Friday, August 7, 2020

আয়া সোফিয়াকে মিউজিয়াম থেকে মসজিদ নিয়ে আমার ভাবনা

 


অটোম্যান সম্রাজ্যের Interregnum (১৪০২-১৪১৩ সাল) সময়কালের ৪ জন সুলতান বাদ দিলে,

মোট অটোম্যান সুলতান ছিল ৩২ জন।
এই ৩২ জনের ভেতর ৪ জন সুলতান বাদে বাকি সবার জন্ম ইউরোপিয়ান নারীর গর্ভে।

অটোম্যান সম্রাজ্য যখনই ইউরোপে বিস্তার লাভ করে, তখনই এই জিনিসটা শুরু হয়। ইউরোপের মেয়েদের ধরে নিয়ে হেরেমে ঢোকানো হতো। এরপর তারা হয়ে যেতো সম্রাটের কনকুবাইন, বা দাসী।
বন্দী জীবন।
বিশাল হেরেমে মেয়েদের ভেতর লেগে থাকতো রাজনীতি। কে কাকে টক্কর দিয়ে উপরে উঠতে পারে।
এদের গর্ভেই সম্রাটের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারি জন্ম নিতো।
এরা পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতো।
কনভার্ট হইতো।
এজন্য ইউক্রেনের মেয়ে রোক্সেলানা হয়ে গেল হুররাম সুলতান।
গ্রিসের মেয়ে আনাস্থাসিয়া হয়ে গেল কোসেম সুলতান।
রাশিয়ার নাদীয়া হয়ে গেলো তুরহান সুলতান।

অটোম্যান সম্রাজ্য ক্ষমতার শীর্ষে ছিল মুলত Soleiman the Magnificant এর সময়ে।
তবে ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়ে গিয়েছিলো সোলেয়মানের বাবা, সুলতান সেলিম।
সে ছিল প্রথম অটোম্যান সুলতান, যে খলিফা পদ দখলে নিয়েছিল।
এর কারণ হল, সে আরব এবং উত্তর আফ্রিকার ভুমধ্যসাগর ঘেঁষা আরব মুসলিম দেশগুলোকে অটোম্যান টেরিটোরির ভেতরে নিয়ে আসে। এবং আরব খলিফা হটিয়ে নিজেই খলিফা হিসেবে ঘোষনা দেন।
এজন্য তার ছেলে সুলতান সোলেয়মান হল অটোম্যানদের ভেতর দ্বিতীয় খলিফা।

সোলেয়মানের মা ছিল হাফসা সুলতানা। ক্রাইমিয়ার মেয়ে।
আর সোলেয়মানের বৌ তো হুররাম 
এরে সবাই চেনে।
সেইসময়কালে অটোম্যানরা ছিল আজকের সময়কালের আমেরিকার মত। সুপারপাওয়ার।

অটোম্যান সম্রাজ্যের ইতিহাসে ২৮৯ জন উজির (তথা প্রধানমন্ত্রী) ছিল।
আপনি বিখ্যাত যার নামই নেবেন, দেখবেন অধিকাংশই ইউরোপিয়ান।
যেমন পারগালে ইব্রাহিম পাশা ছিল গ্রিসের।
সাকুলু মেহমেদ পাশা ছিল বসনিয়ার।
আবার রুস্তম পাশা, যাকে আপনারা হয়ত অনেকেই নেগেটিভলি দ্যাখেন  এই রুস্তম পাশা কিন্তু অটোম্যান সম্রাজ্যের অন্যতম শেষ্ঠ উজির ছিল।
তার আমলে অটোম্যান ট্রেজারি ছিল ভরপুর।
অর্থনৈতিক ব্যাপারস্যাপারে সে ব্যাপক সংস্কার করেছিল।
এই রুস্তম পাশা ছিল ক্রোয়েশিয়ান।
এছাড়া আলবেনিয়া, বসনিয়া, গ্রিস থেকে অনেকজন উজির হয়েছিলো।
অটোম্যান সম্রাজ্যের উজির হওয়া আর আগুনে ঝাপ দেয়া একই কথা।
খুব কম উজিরই স্বাভাবিকভাবে মরতে পেরেছে। এটা ভয়াবহ একটা পোস্ট ছিল।
এছাড়া সম্রাটের কেবিনেট, তথা দরবারের সদস্য হওয়া আরো ঝুঁকি পূর্ণ ছিল। বিশেষ করে সোলেয়মানের বাপ সেলিমের আমলে।
উঠতে বসতে ফাঁসি।
ভুল করলেই ফাঁসি।

অটোম্যানদের সেই বিখ্যাত নেভাল কমান্ডার হায়দারউদ্দিন বারবারোসা ছিল আলবেনিয়ার লোক।

অটোম্যান সম্রাজ্যের পরিসর যখনই তুরস্কের আনাতোলিয়ান প্যানিনসিলা থেকে প্রসারিত হয়ে ইউরোপে ছড়িয়ে যায়,
এরপর সম্রাট মুরাদের আমলে তৈরি করা হয় জেনেসারি ফোর্স। যা আর্মির স্পেশ্যাল ফোর্সের মত এলিট ফোর্স।
যেটা ছিল ইউরোপের প্রথম স্ট্যান্ডিং আর্মি।
অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতনভোগী পেশাদার আর্মি।
এর আগে পৃথিবীতে আর্মি বলতে যা ছিল, সেটা হল রাজ্যের গোত্রপতিরা তাদের ব্যানারম্যানদের ডেকে সম্রাটের জন্য সৈন্য সরবরাহ করতো।
গেম অফ থ্রোনস সিরিয়াল যারা দেখেছেন, তারা নিশ্চয় ধরতে পারতেছেন সিস্টেমটা কিভাবে কাজ করে।

