Thursday, September 20, 2018

Columbian Exchange




ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত ইউরোপ বা এশিয়ার বা আফ্রিকার মানুষ ভুট্টা কি জিনিস,
খায় নাকি মাথায় দেয় !!
সেটা জানতো না...

ভুট্টা ছিল আমেরিকা উপমহাদেশের আদি অধিবাসীদের অন্যতম প্রধান খাদ্য...
কেবল ভুট্টা নয়...
সুন্দর সুন্দর লাল লাল টমেটো খেতে কত ভালোই না লাগে... এই টমেটো আমেরিকা উপমহাদেশ (উত্তর+দক্ষিন আমেরিকা) আবিষ্কারের পর এসেছে...
প্রথমে লাল লাল টমেটো দেখে ইউরোপিয়ানরা ভেবেছিলো, হয়ত বিষাক্ত কিছু হবে...

যারা 'বাদশাহনামদার' পড়েছেন, তারা মরিচের ব্যাপারটা জানেন। কাচা মরিচও এসেছে আমেরিকা উপমহাদেশ থেকে। মোঘল সম্রাট বাবর বা মঙ্গল সম্রাট চেঙ্গিস খানও মরিচ খেতে পারেননি। তাদের রান্নাবান্না হইতো গোল মরিচ দিয়ে...

আলু... এই আলু না হলে আমাদের এখন চলেই না। অথচ এই আলু ছিল ইনকা'দের খাবার... দক্ষিন আমেরিকা থেকে কেবল কচুরি পানা নয়, আলুও এসেছে...
পিন্যাট, মিষ্টি কুমড়া, সিম (সিমের বিচি অনেক সুস্বাদু) ... এমনকি চলকেটের cacao beans ...
এসব আমরা পেয়েছি আমেরিকা আবিষ্কারের পর...
"আমরা" বলতে বোঝাচ্ছি, Old World অর্থাৎ ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা, এসব মহাদেশের মানুষদের...

ওদিকে আমেরিকা উপমহাদেশের কোথাও তখনও গরু, ছাগল, ঘোড়া, শুকর, ভেড়া, এসবকিছু ডমেস্টিকেশন করা হয়নি...
অবশ্য হবে কিভাবে...
আমেরিকাতে ঘোড়া ছিল না। গাধা ছিল না। ছিল বাইসন... বাইসন আবার আটল্যান্টিকের এপাশে পাওয়া যেত না।
ছিল না গরু... ছিল না ছাগল...
মুরগী কিছু ছিল.. কিছু ফসিল ইদানিং পাওয়া গেছে... . কিন্তু মুরগী পালন হইতো না।
আমেরিকা উপমহাদেশের নাম্বার ওয়ান গৃহপালিত পশু ছিল Llama
লামা অনেকটা ছাগলের মতই...
লামা'র পিঠে চড়া যায় না,
লামা হালও টানতে পারে না।
ইউরোপ এশিয়ার চাষাবাদের সাথে এজন্য আদি আমেরিকার মানুষের চাষাবাদের পদ্ধতিতে আকাশ পাতাল ব্যবধান ছিল...

আমেরিকা আবিষ্কারের পর একটা দীর্ঘ সময় ইউরোপিয়ানরা কাঠের চাহিদা মিটিয়েছে আমেরিকা উপমহাদেশের গাছ পালা দিয়ে।
কাঠ তখন ছিল ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি।

আমাদের সিভিলাইজেশনের সাথে আমেরিকা মহাদেশের সিভিলাইজেশনের কার্যত আগে কোনো কানেকশন ছিল না। বা ছিল বলে জানা নেই।
ওদের সভ্যতা স্বতন্ত্রভাবেই গড়ে উঠেছিল।
আর আগেই বললাম, আমেরিকা মহাদেশে ঘোড়া ডমেস্টিকেশন করা হয়নি তখনও।
সুতরাং পরিবহন ব্যবস্থাতে ওরা ছিল অনেক পিছিয়ে। আর একারণে খোদ উত্তর আমেরিকার সিভিলাইজেশনগুলোর সাথে দক্ষিন আমেরিকার অনেক সিভিলাইজেশনের ভেতর কানেকশনও ছিল একেবারেই কম...

ইউরোপিয়ানরা আমেরিকাতে গম চাষাবাদ শুরু করে। আজ গাঁজা চাষ হয় দক্ষিন আমেরিকার সর্বত্র... এই গাঞ্জা চাষ আমেরিকাতে শুরু করেছিল ইউরোপিয়ানরাই।
ওদিকে আমেরিকা থেকে ইউরোপ পেয়েছিল টোবাকো...
প্রযুক্তি ও জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নত ইউরোপিয়ানরা সহজেই পেরেছিলো নেটিভদের স্লেভ বানিয়ে টোবাকো, আখ আর তুলার ক্ষেতে খাটাতে।

ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা যে Quinine ব্যবহার করা হয়, সেটা প্রথম পাওয়া গিয়েছিল cinchona গাছ থেকে। এটা গাছ আমেরিকাতে পাওয়া যেত।
ইন্টারেস্টিং বিষয় হল, রোগের মেডিসিন আটল্যান্টিকের ওপাড়ে ছিল। আর রোগটা ছিল কিন্তু এপাড়ে।
রোগের মেডিসিনের এক্সচেঞ্জ যেমন হয়েছিল, রোগেরও তো হয়েছিল। আর আদি আমেরিকানদের কাছে ম্যালেরিয়া রোগের কোনো চিকিৎসা ছিল না। প্রচুর মানুষ মরেছিল ম্যালিরিয়া সহ নানান রোগ ভুগে।
তবে অসুখ বিসুখের কথা যখন আসলো, তখন বলি সিফিলিসের কথা। এই ভয়াবহ রোগটা কলম্বিয়ান এক্সেঞ্জের আগে ইউরোপিয়ানদের কাছে অপরিচিত ছিল। এই রোগ এসেছিলো আমেরিকা থেকে।

