এই লোক ছিলেন হিটলারের পছন্দের হিটম্যান এবং নাৎসি জার্মানির সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব Knight's Cross of the Iron Cross পাওয়া অফিসার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বেশকিছু দূর্ধর্ষ অভিযানে অংশ নেয়া এই Waffen-SS হিটম্যান ঠিক কিভাবে জীবনের শেষভাগে এসে ইসরাইলের স্পাই এজেন্সি মোসাদের পেইড এস্যাসিন হয়ে গেল,
অর্থাৎ ১৮০ ডিগ্রি রুপান্তরের সেই কাহিনী এবার বলবো।
সংক্ষেপে তার জীবন কাহিনী আগে বলি। রীতিমত উপন্যাস...
জন্ম হিটলারের মতই অস্ট্রিয়াতে। ১৯০৮ সালে।
পূর্ব পুরুষ ছিল পোলিশ। একারণে নামেও পোলিশ ছাপ।
মিলিটারি পরিবারেই জন্ম।
জার্মান ছাড়াও ফ্লুয়েন্ট ফ্রেন্স এবং ইংলিশ বলতে পারতেন।
১৯৩১ সালে তেইশ বছর বয়সে যোগ দিয়েছিলেন অস্ট্রিয়ার নাৎসি পার্টিতে। তখন জার্মানিতেও নাৎসিরা শক্তিশালি হয়ে উঠেছে। দুই বছর পর, ১৯৩৩ সালে জার্মানিতে নাৎসিরা ক্ষমতায় চলে আসে। ফলাফল, পাশের দেশ অস্ট্রিয়াতেও জাত ভাই অস্ট্রিয়ান নাৎসিরা ক্ষমতাবান হয়ে ওঠে। ১৯৩৮ সালে হিটলার অস্ট্রিয়া আর জার্মানিকে একীভূত করে।
অটো স্কোর্জেনি তখন জার্মানির বিমান বাহিনীতে যোগ দেবার চেষ্টা করেন।
কিন্তু তার উচ্চতা ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি।
এতো বিশাল শরীর, তার উপর বয়স হয়ে গিয়েছে ত্রিশের বেশি। এজন্য বিমান বাহিনী থেকে তাকে রিফিউজ করা হয়। নিয়োগ দেয়া হয় হিটলারের পার্সোন্যাল বডিগার্ডের SS ডিভিশনে। 1st SS Panzer Division Leibstandarte SS Adolf Hitler
যা অনেকটা আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল সিক্রেট সার্ভিস বা আমাদের বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টসিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট বা পিজিআরের মত ডিভিশন। ব্যাপারটা অটো স্কোর্জেনির জন্য ছিল অনেক বড় সম্মানের।
আফটার অল, হিটলারের কাছের লোক হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয় তার এসময়ে।
১৯৪০ সালের জুলাই মাস। স্তালিনের সোভিয়েত ইউনিয়নে আক্রমন চালান হিটলার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নাটকীয় মোড় নেয়। জার্মান ওয়ারমেশিন হামলে পড়ে বিশাল সোভিয়েত ইউনিয়নের ভুমিতে।
হিটলারের সবচেয়ে কুখ্যাত ফোর্স ছিল Schutzstaffel বা SS
খোদ হেনরিক হিমলার ছিল এটার দায়িত্বে।
নাৎসি জার্মানির সবচেয়ে পাওয়ারফুল এই ফোর্সই ইহুদী গনহত্যা চালানোর ক্ষেত্রে মূখ্য ভুমিকা পালন করে। Architect of the Final Solution, হেনরিক হিমলার ছিলেন এর প্রধান। এডল্ট আইকম্যানও ছিলেন SS কর্মকর্তা।
ইহুদী গনহত্যার জন্য যেসব বিশাল বিশাল কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প ছিল ইউরোপ জুড়ে, এগুলো পরিচালনা করতো SS।
SS নামটি ছিল এক আতঙ্ক।
অনেকেই Gestapo বাহিনীর নাম শুনেছেন, এই গেস্টেপো ছিল SS এর সাবডিভিশন। এটা ছিল কেজিবি বা সিআইএ টাইপের গোয়েন্দা এজেন্সি।
আবার এই SS এর আরেকটা সাবডিভিশন ছিল, যার নাম Waffen-SS, দূর্ধর্ষ স্পেশ্যাল ফোর্স। এটা অনেকটা হালআমলের মার্কিন ডেলটা ফোর্স বা রাশিয়ান আর্মির স্পেৎনাজের সমতূল্য।
অটো স্কোর্জেনি যোগ দিলেন Waffen-SS ডিভিশনে। ইস্টার্ন ফ্রন্ট, অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে যুদ্ধে মাঠে নামলেন। প্রায় দুই বছর ইস্টার্ন ফ্রন্টে যুদ্ধ করলেন তিনি। ১৯৪২ সালে মস্কো'র খুব নিকটে পৌচ্ছে গিয়েছিল নাৎসি বাহিনী। মস্কো দখলের সুযোগ তখন হাতছানি দিচ্ছে। জার্মানরা মস্কো দখলের ছকও কষে ফেলেছে। মস্কো দখলের পর কি কি করতে হবে, কোন ডিভিশনের কি কাজ, এসব ছক কষা শুরু হয়েছে।
October 1941 and January 1942 পর্যন্ত চলেছিল Battle of Moscow, যাতে ফলাফল ছিলStrategic Soviet victory due to German operational and tactical failure.