তো এই জেনেসারি ফোর্স দেখে ইউরোপের দেশগুলো ব্যাপক ভয় পেতো। এই জেনেসারি ফোর্স কিভাবে তৈরি করা হয়েছিলো, সেটা তো জানেনই হয়ত।
অটোম্যান সম্রাজ্যের ইউরোপিয়ান টেরিটোরিতে বসবাসরত ইউরোপিয়ান নন মুসলিমদের পরিবারের একটি করে বাচ্চা ছেলেদের খাজনা হিসেবে জোর করে ধরে নিয়ে ভর্তি করা হতো ট্রেনিং সেন্টারে।
এরপর বাচ্চাকাল থেকে ট্রেনিং দেয়া হতো। ধর্মান্তরিত করা হতো। এদের অনেকেই আর কখনো তাদের পরিবারের পরিচয়ও জানতে পারতো না। ভুলে যেতো।
বড় হলে এরাই হত অটোম্যানদের সবচেয়ে ফিয়ার্স ফাইটিং ফোর্স। এদের ভেতর থেকে সম্রাটের পার্সোন্যাল গার্ড হত কেউকেউ। অনেকে আবার উজিরও হয়ে যেতো। দরবারের পাশা হতো।

কনস্ট্যান্টিনোপল দখল করতে এই জেনেসারিদের সাথে বাইজেনটাইন সম্রাটের ভাড়া করা ইউরোপিয়ান মার্সেনারি তথা জাস্টিনিয়ানির soldier of fortune তুমুল যুদ্ধ হয়।
এই শহরটি সম্ভবত দুনিয়ার সবচেয়ে দামি ভুমি, পলিটিক্যালি এবং স্ট্যাটেজিক্যালি দেখলে।
মাঝ দিয়ে বসফরাস বয়ে গিয়েছে, যার একপাশে কৃষ্ণ সাগর, অন্যপাশে মারমারা হয়ে ভুমধ্যসাগর।
এই বসফরাসের নিয়ন্ত্রন পাওয়ার জন্য কত দেশ কত চেষ্টা করেছে।
এমনকি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ানদের সাথে মিত্র ইংরেজ আর ফরাসিদের ডিল ছিল তুরস্কের হাত থেকে এই শহর দখল করে রাশিয়ার হাতে তুলে দেবার।
প্রায় সফল হতে গিয়েও হয়নি মোস্তফা কামালের জন্য।
এই লোক তুরস্ককে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
তা না হলে আজও আরবের মত তুরস্ক ভেঙ্গে চুরমার করতো পশ্চিমারা।
যাই হোক, সেসব ইতিহাস বলতে গেলে রাত শেষ হয়ে যাবে।

রোমান সম্রাট কনস্ট্যান্টিন দ্যা গ্রেট, যার কারণে আজ আপনি দুনিয়াতে শত কোটি খ্রিস্টান দেখতেছেন, সেই কনস্ট্যান্টিন দা গ্রেট খ্রিস্টান ধর্মে কনভার্ট হয়ে গোটা রোমান সম্রাজ্যে খ্রিস্টান ধর্ম ছড়িয়ে না দিলে ইহুদিদের মত আজও খ্রিস্টানদের সংখ্যা আহামরি বেশি হতো না পৃথিবীতে।
তো সম্রাট কনস্ট্যান্টিনের নামে এই শহরটির নামকরণ হয়। এবং এটাকেই রাজধানী করা হয়। স্ট্যাটেজিক এবং চমৎকার আবহাওয়ার কারণে।
সম্রাট কনস্ট্যান্টিন চাইলে কিন্তু ইউরোপের যেকোনো শহর, অথবা আরবের যেকোনো শহর, এমনকি জেরুজালেম, বা আফ্রিকার মিশরের আলেকজ্যান্দ্রিয়া, যেকোনো শহরকে রোমান সম্রাজ্যের রাজধানী বানাতে পারতেন। কিন্তু বানিয়েছিলেন ঐ বসফরাসের তীর ঘেঁষা দুইপাড়ে অবস্থিত শহরটিকে।
এরপর এই শহর হয়ে যায় অনেকের জন্য হোলি গ্রেইল।
খ্রিস্টানদের ভেতরে বিভাজন তৈরি হলে রোম হয় ক্যাথোলিক চার্চের হেড কোয়াটার আর এই কনস্ট্যান্টিনোপল হয় গ্রিক অর্থোডক্সির হেড অফিস।
পরে কনস্ট্যান্টিনোপল খ্রিস্টানদের হাতছাড়া হয়ে গেলে গ্রিক অর্থোডক্স চার্চের হেড অফিস সরিয়ে রাশিয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়। রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের সাথে আজকের গ্রিক অর্থোডক্স চার্চের কানেকশন ছিল এটাই।

আর আয়া সোফিয়া?
ওরে ভাই, এটা তো বিখ্যাত জায়গা।
আর এটার পলিটিক্যাল সিগনিফিকেন্স অনেক।
এটা সিম্বলিক।
এটা প্রথমদিকে ছিল চার্চ অফ কনস্ট্যানটিন।
এরপর ৫৩২ সালে, সম্রাট জাস্টিনিয়ান, আজকে আপনি যে ডিজাইনটি দ্যাখেন, সেটা অনুসারে এই চার্চ তৈরি করেন।
পরে এটা গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ হয়।
একসময় ক্যাথেলিক Crusader খ্রিস্টানরা ইউরোপ থেকে এসে জেরুজালেম উদ্ধার করার বদলে উল্টো কনস্টানটিনোপল দখল করে আয়া সোফিয়ারে রোমান ক্যাথলিক চার্চ বানিয়ে বসে। 
পরে আবার গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ এটা ফিরে পায়।

