Thursday, March 14, 2024

ডলারের রাজত্ব, যেভাবে শুরু হল

 


কল্পনা করুণ, প্রাচীন কালে একজন কৃষকের কথা। কৃষক ধান চাষ করে। নিজের জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু ধান রেখে বাকি অংশ দিয়ে দিলো একজন জেলের কাছে।

কতটুকু ধানের বিনিময়ে জেলে কতগুলো মাছ বিক্রি করবে, সে বিষয়ে যাবো না।
একেবারে সহজ ভাবে চিন্তা করূণ।
বিনিময় প্রথাতে, একটি পণ্যের বিনিময়ে আরেকটি পণ্য পাচ্ছেন।
সমস্যা হল,
এই পণ্যগুলো পচনশীল।
ধরূণ একজন মাছ বিক্রেতা ৬টি কাতল মাছ দিয়ে ১০টি মুরগী চাচ্ছে।
কিন্তু এলাকায় যে মুরগী পালে,
তার কাছে বিনিময় যোগ্য মুরগী আছে ৫টি।
আরেকটি সমস্যা হল, মুরগী খামারি কাতল মাছ খেতে পছন্দ করে না।
আবার চিন্তা করুণ, ধার বা ক্রেডিট নেওয়ার প্রয়োজন হল।
ধান বিক্রেতা মুরগীর খামারির কাছে ৫টি মুরগী চাচ্ছে।
কিন্তু এমুহুর্তে বিনিময় করার মত ধান তার মজুদ নেই। মাঠে এখনো ধান পাকেনি।
৫টি মুরগী ধার করে নিয়ে ভবিষ্যতে ৫ কেজি ধান দেওয়ার চুক্তি তাকে করতে হবে।
এরকম প্রতিমূহুর্তে ক্রেডিট তথা ধার নিতে গেলে তো সমস্যা।
এভাবেই প্রয়োজনের তাগিদেই এসেছিল মুদ্রার কনসেপ্ট।
ধরূন, ১ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের টুকরা। এই ১ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের টুকরাকে গ্রামবাসী সবাই মিলে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিলো। সবাই মিলে আস্থা রাখলো। স্বর্ণ চাইলেই পাওয়া যায় না মাটি বা পানির মত। এর সাপ্লাই নিয়ন্ত্রিত। সে সাথে স্বর্ণ অপচনশীল। ফেলে রাখলে নষ্ট হয় না।
ধরূণ, কৃষক ১০ মন ধান বিক্রি করে বিনিময়ে ১ কেজি স্বর্ণ মুদ্রা নিলো। অর্থাৎ ১০০০টি ১ গ্রাম ওজনের স্বর্ণ মুদ্রা। এরপর ২০০ স্বর্ণ মুদ্রা দিয়ে সে মুরগী কিনলো।
২০০ স্বর্ণ মুদ্রা দিয়ে মাছ কিনলো।
বাকি ৬০০ স্বর্ণ মুদ্রা থেকে ৫০০ স্বর্ণ মুদ্রা অন্যকে ধার দিয়ে সুদের ব্যবসা শুরু করলো।
বাকি ১০০ স্বর্ণ মুদ্রা দিয়ে কিছু মানুষ ভাড়া করে নিজের জমিতে বর্গা খাটানো শুরু করলো। আর নিজে পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে চিল করতে লাগলো।
বাস্তবে Lydia তে প্রথম ২৬০০ বছর আগে প্রথম স্বর্ণ মুদ্রার প্রচলন হয়। স্বর্ণ মুদ্রার সমস্যা হল,
বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ মুদ্রা বহন করা ঝামেলা। সে সাথে স্বর্ণ মুদ্রায় ভেজাল মেশানোর চান্স থাকে।
উপরের উদাহারণের কথা চিন্তা করুণ।
প্রতিটি স্বর্ণ মুদ্রাতে ১ গ্রাম ওজনের স্বর্ণ আছে, এটা নিশ্চিত করতে তো সমগ্র বিষয়টা Centralized এবং নিয়ন্ত্রিত করা লাগবে। অর্থাৎ দরকার সরকার বা Bank বা অন্যকোনো Centralized institution যে এসব নিয়ন্ত্রন করতে পারবে। অন্যথায় সারাদিন দাড়িপাল্লা নিয়ে ঘুরতে হবে।
সোজা বাংলায়, সরকার তথা Government, Leadership, bank, institutions এসব ছাড়া মুদ্রা কনসেপ্টের বাস্তবায়ন তখন সম্ভব ছিল না সম্ভবত। এযুগে অবশ্য Blockchain / bitcoin এসব আছে যা দিয়ে সরকার/ Govt ইগনোর করা সম্ভব।
যাই হোক, সময়ের পরিক্রমায় এসেছিল পেপার নোট।
চাইনিজরা প্রথম পেপার নোট চালু করে।
বিষয়টা সহজ করে বলি।
ধরূন উপরের উদাহারণের কথা। ওই কৃষক আব্দুল রহিম আস্তে আস্তে জমিদার হয়ে গেল।
এখন সে টনকে টন ধান বিক্রি করে।
এতো পরিমাণ ধানের বিনিময়ে হাজার হাজার কেজি স্বর্ণ তাকে নিতে হয় যা একদিকে বাড়িতে রাখা বিপদ। কারণ বিশাল ভল্ট দরকার হয়। সেসব ভল্ট পাহারা দিতে দরকার হয় বিপুল পরিমাণ জনবলের।
চুরি ডাকাতির ভয় থাকে।
সে সাথে প্রতিবার লেনদেন করার সময় গরূর গাড়ি বোঝায় করে স্বর্ণ নিতে হয়। একবার তো রাস্তায় ডাকাতিও হয়েছিল।
তো তখন এলো ব্যাংক নোট।
ব্যাংক স্বর্ণ নিজের ভল্টে রেখে সমপরিমাণ কাগুজে নোট ছেড়ে দিলো। ধরূন একটি নোটের উপর লিখা ১০। অর্থাৎ ওই ১০ লিখা নোট ব্যাংকে দিলে ব্যাংক ১ গ্রাম স্বর্ণ দিবে, এমনই সিস্টেম চালু হল। এই সিস্টেমটাও প্রথম চালু করেছিল চীন। শুরু হল Gold Backed Currency অধ্যায়। এই সিস্টেম পরবর্তীতে ইউরোপ কপি পেস্ট করেছিল।
যেমন ১৪৬৪ সালে ইংল্যান্ডের ১ পাউন্ড স্টারলিং ছিল ১৫.৪৭ গ্রাম Fine Gold-এর সমান। অর্থাৎ আপনার পকেটে যদি তখন ৬৪ পাউন্ড থাকে, তার মানে হল আপনি পকেটে করে ১ কেজি স্বর্ণের সমান অর্থ নিয়ে ঘুরতেছেন।
আবার ১৮১৬ থেকে ১৯১৪ সাল, এই সময়কালে ইংল্যান্ডের ১ পাউন্ড স্টারলিং ছিল ৭.৩ গ্রাম Fine Gold-এর সমান।
অর্থাৎ আপনার পকেটে যদি তখন ১৩৭ পাউন্ড থাকে, তার মানে হল আপনি পকেটে করে ১ কেজি স্বর্ণের সমান অর্থ নিয়ে ঘুরতেছেন।
দীর্ঘ সময়কালে Currency অবমূল্যায়ন হয়েছে। তবে মুদ্রা কিন্তু Represent করতো স্বর্ণকে। কম হোক বা বেশি।
একটা উদাহারণ দিয়ে বলি।
ধরূন ১৯০০ সালের কথা।
ইংল্যান্ডের Currency তখন পাউন্ড স্টারলিং এবং ১ পাউন্ড তখন ৭.৩২ gm স্বর্ণের সমান।
তো ইংল্যান্ডের টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতে কয়লা প্রয়োজন। কয়লা ক্রয় করা হবে জার্মানি থেকে।
জার্মানির মুদ্রা তখন Goldmark
এখন ইংল্যান্ডের টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতে ১০০ টন কয়লা লাগবে, এবং জার্মানির একটি কয়লা কোম্পানির সাথে প্রতি টন ১০ পাউন্ড হারে ইংল্যান্ডের ফ্যাক্টরিটি কয়লা ক্রয়ের চুক্তি করলো।
১০০ টন কয়লার জন্য ইংল্যান্ড ১০০ x ১০ = ১০০০ ব্রিটিশ পাউন্ড দেবে জার্মানিকে।
ইংল্যান্ডের ওই টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিটি কিন্তু কয়লার বিনিময়ে ফিজিক্যালি স্বর্ণ জার্মানিতে পাঠাচ্ছে না।
পাঠালে সেক্ষেত্রে ১০০০ x ৭.৩২ গ্রাম অর্থাৎ ৭.৩২ কেজি স্বর্ণ পাঠাতে হতো।
তা না করে ফ্যাক্টরিটি দেবে Bill of Exchange যা মুলত একটি ১০০০ ব্রিটিশ পাউন্ডের চেক। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, এই চেকটি নির্দিষ্ট ব্রিটিশ ব্যাংকে জমা দিয়ে যদি সমভ্যালুর স্বর্ণ দাবি করা হয়, তাহলে ওই পরিমাণ স্বর্ণ ব্যাংকটি দিতে বাধ্য।
ইংল্যান্ডের কাছ থেকে পাওয়া Bill of Exchange-টি নিয়ে জার্মান কয়লা কোম্পানি কি করবে?
তার স্বর্ণের দরকার আছে? নাহ। নাই।
তার দরকার জার্মান মুদ্রা গোল্ডমার্কের।
যে মুদ্রা দিয়ে তারা কর্মচারিদের বেতন ভাতা দেবে।
তো কয়লা কোম্পানি ওই Bill of Exchange-টি জার্মান ব্যাংকে জমা দিলে ৭.৩২ কেজি স্বর্ণের Equivalent জার্মান মুদ্রা, অর্থাৎ Goldmark কোম্পানিটি পেয়ে যাবে।
কারণ জার্মানির মুদ্রা Goldmark-ও ব্রিটিশ পাউন্ডের মতই Gold backed.
যদি ১ গোল্ড মার্ক সমান ১ গ্রাম স্বর্ণ হয়, তাহলে উপরোক্ত Bill of Exchange-টি জমা দিয়ে জার্মান কয়লা কোম্পানিটি ৭৩২০ গোল্ড মার্ক পাবে।
সে হিসেবে, ১০০০ ব্রিটিশ পাউন্ড = ৭৩২০ গোল্ডমার্কের সমান।
অর্থাৎ এটাই ওই সময়ে জার্মানি ও ইংল্যান্ডের ভেতর মুদ্রা বিনিময় হার।
১৯৩০ সালের আগে একজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ব্যাংকে গিয়ে ডলারের বিনিময়ে স্বর্ণ এক্সচেঞ্জ করতে পারতেন। কিন্তু এই জিনিসটা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট এসে বন্ধ করে দেন। তবে বড় বড় ব্যাংক এবং অন্যকোনো দেশ ইচ্ছা করলে ডলারের বিনিময়ে গোল্ড এক্সচেঞ্জ করতে পারতো।
কতগুলো বিষয় এবার মাথায় আনুন গোল্ড ব্যাকড কারেন্সি সিস্টেমের জন্য।
ধরূন, ইরান তার দেশে তৈরি পোশাক রফতানি করেছে ইংল্যান্ডে।
তো বিনিময়ে পেমেন্ট পেয়েছে ব্রিটিশ পাউন্ডে।
এই ব্রিটিশ পাউন্ড দিয়ে তারা ইংল্যান্ডের কিছু জিনিস পাতি কিনতে পারে। অথবা জমা করে রাখতে পারে রিজার্ভ হিসেবে।
কথার কথা, ফ্রান্সের কাছ থেকে ইরান কিছু জিনিসপাতি কিনবে। জিনিসপাতির বিনিময়ে ফ্রান্সকে ইরান তার নিজের কারেন্সিতে পেমেন্ট করতে চাইলো। কিন্তু ফ্রান্স বললো, তোমার কারেন্সির প্রতি আমার আস্থা নাই। তোমার দেশেরই ভরসা নাই। কারেন্সি তো দূর কি বাত। তুমি আমাকে বরং মার্কিন ডলার বা ব্রিটিশ পাউন্ডের মত কারেন্সিতে পেমেন্ট করো। অথবা ডাইরেক্ট স্বর্ণ দিতে পারো।
তো ইরান তাদের কাছে সেই মজুদ ব্রিটিশ পাউন্ড দিয়ে এই দফায় পেমেন্ট করে দিলো।
ফ্রান্সও পেমেন্টটি নিলো কারণ ব্রিটিশ পাউন্ডের প্রতি তাদের আস্থা আছে। তারা জানে, ইচ্ছা করলেই ইংল্যান্ডের ব্যাংকে গিয়ে ব্রিটিশ পাউন্ডের বিনিময়ে তারা গোল্ড পেয়ে যাবে। ভুগিযুগি হবে না।
আচ্ছা, কেমন হবে যদি ইংল্যান্ডের কাছে মজুদ স্বর্ণ খুবই কম থাকে। অর্থাৎ চাহিবা মাত্র ব্রিটিশ পাউন্ড স্বর্ণে কনভার্ট করে দিতে তারা ব্যর্থ হয়? তখন? তখন তো ঝামেলা হয়ে যাবে।
