Tuesday, December 8, 2020

৭/৮ ই ডিসেম্বর, ১৯৪১ ... a date which will live in infamy

 ১৯৪১ সালের ৭ই ডিসেম্বর সকাল ৭ঃ৪৮ মিনিটে (মতান্তরে ৭ঃ৫৫ মিনিটে)  জাপান পার্ল হারবার আক্রমন করে। 

এইসময়টা Hawaii Time zone. 

সকাল ৯ টা নাগাদ জাপানের বোমাবাজি শেষ হয়। 

অর্থাৎ, 

পার্লহারবারে সকাল ৯ টার সময় যখন জাপানি দুইদফা হামলা শেষ হয়, 

তখন বাংলাদেশে ৮ তারিখ দিবাগত রাত ১ টা বাজে। 

অর্থাৎ ৮ তারিখ কেবল শুরু হয়েছে। 

অন্যদিকে ওয়াশিংটন ডিসি'তে তখন বাজে দুপুর ২ টা। সোমবার, ৭ই ডিসেম্বর। 

মজার ব্যাপার হল, জাপানে তখন ৮ই ডিসেম্বর, ৪ঃ০১ মিনিট। কেবল ভোর হতে সামান্য বাকি... 

তো ৮ই ডিসেম্বর জাপান যখন আমেরিকার বিরুদ্ধে লিটারেলি যুদ্ধ শুরু করে তখন আমেরিকাতে ৭ তারিখ দুপুর। 

অন্যদিকে পার্ল হারবার আক্রমনের ৮ ঘন্টা ৪৫ মিনিট পর, 

অর্থাৎ জাপানি সময় ৮ তারিখ দুপুর ১ঃ৪৫ মিনিটে জাপান ফিলিপাইন আক্রমন করে। 

জাপান যখন ফিলিপাইন আক্রমন করে, আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসি'তে তখন ৭ই ডিসেম্বর রাত ১১ঃ৪৫ মিনিট। 

মনে রাখা উচিৎ, ফিলিপাইন তখন কিন্তু স্বাধীন হয়নি। স্প্যানিশদের সাথে যুদ্ধে জিতে আমেরিকা তখন ফিলিপাইন  , পোয়ার্তো রিকো এবং গুয়াম নিজেদের দখলে নিয়েছে।

আমেরিকানরা কিন্তু এগুলোকে কলোনি বলেনা। ব্যাপারটা সুক্ষ। ভাষাগত মাইর প্যাচ। আমেরিকানরা তখন এটাকে বলে ওভারসিজ টেরিটোরি। 

এগুলোকে কলোনি হিসেবে ট্যাগ দিলে আমেরিকা তখন আর রিপাবলিক থাকে না। ব্রিটিশ বা ফ্রেন্স বা স্প্যানিশদের মত আমেরিকাও হয়ে যায় তখন সম্রাজ্য। 

"Empire"বা "colonial empire"টাইপের শব্দগুলোর ব্যাপারে আমেরিকা বরাবরই সাবধান ছিল। কোনোভাবেই এই ট্যাগগুলো যাতে তাদের গায়ে না লাগে, এই ব্যাপারটা কেয়ারফুল দেখা হতো। 

ছয়মাস যুদ্ধ করে ফিলিপাইন দখলে নিয়েছিলো জাপান। ৬ই মে, ১৯৪২ সালে আমেরিকার  Lieutenant General Jonathan Wainwright জাপানের কাছে আত্মসমর্পন করে। এই ছয়মাসে ২০ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা মারা যায় যারা আগে থেকেই ফিলিপাইনে পোস্টেড ছিল। লাখের উপর মার্কিন তত্ত্বাবধানে থাকা ফিলিপিনো সেনাও জাপানিজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। (এখানে একটা বিষয় বলে রাখে। ১৯৩৬ সালে মার্কিনীদের সাথে ফিলিপিনোদের চুক্তি হয়েছিলো যাতে বলা হয়েছিলো ১৯৪৫-৪৬ নাগাদ মার্কিনীরা তলপিতলপা গুটিয়ে ফিলিপাইন ত্যাগ করবে। ফিলিপিনোরা তাদের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামও করেছে প্রথমে স্প্যানিশদের সাথে। এরপর মার্কিণীদের সাথে। যাই হোক। সেই কথা আপাতত থাক) 

তো একই দিনে জাপান wake island এবং Guam আক্রমন করে। 

আমেরিকার গুয়ামে যখন জাপান আক্রমন করে, তখন সেখানেও আট তারিখ। 

তো মোট কথা হল, আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসিতে যখন সাত তারিখ শেষ হবে অবস্থা অর্থাৎ মধ্যরাত, ততক্ষণে জাপান মোটামুটি ফুলস্কেলেই প্যাসিফিকে হামলা পড়েছে কেবল মাত্র পার্ল হারবার নয়, আরো বড়বড় মার্কিন স্থাপনায়। 

সাত তারিখেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য একটি স্পিস ড্রাফট করা হয়, যা তিনি পরের দিন সকালে উঠে এডিটও করেছিলেন। 

ইন্টারেস্টিং বিষয়টা দেখুন। তিনি bombing in Hawaii and philipines লিখাটা কেটে দিয়ে লিখেছিলেন, bombing in Oahu 

ভাষনের শুরুতেই লিখেছিলেন, "Empire of Japan" আকস্মিক হামলা চালিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর। 

ফিলিপাইনের ম্যানিলাতে হামলার ব্যাপারটিও তিনি কেটে দিয়েছেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই ম্যানিলার কথা টানলে "পলিটিক্যালি কারেক্ট" থাকা যায় না। অর্থাৎ জাপানকে ''empire of japan"হিসেবে ট্যাগ দিলে তখন প্রশ্ন আসতে পারে, ফিলিপাইনে আমেরিকা কি করে? 

😛 

যাই হোক। এই ভাষনটা ৮ই ডিসেম্বর মার্কিন কংগ্রেসে রুজভেল্ট পাঠ করেন। 

এরপর আমেরিকা জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ভাষণটি Infamy speech হিসেবেই পরিচিত। 

এখানে উল্লেখ করে রাখি, জাপান কিছুদিনের ভেতরই ব্রিটিশ কলোনি, যেমন সিংগাপুর, হংকং, মালয় আক্রমন করেছিল। 

যাই হোক। 

আরো একটা তথ্য দিয়ে রাখি। 

১৯৪০ সালে আমেরিকাতে আদমশুমারি হয়। 

তাতে দেখা যায়, 

জনসংখ্যা বিচারে আমেরিকার মেইনল্যান্ডে থাকে ১৩ কোটি মানুষ। 

আর টেরিটোরিগুলোতে থাকে ১ কোটি ৮৮ লক্ষ মানুষ। 

টেরিটোরিগুলোর ভেতরে সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ ১ কোটি ৬৩ লাখ মানুষ থাকে ফিলিপাইনে যারা মার্কিন পাসপোর্ট হোল্ডার। 

প্রতি ৮ জনের ১ জন আমেরিকান তখন mainland এর বাইরে বসবাস করেন। 

হাওয়াই'তে তখন ৪ লাখ ২৩ হাজার মানুষ বসবাস করে। 

আলাস্কা তখনও স্টেটের মর্যাদা পায়নি। 

আলাস্কাতে তখন থাকতো মাত্র ৭২ হাজার মার্কিন নাগরিক। 

এসব কথা লিখলাম ইতিহাস কপচানোর জন্য নয়। জাস্ট এটা দেখানোর জন্য যে একজন পলিটিসিয়ান তার শব্দ চয়নের ব্যাপারে কতটা সাবধানী। 

আফটার অল, 

মার্কিন কংগ্রেসই পারে একটি দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করতে। 

মার্কিন কংগ্রেসের কাছে প্রেসিডেন্ট আর্জি জানাচ্ছে। 

মার্কিন ট্যাক্স আর রিসোর্স ব্যয় হবে, সেইসাথে সেনাদের জীবন যাবে যেই যুদ্ধে, 

সেই যুদ্ধ ডিক্লেয়ার করার আর্জি জানাতে এই স্পিচ। এই স্পিচ মার্কিন সাধারণ জনগন শুনবে। যারা ট্যাক্স দেয়। 

তো কয়জন সাধারণ মার্কিনীরা জানে আমেরিকার কয়টা ওভারসিজ টেরিটোরি আছে? ইনফ্যাক্ট কিছুদিন আগে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেও বোঝাতে হয়েছিলো পোয়ের্তোরিকো আমেরিকার টেরিটোরি :v 

তো তাদের কাছে আর্জি জানাতেই রুজভেল্টের চেষ্টা ছিল যতটা সম্ভব পলিটিক্যালি কারেক্ট ভাবে স্পিচটা বানানো। 



যাই হোক, 

আমেরিকার এখন ৫টি ওভারসিজ টেরিটোরি ৯টি uninhabitted টেরিটোরি এবং আরো ২টি ডিস্পিউটেড টেরিটোরি আছে। এসব ছোটখাটো অনেক টেরিটোরি যুদ্ধ পরিচালনার সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। এবং প্যাসিফিক ও আটল্যান্টিকে নেভাল ডমিনেশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

Read More »

Friday, August 7, 2020

আয়া সোফিয়াকে মিউজিয়াম থেকে মসজিদ নিয়ে আমার ভাবনা

 


অটোম্যান সম্রাজ্যের Interregnum (১৪০২-১৪১৩ সাল) সময়কালের ৪ জন সুলতান বাদ দিলে,

মোট অটোম্যান সুলতান ছিল ৩২ জন।
এই ৩২ জনের ভেতর ৪ জন সুলতান বাদে বাকি সবার জন্ম ইউরোপিয়ান নারীর গর্ভে।

অটোম্যান সম্রাজ্য যখনই ইউরোপে বিস্তার লাভ করে, তখনই এই জিনিসটা শুরু হয়। ইউরোপের মেয়েদের ধরে নিয়ে হেরেমে ঢোকানো হতো। এরপর তারা হয়ে যেতো সম্রাটের কনকুবাইন, বা দাসী।
বন্দী জীবন।
বিশাল হেরেমে মেয়েদের ভেতর লেগে থাকতো রাজনীতি। কে কাকে টক্কর দিয়ে উপরে উঠতে পারে।
এদের গর্ভেই সম্রাটের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারি জন্ম নিতো।
এরা পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতো।
কনভার্ট হইতো।
এজন্য ইউক্রেনের মেয়ে রোক্সেলানা হয়ে গেল হুররাম সুলতান।
গ্রিসের মেয়ে আনাস্থাসিয়া হয়ে গেল কোসেম সুলতান।
রাশিয়ার নাদীয়া হয়ে গেলো তুরহান সুলতান।

অটোম্যান সম্রাজ্য ক্ষমতার শীর্ষে ছিল মুলত Soleiman the Magnificant এর সময়ে।
তবে ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়ে গিয়েছিলো সোলেয়মানের বাবা, সুলতান সেলিম।
সে ছিল প্রথম অটোম্যান সুলতান, যে খলিফা পদ দখলে নিয়েছিল।
এর কারণ হল, সে আরব এবং উত্তর আফ্রিকার ভুমধ্যসাগর ঘেঁষা আরব মুসলিম দেশগুলোকে অটোম্যান টেরিটোরির ভেতরে নিয়ে আসে। এবং আরব খলিফা হটিয়ে নিজেই খলিফা হিসেবে ঘোষনা দেন।
এজন্য তার ছেলে সুলতান সোলেয়মান হল অটোম্যানদের ভেতর দ্বিতীয় খলিফা।

সোলেয়মানের মা ছিল হাফসা সুলতানা। ক্রাইমিয়ার মেয়ে।
আর সোলেয়মানের বৌ তো হুররাম 
এরে সবাই চেনে।
সেইসময়কালে অটোম্যানরা ছিল আজকের সময়কালের আমেরিকার মত। সুপারপাওয়ার।

