Monday, September 16, 2019

প্রেমের নাম বেদনা- -- স্পাই ভার্সন




প্রেম করে প্রতারিত হওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়। যুগ যুগ ধরে বহু মানুষ প্রেম করে প্রতারিত হয়ে কেউ নিঃস্ব হয়েছে, কেউ খুন হয়েছে, কেউ জেলে ঢুকেছে, কত কি হয়েছে।

তবে ছবির বাম পাশের এই ফরাসি ভদ্রলোক সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রেম ঘটিত প্রতারণার শিকার।
উনি ছিলেন একজন ফরাসি ডিপ্লোমেট। নাম Bernard Boursicot


তো ফরাসিরা যৌনতার ব্যাপারে একটু বেশি খোলামেলা। যারা ফরাসি মুভি সিরিয়াল দেখেছেন, তারা হয়ত বুঝতে পারবেন।
আমেরিকান মুভিতে ভায়োলেন্স অর্থাৎ যুদ্ধ হানাহানি, মারামারি গোলাগুলি, এসব খুব সহজভাবেই দেখানো হয়। অন্যদিকে যৌনতার দ্রশ্যগুলো 2x লেভেলে সীমাবদ্ধ থাকে। অর্থাৎ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনি নারীর বক্ষ দেখতে পাবেন। কিন্তু পুরুষের লিঙ্গ প্রদর্শন হয়না।
অন্যদিকে ফরাসি মুভি সিরিয়ালে যৌনতাকে খোলামেলা, অর্থাৎ 3x লেভেলেই প্রদর্শন করা হয়। সবই দেখানো হয়। অন্যদিকে যুদ্ধ হানাহানি, গোলাগুলি, এসব কম দেখানো হয়। অর্থাৎ ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। এই বিষয়টা নিয়ে ইভা গ্রিনের একটা সাক্ষাৎকার আছে, যেটা কমেন্টে দিচ্ছি।

তো মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। ভদ্রলোকের জন্ম ১৯৪৪ সালে। ভদ্রলোক স্কুলে পড়া অবস্থায় স্কুলের বন্ধুবান্ধবের সাথে সমকামীতার দিকে ঝুঁকে পড়েন। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত নিলেন, কোনো নারীর সাথে সম্পর্ক করবেন। সংসার করবেন। প্রেম করবেন। বাচ্চা জন্ম দিবেন। ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ।

১৯৬৪ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে ফরাসি ডিপ্লোমেট হিসেবে কাজ পেলেন চীনের ফ্রেন্স দুতাবাসে।
সেটা ছিল চীনের মাটিতে কোরিয়ান যুদ্ধের পর প্রথম কোনো পশ্চিমা দেশের দুতাবাস। মনে রাখবেন, সালটা ১৯৬৪
তখন কমিউনিস্ট চীন ছিল পশ্চিমাদের জন্য প্রায় নিষিদ্ধ একটি দেশ। তখন তো আর ইন্টারনেট, মোবাইল, এসব ছিল না। পশ্চিমাদের কাছে চীন অনেকটাই রহস্যময়।

তো চীনে গিয়ে এক সুন্দরী ওপেরা গায়িকার প্রেমে পড়ে গেলেন এই ভদ্রলোক।
গায়িকার নাম Shi Pei Pu, বয়স ২৬ বছর।
শুরু হল তুমুল প্রেম।
গভীর প্রেম।
দ্রুতই সম্পর্ক গড়ালো যৌনতার দিকে।
বিয়ে করলেন না। সম্পর্কটা গোপনে চালিয়ে গেলেন। কাজের ফাকে যখনই সময় পেতেন, ছুটে যেতেন পিউ'এর বাড়িতে।

কিন্তু কিছুদিনের ভেতরই এই গোপন সম্পর্কের ব্যাপারে চাইনিজ গোয়েন্দাবাহিনী জেনে গেল। তারা ফরাসি ভদ্রলোক'টিকে ইমোশন্যালি ব্ল্যাকমেইল করলো। বললো, তুমি আমাদের দেশের ওই মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবা না। আমরা ওই মেয়েকে মেরে ফেলবো। কারণ সে ভিন্ন জাতির সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে অন্যায় করেছে। তবে হা, যদি সম্পর্ক রাখতেই চাও, আর মেয়েটির ভালো চাও, তাহলে আমাদের কিছু গোপন নথিপত্র ফরাসি এম্ব্যাসি থেকে চুরি করে দিতে থাকো। তাহলে আর কোনো ঝামেলা হবে না। যা ইচ্ছা করতে থাকো। নো প্রবলেম।

তো প্রেমিক ভদ্রলোক এবার প্রেম ও প্রেমিকা, দুটোর জন্যেই নিজ দেশের সাথে গাদ্দারি করতে শুরু করলেন। কিন্তু আসল কাহিনী হল, তার প্রেমিকা মোটেও ইনোসেন্ট নয়।
সি পেই পিউ আসলে চাইনিজ স্পাই।
চাইনিজ গোয়েন্দাবাহিনীর হয়ে কাজ করে। পেতেছে classic honey-trap
যা হবার সেটাই হল। পরবর্তী প্রায় ২০ বছর প্রেমের সম্পর্ক চলতে থাকলো। আর প্রায় ৫০০ গোপনীয় ডকুমেন্ট চাইনিজ গোয়েন্দাবাহিনীর কাছে হাতবদল হয়ে গেল।