সূতরাং ইংল্যান্ড যখন কোনো দেশকে Bill of Exchange-এর মাধ্যমে ব্রিটিশ পাউন্ডে পেমেন্ট করবে, তখন এই বিষয়টা তাকে মাথায় রাখতে হবে। সে চাইলেই ইচ্ছামত Currency ছাপাতে পারবে না। নিশ্চয় বুঝতেই পারতেছেন, এহেন সিস্টেমে ইউনিভার্সেল কারেন্সি হয়ে যাবে সেই দেশের মুদ্রা, যে দেশের কাছে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ স্বর্ণ মজুদ আছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে পৃথিবীর অবস্থা চিন্তা করূন।
সবগুলো ইউরোপিয়ান দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত।
ইংল্যান্ডের মত দেশ আমেরিকার কাছ অর্থ ধার করতেছে যুদ্ধের জন্য। ইউরোপিয়ান দেশগুলো নিজেরা নিজেরা যুদ্ধ করে শেষ হয়ে যাচ্ছে, আমেরিকার মেইনল্যান্ডে তখন সে যুদ্ধের আচও পড়তেছেনা।
এর আগে পৃথম বিশ্বযুদ্ধেও এমনই হয়েছিল।
গোটা ইউরোপ যখন যুদ্ধ করতেছিলো, আমেরিকা তখন ব্যবসা করেছে আরামছে। হেনরি ফোর্ড ব্যবসা করেছে সমানে। আমেরিকার ব্যবসায়ী পিয়েরে ডু পন্ট তখন ইউরোপে গান পাউডারের ব্যবসা করে বস্তা বস্তা অর্থ কামিয়েছে।
এই ডু পন্ট পরে General Motors কিনে নিয়েছিলো।
এরপর তো আমেরিকার বিখ্যাত Empire State Building বানিয়েছিলো গাড়ি ব্যবসায়ী ওয়ালটার ক্রাইসলারের সাথে টেক্কা দিয়ে। Empire State Building-থেকে পাঁচ মিনিট দূরুত্বে Crysler Building
তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ইউরোপ বিধ্বস্ত। অন্যদিকে আমেরিকা দুনিয়ার সেরা অর্থনীতি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে উডস চুক্তির মাধ্যমে IMF এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের জন্ম হয়। আর ডলার হয়ে যায় ইউনিভার্সেল কারেন্সি।
সে সময়ে আমেরিকার কাছে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ স্বর্ণ মজুদ ছিল। এজন্যেই মার্কিন ডলারকে ইউনিভার্সেল কারেন্সি হিসেবে মেনে নেয়া হয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঙ্গীকার করেছিল যে ৩৫ মার্কিন ডলার= ১ আউন্স স্বর্ণ Rate অনুযায়ী যেকোনো দেশ চাওয়া মাত্র ডলারের রিজার্ভ ভাঙ্গাতে পারবে। ব্যস, তখন থেকে মার্কিন ডলারে অন্যান্য সকল দেশ তাদের রিজার্ভ রাখতে শুরু করে।
এবার একেবারে সিমপ্লিফাইড ওয়েতে একটা পরিস্থিতি কল্পনা করুণ।
ব্রেটন উডস চুক্তির মাধ্যমে,
১ আউন্স স্বর্ণের মুল্য ৩৫ মার্কিন ডলার।
কথার কথা, আমেরিকাতে বিভিন্ন পন্য রফতানি করে ফ্রান্স ১৪০০ মার্কিন ডলার কামিয়েছে। এবং এই অর্থটা আমেরিকাতেই সে রিজার্ভ আকারে রেখেছে। অর্থাৎ সোজা কথা হল, ফ্রান্সের ফরেন রিজার্ভ ১৪০০ মার্কিন ডলার।
ধরূন, আমেরিকার কাছে ১,০০০ আউন্স স্বর্ণ আছে। অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৩৫,০০০ মার্কিন ডলার সে স্বর্ণের বিনিময়ে ভাঙিয়ে দিতে পারবে।
হঠাৎ ভিয়েতনাম যুদ্ধ শুরু হল।
এই যুদ্ধে অস্ত্রসস্ত্র বানানোর জন্য আমেরিকা ১ লাখ মার্কিন ডলার ইমিডিয়েট দরকার।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক তথা আমেরিকার সেন্ট্রাল ব্যাংক-এর চেয়ারম্যানকে ফোন করে বলে দিলো ১ লাখ মার্কিন ডলার ছাপাতে এবং উনারা প্রিন্টিং প্রেস চালিয়ে ফটাফট ডলার ছাপিয়ে দিলো।
এখন ১০ লাখ ডলার দিয়ে ফ্রান্সের কাছ থেকে লোহা, তামা, দস্তা, নিকেল, ইস্পাত, এটা সেটা কিনে যুদ্ধের অস্ত্রসস্ত্র বানালো আমেরিকা।
ফ্রান্স ওই ১০ লাখ ডলার পেমেন্ট আকারে নিলো এবং রিজার্ভ হিসেবে রাখলো আমেরিকাতে।
সে প্রেক্ষিতে, ফ্রান্সের ফরেন রিজার্ভ এখন বেড়ে দাড়ালো ১ লাখ + আগের ১৪০০ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ ফ্রান্সের এখন মোট ফরেন রিজার্ভ দাঁড়ালো ১,০১,৪০০ মার্কিন ডলার।
সমস্যা হল, আগেই বলেছি আমেরিকার কাছে তো স্বর্ণ আছে ৩৫,০০০ হাজার মার্কিন ডলারের সম পরিমাণ।
তো এখন যদি ফ্রান্স ১,০১,৪০০ মার্কিন ডলার ভাঙিয়ে নিতে চায়, তখন স্বর্ণ পাবে কই? স্বর্ণ তো নেই।
পরিস্থিতিটা বুঝতে পারতেছেন?
ঠিক এমন পরিস্থিতি হোক, সেটা কিন্তু ফ্রান্স চাইবে না। কারণ লস কিন্ত ফ্রান্সের।
ফ্রান্স ডলার ভাঙিয়ে স্বর্ণ নিয়ে অন্য যেকোনো দেশকে পেমেন্ট করতে পারবে। এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়নকেও পেমেন্ট করতে পারবে।
স্বর্ণ ন্যাচারাল মেটাল।
এটার সাপ্লাই কম। ইচ্ছে হলেই ডলার ছাপানো সম্ভব। স্বর্ণ নয়।
একটি দেশ আজ আছে কাল নেই। দেশ না থাকলে সে দেশের মুদ্রাও মূল্যহীন।
আজকে কারো হাতে ১ লাখ মার্কিন ডলার থাকতে পারে। এই ১ লাখ মার্কিন ডলার হাতে নিয়ে যদি টাইম মেশিনে করে ৩০০ বছর অতীতে চলে যান, তাহলে ওই ১ লাখ মার্কিন ডলারের কোনো ভ্যালু নাই।
৩০০ বছর আগে তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নামক দেশেরই অস্তিত্ব ছিল না।
কিন্তু স্বর্ণ? আপনি স্বর্ণ হাতে নিয়ে টাইম মেশিনে করে ১০০০ বছর পেছনে গেলেও মূল্য পাবেন।
টপিক্সে ফিরে আসি।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট Charles de Gaulle শুরু থেকেই ব্রেটন উডস এগ্রিমেন্ট পছন্দ করতেন না।
১৯৬০-এর দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধ যখন শুরু হল,
তিনি আশঙ্কা করলেন আমেরিকা যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ করার জন্য ইচ্ছামত ডলার ছাপাচ্ছে। কারণ ডলার ইউনিভার্সেল কারেন্সি হওয়াতে এবং সকল দেশগুলো আমেরিকাতে মার্কিন ডলারে রিজার্ভ রাখাতে আমেরিকা আনফেয়ার এডভান্টেজ পাচ্ছে। ঠিক উপরের উদাহরণের মত।
সে সাথে, ফেডারেল রিজার্ভের ভল্টে বাস্তবে কত স্বর্ণ মজুদ আছে, সেটা নিয়েও আশঙ্কা ছিল তার।
তো ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এবং তার finance minister, Valéry Giscard d'Estaing সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ফ্রান্সের ফরেন মার্কিন ডলার রিজার্ভের বড় একটি অংশ স্বর্ণতে কনভার্ট করে ফেলার।
ফ্রান্স যখন এই কাজ শুরু করে, তখন মার্কিন গোল্ড রিজার্ভে চাপ পড়ে। ব্যস, যা হবার সেটাই হল।
১৯৭১ সালের ১৫ই আগস্ট, এলো Nixon Shock !
৩৫ ডলারের বিনিময়ে ১ আউন্স স্বর্ণের যে হিসাব কিতাব, তা বাতিল করে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন।
শেষ হয়ে গেল ব্রেটন উডস সিস্টেম।
তত দিনে দুনিয়ার বহু দেশ ফরেন রিজার্ভ রাখতে শুরু করেছে মার্কিন ডলারে।
গোটা বিশ্বের ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেম চালিত হচ্ছে মার্কিন ডলারে। সামরিক, অর্থনৈতিক, ও প্রযুক্তিগতভাবে মার্কিনীরা ততদিনে সুপারপাওয়ার।
এবং মার্কিন ডলার ইউনিভার্সেল কারেন্সি।
মার্কিন ডলারকে সবাই বিশ্বাস করে।
আপনি যে দেশেই যান, ডলার সাথে করে যাচ্ছেন। যে দেশেই যাবেন, ডলারের ভ্যালু পাবেন। ভাঙ্গাতে পারবেন। VISA আর MasterCard দিয়ে কেনাকাটা করতেছেন। ডলারে পেমেন্ট করতেছেন।
পৃথিবীর সব দেশেই ডলার গ্রহনযোগ্য, এবং গোটা দুনিয়ার ব্যবসা বানিজ্য লেনদেন ততদিনে চলতেছে ডলারে।
সে সাথে ততদিনে সৌদি আরবের সাথে মার্কিনীরা ডিল করে ফেলেছে। সৌদি তেল বিক্রি হচ্ছে ডলারে। চলতেছে পেট্রো ডলারের রাজত্ব।
পরবর্তী পর্বে লিখবো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের ধ্বংসস্তুপ থেকে দেশগুলোর উঠে দাঁড়ানোর কাহিনী। আর তার পেছনে থাকা আমেরিকার মার্শাল প্ল্যান।
এছাড়াও লিখবো চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে কিভাবে বিভিন্ন দেশ চেষ্টা করতেছে মার্কিন ডলারের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর। যেমন ব্রিকস-এর মত সংগঠন চাচ্ছে আবার গোল্ড ব্যাকড কারেন্সি ফিরিয়ে আনতে।
অন্যদিকে আমেরিকার ডলারকে কেউ উপেক্ষা করবে, এটা আমেরিকা সহ্য করতে পারবে না। গাদ্দাফি বা সাদ্দাম, যারা যখনই চেষ্টা করে ডলার ব্যতিত অন্যকোনো মুদ্রা বা স্বর্ণে তেল বিক্রি করতে, ব্যস, তখনই তাদের শেষ করে দিয়েছে।
অন্যসব দেশ যদি ডলার ইগনোর করে ভিন্ন ব্যবস্থাপনায় লেনদেন শুরু করে, তাহলে ডলারের বিশ্বব্যাপী ডিমান্ড যাবে কমে। ডিমান্ড কমে গেলে মূল্য হারাবে ডলার। আর তা হবে মার্কিন অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক।
ডলারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানে আমেরিকার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। Gold Backed Currency থেকে Fiat Currency-এর এই অধ্যায় নিয়ে লিখবো সামনে।
আজ একেবারে সিম্পল ওয়েতে, একেবারে Basic লেভেলে লিখলাম। বাস্তবে অবশ্যই সবকিছু আরো অনেক জটিল ছিল। সামনে আরো লিখবো।
Read More »