এরপর যখন অটোম্যান সম্রাট প্রথম সুলতান মেহমেদ (যার মায়ের বাড়ি সার্বিয়া) তিনি যখন কনস্ট্যান্টিনোপল দখল করেন,
তখন এই শহর খ্রিস্টানদের হাতছাড়া হয়।
এরপর আয়া সোফিয়াকে মসজিদ বানিয়ে রাখা হয়।
প্রায় ১০০০ বছরের কাছাকাছি চার্চ ছিল, এরপর পরের প্রায় ৪৫০ বছরের মত ছিল মসজিদ। এরপর যখন মোস্তফা কামাল আধুনিক তুরস্ক প্রতিষ্ঠা করেন,
তখন তিনি খোদ এই কনস্ট্যান্টিনোপল থেকে রাজধানী সরিয়ে নেন। এবং পোস্টাল সার্ভিসকে নির্দেশ দেন, কেউ যদি ইস্তাম্বুল ছাড়া আরো যেসব ভিন্ন নাম কনস্ট্যান্টিনোপলের আছে, সেগুলো যদি ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করে, তাহলে সেই চিঠি প্রেরকের কাছে ফিরিয়ে দিতে।
তিনি রাজধানী সরিয়ে নিয়ে আনাতোলিয়াতে নিয়ে যান। এর পেছনে স্ট্রাটেজিক এবং হিস্টোরিক্যাল কারণ ছিল।
তুরস্ক চাচ্ছিলো, অটোম্যান সম্রাজ্যের লিগ্যাসি থেকে সরে তার্কিশ রিপাবলিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে। পুর্বের লিগ্যাসি ভুলে সবকিছুর ফ্রেশ স্টার্ট দিতে।

আয়া সোফিয়াকে তিনি মিউজিয়ামে বদলে দেন।
ইস্তাম্বুলে বিখ্যাত মসজিদের অভাব নেই।
সবচেয়ে বিখ্যাত হল সুলতান আহম্মেদ মসজিদ (যেটাকে আপনারা নীল মসজিদ বলেন)
আরেকটা হল বিখ্যাত সোলেয়মানিয়া মসজিদ।
সুলতান সোলেয়মান যা বানিয়েছিলো।
এর ডিজাইন করেছিলো আর্কিটেক্ট সিনান। তার নামে ইস্তাম্বুলে নামকরা একটা বিশ্ববিদ্যালয় আছে।
সোলেয়মানের ভালো একটা গুন ছিল প্রতিভা খুঁজে বের করতে পারা।
আসলে এখনও একজন রাজা বাদশাহ বা প্রেসিডেন্ট, যেটাই বলেন, এদের জাস্ট একটা গুণ থাকলেই কিন্তু চলে। সেটা হলে কাকে কোনপদে বসালে দেশের উন্নতি হবে, সেটা বোঝা। এটাই বড় কোয়ালিটি।

যাই হোক,
৬৭৪ বছর অটোম্যান সম্রাজ্য টিকে ছিল।
কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সবসময় রাজার ছেলে রাজা হত।
এটাই ছিল নিয়ম।
এবং রাজ্যে ফিৎনা ফ্যাসাদ যাতে না হয়,
সেটার জন্য করা হয়েছিলো ফ্রাক্টিসাইড আইন। একে জাস্টিফাই করার জন্য ধর্মীয় ব্যাখ্যাও ছিল।
অর্থাৎ সুলতান হবার সাথেসাথে অটোম্যান Mute Executioner দের নির্দেশ দেয়া হতো, সুলতানের আপন-সৎ, যত ভাইব্রাদার আছে, সব মেরে দিতে।
এবং এই নিয়ম মেলাদিন চলেছে।
সুতরাং বুঝতেই পারতেছেন, সুলতানের যত বেশি ভাইব্রাদার থাকবে, সিংহাসনে আরোহোনের দিনটা হবে ততটাই মারাত্মক।
সুলতান মাহমুদ ১৫৯০ সালে সুলতান হবার পর তার ১৯টা ভাইকে এক্সিকিউট করা হয়।
কারণ সুলতান মাহমুদের বাপ ছিল সুলতান মুরাদ। মুরাদের মা ছিল ইতালিয়ান মহিলা নুরবানু।
ওদিকে মুরাদের বৌ ছিল আলবেনিয়ার মেয়ে সাফিয়া সুলতানা। সে আবার ছিল হুররামের মেয়ে মিহিরিমার হ্যান্ডপিক।

তো সাফিয়ার সাথে তার শ্বাশুড়ির ছিল সাপে নেউলে সম্পর্ক। ওদিকে মুরাদ আবার সাফিয়ারে ছাড়া অন্যকাউরে পছন্দ করতো না।
নুরবানু তখন মুরাদের খাবারে নানান মেডিসিন খাইয়ে, সিস্টেম করে তারে রীতিমত সাইকো বানিয়ে ফেলেছিলো। আসলে  স্পষ্টভাবে ব্যাপারটা প্রকাশ করার মত শব্দ খুঁজে পেলাম না 
তো মুরাদের এরপর প্রচুর পোলাপান হয়েছিলো। হেরেমের প্রায় সব মেয়েই প্রেগনেন্ট হয়ে যায়।
ভাগ্যিস, ছেলে হয়েছিলো মাত্র ২০ টা। আরো বেশি হয়নি বলেই রক্ষা।

