Tuesday, September 18, 2018

নর্থ কোরিয়ার স্পাই Ok Hwa


মহিলার নাম Kim Hyon-hui (aka "Ok Hwa")


ছবিতে তার মুখে ব্যান্ডেজ টাইপের কিছু একটা দেখতেছেন... শুনে অবাক হবেন হয়ত, তার মুখের ভেতর ছোট একটা ডিভাইজ ভরে এরপর মুখ শক্ত করে বেধে রাখা হয়েছে, যাতে সে নিজের জিভ চিবিয়ে রক্তক্ষরণে আত্মহত্যা করতে না পারে !

মহিলা নর্থ কোরিয়ান স্পাই এজেন্সি SSD -এর এজেন্ট... ১৯৭৩ সালে নর্থ কোরিয়ান এই এজেন্সি প্রতিষ্ঠিত হয় কেজিবি'র হুবহু অনুকরণে... এবং প্রকাশ্য সহায়তায়...

শুরু থেকেই এই এজেন্সি নানাবিধ কুখ্যাত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। যেমন নানান সময়ে প্রায় এক ডজনের উপর জাপানি নাগরিক কিডন্যাপ করেছিলো জাস্ট নিজেদের স্পাইদের জাপানি শেখানোর জন্য !

এটা জাস্ট একটা উদাহরণ... এমন আরো অনেক কর্মকান্ড আছে।

তো ১৯৮৮ সালের কথা...
১৯৮৮ সালের সামার অলিম্পিক আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছিলো দক্ষিণ কোরিয়া।
স্বাভাবিকভাবেই নর্থ কোরিয়ার ইগোতে লাগলো ব্যাপারটা। সাউথ কোরিয়াতে কিছুতেই অলিম্পিক আয়োজন করতে দেয়া যাবে না। যদি করতেই হয়, ইউনিফাইড কোরিয়াতে আয়োজন করতে হবে!
অর্থাৎ মামার বাড়ির আবদার...

তো এই অলিম্পিক ঠেকাতে হবে।
এখনকার নর্থ কোরিয়ার লিডার কিম জন উনের বাপ কিম জং লি তখন নর্থ কোরিয়ান সিক্রেট সার্ভিস ডিভিশনের দায়িত্ব। আর তার বাবা কিম এল স্যান তখনও নর্থ কোরিয়ার সুপ্রিম লিডার।

অর্ডার এলো, সাউথ কোরিয়াকে ঝুকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে। তাহলেই নিরাপত্তার অনুহাতে অলিম্পিক বয়কট করবে অধিকাংশ দেশ...

তো এই মহিলা এবং তার আরেকজন পুরুষ সহযোগীর উপর দায়িত্ব এলো, সাউথ কোরিয়া গামী একটা কোরিয়ান বিমান উড়িয়ে দেবার। ফলাফল, বাহরাইন থেকে সিউল যাবার পথে Korean Air Flight 858 বিমান বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হল। ১১৫ জন মারা গেল।

এই মহিলা এবং তার পুরুষ সহযোগি ফেক জাপানি পাসপোর্ট নিয়ে ঘুরতেন। ফেক আইডেন্টি তো ছিলোই। যারা স্পাই এজেন্সির কার্যক্রম সম্পর্কে হালকাপাতলা ধারণা রাখেন, তাদের এসব না বললেও চলবে।

প্রথমে গেলেন সার্বিয়া। সেখানে নিযুক্ত নর্থ কোরিয়ান স্পাইদের কাছ থেকে পেলেন বোমা... একটা রেডিওর ভেতর এই বোমা লুকানো ছিল। এরপর সেই বোমা নিয়ে বাহরাইন এলেন। বাহরাইন থেকে সিউলগামী KAF 858 বিমানের এক যাত্রীর সাথে সক্ষতা করে এরপর কোনোএক উপায়ে সেই রেডিও ঢুকিয়ে দিলেন লাগেজে। হয়ত কাউকে কনভিন্স করে বলেছিলো, কোনো আত্মীয় স্বজনের জন্য এটা ক্যারি করে নিয়ে যেতে।
ব্যস, এরপর বিমান আকাশে ওঠা মাত্র সবশেষ...

যাই হোক, ঘটনা ঘটানোর পর বাহরাইন থেকে মহিলা পালাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। বাহরাইন পুলিশ মহিলাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের সময় উনার সাথে যে পুরুষ সহযোগী ছিল, সে সাইনাইড খেয়ে আত্মহত্যা করে। সিগারেটের ভেতর সাইনাইড লুকানো ছিল।
আর এই মহিলা সাইনাইড ঠিকমত গিলতে পারেননি। পুলিশ বাধা দিয়েছিলো। এরপর মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে ট্রিটমেন্ট করা হয়। এবং দক্ষিন কোরিয়ান এজেন্সির লোকেরাও ততক্ষণে হাজির। মহিলাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় সাউথ কোরিয়াতে।
ছবিগুলো সাউথ কোরিয়াতে নিয়ে আসার সময় তোলা।
মহিলাকে ঘিরে আছে সাউথ কোরিয়ার এজেন্টরা।


মহিলার বিচার হয়। বিচারে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
যদিও সে বছরই দক্ষিন কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট তাকে ক্ষমা করে দেন। দিয়ে বলেন, 'Kim was merely a brainwashed victim of the real culprit, the North Korean government."

মহিলা পরবর্তীতে একটা বই লিখেছিলেন। নিজের আত্মজীবনী, নাম The Tears of My Soul
এই বই থেকে বিক্রি হওয়া সব টাকা পয়সা দান করেছিলেন ১১৫ জন নিহতের পরিবারগুলোকে।

মহিলার কেস যে দক্ষিন কোরিয়ান এজেন্ট হ্যান্ডেল করেছিলেন, তাকেই তিনি পরে বিয়ে করেন !
এরপর দুইটা সন্তানও হয়েছে তাদের।

শুরুতে বলেছিলেন, প্রায় ১৩ জন জাপানি নাগরিক কিডন্যাপ করেছিলো নর্থ কোরিয়ার গোয়েন্দা বাহিনী... ১৯৭৩ থেকে ৮৩ সালের মধ্যে।
এদের একজন ছিলেন Yaeko Taguchi
ছবির এই মহিলা যখন গোয়েন্দা ট্রেনিং প্রোগ্রামে নাম লিখান, তখন উনার প্রশিক্ষকদের ভেতর একজন ছিলেন Yaeko Taguchi

মাঝেমাঝে দুনিয়ার অনেককিছু শ্রেফ সিনেমার মত। বা সিনেমার চেয়েও বেশি সিনেম্যাটিক।

No comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.