আজ যে টার্কি (মোরগের মত) আমাদের দেশেও পালন করা হচ্ছে, এই টার্কি কিন্তু তুরস্ক থেকে নয়, বরং এই টার্কি এসেছিল আমেরিকা থেকে।
মেক্সিকানরা প্রথম টার্কি ডমেস্টিকেট করেছিল।

প্লেগ, চিকেনপক্স, ম্যালেরিয়া, কলেরা, এসব ভয়াবহ রোগ বালায়ের তেমন কোনো চিকিৎসা আদি আমেরিকানরা জানতো না। এসব রোগ তাদের ছিল না। ইউরোপিয়ানরা আমেরিকায় গেলে এসব রোগ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আদি আমেরিকানদের একটা বড় অংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল এসব রোগ ব্যাধি মহামারিতে।

reference:
https://en.wikipedia.org/wiki/Columbian_exchange
https://newsmaven.io/indiancountrytoday/archive/10-indigenous-foods-thought-to-be-european-uTmaPLGaLUa33WWgvgmSVQ/
Read More »

Tuesday, September 18, 2018

নর্থ কোরিয়ার স্পাই Ok Hwa


মহিলার নাম Kim Hyon-hui (aka "Ok Hwa")


ছবিতে তার মুখে ব্যান্ডেজ টাইপের কিছু একটা দেখতেছেন... শুনে অবাক হবেন হয়ত, তার মুখের ভেতর ছোট একটা ডিভাইজ ভরে এরপর মুখ শক্ত করে বেধে রাখা হয়েছে, যাতে সে নিজের জিভ চিবিয়ে রক্তক্ষরণে আত্মহত্যা করতে না পারে !

মহিলা নর্থ কোরিয়ান স্পাই এজেন্সি SSD -এর এজেন্ট... ১৯৭৩ সালে নর্থ কোরিয়ান এই এজেন্সি প্রতিষ্ঠিত হয় কেজিবি'র হুবহু অনুকরণে... এবং প্রকাশ্য সহায়তায়...

শুরু থেকেই এই এজেন্সি নানাবিধ কুখ্যাত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। যেমন নানান সময়ে প্রায় এক ডজনের উপর জাপানি নাগরিক কিডন্যাপ করেছিলো জাস্ট নিজেদের স্পাইদের জাপানি শেখানোর জন্য !

এটা জাস্ট একটা উদাহরণ... এমন আরো অনেক কর্মকান্ড আছে।

তো ১৯৮৮ সালের কথা...
১৯৮৮ সালের সামার অলিম্পিক আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছিলো দক্ষিণ কোরিয়া।
স্বাভাবিকভাবেই নর্থ কোরিয়ার ইগোতে লাগলো ব্যাপারটা। সাউথ কোরিয়াতে কিছুতেই অলিম্পিক আয়োজন করতে দেয়া যাবে না। যদি করতেই হয়, ইউনিফাইড কোরিয়াতে আয়োজন করতে হবে!
অর্থাৎ মামার বাড়ির আবদার...

তো এই অলিম্পিক ঠেকাতে হবে।
এখনকার নর্থ কোরিয়ার লিডার কিম জন উনের বাপ কিম জং লি তখন নর্থ কোরিয়ান সিক্রেট সার্ভিস ডিভিশনের দায়িত্ব। আর তার বাবা কিম এল স্যান তখনও নর্থ কোরিয়ার সুপ্রিম লিডার।

অর্ডার এলো, সাউথ কোরিয়াকে ঝুকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে। তাহলেই নিরাপত্তার অনুহাতে অলিম্পিক বয়কট করবে অধিকাংশ দেশ...

তো এই মহিলা এবং তার আরেকজন পুরুষ সহযোগীর উপর দায়িত্ব এলো, সাউথ কোরিয়া গামী একটা কোরিয়ান বিমান উড়িয়ে দেবার। ফলাফল, বাহরাইন থেকে সিউল যাবার পথে Korean Air Flight 858 বিমান বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হল। ১১৫ জন মারা গেল।

এই মহিলা এবং তার পুরুষ সহযোগি ফেক জাপানি পাসপোর্ট নিয়ে ঘুরতেন। ফেক আইডেন্টি তো ছিলোই। যারা স্পাই এজেন্সির কার্যক্রম সম্পর্কে হালকাপাতলা ধারণা রাখেন, তাদের এসব না বললেও চলবে।

প্রথমে গেলেন সার্বিয়া। সেখানে নিযুক্ত নর্থ কোরিয়ান স্পাইদের কাছ থেকে পেলেন বোমা... একটা রেডিওর ভেতর এই বোমা লুকানো ছিল। এরপর সেই বোমা নিয়ে বাহরাইন এলেন। বাহরাইন থেকে সিউলগামী KAF 858 বিমানের এক যাত্রীর সাথে সক্ষতা করে এরপর কোনোএক উপায়ে সেই রেডিও ঢুকিয়ে দিলেন লাগেজে। হয়ত কাউকে কনভিন্স করে বলেছিলো, কোনো আত্মীয় স্বজনের জন্য এটা ক্যারি করে নিয়ে যেতে।
ব্যস, এরপর বিমান আকাশে ওঠা মাত্র সবশেষ...

যাই হোক, ঘটনা ঘটানোর পর বাহরাইন থেকে মহিলা পালাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। বাহরাইন পুলিশ মহিলাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের সময় উনার সাথে যে পুরুষ সহযোগী ছিল, সে সাইনাইড খেয়ে আত্মহত্যা করে। সিগারেটের ভেতর সাইনাইড লুকানো ছিল।
আর এই মহিলা সাইনাইড ঠিকমত গিলতে পারেননি। পুলিশ বাধা দিয়েছিলো। এরপর মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে ট্রিটমেন্ট করা হয়। এবং দক্ষিন কোরিয়ান এজেন্সির লোকেরাও ততক্ষণে হাজির। মহিলাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় সাউথ কোরিয়াতে।
ছবিগুলো সাউথ কোরিয়াতে নিয়ে আসার সময় তোলা।
মহিলাকে ঘিরে আছে সাউথ কোরিয়ার এজেন্টরা।


মহিলার বিচার হয়। বিচারে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
যদিও সে বছরই দক্ষিন কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট তাকে ক্ষমা করে দেন। দিয়ে বলেন, 'Kim was merely a brainwashed victim of the real culprit, the North Korean government."

