যদি আগে থেকেই জানো, যুদ্ধে তুমিই জিতবা, তাহলে তোমার মুখে শান্তির বাণী আসবে না। যুদ্ধ শুরুর পায়তারা তুমিই করবা।
আর যুদ্ধটাই যদি হয়ে যায় বিরাট এক ব্যবসা, তাহলে তো কথাই নেই। ইন্ধনদাতার অভাব হবে না। ইরাক যুদ্ধটা ছিল তেমনই এক ব্যবসা। জর্জ বুশের তথাকথিত ওয়ার অন টেরর শিরোনামে সাদ্দাম হটানোর যুদ্ধটা মোটাদাগে তেলের জন্য যুদ্ধ হলেও গোটা যুদ্ধটাকে পুঁজি করে মার্কিন বড়বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে আমেরিকার ট্যাক্সের টাকা পকেটে ভরেছে, ব্যবসা করেছে এবং ফায়দা উসুল করেছে, সেই বর্ননা ছোট করে লিখবো।
সমগ্র চক্রটি অনেকটা ডাকাতের উপর বাটপারী। বিষয়টি জরুরী। কারণ এই যুদ্ধ বানিজ্যে যে বা যাহারা সবচেয়ে লাভবান হয়, তারা প্রতিনিয়ত লবিং করে যাবে যুদ্ধের জন্য। এবং ভবিষ্যতে আরো যুদ্ধ হবে। কারণ যুদ্ধটাই তো ব্যবসা। বিশেষ করে যখন আপনি আগে থেকেই জানেন, আপনি যুদ্ধে হারবেন না।
২০শে মার্চ, ২০০৩ সাল। ইরাক যুদ্ধ শুরু হয়। ব্যাপক বিধ্বংসী মরনাস্ত্র আছে সাদ্দামের হাতে, এই বানোয়াট অজুহাতে জর্জ বুশ ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন চালায়। নাম দেন, “অপারেশন ফর ইরাকি ফ্রিডম”। অথচ ঠিক এক দশক আগে বুশের বাবা “সিনিয়র বুশ” ইরাকের সাথে যুদ্ধ করেছিলো কুয়েত ইস্যু নিয়ে। ১৯৯১ সালের যুদ্ধে মার্কিনীরা তখনই পারতো সাদ্দামকে হটিয়ে ইরাক দখলে নিতে। কিন্তু সেসময়ে মার্কিন নীতি নির্ধারকেরা প্রকাশ্যেই বলেছিলো, সাদ্দাম অপসারিত হলে ইরাকের ভেতরে ইরানের ইনফ্লুয়েন্স বাড়বে। শিয়া সুন্নি’র রেষারেসি শুরু হবে। ইরাক তিন খন্ড হবে। মধ্যপ্রাচ্যের স্টেবিলিটি নষ্ট হবে। আপনি ইউটিউবে Cheney in 1994 on Iraq লিখে সার্চ দিলে একটা দেড় মিনিটের ইন্টারভিউ পাবেন। তাতে দেখবেন, ১৯৯৪ সালে ডিক চেনির একটা ইন্টারভিউ। সেখানে তিনি বলতেছেন, ঠিক কি কারণে সাদ্দামকে অপসারণ করা মার্কিনীদের উচিৎ হবে না। অর্থাৎ সাদ্দামকে সরিয়ে দিলে পরবর্তীতে যা যা হবে, সবই ডিক চেনি ১৯৯৪ সালে প্রেডিক্ট করে বলেছিলেন এক টিভি সাক্ষাৎকারে।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল, নয় বছর পর জর্জ বুশ যখন ইরাকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন ডিক চেনি আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট! এবং ইরাক যুদ্ধের অন্যতম সমর্থক। এই নয়টি বছরে জিওপলিটিক্স মধ্যপ্রাচ্যে আহামরি বদলায়নি। ১৯৯১ সালে যে লজিকে সাদ্দামকে অপসারণ করা থেকে মার্কিনীরা বিরত ছিল, সে লজিকগুলো ২০০৩ সালেও সমান যৌক্তিক ছিল। কিন্তু এরপরও কেনো এই যুদ্ধ?