সুলতান আহম্মেদের আমলের শেষদিকে এসে ভাই হত্যার নিয়ম বন্ধ হয়। এরপর যেটা করা হত, সেটা হল ভাইব্রাদাদের কাফেজে বন্দি করা।
এই জীবন মৃত্যুর চেয়েও কষ্টের।
যেমন, দ্বিতীয় সোলেয়মান যখন মাত্র নয় বছর বয়স, ১৬৫১ সাল, তখন তিনি কাফেজে বন্দি হন।
এরপর ১৬৮৭ সালে, অর্থাৎ ৩৬ বছর পর সেই বন্দী কাফেজ থেকে মুক্ত হয়ে আবিস্কার করেন, জেনেসারিরা বিদ্রোহ করে তাকে সুলতান বানিয়ে দিয়েছে 

চিন্তা করেন কি ভয়াবহ অবস্থা।

যাই হোক। আপনি অতীতের ইতিহাসগুলোকে হাল আমলের মরাল স্ট্যান্ডার্ড দিয়ে মাপতে গেলে বিপদে পড়বেন। আপনি এখন এমন অনেককিছুকেই নেতিবাচকভাবে দ্যাখেন, যা হয়ত সেইসময়কার মানুষদের কাছে মোটেও অনৈতিক মনে হত না।
সেইসাথে কালচারাল ব্যাপারটিও আছে। যেমন বহুবিবাহ আমাদের কালচারে নেতিবাচক। আবার আফ্রিকা এবং আরবের অনেক কালচারে নেতিবাচক নয়।
যেমন হেরেম সিস্টেমটা কিন্তু একসময় অটোম্যানরাই বন্ধ করে। জেনেসারি সিস্টেমও ওরাই বন্ধ করে দেয়। সময়ের সাথে তাল মেলাতে।
আবার দাস প্রথা কিন্তু আপনার চোখে খারাপ। অতীতে অনেক রাজা বাদশাহ এটা চালিয়ে গিয়েছে।

আপনি একবার হুররাম, বা তারই স্বজাতি তুরহানের জীবনে দ্যাখেন।
আচ্ছা, ওদের জীবনে নয়। আপনার নিজের বোনের সাথে যদি এমন হইতো, আপনার কেমন লাগতো?
আপনার বোনকে কিডন্যাপ করে যদি অন্যদেশের রাজ বাদশাহ'র হেরেম খানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।

তো এতো কথা কইলাম। জাস্ট একটা কথা বোঝানোর জন্য,
আমাদের দেশের অনেকে অটোম্যান সম্রাজ্যকে যেভাবে ভাবে, ব্যাপারটা তেমন না।
আমি এটাকে কখনোই তুর্কি সম্রাজ্য বলিনা। এটাকে অটোম্যান ডায়নেস্টির শাসন বলাটাই যুক্তি সঙ্গত। কারণ মুরাদ-৪ যখন ১৬৪০ সালে তার মৃত্যুসজ্জায় নিজের জীবিত শেষ ভাইকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলো, সেই নির্দেশ অমান্য না করা হল অটোম্যান ডায়নেস্টি ওখানে শেষ হয়ে যেতো এবং সম্রাজ্যের শাসন বুঝে পেতো কে জানেন? রাশিয়ার ক্রাইমিয়ার খানের পরিবার। কারণ এরাই ছিল দ্বিতীয় পাওয়ারফুল পরিবার।
ওরা কিন্তু তুর্কি না।
অটোম্যানদের সিস্টেমের সাথে অন্য কোনো সম্রাজ্যের সিস্টেম মেলানো সম্পূর্ণ ভুল প্রচেষ্টা।

আর অটোম্যান সম্রাজ্যে বরাবরই আরবরা ছিল শোষিত জাতি। এবং হরহামেশা আরব রিভল্ট বা বিদ্রোহ হইতো অটোম্যানদের বিরুদ্ধে।
ইনফ্যাক্ট, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশরা অটোম্যান সম্রাজ্য ভেঙেছে এই আরবদেরকে কাজে লাগিয়ে।
এবং এখনও আরব দেশগুলো তুরস্কের ব্যাপারে সতর্ক থাকে।

এরদোগান এখন তুরস্কের ক্ষমতায়। চুরি চামারি করে ক্ষমতায় আসেনি। ট্রাম্পের মত ক্যালকুলেটিভ ওয়েতে হিসাব করেছে। এনাতোলিয়ান প্যানুউন্সুলার তুলনামুলক পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলোকে ফোকাস করেছে। সেখানকার ভোটগুলো বাগিয়ে নিয়েছে।
এরদোগানের দল তুমুল জনপ্রিয়, একথা বলা যাবে না। কিন্তু ক্ষমতায় যেতে গেলে পার্লামেন্টে যে কয়টা সিট দরকার, সেগুলো বাগিয়ে নেবার মত রাজনীতি এখন তারা করে যাচ্ছে।
এখন তার ক্ষমতা আছে, আয়া সোফিয়ারে মসজিদ বানিয়ে দিলো। যেমন এখন মোদির ক্ষমতা আছে, সে বাবরি মসজিদকে মন্দির বানালো।
এরদোগান ধর্মকে রাজনীতির পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে।
এই চর্চা পৃথিবীতে সর্বোত্র এখন চলমান।
আয়া সোফিয়া অনেক বড় সিম্বলিক ব্যাপার।
বাংলাদেশের অনেক গাধার দল এরদোগান'রে নিয়ে খেলাফতের স্বপ্ন দ্যাখে। অন্যদিকে এরদোয়ান মুলত দ্যাখে তুর্কি সম্রাজ্যবাদের স্বপ্ন। যেটাতে ধর্ম হবে একটা প্রভাবক।

