১৯৪১ সালের ৭ই ডিসেম্বর সকাল ৭ঃ৪৮ মিনিটে (মতান্তরে ৭ঃ৫৫ মিনিটে) জাপান পার্ল হারবার আক্রমন করে।
এইসময়টা Hawaii Time zone.
সকাল ৯ টা নাগাদ জাপানের বোমাবাজি শেষ হয়।
অর্থাৎ,
পার্লহারবারে সকাল ৯ টার সময় যখন জাপানি দুইদফা হামলা শেষ হয়,
তখন বাংলাদেশে ৮ তারিখ দিবাগত রাত ১ টা বাজে।
অর্থাৎ ৮ তারিখ কেবল শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে ওয়াশিংটন ডিসি'তে তখন বাজে দুপুর ২ টা। সোমবার, ৭ই ডিসেম্বর।
মজার ব্যাপার হল, জাপানে তখন ৮ই ডিসেম্বর, ৪ঃ০১ মিনিট। কেবল ভোর হতে সামান্য বাকি...
তো ৮ই ডিসেম্বর জাপান যখন আমেরিকার বিরুদ্ধে লিটারেলি যুদ্ধ শুরু করে তখন আমেরিকাতে ৭ তারিখ দুপুর।
অন্যদিকে পার্ল হারবার আক্রমনের ৮ ঘন্টা ৪৫ মিনিট পর,
অর্থাৎ জাপানি সময় ৮ তারিখ দুপুর ১ঃ৪৫ মিনিটে জাপান ফিলিপাইন আক্রমন করে।
জাপান যখন ফিলিপাইন আক্রমন করে, আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসি'তে তখন ৭ই ডিসেম্বর রাত ১১ঃ৪৫ মিনিট।
মনে রাখা উচিৎ, ফিলিপাইন তখন কিন্তু স্বাধীন হয়নি। স্প্যানিশদের সাথে যুদ্ধে জিতে আমেরিকা তখন ফিলিপাইন , পোয়ার্তো রিকো এবং গুয়াম নিজেদের দখলে নিয়েছে।
আমেরিকানরা কিন্তু এগুলোকে কলোনি বলেনা। ব্যাপারটা সুক্ষ। ভাষাগত মাইর প্যাচ। আমেরিকানরা তখন এটাকে বলে ওভারসিজ টেরিটোরি।
এগুলোকে কলোনি হিসেবে ট্যাগ দিলে আমেরিকা তখন আর রিপাবলিক থাকে না। ব্রিটিশ বা ফ্রেন্স বা স্প্যানিশদের মত আমেরিকাও হয়ে যায় তখন সম্রাজ্য।
"Empire"বা "colonial empire"টাইপের শব্দগুলোর ব্যাপারে আমেরিকা বরাবরই সাবধান ছিল। কোনোভাবেই এই ট্যাগগুলো যাতে তাদের গায়ে না লাগে, এই ব্যাপারটা কেয়ারফুল দেখা হতো।
ছয়মাস যুদ্ধ করে ফিলিপাইন দখলে নিয়েছিলো জাপান। ৬ই মে, ১৯৪২ সালে আমেরিকার Lieutenant General Jonathan Wainwright জাপানের কাছে আত্মসমর্পন করে। এই ছয়মাসে ২০ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা মারা যায় যারা আগে থেকেই ফিলিপাইনে পোস্টেড ছিল। লাখের উপর মার্কিন তত্ত্বাবধানে থাকা ফিলিপিনো সেনাও জাপানিজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। (এখানে একটা বিষয় বলে রাখে। ১৯৩৬ সালে মার্কিনীদের সাথে ফিলিপিনোদের চুক্তি হয়েছিলো যাতে বলা হয়েছিলো ১৯৪৫-৪৬ নাগাদ মার্কিনীরা তলপিতলপা গুটিয়ে ফিলিপাইন ত্যাগ করবে। ফিলিপিনোরা তাদের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামও করেছে প্রথমে স্প্যানিশদের সাথে। এরপর মার্কিণীদের সাথে। যাই হোক। সেই কথা আপাতত থাক)
তো একই দিনে জাপান wake island এবং Guam আক্রমন করে।
আমেরিকার গুয়ামে যখন জাপান আক্রমন করে, তখন সেখানেও আট তারিখ।
তো মোট কথা হল, আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসিতে যখন সাত তারিখ শেষ হবে অবস্থা অর্থাৎ মধ্যরাত, ততক্ষণে জাপান মোটামুটি ফুলস্কেলেই প্যাসিফিকে হামলা পড়েছে কেবল মাত্র পার্ল হারবার নয়, আরো বড়বড় মার্কিন স্থাপনায়।
সাত তারিখেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য একটি স্পিস ড্রাফট করা হয়, যা তিনি পরের দিন সকালে উঠে এডিটও করেছিলেন।
ইন্টারেস্টিং বিষয়টা দেখুন। তিনি bombing in Hawaii and philipines লিখাটা কেটে দিয়ে লিখেছিলেন, bombing in Oahu
ভাষনের শুরুতেই লিখেছিলেন, "Empire of Japan" আকস্মিক হামলা চালিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর।
ফিলিপাইনের ম্যানিলাতে হামলার ব্যাপারটিও তিনি কেটে দিয়েছেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই ম্যানিলার কথা টানলে "পলিটিক্যালি কারেক্ট" থাকা যায় না। অর্থাৎ জাপানকে ''empire of japan"হিসেবে ট্যাগ দিলে তখন প্রশ্ন আসতে পারে, ফিলিপাইনে আমেরিকা কি করে?
