যারা কিনা নর্থ কোরিয়ার উপর এতো নজর রাখে, তারাও বিষয়টি বুঝতেই পারলো না। কিভাবে ?

এই প্রশ্নের উত্তর হল, জেনারেল মোহাম্মদ সুলেমান।

তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্ট আসাদের Special Presidential Advisor for Arms Procurement and Strategic Weapons

 

এই লোকটি সিরিয়ার ভেতরে গোটা নিউক্লিয়ার প্রোগ্রামের দায়িত্বে ছিলো।  সিরিয়ার ভেতরে নিউক্লিয়ার স্থাপনা রিলেটেড যাবতীয় সব তথ্য একেবারে ম্যানুয়াল কায়দায় চালনা করতো। অর্থাৎ কোনো ধরণের ইলেক্ট্রনিক্স মাধ্যম সে ব্যবহার করতো না। একেবারে আদিম যুগের মত মানুষ দিয়ে দিয়ে হার্ডকপি ইনফরমেশ্যান চালনা করতো। একারণেই ইসরাইল কিছুই টের পায় নি।

এখন হয়ত বলতে পারেন, কিন্তু ইসরাইল তো লন্ডন থেকে সিরিয়ান ডিপ্লোম্যাটের কম্পিউটারেই রিয়াক্টর রিলেটেড তথ্য পেয়েছিলো।  

হা, পেয়েছিলো। কিন্তু সেই লোক ছিলো নর্থ কোরিয়ার সাথে লিয়াজো টিমের সদস্য। তার ল্যাপটপটাই আসলে বাশার আল আসাদের জন্য সর্বনাশ ডেকে এনেছিলো।

 

যাই হোক, জেনারেল সুলেমান ছিলেন কট্টর ইসরাইল বিরোধি। একারণে তিনি অনেক আগে থেকেই টার্গেট লিস্টে ছিলেন।

জেনারেল সুলামানের একটা বাড়ি ছিলো সিরিয়ার সমুদ্র উপকুল ঘেঁষে। ভুমধ্যসাগরের পাশে Tartous এ ।

তিনি এখানে অবকাশ যাপনের জন্য আসতেন। বারান্দায় বসে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতেন আর ভুমধ্যসাগর থেকে বয়ে আসা বাতাস উপভোগ করতেন।

এমনই একটা দিন ছিলো ১লা আগস্ট, ২০০৮।

জেনারেল সুলেমান  এদিন কিছু বিদেশি ডিপ্লোম্যাট ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে খোলা বারান্দায় রাখা চেয়ারে বসে ছিলেন। সামনে ভুমধ্যসাগর। সন্ধ্যায় সাগরের ভেতর থেকে ডুবুড়ি বেশে দুজন ব্যক্তি উঠে আসে। কেউ টেরও পায় নি। এরা মোসাদের Kidon group এর সদস্য। অর্থাৎ কিলিং ইউনিট।

স্নাইপার দিয়ে গুলি করা হয় সুলামান’কে। মারা যান তিনি।

কিডনের সদস্যরা সাগরের ভেতরেই তাদের বিশেষ যানে করে পালিয়ে যায়।

 

সিরিয়া সরকার সুলেমানের খুনের জন্য মোসাদকে দায়ী করলেও মোসাদ বিষয়টি অস্বীকার করে। তবে সত্য চাপা থাকে না। বছর তিনেক পর উইকিলিকস এবং তার কিছুদিন পর স্নোডেনের ফাঁস করা দলিলেও উঠে আছে মোসাদের এই অপারেশনের কথা।

 

সেই বছরই, অর্থাৎ ২০০৮ সালেই ফেব্রুয়ারি মাসেই সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের এক ব্যস্ততম এলাকায় Imad Mughniyah কে খুন করে মোসাদ। 



ইমাদ মুগনিয়া ছিলেন আশির দশকে অনেক আলোচিত। অনেকটা লাদেনের মতই।

১৯৮৩ সালে লেবাননে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাটিতে হিজবুল্লাহ এক ভয়ঙ্কর হামলা পরিচালনা করে। সেই হামলায় ২৪১ জন মার্কিন সেনা মারা যায়। এরপরই মার্কিন সেনারা লেবানন থেকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে যায়।

লেবানন থেকে মার্কিন সেনা চলে যাওয়াটা পছন্দ করে নি ইসরাইল। তো সেই বোমা হামলার মাস্টারমাইন্ড হিজবুল্লাহ নেতা ইমাদ মুগনিয়াকে দির্ঘদিন ধরে খুঁজেছে সিআইএ আর মোসাদ। কিন্তু বাশার আল আসাদের আশ্রয়ে সিরিয়াতে নিরাপদেই ছিলো মুগনিয়া।

মোসাদ ২০০৮ সালে তাকে হাতে পায়। মোসাদের স্পাইরা মুগনিয়ার গাড়ির সিট কভারের ভেতর প্ল্যাস্টিক বিস্ফোরন ভরে দিয়েছিলো। উড়ে যায় মুগনিয়ার গাড়ি। বিশাল বিস্ফোরণে কেপে ওঠে ব্যস্ততম নগরী।

 

 

 