অটো স্কোর্জেনির মস্কো দখলের স্বপ্ন পূরণ হল না। ১৯৪২ সালে সোভিয়েত গোলার আঘাতে আহত হলেন তিনি। ফিরে এলেন বার্লিনে। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হলেন। যুদ্ধের পারফর্মেন্সের জন্য হিটলার তাকে আইরন ক্রস সম্মাননা দিলেন।
এরপর তাকে নিযুক্ত করা হল Reich Main Security Office, RHSA ডিভিশনে।
এটাও SS এর আরেকটা সাবডিভিশন। কাজ হল কোর্ভার্ট অপারেশন। স্যাবোটাজ, সাবভার্সন ও স্পেশ্যাল ব্ল্যাক অপস অপারেশন।
তাকে পাঠানো হল ইরানে। স্পেশ্যাল মিশনে। নাম Operation François
মিশন হল, ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ইরানে গেরিলা তৎপরতা চালানো।
ইরানের সমুদ্র বন্দর এবং ইরানের ভেতর দিয়ে যাওয়া Trans-Iranian Railway ব্যবহার করে ব্রিটিশ ও আমেরিকানরা সোভিয়েত ইউনিয়নে রসদ পাঠাচ্ছিলো। অটো স্কোর্জেনির মিশন ছিল এই রেল লাইন ও রসদের সাপ্লাইরুট ধ্বংস করা। অটো স্কোর্জেনি ইরানের স্থানীয় রেবলদের টাকা পয়সা দিয়ে, অস্ত্রসস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্রিটিশ ও আমেরিকানদের বিরুদ্ধে অপারেশনে পাঠাতে শুরু করলেন।
মিত্র বাহিনীর কাছেও ইতিমধ্যে অটো স্কোর্জেনির নাম বেশ পরিচিত। মিত্র বাহিনীর গোয়েন্দারাও স্কোর্জেনির কর্মকান্ড এবং তৎপরতার উপর নজরদারি শুরু করেছিল। অটো স্কোর্জেনি তখন নিজেও মিত্র বাহিনীর হিটলিস্টে।
এদিকে ১৯৪৩ সালের জুলাই মাসের ঘটনা।
ইতালি তখন হারতে বসেছে। মিত্র বাহিনী সিসিলি দখলে নিয়েছে। ইতালির রোমে তীব্র বোমাবর্ষন করেছে মিত্র বাহিনীর বোমারু বিমান।
যখন মুসলিনি যুদ্ধে জিতছিলেন, তখন তার সমর্থক ও ভক্তের অভাব ছিল না। কিন্তু এবার যখন হারতে বসেছেন, তখন তার বিরোধিতাকারীর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করলো।
ফলাফল, মুসলিনির রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদী দলের ফ্যাসিস্ট কাউন্সিল তার বিরুদ্ধে পলিটিক্যাল ক্যু করলো। ইতালির রাজার নির্দেশে মুসলিনিকে বন্দী করা হল এবং তার জায়গায় Marshal Pietro Badoglio নামের আর্মির জেনারেলকে দায়িত্ব দেয়া হল।
মুসলিনিকে বন্দী করে রাখা হল Apennine পাহাড়ের উপর Campo Imperatore নামের একটি হোটেলে।
প্রায় ২০০ জন কমান্ডো গার্ড তাকে ঘিরে রাখলো যাতে পালাতে না পারে বা তাকে কেউ উদ্ধার করতে না পারে।
হিটলার এবার মুসলিনিকে উদ্ধার করার দায়িত্ব দিলেন অটো স্কোর্জেনির উপর।
ফলাফল, সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখে এক ডেয়ার ডেভিল উদ্ধার অভিযান চালালেন স্কোর্জেনি।
মাত্র ১৬ জন SS কমান্ডো প্যারাট্রুপার সাথে নিয়ে গ্লাইডারে করে চলে গেলেন এপেনাইন পাহাড়ের উপর সেই হোটেলে। সাথে নিয়ে গেলেন একজন মুসলিনিপন্থি ইতালিয়ান আর্মি কর্মকর্তাকেও।
SS কমান্ডো'দের দেখে ইতালিয়ান গার্ডেরা তেমন কোনো প্রতিরোধই করেনি।
