Friday, December 11, 2015

প্রাইভেসি প্রবলেম




এটা চিন্তা করে খারাপ লাগতেছে,
আপনার "প্রাইভেসির" মুল্য কতটুকু এবং কেনো সেটা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সেটা এখন ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝানোর দরকার হচ্ছে।

এই যে এডোয়ার্ড স্নোডেন, ব্রাডলি ম্যানিং, বা জুলিয়ান এসাঞ্জ' এর মত মানুষেরা লাইফ রিক্স নিয়ে সরকারের ঢালাও সার্ভিলেন্স ও আড়িপাতার খবর ফাঁস করলো, কিসের জন্য ? কি কারণে ? লাভ'টা কি হবে মানুষকে এসব জানিয়ে ?

লাভের কথা পরে আসতেছে। আগে কিছু সিচুয়েশন কল্পনা করুণ।
যেমন, ধরুন বাংলাদেশ আর ভারতের ভেতর নদীর পানি বন্টন রিলেটেড আলোচনা চলতেছে। ডিপ্লোম্যাসির টেবিলে দুইদেশের ডিপ্লোম্যাট'রাই মেধা, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে চেষ্টা করবে ডিল'টাকে নিজেদের ফেভারে আনার। যতটা সম্ভব হয়।
অথবা অন্তত লোকসান যাতে না হয়। উইন উইন সিচুয়েশন যাতে অর্জন করা যায়।
 কেমন হবে যদি বাংলাদেশের ডিপ্লোম্যাট'দের সকল প্ল্যান প্রোগ্রাম আগে থেকেই ইন্ডিয়ানরা জেনে যায় আড়িপেতে !!
একবার ভেবে দেখুন। ইন্ডিয়ার জায়গায় পাকিস্তান বসিয়েও পরিস্থিতটাকে কল্পনা করতে পারেন !

আপনার প্রতিপক্ষ যদি আপনার ছলাকলা সবই আগে থেকে জেনে যায়, তাহলে তো ডিপ্লোম্যাসির টেবিলে আপনি হারবেন। নিশ্চিত হারবেন।

রাজনীতির ক্ষেত্রেও ইহা সত্য। 
ক্ষমতাসীন দল যদি সরকারের প্রশাসন ও লজিস্টিক ব্যবহার করে বিরোধি প্রতিপক্ষের সকলকিছুর ব্যাপারে আগেভাগেই ওয়াকিবহাল হয়ে যায়, আড়িপেতে বিরোধি দলের সকল ছলাকলা আগে থেকেই জেনে বসে থাকে, তাহলে তো বিরোধি দলের রাজণীতি ওখানেই শেষ !! 
রিচার্ড নিক্সন কিন্তু প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ধরা খেয়েছিলো ওয়াটারগেটে ডেমোক্রেটদের অফিসে আড়িপেতে। 
সরকারি দল সরকারে থাকা অবস্থায় কখনো কল্পনাও করতে পারে না, একদিন তাকেও বিরোধি দলে যেতে হতে পারে। আর তেমনটি হলে তারই তৈরি ফ্রাঙ্কেস্টাইন তাকেই শেষ করবে। 
ইতিহাসে এমন নজির ভুড়িভুড়ি আছে। 


৯-১১ এর পর প্রেসিডেন্ট বুশ পেট্রিয়োটিক এক্ট করেছিলো। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট বানিয়েছিলো। অর্থাৎ যাকে ইচ্ছা শ্রেফ সন্দেহের বসে আটক করা যাবে। যতদিন ইচ্ছা আটকে রাখাও যাবে।
মানুষ তখন প্রতিবাদ করেনি। কারণ মানুষের মনে ছিলো ভয়। আল কায়দার ভয়। 
মানুষ আতঙ্কে থাকলে সরকার সুযোগ নেয়। নিরাপত্তার জুজু দেখিয়ে এসব কালো আইন করে। মানুষ তখন প্রতিবাদ করে না। অথচ পরবর্তী'তে এই আইনগুলোর খপ্পড়ে পড়তে হয় সাধারণ জনতাকে।

ক্যাটরিনা কাইফ আর জন আব্রাহামের একটা মুভি আছে।
New York (2009)
দেখতে পারেন। হয়ত দেখেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিওটিক এক্ট এর পাল্লায় পড়ে  একজন নিরীহ মানুষের বিপদে পড়ার কাহিনী নিয়ে বানানো। অসাধারণ একটা মুভি।
এই মুভির কাহিনী বাস্তবে কিন্তু প্রচুর হয়েছে। অনেক নিরীহ মানুষকে অত্যাচার করা হয়েছে। টর্চার করা হয়েছে। ব্যাংকক, পোলান্ড, বা তুরস্কের CIA black site প্রিজনে নিয়ে অত্যাচার করা হয়েছে বিনা কারণে।