Saturday, December 18, 2021

হাইকমিশনার সমর সেন

 ভদ্রলোকের নাম সমরেন্দ্রনাথ সেন। 

ডাক নাম টিনু। 



জন্ম ১৯১৪ সালে, ঢাকা শহরে। 

স্কুল কলেজ পাস করে ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর চলে যান বিলেতে। উচ্চশিক্ষার জন্য। 

১৯৩৮ সালে ব্রিটিশ ভারতের সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন।  

কাজ করেছেন  লন্ডনের ভারতীয় হাইকমিশনে, রাষ্ট্রদুত হিসেবে কাজ করেন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আলজেরিয়াতে। 

১৯৬৯ সালে তিনি জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পান। 

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতিসংঘ অধিবেশনগুলোতে বারবার উঠে আছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। সমর সেন রেখেছেন জোড়ালো ভূমিকা। তথ্য উপাত্ত দিয়ে বাংলাদেশে চলমান গনহত্যার বিষয়টি বিশ্ববাসীর নজরে আনতে লাগলেন সমর সেন। 

১৯৭১ সালের ৫ই অক্টোবর সমর সেন জাতিসংঘের সাধারন অধিবেশনে একটি বক্তব্য রাখেন। যার একটি অংশ নিচে তুলে দিলামঃ 

" শোষনের বিরুদ্ধে বাঙালিদের জেগে ওঠা এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ভারতকে দায়ী করেছেন পাকিস্তানের প্রতিনিধি। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, পূর্ব পাকিস্তানিরাই তাদের অস্তিত্বের জন্য, তাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এই প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারত সরকারের হস্তক্ষেপ করা বা না করার ওপর তাদের এই লড়াই নির্ভরশীল নয়। এঅবস্থার পরিবর্তন হবে তখনই, যখন শোষক ও শোষিতের মধ্যে রাজনৈতিক আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠবে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, পাকিস্তানের প্রতিনিধি মাহমুদ আলী এই ব্যাপারে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি" 

