প্রেম করে প্রতারিত হওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়। যুগ যুগ ধরে বহু মানুষ প্রেম করে প্রতারিত হয়ে কেউ নিঃস্ব হয়েছে, কেউ খুন হয়েছে, কেউ জেলে ঢুকেছে, কত কি হয়েছে।
তবে ছবির বাম পাশের এই ফরাসি ভদ্রলোক সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রেম ঘটিত প্রতারণার শিকার।
উনি ছিলেন একজন ফরাসি ডিপ্লোমেট। নাম Bernard Boursicot
তো ফরাসিরা যৌনতার ব্যাপারে একটু বেশি খোলামেলা। যারা ফরাসি মুভি সিরিয়াল দেখেছেন, তারা হয়ত বুঝতে পারবেন।
আমেরিকান মুভিতে ভায়োলেন্স অর্থাৎ যুদ্ধ হানাহানি, মারামারি গোলাগুলি, এসব খুব সহজভাবেই দেখানো হয়। অন্যদিকে যৌনতার দ্রশ্যগুলো 2x লেভেলে সীমাবদ্ধ থাকে। অর্থাৎ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনি নারীর বক্ষ দেখতে পাবেন। কিন্তু পুরুষের লিঙ্গ প্রদর্শন হয়না।
অন্যদিকে ফরাসি মুভি সিরিয়ালে যৌনতাকে খোলামেলা, অর্থাৎ 3x লেভেলেই প্রদর্শন করা হয়। সবই দেখানো হয়। অন্যদিকে যুদ্ধ হানাহানি, গোলাগুলি, এসব কম দেখানো হয়। অর্থাৎ ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। এই বিষয়টা নিয়ে ইভা গ্রিনের একটা সাক্ষাৎকার আছে, যেটা কমেন্টে দিচ্ছি।
তো মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। ভদ্রলোকের জন্ম ১৯৪৪ সালে। ভদ্রলোক স্কুলে পড়া অবস্থায় স্কুলের বন্ধুবান্ধবের সাথে সমকামীতার দিকে ঝুঁকে পড়েন। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত নিলেন, কোনো নারীর সাথে সম্পর্ক করবেন। সংসার করবেন। প্রেম করবেন। বাচ্চা জন্ম দিবেন। ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ।
১৯৬৪ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে ফরাসি ডিপ্লোমেট হিসেবে কাজ পেলেন চীনের ফ্রেন্স দুতাবাসে।
সেটা ছিল চীনের মাটিতে কোরিয়ান যুদ্ধের পর প্রথম কোনো পশ্চিমা দেশের দুতাবাস। মনে রাখবেন, সালটা ১৯৬৪
তখন কমিউনিস্ট চীন ছিল পশ্চিমাদের জন্য প্রায় নিষিদ্ধ একটি দেশ। তখন তো আর ইন্টারনেট, মোবাইল, এসব ছিল না। পশ্চিমাদের কাছে চীন অনেকটাই রহস্যময়।
তো চীনে গিয়ে এক সুন্দরী ওপেরা গায়িকার প্রেমে পড়ে গেলেন এই ভদ্রলোক।
গায়িকার নাম Shi Pei Pu, বয়স ২৬ বছর।
শুরু হল তুমুল প্রেম।
গভীর প্রেম।
দ্রুতই সম্পর্ক গড়ালো যৌনতার দিকে।
বিয়ে করলেন না। সম্পর্কটা গোপনে চালিয়ে গেলেন। কাজের ফাকে যখনই সময় পেতেন, ছুটে যেতেন পিউ'এর বাড়িতে।
কিন্তু কিছুদিনের ভেতরই এই গোপন সম্পর্কের ব্যাপারে চাইনিজ গোয়েন্দাবাহিনী জেনে গেল। তারা ফরাসি ভদ্রলোক'টিকে ইমোশন্যালি ব্ল্যাকমেইল করলো। বললো, তুমি আমাদের দেশের ওই মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবা না। আমরা ওই মেয়েকে মেরে ফেলবো। কারণ সে ভিন্ন জাতির সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে অন্যায় করেছে। তবে হা, যদি সম্পর্ক রাখতেই চাও, আর মেয়েটির ভালো চাও, তাহলে আমাদের কিছু গোপন নথিপত্র ফরাসি এম্ব্যাসি থেকে চুরি করে দিতে থাকো। তাহলে আর কোনো ঝামেলা হবে না। যা ইচ্ছা করতে থাকো। নো প্রবলেম।