অটোম্যান সম্রাজ্যের ইতিহাসে ২৮৯ জন উজির (তথা প্রধানমন্ত্রী) ছিল।
আপনি বিখ্যাত যার নামই নেবেন, দেখবেন অধিকাংশই ইউরোপিয়ান।
যেমন পারগালে ইব্রাহিম পাশা ছিল গ্রিসের।
সাকুলু মেহমেদ পাশা ছিল বসনিয়ার।
আবার রুস্তম পাশা, যাকে আপনারা হয়ত অনেকেই নেগেটিভলি দ্যাখেন  এই রুস্তম পাশা কিন্তু অটোম্যান সম্রাজ্যের অন্যতম শেষ্ঠ উজির ছিল।
তার আমলে অটোম্যান ট্রেজারি ছিল ভরপুর।
অর্থনৈতিক ব্যাপারস্যাপারে সে ব্যাপক সংস্কার করেছিল।
এই রুস্তম পাশা ছিল ক্রোয়েশিয়ান।
এছাড়া আলবেনিয়া, বসনিয়া, গ্রিস থেকে অনেকজন উজির হয়েছিলো।
অটোম্যান সম্রাজ্যের উজির হওয়া আর আগুনে ঝাপ দেয়া একই কথা।
খুব কম উজিরই স্বাভাবিকভাবে মরতে পেরেছে। এটা ভয়াবহ একটা পোস্ট ছিল।
এছাড়া সম্রাটের কেবিনেট, তথা দরবারের সদস্য হওয়া আরো ঝুঁকি পূর্ণ ছিল। বিশেষ করে সোলেয়মানের বাপ সেলিমের আমলে।
উঠতে বসতে ফাঁসি।
ভুল করলেই ফাঁসি।

অটোম্যানদের সেই বিখ্যাত নেভাল কমান্ডার হায়দারউদ্দিন বারবারোসা ছিল আলবেনিয়ার লোক।

অটোম্যান সম্রাজ্যের পরিসর যখনই তুরস্কের আনাতোলিয়ান প্যানিনসিলা থেকে প্রসারিত হয়ে ইউরোপে ছড়িয়ে যায়,
এরপর সম্রাট মুরাদের আমলে তৈরি করা হয় জেনেসারি ফোর্স। যা আর্মির স্পেশ্যাল ফোর্সের মত এলিট ফোর্স।
যেটা ছিল ইউরোপের প্রথম স্ট্যান্ডিং আর্মি।
অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতনভোগী পেশাদার আর্মি।
এর আগে পৃথিবীতে আর্মি বলতে যা ছিল, সেটা হল রাজ্যের গোত্রপতিরা তাদের ব্যানারম্যানদের ডেকে সম্রাটের জন্য সৈন্য সরবরাহ করতো।
গেম অফ থ্রোনস সিরিয়াল যারা দেখেছেন, তারা নিশ্চয় ধরতে পারতেছেন সিস্টেমটা কিভাবে কাজ করে।

তো এই জেনেসারি ফোর্স দেখে ইউরোপের দেশগুলো ব্যাপক ভয় পেতো। এই জেনেসারি ফোর্স কিভাবে তৈরি করা হয়েছিলো, সেটা তো জানেনই হয়ত।
অটোম্যান সম্রাজ্যের ইউরোপিয়ান টেরিটোরিতে বসবাসরত ইউরোপিয়ান নন মুসলিমদের পরিবারের একটি করে বাচ্চা ছেলেদের খাজনা হিসেবে জোর করে ধরে নিয়ে ভর্তি করা হতো ট্রেনিং সেন্টারে।
এরপর বাচ্চাকাল থেকে ট্রেনিং দেয়া হতো। ধর্মান্তরিত করা হতো। এদের অনেকেই আর কখনো তাদের পরিবারের পরিচয়ও জানতে পারতো না। ভুলে যেতো।
বড় হলে এরাই হত অটোম্যানদের সবচেয়ে ফিয়ার্স ফাইটিং ফোর্স। এদের ভেতর থেকে সম্রাটের পার্সোন্যাল গার্ড হত কেউকেউ। অনেকে আবার উজিরও হয়ে যেতো। দরবারের পাশা হতো।

কনস্ট্যান্টিনোপল দখল করতে এই জেনেসারিদের সাথে বাইজেনটাইন সম্রাটের ভাড়া করা ইউরোপিয়ান মার্সেনারি তথা জাস্টিনিয়ানির soldier of fortune তুমুল যুদ্ধ হয়।
এই শহরটি সম্ভবত দুনিয়ার সবচেয়ে দামি ভুমি, পলিটিক্যালি এবং স্ট্যাটেজিক্যালি দেখলে।
মাঝ দিয়ে বসফরাস বয়ে গিয়েছে, যার একপাশে কৃষ্ণ সাগর, অন্যপাশে মারমারা হয়ে ভুমধ্যসাগর।
এই বসফরাসের নিয়ন্ত্রন পাওয়ার জন্য কত দেশ কত চেষ্টা করেছে।
এমনকি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ানদের সাথে মিত্র ইংরেজ আর ফরাসিদের ডিল ছিল তুরস্কের হাত থেকে এই শহর দখল করে রাশিয়ার হাতে তুলে দেবার।
প্রায় সফল হতে গিয়েও হয়নি মোস্তফা কামালের জন্য।
এই লোক তুরস্ককে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
তা না হলে আজও আরবের মত তুরস্ক ভেঙ্গে চুরমার করতো পশ্চিমারা।
যাই হোক, সেসব ইতিহাস বলতে গেলে রাত শেষ হয়ে যাবে।

রোমান সম্রাট কনস্ট্যান্টিন দ্যা গ্রেট, যার কারণে আজ আপনি দুনিয়াতে শত কোটি খ্রিস্টান দেখতেছেন, সেই কনস্ট্যান্টিন দা গ্রেট খ্রিস্টান ধর্মে কনভার্ট হয়ে গোটা রোমান সম্রাজ্যে খ্রিস্টান ধর্ম ছড়িয়ে না দিলে ইহুদিদের মত আজও খ্রিস্টানদের সংখ্যা আহামরি বেশি হতো না পৃথিবীতে।
তো সম্রাট কনস্ট্যান্টিনের নামে এই শহরটির নামকরণ হয়। এবং এটাকেই রাজধানী করা হয়। স্ট্যাটেজিক এবং চমৎকার আবহাওয়ার কারণে।
সম্রাট কনস্ট্যান্টিন চাইলে কিন্তু ইউরোপের যেকোনো শহর, অথবা আরবের যেকোনো শহর, এমনকি জেরুজালেম, বা আফ্রিকার মিশরের আলেকজ্যান্দ্রিয়া, যেকোনো শহরকে রোমান সম্রাজ্যের রাজধানী বানাতে পারতেন। কিন্তু বানিয়েছিলেন ঐ বসফরাসের তীর ঘেঁষা দুইপাড়ে অবস্থিত শহরটিকে।
এরপর এই শহর হয়ে যায় অনেকের জন্য হোলি গ্রেইল।
খ্রিস্টানদের ভেতরে বিভাজন তৈরি হলে রোম হয় ক্যাথোলিক চার্চের হেড কোয়াটার আর এই কনস্ট্যান্টিনোপল হয় গ্রিক অর্থোডক্সির হেড অফিস।
পরে কনস্ট্যান্টিনোপল খ্রিস্টানদের হাতছাড়া হয়ে গেলে গ্রিক অর্থোডক্স চার্চের হেড অফিস সরিয়ে রাশিয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়। রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের সাথে আজকের গ্রিক অর্থোডক্স চার্চের কানেকশন ছিল এটাই।

আর আয়া সোফিয়া?
ওরে ভাই, এটা তো বিখ্যাত জায়গা।
আর এটার পলিটিক্যাল সিগনিফিকেন্স অনেক।
এটা সিম্বলিক।
এটা প্রথমদিকে ছিল চার্চ অফ কনস্ট্যানটিন।
এরপর ৫৩২ সালে, সম্রাট জাস্টিনিয়ান, আজকে আপনি যে ডিজাইনটি দ্যাখেন, সেটা অনুসারে এই চার্চ তৈরি করেন।
পরে এটা গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ হয়।
একসময় ক্যাথেলিক Crusader খ্রিস্টানরা ইউরোপ থেকে এসে জেরুজালেম উদ্ধার করার বদলে উল্টো কনস্টানটিনোপল দখল করে আয়া সোফিয়ারে রোমান ক্যাথলিক চার্চ বানিয়ে বসে। 
পরে আবার গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ এটা ফিরে পায়।

এরপর যখন অটোম্যান সম্রাট প্রথম সুলতান মেহমেদ (যার মায়ের বাড়ি সার্বিয়া) তিনি যখন কনস্ট্যান্টিনোপল দখল করেন,
তখন এই শহর খ্রিস্টানদের হাতছাড়া হয়।
এরপর আয়া সোফিয়াকে মসজিদ বানিয়ে রাখা হয়।
প্রায় ১০০০ বছরের কাছাকাছি চার্চ ছিল, এরপর পরের প্রায় ৪৫০ বছরের মত ছিল মসজিদ। এরপর যখন মোস্তফা কামাল আধুনিক তুরস্ক প্রতিষ্ঠা করেন,
তখন তিনি খোদ এই কনস্ট্যান্টিনোপল থেকে রাজধানী সরিয়ে নেন। এবং পোস্টাল সার্ভিসকে নির্দেশ দেন, কেউ যদি ইস্তাম্বুল ছাড়া আরো যেসব ভিন্ন নাম কনস্ট্যান্টিনোপলের আছে, সেগুলো যদি ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করে, তাহলে সেই চিঠি প্রেরকের কাছে ফিরিয়ে দিতে।
তিনি রাজধানী সরিয়ে নিয়ে আনাতোলিয়াতে নিয়ে যান। এর পেছনে স্ট্রাটেজিক এবং হিস্টোরিক্যাল কারণ ছিল।
তুরস্ক চাচ্ছিলো, অটোম্যান সম্রাজ্যের লিগ্যাসি থেকে সরে তার্কিশ রিপাবলিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে। পুর্বের লিগ্যাসি ভুলে সবকিছুর ফ্রেশ স্টার্ট দিতে।

আয়া সোফিয়াকে তিনি মিউজিয়ামে বদলে দেন।
ইস্তাম্বুলে বিখ্যাত মসজিদের অভাব নেই।
সবচেয়ে বিখ্যাত হল সুলতান আহম্মেদ মসজিদ (যেটাকে আপনারা নীল মসজিদ বলেন)
আরেকটা হল বিখ্যাত সোলেয়মানিয়া মসজিদ।
সুলতান সোলেয়মান যা বানিয়েছিলো।
এর ডিজাইন করেছিলো আর্কিটেক্ট সিনান। তার নামে ইস্তাম্বুলে নামকরা একটা বিশ্ববিদ্যালয় আছে।
সোলেয়মানের ভালো একটা গুন ছিল প্রতিভা খুঁজে বের করতে পারা।
আসলে এখনও একজন রাজা বাদশাহ বা প্রেসিডেন্ট, যেটাই বলেন, এদের জাস্ট একটা গুণ থাকলেই কিন্তু চলে। সেটা হলে কাকে কোনপদে বসালে দেশের উন্নতি হবে, সেটা বোঝা। এটাই বড় কোয়ালিটি।

যাই হোক,
৬৭৪ বছর অটোম্যান সম্রাজ্য টিকে ছিল।
কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সবসময় রাজার ছেলে রাজা হত।
এটাই ছিল নিয়ম।
এবং রাজ্যে ফিৎনা ফ্যাসাদ যাতে না হয়,
সেটার জন্য করা হয়েছিলো ফ্রাক্টিসাইড আইন। একে জাস্টিফাই করার জন্য ধর্মীয় ব্যাখ্যাও ছিল।
অর্থাৎ সুলতান হবার সাথেসাথে অটোম্যান Mute Executioner দের নির্দেশ দেয়া হতো, সুলতানের আপন-সৎ, যত ভাইব্রাদার আছে, সব মেরে দিতে।
এবং এই নিয়ম মেলাদিন চলেছে।
সুতরাং বুঝতেই পারতেছেন, সুলতানের যত বেশি ভাইব্রাদার থাকবে, সিংহাসনে আরোহোনের দিনটা হবে ততটাই মারাত্মক।
সুলতান মাহমুদ ১৫৯০ সালে সুলতান হবার পর তার ১৯টা ভাইকে এক্সিকিউট করা হয়।
কারণ সুলতান মাহমুদের বাপ ছিল সুলতান মুরাদ। মুরাদের মা ছিল ইতালিয়ান মহিলা নুরবানু।
ওদিকে মুরাদের বৌ ছিল আলবেনিয়ার মেয়ে সাফিয়া সুলতানা। সে আবার ছিল হুররামের মেয়ে মিহিরিমার হ্যান্ডপিক।