মহিলা পরবর্তীতে একটা বই লিখেছিলেন। নিজের আত্মজীবনী, নাম The Tears of My Soul
এই বই থেকে বিক্রি হওয়া সব টাকা পয়সা দান করেছিলেন ১১৫ জন নিহতের পরিবারগুলোকে।

মহিলার কেস যে দক্ষিন কোরিয়ান এজেন্ট হ্যান্ডেল করেছিলেন, তাকেই তিনি পরে বিয়ে করেন !
এরপর দুইটা সন্তানও হয়েছে তাদের।

শুরুতে বলেছিলেন, প্রায় ১৩ জন জাপানি নাগরিক কিডন্যাপ করেছিলো নর্থ কোরিয়ার গোয়েন্দা বাহিনী... ১৯৭৩ থেকে ৮৩ সালের মধ্যে।
এদের একজন ছিলেন Yaeko Taguchi
ছবির এই মহিলা যখন গোয়েন্দা ট্রেনিং প্রোগ্রামে নাম লিখান, তখন উনার প্রশিক্ষকদের ভেতর একজন ছিলেন Yaeko Taguchi

মাঝেমাঝে দুনিয়ার অনেককিছু শ্রেফ সিনেমার মত। বা সিনেমার চেয়েও বেশি সিনেম্যাটিক।

Read More »

Friday, September 14, 2018

Shin Sang-ok and Choi Eun-hee


সাউথ কোরিয়ান মুভি যারা দ্যাখেন, তারা ভালো করেই জানেন সাউথ কোরিয়ান মুভির কোয়ালিটি সম্পর্কে...

তো ছবিতে যে মহিলাকে দেখছেন, উনার নাম Shin Sang-ok ,

ষাট আর সত্তরের দশকে ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে নামকরা নায়িকা...

আর যে ভদ্রলোক'কে দেখছেন, উনার নাম Choi Eun-hee
ভদ্রমহিলার হাজবেন্ড, এবং নামকরা পরিচালক...


তো কোরিয়ান যুদ্ধের পর বিভক্ত দুই কোরিয়ার যাত্রা ছিল বিপরীতমুখী... দক্ষিণ কোরিয়া যখন মার্কিন ব্লকের ছায়াতলে উন্নত থেকে আরো উন্নত হচ্ছে, উত্তর কোরিয়া তখন এক প্যারানয়েড রিজিমের ক্ষপড়ে পড়ে মাফিয়া স্টেটে পরিনত হয়েছে।

বর্তমান নর্থ কোরিয়ান সুপ্রিম লিডার কিম জন উনের বাবা কিম জন লি তখন নর্থ কোরিয়ার প্রোপাগান্ডা মিনিস্টার, এবং সেইসাথে স্পাই এজেন্সির দায়িত্বে।

ওদিকে তার বাবা অর্থাৎ এখনকার নর্থ কোরিয়ান লিডারের দাদা কিম এল স্যান তখন নর্থ কোরিয়ার সুপ্রিম লিডার...


সালটা তখন ১৯৭৮...

ঘটনার পটভুমি হল, নর্থ কোরিয়ান লিডার কিম জন ইল ছিলেন সাইকোপ্যাথ। প্যারানয়েড। (তার ছেলেও বাপের গুনাবলি পেয়েছে)

তো কিম জন ইল ছোটবেলা নিজের ছোটভাইকে মেরে ফেলেছিলেন সুইমিংপুলে চুবিয়ে...
ছোটবেলা থেকে সুপ্রিম লিডারের ছেলে হবার কারণে জীবনে কেউ তাকে "না" বলেনি।
ফলাফল, ছিলেন বদরাগী... বেয়াদপ... স্পয়েল্ড চাইল্ড।
নর্থ কোরিয়াতে কোনো পশ্চিমা মুভি সার্কুলেট করা ছিল অপরাধ। কিন্তু কিম জন ইল ঠিকই পশ্চিমামুভি দেখতেন। হলিউড, বলিউড, দক্ষিন কোরিয়ান মুভি গিলতেন। এলভিস প্রিসলি হবার চেষ্টা ছিল তার।
এজন্য তার বাপ তাকে বয়সকালে প্রোপাগান্ডা মিনিস্টার বানিয়ে দেন। :P অর্থাৎ, নে... এবার যত পারিস, মুভি বানা।
তবে কিমের মাথায় ভালোই শয়তানি বুদ্ধি ছিল। আজ আমরা কিম এল স্যান বা কিম জন ইলের যে কাল্ট অফ পার্সোনালিটি দেখি, সেটার রুপকার ছিল এই কিম জন ইল...
নিজের বাপকে রীতিমত ভগবান, আর নিজেকে ভগবানের অবতার বানিয়ে ছেড়েছিলেন কিম...
অর্থাৎ প্রোপাগান্ডা মিনিস্টার হিসেবে গোসেপ গর্বলসের চেয়ে কোনো অংশে কম সফল নন তিনি।


কিন্তু একটা দেশে ট্যালেন্ট জন্মাতে গেলে তো চিন্তার স্বাধীণতা, জ্ঞান অর্জনের স্বাধীনতা দিতে হয়। নর্থ কোরিয়াতে সেটা ছিল না। এজন্য নর্থ কোরিয়াতে দক্ষিন কোরিয়ার মত ফ্লিম ডিরেক্টর বা এক্টরের জন্মও হত না ওভাবে।
ফলাফল, সাউথ কোরিয়ান ফ্লিম ইন্ড্রাস্ট্রি যেখানে সারা দুনিয়াতে নাম কামাচ্ছিলো, সেখানে নর্থ কোরিয়ান ফ্লিম ইন্ড্রাস্ট্রি অংকুরেই বিনষ্ট হবার দশা। কিছু প্রোপাগান্ডা মুভি বানানো ছাড়া তেমন কোনো কাজই ছিল না।