তো প্রেমিক ভদ্রলোক এবার প্রেম ও প্রেমিকা, দুটোর জন্যেই নিজ দেশের সাথে গাদ্দারি করতে শুরু করলেন। কিন্তু আসল কাহিনী হল, তার প্রেমিকা মোটেও ইনোসেন্ট নয়।
সি পেই পিউ আসলে চাইনিজ স্পাই।
চাইনিজ গোয়েন্দাবাহিনীর হয়ে কাজ করে। পেতেছে classic honey-trap
যা হবার সেটাই হল। পরবর্তী প্রায় ২০ বছর প্রেমের সম্পর্ক চলতে থাকলো। আর প্রায় ৫০০ গোপনীয় ডকুমেন্ট চাইনিজ গোয়েন্দাবাহিনীর কাছে হাতবদল হয়ে গেল।
ডিপ্লোমেট হিসেবে কাজ করার কারণে মাঝে বেশকিছুদিন ফরাসি ভদ্রলোক চীনের বাইরে ছিলেন। পরে চীনে ফিরে যখন পিউ'এর সাথে দেখা হল, পিউ একটা বাচ্চা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এটা তোমার সন্তান। :P
ভদ্রলোক তো মহা খুশি।
তো ১৯৮২ সালে ভদ্রলোক তার প্রেমিকা ও সন্তান নিয়ে ফ্রান্সে চলে এলেন।
বহু কষ্টে প্রেমিকার ফরাসি ভিসা ম্যানেজ করেছিলেন।
সমস্যা হল,
বেশকিছুদিন ধরেই ফরাসি গোয়েন্দাবাহিনী ভদ্রলোকের কাজকর্মের দিকে নজর রাখছিলেন। সেহেতু ফ্রান্সের মাটিতে নামার কিছুদিন পরই ভদ্রলোক এবং তার প্রেমিকা পিউ গ্রেফতার হল।
প্রায় বিশটি বছর প্রেম করার পর ভদ্রলোক জানতে পারলেন তার জীবনের করুণ পরিনতির বিষয়টি।
তিনি প্রতারিত হয়েছেন :P
পিউ আসলে চাইনিজ স্পাই।
এবং আরো দুঃখের ব্যাপার হল, পিউ আসলে নারী নয়, পুরুষ :P সুস্থ স্বাভাবিক একজন পুরুষ।
যার অসাধারণ ক্ষমতা আছে to retract his own testicles, which, combined with the manipulation of his own penis, created the illusion of labial lips and a clitoris and allowed for shallow penetration.
হায়রে দুনিয়া। :(
বিশ বছর প্রেম করে, তথাকথিত বাচ্চা পয়দা করে, প্রেমিক জানতে পারলো প্রেমিকা আসলে নারী নয়। নারী ছদ্মবেশি পুরুষ।
আমি জানি, এবার আপনাদের মাথায় নানান চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কিভাবে সম্ভব !!
:v যাই হোক, চিন্তাভাবনা করতে থাকুন :v
মাথায় যা আসে, ভেবে নিন :P
M.Butterfly নামে একটু মুভি আছে। ওটা দেখতে পারেন। যদিও পুরোপুরি ব্যাপারটা দেখানো হয়নি।
Kang Sheng ছিলেন Shi Pei Pu এর কনট্রোলিং ইন্টেলিজেন্স অফিসার। তার লিখা বই the Chinese Secret Service এ Shi Pei Pu এর ক্যারিয়ার কভার করা হয়েছে।
তো ফরাসি ভদ্রলোক এবং সি পেই পিউ এর জেল হয়।
কিন্তু সেইসময় পশ্চিমাদের সাথে চীনের সম্পর্ক ভালোর দিকে যেতে শুরু করেছে।
তো ফরাসি প্রেসিডেন্ট দুজনকে সাধারণ ক্ষমা প্রদান করেন। পিউ মুক্ত হয়ে চীনে ফিরে যান।
পরে মাঝেমাঝেই তিনি ফ্রান্সে আসতেন। তার পালিত সন্তানের খোজখবর নিতে।
২০০৯ সালে ফ্রান্সে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
ওদিকে ফরাসি সেই ভদ্রলোক Bernard Boursicot এই পোস্ট লিখা পর্যন্ত এখনো বেঁচে আছেন।
নিচের ছবি'তে ডান পাশের ভদ্রলোকটি ছিল সেই shi Pe Peu
নিচের ছবিতে অবশ্য ছদ্মবেশে নয়, বরং পুরুষের পোষাকেই আদালতে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।
হায়রে প্রেম।
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.