Monday, May 29, 2017

ইন্ডিয়ান আন্ডারওয়ার্ল্ড (মাফিয়া)



১৪ জানুয়ারি, ২০০০ সাল।
ঋত্বিক রোশন অভিনীত প্রথম মুভি “কাহো না প্যায়ার হে” রিলিজ পায়। ব্লক বাস্টার হিট হয় মুভিটি। এই মুভি দিয়ে বলিউডে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌছে যায় ঋত্বিক রোশন।
২০ জানুয়ারি, ২০০০ সাল।
মুভি রিলিজের এক সপ্তাহের মাথায় মুভির পরিচালক, ঋত্বিক রোশনের বাবা, রাকেশ রোশনের উপর দুইজন অস্ত্রধারী হামলা চালায়। দুইবার গুলি করা হয় রাকেশ রোশনকে। একটি গুলি তার হাতে, আরেকটি বুকে লাগে। সেইসাথে তার গাড়ি লক্ষ করে এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়ে পালিয়ে যায় দুই ব্যক্তি।
রাকেশ রোশন সেই যাত্রায় বেঁচে যান। সুস্থ হবার পর তিনি বলেছিলেন, অস্ত্রধারীরা তাকে খুন করতে আসেনি। যদি আসতো, তাহলে মেরে ফেলতে পারতো সহজেই। তারা এসেছিলো তাকে আহত করতে। সেইসাথে গোটা বলিউডের জন্য একটা সতর্কতা সংকেত পাঠাতে।
প্রশ্ন হল, কিসের সতর্কতা সংকেত? আর রাকেশ রোশনকে গুলি করা হল কেনো?





১৯৭০ সালে ভারত সরকার বলিউডের জন্য ব্যাংক ঋণ প্রদান নিষিদ্ধ করে।
এই ব্যান ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ছিল।
অর্থাৎ এই সময়টাতে বলিউডকে “ইন্ড্রাস্ট্রি” হিসেবে ভারত সরকার স্বীকৃতি দিত না। ফলে ব্যাংকও লোন দেয়া হত না। একারণে পরিচালকেরা মুভির ফাইন্যান্সিংএর জন্য প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান, ধনী বিত্তশালী ও কিছু প্রতিষ্ঠিত মুভি স্টুডিওর উপর নির্ভর করতো।
আর এখানেই সুযোগ নিয়েছিল ভারতীয় মাফিয়ারা।
তাদের কাছে কালো টাকার অভাব ছিল না। সুতরাং মুভিতে তারা নগদ ইনভেস্ট করে দ্রুত রিটার্ন পেতো।
ভারতীয় মাফিয়াদের জন্য বলিউড হয়ে ওঠে লোভনীয় ব্যবসা।
যে পরিচালক মাফিয়াদের সাথে যত ভালো সম্পর্ক রাখতো, সে ততবেশি নগদ অর্থ পেতো, সুতরাং তার মুভির প্রোডাকশন ও পাবলিসিটিও তত ভালো হত।

এটা চেইন রিয়াকশন।
মাফিয়াদের কাছে প্রচুর টাকা আছে। টাকা দিয়ে তারা পলিটিসিয়ান পকেটে রাখে। সেন্সর বোর্ডের লোকদেরও পকেটে রাখে। সিনেমা হল গুলো নিয়ন্ত্রন করে। রন্ধে রন্ধে তাদের ইনফ্লুয়েন্স।
সুতরাং তাদের সাথে হাত মেলালে সবকিছু সহজ হয়ে যাবে।
ওই যে বললাম, চেইন রিয়াকশন। অর্থাৎ আপনি ওদের সাথে হাত মিলিয়ে নিজের সুবিধা আদায় করবেন। আবার আপনাকে সুবিধা দিয়ে ওরা আরো বেশি অর্থ কামাবে। তখন কামানো আরো বেশি অর্থ দিয়ে ওরা আরো বেশি ইনফ্লুয়েন্স তৈরি করতে পারবে। আরো শক্তিশালি প্রভাবশালী হবে। এই তো।