সেই সমীকরণ পরে। তবে আগে দেখা যাক, এই যুদ্ধে কিভাবে কতিপয় কর্পোরেশন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পকেটে ভরেছে।
প্রথমেই আসি, আলোচিত সমালোচিত BlackWater প্রসঙ্গে। BlackWater, যার বর্তমান নাম Academi
এটি একটা প্রাইভেট মিলিটারি ফোর্স।
আচ্ছা, তো প্রাইভেট মিলিটারি ফোর্সের সুবিধা কি? সেটা বোঝানোর জন্য বছরখানেক আগের একটা উদাহারণ দিচ্ছি।
রাশিয়ার ২০১৪ সালের ক্রাইমিয়া এনেক্সেশনের কথা মনে আছে? কৃষসাগরের পাশের ক্রাইমিয়া প্রভিন্স ইউক্রেনের মানচিত্রে ছিল। রাশিয়া সেখানে সবুজ ইউনিফর্মের সেনা পাঠিয়েছিলো যাদের ইউনিফর্মে কোনো নাম, পদক, ব্যাচ, বা দেশের পতাকা ছিল না। মিডিয়া এদেরকে নাম দিয়েছিলো রাশিয়ান গ্রিন আর্মি।
বাস্তবে এরা ছিল রাশিয়ার Wagner Group নামের প্রাইভেট মিলিটারির সদস্য। প্রথম এক সপ্তাহ রাশিয়া স্বীকারই করেনি, রাশিয়ান সরকার এদেরকে পাঠিয়েছে। বোঝার কিছুই বাকি ছিল না। যদি কাগজে কলমে বলার উপায় ছিল না যে, “রাশিয়ান আর্মি ইউক্রেনে অনুপ্রবেশ করেছে”
সরকারি আর্মি আর টাকা দিয়ে বা কনট্রাক্ট দিয়ে ভাড়া করা প্রাইভেট আর্মিই এই এক সুবিধা।
সরকারি আর্মির অনেক রুলস রেগুলেশন আছে। প্রাইভেট আর্মির এতোসব নেই। টাকা দিবেন। কনট্রাক্ট দিবেন। কাজ দিবেন। করে দেবে।
আর প্রাইভেট আর্মির সদস্য যদি গুলি খেয়ে মরে, তাহলে সেটা নিয়ে মিডিয়াতে আউটক্রাই হবে না। আফটার অল, মরলে মরেছে ঠিকাদারের লোক। সরকারের দায় সেখানে থাকে না।
তো প্রাইভেট মিলিটারির ব্যবসা হালআমলে বেশ লাভজনক। রাশিয়ার এই Wagner Group বর্তমানে ভেনিজুয়েলাতেও ভাড়া কার্য্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়াতে আইসিস বিরোধি যুদ্ধেও এই Wagner Group কে ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থাৎ সাবকন্ট্রাক্ট দিয়ে দেয়া হচ্ছে।
দুনিয়াতে বেশকিছু নামকরা প্রাইভেট মিলিটারি ফোর্স আছে।
এদের ভেতর সবচেয়ে নামকরা নিঃসন্দেহে ব্ল্যাকওয়াটার। যার বর্তমান নাম একাডেমি।
বড়সড় যুদ্ধ চালানোর ক্ষমতা আছে এই ব্ল্যাকওয়াটারের।
উপরের ছবিতে ইরাক দখলের পর ইরাকের সার্বিক দায়িত্ব নিযুদ্ধ মার্কিনী প্রশাসক Paul Bremer এর আশেপাশে অস্ত্রধারী যাদের দেখতে পাচ্ছেন, এরা সবাই ভাড়া করা ব্ল্যাক ওয়াটারের সদস্য।
এবং ২০০৩ সালের আগস্ট থেকে ২০০৪ সালের জুন পর্যন্ত পল ব্রিমারের পার্সনাল নিরাপত্তার জন্য ব্ল্যাক ওয়াটার নিযুক্ত ছিল এবং এই কাজের জন্য কনট্রাক্ট ছিল ২১ মিলিয়ন ডলার ! এটা সেই সময়ের হিসাব।
কেবল পল ব্রিমারের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কাজটি নয়, ইরাকে সরাসরি যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিল ব্ল্যাক ওয়াটার সহ ২৫টি ছোটবড় প্রাইভেট মিলিটারি এজেন্সি। নিযুক্ত ছিল বিশ হাজারের বেশি ভাড়াটে যোদ্ধা তথা প্রাইভেট মিলিটারি কন্ট্রাক্টর।
https://usatoday30.usatoday.com/news/world/iraq/2004-04-01-security-usat_x.htm (লিঙ্কগুলো কমেন্ট বক্সে পাবেন)
(এই লিখার সকল রেফারেন্স কমেন্ট বক্সে পাবেন)
বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের কনট্রাক্ট সরাসরি কোনো কম্পিটিশন ছাড়া বাগিয়ে নিয়েছে ব্ল্যাক ওয়াটার এই ইরাক যুদ্ধে।
২০০৪ সালে ব্ল্যাক ওয়াটার একটি টেন্ডার জিতেছে যার মূল্যমান সেই সময়ে ১ বিলিয়ন ডলার। এই টেন্ডারটি ছিলো কনফ্লিক্ট জোনগুলোতে মার্কিনী কুটনৈতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বলাবাহুল্য ব্ল্যাক ওয়াটার পরে আরো অনেক টেন্ডার জিতেছে এবং বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পকেটে ভরেছে। লিবিয়ার বেন গাজি’তে মার্কিন কনসুল্যেটে আল কায়দার হামলায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মারা যায়। সেখানেও কিন্তু নিরাপত্তার দায়িত্বে ব্ল্যাক ওয়াটার নিযুক্ত ছিল।
এই ব্ল্যাক ওয়াটারের প্রতিষ্ঠাতা former Navy SEAL officer Erik Prince
উল্লেখ্য যে, এই এরিক প্রিন্স হল বর্তমানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শিক্ষা সচিব বেটসি ডেভোসের ভাই।
সারা দুনিয়া থেকে আর্মির অফিসার, এক্স স্পেশ্যাল ফোর্সের সদস্যদের এরা রিক্রুট করে। বেসরকারি চাকরি। বেতন বেশি। এজন্য দেখা যায় যে হরহামেশা সরকারি মিলিটারির চাকরি ছেড়ে সৈনিকেরা প্রাইভেট মিলিটারিতে ঢুকে পড়ে। ব্যাপারটা আমাদের সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে বেশি বেতনের আশায় বেসরকারি চাকরি করতে যাবার মত। এখন আপনার আত্মীয় স্বজনেরা হয়ত বলবে, সরকারি চাকরি সম্মানের। মরে গেলে পতাকা মোড়ানো কফিনে আপনার লাশ থাকবে। স্যালুট পাবেন। কিন্তু আপনার কাছে মনে হতেই পারে, সরকারি চাকরি ছেড়ে প্রাইভেট মিলিটারিতে ঢুকে বেশি স্যালারি পেলে আপনার সংসার ভালো চলবে। চয়েজ আপনার।