মুক্তিযুদ্ধের সময় ইন্টারন্যাশন্যাল ডিপ্লোমেসিতে বাংলাদেশের পক্ষে অসমান্য অবদান রেখেছিলেন সমর সেন।  টানা পাঁচ বছর জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন সমর সেন। 

বাংলাদেশ স্বাধীনের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ  সে সময়ে ভারতীয় ফরেন মিশনগুলোর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই ছিল প্রায়োরিটির দিক থেকে উপরে। বাংলাদেশে প্রথম ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হয়ে এসেছিলেন সূবিমল দত্ত। উনার আদি বাড়ি ছিল চট্রগ্রামে। 

১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। তো প্রথা হল, অন্য কোনো দেশের শীর্ষ পর্যায়ের মেহমান কোনো দেশ সফরে এলে ঐ দেশে অবস্থান করা রাষ্ট্রদূতেরা বিমানবন্দরে গিয়ে তাকে স্বাগত জানান। ভুট্টোকে স্বাগত জানানোর পক্ষপাতি ছিলেন না সুবিমল দত্ত। ভদ্রলোক পদত্যাগ করলেন।  চলে গেলেন বাংলাদেশ ছেড়ে। ভুট্টোকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে ভারতীয় হাইকমিশন থেকে উপস্থিত ছিলেন উপ-হাইকমিশনার জে এন দীক্ষিত।  

তো ইন্দ্রীরা গান্ধী  সমর সেনকে সুবিমল দত্তের জায়গায় নিযুক্ত করলেন।  অর্থাৎ বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার। 

একবছর পর পচাত্তরের ১৫ই আগস্ট ঘটে গেল ইতিহাসের ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ড। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে মোশতাক সরকার ক্ষমতায়। ভারত বিরোধি হাওয়া তখন তুঙ্গে। পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশন তৈরি হতে পারে, এমন কথাবার্তা আকাশে বাতাসে প্রচার হতে লাগলো। চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিল। 

সেই কঠিন সময়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন সমর সেন।

 তিনি খন্দকার মোশতাককে বলেছিলেন, যদি গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করা হয় এবং কোনো দেশের সঙ্গে কনফেডারেশন করা হয়, তাহলে ভারতের কাছে থাকা বৈধ চুক্তির আওতায় ভারতের সেনাবাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। 

যাই হোক। 

তো আজকে সমর সেন'কে নিয়ে লিখলাম। সাথে একটা ঘটনাও বলি। 

এই সমর সেন বাংলাদেশে নিযুক্ত হাইকমিশনার থাকা অবস্থায় ঘটে যায় আরো একটি ভয়াবহ ঘটনা। 

১৯৭৫ সালের ২৬শে নভেম্বর। 

কার্যত জিয়াউর রহমান তখন ক্ষমতায়। কর্নেল তাহের তখন বন্দি। 

তো জাসদের তৈরি বিপ্লবি গনবাহিনীর  পরিকল্পনা করেছিলো মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে জিম্মি করে মুক্তিপণ হিসেবে কর্ণেল তাহেরকে মুক্ত করতে। কিন্তু পরে সেই পরিকল্পনা বদলে তারা অভিযান চালিয়েছিলো ভারতীয় হাইকমিশনে। এই পরিকল্পনা ছিল কর্নেল তাহের ভাই অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের। 

১৯৭৫ সালের ২৬শে নভেম্বর, জাসদের বিপ্লবী গনবাহিনীর ৬ জনের একটি দল হামলা চালায় ভারতীয় হাইকমিশনে। 

সমর সেনকে তারা ধরেও ফেলেছিলো। 

কিন্তু হাইকমিশনের ভেতরেই যে ভারতীয় কমান্ডো বাহিনীর সদস্যরা ছিল, সেটা তখন অনুমানও করতে পারেনি হামলাকারিরা।  বেলাল, বাহার, সবুজ, হারুন,  বাচ্চু, মাসুদ। ছয় জনের ভেতর চারজন হাইকমিশনের ভেতরেই গুলিখেয়ে  স্পটডেড। বাকিদুইজন আহত।  

হাইকমিশনার সমর সেনও গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। 

এই ঘটনার পর রীতিমত হুলুস্থল লেগে গেল। জিয়াউর রহমান শুরু করলেন জাসদের বিরুদ্ধে ক্রাকডাউন। 

তো ভারতীয় হাইকমিশনে  জাসদের হামলার এই ঘটনা নিয়ে মহিউদ্দিন আহমদের একটা বই আছে। বেঁচে যাওয়া হামলাকারী সহ মৃত হামলাকারিদের আত্মীয়স্বজনের ইন্টারভিউ আছে বইটিতে। কারো আগ্রহ থাকলে পড়ে দেখতে পারেন। 

সমর সেনের কাধে গুলি লেগেছিল।

 তিনি চিকিৎসার জন্য ভারত যাননি। বাংলাদেশেই চিকিৎসা নিয়েছিলেন।

 ১৯৭৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেন সমর সেন। এরপর সুইডেনের রাষ্ট্রদুত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ছিলেন ভারতের দিল্লি পলিসি গ্রুপে। পরবর্তীতে আবারও কাজ করেছেন জাতিসংঘে। জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান তার ভুয়সী প্রশংসা করেছিলেন। 

২০০৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে মারা যান ঢাকাতে জন্ম নেয়া সমর সেন।



Read More »

Saturday, January 23, 2021

হিটলারের সোনা চুরি

 গত ২০০ বছরে ইউরোপের একটি দেশ নিজেকে যুদ্ধ হানাহানি থেকে একেবারেই দূরে রেখেছে। ইন্টারেস্টিং বিষয় হল, ইউরোপে যুদ্ধ হলেই এই দেশটি নানাভাবে গুটিবাজি করে লাভবান হয়।

 

আসুন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনার আলোকেই দেশটির বিতর্কিত ভুমিকা আর গুটিবাজির কাহিনী বলি।

 

জার্মানিতে নাৎসি বাহিনী ক্ষমতায় আসার সাথেসাথেই হিটলারের বিরোধীরা, বিশেষ করে নাৎসি বাহিনীর মুল টার্গেট, ইহুদীরা ভয় পেতে শুরু করে। ইহুদীরা ছিলো অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী।

 তো তারা টাকা পয়সা জার্মানি থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করে ১৯৩৩ সালের পর থেকেই। এখন প্রশ্ন, টাকা সরিয়ে কোথায় রাখবে? বুঝতেই পারতেছেন কোথায় ! সুইজারল্যান্ড। অর্থাৎ সুইস ব্যাংকগুলোতে।

কেবল ইহুদীরাই নয়, হিটলারের বিরোধিতা করা দলগুলোও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করে। বিশেষ করে যখন নাৎসি বাহিনী পূর্ণ কর্তৃত্ব নিতে শুরু করে জার্মানিতে।

একসময় আগ্রাসী নাৎসিরা ইহুদীদের ব্যবসা বানিজ্য প্রতিষ্ঠান জোর দখল করে নেয় এবং নিজেদের দলের ভেতর ভাগভাটোয়ারা শুরু করে। ইহুদীরা জীবন বাঁচাতে পানির দামে রাষ্ট্রের কাছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তুলে দিতে বাধ্য হয়। একে বলা হত, “Robbery on a massive Scale”

 

লূই ডি রথচাইল্ডের মত ক্ষমতাধর ব্যক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও কেড়ে নেয় সরকার। ধনী ইহুদীরা জার্মানি ছাড়তে শুরু করে। ক্ষমতাধর ইহুদি ও নাৎসি বিরোধিরা তাদের জামানত বিদেশে সরিয়ে নিতে শুরু করে। এবং বড় অংশ রাখে সুইজারল্যান্ডে। কারণটা সবার জানা। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকের কড়া গোপনীয়তা, নিরাপত্তা আইন। আপনি সুইস ব্যাংকে টাকা রাখবেন। আপনার একাউন্টে কোনো নামধাম খোঁজখবর তারা গোপন রাখবে। (এতে কিছু ঘাপলাও আছে। সেই ব্যাপারে পরে বলবো ) বিষয়টি জটিল।

 

তো জার্মানির ধনী ইহুদিদের টাকা পয়সা জমা হতে থাকে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে। আবার হিটলারের নাৎসি বাহিণীও টাকা জমানো শুরু করে সুইজারল্যান্ডে। কি? ঘোলাটে হয়ে গেলো ব্যাপারটা? Clear করতেছি।

১৯৩৮ সালে জার্মানি অস্ট্রিয়া দখল করে নেয়। (ভুলে যাবেন না, অস্ট্রিয়া কিন্তু হিটলারের জন্মভুমি। তার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিলো অস্ট্রিয়া আর জার্মানিকে এক করার) তো হিটলারের জার্মান বাহিণী অস্ট্রিয়া দখল করে বিনা বাধায়। অস্ট্রিয়া আর জার্মানি, দুই দেশের (কিন্তু একই জাতের) মানুষ খুশি হয় অস্ট্রিয়া ও জার্মানির একীভূতকরনে।