তো সাফিয়ার সাথে তার শ্বাশুড়ির ছিল সাপে নেউলে সম্পর্ক। ওদিকে মুরাদ আবার সাফিয়ারে ছাড়া অন্যকাউরে পছন্দ করতো না।
নুরবানু তখন মুরাদের খাবারে নানান মেডিসিন খাইয়ে, সিস্টেম করে তারে রীতিমত সাইকো বানিয়ে ফেলেছিলো। আসলে  স্পষ্টভাবে ব্যাপারটা প্রকাশ করার মত শব্দ খুঁজে পেলাম না 
তো মুরাদের এরপর প্রচুর পোলাপান হয়েছিলো। হেরেমের প্রায় সব মেয়েই প্রেগনেন্ট হয়ে যায়।
ভাগ্যিস, ছেলে হয়েছিলো মাত্র ২০ টা। আরো বেশি হয়নি বলেই রক্ষা।

সুলতান আহম্মেদের আমলের শেষদিকে এসে ভাই হত্যার নিয়ম বন্ধ হয়। এরপর যেটা করা হত, সেটা হল ভাইব্রাদাদের কাফেজে বন্দি করা।
এই জীবন মৃত্যুর চেয়েও কষ্টের।
যেমন, দ্বিতীয় সোলেয়মান যখন মাত্র নয় বছর বয়স, ১৬৫১ সাল, তখন তিনি কাফেজে বন্দি হন।
এরপর ১৬৮৭ সালে, অর্থাৎ ৩৬ বছর পর সেই বন্দী কাফেজ থেকে মুক্ত হয়ে আবিস্কার করেন, জেনেসারিরা বিদ্রোহ করে তাকে সুলতান বানিয়ে দিয়েছে 

চিন্তা করেন কি ভয়াবহ অবস্থা।

যাই হোক। আপনি অতীতের ইতিহাসগুলোকে হাল আমলের মরাল স্ট্যান্ডার্ড দিয়ে মাপতে গেলে বিপদে পড়বেন। আপনি এখন এমন অনেককিছুকেই নেতিবাচকভাবে দ্যাখেন, যা হয়ত সেইসময়কার মানুষদের কাছে মোটেও অনৈতিক মনে হত না।
সেইসাথে কালচারাল ব্যাপারটিও আছে। যেমন বহুবিবাহ আমাদের কালচারে নেতিবাচক। আবার আফ্রিকা এবং আরবের অনেক কালচারে নেতিবাচক নয়।
যেমন হেরেম সিস্টেমটা কিন্তু একসময় অটোম্যানরাই বন্ধ করে। জেনেসারি সিস্টেমও ওরাই বন্ধ করে দেয়। সময়ের সাথে তাল মেলাতে।
আবার দাস প্রথা কিন্তু আপনার চোখে খারাপ। অতীতে অনেক রাজা বাদশাহ এটা চালিয়ে গিয়েছে।

আপনি একবার হুররাম, বা তারই স্বজাতি তুরহানের জীবনে দ্যাখেন।
আচ্ছা, ওদের জীবনে নয়। আপনার নিজের বোনের সাথে যদি এমন হইতো, আপনার কেমন লাগতো?
আপনার বোনকে কিডন্যাপ করে যদি অন্যদেশের রাজ বাদশাহ'র হেরেম খানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।

তো এতো কথা কইলাম। জাস্ট একটা কথা বোঝানোর জন্য,
আমাদের দেশের অনেকে অটোম্যান সম্রাজ্যকে যেভাবে ভাবে, ব্যাপারটা তেমন না।
আমি এটাকে কখনোই তুর্কি সম্রাজ্য বলিনা। এটাকে অটোম্যান ডায়নেস্টির শাসন বলাটাই যুক্তি সঙ্গত। কারণ মুরাদ-৪ যখন ১৬৪০ সালে তার মৃত্যুসজ্জায় নিজের জীবিত শেষ ভাইকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলো, সেই নির্দেশ অমান্য না করা হল অটোম্যান ডায়নেস্টি ওখানে শেষ হয়ে যেতো এবং সম্রাজ্যের শাসন বুঝে পেতো কে জানেন? রাশিয়ার ক্রাইমিয়ার খানের পরিবার। কারণ এরাই ছিল দ্বিতীয় পাওয়ারফুল পরিবার।
ওরা কিন্তু তুর্কি না।
অটোম্যানদের সিস্টেমের সাথে অন্য কোনো সম্রাজ্যের সিস্টেম মেলানো সম্পূর্ণ ভুল প্রচেষ্টা।

আর অটোম্যান সম্রাজ্যে বরাবরই আরবরা ছিল শোষিত জাতি। এবং হরহামেশা আরব রিভল্ট বা বিদ্রোহ হইতো অটোম্যানদের বিরুদ্ধে।
ইনফ্যাক্ট, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশরা অটোম্যান সম্রাজ্য ভেঙেছে এই আরবদেরকে কাজে লাগিয়ে।
এবং এখনও আরব দেশগুলো তুরস্কের ব্যাপারে সতর্ক থাকে।

এরদোগান এখন তুরস্কের ক্ষমতায়। চুরি চামারি করে ক্ষমতায় আসেনি। ট্রাম্পের মত ক্যালকুলেটিভ ওয়েতে হিসাব করেছে। এনাতোলিয়ান প্যানুউন্সুলার তুলনামুলক পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলোকে ফোকাস করেছে। সেখানকার ভোটগুলো বাগিয়ে নিয়েছে।
এরদোগানের দল তুমুল জনপ্রিয়, একথা বলা যাবে না। কিন্তু ক্ষমতায় যেতে গেলে পার্লামেন্টে যে কয়টা সিট দরকার, সেগুলো বাগিয়ে নেবার মত রাজনীতি এখন তারা করে যাচ্ছে।
এখন তার ক্ষমতা আছে, আয়া সোফিয়ারে মসজিদ বানিয়ে দিলো। যেমন এখন মোদির ক্ষমতা আছে, সে বাবরি মসজিদকে মন্দির বানালো।
এরদোগান ধর্মকে রাজনীতির পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে।
এই চর্চা পৃথিবীতে সর্বোত্র এখন চলমান।
আয়া সোফিয়া অনেক বড় সিম্বলিক ব্যাপার।
বাংলাদেশের অনেক গাধার দল এরদোগান'রে নিয়ে খেলাফতের স্বপ্ন দ্যাখে। অন্যদিকে এরদোয়ান মুলত দ্যাখে তুর্কি সম্রাজ্যবাদের স্বপ্ন। যেটাতে ধর্ম হবে একটা প্রভাবক।

সেই স্বপ্ন শ্রেফ তার স্বপ্ন দোষ হয়েই থেকে যাবে হয়ত।
ইউরোপিয় ইউনিয়নে ঢোকার অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এখন দক্ষিন দিকে চোখ দিচ্ছে। অর্থাৎ সিরিয়া, ইরাক, জর্ডান, লিবিয়া, এসব দিকে।

যাই হোক। এখানে কে ভালো কে খারাপ, এসব ব্যাপার নয়।
ভালো খারাপ সবই আপেক্ষিক।
সেকুল্যার দলগুলো ভোটে জিতে ক্ষমতায় এলে তারা আবার ওটাকে মসজিদ থেকে মিউজিয়াম বানিয়ে দেবে।
হিসাব সহজ।
এতো চিন্তার কিছু নেই।
আর তুরস্ক একটু আলাদা।
মেসুত ওজিলের বিয়ের ভিডিও দেখেছেন? 
আবার তুরস্কের মসজিদের ভেতর জিন্স শার্ট পরা নন মুসলিম ইউরোপিয়ান মহিলা চাইলেই মাথায় একটা কাপড় দিয়ে ঢুকে যেতে পারে। ভিডিও করতে পারে। এমন অনেক ভিডিও আপনি ইউটিউবে ট্রাভেলার ভিডিও ব্লগারদের কাছ থেকে পাবেন।
ওখানকার কালচার আলাদা।

যাই হোক। আয়া সোফিয়া আছে। থাকবে আপাতত।
ওর নামের শেষে যেটাই থাকুক, দিনশেষে ওটা একটা ইতিহাস।

Read More »

সিস্টেম নিয়ে আমার ভাবনা

 


হিটলারের নামে একটা Quote চালিয়ে দেয়া হয় হরহামেশা,

"If you don't like a rule/system, just follow it, reach the top and change it"

বাস্তবে এই কথা হিটলার আদেও বলেছিলেন কিনা, সন্দেহ আছে। যদি ধরি এটা হিটলারই বলেছিলেন, তাহলে বলতে হয়, তিনি নিজেও এটা মানেননি।
কারণ কি জানেন?
বাস্তবে এভাবে কখনো কিছু করা যায় না।
এর মানে হল আপনি সিস্টেম জিনিসটাকে অনেক ছোট পরিসরে সংজ্ঞায়িত করে অভ্যস্ত।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান আর্মির একজন সৈন্য,
এরপর সেই প্রফেসন ছেড়ে রাজনীতি,
এরপর ক্যু করতে গিয়ে জেলে যাওয়া,
এরপর জেল থেকে বের হয়ে ইকোনমিক্যাল ক্রাইসিসের সুযোগে একসময় নানান ঘটনার ভেতর দিয়ে ভোটে জিতে ক্ষমতায় যাওয়া,
এরপর, ক্ষমতায় গিয়ে পার্লামেন্টে আগুন লাগার ঘটনাকে ভিন্নখাতে ডাইভার্ট করে সেটার সুযোগ নিয়ে Night of the Long Knives নামের এক অধ্যায় রচনা করা,
যেখানে লিস্ট করে দুশমন, এবং পটেনসিয়াল দুশমন হতে পারে এমন বন্ধুদের দুইরাতের ভেতর খতম করে পুরা জার্মানির নিয়ন্ত্রন হাতের মুঠোয় নেয়া,
এসবের কোনটাকে আপনার মনে হয় Just follow it and reach the top and change it?

১৯৩১ থেকে ৩৩ ... এই সময়গুলোতে জহোরলাল নেহেরু জেলে ছিলেন। জেলে বসে তিনি তার ১৩ বছর বয়সী মেয়ে ইন্দ্রীরা গান্ধীকে চিঠি লিখতেন। ওই চিঠিগুলো কম্পাইল করে বই বানানো হয়েছে পরে।
১৯৬ খানা চিঠি।
প্রথম দিকের একটি চিঠিতে নেহেরু নিজের মেয়ের সাথে ওই উপরের বাক্যটি নিয়েই আলোচনা করেছিলেন। অর্থাৎ উপরের বাক্যটি সম্ভবত হিটলারের না। আগে থেকেই কেউএকজন বলেছিলো। কথার তো আর কোনো স্বত্বাধিকার থাকে না। মানুষের মুখেমুখে চলে আসতেছে।

তো নেহেরু উনার মেয়েকে বলেছিলেন, তোমাকে যদি কেউ বলে সিস্টেম চেঞ্জ করতে হলে সিস্টেমের ভেতরে ঢুকতে হবে। এরপর উপরে উঠে সিস্টেম চেঞ্জ করতে হবে, মনে রেখ, এভাবে জীবনে কিছু হয় না। সিস্টেম চেঞ্জ হয় বাইরে থেকে।