উদ্ধার অভিযান দ্রুতই সম্পন্ন হয়।
মুসলিনিকে উদ্ধার করা হয় এবং নিয়ে যাওয়া হয় জার্মানিতে। সোজা হিটলারের কাছে।
এই ছবিটা সেই উদ্ধার অভিযানের পর তোলা।
ছবিতে বাইনাকুলার গলায় ঝোলানো অটো স্কোর্জেনি এবং সাথে কালো কোর্ট পরা মুসলিনি।
অটো স্কোর্জেনি এই মিশনের সফলতার জন্য হিটলারের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হন। তাকে প্রমোশন দেয়া হয়।
১৯৪৩ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে,
তেহরানে অনুষ্ঠিত হয় মিত্র বাহিনীর তিন পরাশক্তির তিন নেতার কনফারেন্স। যা তেহরান কনফারেন্স হিসেবে পরিচিত। তাতে যোগ দিতে আসবেন রাশিয়ার জোসেফ স্তালিন, আমেরিকার রুজভেল্ট আর ব্রিটেনের চার্চিল।
মিটিং অফ দা বিগ থ্রি।
হিটলার দেখলেন, এটা একটা বিশাল সুযোগ। তিন নেতাকে এক সাথে পাওয়া যাবে। বোমা মেরে উড়িয়ে দিলে সব খতম।
অটো স্কোর্জেনি এবার এই মিশনের দায়িত্ব পেলেন। নাম Operation Long Jump
এই মিশন যদি সফল হয়, তাহলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নাটকীয় মোড় নেবে।
স্কোর্জেনির টিম এই মিশনের জন্য তেহরান কনফারেন্সের সকল সিডিউল, নেতাদের মিটিং'এর সিডিউল, নেতারা কোথায় থাকবেন, কোন পথ দিয়ে চলাচল করবেন, সকল তথ্য কালেক্ট করেছিলেন।
কিন্তু বাপেরও বাপ আছে। অটো স্কোর্জেনি যখন 'তিন নেতা' খুন করার জন্য ছক কষছিলেন, সোভিয়েত গোয়েন্দা বাহিনী NKVD (Predecessor of the Famous KGB) তখন তার উপর কাউন্টার Espionage মিশন চালাচ্ছিলো।
ফলাফল, অটো স্কোর্জেনি'র 'Operation Long Jump' এর সকল ছক আগে থেকেই সোভিয়েতরা জেনে গিয়েছিলো এবং এই মিশন ভেস্তে দিয়েছিল। মিটিং অফ দা বিগ থ্রি বেশ সফলভাবেই সমাপ্ত হয়।
(** Operation Long Jump নিয়ে পরবর্তীতে আমি একটি ডিটেইলস ব্লগ লিখবো। )
সোভিয়েত ইউনিয়নে স্তালিনগ্রাডের যুদ্ধে হার হিটলারের জয়রথের লাগাম টেনে দিয়েছিল। হিটলারের পতনের শুরুও হয় সেখান থেকেই। স্তালিনগ্রাডের পর হিটলারকে আর কখনোই অজেয় মনে হয়নি।
১৯৪৪ সালের দিকে সোভিয়েতরাই আক্রমনে, আর হিটলার তখন কন্টেইনমেন্টে ব্যস্ত।
১৯৪৪ সালের অক্টোবরের দিকে অটো স্কোর্জেনিকে হিটলার পাঠালেন হাংগেরিতে। নতুন অপারেশনে। নাম Operation Panzerfaust
হাংগেরি শুরু থেকেই হিটলারের পক্ষে ছিল। লক্ষাধিক হাংগেরিয়ান সেনা বলকান রিজিওনে এক্সিস পাওয়ারের হয়ে যুদ্ধ করছিল। হিটলারের সাথে ত্রিশের দশক থেকেই হাংগেরির ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। হিটলারের যুদ্ধে হাংগেরি লাভবান হয়েছিলো নানানভাবে। কিন্তু ১৯৪৪ সালের দিকে যখন যুদ্ধের গতিপথ বদলাতে শুরু করে, তখন হাংগেরির শাসক গোপনে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ব্রিটেনের সাথে যোগাযোগ শুরু করে। হিটলার এই বিশ্বাস ঘাতকতার খবর পান। হাংগেরি যদি মিত্র বাহিনীর সাথে যোগ দেয়, তাহলে এক্সিস পাওয়ার প্রায় মিলিয়ন খানেক সেনা হারাবে। এই ভয় হিটলারের ছিল। সুতরাং যে করেই হোক, হাংগেরিকে নিজেদের পক্ষে রাখতে হবে।