সেই স্বপ্ন শ্রেফ তার স্বপ্ন দোষ হয়েই থেকে যাবে হয়ত।
ইউরোপিয় ইউনিয়নে ঢোকার অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এখন দক্ষিন দিকে চোখ দিচ্ছে। অর্থাৎ সিরিয়া, ইরাক, জর্ডান, লিবিয়া, এসব দিকে।

যাই হোক। এখানে কে ভালো কে খারাপ, এসব ব্যাপার নয়।
ভালো খারাপ সবই আপেক্ষিক।
সেকুল্যার দলগুলো ভোটে জিতে ক্ষমতায় এলে তারা আবার ওটাকে মসজিদ থেকে মিউজিয়াম বানিয়ে দেবে।
হিসাব সহজ।
এতো চিন্তার কিছু নেই।
আর তুরস্ক একটু আলাদা।
মেসুত ওজিলের বিয়ের ভিডিও দেখেছেন? 
আবার তুরস্কের মসজিদের ভেতর জিন্স শার্ট পরা নন মুসলিম ইউরোপিয়ান মহিলা চাইলেই মাথায় একটা কাপড় দিয়ে ঢুকে যেতে পারে। ভিডিও করতে পারে। এমন অনেক ভিডিও আপনি ইউটিউবে ট্রাভেলার ভিডিও ব্লগারদের কাছ থেকে পাবেন।
ওখানকার কালচার আলাদা।

যাই হোক। আয়া সোফিয়া আছে। থাকবে আপাতত।
ওর নামের শেষে যেটাই থাকুক, দিনশেষে ওটা একটা ইতিহাস।

Read More »

সিস্টেম নিয়ে আমার ভাবনা

 


হিটলারের নামে একটা Quote চালিয়ে দেয়া হয় হরহামেশা,

"If you don't like a rule/system, just follow it, reach the top and change it"

বাস্তবে এই কথা হিটলার আদেও বলেছিলেন কিনা, সন্দেহ আছে। যদি ধরি এটা হিটলারই বলেছিলেন, তাহলে বলতে হয়, তিনি নিজেও এটা মানেননি।
কারণ কি জানেন?
বাস্তবে এভাবে কখনো কিছু করা যায় না।
এর মানে হল আপনি সিস্টেম জিনিসটাকে অনেক ছোট পরিসরে সংজ্ঞায়িত করে অভ্যস্ত।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান আর্মির একজন সৈন্য,
এরপর সেই প্রফেসন ছেড়ে রাজনীতি,
এরপর ক্যু করতে গিয়ে জেলে যাওয়া,
এরপর জেল থেকে বের হয়ে ইকোনমিক্যাল ক্রাইসিসের সুযোগে একসময় নানান ঘটনার ভেতর দিয়ে ভোটে জিতে ক্ষমতায় যাওয়া,
এরপর, ক্ষমতায় গিয়ে পার্লামেন্টে আগুন লাগার ঘটনাকে ভিন্নখাতে ডাইভার্ট করে সেটার সুযোগ নিয়ে Night of the Long Knives নামের এক অধ্যায় রচনা করা,
যেখানে লিস্ট করে দুশমন, এবং পটেনসিয়াল দুশমন হতে পারে এমন বন্ধুদের দুইরাতের ভেতর খতম করে পুরা জার্মানির নিয়ন্ত্রন হাতের মুঠোয় নেয়া,
এসবের কোনটাকে আপনার মনে হয় Just follow it and reach the top and change it?

১৯৩১ থেকে ৩৩ ... এই সময়গুলোতে জহোরলাল নেহেরু জেলে ছিলেন। জেলে বসে তিনি তার ১৩ বছর বয়সী মেয়ে ইন্দ্রীরা গান্ধীকে চিঠি লিখতেন। ওই চিঠিগুলো কম্পাইল করে বই বানানো হয়েছে পরে।
১৯৬ খানা চিঠি।
প্রথম দিকের একটি চিঠিতে নেহেরু নিজের মেয়ের সাথে ওই উপরের বাক্যটি নিয়েই আলোচনা করেছিলেন। অর্থাৎ উপরের বাক্যটি সম্ভবত হিটলারের না। আগে থেকেই কেউএকজন বলেছিলো। কথার তো আর কোনো স্বত্বাধিকার থাকে না। মানুষের মুখেমুখে চলে আসতেছে।

তো নেহেরু উনার মেয়েকে বলেছিলেন, তোমাকে যদি কেউ বলে সিস্টেম চেঞ্জ করতে হলে সিস্টেমের ভেতরে ঢুকতে হবে। এরপর উপরে উঠে সিস্টেম চেঞ্জ করতে হবে, মনে রেখ, এভাবে জীবনে কিছু হয় না। সিস্টেম চেঞ্জ হয় বাইরে থেকে।

কথাটা কত গুরুত্বপূর্ণ। একটা সিস্টেম যদি আপনার কাছে ফল্টি মনে হয়, এর মানে হল ওই সিস্টেমে অসততা আছে, অথবা অসমতা প্রকোট।
তো আপনি ওই সিস্টেমের বাইরে থেকে সিস্টেমকে গালাগালি করলেন।
এরপর আপনি আর না পেরে সিস্টেমে ঢুকে গেলেন। ঢুকেও গালাগালি করলেন। কারণ ওই যে বললাম, ফল্টি সিস্টেম। সিস্টেমে অসমতা প্রকোট। সকল ক্ষমতা একেবারে শীর্ষ লেভেলের কাছে পুঞ্জিভুত। তো সিস্টেমে ঢুকে আপনি আপসেট।
এরপর ওয়েট করলেন একদিন নিজেও সর্বোচ্চ পদে যাবেন।
তো সর্বোচ্চ পদে বুড়োবয়সে গিয়ে দেখলেন, আপনি রীতিমত ডিক্টেটর। আপনার ইশারা ছাড়া কিছু হয় না। তো তখন কি আপনি ক্ষমতা শেয়ার করতে চাইবেন? সারাজীবন কষ্ট করলেন যার জন্য, এখন আপনার হাতেই সব।
তো ঠিক এজন্যই সিস্টেম চেঞ্জ হয় না। কেউ করতেও চায় না।

