Friday, December 11, 2015

প্রাইভেসি প্রবলেম




এটা চিন্তা করে খারাপ লাগতেছে,
আপনার "প্রাইভেসির" মুল্য কতটুকু এবং কেনো সেটা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সেটা এখন ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝানোর দরকার হচ্ছে।

এই যে এডোয়ার্ড স্নোডেন, ব্রাডলি ম্যানিং, বা জুলিয়ান এসাঞ্জ' এর মত মানুষেরা লাইফ রিক্স নিয়ে সরকারের ঢালাও সার্ভিলেন্স ও আড়িপাতার খবর ফাঁস করলো, কিসের জন্য ? কি কারণে ? লাভ'টা কি হবে মানুষকে এসব জানিয়ে ?

লাভের কথা পরে আসতেছে। আগে কিছু সিচুয়েশন কল্পনা করুণ।
যেমন, ধরুন বাংলাদেশ আর ভারতের ভেতর নদীর পানি বন্টন রিলেটেড আলোচনা চলতেছে। ডিপ্লোম্যাসির টেবিলে দুইদেশের ডিপ্লোম্যাট'রাই মেধা, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে চেষ্টা করবে ডিল'টাকে নিজেদের ফেভারে আনার। যতটা সম্ভব হয়।
অথবা অন্তত লোকসান যাতে না হয়। উইন উইন সিচুয়েশন যাতে অর্জন করা যায়।
 কেমন হবে যদি বাংলাদেশের ডিপ্লোম্যাট'দের সকল প্ল্যান প্রোগ্রাম আগে থেকেই ইন্ডিয়ানরা জেনে যায় আড়িপেতে !!
একবার ভেবে দেখুন। ইন্ডিয়ার জায়গায় পাকিস্তান বসিয়েও পরিস্থিতটাকে কল্পনা করতে পারেন !

আপনার প্রতিপক্ষ যদি আপনার ছলাকলা সবই আগে থেকে জেনে যায়, তাহলে তো ডিপ্লোম্যাসির টেবিলে আপনি হারবেন। নিশ্চিত হারবেন।

রাজনীতির ক্ষেত্রেও ইহা সত্য। 
ক্ষমতাসীন দল যদি সরকারের প্রশাসন ও লজিস্টিক ব্যবহার করে বিরোধি প্রতিপক্ষের সকলকিছুর ব্যাপারে আগেভাগেই ওয়াকিবহাল হয়ে যায়, আড়িপেতে বিরোধি দলের সকল ছলাকলা আগে থেকেই জেনে বসে থাকে, তাহলে তো বিরোধি দলের রাজণীতি ওখানেই শেষ !! 
রিচার্ড নিক্সন কিন্তু প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ধরা খেয়েছিলো ওয়াটারগেটে ডেমোক্রেটদের অফিসে আড়িপেতে। 
সরকারি দল সরকারে থাকা অবস্থায় কখনো কল্পনাও করতে পারে না, একদিন তাকেও বিরোধি দলে যেতে হতে পারে। আর তেমনটি হলে তারই তৈরি ফ্রাঙ্কেস্টাইন তাকেই শেষ করবে। 
ইতিহাসে এমন নজির ভুড়িভুড়ি আছে। 


৯-১১ এর পর প্রেসিডেন্ট বুশ পেট্রিয়োটিক এক্ট করেছিলো। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট বানিয়েছিলো। অর্থাৎ যাকে ইচ্ছা শ্রেফ সন্দেহের বসে আটক করা যাবে। যতদিন ইচ্ছা আটকে রাখাও যাবে।
মানুষ তখন প্রতিবাদ করেনি। কারণ মানুষের মনে ছিলো ভয়। আল কায়দার ভয়। 
মানুষ আতঙ্কে থাকলে সরকার সুযোগ নেয়। নিরাপত্তার জুজু দেখিয়ে এসব কালো আইন করে। মানুষ তখন প্রতিবাদ করে না। অথচ পরবর্তী'তে এই আইনগুলোর খপ্পড়ে পড়তে হয় সাধারণ জনতাকে।

ক্যাটরিনা কাইফ আর জন আব্রাহামের একটা মুভি আছে।
New York (2009)
দেখতে পারেন। হয়ত দেখেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিওটিক এক্ট এর পাল্লায় পড়ে  একজন নিরীহ মানুষের বিপদে পড়ার কাহিনী নিয়ে বানানো। অসাধারণ একটা মুভি।
এই মুভির কাহিনী বাস্তবে কিন্তু প্রচুর হয়েছে। অনেক নিরীহ মানুষকে অত্যাচার করা হয়েছে। টর্চার করা হয়েছে। ব্যাংকক, পোলান্ড, বা তুরস্কের CIA black site প্রিজনে নিয়ে অত্যাচার করা হয়েছে বিনা কারণে।

সেই নাইন ইলেভেনের পর আরো যেটা করা হয়েছিলো, সেটা হল NSA এর mass surveillance
অর্থাৎ সন্দেহভাজন, বা পটেনশিয়াল টেরোরিস্ট, বা শত্রু দেশগুলোর গুরুত্বপুর্ন ব্যক্তিরাই কেবল নয়, mass surveillance এর কারণে দুনিয়ার সকল মানুষের কমিউনিকেশনের উপর নজরদারী শুরু করে দিলো NSA...
যেটা নিয়ে পরবর্তিতে এডোয়ার্ড স্নোডেন সিক্রেট ফাঁস করলো।

আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, গোপনে আপনি কারসাথে কি বিষয়ে, কি নিয়ে কথা বলতেছেন, সেটা যদি আমি জানি, তাহলে আমি আপনাকে শ্রেফ ব্ল্যাকমেইল করতে পারবো।

সরকার যদি দেশের মানুষের প্রাইভেট খবরও এক্সেস করতে পারে,
 তাহলে সরকারের প্রতিপক্ষ বলে কিছুই থাকবে না।
 এবং কোনো আমজনতাই সরকারের কোনো কাজের সমালোচনা করতে পারবে না। কারণ যে আপনার ভেতরের, সবচেয়ে গোপন খবরটি জানে, আপনি নিশ্চয় তার বিরুদ্ধে যাবেন না। 
তাই না ?
আর বিরোধিদলের কথা তো বাদই দিলাম। 
অর্থাৎ সরকারি বাহিনী লাগিয়ে সরকারে ক্ষমতাসীন কোনো রাজনৈতিক দল বিরোধি দলের উপর ঢালাও নজরদারী করতে পারে না। তাহলে তো বিরোধি দলের রাজনীতিই শেষ হয়ে যাবে !! তাই না ?
এভাব চললে সরকারের বিরুদ্ধে যাবার সাহস কারো থাকবে না তখন।
অর্থাৎ সরকার তখন আর জনগনের থাকবে না। বরং জনগন সরকারের দাস হয়ে যাবে।
জাস্ট এই কারনে জুলিয়ান এসাঞ্জ বা এডোয়ার্ড স্নোডেনরা মার্কিন সরকারের mass surveillance এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।
তাদের কথা, কারো উপর নজরদারী করার আগে অবশ্যই রুলস এন্ড রেগুলেশন ফলো করতে হবে। এরপর surveillance, তার আগে নয়।

ব্যাপারটা সহজ করে বোঝানোর জন্য একটা উদাহারণ দেয়া যাক।
ধরুন, পুলিশের কথা।
আপনার বাড়ি তল্লাসী করতে চাইলে আগে পুলিশকে একটা ওয়ারেন্ট ইস্যু করে আনতে হবে। অন্যথায় যখন ইচ্ছা তখন এসে আপনার বাড়ি সার্চ করার কোনো অধিকার পুলিশের নেই।
কিন্তু কেমন হবে যদি সেই ক্ষমতা পুলিশকে দিয়ে দেয়া হয়?
অর্থাৎ পুলিশ চাইলে যখন তখন যেমন ইচ্ছা, যার বাড়িতে ইচ্ছা, যতবার ইচ্ছা, ইচ্ছামত ঢুকে যতক্ষন ইচ্ছা তল্লাসী চালাতে পারবে। শ্রেফ সন্দেহ হয়েছে, এজন্য। 

 আপনার বাড়ির আলমিরা, ওয়ার্ড্রোব, আপনার যাবতীয় সকল কাগজপত্র, কম্পিউটারের হার্ডডাইভ, ব্রাউজার হিস্টোরি,  ফেসবুকের চ্যাটিং, ব্রাউজার হিস্টোরি,  মুভি, গান, যাবতীয় যতকিছু আছে সবকিছু পুলিশ দেখার ক্ষমতা পেয়ে যায়, তো ?

তাহলে কি হবে ?
এরপর পুলিশ আপনার নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরালেও অবাক হবার কিছু নেই।
পুলিশ আপনার সকল প্রাইভেসি জানে। আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারবে।
আরো খারাপ পরিস্থিতি ভাবতে চাচ্ছেন ?
ধরুন, আপনার  স্ত্রীকে কলেজ লাইফে পছন্দ করতো, এমন এক বখাটে এখন পুলিশে চাকরি করে। এবার চিন্তা করেন .!!