ডিপ্লোমেট হিসেবে কাজ করার কারণে মাঝে বেশকিছুদিন ফরাসি ভদ্রলোক চীনের বাইরে ছিলেন। পরে চীনে ফিরে যখন পিউ'এর সাথে দেখা হল, পিউ একটা বাচ্চা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এটা তোমার সন্তান। :P
ভদ্রলোক তো মহা খুশি।

তো ১৯৮২ সালে ভদ্রলোক তার প্রেমিকা ও সন্তান নিয়ে ফ্রান্সে চলে এলেন।
বহু কষ্টে প্রেমিকার ফরাসি ভিসা ম্যানেজ করেছিলেন।
সমস্যা হল,
বেশকিছুদিন ধরেই ফরাসি গোয়েন্দাবাহিনী ভদ্রলোকের কাজকর্মের দিকে নজর রাখছিলেন। সেহেতু ফ্রান্সের মাটিতে নামার কিছুদিন পরই ভদ্রলোক এবং তার প্রেমিকা পিউ গ্রেফতার হল।

প্রায় বিশটি বছর প্রেম করার পর ভদ্রলোক জানতে পারলেন তার জীবনের করুণ পরিনতির বিষয়টি।
তিনি প্রতারিত হয়েছেন :P
পিউ আসলে চাইনিজ স্পাই।
এবং আরো দুঃখের ব্যাপার হল, পিউ আসলে নারী নয়, পুরুষ :P সুস্থ স্বাভাবিক একজন পুরুষ।
যার অসাধারণ ক্ষমতা আছে to retract his own testicles, which, combined with the manipulation of his own penis, created the illusion of labial lips and a clitoris and allowed for shallow penetration.

হায়রে দুনিয়া। :(
বিশ বছর প্রেম করে, তথাকথিত বাচ্চা পয়দা করে, প্রেমিক জানতে পারলো প্রেমিকা আসলে নারী নয়। নারী ছদ্মবেশি পুরুষ।

আমি জানি, এবার আপনাদের মাথায় নানান চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কিভাবে সম্ভব !!
:v যাই হোক, চিন্তাভাবনা করতে থাকুন :v
মাথায় যা আসে, ভেবে নিন :P
M.Butterfly নামে একটু মুভি আছে। ওটা দেখতে পারেন। যদিও পুরোপুরি ব্যাপারটা দেখানো হয়নি।
Kang Sheng ছিলেন Shi Pei Pu এর কনট্রোলিং ইন্টেলিজেন্স অফিসার। তার লিখা বই the Chinese Secret Service এ Shi Pei Pu এর ক্যারিয়ার কভার করা হয়েছে।

তো ফরাসি ভদ্রলোক এবং সি পেই পিউ এর জেল হয়।
কিন্তু সেইসময় পশ্চিমাদের সাথে চীনের সম্পর্ক ভালোর দিকে যেতে শুরু করেছে।
তো ফরাসি প্রেসিডেন্ট দুজনকে সাধারণ ক্ষমা প্রদান করেন। পিউ মুক্ত হয়ে চীনে ফিরে যান।
পরে মাঝেমাঝেই তিনি ফ্রান্সে আসতেন। তার পালিত সন্তানের খোজখবর নিতে।
২০০৯ সালে ফ্রান্সে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

ওদিকে ফরাসি সেই ভদ্রলোক Bernard Boursicot এই পোস্ট লিখা পর্যন্ত এখনো বেঁচে আছেন।

নিচের ছবি'তে ডান পাশের ভদ্রলোকটি ছিল সেই shi Pe Peu
নিচের ছবিতে অবশ্য ছদ্মবেশে নয়, বরং পুরুষের পোষাকেই আদালতে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।

হায়রে প্রেম।
Read More »

অজিত দোভাল, The Indian James Bond


অজিত দোভাল'কে বলা হয় ইন্ডিয়ান জেমস বন্ড


বাস্তবে অজিত দোভালের ক্যারিয়ার জেমস বন্ডের চেয়েও ইন্টারেস্টিং।
১৯৭১ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সবমিলিয়ে ১৭ বার ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সে হাইজ্যাকিং'এর ঘটনা ঘটেছে। এবং প্রতিবারই এই অজিত দোভাল টেরোরিস্টদের সাথে নেগোসিয়েশন করেছেন। এবং সফলভাবে।

সুতরাং বুঝতেই পারতেছেন, মুখ চালু লোক। এবং মানুষকে কনভিন্স করার অসাধারণ ক্ষমতা আছে উনার।

ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসে ক্যারিয়ার শুরু। এরপর সেখান থেকে ইন্ডিয়ান ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর আন্ডারকভার এজেন্ট।
রীতিমত স্পাই।
ভারতের মিজোরামে চলছিল তখন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। অজিত দোভাল ঢুকে পড়েন Mizo National Front এর ভেতর। তাদের সাথে মিশে চীনে এবং মিয়ানমারের মাটিতে লুকিয়ে থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাটিতে থেকেছেন। মিশে গিয়েছিলেন তাদের টপ লিডারদের সাথে। এরপর Mizo National Front (MNF) এর সাতজন কমান্ডারদের ভেতর ছয়জনকে তিনি কনভিন্স করাতে সক্ষম হয়েছিলেন ভারতীয় সরকারের সাথে শান্তি আলোচনায় যেতে।
এবং তাহারা কেউই বুঝতে পারেনি, দোভাল মুলত ভারত সরকারেরই স্পাই।
তাহলে বুঝে দেখুন, কনভিন্স করার ক্ষমতা তার কি অসাধারণ !!
দোভাল না হলে মিজোরাম ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রনে বাইরে চলে যেতো হয়ত।

এবং ঠিক একই কাজ তিনি করেছেন সিকিমে।
সিকিমকে ভারতের সাথে জুড়ে নেবার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করেছিলো অজিত দোভাল।
এবং সেখানেই আন্ডারকাভার স্পাই হিসেবে ঢুকে গিয়েছিলো সিকিম সরকারের উচ্চমহলে। এরপর যথারীতি তার কনভিন্সিং ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে কার্যউদ্ধার করে ছেড়েছিলেন।
সিকিম আজ ভারতের অংশ।

অজিত দোভাল এরপর চলে যান পাকিস্তানে। কোরান মুখস্ত তার। পাকিস্তানে সাত বছর আন্ডারকাভার স্পাই হিসেবে থেকেছেন তিনি। এবং সেখানে মুসলিম হিসেবে থেকেছেন। রেগুলার মসজিদে যেতেন। নামাজ পড়তেন। পাকিস্তানিদের সাথে একেবারে মিশে গিয়েছিলেন।

ভারতের গোল্ডেন টেম্পেলে Sikhs ইন্সার্জেন্সি শুরু হলে দোভাল পাকিস্তানি গোয়েন্দাবাহিনীর স্পাই ছদ্মবেশ নিয়ে ঢুকে পড়েন গোল্ডেন টেম্পেলে। :P
সেখানে Sikhs বিদ্রোহীদের গিয়ে বলেছিলেন, ভারত সরকারের বিরুদ্ধে আপনাদের সংগ্রামে পাকিস্তান আপনাদের পাশে থাকবে। হেল্প করার জন্য আমাকে পাঠিয়েছে। :P অর্থাৎ তিনি আইএসআই এজেন্টের ছদ্মবেশে Sikh বিদ্রোহীদের সাথে মিশে গেলেন। এরপর তাদের কাছ থেকে ক্রিটিক্যাল সব তথ্য নিয়ে ইন্ডিয়ান ইন্টেলিজেন্সকে জানাতে শুরু করলেন। তার তথ্যের উপর ভিক্তি করে ভারতীয় সেনারা গোল্ডেন টেম্পলে Operation Black Thunder পরিচালনা করে।
In 1988, Doval was granted one of the highest gallantry awards, the Kirti Chakra, becoming the first police officer to receive a medal previously given only as a military honour.

দোভাল ইন্ডিয়ান ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর অপারেশন উইংএর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রায় একযুগেরও বেশি সময়।
এবং পরে Multi Agency Centre (MAC), এবং Joint Task Force on Intelligence (JTFI) এর চেয়ারম্যানও ছিলেন।

অজিত দোভাল জম্মু কাশ্মিরের একজন প্রাক্তন MLA, Mohammad Yusuf Parray কে দিয়ে Counter insurgency pro-India militant outfit, Ikhwan-ul-Muslemoon সংগঠন খুলে ফেলেন ১৯৯৬ সালে। এদের দিয়ে pro-Pakistani militants দের কাউন্টার দিতে শুরু করেন।
অর্থাৎ কাটা দিয়ে কাটা তোলা।
তখন দোভাল ছিলেন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর অপারেশন উইংএর চিফ।

২০০৫ সালে অজিত দোভাল অবসর নিয়েছিলেন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর চিফ হিসেবে।
এরপর কিছুদিন অবসর কাটানোর পর রাজনীতিতে আসেন।
২০১৪ সাল থেকে মোদী সরকারের national Security advisor হিসেবে দায়িত্বপালন শুরু করেন।
২০১৪ সালে সিরিয়াতে আইসিসের হাতে আটক ৪৬ জন ভারতীয় নার্সের মুক্তির জন্য Hostage negotiation এই অজিত দোভালই করেছিলেন এবং তিনি নার্সদের মুক্ত করতে সক্ষম হন।

অজিত দোভাল ভারতীয় ফরেন পলিসি'তে বেশকিছু পরিবর্তন ইতিমধ্যেই এনেছেন। ভারত সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী নীতিনির্ধারক এখন অজিত দোভাল।

Read More »