কথাটা কত গুরুত্বপূর্ণ। একটা সিস্টেম যদি আপনার কাছে ফল্টি মনে হয়, এর মানে হল ওই সিস্টেমে অসততা আছে, অথবা অসমতা প্রকোট।
তো আপনি ওই সিস্টেমের বাইরে থেকে সিস্টেমকে গালাগালি করলেন।
এরপর আপনি আর না পেরে সিস্টেমে ঢুকে গেলেন। ঢুকেও গালাগালি করলেন। কারণ ওই যে বললাম, ফল্টি সিস্টেম। সিস্টেমে অসমতা প্রকোট। সকল ক্ষমতা একেবারে শীর্ষ লেভেলের কাছে পুঞ্জিভুত। তো সিস্টেমে ঢুকে আপনি আপসেট।
এরপর ওয়েট করলেন একদিন নিজেও সর্বোচ্চ পদে যাবেন।
তো সর্বোচ্চ পদে বুড়োবয়সে গিয়ে দেখলেন, আপনি রীতিমত ডিক্টেটর। আপনার ইশারা ছাড়া কিছু হয় না। তো তখন কি আপনি ক্ষমতা শেয়ার করতে চাইবেন? সারাজীবন কষ্ট করলেন যার জন্য, এখন আপনার হাতেই সব।
তো ঠিক এজন্যই সিস্টেম চেঞ্জ হয় না। কেউ করতেও চায় না।

অন্যথায় ফরাসী বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, অমুক বিপ্লব, তমুক বিপ্লব, এসব কিছুই হইতো না। সবাই সিস্টেমে ঢুকতো।
আর ফায়দা হাসিল করতে শুরু করলেই চুপ হয়ে যেতো।

ফ্রিডম অফ স্পিচের দেশ আমেরিকাতেও ১৯৩৮ থেকে ৭৫ পর্যন্ত House Committee on Un-American Activities (HCUA) ছিল। এই কমিটির কাজ ছিল কমিউনিস্ট সোশ্যালিস্ট ভাবাদর্শের মানুষজনকে ধরে জেলে ভরা। অর্থাৎ ওটাই Un-American Activity

এবং হলিউডের নামকরা অনেক পরিচালকদেরও এন্টি ক্যাপিটালিস্ট ভাবধারার মুভি বানানো, বা মুভিতে প্রচ্ছন্নভাবে এন্টি ক্যাপিটালিস্ট বিষয় প্রচারণার জন্য জেলে ভরা।
অর্থাৎ আমেরিকায় দাঁড়িয়ে সবকিছুর বিপক্ষে পক্ষে চিল্লাপাল্লা লিখালিখি সবই করতে পারো। কিন্তু ক্যাপিটালিজমের জন্য কোনোরুপ হুমকি বরদাস্ত করা হবে না।
সবারই দূর্বলতা থাকে। দুর্বল জায়গায় আঘাত লাগার সম্ভাবনা দেখা দিলেই সে নড়েচড়ে বসে। পুঁজিবাদী অনুভুতিতে আঘাত লাগা আমেরিকা কখনোই সহ্য করবে না।

তো এটাই সিস্টেম। হাহাহাহা।
সিস্টেম তার জন্য হুমকি হতে পারে, এমন কোনোকিছু সহ্য করবে না।
আর যে সিস্টেমের অংশ হয়ে যাবে, সিস্টেমের মধু যে একবার খাওয়া শুরু করবে,
সে নুন খেয়ে বরখেলাপ কেনো করবে?

আর ক্ষমতার সাধ যে একবার পায়, সে ক্ষমতা ছেড়ে নিজেকে কল্পনাও করতে পারে না।
মিয়ানমারের সুচি'কে নোবেল পর্যন্ত দেয়া হয়েছিলো শান্তিতে।
কত বছর গৃহবন্দি ছিল।
গনতন্ত্রের জন্য কত নাকি সংগ্রাম করেছে ।
অথচ এখন দ্যাখেন।
ক্ষমতার সাধ পেয়ে গেছে।
এখন কিসের গনতন্ত্র, কিসের মানব অধিকার, কিসের শান্তি, কিসের নোবেল।

Read More »

তাইওয়ান






দেখুন তো, এই পরিচিত ব্রান্ডগুলো চিনতে পারেন কিনা ??




Acer..... Apacer..... HTC.....
.....Asus...... BenQ.....Cyberlink....
Foxconn....Gigabyte...............Realtek...
.........Transcend......liteOn....China Steel...
....ADATA.....SilverStone......
Thermaltake (কম্পিউটারের পাওয়ার সাপ্লাই বানায়)
...Biostar......chinaTech...

এসব ব্রান্ডের সাথে পরিচিত হবার কথা। অধিকাংশ কম্পিউটারের পার্টস প্রস্তুত করে। ইলেকট্রনিক্স বিজনেসওয়ার্ল্ডের নামকরা নাম...

এগুলো কোন দেশের কোম্পানি জানেন??
জানা কথা।  Republic of China

শুধু, সেটাই না... Republic of China বংশোদ্ভূত মানুষদের হাতে গড়া আরো কিছু কোম্পানি জগৎবিখ্যাত।
NVIDIA
Trend Micro
Yahoo !
এবং Youtube এর কো ফাউন্ডাররা Republic of China বংশোদ্ভূত।

কাহিনী হইলো Republic of China এর সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই 
বাংলাদেশ Republic of China কে স্বীকৃতি দেয় নি।
এমনকি বাংলাদেশের সাথে Republic of China এর কোনো ডিপ্লোম্যাটিক সম্পর্ক নাই।

থাকবে কিভাবে ??
রিপাবলিক অফ চীন'কে দুনিয়ার বড়বড় কোনো দেশই স্বীকৃত দেয় না ।
মাত্র ২১ টা দেশ স্বীকৃতদেয়। যাদের ভেতর সবচেয়ে পাওয়ারফুল দেশ হল পানামা আর প্যারাগুয়ে 
আর বাকিসবগুলো দেশের নাম বললে চিনবেন না
একারণে কষ্ট করে লিখলাম না

আপনি বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে রিপাবলিক অফ চীনে যেতে পারবেন না।
যদিও তাদের দেশের পন্য ছাড়া আমাদের চলেও না। (ভিন্নদেশ ভায়া হয়ে যেতে পারবেন। সেটা ভিন্ন ব্যাপার)

দেশটি People Republic of China নয়।
Republic of China.
যাকে আমরা তাইওয়ান বলে জানি।



৩৬ হাজার বর্গ কিলোমিটারের দেশটিতে জনসংখ্যা ২ কোটি ৩৩ লাখ।
দুনিয়ার উন্নত দেশগুলোর একটি 
দুনিয়ার ২১ তম বৃহৎ অর্থনীতি।
মাথাপিছু আয় ৪৩ হাজার মার্কিন ডলার। (১৭তম )

তাইওয়ানের সাথে চীনের সম্পর্ক সাপে নেউলে...
চীন স্বপ্ন দ্যাখে, তাইওয়ান'কে দখল করে মুলভুমির কমিউনিস্ট পার্টির শাসনে আনার।
আর তাইওয়ানি স্বপ্ন দ্যাখে, চীনের ভাইব্রাদার'দের কমিউনিস্ট পার্টির হাত থেকে মুক্ত করে চীনকে স্বাধীন করার 

চীনের আছে দুনিয়ার সবচেয়ে 'সাইজে বড় আর্মি"
আর তাইওয়ানের আছে ওই রিজিওনের সবচেয়ে "সফিস্টিকেটেড" আর্মি।
সেইসাথে তাইওয়ানের সাথে আছে আমেরিকা।
প্রেসিডেন্ট বুশ অঙ্গীকার করেছিলো যদি চীন কখনো তাইওয়ান আক্রমন করে, তাহলে আমেরিকা যেকোনোকিছুর বিনিময়ে তাইওয়ানকে, অর্থাৎ Republic of china কে রক্ষা করবে

ব্যাপারটা সেই ডিকটেটর মুভির মত হয়ে গেলো...
হয় এই aladeen এর পক্ষে,
না হয় এই aladeen এর পক্ষে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চীনে শুরু হয় কমিউনিস্ট vs Nationalist গৃহযুদ্ধ।
তাতে সোভিয়েত ব্যাকড কমিউনিস্টরা জিতে যায়।
মাও সে তুং ক্ষমতায় আসে।
আর ন্যাশোন্যালিস্টরা জীবন বাঁচাতে চলে যায় সাগরে ১৮০ কিমি দুরের ফরমোসা দ্বীপে। অর্থাৎ তাইওয়ানে।
সেখানে তারা নিজেদের ন্যাশনালিস্ট সরকারের অবশিষ্ট অংশ টিকিয়ে রাখে।
এবং আজ পর্যন্ত মুলভুমি চীন দখলের স্বপ্ন দ্যাখে।
তাদের ভাষায়, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির হাত থেকে চীনের ভাইব্রাদারদের উদ্ধার করা তাদের লক্ষ্য।

ইন্টারেস্টিং বিষয় হল, ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে তাইওয়ানের অর্থাৎ Republic of China (Taiwan) এর সদস্যপদ ছিলো। বিশ্বশক্তিগুলো তখন তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দিতো।

কিন্তু PRC (China) ছিলো আমেরিকার জন্য এক নিষিদ্ধ দেশ। চীনের সাথে ১৯৭১ সালের আগ পর্যন্ত আমেরিকার কোনো ডিপলোম্যাটিক সম্পর্ক ছিলো না।
সম্পর্ক করে দিয়েছিলো কে ??
পাকিস্তান। কুটনামো ভন্ডামো আর শয়তানিতে যাদের পিএইচডি আছে 

দশ বছর ধরে পাকিস্তানের চেষ্টায় আমেরিকা আর চীনের ভেতর সম্পর্ক তৈরি হয়। ইনফ্যাক্ট হেনরি কিসিঞ্জারকে লুকিয়ে, গোপনে ইয়াহিয়া খান নিজেস্ব প্লেনের ভেতর করে চীনে নিয়ে গিয়েছিলো 
দুনিয়া জানতো, কিসিঞ্জার পাকিস্তানে গিয়ে অসুস্থ হয়ে গেছেন !

যাই হোক, সেসব অন্য ইতিহাস।
ভিন্ন কোনোদিন লিখবো।
তো চীনের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক হয়।
ফলাফল, ১৯৭১ সালের ২৫ অক্টোবর জাতিসংঘ থেকে ROC আউট, আর RPC ইন 
অর্থাৎ আলাদিন আউট, তার বদলে আলাদিন ইন 

তখন অন্যান্য বড়বড় দেশগুলোও পাইকারি হারে 'আলাদিন ইন, আরেক আলাদিন আউট" করা শুরু করে।

সেই ১৯৭১ সাল থেকে তাইওয়ান আর জাতিসংঘে নেই।
মজার ব্যাপার হল, আমেরিকা এখন চীনের সবচেয়ে বড় বিজনেস পার্টনার হয়ে গেছে।
চীনও আমেরিকার সাথে ব্যবসা করে অনেক ধনী হয়েছে। একটা ধনী উন্নয়নশীল দেশ চীন। 
তবে দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি গরিব মানুষও চীনে আছে। ফলাফল, তাদের শ্রমবাজারও সস্তা।
সাপে নেউলে সম্পর্ক হলেও, বিশাল গরিব মানুষের বেকারত্ব মেটাতে হয় উন্নয়নশীল দেশ চীনকে!
ফলাফল, যতই শত্রুতা থাকুক, তাইওয়ানের সাথে ব্যবসা ঠিকই করতেছে চীন। যেমন উপরে শুরুতে যতগুলো কোম্পানির নাম বললাম, সবগুলো কোম্পানির হেড অফিস তাইওয়ানে হলেও শাখা অফিস এবং শাখা ফ্যাক্টরি চীনে আছে।
লক্ষ লক্ষ চাইনিজের দারিদ্র বিমোচন হচ্ছে, কর্মসংস্থান হচ্ছে এতে।
ফলাফল, এগুলো আপনি বাংলাদেশে বসেও কিনতে পারতেছেন। তাইওয়ানের সাথে আপনার রিলেশন থাক আর না থাক। কারণ, এসব পন্য যাতে বিক্রি হয়, সেটার নিশ্চিত করার মাথাব্যাথা তাইওয়ানের চেয়েও চীনাদের বেশি।
একারণে প্যাকেটে সবসময় made in china লিখা দেখবেন। যদিও কোম্পানি তাইওয়ানের।
Lenovo আর ইদানীং আসা Xiaomi ছাড়া চীনের আর তেমন ভালো ব্রান্ড খুবএকটা দেখবেন না। (রিসেন্টলি হোয়াওয়ে এসেছে)