শুনুন'রে ভাই... একটু চিন্তা করুণ। একটু ভাবুন।
আপনি আপনার জীবনের উপর অন্যকারো নিয়ন্ত্রন যতবেশি allow করবেন, আপনি ততই নিজেকে বন্দী করে ফেলবেন তার কাছে।

আজ ৩০ নভেম্বর, ২০১৫
দুইদিন আগে, অর্থাৎ ২৮ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের NSA তাদের দির্ঘদিন ধরে চলা Bulk-Collecting of Americans' Phone Records বন্ধ করে দিয়েছে। thanks to Edward Snowden
স্নোডেন বিশ্ববাসীকে জানিয়েছিলো এসব কথা। 
এরপর যে প্রতিবাদ তৈরি হয়েছিলো, এটা তারই ফলাফল।
এসব প্রোগ্রাম ছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর সংবিধান বিরোধি। দুনিয়ার কোনো দেশের সংবিধানেই এভাবে mass surveillance অনুমতি দেয় না। বর্বর দেশ ব্যতিত। যে দেশের সরকার সেই দেশের মানুষদের নাগরিক মনে না করে দাস মনে করে, তাদের কথা ভিন্ন।
NSA এর সার্ভিলেন্স থেকে বাঁচতে দুনিয়াজুরে অনলাইন সিকিউরিটি সিস্টেমকে অনেক শক্তিশালী করা হয়েছে বিগতবছরগুলোতে।
IOS বা android এর ওপারেটিং সিস্টেম বলেন, বা I-cloud এর সিকিউরিটি অনেক বাড়ানো হয়েছে।
মানুষ প্রাইভেসি চায়।

তাহলে প্রশ্ন, এসব মিডিয়া বা মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরাও সংগঠিত হচ্ছে। তাহলে তাদের প্রতিরোধ কিভাবে সম্ভব ?
আবারও বলতেছি, NSA, GCHQ বা GRU এর মত প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হয়েছেই সার্ভিলেন্স করার জন্য। কিন্তু mass surveillance নয়। অর্থাৎ উপরের সেই পুলিশের বাড়িঘর তল্লাসীর উদাহারণটির কথা মনে করুণ আবার।
পুলিশ নিশ্চয় হঠাৎ করে আপনার বাড়ি তল্লাসী করতে আসে না। যাকে পুলিশের সন্দেহ হয়, তার বাড়ি তল্লাসী করে।
সন্দেহ কেনো হয় ? সেটার জন্য পুলিশকে ইন্টেলিজেন্স ওয়ার্ক করতে হয়। অথবা তথ্য সংগ্রহ করতে হয় নিয়মকানুনের ভেতর দিয়েই। এসবের জন্য নিয়মনীতি আছে।
কে সন্তাসী, কে পটেনসিয়াল টেরোরিস্ট, এটা ফাইন্ড আউট করার জন্য ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি আছে।

আইসিস মোবাইল ইউজ করে, এটার জন্য কি মোবাইল অফ করে দিতে হবে?
নাহ... বরং আইসিস সদস্যদের মোবাইল ট্রাক করা হয়। তাদের ফোনে আড়িপাতা হচ্ছে।
আইসিস ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ফেসবুক ব্যবহার করে। ইন্টারনেটে রিক্রুটমেন্ট করে। এরজন্য কি ফেসবুক অফ করে দেয়া হচ্ছে ? নাহ। বরং ফেসবুক কাজে লাগিয়েই তাদের ট্রেস করা হচ্ছে। তাদের সম্পর্কে ধারণা পাচ্ছে গোয়েন্দা বাহিনীগুলো।
আইসিস সদস্যরা প্লে স্টেশনের চ্যাট ইউজ করে নিজেদের ভেতর কমিউনিকেশন করে। এরজন্য কি প্লে স্টেশন বাতিল করা হচ্ছে? নাহ... বরং প্লে স্টেশনে আইসিসের কমিউনিকেশন ট্রাক করে নষ্ট করা হচ্ছে।

মুখের কোথাও ক্ষত হলে সেই ক্ষত জায়গাতেই মলম দিতে হয়। গোটা মাথা ও মুখে মলম মাখার তো দরকার নেই ... তাই না?
আপনার ফোঁড়া হয়েছে পাছায়, আপনি গোটা শরীরে মলম মেখে বসে থাকলেন। এটা কি ঠিক ?
আপনি ফাইন্ড আউট করেন কালপ্রিট কারা। এবার তাদের মলম দেন রুলস এন্ড রেগুলেশনের ভেতরে থেকেই।
মাথা ব্যাথা হলে গোটা মাথা কাটবেন কেনো ?
Read More »

বাঘের খাঁচা, শিয়ালের হাসি


বহুকাল আগের কথা। আফ্রিকার এক জঙ্গলে থাকতো এক সিংহ।

সেই জঙ্গলে হাতি, ঘোড়া, বাঘ, ভাল্লুক, কিছুই ছিলো না।
ওগুলো সিংহ মেরে ফেলেছে।
তবে ছিলো অনেক হরিণ ... মায়াভরা চোখ তাদের।
আরো ছিলো খড়গোশ, গাধা আর পাল'কে পাল ছাগল।

বনের রাজা সিংহ।
এখানে তারই একার রাজত্ব।
একদা জঙ্গলে বহিঃশ্ত্রুর আক্রমন হল।
এক পাল হায়না রোজ জঙ্গলে ঢুকে পাল'কে পাল হরিণ শিকার করে ।
এই খবর সিংহের কানে পৌছালো। সিংহ'কে হরিণের পাল অভিযোগ জানালো।
'মহারাজ... আমাদের জন্য কিছু করেন। এভাবে হায়নার আক্রমন চলতে থাকলে আমরা তো শেষ হয়ে যাবো" ...

"হুম। তা তো বটেই। কিন্তু আমি একাএকা এতো বড় জঙ্গল কিভাবে সামাল দেবো? আমার একার পক্ষে তোমাদের এতোজনকে নিরাপত্তা দেয়া তো সম্ভব নয়।
আমি উত্তরে গেলে হায়নার পাল দক্ষিণ থেকে আক্রমন করবে। আবার আমি দক্ষিণে গেলে উত্তর থেকে"

"তাহলে আমাদের কি হবে মহারাজ ?

আমরা তো তাহলে সবাই হায়নার পেটেই যাবো"

'আচ্ছা, দাঁড়াও। দেখি কি করা যায়। মহা চিন্তার বিষয়"

সিংহ এবার শিয়াল পন্ডিত'কে খবর দিলো।
শিয়াল বুদ্ধি দিলো।
এরপর সিংহ জঙ্গলের সকল গরু, ছাগল, হরিণ, গাধা আর ভেড়াগুলোকে ডাকলো। ডাকলো সুন্দর সুন্দর খড়গোশগুলোকেও।
"শোনো তোমরা। তোমাদের সবার নিরাপত্তা এতোবড় জঙ্গলে তো দেয়া সম্ভব নয়। তবে আমি একটা উপায় বের করেছি। আমি একটা বড় খাঁচা বানাবো। সেই খাঁচার ভেতর তোমরা সবাই থাকবে। বাইরে থেকে কোনো হায়নার পাল এসে তোমাদের আক্রমন করতে পারবে না"

উপস্থিত নিরীহ প্রাণীগুলো অবাক হয়ে গেলো !


"মহারাজ... শেষমেষ খাঁচায় থাকতে হবে? স্বাধীনভাবে বাপ দাদার জঙ্গলে ঘুরতেও পারবো না ? "

"আহা... পারবে ... পারবে। কেনো পারবে না। তোমাদের খাঁচায় ভরে শিয়াল নিধনে বের হবো আমি। এরপর শিয়াল নিধন হয়ে গেলে তোমাদের খাঁচা খুলে দেবো' ...

উপস্থিত নিরীহ প্রাণীগুলো ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না কি বলবে। কিন্তু হায়নার হাত থেকে তো বাঁচতে হবে। নাকি?
অতঃপর সবাই ঢুকে পড়লো সিংহের বানানো খাঁচাতে।
সিংহ কথা রাখলো।
সত্যি সত্যিই সে এবার হায়নার দল'কে বধ করলো।
এরপর খাঁচা খুলে দিতে হবে। কিন্তু খাঁচা খুলে দিতে যাবার সময় শিয়াল পন্ডিত সিংহের কানেকানে বললো, "মহারাজ, আজ্ঞে, অনুমতি দিলে একটা কথা বলতে চাচ্ছি"

"বলো, শিয়াল। বলো"

"ইয়ে মানে, মহারাজ। আপনার বয়স হয়েছে। রোজ রোজ শিকার করা আপনার জন্য কষ্টকর;আপনাকে তো শিকার করতেই হয়। সুতরাং খাঁচায় যখন আছে ওরা, কি দরকার ছেড়ে দেবার ? আপনি রোজ একটা একটা করে খাবেন। এতে ওদের তো সমস্যা হবার কথা না। আপনি তো রোজ একটা করে শিকার করেনই"

সিংহ শিয়ালের কথায় যুক্তি খুঁজে পেলো। খাঁচার প্রাণীগুলোর আর বাইরে আসা হলো না। ওদিকে সিংহ আর শিকার করে না। করতে হয় না। সে অলস হয়ে পড়লো। পরিশ্রম না করে বসেবসে খেয়ে শরীর আরো দ্রুত খারাপ হল। সিংহ মারা গেলে খাঁচাটা তো শিয়ালের হবে। শিয়াল বড্ড খুশি।

Read More »