অন্যথায় ফরাসী বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, অমুক বিপ্লব, তমুক বিপ্লব, এসব কিছুই হইতো না। সবাই সিস্টেমে ঢুকতো।
আর ফায়দা হাসিল করতে শুরু করলেই চুপ হয়ে যেতো।

ফ্রিডম অফ স্পিচের দেশ আমেরিকাতেও ১৯৩৮ থেকে ৭৫ পর্যন্ত House Committee on Un-American Activities (HCUA) ছিল। এই কমিটির কাজ ছিল কমিউনিস্ট সোশ্যালিস্ট ভাবাদর্শের মানুষজনকে ধরে জেলে ভরা। অর্থাৎ ওটাই Un-American Activity

এবং হলিউডের নামকরা অনেক পরিচালকদেরও এন্টি ক্যাপিটালিস্ট ভাবধারার মুভি বানানো, বা মুভিতে প্রচ্ছন্নভাবে এন্টি ক্যাপিটালিস্ট বিষয় প্রচারণার জন্য জেলে ভরা।
অর্থাৎ আমেরিকায় দাঁড়িয়ে সবকিছুর বিপক্ষে পক্ষে চিল্লাপাল্লা লিখালিখি সবই করতে পারো। কিন্তু ক্যাপিটালিজমের জন্য কোনোরুপ হুমকি বরদাস্ত করা হবে না।
সবারই দূর্বলতা থাকে। দুর্বল জায়গায় আঘাত লাগার সম্ভাবনা দেখা দিলেই সে নড়েচড়ে বসে। পুঁজিবাদী অনুভুতিতে আঘাত লাগা আমেরিকা কখনোই সহ্য করবে না।

তো এটাই সিস্টেম। হাহাহাহা।
সিস্টেম তার জন্য হুমকি হতে পারে, এমন কোনোকিছু সহ্য করবে না।
আর যে সিস্টেমের অংশ হয়ে যাবে, সিস্টেমের মধু যে একবার খাওয়া শুরু করবে,
সে নুন খেয়ে বরখেলাপ কেনো করবে?

আর ক্ষমতার সাধ যে একবার পায়, সে ক্ষমতা ছেড়ে নিজেকে কল্পনাও করতে পারে না।
মিয়ানমারের সুচি'কে নোবেল পর্যন্ত দেয়া হয়েছিলো শান্তিতে।
কত বছর গৃহবন্দি ছিল।
গনতন্ত্রের জন্য কত নাকি সংগ্রাম করেছে ।
অথচ এখন দ্যাখেন।
ক্ষমতার সাধ পেয়ে গেছে।
এখন কিসের গনতন্ত্র, কিসের মানব অধিকার, কিসের শান্তি, কিসের নোবেল।

Read More »

তাইওয়ান






দেখুন তো, এই পরিচিত ব্রান্ডগুলো চিনতে পারেন কিনা ??




Acer..... Apacer..... HTC.....
.....Asus...... BenQ.....Cyberlink....
Foxconn....Gigabyte...............Realtek...
.........Transcend......liteOn....China Steel...
....ADATA.....SilverStone......
Thermaltake (কম্পিউটারের পাওয়ার সাপ্লাই বানায়)
...Biostar......chinaTech...

এসব ব্রান্ডের সাথে পরিচিত হবার কথা। অধিকাংশ কম্পিউটারের পার্টস প্রস্তুত করে। ইলেকট্রনিক্স বিজনেসওয়ার্ল্ডের নামকরা নাম...

এগুলো কোন দেশের কোম্পানি জানেন??
জানা কথা।  Republic of China

শুধু, সেটাই না... Republic of China বংশোদ্ভূত মানুষদের হাতে গড়া আরো কিছু কোম্পানি জগৎবিখ্যাত।
NVIDIA
Trend Micro
Yahoo !
এবং Youtube এর কো ফাউন্ডাররা Republic of China বংশোদ্ভূত।

কাহিনী হইলো Republic of China এর সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই 
বাংলাদেশ Republic of China কে স্বীকৃতি দেয় নি।
এমনকি বাংলাদেশের সাথে Republic of China এর কোনো ডিপ্লোম্যাটিক সম্পর্ক নাই।

থাকবে কিভাবে ??
রিপাবলিক অফ চীন'কে দুনিয়ার বড়বড় কোনো দেশই স্বীকৃত দেয় না ।
মাত্র ২১ টা দেশ স্বীকৃতদেয়। যাদের ভেতর সবচেয়ে পাওয়ারফুল দেশ হল পানামা আর প্যারাগুয়ে 
আর বাকিসবগুলো দেশের নাম বললে চিনবেন না
একারণে কষ্ট করে লিখলাম না

আপনি বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে রিপাবলিক অফ চীনে যেতে পারবেন না।
যদিও তাদের দেশের পন্য ছাড়া আমাদের চলেও না। (ভিন্নদেশ ভায়া হয়ে যেতে পারবেন। সেটা ভিন্ন ব্যাপার)

দেশটি People Republic of China নয়।
Republic of China.
যাকে আমরা তাইওয়ান বলে জানি।