ফলাফল, হিটলার সিদ্ধান্ত নেন হ্যাংগেরির শাসক Admiral Miklós Horthy কে সরিয়ে দেবার। এজন্যে পাঠানো হয় অটো স্কোর্জেনি'কে।
অটো স্কোর্জেনির দল গিয়ে Admiral Miklós Horthy এর ছেলেকে কিডন্যাপ করে।
এবার শর্ত হল, নিজের ছেলের জীবন বাঁচাতে চাইলে পদত্যাগ কর।
ফলাফল, Miklós Horthy পদত্যাগ করেন এবং তার জায়গায় Ferenc Szálasi নামের হার্ডকোর ফ্যানাটিক পাপেট বসিয়ে দেয়া হয়। এই লোক ক্ষমতায় বসেই ১০ থেকে ১৫ হাজার ইহুদী খুন করেছিলেন।
এরপর অটো স্কোর্জেনিকে এক ভয়াবহ মিশনে পাঠান হিটলার।
সাল ১৯৪৪ এর শেষের দিকে। শুরু হয়ে গেছে বেলজিয়ামের যুদ্ধ। মার্কিনীদের বিপক্ষে চলছে Battle of the Bulge
এই যুদ্ধ ছিল ঠিক স্তালিনগার্ডের মতই আরো একটি ডিসাইসিভ ওয়ার।
দুই পক্ষেরই লাখের কাছাকাছি সেনা হতাহত হয় এই যুদ্ধে।
স্কোর্জেনি প্রায় দুই ডজনের মত জার্মান সেনা নিয়ে একটা অপারেশনে নামেন। নাম Operation Greif
আগেই বলেছিলাম, স্কোর্জেনি ফ্লুয়েন্ট ইংলিশ বলতে পারতেন। দুই ডজন জার্মান সেনা তিনি কালেক্ট করলেন যারা ভালো ইংলিশ বলতে পারে। এরপর মার্কিন সেনাদের ড্রেস পরে আগে ইতিপূর্বে মার্কিন সেনাদের কাছ থেকে দখল করা গাড়ি নিয়ে করে স্কোর্জেনির দল মার্কিন ডিফেন্স লাইনে প্রবেশ করেন। মার্কিন সেনা সেজে।
উদ্দেশ্য, স্যাবোট্যাজ করা।
কিন্তু এই মিশন বিফলে যায়। স্কোর্জেনি পালিয়ে যেতে সফল হলেও তার হ্যান্ডপিক জার্মান সেনাদের অনেকেই ধরা পড়েছিলেন। Hague Convention of 1907 অনুসারে প্রতিপক্ষের সেনাদের ড্রেস পরার অপরাধ বেশ গুরুত্বর। এরুপ কাজ কেউ করলে তাদের স্পাই হিসেবে ট্রিট করা হবে এবং সোজা ফাঁসি। স্কোর্জেনি এসব জানতেন, এবং জেনেশুনেই এতবড় রিক্স নিয়েছিলেন।
স্কোর্জেনির টিমের আটকে পড়া সদস্যদের ইন্ট্রোগেট করে আমেরিকানরা জানতে পারে, বছরের শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইসেনহাওয়ার যখন ক্রিসমাসে প্যারিস ভ্রমনে আসবেন, তখন তাকে খুন করার একটি প্লট ইতিমধ্যেই স্কোর্জেনি তৈরি করে রেখেছেন।
ফলাফল, গোটা প্যারিস জুড়েই মার্কিনীরা স্কোর্জেনির পোস্টার লাগিয়ে ম্যানহান্ট শুরু করে। অর্থাৎ এই লোক'কে প্যারিসে দ্যাখা মাত্র খবর দেন। ধরিয়ে দিলে পুরস্কার।
যাই হোক, আর তেমন বেশি প্যারা নিতে হয়নি মিত্র বাহিনীর।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কিছুদিন পরই শেষ হয়ে যায়। ১৯৪৫ সালের মে মাসে জার্মানি আত্মসমর্পন করে। স্কোর্জেনি জেলে যান।
দুই বছর জেলে ছিলেন। ১৯৪৭ সালে তার বিচার শুরু হয়।
কিন্তু এবার শুরু হয় স্কোর্জেনির জীবনের নতুন চ্যাপ্টার।
জার্মানির ব্যাভেরিয়াতে বিচার শুরু হয়েছিল স্কোর্জেনির। কিন্তু...