সেই নাইন ইলেভেনের পর আরো যেটা করা হয়েছিলো, সেটা হল NSA এর mass surveillance
অর্থাৎ সন্দেহভাজন, বা পটেনশিয়াল টেরোরিস্ট, বা শত্রু দেশগুলোর গুরুত্বপুর্ন ব্যক্তিরাই কেবল নয়, mass surveillance এর কারণে দুনিয়ার সকল মানুষের কমিউনিকেশনের উপর নজরদারী শুরু করে দিলো NSA...
যেটা নিয়ে পরবর্তিতে এডোয়ার্ড স্নোডেন সিক্রেট ফাঁস করলো।

আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, গোপনে আপনি কারসাথে কি বিষয়ে, কি নিয়ে কথা বলতেছেন, সেটা যদি আমি জানি, তাহলে আমি আপনাকে শ্রেফ ব্ল্যাকমেইল করতে পারবো।

সরকার যদি দেশের মানুষের প্রাইভেট খবরও এক্সেস করতে পারে,
 তাহলে সরকারের প্রতিপক্ষ বলে কিছুই থাকবে না।
 এবং কোনো আমজনতাই সরকারের কোনো কাজের সমালোচনা করতে পারবে না। কারণ যে আপনার ভেতরের, সবচেয়ে গোপন খবরটি জানে, আপনি নিশ্চয় তার বিরুদ্ধে যাবেন না। 
তাই না ?
আর বিরোধিদলের কথা তো বাদই দিলাম। 
অর্থাৎ সরকারি বাহিনী লাগিয়ে সরকারে ক্ষমতাসীন কোনো রাজনৈতিক দল বিরোধি দলের উপর ঢালাও নজরদারী করতে পারে না। তাহলে তো বিরোধি দলের রাজনীতিই শেষ হয়ে যাবে !! তাই না ?
এভাব চললে সরকারের বিরুদ্ধে যাবার সাহস কারো থাকবে না তখন।
অর্থাৎ সরকার তখন আর জনগনের থাকবে না। বরং জনগন সরকারের দাস হয়ে যাবে।
জাস্ট এই কারনে জুলিয়ান এসাঞ্জ বা এডোয়ার্ড স্নোডেনরা মার্কিন সরকারের mass surveillance এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।
তাদের কথা, কারো উপর নজরদারী করার আগে অবশ্যই রুলস এন্ড রেগুলেশন ফলো করতে হবে। এরপর surveillance, তার আগে নয়।

ব্যাপারটা সহজ করে বোঝানোর জন্য একটা উদাহারণ দেয়া যাক।
ধরুন, পুলিশের কথা।
আপনার বাড়ি তল্লাসী করতে চাইলে আগে পুলিশকে একটা ওয়ারেন্ট ইস্যু করে আনতে হবে। অন্যথায় যখন ইচ্ছা তখন এসে আপনার বাড়ি সার্চ করার কোনো অধিকার পুলিশের নেই।
কিন্তু কেমন হবে যদি সেই ক্ষমতা পুলিশকে দিয়ে দেয়া হয়?
অর্থাৎ পুলিশ চাইলে যখন তখন যেমন ইচ্ছা, যার বাড়িতে ইচ্ছা, যতবার ইচ্ছা, ইচ্ছামত ঢুকে যতক্ষন ইচ্ছা তল্লাসী চালাতে পারবে। শ্রেফ সন্দেহ হয়েছে, এজন্য। 

 আপনার বাড়ির আলমিরা, ওয়ার্ড্রোব, আপনার যাবতীয় সকল কাগজপত্র, কম্পিউটারের হার্ডডাইভ, ব্রাউজার হিস্টোরি,  ফেসবুকের চ্যাটিং, ব্রাউজার হিস্টোরি,  মুভি, গান, যাবতীয় যতকিছু আছে সবকিছু পুলিশ দেখার ক্ষমতা পেয়ে যায়, তো ?

তাহলে কি হবে ?
এরপর পুলিশ আপনার নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরালেও অবাক হবার কিছু নেই।
পুলিশ আপনার সকল প্রাইভেসি জানে। আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারবে।
আরো খারাপ পরিস্থিতি ভাবতে চাচ্ছেন ?
ধরুন, আপনার  স্ত্রীকে কলেজ লাইফে পছন্দ করতো, এমন এক বখাটে এখন পুলিশে চাকরি করে। এবার চিন্তা করেন .!!