Thursday, December 10, 2015

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পদ্ধতি


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়াটা বেশ জটিল।
কতটা জটিল, সেটা বোঝার জন্য একটা পরিসংখ্যান দিয়ে শুরু করি।
কাগজে কলমে, ৩১ কোটি মার্কিনী জনতার ১২%-১৪% ভোট পেয়ে একজন অনায়াসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পারবে।
অর্থাৎ ৮৬% -৮৮% এর বেশি মানুষের কাছে চরম অজনপ্রিয় হবার পরও সে প্রেসিডেন্ট হতে পারবে। বুঝতেই পারতেছেন, বেশ জটিল প্রক্রিয়া।
এবার আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করবো।
সমগ্র প্রক্রিয়াটা বুঝতে হলে আপনাকে মানচিত্রটির দিকে ভালোভাবে লক্ষ রাখতে হবে।
এবার যা বলবো, সেগুলো ধারাবাহিকভাবে অনুসরন করুণ।



উপরের চিত্রে দেখতে পাচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানচিত্র। পঞ্চাশটা স্টেট আছে এবং একটা Federal district আছে। ফেডারেল ডিসট্রিক্ট হল গোটা আমেরিকার রাজধানী। Washington DC… এটা কোনো স্টেটের আন্ডারে নয়। ফেডারেল সরকার বলতে এই ওয়াশিংটন ডিসি ভিক্তিক পলিটিক্যাল সিস্টেমকেই বোঝানো হয়। এখানেই White house এবং capitol building অবস্থিত।
প্রশ্ন হল, স্টেট কি?
স্টেটের বাংলা হল রাষ্ট্র।
কথার কথা, আপনি টেক্সাসের বাসিন্দা। সেক্ষেত্রে আপনি টেক্সাসের নাগরিক। যেহেতু টেক্সাস একটা state(রাষ্ট্র) ... আবার একই সাথে আপনি (United States) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিক।
প্রতিটি স্টেটের আলাদা আলাদা পতাকা আছে। রাজধানী আছে। আইনসভা আছে। বিচার বিভাগ আছে। প্রতিটি স্টেটের আলাদা আলাদা আইন প্রনয়নের ক্ষমতা আছে, তবে সেটা কিছুতেই যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান বা ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল সরকারের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারবে না।
যেমন ক্যালিফোর্নিয়া সাইজের দিক দিয়ে আমেরিকার তৃতীয়, এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় স্টেট। ক্যালিফোর্নিয়ার রাজধানী স্যাকরামেন্টো। ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে বড় শহর লস এঞ্জেলস।
আবার ফ্লোরিডার রাজধানী Tallahassee
মায়ামি ফ্লোরিডার নামকরা একটি শহর। প্রতিটি শহরের মেয়র থাকে। আবার প্রতিটি স্টেটের গভর্নর থাকে। এটর্নি জেনারেল থেকে শুরু করে স্টেট সরকারের নিযুক্ত পররাষ্ট্র সচিবও থাকে। যেমন জন কেরি হল গোটা আমেরিকার ফেডারেল সরকারের secretary of State
আবার Ken Detzner হল ফ্লোরিডা সরকারের secretary of State
বোঝার জন্য, এভাবে চিন্তা করতে পারেন, এক দেশের ভেতর ৫০ টা দেশ। যদিও ‘দেশ’ শব্দটা এখানে ব্যবহার করা ঠিক নয়।

আপনি ভুলেও ফ্লোরিডাতে গাঁজা (Marijuana) বিক্রি করতে যাবেন না। ফ্লোরিডাতে গাঁজার দোকান খুললে আপনাকে জেলে যেতে হবে। কারণ সেখানে গাঁজা বিক্রি করা felony.
এখন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে করতে পারলে ভিন্ন ব্যাপার।
আবার আপনি কলোরাডো’তে আরামছে গাঁজা খেতে পারবেন। ছয়’টা গাঁজার গাছ চাষও করতে পারবেন নিজের বাড়িতে। নিজে খাওয়ার জন্য। কিন্তু ছয়টার বেশি গাঁজার গাছ লাগাতে পারবেন না।

একএক স্টেটের নিয়মগুলো এভাবেই বদলে যায়। মার্কিন ফেডারেল সরকার গাঁজা রিলেটেড কোনো আইন পাস করেনি। কিন্তু যদি আগামীকালই করে, অর্থাৎ ফেডারেল সরকার যদি সমগ্র আমেরিকার জন্য গাঁজা বৈধ করে দেয়, তাহলে সমগ্র আমেরিকাতে তখন এই আইনটা বলবৎ হবে। অর্থাৎ কোনো স্টেট এটার বিরোধিতা করতে পারবে না। আবার করতেও পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে পরিনতি খুব একটা ভালো হবে না। দিনশেষে ফেডারেল সরকারের হাতে সবগুলো স্টেটের সর্বভৌমত্ব শেয়ার করা। তাদের হাতেই আর্মি ও নিরাপত্তাবাহিনী। তাদের হাতেই ফেডারেল বাজেট। কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা। মুদ্রা ব্যবস্থা।
যেমন মার্কিন ফেডারেল সরকার যখন সেম-সেক্স ম্যারেজ রিলেটেড আইন পাস করলো, তখন গোটা আমেরিকার জন্যেই সেটা আইন হয়ে গেলো। এর আগে সেম-সেক্স ম্যারেজ কয়েকটি স্টেটে বৈধ ছিলো। কিছু স্টেটে ছিলো অবৈধ।

স্টেট আর ফেডারেল সরকারের ক্ষমতাগুলো নিচের ভেনচিত্রে দেখুন। তাহলে একটা ধারণা পাবেন, স্টেট সরকার কি করতে পারে আর কি করতে পারে না।

সোজা বাংলায় ফেডারেল সরকার সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রকে রিপ্রেসেন্ট করে। আর স্টেট সরকারগুলো নিজ নিজ স্টেটগুলোকে।
ফেডারেল সরকার যদি ইরানের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ দেয়, তাহলে কোনো স্টেটের পক্ষে আলাদাভাবে ইরানের সাথে ব্যবসায়ীক সম্পর্ক রাখা পসিবল না। আবার কোনো স্টেট চাইলেও United state থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারবে না। নিজেকে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে না। তাহলে আবার গৃহযুদ্ধ বাধবে। যেমন আব্রাহাম লিঙ্কনের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ বেধেছিলো। এর কারণ ফেডারেল সরকার, অর্থাৎ ওয়াশিংটন ডিসি ভিক্তিক ফেডারেল সরকার দাসপ্রথা বিলোপের আইন পাস করেছিলো। সেই হিসেবে গোটা আমেরিকার সবগুলো স্টেটেই দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হবে। এটা টেক্সাসের মত দক্ষিণের স্টেটগুলো মেনে নিতে পারে নি। ফলে তারা যুদ্ধ শুরু করে।
আপনি এক স্টেট থেকে সহজেই অন্য স্টেটে গিয়ে বসবাস করতে পারবেন। তবে ভোটার তালিকা থেকে নামধাম বদল করতে আপনাকে কাঠখড় পোড়াতে হবে। এক স্টেটের নাগরিক থেকে অন্য স্টেটের নাগরিক হতে হবে।
কোনো স্টেট নিজেস্ব মুদ্রা ব্যবস্থা চালু করতে পারবে না। কোনো স্টেটে রাস্তাঘাট বা রেললাইন তৈরির দরকার হলে সেটা ফেডারেল সরকার’কে বলতে হবে। মোট কথা, স্টেটগুলোর সবই আছে। কেবল স্বর্বভৌমত্ব ও মুদ্রা ব্যবস্থা ফেডারেল সরকারের কাছেই শেয়ার করে। আর গোটা আমেরিকার আর্মির কমান্ডার ইন চিফ হল মার্কিন প্রেসিডেন্ট। একটা স্টেটের গভর্নর চাইলেই সেই স্টেটের কোনো চরমপস্থি দলকে আর্মি দিয়ে নির্মুল করতে পারে। কিন্তু সে যদি আর্মিকে কমান্ড দেয় পাশের স্টেট বা মেক্সিকোর মত প্রতিবেশি দেশকে আক্রমন করতে, তাহলে আর্মি তার কথা শুনবে না।

আমরা এখন মার্কিন নির্বাচনের ব্যাপারে আসি। বেশকিছু রাজনৈতিক দল আছে, তবে আলোচনার সুবিধার জন্য মুল দুটি রাজনৈতিক দল নিয়েই হিসাবনিকাশ’টা তুলে ধরি।
বড় দুইটা রাজনৈতিক দল হল রিপাবলিকান আর ডেমোক্রেট দল।
রিপাবলিকান (GOP) পার্টি কনজারভেটিভ ধ্যানধারণার। Wikipedia বলছে, “free market capitalism, free enterprise, business, a strong national defense, deregulation, restrictions to labor unions, socially conservative policies and traditional values, usually with Christian overtones এসব হল রিপাবলিকান দলের মৌলিক বিশিষ্ট।
অর্থাৎ পুঁজিপতিদের জন্য সুবিধাজনক। হালআমলে রিপাবলিকান দলের কথা মনে হলেই চোখে ভেসে ওঠে মিট রমনী বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত কোটিপতি সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ী, অর্থাৎ বুশ, ডিক চেনি, লিন্ডসি গ্রাহাম, জন ম্যাকেইন বা টেড ক্রুজের মত যুদ্ধবাজ লোকগুলোর মুখ। অনেকবেশি ইসরাইল ঘেঁষা রিপাবলিকান পার্টি। Fox news-এর মত কনজার্ভেটিভ প্রোপাগান্ডা নিউজ চ্যানেলগুলো এখন এদের মিডিয়া যন্ত্র।
অথচ অতীতে এই পার্টির ভালো অর্জন আছে। যা নিয়ে এরা গর্ব করে।
আব্রাহাম লিঙ্কন ছিলেন প্রথম রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। আমেরিকার দাসপ্রথা বিরোধি লড়াইয়ে এই পার্টির মুখ্য ভুমিকা পালন করেছিলো।
রিপাবলিকান দলের প্রতিক হল হাতি। ৩০.৭ মিলিয়ন অর্থাৎ তিন কোটি সদস্য আছে রিপাবলিকান দলের।