স্কোর্জেনি জেল থেকে পালিয়ে যান !
ঘটনার বর্ণনা অনুসারে,
১৯৪৮ সালের জুলাই মাসে তিনজন সাবেক SS অফিসার মার্কিনীদের মিলিটারি পুলিশের ইউনিফর্ম পরে স্কোর্জেনিকে জেল আসেন।
ছদ্মবেশি এই সাবেক জার্মান কর্মকর্তারা স্কোর্জেনিয়ে নুরেনবার্গে নেবার নাম করে জেল থেকে বের করে নিয়ে যান। ব্যস, এই হল উদ্ধার অভিযান।
এতো সহজ?
না, এখানে টুইস্ট আছে।
ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে স্নায়ু যুদ্ধ। কোল্ড ওয়ার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্র দেশ আমেরিকা আর রাশিয়া এবার শুরু করেছে ক্ষমতার লড়াই।
আর এই লড়াই এর মোক্ষম অস্ত্র হবে গোয়েন্দা বাহিনীগুলো।
জার্মানির অর্ধেক পশ্চিমাদের দখলে। আবার বাকি অর্ধেক রয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নের লৌহ যবনিকায়।
মার্কিন নিয়ন্ত্রিত জার্মানিতে সোভিয়েত গোয়েন্দা কার্যক্রমের কাউন্টার দিতে হবে। এবং সেটা করতে CIA নিযুক্ত করেছে আটক সাবেক জার্মান সেনা অফিসার ও গোয়েন্দা সদস্যদের। আফটার অল, দেশটা তারাই সবচেয়ে ভালো চেনে। জানে। বোঝে। সুতরাং এদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মেরে না ফেলে এদের দিয়েই সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে চালানো হবে গোয়েন্দা কার্য্যক্রম। আর তেমনটি করার জন্য CIA ফান্ডিংএ পশ্চিম জার্মানিতে গড়ে ওঠে একটি গোয়েন্দা বাহিনী তথা ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি। যার নাম Gehlen Organization or Gehlen Org
১৯৪৬ সালে এই এজেন্সি গোপনে গড়ে তুলেছিল আমেরিকা। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার জন্য। Hartmann Lauterbacher (former deputy head of the Hitler Youth) এই এজেন্সির প্রথম দিকের সদস্য ছিলেন। নাৎসি জার্মানির সেনা অফিসারদের দিয়ে শুরু করা হয় এই এজেন্সি। ১৯৪৮ সালে জেল ব্রেকের মাধ্যমে অটো স্কোর্জেনিকে এরাই মুক্ত করে। আসলে আমেরিকার ইশারা ছিল এবং সিআইএ গোটা ব্যাপারই জানতো। তারা বিষয়টি না দেখার ভান করে যায়।
এই জার্মান ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি Gehlen Organization or Gehlen Org পরবর্তীতে নাম পাল্টে হয়ে যায়Bundesnachrichtendienst তথা BND
যা আজও আছে এবং আজ এটি জার্মানির প্রধান ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি এবং দুনিয়ার সেরা ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির একটা।
শুরু হল স্কোর্জেনির নতুন জীবন। তাকে নতুন পাসপোর্ট দেয়া হয়। পাঠিয়ে দেয়া হয় স্পেনে। সেখানে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম খোলা হয় তার নামে। অর্থাৎ একটা নতুন জীবন, নতুন কভার স্টোরি দেয়া হয়।
১৯৫২ সাল।
মিশরে মার্কিন মদদে জেনারেল Mohammed Naguib ক্ষমতায় আসেন।
ওদিকে হিটলারের সময়কার নাৎসি মিলিটারি অফিসার জেনারেল Reinhard Gehlen এতোদিকে চাকরি করেন সিআইএ'র হয়ে। যার কিনা গনহত্যার দায়ে ফাঁসি হবার কথা, তারাই এবার মার্কিনী ও ব্রিটিশদের হয়ে রিক্রুটেড !!