তো নিজের যখন নেই, তাহলে যার আছে, তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে আসতে হবে,
এই ছিল কিম জন ইলের ধান্দা।
সাউথ কোরিয়ান নামকরা নায়িকা Shin Sang-ok কে পছন্দ করতেন কিম। উনি ছিলেন কিমের ক্রাশ।

ফলাফল, একদিন সাউথ কোরিয়ান গোয়েন্দা বাহিনী লাগিয়ে হংকং থেকে রীতিমত কিডন্যাপ করে ভদ্রমহিলাকে উত্তর কোরিয়াতে নিয়ে যাওয়া হল।
হংকং এর এক সমুদ্র সৈকত থেকে কিডন্যাপ করা হয়েছিল। কিডন্যাপারা এসেছিলো সমুদ্র হয়ে। স্পিডবোর্ডে। এরপর সেই স্পিডবোর্ডে করেই তাকে সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সোজা নর্থ কোরিয়াতে।
:P কিছুদিন পর ভদ্রমহিলার স্বামী অর্থাৎ বিখ্যাত পরিচালক Choi Eun-hee কে কিডন্যাপ করা হল একই কায়দায়।

ভদ্রমহিলাকে নিয়ে যাওয়া হয় কিম জন ইলের কাছে। সেখানে কেটে যায় তিনটি বছর।
ওদিকে ভদ্রমহিলার হাজবেন্ডকে নিয়ে যাওয়া হয় জেলখানায়। সেখানে তিন বছর ধরে উনার উপর চলে নির্যাতন। তিন বছর নির্যাতন সহ্য করে অবশেষে তিনি রাজি হন নর্থ কোরিয়ার জন্য ফ্লিম বানাতে :P
তখন তাকে মুক্তি দিয়ে কিম জন ইলের প্রাসাদে নেয়া হয়। পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় সাইকোপ্যাথ কিম জন ইলের সাথে। সেখানে তিন বছর পর প্রথমবারের মত তিনি নিজের স্ত্রীর দেখা পান। কিম জন ইল তাদের আবার বিয়ের ব্যবস্থা করেন :P

যাই হোক, এরপর তারা স্বামী স্ত্রী মিলে কিম জন ইলের জন্য মুভি বানিয়েছিলেন। কিছু প্রোপাগান্ডা মুভি বানানোর পর ১৯৮৬ সালে সুযোগ বুঝে ভিয়েনাতে আয়োজিত এক ফ্লিম ফেস্টিভালে যোগ দিতে এসে নর্থ কোরিয়ান প্রতিনিধি দলের সাথে আগত এই দপ্ততি পালিয়ে যান। আশ্রয় নেন ভিয়েনার মার্কিন দুতাবাসে।

যাই হোক, কেটে গেছে বহুদিন। কিম এল স্যান, কিম জন ইল... এরা দুজনই মারা গিয়েছে।
কিম জন ইলের ছেলে কিম জন উন এখন ক্ষমতায়।
সাউথ কোরিয়ান মুভি আজ গোটা দুনিয়াতে জনপ্রিয়।
ওদিকে নর্থ কোরিয়ান কোনো মুভির নামও কেউ শোনে না।
Read More »

Saturday, September 1, 2018

বাব ও বাহাই


আজ বলবো ‘বাহাই’দের কথা…
প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ বাংলাদেশে Baha'i Faith অনুসরণ করে।
কাকরাইল থেকে শান্তিনগর যাবার পথে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ। এর ঠিক পাশেই বাংলাদেশের বাহাই সেন্টার।

বাহাই ধর্ম তুলনামূলকভাবে নতুন…
বাহাই বিশ্বাস মতে, বাহাউল্লাহ ইশ্বরের প্রেরিতপুরুষ।



ধর্মের মূল শিক্ষা যদি একেবারে সংক্ষেপে বলি, তাহলে অনেকটা এমন…
স্রষ্টা যুগে যুগে মানবজাতিকে দীক্ষা দেবার জন্য দূত পাঠিয়েছেন। এরা মানব জাতির শিক্ষক। আব্রাহামিক ধর্মের নবী থেকে শুরু করে কৃষ্ণ, বুদ্ধ, জুরাস্ট্রিয়ার সহ যত প্রেরিত পুরুষ এসেছেন, এদেরকে ইশ্বর পাঠিয়েছিলেন মানব জাতির জন্য শিক্ষকরুপে।
মানুষ যাতে স্পিরিচুয়ালি শিক্ষা লাভ করে নিজেদের এবং সমাজের উন্নতিসাধণ করতে পারে।
বাহাউল্লাহ’র মতে,
সকল ধর্মগুলোই একই ইশ্বরের বন্দনা করে, এবং এগুলোর ভেতর ইন্টার কানেকশন আছে। সকল ধর্মের ভেতরই একটা ইউনিফাইন ভিশন আছে।
One God, One Universe, One Human race…

ব্যাপারটা আরেকটু সহজভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলে অনেকটা পাঠশালার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। অর্থাৎ ক্লাস টেনে পড়া ছাত্রকে যা বোঝানো সম্ভব, ক্লাস টু’তে পড়া বাচ্চাকে সেটা বোঝানো সম্ভব না। আবার যে শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে জটিল সমীকরণ সহজে বোঝাতে পারেন, তিনি হয়ত উনার বাচ্চাকে অ আ ক খ গ বোঝাতে হিমশিম খেয়ে যাবেন। ক্লাস ওয়ানের বাচ্চা পড়ানো কঠিন কাজ। আবার হাই স্কুলের ছাত্রকে বীজগনিত বোঝানো আরেকধরণের কঠিন কাজ। দুইটা কাজই দুইরকম কঠিন।
আলাদা আলাদা ক্লাসের আলাদা আলাদা শিক্ষক বা এক্সপার্ট লাগে…
একটা বিষয় ক্লাস সেভেনের ছাত্রকে বোঝানোর জন্য যে ধরণের এপ্রোচ নিতে হয়, সেই একই বিষয় কলেজ পড়ুয়া ছাত্রকে বোঝাতে ভিন্ন এপ্রোচ নিতে হয়।
প্রেরিত পুরুষদের রোল এই শিক্ষকদের মতই…
সবাই আলাদা আলাদা ক্লাসের শিক্ষক…
তবে লক্ষ উদ্দেশ্য সবারই এক…
মানব কল্যান।

