তো ছবিতে যে মহিলাকে দেখছেন, উনার নাম Shin Sang-ok ,
ষাট আর সত্তরের দশকে ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে নামকরা নায়িকা...
আর যে ভদ্রলোক'কে দেখছেন, উনার নাম Choi Eun-hee
ভদ্রমহিলার হাজবেন্ড, এবং নামকরা পরিচালক...
তো কোরিয়ান যুদ্ধের পর বিভক্ত দুই কোরিয়ার যাত্রা ছিল বিপরীতমুখী... দক্ষিণ কোরিয়া যখন মার্কিন ব্লকের ছায়াতলে উন্নত থেকে আরো উন্নত হচ্ছে, উত্তর কোরিয়া তখন এক প্যারানয়েড রিজিমের ক্ষপড়ে পড়ে মাফিয়া স্টেটে পরিনত হয়েছে।
বর্তমান নর্থ কোরিয়ান সুপ্রিম লিডার কিম জন উনের বাবা কিম জন লি তখন নর্থ কোরিয়ার প্রোপাগান্ডা মিনিস্টার, এবং সেইসাথে স্পাই এজেন্সির দায়িত্বে।
ওদিকে তার বাবা অর্থাৎ এখনকার নর্থ কোরিয়ান লিডারের দাদা কিম এল স্যান তখন নর্থ কোরিয়ার সুপ্রিম লিডার...
সালটা তখন ১৯৭৮...
ঘটনার পটভুমি হল, নর্থ কোরিয়ান লিডার কিম জন ইল ছিলেন সাইকোপ্যাথ। প্যারানয়েড। (তার ছেলেও বাপের গুনাবলি পেয়েছে)
তো কিম জন ইল ছোটবেলা নিজের ছোটভাইকে মেরে ফেলেছিলেন সুইমিংপুলে চুবিয়ে...
ছোটবেলা থেকে সুপ্রিম লিডারের ছেলে হবার কারণে জীবনে কেউ তাকে "না" বলেনি।
ফলাফল, ছিলেন বদরাগী... বেয়াদপ... স্পয়েল্ড চাইল্ড।
নর্থ কোরিয়াতে কোনো পশ্চিমা মুভি সার্কুলেট করা ছিল অপরাধ। কিন্তু কিম জন ইল ঠিকই পশ্চিমামুভি দেখতেন। হলিউড, বলিউড, দক্ষিন কোরিয়ান মুভি গিলতেন। এলভিস প্রিসলি হবার চেষ্টা ছিল তার।
এজন্য তার বাপ তাকে বয়সকালে প্রোপাগান্ডা মিনিস্টার বানিয়ে দেন। :P অর্থাৎ, নে... এবার যত পারিস, মুভি বানা।
তবে কিমের মাথায় ভালোই শয়তানি বুদ্ধি ছিল। আজ আমরা কিম এল স্যান বা কিম জন ইলের যে কাল্ট অফ পার্সোনালিটি দেখি, সেটার রুপকার ছিল এই কিম জন ইল...
নিজের বাপকে রীতিমত ভগবান, আর নিজেকে ভগবানের অবতার বানিয়ে ছেড়েছিলেন কিম...
অর্থাৎ প্রোপাগান্ডা মিনিস্টার হিসেবে গোসেপ গর্বলসের চেয়ে কোনো অংশে কম সফল নন তিনি।
কিন্তু একটা দেশে ট্যালেন্ট জন্মাতে গেলে তো চিন্তার স্বাধীণতা, জ্ঞান অর্জনের স্বাধীনতা দিতে হয়। নর্থ কোরিয়াতে সেটা ছিল না। এজন্য নর্থ কোরিয়াতে দক্ষিন কোরিয়ার মত ফ্লিম ডিরেক্টর বা এক্টরের জন্মও হত না ওভাবে।
ফলাফল, সাউথ কোরিয়ান ফ্লিম ইন্ড্রাস্ট্রি যেখানে সারা দুনিয়াতে নাম কামাচ্ছিলো, সেখানে নর্থ কোরিয়ান ফ্লিম ইন্ড্রাস্ট্রি অংকুরেই বিনষ্ট হবার দশা। কিছু প্রোপাগান্ডা মুভি বানানো ছাড়া তেমন কোনো কাজই ছিল না।
তো নিজের যখন নেই, তাহলে যার আছে, তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে আসতে হবে,
এই ছিল কিম জন ইলের ধান্দা।
সাউথ কোরিয়ান নামকরা নায়িকা Shin Sang-ok কে পছন্দ করতেন কিম। উনি ছিলেন কিমের ক্রাশ।
ফলাফল, একদিন সাউথ কোরিয়ান গোয়েন্দা বাহিনী লাগিয়ে হংকং থেকে রীতিমত কিডন্যাপ করে ভদ্রমহিলাকে উত্তর কোরিয়াতে নিয়ে যাওয়া হল।
হংকং এর এক সমুদ্র সৈকত থেকে কিডন্যাপ করা হয়েছিল। কিডন্যাপারা এসেছিলো সমুদ্র হয়ে। স্পিডবোর্ডে। এরপর সেই স্পিডবোর্ডে করেই তাকে সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সোজা নর্থ কোরিয়াতে।
:P কিছুদিন পর ভদ্রমহিলার স্বামী অর্থাৎ বিখ্যাত পরিচালক Choi Eun-hee কে কিডন্যাপ করা হল একই কায়দায়।
ভদ্রমহিলাকে নিয়ে যাওয়া হয় কিম জন ইলের কাছে। সেখানে কেটে যায় তিনটি বছর।
ওদিকে ভদ্রমহিলার হাজবেন্ডকে নিয়ে যাওয়া হয় জেলখানায়। সেখানে তিন বছর ধরে উনার উপর চলে নির্যাতন। তিন বছর নির্যাতন সহ্য করে অবশেষে তিনি রাজি হন নর্থ কোরিয়ার জন্য ফ্লিম বানাতে :P
তখন তাকে মুক্তি দিয়ে কিম জন ইলের প্রাসাদে নেয়া হয়। পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় সাইকোপ্যাথ কিম জন ইলের সাথে। সেখানে তিন বছর পর প্রথমবারের মত তিনি নিজের স্ত্রীর দেখা পান। কিম জন ইল তাদের আবার বিয়ের ব্যবস্থা করেন :P
যাই হোক, এরপর তারা স্বামী স্ত্রী মিলে কিম জন ইলের জন্য মুভি বানিয়েছিলেন। কিছু প্রোপাগান্ডা মুভি বানানোর পর ১৯৮৬ সালে সুযোগ বুঝে ভিয়েনাতে আয়োজিত এক ফ্লিম ফেস্টিভালে যোগ দিতে এসে নর্থ কোরিয়ান প্রতিনিধি দলের সাথে আগত এই দপ্ততি পালিয়ে যান। আশ্রয় নেন ভিয়েনার মার্কিন দুতাবাসে।
যাই হোক, কেটে গেছে বহুদিন। কিম এল স্যান, কিম জন ইল... এরা দুজনই মারা গিয়েছে।
কিম জন ইলের ছেলে কিম জন উন এখন ক্ষমতায়।
সাউথ কোরিয়ান মুভি আজ গোটা দুনিয়াতে জনপ্রিয়।
ওদিকে নর্থ কোরিয়ান কোনো মুভির নামও কেউ শোনে না।
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.