শুনুন'রে ভাই... একটু চিন্তা করুণ। একটু ভাবুন।
আপনি আপনার জীবনের উপর অন্যকারো নিয়ন্ত্রন যতবেশি allow করবেন, আপনি ততই নিজেকে বন্দী করে ফেলবেন তার কাছে।

আজ ৩০ নভেম্বর, ২০১৫
দুইদিন আগে, অর্থাৎ ২৮ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের NSA তাদের দির্ঘদিন ধরে চলা Bulk-Collecting of Americans' Phone Records বন্ধ করে দিয়েছে। thanks to Edward Snowden
স্নোডেন বিশ্ববাসীকে জানিয়েছিলো এসব কথা। 
এরপর যে প্রতিবাদ তৈরি হয়েছিলো, এটা তারই ফলাফল।
এসব প্রোগ্রাম ছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর সংবিধান বিরোধি। দুনিয়ার কোনো দেশের সংবিধানেই এভাবে mass surveillance অনুমতি দেয় না। বর্বর দেশ ব্যতিত। যে দেশের সরকার সেই দেশের মানুষদের নাগরিক মনে না করে দাস মনে করে, তাদের কথা ভিন্ন।
NSA এর সার্ভিলেন্স থেকে বাঁচতে দুনিয়াজুরে অনলাইন সিকিউরিটি সিস্টেমকে অনেক শক্তিশালী করা হয়েছে বিগতবছরগুলোতে।
IOS বা android এর ওপারেটিং সিস্টেম বলেন, বা I-cloud এর সিকিউরিটি অনেক বাড়ানো হয়েছে।
মানুষ প্রাইভেসি চায়।

তাহলে প্রশ্ন, এসব মিডিয়া বা মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরাও সংগঠিত হচ্ছে। তাহলে তাদের প্রতিরোধ কিভাবে সম্ভব ?
আবারও বলতেছি, NSA, GCHQ বা GRU এর মত প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হয়েছেই সার্ভিলেন্স করার জন্য। কিন্তু mass surveillance নয়। অর্থাৎ উপরের সেই পুলিশের বাড়িঘর তল্লাসীর উদাহারণটির কথা মনে করুণ আবার।
পুলিশ নিশ্চয় হঠাৎ করে আপনার বাড়ি তল্লাসী করতে আসে না। যাকে পুলিশের সন্দেহ হয়, তার বাড়ি তল্লাসী করে।
সন্দেহ কেনো হয় ? সেটার জন্য পুলিশকে ইন্টেলিজেন্স ওয়ার্ক করতে হয়। অথবা তথ্য সংগ্রহ করতে হয় নিয়মকানুনের ভেতর দিয়েই। এসবের জন্য নিয়মনীতি আছে।
কে সন্তাসী, কে পটেনসিয়াল টেরোরিস্ট, এটা ফাইন্ড আউট করার জন্য ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি আছে।

আইসিস মোবাইল ইউজ করে, এটার জন্য কি মোবাইল অফ করে দিতে হবে?
নাহ... বরং আইসিস সদস্যদের মোবাইল ট্রাক করা হয়। তাদের ফোনে আড়িপাতা হচ্ছে।
আইসিস ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ফেসবুক ব্যবহার করে। ইন্টারনেটে রিক্রুটমেন্ট করে। এরজন্য কি ফেসবুক অফ করে দেয়া হচ্ছে ? নাহ। বরং ফেসবুক কাজে লাগিয়েই তাদের ট্রেস করা হচ্ছে। তাদের সম্পর্কে ধারণা পাচ্ছে গোয়েন্দা বাহিনীগুলো।
আইসিস সদস্যরা প্লে স্টেশনের চ্যাট ইউজ করে নিজেদের ভেতর কমিউনিকেশন করে। এরজন্য কি প্লে স্টেশন বাতিল করা হচ্ছে? নাহ... বরং প্লে স্টেশনে আইসিসের কমিউনিকেশন ট্রাক করে নষ্ট করা হচ্ছে।

মুখের কোথাও ক্ষত হলে সেই ক্ষত জায়গাতেই মলম দিতে হয়। গোটা মাথা ও মুখে মলম মাখার তো দরকার নেই ... তাই না?
আপনার ফোঁড়া হয়েছে পাছায়, আপনি গোটা শরীরে মলম মেখে বসে থাকলেন। এটা কি ঠিক ?
আপনি ফাইন্ড আউট করেন কালপ্রিট কারা। এবার তাদের মলম দেন রুলস এন্ড রেগুলেশনের ভেতরে থেকেই।
মাথা ব্যাথা হলে গোটা মাথা কাটবেন কেনো ?

No comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.