অপরদিকে ডেমোক্রেট দলের প্রতিক হল গাধা। চার কোটি সদস্য আছে ডেমোক্রেট দলের।
বিল ক্লিনটন, হিলারি ক্লিনটন, বারাক ওবামা... এরা ডেমোক্রেট।
Liberalism, social and economic equality,
support for labor unions,
moves toward universal health care and equal opportunity,
consumer protection, and environmental protection,
এসব হল ডেমোক্রেটদের মূলনীতি।
অর্থাৎ আপনার শুনতে ভাল লাগবে এদের পলিসিগুলো। মনে হতে পারে, পুঁজিপতিদের জন্য এই পার্টিটা তেমন সুবিধার নয়। আমজনতার জন্য সুবিধার। অন্তত কাগজে কলমে। অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে, বেশিরভাগ মানুষেরই, বিশেষ করে লোয়ার ক্লাস আর মিডেল ক্লাস আমজনতার ডেমোক্রেটদের সাপোর্ট করাটাই যুক্তিসংগত। এবং ডেমোক্রেটদের সাপোর্টার আছেও যথেষ্ট।
মার্কিন চলচিত্র পরিচালক মাইকেল মুর কিছুদিন আগে বলেছিলেন, যদি সব মার্কিন ভোটার ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে যেত, তাহলে রিপাবলিকানরা কখনোই ডেমোক্রেট’দের বিরুদ্ধে জিততে পারতো না।
যেমন ২০১২ সালে মার্কিন জেনারেল ইলেকশনে ভোটার এসেছিলো ৫৭%
সচারচর নির্বাচনগুলোতে ৫০-৬০% ভোটার ভোট দিতে আসে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যান্ডারে এটা আসলেই কম।

তো, দুই ধাপে মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন সম্পন্ন হয়।
এক, প্রাইমারি ইলেকশন।
দুই, জেনারেল ইলেকশন।

প্রাইমারি ইলেকশন কি?



ধরুন, কথার কথা, আপনি আর আমি, দুইজনই রিপাবলিকান দল করি। দুইজনই চাচ্ছি রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন নিয়ে জেনারেল ইলেকশনে ডেমোক্রেট দলের মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে লড়াইয়ে নামতে।
তো প্রাইমারি ইলেকশনে লড়াই হবে আপনার আর আমার ভেতরে।
প্রাইমারি নির্বাচনে গোটা যুক্তরাষ্ট্রের আমজনতার মন জয় করা আপনার উদ্দেশ্য নয়।
আপনার উদ্দেশ্য হবে রিবাপলিকান দলের সদস্য এবং সমর্থকদের মন জয় করা। আপনি যদি আমাকে হারিয়ে রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন পান, তাহলে জেনারেল ইলেকশনে আপনি রিপাবলিকান দলকে প্রতিনিধিত্ব করবেন এবং আমি তখন আপনার সমর্থনে কাজ কররো। কেবল আমি নয়, আপনার সমর্থনে থাকবে আমাদের গোটা দল।
সুতরাং প্রাইমারি ইলেকশন জেতাটা একজন ব্যক্তির পক্ষে তুলনামুলক কঠিন কাজ। প্রাইমারি জিতে গেলে তখন ব্যাপারটা দল versus দল হয়ে যায়।
তখন আপনার দল সম্পুর্নভাবে আপনাকে ব্যাকআপ দিতে বাধ্য ।

প্রাইমারি ইলেকশন আগে হয়। জেনারেল ইলেকশন পরে হয়। কিন্তু আমরা জেনারেল ইলেকশন নিয়েই আগে আলোচনা করবো। প্রাইমারি ইলেকশন নিয়ে শেষে আলোচনা করবো।


ধরুন, প্রাইমারি ইলেকশন শেষ হয়েছে। আপনি রিপাবলিকান দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। আর ডেমোক্রেট দল থেকে প্রাইমারি জিতেছে হিলারি ক্লিনটন।
তো লড়াইটা এখন ডেমোক্রেট ভার্সেন রিপাবলিকান। অর্থাৎ আপনি vs হিলারি।
আপনারা দুইজন দুইটা দলের ফেস।

তো জেনারেল ইলেকশন জিততে আপনার লাগলে ৫৩৮ টা ইলেকট্রোরাল কলেজের ভেতর ২৭০ টা। অর্থাৎ অর্ধেকের চেয়ে ১ বেশি।
ইলেকট্রোরাল কলেজ কি?
সোজা উত্তর—মানুষ। আপনার পার্টির সদস্য।
আপনার পার্টি প্রতিটি স্টেটে ইলেকট্রোরাল কলেজ নিযুদ্ধ করবে। মানুষ যখন ব্যালট পেপারে ভোট দেবে, তখন এই ইলেকট্রোরাল কলেজ’কেই ভোট দেবে।



যেমন উপরের মানচিত্রটি দেখুন।
একএক স্টেটে ইলেকট্রোরাল কলেজের সংখ্যা একএক রকম।
যেমন ক্যালিফোর্নিয়াতে ভোটের সময় প্রতিটি পার্টি ৫৫ জন করে ইলেকট্রোরাল কলেজ নিযুক্ত করবে। এরা পার্টির কর্মী, সদস্য বা পার্টির প্রতি অনুগত লোকজন।
একজন ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষ যখন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে বারাক ওবামা’কে ভোট দিচ্ছে, তখন সে মুলত ভোট দিচ্ছে বারাক ওবামার “ডেমোক্রেট দলের” নিযুদ্ধ ৫৫ জন ইলেকট্রোরাল কলেজ’কে।
আপাতত বোঝার সুবিধার জন্য ৫৫ জন ইলেকট্রোরাল কলেজকে ৫৫ পয়েন্ট হিসেবে মনেমনে কল্পনা করুণ।
বারাক ওবামা যদি ক্যালিফোর্নিয়াতে তার প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে বেশি ভোট পায়, তাহলে সে জিতে যাবে। আসলে মুল জয়টা হবে তার দলের। সে পাবে ৫৫ পয়েন্ট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী পাবে শূন্য পয়েন্ট।

আবার যদি সে টেক্সাসেও প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে বেশি ভোট পায়, তাহলে পাবে ৩৪ পয়েন্ট।
এভাবে একএক স্টেটে জিতবে, আর পয়েন্ট পাবে। হারলে কিছুই পাবে না। (কিছু স্টেট ব্যাতিক্রম)
তো এই করে যদি গোটা আমেরিকাতে থাকা ৫৩৮ পয়েন্টের ভেতর ২৭০ পয়েন্ট কেউ পায়, তাহলে সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবে।
এখন প্রশ্ন হল, এভাবে একএক স্টেটের পয়েন্ট একএক রকম কেনো ?
ক্যালিফোর্নিয়াতে ৫৫... টেক্সাসে ৩৪ ... আবার মানচিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, ফ্লোরিডাতে ২৯... এরকরম কেনো?
উত্তর হল, জনসংখ্যা। নিয়ম হল, প্রতিটি স্টেটের জনসংখ্যা যেমনই হোক, নুন্যতম তিন পয়েন্ট দিতেই হবে। এরপর জনসংখ্যা অনুসারে এই সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় প্রতি ১০ বছর পরপর। যেমন ২০০৪ সালে ফ্লোরিডার ছিলো ২৭ ইলেকট্রোরাল কলেজ। এখন ২৯ হয়েছে। অর্থাৎ ফ্লোরিডাতে জনসংখ্যা বেড়ে গেছে।
ব্যাপারটা বেশ জটিল। এখানে সোজাসাপ্টা অনুপাত করা হয় না। এটা মাথায় রাখা হয়, ছোট স্টেটগুলো যাতে নির্বাচনে গুরুত্ব না হারায়।