হিটলার অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে লিকুয়েডেট করে। ফলে ভিয়েনার সেন্ট্রাল ব্যাংকের যাবতীয় সম্পত্তি (অর্থাৎ সোনা আর টাকা পয়সা) সরিয়ে নেয়া হয় জার্মানির কেন্দ্রীয় ব্যাংক Reichsbank (রাইশ ব্যাংক) এর ভল্টে। (অর্থাৎ একদেশ। সেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংকও একটি হবে)

৯০ হাজার কেজি সোনা আর বিলিয়ন ডলারের সমমুল্যের সম্পত্তি সরিয়ে নেয়া হয় ভিয়েনা থেকে জার্মানিতে।



 

অর্থাৎ বুঝতেই পারতেছেন, অস্ট্রিয়া জার্মানির একীভূতকরন হিটলারের জন্য কেবল পলিটিক্যাল সাফল্যই ছিলো না। এটা ছিলো নাৎসি জার্মানির জন্য আর্থিকভাবেও লাভজনক।

 

তো, লোভ এক ভয়ঙ্কর জিনিস।

সেইবছরের অক্টোবরেই চেকোস্লোভাকিয়ার সংখ্যালঘু জার্মানদের রক্ষাকরার অজুহাত দেখিয়ে হিটলার চেকোস্লোভাকিয়া দখল করে নেয়। খুবই সহজে। চেক সরকার হিটলারের হাত থেকে তাদের asset বাঁচানোর জন্য চেকোস্লোভাকিয়ার রাজধানী প্রাগের সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে সোনা আর টাকা পয়সা ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডে সরিয়ে নিতে শুরু করে। যদিও লাভ হয় নি। নাৎসিরা চেক সরকারকে চাপ দিয়ে আবার সব প্রাগে ফিরিয়ে আনে। সেখান থেকে যথারীতি সোনা আর অর্থের গন্তব্য হয় জার্মান সেন্ট্রাল ব্যাংকে। সেই আমলের ৬৬ মিলিয়ন ডলার মুল্যের সোনা ও অর্থ।

 

অর্থাৎ ভিন্নদেশ দখল করা হিটলারের জন্য বেশ লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হতে শুরু করে। একটা দেশ দখল করো, এরপর সেইদেশটিকে নিজ সম্রাজ্যে একীভূত করো। এবং সেই দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংক লিকুইডেট করো। সোজা হিসাব। সরল লুটপাট।  

 

১৯৩৯ সালের শুরু থেকেই ইউরোপের আকাশে যুদ্ধের আভাস ভাসতে শুরু করে। বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর জার্মানির ভেতর করা “মলোটভ-রিবেনটপ প্যাক্ট” একরকম যুদ্ধের দোয়ার খুলে দেয়। এটা মুলত ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়ন আর জার্মানির ভেতর ইউরোপ নিয়ে ভাগাভাগির প্রথম পর্বের হিসাব কিতাব।

 

তো যাই হোক, হিটলার পোলান্ড আক্রমন করার মাধ্যমে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ব্রিটেন এবং ফ্রান্স, জার্মানিকে বারবার সতর্ক করেছিলো পোলান্ড আক্রমনের ব্যাপারে। কিন্তু হিটলার সেই হুমকি উপেক্ষা করে পোলান্ড আক্রমন করলে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ব্রিটেন এবং ফ্রান্স অফিসিয়ালি জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

হিটলার পোলান্ড দখলের পর প্রথম ধাক্কা খায়। পোলান্ডের রাজধানী warshaw এর সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে পোলিশরা সোনা সরিয়ে রোমানিয়া আর তুরস্ক ঘুরে পাঠিয়ে দিয়েছে ফ্রান্সে। অর্থাৎ পোলান্ড দখল করে পোলিশ সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে কিছুই পান নি হিটলার।

 

এরপর ১৯৪০ সালের মে মাসে নেদারল্যান্ড আক্রমন করে হিটলার। ভয়াবহ লুটপাট চালায় সেখানে। নেদারল্যান্ডের সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে ১৬৩ মিলিয়ন ডলারের সমমুল্যের সোনা লুটপাট করে জার্মানি। নেদারল্যান্ড ছিলো একেবারেই অপ্রস্তুত। জার্মানির নেদারল্যান্ড আক্রমনটা ছিলো আনএক্সপেক্টেড।

 

এরপর বেলজিয়ামের পালা।

কিন্তু বেলজিয়াম অনুসরন করেছিলো পোল্যান্ডকে। ফলাফল, বেলজিয়ামের সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে হিটলার কিছুই পেলো না।

১৯৪০ সালের জুন মাসেই নাৎসি বাহিনীর হাতে ফ্রান্সের পতন হয়। প্যারিসের পতনের আগে ফ্রান্স তার ভল্টের সোনার একটা বড় অংশ পাঠিয়ে দেয় পশ্চিম আফ্রিকার ডাকার আর ক্যারিবিয় ফ্রেন্স কলোনিতে।

১৯৪২ সালে ভিসি ফ্রান্সের পাপেট সরকারকে দিয়ে হিটলার এসব সোনাদানার একটা বড় অংশ ফিরিয়ে আনে। হিটলার হয়ত গোল্ডের সমগ্র মজুদই নিজের কুক্ষিগত করতে পারতো, কিন্তু মিত্রবাহিনী ধীরে ধীরে জয় পেতে শুরু করে। প্রথমে আফ্রিকাতে, এবং পরে ইউরোপে।

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরে যায় স্তালিনগ্রাডের যুদ্ধের পর। এরপর ফ্রান্সে মিত্র বাহিনীর ল্যান্ডিং। সবমিলিয়ে হারতে শুরু করে হিটলারের পরাক্রমশালী বাহিনী। ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো সবারই হয়ত জানা। পূর্বে সোভিয়েত আর্মি, পশ্চিমে মার্কিন, ব্রিটিশ’দের মত সম্মিলিত মিত্র বাহিনীর কাছে জায়গা হারাতে শুরু করে নাৎসিরা।  

এবার উল্টো হিটলার ব্যাকফুটে চলে যায়।

এবার দেখুন ইন্টারেন্সটিং ব্যাপারটা।

সমগ্র বিশ্বযুদ্ধে একটি দেশ একেবারে নিউট্রাল ছিলো। সেটা হল সুইজারল্যান্ড। যেহেতু সে নিউট্রাল, সেহেতু সেই হিটলারের সাথে বিজনেস করতে পারবে। (ব্যাপারটা খেয়াল করুণ) সে যদি হিটলারের সাথে বিজনেস না করে, তাহলে সেটা হবে মিত্র বাহিনীর পক্ষে অবস্থান নেয়া। আবার সে মিত্র বাহিনীর সাথেও বিজনেস করবে। কারণ যদি সে মিত্র বাহিনীর সাথে বিজনেস না করে, তাহলে তার নিউট্রাল অবস্থান নষ্ট হবে। সে তখন হয়ে যাবে হিটলারের পক্ষের। অর্থাৎ নিউট্রালিটির নামে আসলে সে দুই ঘাটের পানিই খাবে। খেয়েছেও তা।

নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচতে প্রথম দিকে ইহুদীরা যেমন তাদের টাকা পয়সা সুইস ব্যাংকে জমা করতে শুরু করে, তেমন যখন হিটলার একটার পর একটা দেশ দখলে ব্যস্ত, তখন সেইসব দেশের মানুষেরাও তাদের টাকা পয়সার নিরাপত্তার জন্য সুইস ব্যাংকের শরণাপন্ন হয়। আবার যুদ্ধের শেষ দিকে যখন হিটলার আর তার নাৎসি জার্মানি ব্যাকফুটে চলে যায়, তখন তারাও তাদের টাকা পয়সার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শরনাপন্ন হয় সুইজারল্যান্ডের। অর্থাৎ গোটা বিশ্বযুদ্ধে সুইজারল্যান্ডের খালি লাভই হয়েছে। টাকা আর টাকা। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সোনা মজুদ হয়েছে সুইস ব্যাংকের ভল্টে।

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পরার পর হিটলারের সাথে ইউরোপের প্রায় সবগুলো দেশের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। দীর্ঘ বিশ্বযুদ্ধ চালাতে হিটলারের প্রচুর অস্ত্রের দরকার পড়তে থাকে। সবটা জার্মানিতে প্রস্তুত করতে হিমশিম খেতে থাকে জার্মানি। ফলাফল, সুইজারল্যান্ডের কাছে ক্যাশের বদলে আর্টিলারি সেল কিনতে শুরু করে জার্মানি। (এতেও সুইজারল্যান্ডের নিউট্রালিটি খোয়া যায় নি। তার কথা, নিউট্রালিটি রক্ষায় সে হিটলারের সাথে বিজনেস করতে বাধ্য। বিজনেস না করলেই সেটা হবে মিত্র বাহিনীর পক্ষে অবস্থান নেয়া)

 