আপনি যখন Foxconn মাদারবোর্ড কম্পিউটারে লাগাচ্ছেন, তখন হয়ত Foxconn কোম্পানির চীনের ফ্যাক্টরিতে চাইনিজ কর্মীরা অত্যাধিক কাজের চাপে, ইনহিউমেন কন্ডিশনে কাজ করে করে একসময় ডিপ্রেশনে ভুগে আত্মহত্যা করতেছে।
এমন এক ঘটনা ঘটেছিলো। Foxconn এর কর্মীদের এই আত্মহত্যার ঘটনায় চীন সরকার তাইওয়ানের Foxconn কোম্পানিকে গালিগালা করেছিলো।
ব্যস... এটুকুই।
লোকদেখানো কিছু মামলা হয়েছিলো।
এসব পড়লে আমাদের রানা প্লাজার কথা মনে আসে। 
হায়'রে সস্তা শ্রম। শ্রমিকের শ্রম কিভাবে সস্তা হয় !! আর সেটা নিয়ে গর্ব করা পলিটিসিয়ানেরও অভাব নয় না।
আমার দেশের মানুষের শ্রমের মুল্য অনেক কম, এই কথা বলাটা গর্বের নয়, লজ্জার।

যাই হোক, তাইওয়ানের উপকুলের এলাকাগুলোতে এন্টি ট্যাংক ম্যাকানিজম দিয়ে ঘেরা। তাইওয়ান ভয়ে ভয়ে থাকে কখন কমিউনিস্টরা আক্রমন করে চীন থেকে। মাত্র ১৮০ কিমি দূরে বলে কথা। 
তবে ওই যে বললাম, তাইওয়ানের আর্মি অনেক শক্তিশালী। সফিস্টিকেটেড। আর মার্কিন আর্মির বিশাল ঘাটি আছে সেখানে। আমেরিকার সাথে রক্ষাচুক্তিও করা আছে।
সুতরাং... বুঝতেই তো পারেন

তাইওয়ানের নিজেস্ব ভাষা আছে। আদিবাসীদের ভাষা। কিন্তু তাইওয়ান সরকার স্কুল কলেজে এখনো চীনা ভাষা শিক্ষাতে প্রাধান্য দেয়। কারণ তারা নিশ্চিত, একদিন না একদিন মুল চীনের ভুমি আবার তারা ফিরে পাবে। এক পতাকার নিচে আবার থাকবে এক চীনের মানুষ  গনতান্ত্রিক, পুজিবাদী republic of China

আমাদের দেশেও যেসব দলের সাথে চীনের সম্পর্ক একটু বেশি ভালো, তারা দেখবেন চীনকে খুশি করার জন্য সবসময় বলে, তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
হা, কথাখানা কেবলই বলার জন্য বলা। বাস্তবে তাইওয়ানের চুল ছেড়ার ক্ষমতা চীনের আছে কিনা, সন্দেহ আছে। থাকলে অনেক আগেই চুল ছিড়তো।

তাইওয়ানের উপকুল থেকে আগে বিশাল বড় লাউড স্কিপার দিয়ে, আবার মাঝেমাঝে গোয়েন্দা বাহিনীর লিফলেট ছড়িয়ে চীনের মানুষকে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সাধীনতা সংগ্রাম করতে আহবান জানানো হয়  তাদের ভাষায়, evil কমিউনিস্ট হটাও, চীন বাঁচাও।
আর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কাছে তাইওয়ান হল আমেরিকার দালাল।

চীনের আসলে ভয় কম নেই।
সামনে তালাকেই চীন তাইওয়ান, জাপান, ফিলিপাইন, দক্ষিন কোরিয়ার চেহারা দ্যাখে। সবই চীনের নাকের ডগায়। এসব দেশ ইকোনমিক্যালি অনেক পাওয়ারফুল। এবং সবগুলো দেশের সাথে আমেরিকার মিউচুয়্যাল প্রোটেকশন ট্রিটি সাইন করা। এবং সবগুলো দেশে আমেরিকার বিশাল বিশাল সামরিক ঘাটি আছে।
এই রিজিওনে চীনের বন্ধু বলতে উপরের রুশরা আর উত্তর কোরিয়া। এই যা।

তাইওয়ানে 95% মানুষ চাইনিজ। ২% আদিবাসী।
দ্বীপটি আবিস্কার করেছিলো ডাচ আর স্প্যানিশরা। এরপরই মুলত মুলভুমি থেকে চাইনিজরা গিয়ে বসবাস শুরু করে।
একসময় জাপান দ্বীপটিকে দখলও করেছিলো। যাই হোক, সেসব পুরন কথা।

তাইওয়ানের আর্মির নাম Republic of China Armed Forces
প্রায় ছয় লক্ষ মানুষ মিলিটারির জন্য available...
মিলিটারি বাজেট ১০ বিলিয়ন ডলার। আমেরিকা, ফ্রান্স, ইসরাইল, জার্মানি সহ উন্নত সবদেশই এর মিলিটারি সাপ্লাইয়ার।

কত প্যাচপুচ

Read More »

Tuesday, February 18, 2020

যুদ্ধ ব্যবসা


যদি আগে থেকেই জানো, যুদ্ধে তুমিই জিতবা, তাহলে তোমার মুখে শান্তির বাণী আসবে না। যুদ্ধ শুরুর পায়তারা তুমিই করবা।
আর যুদ্ধটাই যদি হয়ে যায় বিরাট এক ব্যবসা, তাহলে তো কথাই নেই। ইন্ধনদাতার অভাব হবে না। ইরাক যুদ্ধটা ছিল তেমনই এক ব্যবসা। জর্জ বুশের তথাকথিত ওয়ার অন টেরর শিরোনামে সাদ্দাম হটানোর যুদ্ধটা মোটাদাগে তেলের জন্য যুদ্ধ হলেও গোটা যুদ্ধটাকে পুঁজি করে মার্কিন বড়বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে আমেরিকার ট্যাক্সের টাকা পকেটে ভরেছে, ব্যবসা করেছে এবং ফায়দা উসুল করেছে, সেই বর্ননা ছোট করে লিখবো।

সমগ্র চক্রটি অনেকটা ডাকাতের উপর বাটপারী। বিষয়টি জরুরী। কারণ এই যুদ্ধ বানিজ্যে যে বা যাহারা সবচেয়ে লাভবান হয়, তারা প্রতিনিয়ত লবিং করে যাবে যুদ্ধের জন্য। এবং ভবিষ্যতে আরো যুদ্ধ হবে। কারণ যুদ্ধটাই তো ব্যবসা। বিশেষ করে যখন আপনি আগে থেকেই জানেন, আপনি যুদ্ধে হারবেন না।
২০শে মার্চ, ২০০৩ সাল। ইরাক যুদ্ধ শুরু হয়। ব্যাপক বিধ্বংসী মরনাস্ত্র আছে সাদ্দামের হাতে, এই বানোয়াট অজুহাতে জর্জ বুশ ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন চালায়। নাম দেন, “অপারেশন ফর ইরাকি ফ্রিডম”। অথচ ঠিক এক দশক আগে বুশের বাবা “সিনিয়র বুশ” ইরাকের সাথে যুদ্ধ করেছিলো কুয়েত ইস্যু নিয়ে। ১৯৯১ সালের যুদ্ধে মার্কিনীরা তখনই পারতো সাদ্দামকে হটিয়ে ইরাক দখলে নিতে। কিন্তু সেসময়ে মার্কিন নীতি নির্ধারকেরা প্রকাশ্যেই বলেছিলো, সাদ্দাম অপসারিত হলে ইরাকের ভেতরে ইরানের ইনফ্লুয়েন্স বাড়বে। শিয়া সুন্নি’র রেষারেসি শুরু হবে। ইরাক তিন খন্ড হবে। মধ্যপ্রাচ্যের স্টেবিলিটি নষ্ট হবে। আপনি ইউটিউবে Cheney in 1994 on Iraq লিখে সার্চ দিলে একটা দেড় মিনিটের ইন্টারভিউ পাবেন। তাতে দেখবেন, ১৯৯৪ সালে ডিক চেনির একটা ইন্টারভিউ। সেখানে তিনি বলতেছেন, ঠিক কি কারণে সাদ্দামকে অপসারণ করা মার্কিনীদের উচিৎ হবে না। অর্থাৎ সাদ্দামকে সরিয়ে দিলে পরবর্তীতে যা যা হবে, সবই ডিক চেনি ১৯৯৪ সালে প্রেডিক্ট করে বলেছিলেন এক টিভি সাক্ষাৎকারে।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল, নয় বছর পর জর্জ বুশ যখন ইরাকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন ডিক চেনি আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট! এবং ইরাক যুদ্ধের অন্যতম সমর্থক। এই নয়টি বছরে জিওপলিটিক্স মধ্যপ্রাচ্যে আহামরি বদলায়নি। ১৯৯১ সালে যে লজিকে সাদ্দামকে অপসারণ করা থেকে মার্কিনীরা বিরত ছিল, সে লজিকগুলো ২০০৩ সালেও সমান যৌক্তিক ছিল। কিন্তু এরপরও কেনো এই যুদ্ধ?
সেই সমীকরণ পরে। তবে আগে দেখা যাক, এই যুদ্ধে কিভাবে কতিপয় কর্পোরেশন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পকেটে ভরেছে।
প্রথমেই আসি, আলোচিত সমালোচিত BlackWater প্রসঙ্গে। BlackWater, যার বর্তমান নাম Academi
এটি একটা প্রাইভেট মিলিটারি ফোর্স।
আচ্ছা, তো প্রাইভেট মিলিটারি ফোর্সের সুবিধা কি? সেটা বোঝানোর জন্য বছরখানেক আগের একটা উদাহারণ দিচ্ছি।
রাশিয়ার ২০১৪ সালের ক্রাইমিয়া এনেক্সেশনের কথা মনে আছে? কৃষসাগরের পাশের ক্রাইমিয়া প্রভিন্স ইউক্রেনের মানচিত্রে ছিল। রাশিয়া সেখানে সবুজ ইউনিফর্মের সেনা পাঠিয়েছিলো যাদের ইউনিফর্মে কোনো নাম, পদক, ব্যাচ, বা দেশের পতাকা ছিল না। মিডিয়া এদেরকে নাম দিয়েছিলো রাশিয়ান গ্রিন আর্মি।


বাস্তবে এরা ছিল রাশিয়ার Wagner Group নামের প্রাইভেট মিলিটারির সদস্য। প্রথম এক সপ্তাহ রাশিয়া স্বীকারই করেনি, রাশিয়ান সরকার এদেরকে পাঠিয়েছে। বোঝার কিছুই বাকি ছিল না। যদি কাগজে কলমে বলার উপায় ছিল না যে, “রাশিয়ান আর্মি ইউক্রেনে অনুপ্রবেশ করেছে”
সরকারি আর্মি আর টাকা দিয়ে বা কনট্রাক্ট দিয়ে ভাড়া করা প্রাইভেট আর্মিই এই এক সুবিধা।
সরকারি আর্মির অনেক রুলস রেগুলেশন আছে। প্রাইভেট আর্মির এতোসব নেই। টাকা দিবেন। কনট্রাক্ট দিবেন। কাজ দিবেন। করে দেবে।
আর প্রাইভেট আর্মির সদস্য যদি গুলি খেয়ে মরে, তাহলে সেটা নিয়ে মিডিয়াতে আউটক্রাই হবে না। আফটার অল, মরলে মরেছে ঠিকাদারের লোক। সরকারের দায় সেখানে থাকে না।
তো প্রাইভেট মিলিটারির ব্যবসা হালআমলে বেশ লাভজনক। রাশিয়ার এই Wagner Group বর্তমানে ভেনিজুয়েলাতেও ভাড়া কার্য্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়াতে আইসিস বিরোধি যুদ্ধেও এই Wagner Group কে ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থাৎ সাবকন্ট্রাক্ট দিয়ে দেয়া হচ্ছে।
দুনিয়াতে বেশকিছু নামকরা প্রাইভেট মিলিটারি ফোর্স আছে।
এদের ভেতর সবচেয়ে নামকরা নিঃসন্দেহে ব্ল্যাকওয়াটার। যার বর্তমান নাম একাডেমি।
বড়সড় যুদ্ধ চালানোর ক্ষমতা আছে এই ব্ল্যাকওয়াটারের।