যেমন, আমেরিকার জনসংখ্যা যদি ৩১ কোটি ধরেন, তাহলে প্রতি একজন ইলেকট্রোরাল কলেজ বা আলোচনার সুবিধার জন্য আমাদের বিবেচিত প্রতি এক পয়েন্ট( 1 point= ) প্রায় ৬ লক্ষ আমেরিকান’কে রিপ্রেসেন্ট করে। ( ৩১ কোটি’কে ৫৩৮ দিয়ে ভাগ করে )
অর্থাৎ প্রতি ৬ লক্ষ মার্কিনীর জন্য একজন ইলেকট্রোরাল কলেজ থাকার কথা।
কিন্তু এমন হয় না। কারণ ইলেকট্রোরাল কলেজগুলো গোটা আমেরিকা হিসাবে নিয়ে নির্ধারিত নয়। নির্ধারিত হয় স্টেট বাই স্টেট।
যেমন মন্টানা স্টেটের জনসংখ্যা ১০ লাখ। আবার Wyoming স্টেটের জনসংখ্যা ৫ লাখ ৮৪ হাজার।
অথচ দুইটা স্টেটের ইলেকট্রোরাল ভোট সমান। তিনটা করে।
অর্থাৎ জেনারেল ইলেকশনে সবচেয়ে ছোট স্টেট Wyoming জিতে আপনি ৩ পয়েন্ট পাচ্ছেন।
ওদিকে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী মন্টানাতে ১০ লাখ ভোটারের সমর্থন নিয়ে আপনারে হারিয়ে পাচ্ছে সেই তিন পয়েন্টই !
তাহলে , এমন হলে, মন্টানার ভোটার’দের ভোটের মুল্য Wyoming স্টেটের ভোটারদের ভোটের ভ্যালুর চেয়ে অর্ধেক হয়ে গেলো কি?
হা, হয়ে গেলো।
আপনার হয়ত ব্যাপারটিকে আনফেয়ার মনে হতে পারে। কিন্তু মোটেও ব্যাপারটি তেমন না। এই সিস্টেমটি করা হয়েছিলো, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে একটা ছোট স্টেটের মুল্য বড় স্টেটের চেয়ে কম না হয়। খেয়াল করে দেখুন, আমরা যখন গোটা আমেরিকার জনসংখ্যাকে অর্থাৎ ৩১ কোটি মার্কিনীকে ৫৩৮ দিনে ভাগ করেছি, তখন ভাগফল এসেছে ৬ লক্ষ।
সেই হিসেবে মন্টানার জন্য ২ পয়েন্ট আর Wyoming স্টেটের জন্য মাত্র ১ পয়েন্ট নির্ধারনের কথা ছিলো জনসংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে। কিন্তু ব্যাপারটা তেমন হয়নি। দুইটা স্টেটের জন্যেই তিন পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে।

অর্থাৎ বুঝতেই পারতেছেন, বড় বড় স্টেটের মানুষের ভোটের ভ্যালু কম, আর ছোট ছোট পুচকে পুচকে স্টেটগুলোর মানুষের ভোটের ভ্যালু বেশি। যেমন টেক্সাস বা ফ্লোরিডার মত জনবহুল স্টেটগুলোর মানুষের ভোটের ভ্যালু অনেক কম।



একজন Wyoming স্টেটের মানুষের ভোটের ভ্যালু ক্যালিফোর্নিয়ার চারজন মানুষের ভোটের ভ্যালুর সমান।
এই জন্যেই লিখার শুরুতেই বললাম, গোটা আমেরিকার ১২% জনতার সমর্থন নিয়েও থিওরেটিকালি আপনি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন। কিভাবে ?



যেমন উপরের মানচিত্র আকাশী রঙ দিয়ে মার্ক করেছি যে স্টেটগুলো, সেগুলো জিতলে আপনি ২৭০ টা ইলেকট্রোরাল ভোট, অর্থাৎ ২৭০ পয়েন্ট পেয়ে যাবেন। আকাশী রঙ্গের ভেতর আছে ৩৯ টা স্টেট এবং Washington D.C আছে।
আপনার মানচিত্র দেখে মনে হতেই পারে, গোটা আমেরিকার বিশাল অংশজুরে আপনি জিতে গেছেন। কথা মিথ্যে নয়। আফটার অল, আপনি ৫০ টা স্টেটের ভেতর ৩৯ টা স্টেট জিতেছেন। প্লাস, Washington DC ও জিতেছেন।



কিন্তু মজার ব্যাপার হল, উপরের আকাশী রঙ্গের জায়গায় মাত্র ২২% আমেরিকানের বসবাস! অর্থাৎ আপনি মাত্র ২২% এরও কম আমেরিকানের সমর্থন নিয়েও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।
আপনার হোয়াইট হাউজ গমন কেউ আটকাতে পারবে না তখন। যদিও আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী এমনসব স্টেটে জিতেছে, যে স্টেটগুলো ৭৮% আমেরিকান’দের বসবাস। কিন্তু সে পপুলার ভোটে এগিয়ে থাকলেও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবেন আপনি। সে নয়। কারণ আপনি জিতেছেন বেশি পরিমান ইলেকট্রোরাল কলেজ।

এটা একটা ম্যাথামেটিক্যাল হিসাব। অর্থাৎ ২২% মানুষের সাপোর্ট নিয়েও আপনার পক্ষে হোয়াইট হাউজে যাওয়া সম্ভব।
হিসাবটা আরো জটিল করে দিচ্ছি। ধরুণ, উপরের মানচিত্র সবুজ অংশে আপনি একটা ভোটও পান নি। অর্থাৎ আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী সবুজ অংশের ৭৮% মার্কিনীর সব ভোটই পেয়েছে।
অপরদিকে আকাশী রঙের অংশগুলো, অর্থাৎ যেখানে ২২% আমেরিকানের বসবাস, সেখানে আপনি মেজোরিটি ভোট পেয়েছেন। কিন্তু সব না। অর্থাৎ যে স্টেটে ১০০ জন ভোটার, সেখানে ৫১ টা ভোট পেয়ে জিতেছেন। আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছে ৪৯ ভোট। এভাবেই টানটান প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভেতর দিয়ে ওই ৩৯ টা স্টেটে আপনি জিতেছেন।
অর্থাৎ গোটা আমেরিকার মাত্র ১২%-১৪% জনতার ভোট পেয়েছেন আপনি। আর আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ৮৬%-৮৮% জনতার ভোট।
অথচ তার পরও আপনার হাতে ৩৯ টা স্টেট+ Washington DC =270 ইলেকট্রোরাল কলেজ। অর্থাৎ আপনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট !
কি? অদ্ভুত না ব্যাপারটা ?
তবে এই ধরণের ঘটনা ঘটা কাগজে কলমে পসিবল হলেও বাস্তবে highly unlikely
সম্ভাবনা অনেকটা মহাবিশ্বে ভিন্ন কোনো গ্রহ প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার মত। কাগজে কলমে পসিবল। কিন্তু so far… হয়নি। ঘটেনি।

২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের ক্যান্ডিডেট জর্জ বুশ কিন্তু ডেমোক্রেট দলের আল গোর’রের চেয়ে পপুলার ভোটে পেছনে ছিলো। কিন্তু ইলেকট্রোরাল কলেজ বেশি জেতার কারণে বুশ হয়ে গেলো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।
বুশ পেয়েছিলেন গোটা আমেরিকার ৪৭.৯% ভোট। আর আল গোর পেয়েছিলেন ৪৮.৪% ভোট। অর্থাৎ আমজনতা আল গোর’কে বেশি ভোট দিয়েছিলো। কিন্তু বুশ জিতেছিলেন বেশি ইলেকট্রোরাল কলেজ। ব্যস, বুশ হয়ে গেলেন প্রেসিডেন্ট।
এছাড়া ১৮৮৮ সালে, এবং ১৮৭৬ সালে এমন ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ পপুলার ভোটে পিছিয়ে থেকেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট হবার নজির আছে।