তো এই জেনারেল জেনারেল Reinhard Gehlen একইসাথে সেই নতুন জার্মান গোয়েন্দা বাহিনী Gehlen Org এর হয়েও কাজ করেন। তিনিই অটো স্কোর্জেনির হ্যান্ডেলার।
অটো স্কোর্জেনি'কে মিশরের প্রেসিডেন্টের মিলিটারি এডভাইজার হিসেবে পাঠানো হয়। স্কোর্জেনি মিশরে গিয়ে সাবেক SS অফিসারদের রিক্রুট করে একটা টিম গঠন করেন যা মিশরীয় সেনাদের প্রশিক্ষণ দিতো। ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল, এই টিমে সাবেক নাৎসি জেনারেল Wilhelm Fahrmbacher, Oskar Munzel, Leopold Gleim, Joachim Daemling এর মত অফিসার ছিল।
নামগুলো হয়ত পরিচিত না। কিন্তু একটা একটা করে যদি পরিচয় দেই, তাহলে অবাকই হবেন।
Wilhelm Fahrmbacher এবং Oskar Munzel ছিল হিটলারের আইরন ক্রস পাওয়া সেনা কর্মকর্তা।
Leopold Gleim ছিলে Gestapo বাহিনীর Jewish Affairs in Poland শাখার দায়িত্বে। অর্থাৎ বুঝতেই পারতেছেন সে একজন mass Murderer
Joachim Daemling ছিলেন গেস্টাপোর আরেক কর্মকর্তা এবং শাখা প্রধান।
এই লোকগুলোর যেখানে ফাঁসি হবার কথা, সেখানে এরা বেশ ভালো লাইফ লিড করেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর।
এদেরকে দিয়েই মিশরীয় নেতারা আরব ভলেনটিয়ারদের কমান্ডো ট্রেনিং দিয়েছিলো সুয়েজ ক্যানাল দখলে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল, এসব ট্রেনিং প্রোগ্রামে মিশরের বাইরে থেকে আসা আরব ভলেনটিয়ারেরা অংশ নিতো। আফটার অল, তখন গোটা আরব বিশ্বে প্যান-আরব সেন্টিমেন্ট ছড়িয়ে পড়েছিলো। ইয়াসির আরাফাত এই ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন।
মিশরে পরবর্তীতে গামাল আব্দেল নাসের ক্ষমতায় এলেও অটো স্কোর্জেনি মিলিটারি এডভাইজার হিসেবে দায়িত্ব বহাল ছিলেন। এসময়ে স্পেন এবং আর্জেন্টিনাতেও তাকে পাঠানো হয়েছিলো। আর্জেন্টিনার এন্টি সেমাইট প্রেসিডেন্ট জুয়ান পেরণের এডভাইজার এবং তার স্ত্রী ইভা পেরনের বডিগার্ড হিসেবেও কিছুদিন কাজ করেছিলেন অটো স্কোর্জেনি।
এসময়ে মার্টিন বোর্মান সহ বেশকিছু পলাতক নাৎসি নেতা ল্যাটিন আমেরিকাতে আত্মগোপনে ছিল। আর্জেন্টিনা ছিল পলাতন নাৎসি নেতাদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল। ফোর্থ রাইট তৈরির একটা নতুন প্রচেষ্টাও এসময় চালানো হয়েছিলো এসব পলাতক নাৎসি এবং ল্যাটিন নাৎসি সমর্থকদের তরফে।
সেসব ভিন্ন আলোচনা।
ওদিকে ইতিমধ্যে পৃথিবী বদলে গেছে। নতুন রাষ্ট্র ইসরাইলের উত্থান হয়েছে। ইসরাইলিরা গোটা বিশ্বে পলাতক নাৎসিদের খুঁজে ফিরছে।
১৯৬০ সালে আর্জেন্টিনাতে ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকা হলোকস্টের অন্যতম রুপকার এডলফ আইকম্যানকে মোসাদ কিডন্যাপ করে ইসরাইলে নিয়ে আসে। শো ট্রায়ালে তার বিচার হয় এবং ফাঁসি দেয়া হয়।
পলাতক প্রতিটি নাৎসি নেতার মনে এই মোসাদের প্যারানোয়া সবসময় ছিল।
আমেরিকা বা ব্রিটেনের কাছ থেকে ছাড় পেলেও মোসাদের কাছ থেকে ছাড় পাওয়া এতো সহজ ছিল না অনেকের জন্যেই।
এডলফ আইকম্যানের কিডন্যাপের ঘটনার পর পলাতক নাৎসিদের ভেতর প্যারানোয়া আরো বেড়ে যায়।
এই প্যারানোয়া খোদ অটো স্কোর্জেনির মত বাঘা খেলোয়াড়ের মনেও ছিল।