উপরের ছবিতে ইরাক দখলের পর ইরাকের সার্বিক দায়িত্ব নিযুদ্ধ মার্কিনী প্রশাসক Paul Bremer এর আশেপাশে অস্ত্রধারী যাদের দেখতে পাচ্ছেন, এরা সবাই ভাড়া করা ব্ল্যাক ওয়াটারের সদস্য।
এবং ২০০৩ সালের আগস্ট থেকে ২০০৪ সালের জুন পর্যন্ত পল ব্রিমারের পার্সনাল নিরাপত্তার জন্য ব্ল্যাক ওয়াটার নিযুক্ত ছিল এবং এই কাজের জন্য কনট্রাক্ট ছিল ২১ মিলিয়ন ডলার ! এটা সেই সময়ের হিসাব।
কেবল পল ব্রিমারের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কাজটি নয়, ইরাকে সরাসরি যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিল ব্ল্যাক ওয়াটার সহ ২৫টি ছোটবড় প্রাইভেট মিলিটারি এজেন্সি। নিযুক্ত ছিল বিশ হাজারের বেশি ভাড়াটে যোদ্ধা তথা প্রাইভেট মিলিটারি কন্ট্রাক্টর।
https://usatoday30.usatoday.com/news/world/iraq/2004-04-01-security-usat_x.htm (লিঙ্কগুলো কমেন্ট বক্সে পাবেন)
(এই লিখার সকল রেফারেন্স কমেন্ট বক্সে পাবেন)
বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের কনট্রাক্ট সরাসরি কোনো কম্পিটিশন ছাড়া বাগিয়ে নিয়েছে ব্ল্যাক ওয়াটার এই ইরাক যুদ্ধে।

২০০৪ সালে ব্ল্যাক ওয়াটার একটি টেন্ডার জিতেছে যার মূল্যমান সেই সময়ে ১ বিলিয়ন ডলার। এই টেন্ডারটি ছিলো কনফ্লিক্ট জোনগুলোতে মার্কিনী কুটনৈতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বলাবাহুল্য ব্ল্যাক ওয়াটার পরে আরো অনেক টেন্ডার জিতেছে এবং বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পকেটে ভরেছে। লিবিয়ার বেন গাজি’তে মার্কিন কনসুল্যেটে আল কায়দার হামলায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মারা যায়। সেখানেও কিন্তু নিরাপত্তার দায়িত্বে ব্ল্যাক ওয়াটার নিযুক্ত ছিল।
এই ব্ল্যাক ওয়াটারের প্রতিষ্ঠাতা former Navy SEAL officer Erik Prince
উল্লেখ্য যে, এই এরিক প্রিন্স হল বর্তমানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শিক্ষা সচিব বেটসি ডেভোসের ভাই।
সারা দুনিয়া থেকে আর্মির অফিসার, এক্স স্পেশ্যাল ফোর্সের সদস্যদের এরা রিক্রুট করে। বেসরকারি চাকরি। বেতন বেশি। এজন্য দেখা যায় যে হরহামেশা সরকারি মিলিটারির চাকরি ছেড়ে সৈনিকেরা প্রাইভেট মিলিটারিতে ঢুকে পড়ে। ব্যাপারটা আমাদের সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে বেশি বেতনের আশায় বেসরকারি চাকরি করতে যাবার মত। এখন আপনার আত্মীয় স্বজনেরা হয়ত বলবে, সরকারি চাকরি সম্মানের। মরে গেলে পতাকা মোড়ানো কফিনে আপনার লাশ থাকবে। স্যালুট পাবেন। কিন্তু আপনার কাছে মনে হতেই পারে, সরকারি চাকরি ছেড়ে প্রাইভেট মিলিটারিতে ঢুকে বেশি স্যালারি পেলে আপনার সংসার ভালো চলবে। চয়েজ আপনার।
তরুণ ছেলেরা মার্কিন স্পেশ্যাল ফোর্সে ট্রেনিং নিয়ে কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রাইভেট মিলিটারিতে ঢুকে পড়েছে, এমন নজির বহু আছে।
আর এরা বেতন দিতে পারে বেশি, তার পেছনে কারণও আছে। সরকারি টেন্ডার জিততেছে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের। বাস্তবে যে কাজ হয়ত সরকারি আর্মি দিয়ে করলে অর্ধেকেরও কম টাকা খরচ হয়, সেই কাজ ঠিকাদারদের দিয়ে করানো হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি দামে। আর এই টেন্ডারবাজি করে হাইপ্রোফাইল আমলা অফিসার এবং সিনেটরেরাও পকেট ভাড়ি করতেছে। সেইসব খতিয়ান পরে দিচ্ছি।
তো ব্ল্যাক ওয়াটার ব্যাপারটি শেষ করি। ব্ল্যাক ওয়াটারের নামে অনেক দূর্নাম আছে। ২০০৭ সালে কিছু ব্ল্যাক ওয়াটারের সদস্য অহেতুক ১৪ জন নিরীহ ইরাকিকে গুলি করে মারে। সেটার বিচার হয়েছিলো পরে।
ব্ল্যাক ওয়াটার দুনিয়ার বহু দেশে নিয়োজিত আছে।
যেমন, ২০১৫ সালে ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহিরা ছয়জন মার্সেনারিকে হত্যা করে। এরা ছিল ব্ল্যাক ওয়াটারের লোক। আরব আমিরাত এদেরকে ভাড়া করেছিলো হুতিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য।

https://www.theguardian.com/australia-news/2015/dec/09/australian-mercenary-reportedly-killed-yemen-clashes



ব্ল্যাক ওয়াটার, তথা একাডেমি’তে বর্তমানে ২০ হাজার যোদ্ধা কর্মরত আছে। যাদের ভেতর সিংহভাগ মার্কিন মিলিটারির স্পেশ্যাল ফোর্স, গোয়েন্দাবাহিনী সিআইএ, এনএসএ’র সহ বিদেশে মিলিটারি থেকে আসা সাবেক সেনা।

দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে সিকিউরিটি কনসাল্টেন্ট হিসেবেও কাজ করে একাডেমি। ২০১৪ সালে কোম্পানিটিকে Constellis Group কিনে নেয়। Constellis Group বর্তমানে একাডেমি’র মাদার অর্গানাইজেশন।
সিআইএ’র কোভার্ট অপারেশন পরিচালনা, ব্ল্যাক সাইট ইন্ট্রোগ্রেশন চালনা, এসবের কাজও ব্ল্যাক ওয়াটার করে থাকে।
ঠিক ব্ল্যাক ওয়াটারের মত অন্যএকটি প্রতিষ্ঠান Parsons Corporation (Parsons)


যেটা আমেরিকার ভার্জেনিয়া অবস্থিত technology-focused defense, intelligence, security, and infrastructure engineering firm
এতে ১৬ হাজারের বেশি কর্মী নিযুক্ত আছে। ২০টির বেশি দেশি বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড রয়েছে। ২০১৮ সালে কোম্পানির রেভিনিউ ছিল ৩.৬ বিলিয়ন ডলার।
কোম্পানিটি অতীতে স্নায়ু যুদ্ধের সময় মার্কিন মিলিটারির জন্য ইলেকট্রনিক্স ইকুইপমেন্ট, মিলিটারি হার্ডওয়ার, মিসাইল টেকনোলজি, রকেট ডিজাইনের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করেছে।
এই কোম্পানিটি ইরাক যুদ্ধের পর ২০০৪ সালে ২৪৩ মিলিয়ন ডলারের কন্ট্রাক্ট পেয়েছিলো ১৫০টি হাসপাতাল নির্মানের জন্য।
Worley Group of Australia নামের কোম্পানির সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চারে ৮০০ মিলিয়ন ডলারের টেন্ডার পেয়েছিলো ইরাকের উত্তরাংশের তেল শৌধনাগারগুলো পুনঃনির্মান করতে।
ইরাকের ধ্বংসপ্রাপ্ত ইনফ্রাস্ট্রাকচার রিবিল্ড করতে মার্কিন কংগ্রেস যুদ্ধের পরপরই যে ১৮.৬ বিলিয়ন ডলারের থোক বরাদ্দ দিয়েছিলো, তাতে পার্সন কর্পোরেশনের ভাগের ভাগ ছিল ৫ বিলিয়ন ডলার।
ইরাকে মার্কিন সেনাদের থাকার ঘাটিগুলোর বড়একটি অংশ বানাতে পার্সন কর্পোরেশন নিয়েছিলো ১.৫ বিলিয়ন ডলারের টেন্ডার।
https://corpwatch.org/article/iraq-parsons-corp-wins-900-million-contract
https://en.wikipedia.org/wiki/Parsons_Corporation

পার্সন কর্পোরেশনের এসব কন্ট্রাকের স্বচ্ছতা কার্যত কিছুই ছিল। ছিল জনগনের ট্যাক্সের টাকার সিস্টেমেটিক লুটপাট। এই ইস্যু নিয়ে মার্কিন কনগ্রেসে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। ইরাক Reconstruction প্রজেক্টের জন্য মার্কিন কংগ্রেস কর্তৃক নিযুক্ত Special Inspector General, Mr. Stuart W. Bowen ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন কংগ্রেসের HOUSE OVERSIGHT AND GOVERNMENT REFORM COMMITTEE সামনে একটি রিপোর্ট উপস্থাপন করেন, যেটার লিঙ্ক কমেন্ট বক্সে পাবেন।
( https://web.archive.org/web/20080829015422/http://oversight.house.gov/documents/20070215111017-80058.pdf )
এই পিডিএফে সমগ্র বক্তব্যটি আছে।
তাতে শুরুতেই বলা হয়, the reconstruction program in Iraq is unlike any other in history in that it has been carried out virtually under fire.
সেখানে বিভিন্ন কোম্পানির কনট্রাক্ট এমাউন্টগুলোকে উল্লেখ করা হয়। কনট্রাক্টগুলো ছিল cost-plus-award-fee contracts
যেখানে থাকবে base award fee (for simply meeting contract requirements) and a merit-based award fee for performance that exceeds contract expectations.
মোর্দ্দা কথা, ১০ টাকার কাজ ১০,০০০ টাকায় দেবার সবধরণের লুপহোল সেসময় রাখা ছিল। ফলাফল, কোম্পানির টপ ম্যানেজমেন্ট যেমন মোটা অংকের ডলার পকেটে ভরেছে। তেমনই কোম্পানির কর্মকর্তা কর্মচারীরাও লাভবান হয়েছে। দেখা গেল, একজন টেকনিসিয়ান বা একজন ট্রাক ড্রাইভার বা একজন মিস্ত্রিও, আমেরিকা থেকে ইরাকে এসে একমাস পরিশ্রম করে গোটা এক বছরের আয় রোজগার করে ঘরে ফিরেছে।

ইরাকে মার্কিন সেনা ঘাটিগুলোতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দায়িত্বে ছিল Halliburton Company