এবার দেখা যাক, মার্কিন ব্যালট পেপার কেমন হয়। নিচে একটা স্যাম্পল দেখুন।



এখন খেয়াল করে দেখুন, এটা ২০১২ সালের মার্কিন জেনারেল ইলেকশনের ব্যালট।


এতে প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়ানো বারাক ওবামা বা মিট রমনীর নামের নিচে পাতলা কালিতে ছোট করে লিখা, electors for president…
অর্থাৎ আপনি যখন বারাক ওবামা’কে ভোট দিবেন, তখন আসলে আপনি ব্যক্তি বারাক ওবামা’কে নয়, বরং আপনার স্টেটে বারাক ওবামার ডেমোক্রেট’ দলের মনোনীত ইলেকট্রোরাল কলেজ’দের ভোট দিচ্ছেন।
ভোটিং শেষে ভোট কাউন্ট হবে।
কথার কথা, আপনি যে স্টেটে থাকেন, সেখানে ১০০ জন ভোটার। দুইটা ইলেক্ট্রোরাল কলেজ।
এখন ভোট কাউন্টিং করে দেখা গেলো বারাক ওবামা ১০০ টার ভেতর ৫১ টা আর মিট রমনী ৪৯ টা ভোট পেয়েছে। অর্থাৎ বারাক ওবামা জিতে গেলো আপনার স্টেটে।
সুতরাং আপনার স্টেটে দুইজন ডেমোক্রেট ইলেকট্রোরাল কলেজ জিতে গেলো সে। এরা আবার পরে ব্যক্তি বারাক ওবামা’কে ভোট দেবে।
এখানে সামান্য একটা টুইস্ট আছে।
কথার কথা, ইলেক্ট্রোরাল কলেজ নিজ দলের বারাক ওবামা’কে ভোট না দিয়ে বিপক্ষে দলের মিট রমনীকে ভোট দিয়ে দিলো !!
যেমন ধরুন, ক্যালিফোর্নিয়ার নির্বাচিত ৫৫ জন ডেমোক্রেট ইলেকট্রোরাল কলেজ, যাদের সবারই বারাক ওবামা’কে ভোট দেবার কথা, তাদের কেউএকজন নিজ দলের সাথে ও ভোটার’দের রায়ের সাথে বেইমানি করে বিপক্ষ কাউকে ভোট দিয়ে দিলো। সেক্ষেত্রে ৫৫ টার জায়গায় ৫৪ টা ইলেকট্রোরাল ভোট পেলো ওবামা । এদের বলে faithless elector বা বলতে পারেন “বেইমান ইলেকটর”। এখন পর্যন্ত এমন ১৫৭ টা কেস রেকর্ড করা হয়েছে। তবে এধরনের বেইমানি বাস্তবে ইলেকশনের রেসাল্ট চেঞ্জ করার নজির নেই।
ইলেক্ট্রোরাল কলেজরা মুলত পার্টির বিশ্বস্ত কর্মী বা সদস্যরাই হয়। সুতরাং এরা নিজ দলের ক্যান্ডিডেট বাদ দিয়ে ভোটারদের রায় ও নিজ দলের আস্থার সাথে বেইমানি করে বিপক্ষ দলের ক্যান্ডিডেটকে ভোট দেবে, এটা আশা করা হয় না।
তবুও এই অপশনটা রাখা হয়েছে। কারণ ইলেকট্রোরালদের কারো মনে হয়ত সন্দেহ হতেই পারে, তার নিজ দলের ক্যান্ডিডেট ভালো নয়। বিপক্ষ দলের ক্যান্ডিডেটই ভালো। হ্যানত্যান। যাই হোক, ওসব জটিলতা বাদ দিয়ে যেটা স্বাভাবিক, সেটাকেই বিবেচনা করি। একারণেই ইলেকট্ররাল কলেজগুলো পয়েন্ট হিসেবে কাউন্ট করতে বলেছিলাম হিসাবের সুবিধার জন্য।


গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পলিটিক্যাল সিস্টেম কিভাবে কাজ করে, সেটা বোঝার জন্য নিচের চিত্রটি দেখুন।



ভোটার’দের দেখতেছেন লাল বৃত্তে। বাংলাদেশে আমরা যেমন এমপি নির্বাচন করি, এরা সরাসরি ভোটে house of representatives এবং সিনেটর নির্বাচন করে ফেডারেল সরকারের জন্য (সবুজ arrow গুলো খেয়াল করুণ) সেইসাথে নিজের স্টেটের সরকারের জন্য সরাসরি ভোটে state legislature এবং Governor নির্বাচিত করে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট আর ভাইস প্রেসিডেন্টের বেলায় নির্বাচন করে Electoral College… (৫৩৮ জন) যারা পরে প্রেসিডেন্টকে ভোট দেয়।
প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টের নিয়োগ দেয়। (blue arrow)
কংগ্রেস সেটা অনুমোদন দেয় (বেগুনী arrow)
প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা আছে কংগ্রেসের পাস করা আইনে ভেটো দেবার (red arrow)
প্রেসিডেন্ট আর্মি নিয়ন্ত্রন করে (armed force ) সেইসাথে ক্যাবিনেট ও এক্সিকিউটিভ অফিসও নিয়ন্ত্রন করে।

এই হল একটা সামগ্রিক রুপ রেখা।
একজন সিনেটর নির্বাচিত হন ৬ বছরের জন্য। আর একজন কংগ্রেসম্যান নির্বাচিত হন দুই বছরের জন্য।
যেমন ২০১৬ সালে যখন মার্কিনীরা ভোট দেবে, তখন তাদের ব্যালট পেপারটি দেখতে অনেকটা এমনই হবে। এটা অবশ্য ২০১২ সালে মিনেসোটা স্টেটের ব্যালট।



দেখতেই পাচ্ছেন, তিনটা কলামে অনেকগুলো মানুষকে ভোট দিতে হবে। প্রথম কলাম (বামে) আছে ফেডারেল অফিস। অর্থাৎ এখানে প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, সিনেটর, কংগ্রেসম্যানদের ভোট দেবেন। এরা সবাই যাবে Washington DC তে। ফেডারেল সরকারের অংশ হবে এরা। কংগ্রেসম্যান আর সিনেটররা আপনার এলাকাকে রিপ্রেসেন্ট করবে। প্রতি স্টেটের জন্য ২ জন সিনেটর থাকে। আর জনসংখ্যা অনুসারে কংগ্রেসম্যান থাকে। ফলে মোট ১০০ জন সিনেটর আর ৪৩৫ জন কংগ্রেসম্যান সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন গোটা আমেরিকা থেকে।
দ্বিতীয় কলাম’ অর্থাৎ মাঝেরটা হল স্টেট অফিস। অর্থাৎ আপনার নিজ স্টেটের গভর্নর, নিজ স্টেটের পার্লামেন্ট রিপ্রেসেন্টেটিভদের ভোট দেবেন। তিন নাম্বার, ডানের কলামটি county office, এটাও আপনার স্টেটের ব্যাপার। আপনি আপনার স্টেটের কোন কান্টিতে থাকেন, সেই কান্টির অফিসিয়াল’দের নির্বাচন করবেন। প্রতিটা স্টেটকে অনেকগুলো কান্টিতে বিভক্ত করা হয়। যেমন আমাদের দেশে প্রতিটি বিভাগের মাঝে অনেকগুলো জেলা আছে। জেলার ভেতর উপজেলা আছে। উপজেলার ভেতর থানা, গ্রাম ... এসব থাকে। তেমন।

নিচে দেখতেছেন US capitol building…
ওয়াশিংটন ডিসি’তে অবস্থিত। ফেডারেল সরকারের House of representatives অর্থাৎ কংগ্রেসম্যান এবং সিনেটরেরা এখানে বসে। এখানেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের শফথ পড়ানো হয়।
আমাদের সংসদ ভনের সাথে তুলনা করতে পারেন। এখানেই আইন পাস হয়।



আর নিচেরটা হল, White house
মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় + থাকার জায়গা।


আবার নিচের ছবিটা দেখুন,
California State Capitol Building, Sacramento



এটা হল ক্যালিফোর্নিয়ার স্টেট সরকারের Capitol Building… যা ক্যালিফোর্নিয়া স্টেটের রাজধানী Sacramento তে অবস্থিত। এখানে গভর্নর ও ক্যালিফোর্নিয়ার স্টেট সরকারের রিপ্রেসেন্টেটিভরা শুধুমাত্র ক্যালিফোর্নিয়ার স্টেট সরকার জন্য আইন প্রণয়ন করতে বসে।
এভাবে সকল স্টেটেরই এই রকম স্টেট ক্যাপিটল বিল্ডিং আছে।



তো এই হল মার্কিন জেনারেল ইলেকশন।



তো জেনারেল নির্বাচন তো লড়বেন। ভালো কথা। কিন্তু তার আগে তো নিজ দলের নমিনেশন জিততে হবে।
এটাকে বলে প্রাইমারি নির্বাচন। আমি যখন এই লিখাটি লিখতেছি, তখন দুনিয়া মেতে আছে মার্কিন প্রাইমারি ইলেকশন নিয়ে। রিসেন্ট ফেসবুকে আমি নিজেও প্রাইমারি নির্বাচন নিয়ে লিখালিখি করেছি।

তো, প্রাইমারি নির্বাচন কি?
এটা আরো বেশি জটিল প্রক্রিয়া।

নিচের ছবিতে দেখছেন ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট নমিনেশন পদপ্রার্থীদের।


প্রাইমারি ইলেকশনে এদের ভেতর থেকে একজন জিতবে। এবং তিনিই দলের নমিনেশন নিয়ে মূল লড়াই, অর্থাৎ জেনারেল ইলেকশনে লড়বেন। একটি দল থেকে একের অধিক প্রার্থীকে জেনারেল ইলেকশনে নমিনেশন দেবার কোনো সুযোগ নেই।
সুতরাং বুঝতেই পারতেছেন, উপরের ব্যক্তিদের জন্য প্রাইমারি নির্বাচন জেতাটা তুলনামূলক বেশি কষ্টসাধ্য। কারণ, এখানে লড়াইটা হচ্ছে man to man….
কিন্তু প্রাইমারিতে জিতে গেলে তখন গোটা দল তাকে ব্যাকাপ দিতে বাধ্য। জেনারেল ইলেকশনে তখন লড়াই হয়ে যাবে party vs party

তো কিভাবে জিততে হবে প্রাইমারি নির্বাচন?
একটা কথা শুরুর দিকে বলেছিলাম। ডেমোক্রেট দলের রেজিস্টার্ড সদস্য সংখ্যা ৪ কোটি, আর রিপাবলিকান’দের তিন কোটির মত। গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে।

যেমন আপনি যদি নিউইয়র্কের বাসিন্দা হন, তাহলে প্রশ্ন, আপনি কি দলবাজি করেন? নাকি করেন না? আপনি কী রিপাবলিকান বা ডেমোক্রেট বা অন্যকোনো দলের রেজিস্টার্ড সদস্য? নাকি আমজনতা? যদি আপনি আমজনতা হন, তাহলে প্রাইমারি নির্বাচনে আপনার এক পয়সাও মুল্য নেই।
হতে পারেন আপনি মনেমনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী জেব বুশ’কে পছন্দ করেন। কিন্তু আপনি যদি রিপাবলিকান দলের রেজিস্টার্ড সদস্য না হন, তাহলে নিউইয়র্কের প্রাইমারি ইলেকশনে আপনার ভোট দেবার কোনো সুযোগ নেই। নিচের মানচিত্রটি দেখুন।