তরুণ ছেলেরা মার্কিন স্পেশ্যাল ফোর্সে ট্রেনিং নিয়ে কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রাইভেট মিলিটারিতে ঢুকে পড়েছে, এমন নজির বহু আছে।
আর এরা বেতন দিতে পারে বেশি, তার পেছনে কারণও আছে। সরকারি টেন্ডার জিততেছে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের। বাস্তবে যে কাজ হয়ত সরকারি আর্মি দিয়ে করলে অর্ধেকেরও কম টাকা খরচ হয়, সেই কাজ ঠিকাদারদের দিয়ে করানো হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি দামে। আর এই টেন্ডারবাজি করে হাইপ্রোফাইল আমলা অফিসার এবং সিনেটরেরাও পকেট ভাড়ি করতেছে। সেইসব খতিয়ান পরে দিচ্ছি।
তো ব্ল্যাক ওয়াটার ব্যাপারটি শেষ করি। ব্ল্যাক ওয়াটারের নামে অনেক দূর্নাম আছে। ২০০৭ সালে কিছু ব্ল্যাক ওয়াটারের সদস্য অহেতুক ১৪ জন নিরীহ ইরাকিকে গুলি করে মারে। সেটার বিচার হয়েছিলো পরে।
ব্ল্যাক ওয়াটার দুনিয়ার বহু দেশে নিয়োজিত আছে।
যেমন, ২০১৫ সালে ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহিরা ছয়জন মার্সেনারিকে হত্যা করে। এরা ছিল ব্ল্যাক ওয়াটারের লোক। আরব আমিরাত এদেরকে ভাড়া করেছিলো হুতিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য।
https://www.theguardian.com/australia-news/2015/dec/09/australian-mercenary-reportedly-killed-yemen-clashes
ব্ল্যাক ওয়াটার, তথা একাডেমি’তে বর্তমানে ২০ হাজার যোদ্ধা কর্মরত আছে। যাদের ভেতর সিংহভাগ মার্কিন মিলিটারির স্পেশ্যাল ফোর্স, গোয়েন্দাবাহিনী সিআইএ, এনএসএ’র সহ বিদেশে মিলিটারি থেকে আসা সাবেক সেনা।
দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে সিকিউরিটি কনসাল্টেন্ট হিসেবেও কাজ করে একাডেমি। ২০১৪ সালে কোম্পানিটিকে Constellis Group কিনে নেয়। Constellis Group বর্তমানে একাডেমি’র মাদার অর্গানাইজেশন।
সিআইএ’র কোভার্ট অপারেশন পরিচালনা, ব্ল্যাক সাইট ইন্ট্রোগ্রেশন চালনা, এসবের কাজও ব্ল্যাক ওয়াটার করে থাকে।
ঠিক ব্ল্যাক ওয়াটারের মত অন্যএকটি প্রতিষ্ঠান Parsons Corporation (Parsons)
যেটা আমেরিকার ভার্জেনিয়া অবস্থিত technology-focused defense, intelligence, security, and infrastructure engineering firm
এতে ১৬ হাজারের বেশি কর্মী নিযুক্ত আছে। ২০টির বেশি দেশি বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড রয়েছে। ২০১৮ সালে কোম্পানির রেভিনিউ ছিল ৩.৬ বিলিয়ন ডলার।
কোম্পানিটি অতীতে স্নায়ু যুদ্ধের সময় মার্কিন মিলিটারির জন্য ইলেকট্রনিক্স ইকুইপমেন্ট, মিলিটারি হার্ডওয়ার, মিসাইল টেকনোলজি, রকেট ডিজাইনের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করেছে।
এই কোম্পানিটি ইরাক যুদ্ধের পর ২০০৪ সালে ২৪৩ মিলিয়ন ডলারের কন্ট্রাক্ট পেয়েছিলো ১৫০টি হাসপাতাল নির্মানের জন্য।
Worley Group of Australia নামের কোম্পানির সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চারে ৮০০ মিলিয়ন ডলারের টেন্ডার পেয়েছিলো ইরাকের উত্তরাংশের তেল শৌধনাগারগুলো পুনঃনির্মান করতে।
ইরাকের ধ্বংসপ্রাপ্ত ইনফ্রাস্ট্রাকচার রিবিল্ড করতে মার্কিন কংগ্রেস যুদ্ধের পরপরই যে ১৮.৬ বিলিয়ন ডলারের থোক বরাদ্দ দিয়েছিলো, তাতে পার্সন কর্পোরেশনের ভাগের ভাগ ছিল ৫ বিলিয়ন ডলার।
ইরাকে মার্কিন সেনাদের থাকার ঘাটিগুলোর বড়একটি অংশ বানাতে পার্সন কর্পোরেশন নিয়েছিলো ১.৫ বিলিয়ন ডলারের টেন্ডার।
https://corpwatch.org/article/iraq-parsons-corp-wins-900-million-contract
https://en.wikipedia.org/wiki/Parsons_Corporation
পার্সন কর্পোরেশনের এসব কন্ট্রাকের স্বচ্ছতা কার্যত কিছুই ছিল। ছিল জনগনের ট্যাক্সের টাকার সিস্টেমেটিক লুটপাট। এই ইস্যু নিয়ে মার্কিন কনগ্রেসে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। ইরাক Reconstruction প্রজেক্টের জন্য মার্কিন কংগ্রেস কর্তৃক নিযুক্ত Special Inspector General, Mr. Stuart W. Bowen ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন কংগ্রেসের HOUSE OVERSIGHT AND GOVERNMENT REFORM COMMITTEE সামনে একটি রিপোর্ট উপস্থাপন করেন, যেটার লিঙ্ক কমেন্ট বক্সে পাবেন।
( https://web.archive.org/web/20080829015422/http://oversight.house.gov/documents/20070215111017-80058.pdf )
এই পিডিএফে সমগ্র বক্তব্যটি আছে।
তাতে শুরুতেই বলা হয়, the reconstruction program in Iraq is unlike any other in history in that it has been carried out virtually under fire.