১৯৯৯ সালে এই ব্যান তুলে নেয়া হয়। অর্থাৎ এখন একজন পরিচালক এখন মুভির জন্য ব্যাংক লোন পাবেন। বলিউডকে অফিসিয়ালি ইন্ড্রাস্ট্রি হিসেবে ভারত সরকার স্বীকৃতি দেয়।
মাফিয়াদের স্বার্থে তখন আঘাত লাগে।
এতোদিন তারা বলিউডের রন্ধে রন্ধে প্রভাব বিস্তার করেছে। প্রভাবটা এতোটাই প্রকট, খোদ বলিউডকে পর্দার অন্তরাল থেকে চালায় মাফিয়ারা। মুভি দেশে বিদেশে ব্যবসা করুক আর না করুক, মাফিয়াদের মোটা অংকের চাঁদা দিতে হয় মুভির পরিচালকদের।
তো রাকেশ রোশনের কাছে বাহরাইন ভিক্তিক একটি মাফিয়া দল চাঁদা চেয়েছিলো। রাকেশ রোশন চাঁদা দিতে অস্বীকার করাতে তাকে গুলি করা হয়। Ali Baba Budesh নামের কুখ্যাত বাহরাইন ভিক্তিক ইন্ডিয়ান মাফিয়া দল রাকেশ রোশনের উপর গুলি চালিয়েছিলো। এখন এই আলী বাবা বুদেশ গ্যাং নিয়ে পরে বলবো। আগে তো শুরু করি প্রথম থেকে।

সমগ্র ব্যাপারটা বুঝতে হলে ইন্ডিয়ান মাফিয়াদের কথা বলতে হবে। নেপথ্য নায়কদের কথা বলতে হবে।
সমস্যা হল, শুরু করবো কোথাথেকে?
অর্গানাইজড ক্রাইমের ইতিহাস তো হাজার বছরের পুরনো।
তবে আধুনিক ইন্ডিয়ান আন্ডারওয়ার্ল্ড বলতে আমরা যা বুঝি, সেটা বলা যাক।
আর কাহিনীর সূচনা যাকে দিয়ে, তাকে দিয়েই শুরু করা যাক। শুরু করবো তাকে দিয়ে, আর শেষ করে ইতিহাসের অন্যতম ভয়ংকর আন্ডারওয়ার্ল্ড “ডন” দাউদ ইব্রাহিমের কাহিনী দিয়ে।

যারা ২০১০ সালের অজয় দেবগান অভিনীত Once upon a time in Mumbai মুভিটি দেখেছেন, তাদের জন্য আমার এই ধারাবাহিক লিখার প্রথম অংশের কাহিনীগুলো কমন পড়বে।
ওই মুভিতে অজয় দেবগান করেছে Mastan Haider Mirza অর্থাৎ হাজি মাস্তানের রোল, আর ইমরান হাসমী অসাধারণ অভিনয় করেছে ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত ডন দাউদ ইব্রাহিমের চরিত্রে।
আধুনিক মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের জন্ম যার হাতে, তিনি হলেন হাজি মাস্তান।



হাজি মাস্তানের জন্ম তামিল নাড়ু’তে। ১৯২৬ সালে। একেবারে দরিদ্র পরিবারে জন্ম।
মাত্র আট বছর বয়সে বাবার সাথে মুম্বাই এসেছিলো হাজি মাস্তান। বাই সাইকেলের দোকানে কাজ করতো। দিন মজুরি করতো। এসব করে পেটের ভাত জুটতো না।
সেই ছোট বয়সে মুম্বাই বন্দরে দিনমজুরের কাজে লেগে গেলো। সারাদিন কাজ করতো হায়দার মির্জা, ওরফে হাজি মাস্তান। হায়দার মির্জা থেকে হাজি মাস্তান হয়ে ওঠার কাহিনী সেই মুম্বাই বন্দর থেকেই।
মুম্বাইয়ের এক পাশে সাগর। আর এই সাগর হয়েই স্বর্ণ চোরাকারবারিরা ভারতে স্বর্ণ পাচার করে নিয়ে আসে।
পুলিশের চোখ ফাঁকি দেবার জন্য স্বর্ণ চোরাকারবারি’দের দরকার ছিলো হাজি মাস্তানের মত বাচ্চা ছেলেদের। ভোলাভালা চেহারার হাজি মাস্তানের সাথে পরিচয় হল কিছু স্বর্ণচোরাকারবারির। সেই ছোট বয়সে হাজি মাস্তান নিজের মুখের ভেতর স্বর্ণ লুকিয়ে মুম্বাই বন্দর পার করে দিতো পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে।
আর এভাবেই বাচ্চা বয়সে পেটের দায়ে প্রবেশ করে মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডে।
বয়স বাড়তে থাকে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের সিঁড়ি বেয়ে আরো উপরে উঠতে থাকে হাজি মাস্তান।
মুলত মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসব অবৈধ স্বর্ণ ভারতে আসে। (আমাদের বাংলাদেশেও আসে। তবে বিমানবন্দর হয়ে)