নীল রঙ্গে যে স্টেটগুলোকে চিহ্নিত করেছি, সেগুলোতে সাধারনত closed primary system অনুসরণ করা হয়। এসব জায়গাতে প্রাইমারি নির্বাচনে কেবল দলের রেজিস্টার্ড সদস্যরা ভোট দেন।
অর্থাৎ আপনি যদি রিপাবলিকান দল করেন, তাহলে প্রাইমারি ইলেকশনের দিন রিপাবলিকান দলের বুথে গিয়ে ব্যালটে হোক বা ইলেকট্রনিক মেশিনেই হোক, আপনার পছন্দের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপার্থীকে ভোট দিয়ে আসবেন।
এখানেও ঘাপলা আছে। কথার কথা, আপনি জেব বুশ’কে ভোট দিয়ে আসলেন। এখানে জেব বুশ কিন্তু সরাসরি ভোট পাবে না। ঠিক ইলেকট্রোরাল কলেজের মত প্রাইমারি নির্বাচনেও একটা সিস্টেম আছে। সেটা হল ইলেক্ট্রোরাল ডেলিগেট। ডেলিগেটরা পার্টির পরীক্ষিত সদস্য বা উক্ত স্টেটের রিপ্রেসেন্টেটিভ। ইলেকট্ররাল কলেজের মতই। কিন্তু ভিন্নতা আছে। কথার কথা, কোনো স্টেটে রিপাবলিকান দলের প্রাইমারি নির্বাচনে ১০০ জন রিপাবলিকান রেজিস্টার্ড সদস্য ভোট দিলো। দেখা গেলো, ৭০ টা ভোট পেয়েছে জেব বুশ আর ৩০ টা ভোট পেয়েছে টেড ক্রুজ।
তো ডেলিগেটরা পার্টি কর্মীদের রায় পেয়ে গেলো। এখানে নির্বাচনটা আয়োজন করা হয় জাস্ট জনতার পালস বোঝার জন্য। আর কিছু না। ক্ষমতা ডেলিগেটদের হাতে। এবার তারা ন্যাশনাল কনভেনশনে যাবে। প্রতিটি পার্টি বিশাল করে এই ন্যাশন্যাল কনভেনশন আয়োজন করে। সেখানেই ডেলিগেটরা ভোট দেবে ফাইনাল ক্যান্ডিডেট নির্বাচনের জন্য।



ইন্টারিস্টিং বিষয় হল, আপনার স্টেটের ডেলিগেটরা আপনার স্টেটের জনতার রায় (পার্টির রেজিস্টার্ড সদস্যদের রায়) টোটাল অগ্রাহ্য করে তাদের নিজের পছন্দ মত ক্যান্ডিডেটকে ভোট দিয়ে আসতে পারে। কেউ তাদের বাধা দিতে পারবে না। অর্থাৎ আপনার স্টেটে জেব বুশকেই রিপাবলিকানরা বেশি পছন্দ করে। ভোটের ফলাফলের মাধ্যমে ডেলিগেটসরা সেটা জেনেও গেলো। অথচ ন্যাশন্যাল কনভেনশনে গিয়ে তারা ভোটগুলো সব টেড ক্রুজকে দিয়ে এলো ! অর্থাৎ এখানেই মানুষের রায়’কে অগ্রাহ্য করার একটা অপশন দেয়া আছে। প্রাইমারি ইলেকশনের ব্যাপারটা সম্পুর্ন একটা দলীয় আয়োজন।
আপনি যদি সতন্ত্র প্রার্থী হন, তাহলে প্রাইমারি ইলেকশন বাদ দিয়ে সরাসরি জেনারেল ইলেকশনে নামতে পারবেন। সেটা আপনার ব্যাপার। কিন্তু আপনি যদি ডেমোক্রেট বা রিপাবলিকান দলের মনোনয়নে জেনারেল ইলেকশনে লড়াই করতে চান, তাহলে আপনাকে এদের প্রাইমারি ইলেকশন জিতে আসতে হবে।
প্রাইমারি নির্বাচন পলিটিক্যাল দলগুলো নিজ উদ্যোগে করে। একএক স্টেটে একএক ধরণের নিয়ম। যেমটা উপরের মানচিত্র বললাম। উপরে নীল মার্ক করা ১২ টা স্টেটে closed primary election আয়োজন করা হয়।



আবার আপনি যদি মানচিত্রের লাল অংশের বাসিন্দা হন, তাহলে আমজনতা হলেও আপনার মতামতের গুরুত্ব আছে প্রাইমারি ইলেকশনে !
কারন এই ১৪ টা স্টেটে বড় দলগুলোর তরফ থেকে open primary system নির্বাচন আয়োজন করা হয়। অর্থাৎ আমজনতা হোন, আর পলিটিক্যাল পার্টির সদস্য হোন, ভোট দিতে পারবে। কথার কথা, আপনি আমজনতা। আপনি হয় ডেমোক্রেট’দের প্রাইমারিতে গিয়ে ভোট দিয়ে আসবেন, অথবা রিপাবলিকান’দের। একসাথে দুইটাতেই গিয়ে ভোট দিয়ে আসতে পারবেন না। আবার ধরুণ, আপনি ডেমোক্রেট দলের কর্মী। একেবারে রেজিস্টার্ড কর্মী বা সদস্য। আপনি চাইলে নিজ দলের প্রাইমারিতে ভোট না দিয়ে রিপাবলিকান দলের প্রাইমারিতে ভোট দিয়ে আসতে পারেন। নো প্রোবলেম। তবে ভোট একবারই দিতে পারবেন।
আবারও বলতেছে, প্রাইমারি ভোট কিন্তু দলগুলো আয়োজন করে। সুতরাং একই দিনে, একই সময়ে আয়োজন করতে পারে, আবার নাও পারে। ভিন্নভিন্ন স্টেটের প্রাইমারি ভোট ভিন্নভিন্ন সময়ে আয়োজন করা হয়। যেমন নিউ হ্যাম্পস্যায়ারের প্রাইমারি ইলেকশন হয় সবার আগে। (IOWA তে ককাস হয়)

তো আমরা Open primary সম্পর্কে জানলাম। closed প্রাইমারি সম্পর্কে জানলাম।
অর্থাৎ ১২+১৪= ২৬ টা স্টেটের ব্যাপারে জানা গেলো। বাকিগুলো?
বাকিগুলোতে ভিন্নভিন্ন নিয়ম।
যেমন, ক্যালিফোর্নিয়া, লুইজিয়ানা এবং ওয়াশিংটনে Blanket primary সিস্টেম।
অর্থাৎ এখানে দুই পার্টিই একই দিনে একসাথে প্রাইমারি ইলেকশন আয়োজন করে। আপনি ভোট দিতে গিয়ে ব্যলট রিপাবলিকান আর ডেমোক্রেটদের আলাদা আলাদা তালিকা পাবেন। রিপাবলিকানদের ভেতর যাকে ভালো লাগে, তাকে দেবেন। একইসাথে ডেমোক্রেটদের ভেতর যাকে ভালো লাগে, তাকে দিয়ে আসবেন। যেমন ধরেন ,হিলারিকে দিলেন আর জেব বুশ’কে দিলেন।

Arizona, Colorado, Massachusetts, New Hampshire, North Carolina, Rhode Island এবং West Virginia তে আছে Semi closed primary system.
অর্থাৎ ক্লোসড সিস্টেমের মতই পার্টির রেজিস্টার্ড সদস্যরা নিজপার্টির প্রাইমারি ছাড়া অন্যপার্টির প্রাইমারিতে ভোট দিতে পারবে না। তবে আমজনতা ইচ্ছা করলে দুইটার যেকোনো একটাতে গিয়ে ভোট দিয়ে আসতে পারবে। অর্থাৎ একেবারে ক্লোসড সিস্টেমে আমজনতা দূরে রাখা হয়। কিন্তু semi closed সিস্টেমে আমজনতাকে যুক্ত করা হয়। এই যা।

IOWA তে আবার caucus সিস্টেম।
এখানে ভোটাভোটি হয় না। বরং পার্টির রেজিস্টার সদস্যরা একসাথে হয়। আলাপ আলোচনায় বসে। ডিবেট হয়। এরপর তারা আলাদা আলাদা প্রার্থীর পক্ষে যুক্ততর্ক শেষে যার যার অবস্থান জানায়। যে ক্যান্ডিডেটের পক্ষে বেশি মানুষ বক্তব্য দেয়, ডেলিগেটসরা সেই কেন্ডিডেটের পক্ষেই রায়’ হয়েছে বলে ধরে নেন।

Texas সহ বাকিগুলো Hybrid বা mixed primary সিস্টেম। পলিটিক্যাল পার্টিগুলো primary সিস্টেম ইচ্ছামত চেঞ্জ করতে পারে। নিজেদের সুবিধামত।