সেখানে বিভিন্ন কোম্পানির কনট্রাক্ট এমাউন্টগুলোকে উল্লেখ করা হয়। কনট্রাক্টগুলো ছিল cost-plus-award-fee contracts
যেখানে থাকবে base award fee (for simply meeting contract requirements) and a merit-based award fee for performance that exceeds contract expectations.
মোর্দ্দা কথা, ১০ টাকার কাজ ১০,০০০ টাকায় দেবার সবধরণের লুপহোল সেসময় রাখা ছিল। ফলাফল, কোম্পানির টপ ম্যানেজমেন্ট যেমন মোটা অংকের ডলার পকেটে ভরেছে। তেমনই কোম্পানির কর্মকর্তা কর্মচারীরাও লাভবান হয়েছে। দেখা গেল, একজন টেকনিসিয়ান বা একজন ট্রাক ড্রাইভার বা একজন মিস্ত্রিও, আমেরিকা থেকে ইরাকে এসে একমাস পরিশ্রম করে গোটা এক বছরের আয় রোজগার করে ঘরে ফিরেছে।
ইরাকে মার্কিন সেনা ঘাটিগুলোতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দায়িত্বে ছিল Halliburton Company
ইরাক জুড়ে মোট ৬৭টি পানি শোধনাগার বানানোর টেন্ডার নিজেদের পকেটে নিয়েছিলো প্রতিষ্ঠানটি। যদিও ৬৩টি পানি শোধনাগারের পারফর্মেন্স ছিল খারাপ। মার্কিন সেনাদের ময়লা পানি খাওয়ানোর দায়ে হ্যালিবার্টনের বিরুদ্ধে মিডিয়া শোরগোলও শুরু করেছিলো।
তবে তাতে কি? মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি তো এই হ্যালিবার্টনেরই সাবেক সিইও।
পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ তেল খনি সার্ভিসিং কোম্পানি, যার ৫৫ হাজারের বেশি কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োজিত আছে পৃথিবীর ৭০টি দেশে। যার বার্ষিক রেভিনিউ থাকে বিশ বিলিয়ন ডলারের উপরে।
কেবল তেলখনি বা শোধনাগারের কাজ নয়, হ্যালিবার্টনের অধীনে বহু সাবসিডারি কোম্পানি আছে যারা নানাবিধ কার্য্যক্রম পরিচালনা করে।
আবার এসব পানি শোধনাগারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন ঘাটি ও মিলিটারি স্থাপনায় পানি সাপ্লাই লাইন এবং Sewage সিস্টেম তৈরির ১.১ বিলিয়ন ডলারের ঠিকাদারি নিয়েছিলো Fluor Company. এই কোম্পানিটির কর্মবাহিনী আছে ৪৪ হাজারের বেশি।
যাই হোক,
ইরাক যুদ্ধে বেশকিছু বড়বড় টেন্ডার বাগিয়ে নিয়েছিলো হেলিবার্টন।
ইরাকে উপস্থিত মার্কিন সেনাদের তিনবেলা খাওয়ানোর জন্য মোট ১.৮ বিলিয়ন ডলারের টেন্ডার নিয়েছিলো প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিটি মার্কিন সেনার জন্য প্রতিবার লন্ড্রি বাবদ মার্কিন সরকারের কাছ থেকে হ্যালিবার্টন নিয়েছে ১০০ ডলার। তাও সেই ২০০৩-০৪ সালের কথা। বিলিভ ইট অর নট, ১০০ ডলার কেবল একজনের কাপড় ধোয়ার জন্য। এখন আপনিই চিন্তা করে বলুন, একজন সোলজারের ব্যাগে আর কতই বা কাপড় থাকে?
আর এই বিপুল পরিমান সেনাদের কাপড় ধোয়ার জন্য ওয়াশিং মেশিন কিনেছে। ডিটারজেন্ট, পানি, সাবান, এসবের আয়োজন করেছে। তাহলে এবার অনুমান করেই দেখুন, কি বিপুল অংকের invoice মার্কিন সরকারের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে কোম্পানিটি।
হ্যালিবার্টনের পলিসি ছিল সহজ।
More money we spend, more money we can get in our pocket.