বাহাউল্লাহ মানব জাতির ইতিহাসকে এভাবেই দেখেছেন। অর্থাৎ আলাদা আলাদা সময়ে পরিস্থিতির প্রয়োজনে আলাদা আলাদা শিক্ষক/ নবী / প্রেরিতপুরুষ / অবদারের আগমন হয়েছে বা স্রষ্টার তরফ থেকে পাঠানো হয়েছে।
বাহাই বিশ্বাস অনুসারে,
These different religions are the chapters of a continuous story.
They are not in conflict with each other. There are different social teaching or version because of the needs and requirements of certain times of which those message were delivered,
but at their core, they are in complete harmony with each other.

আচ্ছা… এবার বাহাউল্লাহ’র জীবনী সংক্ষেপে বলা যাক।
তবে উনার কথা বলার আগে সংক্ষেপে বলতে হবে সাইয়িদ আলী মোহাম্মদ সম্পর্কে।
জিসাসের আগে যেমন সাধু John the Baptist এসেছিলেন ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে, জিসুর আগমনের,
সাইয়িদ আলী মোহাম্মদ রোল বাহাই বিশ্বাসীদের কাছে কিছুটা একই রকম।
সাইয়িদ আলী মোহাম্মদের আরেক নাম বাব (bab)
ইরানের সিরাজ প্রদেশে ১৮১৯ সালে জন্ম। মেধাবি, তরুণ ব্যবসায়ী ছিলেন। ইরানের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ভেতর বকধার্মিকতা, ধর্মের প্রতি উদাসীনতা, দূর্বল ইমান, দুর্বল বিশ্বাস, হিপোক্রেসি, এসব লক্ষ করেছিলেন তিনি অনেক তরুন বয়সে।
ধর্মকর্মের প্রতি আগ্রহ ছিল। প্রচুর পড়ালিখা করতেন ধর্মকর্ম নিয়ে।
সমাজ সংস্কারের ইচ্ছা হল মনে।

ইরানের মানুষ অধিকাংশ শিয়া মুসলিম।
শিয়াদের ভেতর বারোজন ইমামের ধারণা প্রচলিত। সর্বশেষ ইমান হলেন ইমাম মাহাদি।
শিয়া বিশ্বাস হল, ইমাম মাহাদি তার প্রতিনিধির মাধ্যমে শিষ্যদের সাথে যোগাযোগ রাখেন।
শেষ প্রতিনিধি মারা গেলে আর ইমাম মাহাদীর সাথে কানেকশন থাকবে না দুনিয়ায় জীবিত শিয়া শিষ্যদের।
অর্থাৎ গায়েবি কানেকশন অফ হয়ে যাবে।
এরপর কেয়ামতের আগে উনি এসে ধর্মের পুনরুদ্ধার করবেন।

তো সাইয়িদ আলী মোহাম্মদ এবার নিজেকে ইমাম মাহাদি হিসেবে ঘোষনা দিলেন।
এপ্রসঙ্গে বলে রাখি,
নানান সময়ে নানান ব্যক্তির নিজেকে ইমাম মাহাদি হিসেবে দাবি করার ঘটনা নতুন নয়। ইতিহাসে এমন বেশকিছু নজির আছে।
যেমন আব্বাসীয় খেলাফতের সময় ইয়াহিয়া ইবনে উমর ছিলেন আলী বংশদ্ভুত একজন বিদ্রোহী ইমাম, যিনি আব্বাসিয়দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। বিদ্রোহটি সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
জায়েদি শিয়ারা ‘ইয়াহিয়া ইবনে উমর’কে ইমাম মাহদী বলে প্রচার করা শুরু করেছিল। অপেক্ষাকৃত দরীদ্র, বঞ্চিত ও শোষিত মুসলিমদের ভেতর মাহদীর আবির্ভাবের প্রত্যাশাটা ছিল প্রবল।
নবীর বংশ থেকে একজন মাহদীর আবির্ভাব ঘটবে যিনি সমগ্র পৃথিবীতে ন্যায় বিচার ও মানুষের মাঝ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠা করবেন। ইয়াহিয়া ইবনে উমর ৮৬৫ সালে আব্বাসিয় সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে নিহত হন।
এরপর তার অনুসারীরা প্রচার করতে থাকেন যে তিনি ‘গায়েব’ হয়ে গেছেন এবং কেয়ামতের পূর্বে তিনি আবার হাজির হবেন।
এই গায়েব তত্ত্বের সুযোগ নিয়েই চার বছর পর আলী বিন মুহাম্মদ নামের আরেক ইমাম নিজেকে ইয়াহিয়ার পুনরাবির্ভাব বলে দাবি করেছিলেন।

প্রতিষ্ঠিত খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা, পরাজিত ও নিহত হওয়া এবং তারপর ‘গায়েব হয়ে যাওয়া ও মাহদী হিসাবে পুনরাবির্ভাবে’র তত্ত্ব প্রচার, এই ধরণের ঘটনা ইমাম আলীর তৃতীয় পুত্র ইবনে আল হানাফিয়া থেকে শুরু হয়ে নানান সময়ে ঘটেছে।
ভারতে মুহাম্মদ জৌনপুরি (১৪৪৩-১৫০৫) নিজেকে মাহদী ঘোষনা করেন। তার অনুসারীরা মাহদিয়া সম্প্রদায় নামে ভারতিয় উপমহাদেশে এখনো টিকে আছে।
মরক্কোর বারবার নেতা ইবনে তুমরাত নিজেকে মহানবীর বংশধর ও ইমাম মাহদী দাবি করে ছিলেন। তার অনুসারীরা স্পেনে আলমোহাদ খেলাফত প্রতিষ্ঠা করেন।
সুদানের সুফিবাদী ধর্মীয় নেতা মুহাম্মদ আহমেদ (১৮৪৪-১৮৮৫) নিজেকে ইমাম মাহদী ঘোষনা করেন, তার অনুসারীরা যথাক্রমে তুর্কি খেলাফত এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিল।
ব্রিটিশ আমলে ভারতিয় উপমহাদেশে মির্জা গোলাম আহমেদ (১৮৩৫-১৯০৮) নিজেকে মাহদী ঘোষনা করেন। তার অনুসারীরা ‘আহমেদিয়া মুসলিম’ হিসাবে পরিচিত।