গামাল আব্দেল নাসের মিশরে ক্ষমতায় আসার পর প্যান আরবিক পলিটিক্স মধ্যপ্রাচ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ওদিকে ইসরাইলের সাথে একবার যুদ্ধও হয়ে যায় ১৯৫৬ সালে। সেই যুদ্ধবিরতি কার্য্যকর হলেও নাসের বুঝে গিয়েছিলেন ইসরাইলের সাথে যুদ্ধে আবার আসন্ন।
নাসের শুরু করেছিলেন মিসাইল পোগ্রাম। Factory 333 নামের একটি ফ্যাসিলিটে মিসাইল পোগ্রাম চালানো হচ্ছিলো।
এর আগে বলে রাখি, Peenemünde Army Research Center নামের এক বিশাল মিলিটারি ফ্যাসিলিটি ১৯৩৭ সালে হিটলার তৈরি করেছিল। সেখানে নাৎসি বাহিনীর জন্য অস্ত্রসস্ত্রের গবেষনা করা হইতো। Wernher von Braun, আজ যাকে আমেরিকা the father of rocket technology and space science বলে সম্মান করে, সেই ভন ব্রাউন ছিলেন হিটলারের অন্যতম সেলিব্রিটি বিজ্ঞানী। তিনি V1 এবং V2 রকেট বানিয়েছিলেন যা দিয়ে লন্ডনে বোমাবাজি করেছিলো হিটলার।
এই ভন ব্রাউনের রকেট ফ্যাক্টরিতে ৭০ হাজার ইহদি রাতদিন জীবনের বিনিময়ে খাটতো। বহু মানুষ মারা গেছে এই ফোর্স লেবরে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর আমেরিকানরা ভালো ভালো অনেক নাৎসি সাইন্টিস্টদের নিয়ে যায়। কাজে লাগায়। হাইজেনবার্গ কাজ করতো হিটলারের নিউক প্রোজেক্টে। ভাগ্য ভালো যে হাইজেনবার্গ সফল হয়নি। ওপেনহাইমারের জায়গায় যদি হাইজেনবার্গ সফল হইতো, তাহলে জার্মানি জিতে যেতো যুদ্ধে। যুদ্ধের পর অনেককিছুই ধুয়ে ফেলা সম্ভব। যেমন হলোকস্টের অন্যতম কুসিলব এডলফ আইকম্যানও ট্রায়ালে দাঁড়িয়ে বলেছিলো, আমি তো এসব খুন খারাবি করতে চাইনি। আমি কেবল একজন সেনা কর্মকর্তা। আমি খালি হিটলারের আদেশ পালন করেছি।
তো এই লজিক দেখানো খুব সহজ।
আজকাল অনেকের কথা শুনলে মনে হয়, হিটলার একাই এসে ভোলাভালা জার্মানদের হ্যামিলিনের বাঁশি বাজিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে অকাম কুকাম করিয়েছে। জার্মানরা বুঝতে পারেনি। অথচ এটা বোঝে না, প্রতিটি নেতা সময় এবং সমাজের প্রতিচ্ছবি। আপনি আজকের বাস্তবতায় হিটলারকে চিন্তা করলে হবে না। জার্মানিদের ভেতর যে ভয়াবহ এন্টি সেমিটিজম ছিল, সেটা অস্বীকার যদি করেন, তাহলে ভুল করবেন। হিটলার সেটাকে এক্সপ্লোয়েট করেছিলো। জার্মানদের ভোটেই সে ক্ষমতায় এসেছিলো। আজ আপনি হাইজেনবার্গের ভক্তি করতেছেন। কিন্তু হাইজেনবার্গ যদি হিটলারের নিউক প্রোজেক্টে সফল হইতো, তাহলে আপনি হাইজেনবার্গকে অনিশ্চয়তা সূত্রের জন্য নয়, বরং মনে রাখতেন পারমানবিক বোমা আবিষ্কারের জন্য। হাইজেনবার্গ যেমন অতীতের ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে পেরেছিলেন, ভন ব্রাউনও পেরেছিলো। অন্যতম সেলিব্রিটি নাৎসি বিজ্ঞানী বা V1-2 রকেটের জনক নয়, মানুষ বরং তাকে মনে রাখে এখন নাসার বিখ্যাত বিজ্ঞানী হিসেবে।
যাই হোক, ভিন্ন আলোচনায় চলে যাচ্ছি। ভন ব্রাউনের টিমের অন্যতম বিজ্ঞানী ছিলেন Heinz Krug, যাকে গালাম আব্দেল নাসের নিয়োগ দিয়েছিলেন। Factory 333 তে Heinz Krug ছাড়াও আরো অনেক নাৎসি বিজ্ঞানী কাজ শুরু করেন নাসেরের জন্য মিসাইল বানাতে। এমন মিসাইল, যাতে রেডিওএক্টিভ ওয়াস্ট প্রোডাক্ট ইউজ করে ইসরাইলে আঘাত হানা সম্ভব হবে।
সুতরাং, Heinz Krug সহ Factory 333 তে যেসব গুরুত্বপূর্ণ নাৎসি বিজ্ঞানী কাজ করেন, তাদের মারতে হবে। মোসাদ ডিসিশন নিয়ে নিয়েছে ইতিমধ্যেই।