এসব ঘটনাগুলো মিডিয়াতে খুবই কম আলোচিত হয়। অথচ এসব ঘটনার প্রভাব সুদুরপ্রসারী।

 

মধ্যপ্রাচ্যে নিউক্লিয়ার বোমার একমাত্র মনোপলি ইসরাইলের।

ইসরাইলের নিজেরই নিউক্লিয়ার বোমা আছে। এবং সেটা সংখ্যার দিক দিয়েও অনেক।

ইসরাইলের ডিমোনা আর হাইফায় নিউক্লিয়ার কার্যক্রম চলে, এটা ওপেন সিক্রেট। ইসরাইল’কে বিশাল আকারের সেন্ট্রিফিউজও বানাতে হয়নি। কারণ হাইলি ইনরিচজড ইউরেনিয়াম আর প্লুটোনিয়াম তারা আমেরিকার কাছ থেকে সরাসরি পেয়ে থাকে। তাদের যেটা করতে হয়, সেটা হল assembly

এজন্য রসিকতা করে বলা হয়, they are one screw away  

 

ইসরাইল তার আশেপাশের দেশ সহ মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের কাছেই নিউক্লিয়ার বোমা মেনে নেবে না। সেটা বাশার আল আসাদ হোক, সাদ্দাম হোক, বা ইরান।

গাদ্দাফিও দুবাই ভিক্তিক পাকিস্তানি বিজ্ঞানী কাদির খানের সাহায্য নিউক বানানোর চেষ্টা করেছিলো। পশ্চিমারা সেটা হতে দেয় নি।

যারাই মধ্যপ্রাচ্যে নিউকের স্বপ্ন দেখেছে, তাদেরকেই হয় মরতে হয়েছে। না হয় দমন করা হয়েছে।

 

আজ এতোকাল পর ইসরাইলের জন্য নতুন মাথা ব্যাথার নাম ইরান।

ইরানের নিউক্লিয়ার রিয়াক্টরের কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য ইসরাইল ঠিক পুরন পন্থা অনুসরন করেছে। মোসাদ বোমা মেরে দিনে দুপুরে ইরানের মাটিতেই ইরানের বিজ্ঞানীদের উড়িয়ে দিয়েছে।

আবার আমেরিকার সাথে মিলে stuxnet ভাইরাস দিয়ে ইরানের নিউক্লিয়ার রিয়াক্টরগুলোর কার্যক্রমে আঘাত করেছে। কেউ বলে, দশবছর পিছিয়ে দিয়েছে অগ্রগতি।

বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে কেবল স্টাক্সনেট ভাইরাসের পেছনে।

 

ইসরাইলের মুল মাথা ব্যাথা ইরান।

আসলে ইসরাইল নিউক্লিয়ার প্যারানোয়ার স্বীকার।

সে কল্পনাও করতে পারে না, তার আশেপাশের কোনো দেশের কাছে নিউক্লিয়ার বোমা থাকবে।

নিউক্লিয়ার হলোকস্ট যাতে না হয়, সেজন্য ইসরাইল সবই করতে পারে।

সব।

আইসিস বা হিজবুল্লাহর মত থ্রেট ইসরাইল ফেস করে অভ্যস্ত। এজন্য IDF আছে। মোসাদ আছে।

কিন্তু নিউক ?

এটা অন্যব্যাপার। ইসরাইল দেশটা সাইজে আমাদের ঢাকা বিভাগের চেয়েও ছোট।  Dhaka divison যেখানে ৩১ হাজার বর্গ কিলোমিটার, সেখানে ইসরাইল ২০-২২ হাজার বর্গ কিলোমিটার।

একটা নিউকের ধকল সহ্য করাও তার পক্ষে সম্ভব না।

 

দেখার ব্যাপার, ইরানের নিউক নিয়ে ইসরাইল কি করে।

বহুবছর ধরেই একটা সম্ভাব্য হামলার কথা বাতাসে ভাসতেছিলো। ইসরাইল কি ইরানের নিউক্লিয়ার স্থাপনায় হামলা চালাবে ? যেমনটি করেছিলো ইরাকে, সিরিয়াতে।

 

তবে বর্তমানে সেই ভয় অনেকটা কম।

এর কারন ইরান ডিল।

ইরানের নিউক্লিয়ার ডিলের কারণে ইরানের হাতে আর যাই হোক, নিউক অন্তত থাকতেছে না। যদি না ইরান গোপনে গোপনে কিছু বানানোর চেষ্টা করে।

তবে সেই আশা দুরাশায় হয়ত।

ইরান এই ডিল ভাঙবে না তার নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থেই।

 

দেখা যাক, পরিবর্তী ঘটনাবলি কেমন হয়। কারণ বিশ্বরাজনীতির পেক্ষাপট বদলাতে সময় লাগে না। অনেক অনেক বেশি ভলাটাইল মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি।

 

(ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন। তবে দয়া করে চুরি করবেন না। চুরি করা মহাপাপ। আর এতে করে লিখার ইচ্ছাও নষ্ট হয়ে যায়। আরো অনেককিছুই লিখার ইচ্ছা আছে। ইচ্ছাটাকে নষ্ট করবেন না। ধন্যবাদ )


No comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.