যাই হোক, আমরা ফিরে যাচ্ছি মূল আলোচনায়, অর্থাৎ সাইয়িদ আলী মোহাম্মদ, যিনি ২৪ বছর বয়সে নিজের টাইটেল নাম দিলেন ‘বাব” … যার অর্থ দরজা …
ইসলাম হতে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে বাবিজম প্রতিষ্ঠা করলেন। বই লিখলেন, নাম দিলেন ‘বেয়ান’
এখানেই তুলে ধরলেন বাবিজমের শিক্ষা দিক্ষা…

প্রচার করতে শুরু করলেন তার নতুন সৃষ্টি করা বিশ্বাস। প্রথম প্রথম তেমন কোনো ভক্ত বা মুরিদ জোগাড় করতে পারলেন না। এজন্য তেমন একটা ফোকাসও পেলেন না।
তখন ইরানে মাঝেমাঝেই এমন নিত্য নতুন ধর্ম প্রচারকের আবির্ভার হইতো। জনসাধারণ পাগলের প্রলাপ বলেই উড়িয়ে দিতো। দ্রুত এরা হারিয়েও যেতো।
এতো আমলে নেবার মত কিছুই ছিল না।

কিন্তু বাব হাল ছাড়লেন না। লেগে থাকলেন। ফুল ডিটারমিনেশনের সাথে। একসময় কিছু সাঙ্গপাঙ্গ ঠিকই জুটে গেল। মানুষ তার কথা শুনতে শুরু করলো। ফলাফল, ধীরে ধীরে ফলোয়ার বাড়তে শুরু করলো এবং স্বাভাবিকভাবেই এবার শিয়া মোল্লারা বিষয়টি আমলে নিলো।
বাবের অনুসারীদের বলা হত বাবি।

বাব নিজেকে ইমাম মাহাদি হিসেবে ঘোষনা করার পরও আবার নতুন একজন নতুন প্রেরিত পুরুষের আগমনের বার্তা দিলেন। নিজের লিখা ‘বেয়ান’ প্রচার করতে লাগলেন এবং ঘোষনা দিলেন, ইহা সবচেয়ে যুগোপযোগী বাণী !

অতঃপর, যা হবার সেটাই হল। শিয়া মোল্লারা সিদ্ধান্ত নিলো, এবার বাব’কে দেখে নেবে। বাবের কথা ইরানের শাহ’র কানেও গেল।
এরপর একদিন ইরানের পুলিশ গুলি চালালো বাব ও বাবি’দের উপর।

বেশকিছু বাবের ফলোয়ার, অর্থাৎ বাবি নিহত হলেন। বাব গ্রেফতার হল। ব্লাফফেমি মামলা সহ নানান পদের মামলা দিয়ে অতঃপর নামকাওয়াস্তে বিচার করে বাব’কে তোলা হল ফায়ারিং স্কোয়ার্ডে।
এরপর গুলি।
এরপর মৃত্যু।
এরপর দাফন।

(যেখানে গুলি করে বাব'কে হত্যা করা হয়েছিল)


দাফন করা হল ইরান থেকে বহু দূরে। তখনকার অটোম্যান সম্রাজ্যের অন্তর্গত প্যালেস্টাইনের হাইফা’তে।
যা এখন ইসরাইলের নিয়ন্ত্রনে। সেখানেই বাবের সমাধি।


বাবের অনুসারীদের ইরান ছাড়া করলেন শাহ।
বাবি’রা চলে গেল নির্বাসনে।
কিন্তু বাবের লাশ দাফন হলেও বাবের ‘বেয়ানের’ বাণী হারিয়ে গেল না।

ইরানের তেহরান শহর।
শাহ আমলের মন্ত্রী মির্জা নুরি’র ঘরে জন্ম নিলেন মির্জা হুসাইন আলী নুরি। ১৮১৭ সাল। অর্থাৎ বাবের চেয়ে দুই বছরের বড় মির্জা হুসাইন আলী নুরি।
বেশ আরাম আয়েশ বিলাসিতায় কেটেছিল মির্জা হুসাইন আলী নুরি’র জীবন। বড়লোকের ছেলে বলে কথা।
একদিন মন্ত্রী মশায় মারা গেলেন। ফলে মন্ত্রী পুত্র মির্জা হুসাইন আলী নুরি’কে বাপের মন্ত্রীত্ব সাধা হল। কিন্তু তিনি সেটা প্রত্যাখ্যান করলেন।
তিনি মিশতে শুরু করলেন একেবারে সাধারণ মানুষের সাথে। ইরানের রাস্তা ধরে হাটলেন যুবক মির্জা হুসাইন আল নুরি। দেখলেন ইরানকে। একেবারে সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে।