ইরাক জুড়ে মোট ৬৭টি পানি শোধনাগার বানানোর টেন্ডার নিজেদের পকেটে নিয়েছিলো প্রতিষ্ঠানটি। যদিও ৬৩টি পানি শোধনাগারের পারফর্মেন্স ছিল খারাপ। মার্কিন সেনাদের ময়লা পানি খাওয়ানোর দায়ে হ্যালিবার্টনের বিরুদ্ধে মিডিয়া শোরগোলও শুরু করেছিলো।
তবে তাতে কি? মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি তো এই হ্যালিবার্টনেরই সাবেক সিইও।
পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ তেল খনি সার্ভিসিং কোম্পানি, যার ৫৫ হাজারের বেশি কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োজিত আছে পৃথিবীর ৭০টি দেশে। যার বার্ষিক রেভিনিউ থাকে বিশ বিলিয়ন ডলারের উপরে।
কেবল তেলখনি বা শোধনাগারের কাজ নয়, হ্যালিবার্টনের অধীনে বহু সাবসিডারি কোম্পানি আছে যারা নানাবিধ কার্য্যক্রম পরিচালনা করে।
আবার এসব পানি শোধনাগারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন ঘাটি ও মিলিটারি স্থাপনায় পানি সাপ্লাই লাইন এবং Sewage সিস্টেম তৈরির ১.১ বিলিয়ন ডলারের ঠিকাদারি নিয়েছিলো Fluor Company. এই কোম্পানিটির কর্মবাহিনী আছে ৪৪ হাজারের বেশি।
যাই হোক,
ইরাক যুদ্ধে বেশকিছু বড়বড় টেন্ডার বাগিয়ে নিয়েছিলো হেলিবার্টন।
ইরাকে উপস্থিত মার্কিন সেনাদের তিনবেলা খাওয়ানোর জন্য মোট ১.৮ বিলিয়ন ডলারের টেন্ডার নিয়েছিলো প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিটি মার্কিন সেনার জন্য প্রতিবার লন্ড্রি বাবদ মার্কিন সরকারের কাছ থেকে হ্যালিবার্টন নিয়েছে ১০০ ডলার। তাও সেই ২০০৩-০৪ সালের কথা। বিলিভ ইট অর নট, ১০০ ডলার কেবল একজনের কাপড় ধোয়ার জন্য। এখন আপনিই চিন্তা করে বলুন, একজন সোলজারের ব্যাগে আর কতই বা কাপড় থাকে?
আর এই বিপুল পরিমান সেনাদের কাপড় ধোয়ার জন্য ওয়াশিং মেশিন কিনেছে। ডিটারজেন্ট, পানি, সাবান, এসবের আয়োজন করেছে। তাহলে এবার অনুমান করেই দেখুন, কি বিপুল অংকের invoice মার্কিন সরকারের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে কোম্পানিটি।
হ্যালিবার্টনের পলিসি ছিল সহজ।
More money we spend, more money we can get in our pocket.
তো এই যা খাবার দাবার, মালামাল, গোলাবারুদ, রসদ ট্রান্সপোর্টেশন। এরজন্য দরকার প্রচুর পরিমান ট্রাক আর পিকআপ।
বলাবাহুল্য, সেগুলো এসেছে আমেরিকা থেকে। হ্যালিবার্টন ট্রাক কিনেছে, এরপর বিল ধরিয়ে দিয়েছে মার্কিন সরকারের হাতে।
ট্রাকের সামান্য ম্যালফাংশন হয়েছে, ব্যস। সেটা পুড়িয়ে ফেলেছে। ধ্বংস করেছে। আবার নতুন ট্রাক কিনেছে। বিশাল বিশাল কার্গো ভ্যান কিনেছে।
যত কেনাকাটা, তত টাকা।
এসব বড় বড় ট্রাক আর কার্গো ভ্যানের ট্রাক ড্রাইভারেরাও এসেছে আমেরিকা থেকে। তারাও টাকা কামিয়ে গেছে দুখাতে। ঝুকিপূর্ণ এলাকায় ঝুঁকিভাতা তো পেয়েছেই।
এক মাসে যা আয় করেছে, আমেরিকাতে হয়ত তা এক বছরেও আয় করে না। রীতিমত উৎসব দেখছি ব্যাপারটা।

নিউইয়র্কের শেয়ার বাজারে ২০০৩ সালে হ্যালিবার্টনের শেয়ার প্রতি মূল্য ছিল ৯ ডলার। ব্যস, ১ বছরে শেয়ার ভ্যালু বেড়ে দাড়ালো ৪২ ডলার। খালি টাকা আর টাকা। সরি, ডলার আর ডলার।

ওই যে বললাম, হ্যালিবার্টনের আণ্ডারে বহু সাবসিডারি কোম্পানি আছে। যার একটি তখন ছিল KBR, Inc.


এটি একটি engineering, procurement, and construction company
এই কোম্পানিটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে পরবর্তীতে বড়বড় সকল মেজর কনফ্লিক্টে মার্কিন আর্মি হয়ে ঠিকাদারি করেছে। এছাড়া কোম্পানিটির আরো বহুবিধ কর্মকান্ড রয়েছে। যেমন, ২০১৭ সালে কোম্পানিটি ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির নভোচারিদের জন্য প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট দেবার টেন্ডারকাজ পেয়েছে।
নাসাসহ অন্যান্য স্পেস এজেন্সির লজিস্টিক সাপ্লাই ওয়ার্ক্সে কোম্পানিটি জরিত।
কোম্পানিটির আলোচিত নির্মান কাজের মধ্যে একটি ছিল সৌদি আরবের Sadara Chemical Facility, যেটা কিনা দুনিয়ার সবচেয়ে বড় Single Phase Chemical Complex
আফগান যুদ্ধের পর কাবুলে ১০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে নিরাপত্তাঘেরা মার্কিন দুতাবাস তৈরির কাজও করেছে এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
কোম্পানিটির রেভিনিউ ২০১৮ সালে ছিল ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি। দুনিয়ার বিভিন্নদেশে কোম্পানিটি দাপটের সাথে কাজ করে। এবং সুনাম দূর্নাম উভয়ই কামিয়েছে। যেমন, ২০০৯ সালে নাইজেরিয়াতে সাড়ে সাত মিলিয়ন ডলারের টেন্ডার জেতার জন্য সেখানকার সরকারি কর্মকর্তাদের দশ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দিয়ে ধরা খেয়েছিলো কোম্পানিটি। এজন্য পরে মার্কিন কোর্টে ৪০২ মিলিয়ন ডলার জরিমানা গুনতে হয়েছিলো কোম্পানিটিকে। কোম্পানিটির একজন মহিলা কর্মচারী কোম্পানিটির ভেতরে গ্যাংরেপের শিকার হওয়া সহ আরো ৩৭ জন মহিলা কর্মচারী হ্যারাসমেন্ট সহ নানান অনৈতিক কার্যাবলির খতিয়ান জনসম্মুখে প্রকাশ করলে কোম্পানিটির ভাবমূর্তি আরো নষ্ট হয়।
হ্যালিবার্টনের সাবসিডিয়ারি হিসেবে সেইসময় এই কোম্পানিটি ইরাক যুদ্ধের পর বড়বড় টেন্ডার জিতে নেয় বিনা কম্পিটিশনে, কোনোরুপ সচ্ছতা ছাড়া।
ইরাকী ইনসার্জেন্টরা ইরাকে তেলকুপগুলো ধ্বংস করে দিতে শুরু করলে তেলখনির অগ্নিনির্বাপনের কাজ তদারকি ও ফায়ার ফাইটিং কাজে মোট সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলারের দুই বছরের বিশাল টেন্ডার পেয়েছিলো এই কোম্পানিটি। যাতে কাগজে কলমে ৭% প্রফিট দেখানো হয়। অর্থাৎ কাগজে কলমের হিসেবেও ৪৯০ মিলিয়ন ডলার নীট প্রফিট ছিল কোম্পানিটির।
https://www.myplainview.com/news/article/Halliburton-subsidiary-awarded-7-billion-Iraq-9070450.php
https://corpwatch.org/article/rigged-beginning

আবার হ্যালিবার্টনের মত Washington Group International নামের আরেকটি কোম্পানি ইরাকের তেল কুপ ও তেল শৌধনাগারগুলোর Repair and maintenance কাজের দায়িত্ব পেয়েছিলো যার মূল্য ছিল ৯৩১ মিলিয়ন ডলার। কোম্পানিটি ইরাক পুনঃগঠনের কাজেরও যুক্ত হয়।

ইরাক যুদ্ধে সময় বহু কোম্পানি এভাবে ফুলে ফেপে উঠেছে যার ভেতর ছিল Titan Corporation



যুদ্ধে মার্কিন সেনাদের প্রচুর অনুবাদকের দরকার হয়েছিলো। আর ১১২ মিলিয়ন ডলারের টেন্ডার নিয়েছিলো টাইটেন কর্পোরেশন। কাজ হল ট্রান্সলেটর প্রোভাইড করা। প্রায় ৪ হাজার অনুবাদক টাইটেনের হয়ে কাজ করেছে। বলা বাহুল্য, রিক্রুটমেন্ট করেছিলো ইরাকে কলেজ এবং ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের। এছাড়া আশেপাশের আরব দেশ থেকেই আরবি জানা ছেলেপেলে অল্পকিছু বেতন দিয়ে রিক্রুট করে নামিয়ে দিয়েছিলো ব্যাটল ফিল্ডে মার্কিনী সেনাদের সাথে অনুবাদকের কাজে। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ইরাকের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েছিলো। চাকরি বাকরি ছিল না। সামান্য কিছু বেতন দিয়ে ইংরেজি এবং আরবি জানা ইরাকী লোকজন রিক্রুট করে বেশ বড়সড় প্রফিট পকেটে ভরেছিলো টাইটেনের হর্তাকর্তারা।
২০০১ সালে যেখানে টাইটেনের বার্ষিক রেভিনিউ ছিল ৯০০ মিলিয়ন ডলার, ২০০৪ সালে গিয়ে রেভিনিউ দাঁড়ায় ২ বিলিয়ন ডলার।
টাইটেন ৪০৯ মিলিয়ন ডলারের IT Contract নিয়েছিলো মার্কিন মিলিটারির জন্য। যার ভেতর ছিল ৫৪.৮ মিলিয়ন ডলারের Spy plane Control system ডেভোলপমেন্ট কাজ। ১৮ মিলিয়ন ডলারের সিমুলেটর তৈরির কাজ মার্কিন নেভীর জন্য। ১৬৩.৯ মিলিয়ন ডলারের মিসাইল ডিভেন্স ডেভোলপমেন্ট কন্ট্রাক্ট। এছাড়া “full range of planning, analysis, exercise, and information technology services for Chemical, Biological, Radiological, Nuclear, and High-Yield Explosive (CBRNE) Consequence Management operations” কাজের টেন্ডারও নিয়েছিলো টাইটান।

https://web.archive.org/web/20041019134732/http://publicintegrity.org/wow/bio.aspx?act=pro&ddlC=159

আইটি সেক্টরে মিলিটারি কনট্রাক্ট বাগিয়ে নেয়া কোম্পানিগুলোর ভেতর নামকরা বড় কোম্পানি হল CACI International Inc

এই প্রতিষ্ঠানটির ২২ হাজার কর্মী আছে এবং Fortune 1000 largest কোম্পানির একটি। ইন্টেলিজেন্স এবং মিলিটারি আইটি এবং ডিফেন্স সেক্টরে বড়বড় টেন্ডার বাগিয়ে নেয়ার জন্য এই কোম্পানি রীতিমত বিখ্যাত।
আপনি যদি CaCi International এর ওয়েব সাইটে যান, তাহলে বিশাল “What we do” লিস্ট দেখবেন। তাতে উল্লেখযোগ্য মনে হল নিচেরগুলো,
http://www.caci.com/whatwedo.shtml
CACI “what we do” list:
• Shoulder-to-shoulder warfighter mission support
• Multi-domain electronic warfare expertise
• Cutting-edge technology for infrastructure security
• Expertise and technology to improve survivability through adversary capabilities
• Two decades of platform integration experience
• Modernization and sustainment/survivability through Agile technology

২০১৭ সালে রেভিনিউ ছিল সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার।
এই কোম্পানির প্রেসিডেন্ট John S. Mengucci, যিনি অতীতে Lockheed Martin Corp. এর হয়েও কাজ করেছেন। এপ্রসঙ্গে বলে রাখি, Lockheed Martin বর্তমানে আমেরিকার সবচেয়ে বড় ডিফেন্স কনট্রাক্টরদের ভেতর একেবারে উপরে অবস্থান করে।
https://corpwatch.org/article/private-contractors-and-torture-abu-ghraib-iraq
এই কোম্পানিটির প্রথম কনট্রাক্ট ছিল নব্বইয়ের দশকে প্রথমবারের মত custom-written computer language তৈরি করা battlefield Simulation Program এর জন্য। ২০০১ থেকে ২০০৩ সালে এই কোম্পানির প্রোফিট ডাবল হয়ে যায়।
এই কোম্পানির কাজকর্মের ভেতর আরো একটি সেক্টর হল ইন্টেলিজেন্স সাপোর্ট এবং গ্লোবাল থ্রেট এসেসমেন্ট। সেইসাথে ইন্ট্রোগ্রেশন কাজ পরিচালনা করা। বাগদাদের আবু গারিব কারাগারে রোমহর্ষক বন্দি নির্যাতনের যেসব ছবি গোটা বিশ্বে ভাইরাল হয়েছিল, তাতে জরিত মার্কিন সেনা কর্মকর্তার বিচার হয়েছিলো মিলিটারি আদালতে। অথচ তাদের সাথে CaCI ইন্টারন্যাশন্যালের যেসব প্রাইভেট ইন্ট্রোগেটর ছিল, তাদের ব্যাপারে মার্কিন প্রশাসন কোনো ধরনের স্টেপ নেয়নি।
সেই সময় ডেমোক্রেট সিনেটর Christopher Dodd আবু গারিব ও কিউবার গোয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দি নির্যাতনের বিরোধিতা করেছিলো মার্কিন সিনেটে দাঁড়িয়ে। এবং বন্দি ইন্ট্রোগেশনের নামে বন্দি নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আওয়াজ তুলেছিলেন।
যুদ্ধ পরবর্তী ইরাকে নতুন করে পুলিশ প্রশাসন প্রস্তুত করা হয়। এবং এই পুলিশ প্রশাসনকে ট্রেনিং দেবার টেন্ডার নিয়েছিলো DynCorp International.