তো এই যা খাবার দাবার, মালামাল, গোলাবারুদ, রসদ ট্রান্সপোর্টেশন। এরজন্য দরকার প্রচুর পরিমান ট্রাক আর পিকআপ।
বলাবাহুল্য, সেগুলো এসেছে আমেরিকা থেকে। হ্যালিবার্টন ট্রাক কিনেছে, এরপর বিল ধরিয়ে দিয়েছে মার্কিন সরকারের হাতে।
ট্রাকের সামান্য ম্যালফাংশন হয়েছে, ব্যস। সেটা পুড়িয়ে ফেলেছে। ধ্বংস করেছে। আবার নতুন ট্রাক কিনেছে। বিশাল বিশাল কার্গো ভ্যান কিনেছে।
যত কেনাকাটা, তত টাকা।
এসব বড় বড় ট্রাক আর কার্গো ভ্যানের ট্রাক ড্রাইভারেরাও এসেছে আমেরিকা থেকে। তারাও টাকা কামিয়ে গেছে দুখাতে। ঝুকিপূর্ণ এলাকায় ঝুঁকিভাতা তো পেয়েছেই।
এক মাসে যা আয় করেছে, আমেরিকাতে হয়ত তা এক বছরেও আয় করে না। রীতিমত উৎসব দেখছি ব্যাপারটা।
নিউইয়র্কের শেয়ার বাজারে ২০০৩ সালে হ্যালিবার্টনের শেয়ার প্রতি মূল্য ছিল ৯ ডলার। ব্যস, ১ বছরে শেয়ার ভ্যালু বেড়ে দাড়ালো ৪২ ডলার। খালি টাকা আর টাকা। সরি, ডলার আর ডলার।
ওই যে বললাম, হ্যালিবার্টনের আণ্ডারে বহু সাবসিডারি কোম্পানি আছে। যার একটি তখন ছিল KBR, Inc.
এটি একটি engineering, procurement, and construction company
এই কোম্পানিটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে পরবর্তীতে বড়বড় সকল মেজর কনফ্লিক্টে মার্কিন আর্মি হয়ে ঠিকাদারি করেছে। এছাড়া কোম্পানিটির আরো বহুবিধ কর্মকান্ড রয়েছে। যেমন, ২০১৭ সালে কোম্পানিটি ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির নভোচারিদের জন্য প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট দেবার টেন্ডারকাজ পেয়েছে।
নাসাসহ অন্যান্য স্পেস এজেন্সির লজিস্টিক সাপ্লাই ওয়ার্ক্সে কোম্পানিটি জরিত।
কোম্পানিটির আলোচিত নির্মান কাজের মধ্যে একটি ছিল সৌদি আরবের Sadara Chemical Facility, যেটা কিনা দুনিয়ার সবচেয়ে বড় Single Phase Chemical Complex
আফগান যুদ্ধের পর কাবুলে ১০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে নিরাপত্তাঘেরা মার্কিন দুতাবাস তৈরির কাজও করেছে এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
কোম্পানিটির রেভিনিউ ২০১৮ সালে ছিল ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি। দুনিয়ার বিভিন্নদেশে কোম্পানিটি দাপটের সাথে কাজ করে। এবং সুনাম দূর্নাম উভয়ই কামিয়েছে। যেমন, ২০০৯ সালে নাইজেরিয়াতে সাড়ে সাত মিলিয়ন ডলারের টেন্ডার জেতার জন্য সেখানকার সরকারি কর্মকর্তাদের দশ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দিয়ে ধরা খেয়েছিলো কোম্পানিটি। এজন্য পরে মার্কিন কোর্টে ৪০২ মিলিয়ন ডলার জরিমানা গুনতে হয়েছিলো কোম্পানিটিকে। কোম্পানিটির একজন মহিলা কর্মচারী কোম্পানিটির ভেতরে গ্যাংরেপের শিকার হওয়া সহ আরো ৩৭ জন মহিলা কর্মচারী হ্যারাসমেন্ট সহ নানান অনৈতিক কার্যাবলির খতিয়ান জনসম্মুখে প্রকাশ করলে কোম্পানিটির ভাবমূর্তি আরো নষ্ট হয়।
হ্যালিবার্টনের সাবসিডিয়ারি হিসেবে সেইসময় এই কোম্পানিটি ইরাক যুদ্ধের পর বড়বড় টেন্ডার জিতে নেয় বিনা কম্পিটিশনে, কোনোরুপ সচ্ছতা ছাড়া।
ইরাকী ইনসার্জেন্টরা ইরাকে তেলকুপগুলো ধ্বংস করে দিতে শুরু করলে তেলখনির অগ্নিনির্বাপনের কাজ তদারকি ও ফায়ার ফাইটিং কাজে মোট সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলারের দুই বছরের বিশাল টেন্ডার পেয়েছিলো এই কোম্পানিটি। যাতে কাগজে কলমে ৭% প্রফিট দেখানো হয়। অর্থাৎ কাগজে কলমের হিসেবেও ৪৯০ মিলিয়ন ডলার নীট প্রফিট ছিল কোম্পানিটির।
https://www.myplainview.com/news/article/Halliburton-subsidiary-awarded-7-billion-Iraq-9070450.php
https://corpwatch.org/article/rigged-beginning
আবার হ্যালিবার্টনের মত Washington Group International নামের আরেকটি কোম্পানি ইরাকের তেল কুপ ও তেল শৌধনাগারগুলোর Repair and maintenance কাজের দায়িত্ব পেয়েছিলো যার মূল্য ছিল ৯৩১ মিলিয়ন ডলার। কোম্পানিটি ইরাক পুনঃগঠনের কাজেরও যুক্ত হয়।
ইরাক যুদ্ধে সময় বহু কোম্পানি এভাবে ফুলে ফেপে উঠেছে যার ভেতর ছিল Titan Corporation