আগেই বলেছিলাম, অটো স্কোর্জেনি চাকরি করতেন গালাম আব্দেল নাসেরের চিফ মিলিটারি এডভাইজার হিসেবে। সুতরাং মোসাদ এবার তাকে অফার দিলো। হিসাবটা সহজ। মোসাদের হয়ে কাজ করো, Heinz Krug সহ আরো যত বিজ্ঞানী মিশরে মিলিটারি প্রোটেকশনে মিসাইল পোগ্রামে কর্মরত আছে, তাদের মেরে দাও। বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা পাবা এবং মোসাদের হিট লিস্ট থেকে তোমার নাম কেটে দেবো। আর যদি অফার কবুল না করো, তাহলে ভিন্ন কথা। আজ হোক কাল হোক, আমরা ঠিকই একভাবে না একভাবে Heinz Krug সহ টার্গেটেড বিজ্ঞানীদের ঠিকই মারবো, সাথে তোমাকেও ছাড়বো না। একদিন না একদিন তোমাকে বাগে পাবো। আর সেদিন শেষ। এখন চিন্তা করো, কি করবা।
আগেই বলেছিলাম, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসিরা মোসাদের প্যারানোয়ায় থাকতো। সবসময় একটা আতঙ্ক তাদের তাড়া করতো। অটো স্কোর্জেনি দেখলো, অফারটা এবার কবুল করা যেতে পারে। Yitzhak Shamir, যিনি পরবর্তীতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তিনি তখন মোসাদের প্রধান। Yitzhak Shamir নির্দেশ দিলেন Operation Damocles বাস্তবায়ন করার।
মিশনের উদ্দেশ্য, টার্গেটেড বিজ্ঞানীগুলোকে হত্যা করো। যেভাবেই হোক।
অটো স্কোর্জেনিকে রিক্রুট করেছিলেন Peter Zvi Malkin আর অটো স্কোর্জেনি রিক্রুট হবার পর তার হ্যান্ডেলারের দায়িত্ব পালন করেন Rafi Eitan
ছবিঃ পিটার জাভি মাল্কিন
ছবিঃ রাফি আইতান
এই পিটার জাভি মাল্কিন আর রাফি আইতান ছিলেন ১৯৬০ সালে আর্জেন্টিনা থেকে নাৎসি SS কর্মকর্তা Adolf Eichemann কে কিডন্যাপ করে ইসরাইলে নিয়ে আসার চাঞ্চল্যকর অভিযানটি মোসাদ টিমের অন্যতম সদস্য।
টার্গেটেড নাৎসি বিজ্ঞানীদের খুন করা হয়েছিল অভিনব কায়দায়। একধরণের বোমা পার্সেলে ভরে পাঠানো হত। পার্সেল খোলা মাত্র বিস্কোরণ।
সবচেয়ে বড় টার্গেট Heinz Krug কে নিজ হাতে মেরেছিলো অটো স্কোর্জানি।
খুন করে তার শরীর এসিড দিয়ে নষ্ট করে এরপর অবশিষ্ট যা ছিল, পুতে ফেলা হয়েছিলো।
এছাড়া ইউরোপে আরো যেসব বিজ্ঞানী কাজ করেছে পরবর্তীতে আরবদের হয়ে, তাদেরই মোসাদ মেরে ফেলেছে।
হোক সে জার্মান বা অন্য যেকোনো দেশের বিজ্ঞানী।
যেমন কানাডার Gerald Bull নামের একজন ইঞ্জিনিয়ার কাজ করতেন সাদ্দাম হোসেনের লংরেঞ্জ সুপারগান তৈরির প্রোজেক্টে। ইসরাইলিরা যখনই দেখলো, এই সুপার কামান দিয়ে ইসরাইলে আঘাত হানা সম্ভব হবে, তখনই এই কানাডিয়ান ভদ্রলোক'কে খুন করলো।
যাই হোক,
১৯৭৫ সালে মারা যান অটো স্কোর্জেনি।
ক্যান্সারে।
মরার পর তার দেহাবশেষ পাঠানো হয় ভিয়েনার। সেখানে তার ফিউনারেল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মোসাদের এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন। এবং সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হল, সেই ফিউনারেলে স্কোর্জেনির সাবেক জার্মান নাৎসি কলীগেরা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন তাদের স্ত্রী পুত্ররা।
সেই ফিউনারেলে শেষবারের মত নাৎসিদের সেই কুখ্যাত one-armed Nazi salute দিয়ে জার্মান কলীগরা তাকে শেষ সম্মান জানিয়েছিলেন।
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.