৩৬ হাজার বর্গ কিলোমিটারের দেশটিতে জনসংখ্যা ২ কোটি ৩৩ লাখ।
দুনিয়ার উন্নত দেশগুলোর একটি 
দুনিয়ার ২১ তম বৃহৎ অর্থনীতি।
মাথাপিছু আয় ৪৩ হাজার মার্কিন ডলার। (১৭তম )

তাইওয়ানের সাথে চীনের সম্পর্ক সাপে নেউলে...
চীন স্বপ্ন দ্যাখে, তাইওয়ান'কে দখল করে মুলভুমির কমিউনিস্ট পার্টির শাসনে আনার।
আর তাইওয়ানি স্বপ্ন দ্যাখে, চীনের ভাইব্রাদার'দের কমিউনিস্ট পার্টির হাত থেকে মুক্ত করে চীনকে স্বাধীন করার 

চীনের আছে দুনিয়ার সবচেয়ে 'সাইজে বড় আর্মি"
আর তাইওয়ানের আছে ওই রিজিওনের সবচেয়ে "সফিস্টিকেটেড" আর্মি।
সেইসাথে তাইওয়ানের সাথে আছে আমেরিকা।
প্রেসিডেন্ট বুশ অঙ্গীকার করেছিলো যদি চীন কখনো তাইওয়ান আক্রমন করে, তাহলে আমেরিকা যেকোনোকিছুর বিনিময়ে তাইওয়ানকে, অর্থাৎ Republic of china কে রক্ষা করবে

ব্যাপারটা সেই ডিকটেটর মুভির মত হয়ে গেলো...
হয় এই aladeen এর পক্ষে,
না হয় এই aladeen এর পক্ষে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চীনে শুরু হয় কমিউনিস্ট vs Nationalist গৃহযুদ্ধ।
তাতে সোভিয়েত ব্যাকড কমিউনিস্টরা জিতে যায়।
মাও সে তুং ক্ষমতায় আসে।
আর ন্যাশোন্যালিস্টরা জীবন বাঁচাতে চলে যায় সাগরে ১৮০ কিমি দুরের ফরমোসা দ্বীপে। অর্থাৎ তাইওয়ানে।
সেখানে তারা নিজেদের ন্যাশনালিস্ট সরকারের অবশিষ্ট অংশ টিকিয়ে রাখে।
এবং আজ পর্যন্ত মুলভুমি চীন দখলের স্বপ্ন দ্যাখে।
তাদের ভাষায়, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির হাত থেকে চীনের ভাইব্রাদারদের উদ্ধার করা তাদের লক্ষ্য।

ইন্টারেস্টিং বিষয় হল, ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে তাইওয়ানের অর্থাৎ Republic of China (Taiwan) এর সদস্যপদ ছিলো। বিশ্বশক্তিগুলো তখন তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দিতো।

কিন্তু PRC (China) ছিলো আমেরিকার জন্য এক নিষিদ্ধ দেশ। চীনের সাথে ১৯৭১ সালের আগ পর্যন্ত আমেরিকার কোনো ডিপলোম্যাটিক সম্পর্ক ছিলো না।
সম্পর্ক করে দিয়েছিলো কে ??
পাকিস্তান। কুটনামো ভন্ডামো আর শয়তানিতে যাদের পিএইচডি আছে 

দশ বছর ধরে পাকিস্তানের চেষ্টায় আমেরিকা আর চীনের ভেতর সম্পর্ক তৈরি হয়। ইনফ্যাক্ট হেনরি কিসিঞ্জারকে লুকিয়ে, গোপনে ইয়াহিয়া খান নিজেস্ব প্লেনের ভেতর করে চীনে নিয়ে গিয়েছিলো 
দুনিয়া জানতো, কিসিঞ্জার পাকিস্তানে গিয়ে অসুস্থ হয়ে গেছেন !

যাই হোক, সেসব অন্য ইতিহাস।
ভিন্ন কোনোদিন লিখবো।
তো চীনের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক হয়।
ফলাফল, ১৯৭১ সালের ২৫ অক্টোবর জাতিসংঘ থেকে ROC আউট, আর RPC ইন 
অর্থাৎ আলাদিন আউট, তার বদলে আলাদিন ইন 

তখন অন্যান্য বড়বড় দেশগুলোও পাইকারি হারে 'আলাদিন ইন, আরেক আলাদিন আউট" করা শুরু করে।

সেই ১৯৭১ সাল থেকে তাইওয়ান আর জাতিসংঘে নেই।
মজার ব্যাপার হল, আমেরিকা এখন চীনের সবচেয়ে বড় বিজনেস পার্টনার হয়ে গেছে।
চীনও আমেরিকার সাথে ব্যবসা করে অনেক ধনী হয়েছে। একটা ধনী উন্নয়নশীল দেশ চীন। 
তবে দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি গরিব মানুষও চীনে আছে। ফলাফল, তাদের শ্রমবাজারও সস্তা।
সাপে নেউলে সম্পর্ক হলেও, বিশাল গরিব মানুষের বেকারত্ব মেটাতে হয় উন্নয়নশীল দেশ চীনকে!
ফলাফল, যতই শত্রুতা থাকুক, তাইওয়ানের সাথে ব্যবসা ঠিকই করতেছে চীন। যেমন উপরে শুরুতে যতগুলো কোম্পানির নাম বললাম, সবগুলো কোম্পানির হেড অফিস তাইওয়ানে হলেও শাখা অফিস এবং শাখা ফ্যাক্টরি চীনে আছে।
লক্ষ লক্ষ চাইনিজের দারিদ্র বিমোচন হচ্ছে, কর্মসংস্থান হচ্ছে এতে।
ফলাফল, এগুলো আপনি বাংলাদেশে বসেও কিনতে পারতেছেন। তাইওয়ানের সাথে আপনার রিলেশন থাক আর না থাক। কারণ, এসব পন্য যাতে বিক্রি হয়, সেটার নিশ্চিত করার মাথাব্যাথা তাইওয়ানের চেয়েও চীনাদের বেশি।
একারণে প্যাকেটে সবসময় made in china লিখা দেখবেন। যদিও কোম্পানি তাইওয়ানের।
Lenovo আর ইদানীং আসা Xiaomi ছাড়া চীনের আর তেমন ভালো ব্রান্ড খুবএকটা দেখবেন না। (রিসেন্টলি হোয়াওয়ে এসেছে)