মূল কথা হল, যেভাবেই প্রাইমারি নির্বাচন সম্পন্ন হোক না কেনো, ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে মোটামুটি মে-জুন পর্যন্ত গোটা আমেরিকাজুড়ে primary এবং caucus চলতে থাকে। Iowa এবং নিউ হ্যাম্পশ্যায়ার সবার আগে প্রাইমারি শেষ করে। আবার সুপার মঙ্গলবারে অনেকগুলো স্টেট একসাথে প্রাইমারি আয়োজন করে। কেউ আবার পরে করে। হ্যানত্যান।

মোট কথা হল, জটিল একটা প্রক্রিয়া। ফাইনাল আউটকাম হল বিভিন্ন স্টেটের ডেলিগেটসরা নিজনিজ স্টেটের জনতা ও পার্টি সদস্যদের আস্থা কোনপ্রার্থীর প্রতি সবচেয়ে বেশি আছে, সেই ব্যাপারে একটা ধারণা লাভ করেন। কিন্তু ফাইনাল ভোট তারাই দেবেন।
তো তারা এবার যাবেন নিজ দলের ন্যাশন্যাল কনভেনশনে। বিশাল আয়োজন হবে। সেখানে ডেলিগেটসরা ভোট দেবে নিজ দলের প্রেসিডেন্ট নমিনেশন পদপার্থীদের। তারা যাকে ইচ্ছা ভোট দিতে পারে। সেইসাথে আরও থাকবে super delegates… সুপার ডেলিগেটরা হল উক্ত দল থেকে নির্বাচিত সাবেক প্রেসিডেন্ট, উক্ত দলের গন্যমান্য ব্যক্তি। বড়বড় সাবেক নেতা... অর্থাৎ ওই দলের হেভিওয়েটরা। যেমন ডেমোক্রেট দলের বিল ক্লিনটন, আল গোর,
বা রিপাবলিকান দলের জেব বুশের বড় ভাই জর্জ বুশ ও বাপ সিনিয়র বুশ... কন্ডোলিজা রাইস, ডিক চেনি ... এই টাইপের মানুষজন।
এরা যাকে ইচ্ছা ভোট দিতে পারবে। যাকে ইচ্ছা। সে টেলিভিশন পোলে এগিয়ে থাকলো কি পিছিয়ে থাকলো, এটা ম্যাটার না।
অর্থাৎ এই ন্যাশন্যাল কনভেনশেনটাই আসল। এখানে যে ডেলিগেটস’দের ভোটে জিতবে, সেইই আসল নমিনেশনটা পাবে।

এরপর সে জেনারেল ইলেকশনে লড়বে।


তো এতোক্ষণ ধরে আলোচনায় একটা হালকা ধারণা দেবার চেষ্টা করলাম মার্কিন নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে। সমগ্র ব্যাপারস্যাপারে অনেক জটিলতা আছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফাউন্ডিং ফাদার হিসেবে যাদের বিবেচনা করা হয়, তাদের ভেতর যেমন বিখ্যাত বিজ্ঞানী ছিলেন, তেমন পলিটিসিয়ান ছিলেন, ধুর্ত ব্যবসায়ী ছিলেন, অর্থাৎ বিভিন্ন ধরণের মানুষই ছিলেন।
অনেক ব্রেন খাটিয়ে তারা এসব সিস্টেম দাড় করিয়েছেন।
সময়ের সাথেসাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিস্টেমে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ১৩ টি স্টেট নিয়ে শুরু হয়ে এখন আছে ৫০ টা স্টেট এবং Washington DC
সমগ্র পলিটিক্যাল সিস্টেমটি যথেস্ট চিন্তাভাবনা করেই তৈরি করা হয়েছিলো।
ক্ষুদ্ররাষ্ট্রগুলো যাতে হীনমন্যতায় না ভোগে, বড় স্টেটগুলো যাতে বেশি প্রায়োরিটি না পায়, ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোরও যাতে ক্ষমতা থাকে, এসব কিছু হিসেবে রাখা হয়েছে।
ক্ষুদ্র আরকানসাস থেকে উঠে আসা বিল ক্লিনটন কিন্তু আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ক্ষমতাধর পলিটিসিয়ান হয়েছেন। ঠিক তেমনই Hawaii থেকে এসেও কেউ একজন নিজ যোগ্যতায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতেই পারেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হবার জন্য কাউকে নিউইয়র্ক বা ওয়াশিংটন বা টেক্সাস বা ক্যালিফোর্নিয়াতে জন্ম নিতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। এটা হয়েছে সিস্টেমের কারণে।

গনতন্ত্র মানেই কেবল মেজোরিটির শাসন না। চেক এন্ড ব্যালান্স জরুরি। বড় স্টেটগুলোর ৮০% আমেরিকানের সমর্থন নিয়েও মাত্র ১০ টি স্টেট জিতবেন। আবার ছোট ৩৯ টি স্টেট জিতে হয়ে যেতে পারেন প্রেসিডেন্ট। একারণেই আমেরিকার রাজনীতি অন্য অনেক দেশ থেকে ব্যক্তিক্রম।

আমেরিকাতে রিপাবলিকান আর ডেমোক্রেট, এই দুই দলের শাসনই ঘুরে ফিরে চলে। অন্যঅনেক দেশের সাথে মার্কিন রাজনীতির পার্থক্যটা হল, এখানে দল দুইটা ইন্সটিটিউশনের মত। মার্কো রুবিও বা বারাক ওবামার মত লোকেরা একারণে এসব ইন্সটিটিউশনের অংশ হয়ে যায় এবং মেধার জোরে ক্ষমতার চুড়ায় ওঠে। আবার সময় হয়ে গেলে ক্ষমতা ছেড়ে চলেও যায়। একক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রনে এই দুইটি দল যাবে না। একক ব্যক্তির আদর্শের উপর ভর করেও এই দুইটা দল চলে না।
আপনি মার্কো রুবিওর মত ইমিগ্রেন্টের ছেলে হলেও এই পলিটিক্যাল সিস্টেমে ঢুকে মেধার জোরে অনেক উপরে উঠতে পারবেন। হাওয়াই বা আলাস্কার গভর্নরের পক্ষেও এখানে সম্ভব ফেডারেল সরকারের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাথে তর্ক করা, তার কথার বিরুদ্ধে যাওয়া। তাকে চ্যালেঞ্জ করার।
এটাই হল সিস্টেম।

বারাক ওবামা তার শপথ অনুষ্ঠানে একটা সুন্দর কথা বলেছিলেন। গনতন্ত্র মানে কেবল ভোট দিয়ে একজনকে নির্বাচিত করার পদ্ধতি নয়। গনতন্ত্র মানে একটা প্রসেস। একটা ইনিস্টিউশন। একটা শাসন কাঠামো। আমেরিকার গনতন্ত্রের সৌন্দর্য এটা নয় যে একজন কিভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হল। বরং মার্কিন গনতন্ত্রের সৌন্দর্য হল কিভাবে একজন তার মেয়াদ শেষে ক্ষমতা ছেড়ে চলে যায়। রাইজিং টু পাওয়ারের চেয়েও এখানে ট্রাঞ্জিশন অফ পাওয়ারটাই গুরুত্বপুর্ন।

সময়ের সাথে সাথে আমেরিকান পলিটিক্সে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আর দিনশেষে এসব সিস্টেম কিন্ত মানুষই বানিয়েছে। মানুষই পরিচালনা করে। সুতরাং একপাল খারাপ দুর্বিত্তের হাতে আপনি যত ভালো সিস্টেমই তুলে দেন, সেটাকে খারাপ করে ফেলতে এরা সময় নেবে না।
মার্কিন জনগনের রায়’কে পাশ কাটানোর বেশকিছু উপায় আবার এই সিস্টেমের ভেতরই লুকিয়ে আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এখন পর্যন্ত মার্কিন কংগ্রেস কোনোদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। অথচ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার দেখুন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই আমেরিকা একের পর এক যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে। যুদ্ধ করতেছে আজও। অথচ কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার এখতিয়ার কেবল মার্কিন কংগ্রেসেরই ছিলো। আছে।
আসলে, সবকিছুতেই একটা পেছনের দরজা থাকে। কংগ্রেসের পাস করা কোনো আইনকে যেমন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভেটো দিয়ে বাতিল করতে পারে, আবার নিজেই এক্সিকিউটিভ অর্ডার জারি করে একটা দেশে বোমা হামলা চালাতে পারে। মার্কিন জনগনের ম্যান্ডেট নেবার খুব একটা দরকার তার হয় না।
যেকোনো সিস্টেমই ভালো ফলাফল নিয়ে আসে, যদি সেটা ভালো মানুষের হাতে থাকে। আর মন্দ মানুষ একটা ভালো সিস্টেমের ভেতরে থেকেও হাজারটা অন্যায় করতে পারে।

এখন মার্কিন নির্বাচন চলতেছে। একারণে এতোবড় পোস্টটি লিখলাম।
যারা আগে থেকেই জানতেন, তাদের জন্য নয়। তাদের দরকারও নেই। আমার ফেসবুকে এমন অনেকেই আছে যারা হয়ত বিষয়গুলো জানে না। তাদেরকে হালকা আইডিয়া দেয়াটাই ছিলো আমার উদ্দেশ্য।

( দয়া করে কপি করবেন না। ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন। অনুমতি নেবার দরকার নেই)
ধন্যবাদ।





Read More »