যুদ্ধে মার্কিন সেনাদের প্রচুর অনুবাদকের দরকার হয়েছিলো। আর ১১২ মিলিয়ন ডলারের টেন্ডার নিয়েছিলো টাইটেন কর্পোরেশন। কাজ হল ট্রান্সলেটর প্রোভাইড করা। প্রায় ৪ হাজার অনুবাদক টাইটেনের হয়ে কাজ করেছে। বলা বাহুল্য, রিক্রুটমেন্ট করেছিলো ইরাকে কলেজ এবং ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের। এছাড়া আশেপাশের আরব দেশ থেকেই আরবি জানা ছেলেপেলে অল্পকিছু বেতন দিয়ে রিক্রুট করে নামিয়ে দিয়েছিলো ব্যাটল ফিল্ডে মার্কিনী সেনাদের সাথে অনুবাদকের কাজে। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ইরাকের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েছিলো। চাকরি বাকরি ছিল না। সামান্য কিছু বেতন দিয়ে ইংরেজি এবং আরবি জানা ইরাকী লোকজন রিক্রুট করে বেশ বড়সড় প্রফিট পকেটে ভরেছিলো টাইটেনের হর্তাকর্তারা।
২০০১ সালে যেখানে টাইটেনের বার্ষিক রেভিনিউ ছিল ৯০০ মিলিয়ন ডলার, ২০০৪ সালে গিয়ে রেভিনিউ দাঁড়ায় ২ বিলিয়ন ডলার।
টাইটেন ৪০৯ মিলিয়ন ডলারের IT Contract নিয়েছিলো মার্কিন মিলিটারির জন্য। যার ভেতর ছিল ৫৪.৮ মিলিয়ন ডলারের Spy plane Control system ডেভোলপমেন্ট কাজ। ১৮ মিলিয়ন ডলারের সিমুলেটর তৈরির কাজ মার্কিন নেভীর জন্য। ১৬৩.৯ মিলিয়ন ডলারের মিসাইল ডিভেন্স ডেভোলপমেন্ট কন্ট্রাক্ট। এছাড়া “full range of planning, analysis, exercise, and information technology services for Chemical, Biological, Radiological, Nuclear, and High-Yield Explosive (CBRNE) Consequence Management operations” কাজের টেন্ডারও নিয়েছিলো টাইটান।
https://web.archive.org/web/20041019134732/http://publicintegrity.org/wow/bio.aspx?act=pro&ddlC=159
আইটি সেক্টরে মিলিটারি কনট্রাক্ট বাগিয়ে নেয়া কোম্পানিগুলোর ভেতর নামকরা বড় কোম্পানি হল CACI International Inc
এই প্রতিষ্ঠানটির ২২ হাজার কর্মী আছে এবং Fortune 1000 largest কোম্পানির একটি। ইন্টেলিজেন্স এবং মিলিটারি আইটি এবং ডিফেন্স সেক্টরে বড়বড় টেন্ডার বাগিয়ে নেয়ার জন্য এই কোম্পানি রীতিমত বিখ্যাত।
আপনি যদি CaCi International এর ওয়েব সাইটে যান, তাহলে বিশাল “What we do” লিস্ট দেখবেন। তাতে উল্লেখযোগ্য মনে হল নিচেরগুলো,
http://www.caci.com/whatwedo.shtml
CACI “what we do” list:
• Shoulder-to-shoulder warfighter mission support
• Multi-domain electronic warfare expertise
• Cutting-edge technology for infrastructure security
• Expertise and technology to improve survivability through adversary capabilities
• Two decades of platform integration experience
• Modernization and sustainment/survivability through Agile technology
২০১৭ সালে রেভিনিউ ছিল সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার।
এই কোম্পানির প্রেসিডেন্ট John S. Mengucci, যিনি অতীতে Lockheed Martin Corp. এর হয়েও কাজ করেছেন। এপ্রসঙ্গে বলে রাখি, Lockheed Martin বর্তমানে আমেরিকার সবচেয়ে বড় ডিফেন্স কনট্রাক্টরদের ভেতর একেবারে উপরে অবস্থান করে।
https://corpwatch.org/article/private-contractors-and-torture-abu-ghraib-iraq
এই কোম্পানিটির প্রথম কনট্রাক্ট ছিল নব্বইয়ের দশকে প্রথমবারের মত custom-written computer language তৈরি করা battlefield Simulation Program এর জন্য। ২০০১ থেকে ২০০৩ সালে এই কোম্পানির প্রোফিট ডাবল হয়ে যায়।
এই কোম্পানির কাজকর্মের ভেতর আরো একটি সেক্টর হল ইন্টেলিজেন্স সাপোর্ট এবং গ্লোবাল থ্রেট এসেসমেন্ট। সেইসাথে ইন্ট্রোগ্রেশন কাজ পরিচালনা করা। বাগদাদের আবু গারিব কারাগারে রোমহর্ষক বন্দি নির্যাতনের যেসব ছবি গোটা বিশ্বে ভাইরাল হয়েছিল, তাতে জরিত মার্কিন সেনা কর্মকর্তার বিচার হয়েছিলো মিলিটারি আদালতে। অথচ তাদের সাথে CaCI ইন্টারন্যাশন্যালের যেসব প্রাইভেট ইন্ট্রোগেটর ছিল, তাদের ব্যাপারে মার্কিন প্রশাসন কোনো ধরনের স্টেপ নেয়নি।
সেই সময় ডেমোক্রেট সিনেটর Christopher Dodd আবু গারিব ও কিউবার গোয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দি নির্যাতনের বিরোধিতা করেছিলো মার্কিন সিনেটে দাঁড়িয়ে। এবং বন্দি ইন্ট্রোগেশনের নামে বন্দি নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আওয়াজ তুলেছিলেন।
যুদ্ধ পরবর্তী ইরাকে নতুন করে পুলিশ প্রশাসন প্রস্তুত করা হয়। এবং এই পুলিশ প্রশাসনকে ট্রেনিং দেবার টেন্ডার নিয়েছিলো DynCorp International.
এটাও বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি যাদের কাজ flight operations support, training and mentoring, international development, intelligence training and support, contingency operations, security, and operations and maintenance of land vehicles.