মানুষের উপকারে পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন মির্জা হুসাইন আল নুরি। যুবক বয়সে লোকে তাকে ভালবেসে বলতো, ‘গরিবের বাবা’
১৮৪৮ সালের দিকের কথা। তখন সাইয়িদ আলী মোহাম্মদ ও তার অনুসারীরা বাবিজম প্রচার শুরু করেছেন পুরোদমে।
মির্জা হুসাইন আল নুরি পরিচিত হলেন কিছু বাব অনুসারীদের সাথে।
তাদের সাথে চলা ফিরা করলেন। তাদের কথা শুনলেন। মুগ্ধ হলেন ‘বেয়ানের’ বাণী শুনে। বাবের ভক্ত হয়ে গেলেন মির্জা হুসাইন আল নুরি। বাব ধর্ম গ্রহন করলেন।
বাব যে প্রেরিত পুরুষের আগমনের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, সেই কথা মননে ধারণ করলেন মির্জা হুসাইন আল নুরি।
১৮৫০ সালে যখন বাব’কে ফায়ারিং স্কোয়ার্ডে নিয়ে খুন করা হয়, তখন আর সব বাবি’দের মত মির্জা হুসাইন আল নুরিও আত্মগোপনে চলে যান। ইরানের পুলিশ খুঁজতে থাকে বাবি’দের।

১৮৫২ সাল। তেহরানের কাছেই এফচি নামের গ্রাম। সেখানে গোপনে কিছু বাবি’দের সাথে আলোচনায় বসলেন মির্জা হুসাইন আল নুরি। কিন্তু ভাগ্য খারাপ। পুলিশ ঘিরে ফেললো তাদের। গ্রেফতার করলো। টর্চার চেম্বারে নিয়ে পেটালো। পুরনো পরিত্যাক্ত কুপের ভেতর অন্য বন্দীদের সাথে রাখা হল মির্জা হুসাইন আল নুরিকে। গু মুতের গন্ধ। এক ভয়াবহ গহ্বর … অন্ধকার।
দুর্বিষহ পরিবেশ।
আর সেখানেই কিনা স্বর্গের প্রত্যাদেশ পেলেন মির্জা হুসাইন আল নুরি !
দেবদুত এসে উনার কানে বলে গেলেন, আজ থেকে আপনার নাম ‘বাহাউল্লাহ’ যার অর্থ আল্লাহ’র গৌরব।
ব্যস, মির্জা হুসাইন আল নুরি বুঝে গেলেন, তিনিই সেই প্রেরিতপুরুষ, যার সম্পর্কে বাব পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। মির্জা হুসাইন আল নুরি হয়ে গেলেন ‘বাহাউল্লাহ’

এভাবে চার মাস বন্দি থাকার পর ইরান সরকার বাহাউল্লাহ’কে মুক্তি দিল। বাহাউল্লাহ’র ভাগ্য ভালো ছিল। বাবের মত তাকে ফায়ারিং স্কোয়ার্ডে তোলা হল না।
বরং নির্বাসনে পাঠানো হল।
বেশকিছু বাবি’দের সাথে নিয়ে বাহাউল্লাহ চলে গেলেন বাগদাদে।
বাগদাদ ছিল তখন তুর্কি অটোম্যান খেলাফতের আন্ডারে।
আটোম্যানদের সাথে ইরানের সম্পর্ক ভালো ছিল না।

বাহাউল্লাহ এরপর বাগদান থেকে কুর্দিস্তানের দিকে গেলেন। এরপর এক নির্জন পাহাড়ে ধ্যানমগ্ন হলেন। সেই নির্জন পাহাড়ে ধ্যান করে যা কিছু তার মাথায় এসেছিল,
লিখে ফেললেন।
হয়ে গেল বই।
নাম “কিতাব-ই-ইকান’
যেখানে জীবনকে দেখানো হয়েছে এক মহাজাগতিক উপন্যাস হিসেবে।
বাহাউল্লাহ এরপর বাগদাদে থাকতে শুরু করলেন। বাগদাদে কফি হাউজগুলোতে ঘুরলেন। সেইসময় বাগদাদে জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা ছিল ভালোমতই।
বাহাউল্লাহ বাগদাদে ঘুরেঘুরে অনুধাবন করলেন, বিজ্ঞানকে এড়ানো যাবে না। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক খুঁজতে শুরু করলেন বাহাউল্লাহ। অনেকটা সাধু দার্শনিক Thomas Aquinas এর মত।
বাগদাদে বাহাউল্লাহ’র ফলোয়ার বাড়তে থাকলো।

বাহাউল্লাহ বুঝতে পারলেন, এটাই সঠিক সময়। ফলোয়ারদের উদ্দেশ্যে বললেন, আমিই সেই প্রেরিতপুরুষ, যার কথা বাব বলে গিয়েছিলেন। সালটা ১৮৬৩।

তিনি বললেন, আদম থেকে শুরু করে যুগে যুগে অনেক পেরিতপুরুষের আগমন ঘটেছে। বর্তমানে তিনি এসেছেন প্রেরিতপুরুষ হিসেবে। উনার পরেও অনেকে আসবেন ইশ্বরের বাণী প্রচার করতে।
তিনি বললেন,
সব ধর্মমতের উৎস অভিন্ন। পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে সেগুলোর রুপ বদল হয়েছে। কিন্তু রয়েছে অভিন্ন সুর।
বিশ্ব ধর্মের ঐক্যের আহবান দিলেন বাহাউল্লাহ।
বিজ্ঞানে বিশ্বাস, জাতিভেদাভেদের অবসান, লৈঙ্গিক বৈষম্যের অবসানের ডাক দিলেন বাহাউল্লাহ।
বিশ্বশান্তির প্রতিষ্ঠার ডাক দিলেন। মহান বাব ১৯ সংখ্যাকে পবিত্র বলে ঘোষনা করেছিলেন। এজন্য বছরে ১৯ দিন উপবাস থাকতে বললেন।

বাগদাদ থেকে ইস্তাম্বুল যাবার পথে টাইগ্রিস নদীর তীরে ১২ দিন অবস্থান করেছিলেন বাহাউল্লাহ তার শিষ্যদের সঙ্গে নিয়ে। বাহাই’রা রিদভান উৎসব পালনের মাধ্যমে আজও সেটাকে স্মরণ করে।