এটাও বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি যাদের কাজ flight operations support, training and mentoring, international development, intelligence training and support, contingency operations, security, and operations and maintenance of land vehicles.
এই কোম্পানিটা এর আগে আফগান যুদ্ধের সময় হামিদ কারজাই’এর বডি গার্ডের ঠিকাদারি পেয়েছিলো। আফগান যুদ্ধের পর আফগানিস্তানের পুলিশবাহিনীর প্রশিক্ষনের দায়িত্বে ছিল এই প্রতিষ্ঠান। ইরাকের পুলিশ ফোর্স তৈরি এবং ফোর্সের ট্রেনিং দেয়ার কাজে মার্কিন সরকার’কে ১.৩ বিলিয়ন ডলারের বিল ধরিয়ে দিয়েছিলো ডাইনকর্প।
আপনি হয়ত হলিউডের The Whitleblower মুভিটি দেখেছেন। এই মুভিটি একটি সত্য ঘটনার আলোকে বানানো। ১৯৯৯ সালে বসনিয়া যুদ্ধের সময় ডাইনকর্প কোম্পানির এজেন্টরা সেখানকার মেয়েদের ধরে Sex Trafficking ব্যবসা শুরু করেছিলো। মুভিটি সেই ঘটনার আলোকে বানানো।

কেবল বসনিয়া নয়, দুনিয়ার আরো অনেক কনফ্লিক্টিং ওয়ার জোনে এসব ডাইকোরের মত মিলিটারি কনট্রাক্টরদের বিরুদ্ধে প্রসটিটিউশন রিং চালানো, নারী পাচার, ইন্ট্রোগেশনের নামে নির্যাতন সহ নানাবিধ অভিযোগ উঠতে শুরু করলে ২০০০ সালে মার্কিন কংগ্রেস আইন পাস করে যার ফলে মার্কিন মুল্লুকের বাইরে, অর্থাৎ ভিন্নকোনো দেশে মার্কিন ডিফেন্স কনট্রাক্টরদের অকামকুকামের জন্য তাদের প্রসিকিউট করা সম্ভব হবে। এই আইনের পর ডাইনকর্পের বিরুদ্ধে বসনিয়ায় ফোর্সড প্রস্টিটিউশন রিং চালিয়ে ব্যবসা করার মামলা আনা হয়। কিন্তু এই কোম্পানিটির মার্কিন কংগ্রেস এবং সিনেটে শক্ত লবিং আছে। ফলে এতো অভিযোগ এবং মিসকন্ডাক্টের পরও এই কোম্পানিটি বরাবরই মার্কিন মিলিটারির বড়বড় কনট্রাক্ট জিতে এসেছে।
http://news.bbc.co.uk/2/hi/americas/7057629.stm
https://en.wikipedia.org/wiki/DynCorp

ইরাক যুদ্ধের পর ইরাকে যে বিপুল পরিমান গোলাবারুদ, গুলির খোলা, পরিত্যাক্ত বোমা যত্রতত্র পড়েছিল, সেসব অপসারণের জন্য Environmental Chemical নামের একটি ক্যালিফোর্নিয়া বেইজড কোম্পানি ৮৭৮ মিলিয়ন ডলারের এবং URS Corporation নামের আরেকটি কোম্পানি ৭৯২ মিলিয়ন ডলারের ঠিকাদারি নিয়েছিলো মার্কিন সরকারের কাছ থেকে।

ইরাকে মার্কিন আর্মির মিলিটারি যানবাহনগুলোর জন্য State of the art armor তথা বর্ম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ছিল Armor Holdings
ইরাক যুদ্ধের পর এই কোম্পানির রেভিনিউ বেড়ে গিয়েছিলো ২,২৪৭%
অর্থাৎ ফুলে ফেপে ওঠা যাকে বলে। ইরাকে গুরুত্বপূর্ণ ডিপ্লোমেটদেরকে এই কোম্পানির বুলেটপ্রুফ বর্ম পড়িয়ে ইরাকে চালাচল করানো হত।

সব ধরণের টেরিটোরিতে চলতে সক্ষম, এমন মিলিটারি যান সরবরাহ করে AM General (a subsidiary of Renco) নিজেদের প্রফিট বাড়িয়ে নিয়েছিলো ৯২%

যুদ্ধ পরবর্তী ইরাকে নতুন সেন্ট্রাল ব্যাংকের ৭০% শেয়ার কিনেছিল HSBC Bank

Cummins Power Generation পেয়েছিল ৪৫ মিলিয়ন ডলারের নতুন পাওয়ার স্টেশন তৈরির কাজ।
ইংল্যান্ডের MerchantBridge কোম্পানি পেয়েছিলো যুদ্ধ পরবর্তী ইরাকে construction, telecommunications, financial services, real estate, hotels, and information technology industries তৈরির কাজ।
ইরাকের শিল্প মন্ত্রনালয়ের সাথে আতাত করে ৬১ মিলিয়ন ডলার পকেটে ভরেছিলো কোম্পানিটি।

রিক্স ম্যানেজমেন্টের ব্যবসা ইরাকের মত দেশে অনেক লাভজনক। এবং GlobalRisk Strategies নামের কোম্পানি ইরাকের এয়ারপোর্ট, সরকারি অফিস, আইন আদালতের রিক্স ম্যানেজমেন্ট কাজে হাত দিয়ে বাগিয়ে নিয়েছিলো ২৪.৫ মিলিয়ন ডলার। ControlRisks নামের অন্য আরেকটি কোম্পানি রিক্স ম্যানেজমেন্টের নামে ৩৭ মিলিয়ন ডলারের টেন্ডারবাজি করেছিলো।

বুশ প্রশাসনের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে Bechtel corporation ইরাকের ইনফ্রাস্ট্রাকচার অর্থাৎ স্কুল কলেজ বিল্ডিং, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, পার্ক, এসব বানানোর নামে ১৪.৬ বিলিয়ন ডলার পকেটে ভরেছিলো।

আমেরিকার Nour USA Limited পেয়েছিলো যুদ্ধ পরবর্তী ইরাকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের তেলের পাইপ লাইন নির্মানের কাজ।

এভাবে লিখতে লিখতে সারাদিন পার হয়ে যাবে। তবুও লিখা শেষ হবে না।
ছোটবড় কত কোম্পানি যে ইরাক যুদ্ধে পকেটভারি করেছে, সেটার হিসাব নেই।

অথচ এতোকিছু লিখার পরও আমি কিন্তু আসল জিনিসই বাদ দিয়ে গিয়েছি। সেটা হল অস্ত্র।
একটা যুদ্ধ করতে যে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ লাগে, সেই হিসাব কি ইগনোর করা সম্ভব?

আপনি যদি Top 100 Contractors of US Federal Government লিখে সার্চ দেন গুগলে, অর্থাৎ আমেরিকার সরকারি কাজের বড়বড় ঠিকাদারদের তালিকা যদি সার্চ করেন,
তাহলে উইকি’তে নিচের এই পেজটা পাবেন।
https://en.wikipedia.org/wiki/Top_100_Contractors_of_the_U.S._federal_government

দেখাই যাচ্ছে, কেবল শুধু মিলিটারি কনট্রাক্ট নয়, আপনি গোটা মার্কিন ফেডারেল সরকারের ঠিকাদারের তালিকার দিকে তাকালেও দেখবেন,
একেবারে উপরের দিকে প্রায় সবই মিলিটারি হার্ডওয়ার বা অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
একটা টমাহক ক্রুজ মিসাইলের দাম ১.৮৭ মিলিয়ন ডলার। ইরাকে পাইকারিহারে টমাহক ক্রুজ মিসাইলের হামলা চালানো হয়েছে। এসব ক্রুজ মিসাইল মার্কিন মিলিটারিকে সরবারাহ করেছে General Dynamics

বিমান বা হেলিকপ্টার থেকে বৃষ্টির মত ছোড়া AGM-114 Hellfire মিসাইলগুলোর প্রতিটির দাম ১,১৭,০০০ ডলার। মার্কিন মিলিটারি এগুলো কিনেছে Lockheed Martin আর বোয়িং’এর কাছ থেকে।

আকাশে উড়তে থাকা অত্যাধুনিক বিমান, সাগরের বুকে ভেসে বেড়ানো রনতরী, মাটির বুকে চলতে থাকা ট্যাংক, সেইসাথে এসবের গোলাবারুদ,
এসব কিছু সরবারহ করেছে বোয়িং, লকহেড মার্টিং, জেনারেল ডাইনামিক্স’এর মত বিশাল বিশাল ম্যানুফ্যাকচার।

বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পকেটে ভরেছে এসময়ে।

মার্কিন সিনেটে দাঁড়িয়ে যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলা আপাত সুশীল সিনেটর ড্যায়ানা ফেইন্সটেইন পর্যন্ত ইরাক যুদ্ধের পর Military Construction Appropriations subcomittee এর একজন সদস্য হিসেবে নিজের প্রভাব খাটিয়ে নিজের হাজবেন্ডের নিয়ন্ত্রানাধীন Perini Corporation কে ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের ঠিকাদারি জুটিয়ে দিয়েছিলেন। কাজটা ছিল, ইরাকের পরিবেশ পরিস্কার পরিছন্ন করা।


তো এতোকিছু লিখার উদ্দেশ্য হল, জাস্ট এটা বোঝানোর জন্য যে কি পরিমান ব্যবসা এই ইরাক যুদ্ধকে পুঁজি করে হয়েছে। আমজনতা মোটা দাগে ভাবে, আমেরিকা এসে ইরাক দখল করে ইরাকের তেল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। হাহাহা। কিন্তু ব্যাপারটা আরো জটিল। গোটা যুদ্ধটা একটা ব্যবসা। কর্পোরেশনগুলো যখন যুদ্ধ নিয়ন্ত্রন করে, যুদ্ধটাই যখন হয়ে যায় কর্পোরেশনগুলোর মুনাফা তৈরির মাধ্যম, তখন তো যুদ্ধ আরো হবে।
বিশেষ করে সেইসব যুদ্ধ হবে, যেসব যুদ্ধে না আছে হেরে যাবার ভয়। না আছে লোকসানের ভয়।
ইরাকের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র ছিল না, এটা ভালো করেই আমেরিকা জানতো। যদি সত্যি সত্যিই ইরাকের কাছে মরনাস্ত্র থাকতো, তাহলে আমেরিকা যুদ্ধে যেতোই না। যেমন উত্তর কোরিয়ার সাথে সে যুদ্ধে যায় না।

আর এই ব্যাপারটাই ভবিষ্যতে ভীতির কারণ।
জন বোল্টনের মত warmonger আমলারা মার্কিন নীতি নির্ধারকদের যুদ্ধে যাবার জন্য ইনফ্লুয়েন্স করে ডিফেন্স কনট্রাক্টরদের কাছ থেকে মোটা টাকা খেয়ে।
যুদ্ধ যখন ঠিকাদারের হাতে চলে যায়, নীতি নয়, টাকা যখন পলিসি নিয়ন্ত্রন করে, যুদ্ধ যখন ব্যবসা হয়ে যায়,
তখন পৃথিবীতে গুলি চলতেই থাকবে। থামবে না।

Read More »