এই কোম্পানিটা এর আগে আফগান যুদ্ধের সময় হামিদ কারজাই’এর বডি গার্ডের ঠিকাদারি পেয়েছিলো। আফগান যুদ্ধের পর আফগানিস্তানের পুলিশবাহিনীর প্রশিক্ষনের দায়িত্বে ছিল এই প্রতিষ্ঠান। ইরাকের পুলিশ ফোর্স তৈরি এবং ফোর্সের ট্রেনিং দেয়ার কাজে মার্কিন সরকার’কে ১.৩ বিলিয়ন ডলারের বিল ধরিয়ে দিয়েছিলো ডাইনকর্প।
আপনি হয়ত হলিউডের The Whitleblower মুভিটি দেখেছেন। এই মুভিটি একটি সত্য ঘটনার আলোকে বানানো। ১৯৯৯ সালে বসনিয়া যুদ্ধের সময় ডাইনকর্প কোম্পানির এজেন্টরা সেখানকার মেয়েদের ধরে Sex Trafficking ব্যবসা শুরু করেছিলো। মুভিটি সেই ঘটনার আলোকে বানানো।
কেবল বসনিয়া নয়, দুনিয়ার আরো অনেক কনফ্লিক্টিং ওয়ার জোনে এসব ডাইকোরের মত মিলিটারি কনট্রাক্টরদের বিরুদ্ধে প্রসটিটিউশন রিং চালানো, নারী পাচার, ইন্ট্রোগেশনের নামে নির্যাতন সহ নানাবিধ অভিযোগ উঠতে শুরু করলে ২০০০ সালে মার্কিন কংগ্রেস আইন পাস করে যার ফলে মার্কিন মুল্লুকের বাইরে, অর্থাৎ ভিন্নকোনো দেশে মার্কিন ডিফেন্স কনট্রাক্টরদের অকামকুকামের জন্য তাদের প্রসিকিউট করা সম্ভব হবে। এই আইনের পর ডাইনকর্পের বিরুদ্ধে বসনিয়ায় ফোর্সড প্রস্টিটিউশন রিং চালিয়ে ব্যবসা করার মামলা আনা হয়। কিন্তু এই কোম্পানিটির মার্কিন কংগ্রেস এবং সিনেটে শক্ত লবিং আছে। ফলে এতো অভিযোগ এবং মিসকন্ডাক্টের পরও এই কোম্পানিটি বরাবরই মার্কিন মিলিটারির বড়বড় কনট্রাক্ট জিতে এসেছে।
http://news.bbc.co.uk/2/hi/americas/7057629.stm
https://en.wikipedia.org/wiki/DynCorp
ইরাক যুদ্ধের পর ইরাকে যে বিপুল পরিমান গোলাবারুদ, গুলির খোলা, পরিত্যাক্ত বোমা যত্রতত্র পড়েছিল, সেসব অপসারণের জন্য Environmental Chemical নামের একটি ক্যালিফোর্নিয়া বেইজড কোম্পানি ৮৭৮ মিলিয়ন ডলারের এবং URS Corporation নামের আরেকটি কোম্পানি ৭৯২ মিলিয়ন ডলারের ঠিকাদারি নিয়েছিলো মার্কিন সরকারের কাছ থেকে।
ইরাকে মার্কিন আর্মির মিলিটারি যানবাহনগুলোর জন্য State of the art armor তথা বর্ম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ছিল Armor Holdings
ইরাক যুদ্ধের পর এই কোম্পানির রেভিনিউ বেড়ে গিয়েছিলো ২,২৪৭%
অর্থাৎ ফুলে ফেপে ওঠা যাকে বলে। ইরাকে গুরুত্বপূর্ণ ডিপ্লোমেটদেরকে এই কোম্পানির বুলেটপ্রুফ বর্ম পড়িয়ে ইরাকে চালাচল করানো হত।
সব ধরণের টেরিটোরিতে চলতে সক্ষম, এমন মিলিটারি যান সরবরাহ করে AM General (a subsidiary of Renco) নিজেদের প্রফিট বাড়িয়ে নিয়েছিলো ৯২%
যুদ্ধ পরবর্তী ইরাকে নতুন সেন্ট্রাল ব্যাংকের ৭০% শেয়ার কিনেছিল HSBC Bank
Cummins Power Generation পেয়েছিল ৪৫ মিলিয়ন ডলারের নতুন পাওয়ার স্টেশন তৈরির কাজ।
ইংল্যান্ডের MerchantBridge কোম্পানি পেয়েছিলো যুদ্ধ পরবর্তী ইরাকে construction, telecommunications, financial services, real estate, hotels, and information technology industries তৈরির কাজ।
ইরাকের শিল্প মন্ত্রনালয়ের সাথে আতাত করে ৬১ মিলিয়ন ডলার পকেটে ভরেছিলো কোম্পানিটি।
রিক্স ম্যানেজমেন্টের ব্যবসা ইরাকের মত দেশে অনেক লাভজনক। এবং GlobalRisk Strategies নামের কোম্পানি ইরাকের এয়ারপোর্ট, সরকারি অফিস, আইন আদালতের রিক্স ম্যানেজমেন্ট কাজে হাত দিয়ে বাগিয়ে নিয়েছিলো ২৪.৫ মিলিয়ন ডলার। ControlRisks নামের অন্য আরেকটি কোম্পানি রিক্স ম্যানেজমেন্টের নামে ৩৭ মিলিয়ন ডলারের টেন্ডারবাজি করেছিলো।
বুশ প্রশাসনের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে Bechtel corporation ইরাকের ইনফ্রাস্ট্রাকচার অর্থাৎ স্কুল কলেজ বিল্ডিং, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, পার্ক, এসব বানানোর নামে ১৪.৬ বিলিয়ন ডলার পকেটে ভরেছিলো।
আমেরিকার Nour USA Limited পেয়েছিলো যুদ্ধ পরবর্তী ইরাকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের তেলের পাইপ লাইন নির্মানের কাজ।
এভাবে লিখতে লিখতে সারাদিন পার হয়ে যাবে। তবুও লিখা শেষ হবে না।
ছোটবড় কত কোম্পানি যে ইরাক যুদ্ধে পকেটভারি করেছে, সেটার হিসাব নেই।
অথচ এতোকিছু লিখার পরও আমি কিন্তু আসল জিনিসই বাদ দিয়ে গিয়েছি। সেটা হল অস্ত্র।
একটা যুদ্ধ করতে যে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ লাগে, সেই হিসাব কি ইগনোর করা সম্ভব?