তবে সবকিছুতেই বিরোধ লাগে। বাবের মৃত্যুর পর বাহাউল্লাহর উত্থানও কট্টর বাব সমর্থকদের একটি অংশের ভেতর সন্দেহের জন্ম দিলো। তারা বাহাউল্লাহ’র এইসব দাবি প্রত্যাখান করলো। বাহাউল্লাহ’র প্রতি তারা বিশ্বাস আনতে পারলো না। এদের ভেতর ছিল খোদ বাহাউল্লাহর নিজের ভাই ইয়াহিয়া।
শুরু হল বাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। শুরু হল গ্রুপিং। ভেদাভেদ।

বাহাউল্লাহ ইস্তাম্বুল পৌছালেন, কিন্তু তুর্কি সুলতানকে উপহার দিতে ভুলে গেলেন। ফলাফল, শুরুতেই সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেল। বাহাউল্লাহ মাত্র চার মাস ছিলেন। সুলতানের নির্দেশে তাকে ইস্তাবুল ছেড়ে চলে যেতে হল তুরস্কের আড্রিয়ানোপলে। গ্রিসের কাছাকাছি।
সেখানে বসে বাহাউল্লাহ লিখতে থাকলেন। প্রচার করতে থাকলেন তার ধর্মমত।
বিশ্বের বড়বড় নেতা, যেমন মহারানী ভিক্টোরিয়া, রাশিয়ার আলেকজ্যান্ডার সহ অনেক নেতাদের চিঠি লিখলেন।

ক্রমশ বাব এবং বাহাই বিরোধ বাড়তে থাকলো। বাহাউল্লাহ’র সেই ভাই, অর্থাৎ ইয়াহিয়া, যে ছিল কট্টর বাবপন্থি, সে বাহাউল্লাহকে ইমাম মাহাদি বা প্রেরিতপুরুষ হিসেবে মেনে নিতে পারলো না। ফলাফল, খাবারে বিষ মেশালো। বাহাউল্লাহ অসুস্থ হয়ে গেলেন। কিন্তু জানে বেঁচে গেলেন কোনোমতে। মির্জা ইয়াহিয়া তুর্কি সুলতানকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলো, বাহাউল্লাহ আটোম্যান সম্রাজ্যের জন্য বিপজ্জনক। সম্রাজ্যের ভেতর অস্থিরতা এবং নৈরাজ্য তৈরি করতেছে বাহাউল্লাহ ও তার অনুসারীরা।
ফলাফল, সুলতানের নির্দেশে বাহাউল্লাহকে চলে যেতে হল প্যালেস্টাইনের আক্কায়। জেলখানায়।
বর্তমানে জায়গাটি ইসরাইলে।

(এই সেই জেলখানা)

সম্রাটের মৃত্যুর পর বাহাউল্লাহ জেল থেকে বের হয়ে আক্কার ‘বাহাজি ম্যাসনে” থাকতে শুরু করেন। যদিও কার্যত তিনি তখনও অটোম্যানদের হাতে বন্দী।

বাহাউল্লাহ ও তার সমর্থকদের ব্যাপারে স্থানীয় জনতাকে সতর্ক থাকতে বললেন তুর্কি সরকার। ফলাফল, বাহাউল্লাহর শেষ জীবনের সময়গুলো খুব একটা ভালো কাটেনি। সেখানেই উনার এক পুত্র মির্জা মেহেদি মারা গেলেন।
বাহাউল্লাহ কার্যত বন্দি দশাতেই ছিলেন। যদিও শেষ দিকে অনুমতি সাপেক্ষে আক্কার আশেপাশে যেতে পারতেন তিনি।
১৮৯২ সালে বাহাউল্লাহ মারা গেলেন। মৃত্যুর আগে তিনি লিখে গেলেন ‘কিতাব-ই-আকদাস’

(বাহাউল্লাহ'র কবর)

বাহাউল্লাহ’র মৃত্যুর পর উনার আরেক ছেলে আব্দুল বাহা বাহাই ধর্মের হাল ধরলেন।


ওদিকে বাবের যে সব ভক্ত বাহাউল্লাহ’কে ইমাম মাহাদি বা প্রেরিতপুরুষ হিসেবে বিশ্বাস করেনি, তারা আলাদা হয়ে মধ্য এশিয়াতে বসবাস শুরু করে। আজও তারা আছে। এবং বাবের কথামত কোনো এক প্রেরিত পুরুষের অপেক্ষায় আছে। অর্থাৎ কবে কেউ একজন এসে সব মুশকিল আছান করে দেবে।

সারমর্ম হল, বাব প্রচার করেছিলেন বাবিজম।
বাবিজমে একজন প্রেরিতপুরুষের কথা ছিল। বাহাউল্লাহ নিজেকে সেই প্রেরিতপুরুষ বলে দাবি করেছিলেন। যারা তার কথায় বিশ্বাস এনেছিলো, তারা বাহাই অনুসারে।
অর্থাৎ সব বাহাই বাবি বা বাবের ভক্ত, সব বাহাই’দের প্রধান কেতাব ‘বেয়ান’
কিন্তু সব বাবি বাহাই নয়।

ব্যাপারটা সেই সব ক্ষারই ক্ষারক, কিন্তু সব ক্ষারক ক্ষার নয় টাইপের।

বাহাই’দের তীর্থ দুইটি।
একটি বাবের কবর,
অন্যটি বাহাজি ম্যানসন।
বাহাইদের সকল অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাব এবং বাহাউল্লাহ’র স্মৃতিকে স্মরণ করা হয়।


The Universal House of Justice, Haifa, Israel হল বাহাই’দের গ্লোবাল রুলিং বডি।



Baha'i festivals:

Naw-Ruz (New year) 21 March
Ridvan - first day 21 April
Ridvan - ninth day 29 April
Ridvan - twelfth day 2 May
The Bab's declaration of his mission 23 May
Passing of Baha'u'llah 29 May
Martyrdom of the Bab 9 July
Birth of the Bab 20 October
Birth of Baha'u'llah 12 November

https://en.wikipedia.org/wiki/Báb
https://en.wikipedia.org/wiki/Bahá%27í_Faith
https://en.wikipedia.org/wiki/Bahá%27u%27lláh
http://bahai-library.com/books/hinduism/ch7.htm
Read More »