আবার জার্মান ও ইউরোপের অন্যসব দখল হয়ে যাওয়া দেশ থেকে ইহুদিরা প্রাণে বাঁচতে সুইজারল্যান্ডে আশ্রয় নিতে গেলে সেখানেও সুইজারল্যান্ড নিউট্রালিটি রক্ষায় ধুয়া তুলে হাত পরিষ্কার রাখে। নাৎসিরা ইহুদিদের পাসপোর্টে “J” লিখে দিতো। এই পাসপোর্টধারীদের সুইজারল্যান্ড সরকারকে আশ্রয় দিতে নিষেধ করেছিলো হিটলার। অপরদিকে আমেরিকা ও ব্রিটেন অনুরোধ করেছিলো সুইজারল্যান্ড’কে আশ্রয় দিতে। এবার সুইজারল্যান্ড নিউট্রালিটির বদলে ‘নিরাপত্তার’ অজুহাত দিলো। অর্থাৎ হিটলারের বিরুদ্ধে গেলে হিটলার সুইজারল্যান্ড আক্রমন করতে পারে। এই ভয়।

অর্থাৎ কখনো নিউট্রালিটি কখনো নিরাপত্তার অজুহাতে সুইজারল্যান্ড ফায়দা তুলেছে। হাত পরিষ্কার রেখেছে।

 

এই টুকু পড়ার পর হয়ত আপনাদের মাথায় দুইটা প্রশ্ন জেগেছে। এক, হিটলার তো গোটা সুইজারল্যান্ড দখল করে নিলেই খেলা চুকে যেতো।

উত্তর, নাহ। সুইজারল্যান্ডকে হিটলার ব্যাকআপ হিসেবে রেখেছিলো। হিটলারের আগ্রাসনের কারণে গুটি কয়েক দেশ ছাড়া সবাই জার্মানির সাথে সম্পর্ক বাতিল করে। হিটলার তখন সুইজারল্যান্ডকে মিডেলম্যান হিসেবে ব্যবহার করে। জার্মান বিজনেসম্যানরা সুইজারল্যান্ডকে ভায়া করে লেনদেন চালাতে শুরু করে।

ব্যাপারটা clear করি। ধরুন, আপনার হাতে ১০ কেজি স্বর্ণ আছে। তো আপনি ভারত থেকে কিছু জিনিস কিনতে চান। কিন্তু ভারতের সাথে আপনার সম্পর্ক খারাপ। আর সরাসরি সোনা বা টাকায় লেনদেনও করতে পারবেন না। তখন আপনি সুইজারল্যান্ডে ১০ কেজি স্বর্ণ জমা রাখলেন। টাকা জমা করলেন। এবার সুইস ফ্রাঙ্কে (সুইজারল্যান্ডের currency) তে সুইজারল্যান্ডের কোনো মিডেলম্যান মারফৎ ভারতের ব্যবসায়ীর সাথে লেনদেন করলেন। এই যা।

এটা একটা দিক। আরো একটা দিক হল, হিটলার যদি in case, যুদ্ধে হারতে থাকে, তাহলে নাৎসিদের নিজেদের টাকা পয়সার হেফাজতের জন্যেও সুইজারল্যান্ড দরকার। অর্থাৎ সুইজারল্যান্ড দরকার সবার। মিত্রবাহিনী হোক, বা নাৎসি বাহিনী। Switzerland is the safe Heaven of foreign money, after all.

 

আরেকটি প্রশ্ন আসতে পারে, ইহুদীরা তো সুইজারল্যান্ড যেতেই পারলোনা। তাহলে অর্থ রেখেছিলো কিভাবে?

উত্তর, সুইজারল্যান্ডে টাকা রাখার জন্য আপনার আসলে সুইজারল্যান্ড যাবার দরকার নেই। আপনি বাংলাদেশে বসেই কাজটি করতে পারেন। সেসব নিচে বলতেছি।

 

 

তো যা বলতেছিলাম।

হিটলার সুইজারল্যান্ডে লুটপাট করা সোনা দিতো। আর বিনিময়ে hard currency পেতো। যা দিয়ে অস্ত্র বানাতো বা কিনতো।

সুইজারল্যান্ডের অস্ত্র কোম্পানিগুলোও হিটলারের কাছে অস্ত্র বেচতো। অর্থাৎ সবদিক দিয়েই দুহাত ভরে কামাতে শুরু করে সুইজারল্যান্ডে।

আমেরিকা ব্রিটেন সবই বুঝতো। জানতো। সুইস অস্ত্র ফ্যাক্টরিতে তারা বোমা বর্ষণ করতে চেয়েছিলো। যদিও শেষ মুহূর্তে বিরত থেকেছে সেই সুইস নিউট্রালিটির কারণে। আর দিনশেষে সুইজারল্যান্ডকে তো তাদেরও দরকার !!  

 

মুলত ১৯৪৩ সালের বসন্তেই হিটলারের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন হাওয়াই মিলিয়ে যায়। সোভিয়েত বাহিনীর কাছে সলিল সমাধি হতে শুরু করে হিটলারের আর্মি ডিভিশনগুলো। হিটলারের একসময়ের স্ট্রাটেজিক্যাল মিত্র স্তালিন এবার হায়নার মত ধেয়ে আসতেছে জার্মানির দিকে। হিটলারের ভালো করেই জানে, সে যদি শয়তান হয়, স্তালিন শয়তানের বাপ !! ( হিটলারের একটা বড় ভয় ছিলো স্তালিনের হাতে হিউমিলিয়েট হবার )

তো সে অন্য ব্যাপার।

 

তো, ১৯৪৩ সালের শেষদিকেই নাৎসিরা বুঝতে পারে তারা হেরে যাবে এবং জার্মানি দখল হয়ে যাবে। ফলে এবার রাইশ ব্যাংকের টাকা পয়সা তারা সরাতে শুরু করে সুইজারল্যান্ডে। থার্ড রাইটের পতন হলেও ফোর্থ রাইটের উত্থানের কথা তারা আগেই ভেবেছিলো। এবং ভবিষ্যৎ ফোর্থ রাইটের উত্থান যাতে সহজ হয়, সেইজন্য আগে থেকেই সুইস ব্যাংকে টাকা জমাতে শুরু করে নাৎসিরা।



 

১৯৪৪ সালে ব্রিটিশ মার্কিন গোয়েন্দা দল এইসব লেনদেনগুলো ট্রেস করতে শুরু করে। শুরু হয়, Operation safe heaven

 

১৯৪৫ সালে নাৎসি বাহিনীর পতনের আগ পর্যন্ত ৬০ বিলিয়ন ডলারের লেনদেন ট্রেস করেছিলো মার্কিন আর ব্রিটিশ গোয়েন্দারা। (ধারণা করাই যায় যে এটা মুল লেনদেনের একটা অংশ মাত্র)

ট্রেস করা ৬০ বিলিয়ন ডলারের একটা অংশ রাখা হয়েছিলো হিটলারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী Joachim von Ribbentrop এর একাউন্টে। ১৯৪৬ সালে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়। ফাঁসির মঞ্চে সে বলেছিলো, “God protect Germany. God have mercy on my soul. My final wish is that Germany should recover her unity and that, for the sake of peace, there should be understanding between East and West. I wish peace to the world."

 

৩০ জনেরও বেশি সুইস উকিল ব্যারেস্টারদের নাম ছিলো Operation safe Heaven ডকুমেন্টেসে। এসব সুইস উকিলের একাউন্টে নাৎসি অর্থ জমা ছিলো। (অর্থাৎ আপনি আপনার টাকা সুইজারল্যান্ডের কোনো বিশ্বস্ত বন্ধুকে দিলেন। সে তার নামে সুইস ব্যাংকে সেই টাকা জমা রাখলো। আপনার প্রয়োজনে তাকে বললে সে টাকা তুলে পাঠিয়ে দেবে। ব্যাপারটা এমন )

 

নুরেমবার্গে যখন নাৎসি বাহিনীর কুখ্যাত নেতাদের বিচার শুরু হয়, তখন এরা নিজেদের পক্ষে বড়বড় উকিল ব্যারেস্টার নিয়োগ দিয়েছিলো মুলত এই টাকার জোরে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জার্মানিতে ফোর্থ রাইট গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা করে গিয়েছিলো নাৎসিরা তাদের পতনের ঠিক অন্তিমক্ষণে। নেদারল্যান্ড ও ডেনমার্কে নাৎসি মতাদর্শ অনুসরনকারী ব্যবসায়ীদের নামে সুইসব্যাংকে টাকা জমা করা হয়েছিলো। উদ্দেশ্য ছিলো নতুন জার্মানিতে গোপনে গোপনে ইন্ডাস্ট্রিয়াল কম্পেক্স গড়ে তোলা হবে। ফোর্থ রাইটের ফাইনান্সিয়াল শক্তি বাড়ানো হবে। এরপর সময় সুযোগ মত আবার রাজনৈতিকভাবে মাথাতুলে দাঁড়াবে নাৎসিরা।

(আমাদের দেশে জামায়াতি ইসলাম কিন্তু এইকাজে সফল। তারা একাত্তরে এতো অকাম কুকাম করে, স্বাধীনতার বিরোধিতা করেও ঠিকই আজ চার দশক পর অর্থনৈতিকভাবে বেশ ভালোমতই প্রতিষ্ঠিত )

 

জার্মানিতে নাৎসিরা এইকাজটা করতে গিয়েও করতে পারে নি Operation safe heaven এর কারণে। নাৎসিদের ভবিষ্যৎ প্ল্যানগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে বেশ খানিকটা সক্ষম হয়েছিলো পশ্চিমারা )