আপনি যখন Foxconn মাদারবোর্ড কম্পিউটারে লাগাচ্ছেন, তখন হয়ত Foxconn কোম্পানির চীনের ফ্যাক্টরিতে চাইনিজ কর্মীরা অত্যাধিক কাজের চাপে, ইনহিউমেন কন্ডিশনে কাজ করে করে একসময় ডিপ্রেশনে ভুগে আত্মহত্যা করতেছে।
এমন এক ঘটনা ঘটেছিলো। Foxconn এর কর্মীদের এই আত্মহত্যার ঘটনায় চীন সরকার তাইওয়ানের Foxconn কোম্পানিকে গালিগালা করেছিলো।
ব্যস... এটুকুই।
লোকদেখানো কিছু মামলা হয়েছিলো।
এসব পড়লে আমাদের রানা প্লাজার কথা মনে আসে। 
হায়'রে সস্তা শ্রম। শ্রমিকের শ্রম কিভাবে সস্তা হয় !! আর সেটা নিয়ে গর্ব করা পলিটিসিয়ানেরও অভাব নয় না।
আমার দেশের মানুষের শ্রমের মুল্য অনেক কম, এই কথা বলাটা গর্বের নয়, লজ্জার।

যাই হোক, তাইওয়ানের উপকুলের এলাকাগুলোতে এন্টি ট্যাংক ম্যাকানিজম দিয়ে ঘেরা। তাইওয়ান ভয়ে ভয়ে থাকে কখন কমিউনিস্টরা আক্রমন করে চীন থেকে। মাত্র ১৮০ কিমি দূরে বলে কথা। 
তবে ওই যে বললাম, তাইওয়ানের আর্মি অনেক শক্তিশালী। সফিস্টিকেটেড। আর মার্কিন আর্মির বিশাল ঘাটি আছে সেখানে। আমেরিকার সাথে রক্ষাচুক্তিও করা আছে।
সুতরাং... বুঝতেই তো পারেন

তাইওয়ানের নিজেস্ব ভাষা আছে। আদিবাসীদের ভাষা। কিন্তু তাইওয়ান সরকার স্কুল কলেজে এখনো চীনা ভাষা শিক্ষাতে প্রাধান্য দেয়। কারণ তারা নিশ্চিত, একদিন না একদিন মুল চীনের ভুমি আবার তারা ফিরে পাবে। এক পতাকার নিচে আবার থাকবে এক চীনের মানুষ  গনতান্ত্রিক, পুজিবাদী republic of China

আমাদের দেশেও যেসব দলের সাথে চীনের সম্পর্ক একটু বেশি ভালো, তারা দেখবেন চীনকে খুশি করার জন্য সবসময় বলে, তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
হা, কথাখানা কেবলই বলার জন্য বলা। বাস্তবে তাইওয়ানের চুল ছেড়ার ক্ষমতা চীনের আছে কিনা, সন্দেহ আছে। থাকলে অনেক আগেই চুল ছিড়তো।

তাইওয়ানের উপকুল থেকে আগে বিশাল বড় লাউড স্কিপার দিয়ে, আবার মাঝেমাঝে গোয়েন্দা বাহিনীর লিফলেট ছড়িয়ে চীনের মানুষকে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সাধীনতা সংগ্রাম করতে আহবান জানানো হয়  তাদের ভাষায়, evil কমিউনিস্ট হটাও, চীন বাঁচাও।
আর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কাছে তাইওয়ান হল আমেরিকার দালাল।

চীনের আসলে ভয় কম নেই।
সামনে তালাকেই চীন তাইওয়ান, জাপান, ফিলিপাইন, দক্ষিন কোরিয়ার চেহারা দ্যাখে। সবই চীনের নাকের ডগায়। এসব দেশ ইকোনমিক্যালি অনেক পাওয়ারফুল। এবং সবগুলো দেশের সাথে আমেরিকার মিউচুয়্যাল প্রোটেকশন ট্রিটি সাইন করা। এবং সবগুলো দেশে আমেরিকার বিশাল বিশাল সামরিক ঘাটি আছে।
এই রিজিওনে চীনের বন্ধু বলতে উপরের রুশরা আর উত্তর কোরিয়া। এই যা।

তাইওয়ানে 95% মানুষ চাইনিজ। ২% আদিবাসী।
দ্বীপটি আবিস্কার করেছিলো ডাচ আর স্প্যানিশরা। এরপরই মুলত মুলভুমি থেকে চাইনিজরা গিয়ে বসবাস শুরু করে।
একসময় জাপান দ্বীপটিকে দখলও করেছিলো। যাই হোক, সেসব পুরন কথা।

তাইওয়ানের আর্মির নাম Republic of China Armed Forces
প্রায় ছয় লক্ষ মানুষ মিলিটারির জন্য available...
মিলিটারি বাজেট ১০ বিলিয়ন ডলার। আমেরিকা, ফ্রান্স, ইসরাইল, জার্মানি সহ উন্নত সবদেশই এর মিলিটারি সাপ্লাইয়ার।

কত প্যাচপুচ

Read More »