Friday, December 11, 2015

বাঘের খাঁচা, শিয়ালের হাসি


বহুকাল আগের কথা। আফ্রিকার এক জঙ্গলে থাকতো এক সিংহ।

সেই জঙ্গলে হাতি, ঘোড়া, বাঘ, ভাল্লুক, কিছুই ছিলো না।
ওগুলো সিংহ মেরে ফেলেছে।
তবে ছিলো অনেক হরিণ ... মায়াভরা চোখ তাদের।
আরো ছিলো খড়গোশ, গাধা আর পাল'কে পাল ছাগল।

বনের রাজা সিংহ।
এখানে তারই একার রাজত্ব।
একদা জঙ্গলে বহিঃশ্ত্রুর আক্রমন হল।
এক পাল হায়না রোজ জঙ্গলে ঢুকে পাল'কে পাল হরিণ শিকার করে ।
এই খবর সিংহের কানে পৌছালো। সিংহ'কে হরিণের পাল অভিযোগ জানালো।
'মহারাজ... আমাদের জন্য কিছু করেন। এভাবে হায়নার আক্রমন চলতে থাকলে আমরা তো শেষ হয়ে যাবো" ...

"হুম। তা তো বটেই। কিন্তু আমি একাএকা এতো বড় জঙ্গল কিভাবে সামাল দেবো? আমার একার পক্ষে তোমাদের এতোজনকে নিরাপত্তা দেয়া তো সম্ভব নয়।
আমি উত্তরে গেলে হায়নার পাল দক্ষিণ থেকে আক্রমন করবে। আবার আমি দক্ষিণে গেলে উত্তর থেকে"

"তাহলে আমাদের কি হবে মহারাজ ?

আমরা তো তাহলে সবাই হায়নার পেটেই যাবো"

'আচ্ছা, দাঁড়াও। দেখি কি করা যায়। মহা চিন্তার বিষয়"

সিংহ এবার শিয়াল পন্ডিত'কে খবর দিলো।
শিয়াল বুদ্ধি দিলো।
এরপর সিংহ জঙ্গলের সকল গরু, ছাগল, হরিণ, গাধা আর ভেড়াগুলোকে ডাকলো। ডাকলো সুন্দর সুন্দর খড়গোশগুলোকেও।
"শোনো তোমরা। তোমাদের সবার নিরাপত্তা এতোবড় জঙ্গলে তো দেয়া সম্ভব নয়। তবে আমি একটা উপায় বের করেছি। আমি একটা বড় খাঁচা বানাবো। সেই খাঁচার ভেতর তোমরা সবাই থাকবে। বাইরে থেকে কোনো হায়নার পাল এসে তোমাদের আক্রমন করতে পারবে না"

উপস্থিত নিরীহ প্রাণীগুলো অবাক হয়ে গেলো !


"মহারাজ... শেষমেষ খাঁচায় থাকতে হবে? স্বাধীনভাবে বাপ দাদার জঙ্গলে ঘুরতেও পারবো না ? "

"আহা... পারবে ... পারবে। কেনো পারবে না। তোমাদের খাঁচায় ভরে শিয়াল নিধনে বের হবো আমি। এরপর শিয়াল নিধন হয়ে গেলে তোমাদের খাঁচা খুলে দেবো' ...

উপস্থিত নিরীহ প্রাণীগুলো ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না কি বলবে। কিন্তু হায়নার হাত থেকে তো বাঁচতে হবে। নাকি?
অতঃপর সবাই ঢুকে পড়লো সিংহের বানানো খাঁচাতে।
সিংহ কথা রাখলো।
সত্যি সত্যিই সে এবার হায়নার দল'কে বধ করলো।
এরপর খাঁচা খুলে দিতে হবে। কিন্তু খাঁচা খুলে দিতে যাবার সময় শিয়াল পন্ডিত সিংহের কানেকানে বললো, "মহারাজ, আজ্ঞে, অনুমতি দিলে একটা কথা বলতে চাচ্ছি"

"বলো, শিয়াল। বলো"

"ইয়ে মানে, মহারাজ। আপনার বয়স হয়েছে। রোজ রোজ শিকার করা আপনার জন্য কষ্টকর;আপনাকে তো শিকার করতেই হয়। সুতরাং খাঁচায় যখন আছে ওরা, কি দরকার ছেড়ে দেবার ? আপনি রোজ একটা একটা করে খাবেন। এতে ওদের তো সমস্যা হবার কথা না। আপনি তো রোজ একটা করে শিকার করেনই"

সিংহ শিয়ালের কথায় যুক্তি খুঁজে পেলো। খাঁচার প্রাণীগুলোর আর বাইরে আসা হলো না। ওদিকে সিংহ আর শিকার করে না। করতে হয় না। সে অলস হয়ে পড়লো। পরিশ্রম না করে বসেবসে খেয়ে শরীর আরো দ্রুত খারাপ হল। সিংহ মারা গেলে খাঁচাটা তো শিয়ালের হবে। শিয়াল বড্ড খুশি।

No comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.