আপনি যদি Top 100 Contractors of US Federal Government লিখে সার্চ দেন গুগলে, অর্থাৎ আমেরিকার সরকারি কাজের বড়বড় ঠিকাদারদের তালিকা যদি সার্চ করেন,
তাহলে উইকি’তে নিচের এই পেজটা পাবেন।
https://en.wikipedia.org/wiki/Top_100_Contractors_of_the_U.S._federal_government
দেখাই যাচ্ছে, কেবল শুধু মিলিটারি কনট্রাক্ট নয়, আপনি গোটা মার্কিন ফেডারেল সরকারের ঠিকাদারের তালিকার দিকে তাকালেও দেখবেন,
একেবারে উপরের দিকে প্রায় সবই মিলিটারি হার্ডওয়ার বা অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
একটা টমাহক ক্রুজ মিসাইলের দাম ১.৮৭ মিলিয়ন ডলার। ইরাকে পাইকারিহারে টমাহক ক্রুজ মিসাইলের হামলা চালানো হয়েছে। এসব ক্রুজ মিসাইল মার্কিন মিলিটারিকে সরবারাহ করেছে General Dynamics
বিমান বা হেলিকপ্টার থেকে বৃষ্টির মত ছোড়া AGM-114 Hellfire মিসাইলগুলোর প্রতিটির দাম ১,১৭,০০০ ডলার। মার্কিন মিলিটারি এগুলো কিনেছে Lockheed Martin আর বোয়িং’এর কাছ থেকে।
আকাশে উড়তে থাকা অত্যাধুনিক বিমান, সাগরের বুকে ভেসে বেড়ানো রনতরী, মাটির বুকে চলতে থাকা ট্যাংক, সেইসাথে এসবের গোলাবারুদ,
এসব কিছু সরবারহ করেছে বোয়িং, লকহেড মার্টিং, জেনারেল ডাইনামিক্স’এর মত বিশাল বিশাল ম্যানুফ্যাকচার।
বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পকেটে ভরেছে এসময়ে।
মার্কিন সিনেটে দাঁড়িয়ে যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলা আপাত সুশীল সিনেটর ড্যায়ানা ফেইন্সটেইন পর্যন্ত ইরাক যুদ্ধের পর Military Construction Appropriations subcomittee এর একজন সদস্য হিসেবে নিজের প্রভাব খাটিয়ে নিজের হাজবেন্ডের নিয়ন্ত্রানাধীন Perini Corporation কে ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের ঠিকাদারি জুটিয়ে দিয়েছিলেন। কাজটা ছিল, ইরাকের পরিবেশ পরিস্কার পরিছন্ন করা।
তো এতোকিছু লিখার উদ্দেশ্য হল, জাস্ট এটা বোঝানোর জন্য যে কি পরিমান ব্যবসা এই ইরাক যুদ্ধকে পুঁজি করে হয়েছে। আমজনতা মোটা দাগে ভাবে, আমেরিকা এসে ইরাক দখল করে ইরাকের তেল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। হাহাহা। কিন্তু ব্যাপারটা আরো জটিল। গোটা যুদ্ধটা একটা ব্যবসা। কর্পোরেশনগুলো যখন যুদ্ধ নিয়ন্ত্রন করে, যুদ্ধটাই যখন হয়ে যায় কর্পোরেশনগুলোর মুনাফা তৈরির মাধ্যম, তখন তো যুদ্ধ আরো হবে।
বিশেষ করে সেইসব যুদ্ধ হবে, যেসব যুদ্ধে না আছে হেরে যাবার ভয়। না আছে লোকসানের ভয়।
ইরাকের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র ছিল না, এটা ভালো করেই আমেরিকা জানতো। যদি সত্যি সত্যিই ইরাকের কাছে মরনাস্ত্র থাকতো, তাহলে আমেরিকা যুদ্ধে যেতোই না। যেমন উত্তর কোরিয়ার সাথে সে যুদ্ধে যায় না।
আর এই ব্যাপারটাই ভবিষ্যতে ভীতির কারণ।
জন বোল্টনের মত warmonger আমলারা মার্কিন নীতি নির্ধারকদের যুদ্ধে যাবার জন্য ইনফ্লুয়েন্স করে ডিফেন্স কনট্রাক্টরদের কাছ থেকে মোটা টাকা খেয়ে।
যুদ্ধ যখন ঠিকাদারের হাতে চলে যায়, নীতি নয়, টাকা যখন পলিসি নিয়ন্ত্রন করে, যুদ্ধ যখন ব্যবসা হয়ে যায়,
তখন পৃথিবীতে গুলি চলতেই থাকবে। থামবে না।