একসময় কেবল স্বর্ণ নয়, আরো যত বেআইনে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া প্রোডাক্ট মুম্বাই বন্দর দিয়ে ঢোকে, সবগুলোর সাথেই নিজেকে জড়াতে শুরু করলো হাজি মাস্তান।
মাথায় ভালো বুদ্ধি ছিল হাজি মাস্তানের। ফলে বাইরের স্মাগলারদের নজরে পড়ে গেলো সে। ওরা বুঝে গেলো, ছেলে রিসোর্সফুল।
একসময় হাজি মাস্তান হয়ে গেলো স্মাগলার। টাকা পয়সা কামানো শুরু করলো ভালোমতই। নিজের একটা বাহিনী তৈরি করলো। মুম্বাই বন্দরে অন্য যেসব স্মাগলাররা ছিল, একসময় তাদেরকেও নিজের পথ থেকে সরিয়ে দিতে শুরু করলো সে।
স্বপ্ন তার মুম্বাই বন্দরের শাহেনশাহ হবার।

(** আমাদের দেশে বিদেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ প্রতিবছর বিমান বন্দর দিয়ে ঢোকে, সে খবর সবাই জানে। মাসে মাসে স্বর্ণ আটকের নিউজও আসে। কিন্তু এরপরও সেটা বন্ধ হয় না। কারণ স্বর্ণ চোরাকারবারিরা বিমান বন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সাথে ঠিকই যোগাযোগ রাখে। এবং মাঝেমাঝে কিছু চালান চোরাকারবারীরা ইচ্ছা করেই স্যাক্রিফাইস করে। যাই হোক, সেসব আলোচনা পরে)

তো হাজি মাস্তান একসময় মুম্বাই বন্দরের স্মাগলিং নিজের নিয়ন্ত্রনে আনে।
হিসাবটা সহজ। আবার কঠিনও।
বাইরের স্মাগলারদের সাথে যোগযোগ রাখতে হবে। বাইরে থেকে অবৈধ মালামাল মুম্বাই বন্দর হয়ে হাজি মাস্তান পৌছে দেবে মুম্বাইয়ের অন্যসব মাফিয়াদের কাছে। অর্থাৎ সাপ্লাই বিজনেস।
আর এই করে মোটা টাকা। সেইসাথে কিছু অসাধু পুলিশ ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের সাথে হাজি মাস্তানের পরিচয়। তাদের ভায়া হয়ে অসাধু পলিটিসিয়ানদের সাথে পরিচয়। অর্থাৎ যেভাবে সবকিছু হয় আরকি।
কান টানলে মাথা আসার মত ব্যাপার।

হাজি মাস্তানের টাকা যত বাড়তে থাকে, ক্ষমতাও তত বাড়তে থাকে। দলবলও তত বড় হতে থাকে। প্রভাবও বাড়তে থাকে। রিচও বাড়তে থাকে। সমাজের হাইক্লাস মানুষের সাথে মেলামেশাও শুরু হয়।
সেই সাথে মুম্বাই ভিক্তিক অন্যান্য মাফিয়া লিডারদের সাথেও তার ওঠাবসা চলতে থাকে। মুম্বাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাংগুলো নিজেরা নিজেদের ভেতর মারামারি করতো। হাজি মাস্তান তাদেরকে একসাথে একটেবিলে বসায়। ঠিক যে কাজটি আমেরিকাতে Lucky Luciano করেছিলো, একই কাজ হাজি মাস্তান করে।
মুম্বাই গ্যাংগুলোকে এলাকা ভাগ করে দেয়। ব্যবসা ভাগ করে দেয়। অর্থাৎ অমুক এই অঞ্চল, তমুক ওই অঞ্চলে রাজত্ব করবে। কেউ কারো বিজনেসে ভাগ বসাবে না।
হাজি মাস্তানের এই পদক্ষেপের কারণ মুম্বাই গ্যাংগুলোর ভেতর হানাহানির অবসান হয়।
ওদিকে সাগর ও মুম্বাই পোর্টের নিয়ন্ত্রন রাখে হাজি মাস্তান।