 

নাৎসি বাহিনী রাইশ ব্যাংকের ভল্টের সোনার একটা অংশ ব্যাভেরিয়াতে ট্রাকে করে নিয়ে পাহাড়ের গুহায় লুকিয়ে রেখেছিলো। এসব পরে মিত্রে বাহিনী গিয়ে উদ্ধার করে।

এই লুকানোর দায়িত্বে নিয়োজিত একজন Nazi কর্নেল Freidrich Josef Rauch মার্কিনীদের সাথে আতাত করে লুকিয়ে থাকা সোনার খোঁজ দেয়। সেই সোনা মাটি খুড়ে তুলতে তিন সপ্তাহ লেগেছিলো। (এটা কিন্তু লুকানো সোনার একটা অংশ )

রাইশ ব্যাংকের বিশাল স্বর্ণ ভান্ডারের এক বিশাল অংশ তখন সুইজারল্যান্ডের অজানা কোনো আকাউন্টে। নুরেমবার্গে বড়বড় নাৎসি নেতার বিচার ও মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হলেও তাদের ব্যক্তিগত অর্থ সম্পদ নিরাপদেই ছিলো সুইস ব্যাংকে।



 

তো যাই হোক, আবার সুইস ব্যাংকে ফেরা যাক।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে আমেরিকা ও ব্রিটেন আলোচনায় বসে সুইস সরকারের সাথে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া জার্মানি আবার নতুন করে গড়ে তোলার জন্য প্রচুর টাকার দরকার। সুইস সরকার বলে, রাইশ ব্যাংকের ৪০০ মিলিয়ন ডলার মুল্যের স্বর্ণ মজুদ আছে তাদের কাছে। (এটা ছিলো আসল হিসাবের অনেক অনেক কম) (সুইস সিক্রেসি বলে কথা ! )

৬০ মিলিয়ন ডলার সুইজারল্যান্ড তুলে দিতে রাজি হয় মিত্র বাহিনীর হাতে।

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ৬০ মিলিয়ন ইহদিকে হত্যা করা হয়। এদের অনেকের টাকা পয়সা জমা ছিলো সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে বেঁচে থাকা ইহুদীরা তাদের মৃত আত্মিয় স্বজনের জমানো টাকা তুলতে চাইলে বাধে বিপত্তি। অনেক ইহুদি তাদের উত্তরাধিকারসুত্রে রেখে যাওয়া ন্যায্য সম্পদ উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। সুইস সরকার ইচ্ছাকৃত নানান গরমিল দেখাতে শুরু করে। তারা মৃত স্বজনের Death certificate চায়। এটা ছিলো এক চুড়ান্ত রসিকতা। কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিহত মানুষদের Death Certificate কিভাবে থাকবে ? !!!    

(ওই যে, উপরে বলেছিলো, বেশি সিক্রেসি, কিন্তু এর ঝামেলাও আছে। আমাদের বাংলাদেশের ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের ৭ বিলিয়ন ডলারের অর্থ সুইস ব্যাংকে আটকে আছে এখন। কেন আটকে গেছে, সেটা জানা যায় নি। কিন্তু সুইস ব্যাংকের অতিরিক্ত সিক্রেসি আর নানান জটিল নিয়ম কানুনের কিছু ঘাপলা তো আছেই। ৭ বিলিয়ন ডলার দিয়ে একটা পদ্মা সেতু ইজিলি বানানো যায়। মুসা বিন শমসের বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য চেয়েছে তার অর্থ ফিরে পেতে)  

 

সুইস সরকার এই কঠিন ব্যাংকিং সিক্রেসি আইন করেছিলো কিন্তু ১৯৩০ সালের দিকে। উদ্দেশ্য ছিলো সম্ভাব্য নাৎসি আগ্রাসনে ইহুদীরা যাতে তাদের সম্পদ নিরাপদে রাখতে পারে, সেটা। অদ্ভুত ব্যাপার হল, সেই একই সিক্রেসি আইনের বলে এবার তারা ইহুদিদের জমিয়ে রাখা সম্পদ ফিরিয়ে দিতে গড়িমসি  করতে শুরু করে।

প্রায় ৫০ বছর ধরে হাজার হাজার ইহুদীরা সুইস ব্যাংক থেকে তাদের অর্থ উদ্ধারে ব্যর্থ হয়। কিন্তু এই সময় ইহুদীরা সমগ্র বিশ্বে, বিশেষ করে মার্কিন মুল্লুকে অনেক প্রভাবশালী হয়ে ওঠে।

ফলাফল, এবার সুইস ব্যাংকের হিপোক্রেসি আর জারিজুরির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে আমেরিকার ক্ষমতাধর ইহুদীরা। Edgar Bronfman ছিলেন সাবেক World Jewish Congress এর প্রেসিডেন্ট। তিনি দীর্ঘদিন সুইস ব্যাংকের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছিলেন। ১৯৯৫ সালে Edgar Bronfman সুইজারল্যান্ডে গিয়ে নেগোসিয়েশন করেন। ফলাফল, ৩২ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি ফিরিয়ে দিতে সুইস ব্যাংক বাধ্য হয় শ’খানেক ইহুদি পরিবারের কাছে। কিন্তু একটা ছিলো ছোট একটা অংশমাত্র।

ফলাফল, ক্ষিপ্ত  Edgar Bronfman আমেরিকা ফিরে এসে মার্কিন সিনেটের ব্যাংকিং কমিটিকে দিয়ে wall Street এর সুইস ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।

সালটা ১৯৯৬।

ভীষণ বিপদে পড়ে যায় সুইজারল্যান্ড। ১৯৯৭ সালে মার্কিন সিনেট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্লাসিফাইড তথ্য জনগনের সামনে প্রকাশ করে। তাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর সাথে সুইজারল্যান্ডের লেনদেনের তথ্যচিত্র তুলে ধরা হয়। সুইসব্যাংকের লোকদেখানো নিউট্রালিটিকে জনসম্মুখে তুলে ধরতে থাকে। ফলে ইমেজ সঙ্কটে পড়ে সুইজারল্যান্ড। নাৎসি কলাবোরেটর হিসেবে ট্যাগ খাওয়াটা সুইজারল্যান্ডের জন্য হবে সর্বনাশ। মার্কিন সিনেট হিসাব দেখায়, ২৮০ টি ট্রাক লোডেড হয়ে জার্মান থেকে স্বর্ণ গিয়েছিলো সুইজারল্যান্ডে। জি হা, ২৮০ টি ট্রাক !

 

সোনা যে কেবল রাইশ ব্যাংকের ভল্ট, বা বিভিন্ন লুটপাট করা দেশের ব্যাংক ভল্ট থেকে এসেছিলো, তায় নয়, ইহদিদের বাড়ি থেকে লুটকরা সোনাদানা গলিয়েও সোনার বার বানিয়ে চালান করে দেয়া হয়েছিলো। সেই সময় বুড়োরা দাঁত বাধাতো সোনা দিতে। সেইসময় এটা ছিলো আভিজাত্যের ব্যাপার। কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে মানুষের বাধানো সোনার দাঁত খুলে খুলে গলিয়ে সোনার বার বানানো হয়েছিলো।

 

এসব তথ্য প্রকাশের পর সুইস ব্যাংকিং ইন্ড্রাস্টির বারোটা বেজে যায়। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন এবার সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। সুইস ব্যাংক এবার ১০ বিলিয়ন ডলার পূর্ব ইউরোপে বসবাসরত ইহুদিদের ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু এতেও আমেরিকা সন্তুষ্ট নয়।

 


১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে ৪১ টি দেশ আলোচনায় বসে সুইজারল্যান্ডের সাথে। সুইজারল্যান্ড রাজি হয় সব গচ্ছিত সম্পদ ফিরিয়ে দিতে। ৫ টন স্বর্ণ ফিরিয়ে দেয়া হয় পোলান্ডকে। নাৎসি সোনার বারের রাসায়নিক বিশ্লেষণ শুরু হয়। বেশকিছু সোনার বারে ছিলো উচ্চ লেভেলের মারকারির উপস্থিতি। অর্থাৎ এগুলো কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে মানুষের খুলে নেয়া বাধানো দাঁত গলিয়ে বানানো হয়েছিলো।  

১৯৯৮ সালে মার্কিন সরকার সফল হয়। সুইস ব্যাংক তাদের কাছে গচ্ছিতো ইহুদিদের অর্থ ফিরিয়ে দিতে শুরু করে।

তবে এখানে আসে আরেকটা টুইস্ট। ৪ বিলিয়ন ডলার মুল্যের সোনার হিসাব আবার লাপাত্তা। ইন্টারেন্সটিং বিষয় হল, আমেরিকা নিজেই নাৎসিদের সোনার একটা অংশ গায়েব করেছে। হজম করেছে। এই অবৈধ স্বর্ণ দিয়েই প্রথমে OSS এবং পরে CIA এর covert operation এর funding দিতো সাধু আমেরিকা। সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে স্নায়ু যুদ্ধে যেমন আমেরিকা নাৎসি বিজ্ঞানীদের ঠিকই ব্যবহার করেছে, ঠিক একইভাবে নাৎসিদের চুরি করা অর্থ সোনাদানাও নিজেরা ব্যবহার করেছে গোপনে।