😛
যাই হোক। এই ভাষনটা ৮ই ডিসেম্বর মার্কিন কংগ্রেসে রুজভেল্ট পাঠ করেন।
এরপর আমেরিকা জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ভাষণটি Infamy speech হিসেবেই পরিচিত।
এখানে উল্লেখ করে রাখি, জাপান কিছুদিনের ভেতরই ব্রিটিশ কলোনি, যেমন সিংগাপুর, হংকং, মালয় আক্রমন করেছিল।
যাই হোক।
আরো একটা তথ্য দিয়ে রাখি।
১৯৪০ সালে আমেরিকাতে আদমশুমারি হয়।
তাতে দেখা যায়,
জনসংখ্যা বিচারে আমেরিকার মেইনল্যান্ডে থাকে ১৩ কোটি মানুষ।
আর টেরিটোরিগুলোতে থাকে ১ কোটি ৮৮ লক্ষ মানুষ।
টেরিটোরিগুলোর ভেতরে সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ ১ কোটি ৬৩ লাখ মানুষ থাকে ফিলিপাইনে যারা মার্কিন পাসপোর্ট হোল্ডার।
প্রতি ৮ জনের ১ জন আমেরিকান তখন mainland এর বাইরে বসবাস করেন।
হাওয়াই'তে তখন ৪ লাখ ২৩ হাজার মানুষ বসবাস করে।
আলাস্কা তখনও স্টেটের মর্যাদা পায়নি।
আলাস্কাতে তখন থাকতো মাত্র ৭২ হাজার মার্কিন নাগরিক।
এসব কথা লিখলাম ইতিহাস কপচানোর জন্য নয়। জাস্ট এটা দেখানোর জন্য যে একজন পলিটিসিয়ান তার শব্দ চয়নের ব্যাপারে কতটা সাবধানী।
আফটার অল,
মার্কিন কংগ্রেসই পারে একটি দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করতে।
মার্কিন কংগ্রেসের কাছে প্রেসিডেন্ট আর্জি জানাচ্ছে।
মার্কিন ট্যাক্স আর রিসোর্স ব্যয় হবে, সেইসাথে সেনাদের জীবন যাবে যেই যুদ্ধে,
সেই যুদ্ধ ডিক্লেয়ার করার আর্জি জানাতে এই স্পিচ। এই স্পিচ মার্কিন সাধারণ জনগন শুনবে। যারা ট্যাক্স দেয়।
তো কয়জন সাধারণ মার্কিনীরা জানে আমেরিকার কয়টা ওভারসিজ টেরিটোরি আছে? ইনফ্যাক্ট কিছুদিন আগে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেও বোঝাতে হয়েছিলো পোয়ের্তোরিকো আমেরিকার টেরিটোরি :v
তো তাদের কাছে আর্জি জানাতেই রুজভেল্টের চেষ্টা ছিল যতটা সম্ভব পলিটিক্যালি কারেক্ট ভাবে স্পিচটা বানানো।
যাই হোক,
আমেরিকার এখন ৫টি ওভারসিজ টেরিটোরি ৯টি uninhabitted টেরিটোরি এবং আরো ২টি ডিস্পিউটেড টেরিটোরি আছে। এসব ছোটখাটো অনেক টেরিটোরি যুদ্ধ পরিচালনার সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। এবং প্যাসিফিক ও আটল্যান্টিকে নেভাল ডমিনেশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.