হিটলারের নামে একটা Quote চালিয়ে দেয়া হয় হরহামেশা,
"If you don't like a rule/system, just follow it, reach the top and change it"
বাস্তবে এই কথা হিটলার আদেও বলেছিলেন কিনা, সন্দেহ আছে। যদি ধরি এটা হিটলারই বলেছিলেন, তাহলে বলতে হয়, তিনি নিজেও এটা মানেননি।
কারণ কি জানেন?
বাস্তবে এভাবে কখনো কিছু করা যায় না।
এর মানে হল আপনি সিস্টেম জিনিসটাকে অনেক ছোট পরিসরে সংজ্ঞায়িত করে অভ্যস্ত।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান আর্মির একজন সৈন্য,
এরপর সেই প্রফেসন ছেড়ে রাজনীতি,
এরপর ক্যু করতে গিয়ে জেলে যাওয়া,
এরপর জেল থেকে বের হয়ে ইকোনমিক্যাল ক্রাইসিসের সুযোগে একসময় নানান ঘটনার ভেতর দিয়ে ভোটে জিতে ক্ষমতায় যাওয়া,
এরপর, ক্ষমতায় গিয়ে পার্লামেন্টে আগুন লাগার ঘটনাকে ভিন্নখাতে ডাইভার্ট করে সেটার সুযোগ নিয়ে Night of the Long Knives নামের এক অধ্যায় রচনা করা,
যেখানে লিস্ট করে দুশমন, এবং পটেনসিয়াল দুশমন হতে পারে এমন বন্ধুদের দুইরাতের ভেতর খতম করে পুরা জার্মানির নিয়ন্ত্রন হাতের মুঠোয় নেয়া,
এসবের কোনটাকে আপনার মনে হয় Just follow it and reach the top and change it?
১৯৩১ থেকে ৩৩ ... এই সময়গুলোতে জহোরলাল নেহেরু জেলে ছিলেন। জেলে বসে তিনি তার ১৩ বছর বয়সী মেয়ে ইন্দ্রীরা গান্ধীকে চিঠি লিখতেন। ওই চিঠিগুলো কম্পাইল করে বই বানানো হয়েছে পরে।
১৯৬ খানা চিঠি।
প্রথম দিকের একটি চিঠিতে নেহেরু নিজের মেয়ের সাথে ওই উপরের বাক্যটি নিয়েই আলোচনা করেছিলেন। অর্থাৎ উপরের বাক্যটি সম্ভবত হিটলারের না। আগে থেকেই কেউএকজন বলেছিলো। কথার তো আর কোনো স্বত্বাধিকার থাকে না। মানুষের মুখেমুখে চলে আসতেছে।
তো নেহেরু উনার মেয়েকে বলেছিলেন, তোমাকে যদি কেউ বলে সিস্টেম চেঞ্জ করতে হলে সিস্টেমের ভেতরে ঢুকতে হবে। এরপর উপরে উঠে সিস্টেম চেঞ্জ করতে হবে, মনে রেখ, এভাবে জীবনে কিছু হয় না। সিস্টেম চেঞ্জ হয় বাইরে থেকে।
কথাটা কত গুরুত্বপূর্ণ। একটা সিস্টেম যদি আপনার কাছে ফল্টি মনে হয়, এর মানে হল ওই সিস্টেমে অসততা আছে, অথবা অসমতা প্রকোট।
তো আপনি ওই সিস্টেমের বাইরে থেকে সিস্টেমকে গালাগালি করলেন।
এরপর আপনি আর না পেরে সিস্টেমে ঢুকে গেলেন। ঢুকেও গালাগালি করলেন। কারণ ওই যে বললাম, ফল্টি সিস্টেম। সিস্টেমে অসমতা প্রকোট। সকল ক্ষমতা একেবারে শীর্ষ লেভেলের কাছে পুঞ্জিভুত। তো সিস্টেমে ঢুকে আপনি আপসেট।
এরপর ওয়েট করলেন একদিন নিজেও সর্বোচ্চ পদে যাবেন।
তো সর্বোচ্চ পদে বুড়োবয়সে গিয়ে দেখলেন, আপনি রীতিমত ডিক্টেটর। আপনার ইশারা ছাড়া কিছু হয় না। তো তখন কি আপনি ক্ষমতা শেয়ার করতে চাইবেন? সারাজীবন কষ্ট করলেন যার জন্য, এখন আপনার হাতেই সব।
তো ঠিক এজন্যই সিস্টেম চেঞ্জ হয় না। কেউ করতেও চায় না।
অন্যথায় ফরাসী বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, অমুক বিপ্লব, তমুক বিপ্লব, এসব কিছুই হইতো না। সবাই সিস্টেমে ঢুকতো।
আর ফায়দা হাসিল করতে শুরু করলেই চুপ হয়ে যেতো।
ফ্রিডম অফ স্পিচের দেশ আমেরিকাতেও ১৯৩৮ থেকে ৭৫ পর্যন্ত House Committee on Un-American Activities (HCUA) ছিল। এই কমিটির কাজ ছিল কমিউনিস্ট সোশ্যালিস্ট ভাবাদর্শের মানুষজনকে ধরে জেলে ভরা। অর্থাৎ ওটাই Un-American Activity
এবং হলিউডের নামকরা অনেক পরিচালকদেরও এন্টি ক্যাপিটালিস্ট ভাবধারার মুভি বানানো, বা মুভিতে প্রচ্ছন্নভাবে এন্টি ক্যাপিটালিস্ট বিষয় প্রচারণার জন্য জেলে ভরা।
অর্থাৎ আমেরিকায় দাঁড়িয়ে সবকিছুর বিপক্ষে পক্ষে চিল্লাপাল্লা লিখালিখি সবই করতে পারো। কিন্তু ক্যাপিটালিজমের জন্য কোনোরুপ হুমকি বরদাস্ত করা হবে না।
সবারই দূর্বলতা থাকে। দুর্বল জায়গায় আঘাত লাগার সম্ভাবনা দেখা দিলেই সে নড়েচড়ে বসে। পুঁজিবাদী অনুভুতিতে আঘাত লাগা আমেরিকা কখনোই সহ্য করবে না।
তো এটাই সিস্টেম। হাহাহাহা।
সিস্টেম তার জন্য হুমকি হতে পারে, এমন কোনোকিছু সহ্য করবে না।
আর যে সিস্টেমের অংশ হয়ে যাবে, সিস্টেমের মধু যে একবার খাওয়া শুরু করবে,
সে নুন খেয়ে বরখেলাপ কেনো করবে?
আর ক্ষমতার সাধ যে একবার পায়, সে ক্ষমতা ছেড়ে নিজেকে কল্পনাও করতে পারে না।
মিয়ানমারের সুচি'কে নোবেল পর্যন্ত দেয়া হয়েছিলো শান্তিতে।
কত বছর গৃহবন্দি ছিল।
গনতন্ত্রের জন্য কত নাকি সংগ্রাম করেছে ।
অথচ এখন দ্যাখেন।
ক্ষমতার সাধ পেয়ে গেছে।
এখন কিসের গনতন্ত্র, কিসের মানব অধিকার, কিসের শান্তি, কিসের নোবেল।
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.