এবার নিশ্চয় বুঝতে পারতেছেন, কেন আমেরিকা দীর্ঘ ৫০ বছর (অর্থাৎ যতদিন সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিলো) ততদিন সুইস ব্যাংকের গায়ে হাতও দেয় নি। সবই রাজনীতি।

 

 

তো এই হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সুইস ব্যাংকের ভুমিকা।

আজও আমরা শুনি, দেশের অমুক ব্যবসায়ী, তমুক রাজনীতিবিদ, অমুক মাফিয়া ডনের টাকা পয়সা সব সুইস ব্যাংকে। অর্থাৎ সমগ্র ব্যাপারস্যাপার সম্পর্কে আমাদের আইডিয়া কম হলেও এটা আমরা বুঝি, ক্ষমতাধর কেউ বিশাল অংকের টাকা লুকিয়ে রাখতে আজও সুইস ব্যাংক ব্যবহার করে। সুইস ব্যাংক বলতে আসলে সুইজারল্যান্ডের একটা ব্যাংক হয়, বেশকিছু ব্যাংককে বোঝানো হয়। যেমন, UBS, Credit Swiss, Julius Bar ইত্যাদি। সবচেয়ে নামকরা UBS… সুইজারল্যান্ডের সব ব্যাংকই সুইস সিক্রেসি act এর আয়তায় পড়ে।

 

 

কিছুদিন আগে Wikileaks এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান আস্যাঞ্জ বলেছিলেন, সুইস ব্যাংকে থাকা টাকার একটা বড় অংশ আসে ইন্ডিয়ার মত দেশ থেকে।

ব্যবসায়ীরা তাদের লুটপাটের টাকা বা কালো টাকা নিরাপদে সুইস ব্যাংকে গোপন করে।

মিশরের সাবেক ডিক্টেটর হোসনী মোবাররকের পতনের পর সুইস ব্যাংক থেকে তার নামে রাখা ১১০ বিলিয়ন ডলার ফিরিয়ে আনা হয়েছিলো। অর্থাৎ বিল গেইটসের সম্পদের চেয়ে অনেক অনেক বেশি।

এই রকম বহুত আছে।

মধ্যপ্রাচ্যের আরব শেখ থেকে রাশিয়ার মাফিয়া ডনেরা। এদের টাকার গন্তব্য সেই সুইজারল্যান্ড।

 

ভারতের অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলো সুইস ব্যাংকের কথা। তিনি একটা ফোন নাম্বার সাংবাদিকদের দিয়েছিলো। ইন্ডিয়া থেকে ওই নাম্বারে ফোন করলে (আপনি যদি বড় কোনো পয়সাওয়ালা ব্যক্তি হন ) তাহলে পরদিন বিমানে করে সুইস ব্যাংকের লোকেরা চলে আসবে।

অর্থাৎ আপনি ভারতে বসেই সুইস ব্যাংকের কাজকর্ম সারতে পারবেন। সুইস ব্যাংকই আপনার কাছে আসবে। আপনাকে যেতে হবে না। আপনাকে কেবল পয়সাওয়ালা হতে হবে। এই যা।

অরবিন্দ কেজিরিওয়াল ভারতের সবচেয়ে ধনী ও ক্ষমতাধর ব্যবসায়ী মুকেশ আমভানির বিরুদ্ধে রীতিমত যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।

সংবাদ সম্মেলন করে, কখনো’বা টক শো’তে এসে তিনি মুকেশ আমভানির ব্যাপারে বলেছিলেন। তিনি দাবি করেন, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ভারত থেকে সুইস ব্যাংকে পাচার করেছেন মুকেশ ও মুকেশের মত রাঘব বোয়ালেরা। ভারতের ইনকাম ট্যাক্স বিভাগে কর্মরত অবস্থায় ধনুকুবদের এসব জারিজুরি নিজে দেখেছেন কেজিরিওয়াল।

 

 

যাই হোক, আজ এই পর্যন্ত থাক। ধন্যবাদ।


** আর্টিকেলটি প্রথম লিখেছিলাম ২০১৫ সালে। ফেসবুক নোটে। 

Read More »

পরীক্ষায় নকল করা কাহাকে বলে? কত প্রকার, কি কি?

 পরীক্ষায় নকল করা কাহাকে বলে? কত প্রকার, কি কি? চাইনিজ স্টুডেন্টরা প্রতিবছর National College Entrance Examination দেবার সময় সেটা দেখিয়ে দেয় :P

এই বছর ২৪৪০ জন পরীক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়েছে। কিন্তু তাদের নকল করার gadgets গুলো চীনের গোয়েন্দা বাহিনীকেও অবাক করে দিতে বাধ্য । যেমন নিচের ছবি’তে যেগুলো দেখছেন, এগুলো wireless hidden earpiece

কানের ভেতর দিলে বাইরে থেকে কেউ বুঝতেও পারবে না।



প্রায় চল্লিশজন বহিস্কার হয়েছে এই ডিজাইস ব্যবহার করার কারণে। 



এরা পরীক্ষার কেন্দ্রে এসে মোবাইল ঠিকই জমা দেয়। কিন্তু মোবাইল আসলে ভেতরে ভেতরে অন করা থাকে। এবং মোবাইলের সাথে কানের এই ইয়ারপিসের যোগাযোগ থাকে।

 

এই ছবি’তে দেখতেছেন শার্টের নিচে গেঞ্জির ভেতরে লুকানো স্পেশাল ডিভাইস।

It includes a wireless hidden earpiece, copper antenna to beam images, batteries to power the system, and a cheap mobile connected to the earpiece to get answers back.



একশো জনের বেশি বহিস্কার হয়েছে এই কারণে।

 

বাইরের থাকা নকলে সাহায্যকারী ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ ভালো মত মেইন্টেইন করার জন্য স্পেশাল ড্রোনও বানিয়ে এনেছে তারা। :P



 

নিচের ছবি'তে দেখছেন, পরীক্ষা কেন্দ্রর বাইরে থাকা  নিরাপত্তাকর্মী। নকল বন্ধ করতে তিনি রেডিও সিগন্যাল আছে কিনা চেক করতেছেন। হা হা হা ...





 

এই ছবি’তে দেখতেছেন লিখার কলমের ভেতর লুকানো স্পেশাল ক্যামেরা।

প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে পাঠিয়ে দেবে বাইরের সাহায্যকারীকে।



 

এই পুলিশ অফিসারের কাছে যে চশমাটা দেখতেছেন, তার ভেতরে ইঞ্জিনিয়ারিং করে একটা হিডেন ক্যামেরা বসিয়েছিলো এই ছাত্র। আর যে পয়সাটা দেখতেছেন, সেটা একটা রিসিভার।



 

এটাও নকল করার কলম। যাতে ক্যামেরা আছে। আবার ইরেজারের মত দেখতে রিসিভারও আছে।


 


 

এটা আরো একটা ড্রোন। নকল করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।


 


পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে পুলিশ নকল সরবরাহকারীদের কাছ থেকে কিছু যন্ত্রপাতি  সিজ করেছে :P


 


 

এই ঘড়ি দিয়ে যেমন ছবি তুলে বাইরে পাঠানো যায়, আবার বাইরে থেকে এতে উত্তর পাওয়া যায়।



 

এটা আরো একটা ডিভাইস। একধরনের কালি দিয়ে হাতে নকল লিখে আনে। সাথে যে কলম এনেছে, তার সাথে আলট্রাভায়োলেট লাইট আছে। এই লাইট মারলে হাতে লিখা নকল ভিজিবল হয়ে ওঠে।




মেয়েদের জন্য নকল করা কিছুটা হলেও ইজি। :P



১৩৫ কোটি মানুষের দেশে কলেজে ভর্তি পরীক্ষার জন্য একটাই পরীক্ষা হয়। বিশাল আয়োজন থাকে।



 

পরীক্ষার হলে রীতিমত চেক করে করেই পরীক্ষার্থী ঢোকানো হয়। কিন্তু তারা অনেক স্মার্ট। নকল ঠিকই আনে যার আনার ইচ্ছা থাকে।



 

ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিলে মা বাবা পরীক্ষার হলের বাইরে নানান ধর্মীয় আচার শুরু করে। বাচ্চার পরীক্ষা যাতে ভালো হয়, সেই জন্য।



 

পরীক্ষার হলে অস্ত্রধারী পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে সবসময়।



 

কিন্তু নকল কি আর থেমে থাকে ? 

 


চীন থেকে প্রতিবছর প্রচুর ব্রেন ড্রেইন হয়। মার্কিন মুল্লুকের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চাইনিজের পরিমাণ দিনদিন বাড়তেছে।

 



নকল করে যারা বহিস্কার হয়েছে, তারা কাজটি অন্যায় করলেও একটা কথা ঠিক। তাদের ট্যালেন্টের অভাব নেই। :P  হা হা হা ...

Read More »