হাজি মাস্তান মাস্তান ষাট ও সত্তরের দশকে উপলব্ধি করে, অর্থ বিনিয়োগের সবচেয়ে লোভনীয় খাত হতে পারে ভারতীয় ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রি। মুম্বাই ভিক্তিক ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রি, যা এখন বলিউড নামে পরিচিত, সেখানে তখন চরম অর্থঅভাব। পরিচালকেরা ছবি তৈরির জন্য ব্যাংক লোন পাচ্ছেন না। বিনিয়োগ দরকার। ক্যাশ টাকা দরকার।

হাজি মাস্তানের কাছে কালো টাকার অভাব নেই। ট্যাক্স ফ্রি বিনিয়োগ। পেছনের দরজা দিয়ে।
মুম্বাই ফ্লিম পরিচালকদের কাড়িকাড়ি টাকা ইনভেস্ট করতে শুরু করে হাজি মাস্তান।

বেশি টাকা পেলে ভালো মুভি বানাতে পারে পরিচালকেরা। আর ভালো মুভি বানালে সেটা ভালো ব্যবসা করবে। আর ভালো ব্যবসা করলে ভালো লাভ আসবে।
হাজি মাস্তান বিনিয়োগ তো উসুল করবেনই। সাথে সুধ আসল সহ।

মুম্বাই ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রিতে বিনিয়োগ করে বেশ ভালো লাভবান হতে শুরু করে হাজি মাস্তান।
মুভির পরিচালকদের সাথে সক্ষতা গড়ে ওঠে হাজি মাস্তানের।
সেইসাথে নায়ক নায়িকাদের সাথেও।
দিলিপ কুমার, রাজ কাপুর, ধর্মেন্দ্র, সঞ্জিব কাপুর, ফিরোজ খানের মত তখনকার সুপারস্টাররা ছিলেন হাজি মাস্তানের বন্ধু তালিকায়।

কথায় বলে, টাকায় টাকা আনে। সেইসাথে আনে ক্ষমতা। প্রভাব। খ্যাতি।
ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রিতে হাজি মাস্তান রীতিমত নামকরা প্রযোজক, ফ্লিম ফাইনান্সার।
এছাড়া রিয়েল স্টেট, ইলেকট্রনিক, হোটেল বিজনেসেও ইনভেস্ট করে হাজি মাস্তান।


তখন দক্ষিণ মুম্বাইয়ের Bhendi Bazar, Dongri, Nagpada টাইপের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর অবস্থা ছিলো ভয়াবহ। চরম হতদরিদ্র মানুষগুলোর কাছে হাজি মাস্তান ছিল রীতিমত রবিন হুড।
মানুষ ঝামেলায় পড়লে পুলিশের কাছে যেতো না। ‘গডফাদার’ হাজি মাস্তানের কাছে যেত।
চাকরি বাকরির দরকার, হাজি মাস্তান তো আছে। চাকরি দিয়ে দেবে। হাজি মাস্তানের ব্যবসা বানিজ্যের অভাব নেই। একটা না একটা জায়গায় তো ব্যবস্থা ঠিকই করে দেবে।
দক্ষিণ মুম্বাইয়ের মুসলিম অধ্যুষিত এসব অবহেলিত জায়গায় হাজি মাস্তান অনেক বড় সেলিব্রিটি।

অর্থাৎ সেই গডফাদার মুভিতে যেটা দেখায়।
দেশে দেশে ঘটনাগুলো ঠিক একই রকম। কিছুটা ভিন্ন মোড়কে।
সেইসাথে আরো একটা জিনিস ভাবার বিষয় আছে। নিউইয়র্ক আন্ডারওয়ার্ল্ডের লাকি লুচিয়ানো, ভিটো জেনোভিচ, বাকসি সিগ্যাল, এরা সবাই উঠে এসেছিলো ইহুদি বস্তিগুলো থেকে। অবহেলিত, চরম দরিদ্র বস্তি থেকে।
মুম্বাইয়ের দাউদ ইব্রাহিমের উত্থানও হবে মুম্বাইয়ের সংখ্যালঘু হতদরিদ্র এলাকা থেকে। সেই গল্প একটু পরে।

তো হাজি মাস্তান ছিল মুম্বাইয়ের প্রথম সেলিব্রিটি গ্যাংস্টার। যাকে মাফিয়া ডন, বা গডফাদার আপনি বলতেই পারেন।
হাজি মাস্তান অন্যান্য মুম্বাই ও তামিলনাড়ু ভিক্তিক গ্যাংস্টারদের সাথে লিয়াজো করেই চলতো। ব্যবসা বানিজ্য ভাগভাটোয়ারা করে নিয়েছিলো। যাতে আন্ধকার জগতের এসব খলনায়কদের ভেতর বড়ধরণের যুদ্ধ শুরু না হয়।

হাজি মাস্তানের ব্যবসা ছিল অবৈধ স্বর্ণ চোরাচালান, ট্যাক্স বহির্ভুত মদ, ইলেকট্রনিক্স, বেআইনিভাবে আনা অস্ত্র, এসব ছিলো হাজি মাস্তানের মুল ব্যবসা। সেইসাথে একসময় রিয়েলস্টেট, ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রি, হোটেল বিজনেসে ইনভল্ভ হয়েছিলেন হাজি মাস্তান। কিন্তু তার নামে Narcotics অর্থাৎ মাদক দ্রব্যের অর্থাৎ হেরোইন, কোকেনের মত দ্রব্যের ডিলিংসের কোনো অভিযোগ ছিল না। সেগুলো অন্যরা করতো।

তো ১৯৯৪ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান হাজি মাস্তান।
অজয় দেবগানের Once upon a time in Mumbai মুভির শেষটা যেভাবে দেখানো হয়েছে, সেভাবে নয়।

হাজি মাস্তান নিজেকে পরিচয় দিতেন “সোলেমান মির্জা” হিসেবে।
হাজি মাস্তান নামটি মিডিয়ার দেয়া।

হাজি মাস্তান পেটের দায়ে খারাপ হয়েছিলো।
আর এবার যার কথা বলবো, সে খারাপ হয়েছিলো স্বভাবগতভাবেই।
আন্ডারওয়ার্ল্ডে যে নাম সবচেয়ে পরিচিত, আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ ইব্রাহিম।



বাপ তার পুলিশ। মুম্বাই পুলিশের কন্সটেবলের চাকরি করতেন। মা গৃহিনী।
বেড়ে ওঠা দক্ষিন মুম্বাইয়ের Dongri এলাকাতে।
ছোটবেলা থেকে গোঁয়ার, ডানপিটে ছিল দাউদ ইব্রাহিম।
পরিবার থেকে যতটুকু সম্ভব সাপোর্ট দেয়া হলেও উচ্চভিলাসী দাউদ বখে যাওয়া বন্ধুবান্ধবের সাথে ছোটবেলা থেকেই চুরি, ছিনতাই শুরু করে।
দাউদের বাবার কাছে অভিযোগ আসতো। দাউদ মার খেতো। কিন্তু এতে দাউদ আরো বখে যেতে শুরু করে।
লিখাপড়া বাদ দিলো দাউদ।
সারাদিন এলাকায় টো টো করে ঘুরতো। এলাকার মাস্তানে পরিনত হয় সেই বয়সে।
এরপর দাউদের বাবা পুলিশের লোক হয়েও ধর্না দিলেন হাজি মাস্তানের কাছে।
সেটা ষাটের দশকের শেষদিকের কথা।
হাজি মাস্তান দাউদের জন্য ছোটখাটো একটা কাজ জোগাড় করে দিলেন। কিন্তু সেটা দাউদের পোষালো না।
সে ধনী হতে চায়।
হাজি মাস্তানের কারবার সম্পর্কে দাউদের বেশ ভালো ধারণাই ছিল।
দাউদ ছুটে গেল হাজি মাস্তানের কাছে।
বললো, আমি আপনার কাছের লোক হতে চায়। আপনার ব্যবসায় যোগ দিতে চাই।

দাউদের ভেতর হাজি মাস্তান কিছু একটা দেখেছিলো। এই ধরণের ছেলেকে দিয়েই কাজ হবে। ওর ভেতর কিছু একটা আছে !!
দাউদ ঢুকে গেলো হাজি মাস্তানের স্মাগলিং বিজনেসে।
হাজি মাস্তানের খাস লোক হতে শুরু করে সে।

হাজি মাস্তানের সাথে থেকে থেকে স্বর্ণলতার মতই বেড়ে ওঠে দাউদ।
হাজি মাস্তান যে কাজটা কখনোই করেনি, দাউদ এবার সেই কাজটি করা শুরু করে। হাজি মাস্তানের স্মাগলিং বিজনেসে ঢুকে narcotic অর্থাৎ মাদক দ্রব্য মুম্বাই বন্দর দিয়ে স্মাগলিং শুরু করে দাউদ।
আর এই নিয়ে হাজি মাস্তানের সাথে দাউদের বিবাদ তৈরি হয়।
দাউদ হাজি মাস্তানের মত কেবল মুম্বাইএর বন্দরের রাজা হতে চায়নি। সে চেয়েছিলো গোটা মূম্বাই শহরে রাজত্ব করতে। গোটা মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ড নিজের দখলে নিতে।
দাউদের মাদকপাচারে হাজি মাস্তান বাধা দেয়। দাউদের দুইজন খাস লোক’কে হাজি মাস্তানের লোকেরা আক্রমন করলে অফিসিয়ালি হাজি মাস্তানের দল থেকে বেরিয়ে যায় দাউদ ইব্রাইম।

তৈরি করে তার "The Young Company" যেটা পরবর্তীকালে “D-Company” নামে গোটা দুনিয়াতে পরিচিত হয়।

মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ড আশির দশকের শুরুর দিকে এসে বদলে যেতে শুরু করে। দাউদের প্রভাবে।
হাজি মাস্তান মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডে যে নিয়ন্ত্রন এনেছিলো, দাউদ ঝড়ে সেটা বেসামাল হয়ে যায়। দাউদের কোনো ক্ষুদ্র অঞ্চল নয়, গোটা ব্যবসা চায়। গোটা মুম্বাই সে চায়।

মুম্বাইয়ের অন্যান্য গ্যাংদের সাথে গুটিবাজি শুরু করে প্রথমে সে হাজি মাস্তানের প্রভাব কমাতে শুরু করে। ঘটনা চক্রে সেসময় অর্থাৎ আশির দশকের দিকে হাজি মাস্তানও অবৈধ স্মাগলিং ব্যবসা বাদ দিয়ে ফ্লিম ইন্ড্রাস্ট্রি আর রিয়েল স্টেট নিয়েই পড়ে থাকে। আর এই ভ্যাকুয়াম দাউদ পুরন করতে শুরু করে।
গোটা আশির দশকে দাউদ মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের উপর প্রভাব বিস্তার করতে থাকে।

এবং আশির দশকের শেষ দিকে, মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডে একচেটিয়া দাউদ ইব্রাহিমের রাজত্ব।
হাজি মাস্তানের গ্রুপ ততদিনে দাউদের নিয়ন্ত্রনে।

হাজি মাস্তান মুম্বাই ও ভারতের অন্যান্য জায়গার ক্রাইম সিন্ডিকেটগুলোর সাথে পার্টনারসিপ ভিক্তিতে ব্যবসা চালাতো। কিন্তু দাউদ এসে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রনে নেয় সবকিছু। হয় তার কথামত চলতে হবে, অন্যথায় মরতে হবে।

দাউদের হাত কেবল ভারতে সীমাবন্ধ থাকেনি। দাউদ তার অন্ধকার সম্রাজ্য বিস্তার করে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে। আর্মেনিয়ান মাফিয়া, রুশ মাফিয়া, এশিয়ান মাফিয়াদের সাথে মিলে বিশাল এক ক্রাইম নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে যায় দাউদ।
মানি লন্ডারিং ব্যবসা, নারী পাচার, আফগানি হেরোইন এশিয়া ও ইউরোপে ছড়িয়ে দেয়া, আফগানিস্তানে সোভিয়েত বিরোধি যুদ্ধে অস্ত্র পাচার করেও দাউদ প্রচুর অর্থ কামানো শুরু করে।
নব্বয়ের দশকের শেষদিকে দাউদ ইব্রাহিম তালিবান প্রটেকশন নিয়ে আফগানিস্তানে গিয়ে ওসামা বিন লাদেনের সাথে দেখা করে। মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া এবং আফ্রিকাতে অস্ত্র ব্যবসা, ইংল্যান্ড সহ ইউরোপের বড়বড় দেশে বিপুল পরিমাণ আফগানি হেরোইন সাপ্লাই দিতে থাকে দাউদ।
মুম্বাইয়ের রিয়েলস্টেট ব্যবসাতেও দাউদ ভাগ পেতে শুরু করে।
ধরুন, কোনো রিয়েলস্টেট ব্যবসায়ী মেগা প্রজেক্ট করবে এমন একটা জায়গায় যেখানে বিশাল বস্তি। তো এই বস্তি উচ্ছেদ করতে হবে।
এই ধরণের কাজে দাউদের ক্রাইম সিন্ডিকেট বেশ ইফেক্টিভ। রাতের আধারেই এরা গোপনে কাজ করবে। ভয় ভীতি দেখিয়ে, আতংক তৈরি করে বস্তি উচ্ছেদ করবে দাউদের দল। এবার সেখানে যখন রিয়েল স্টেট ব্যবসা রমরমা হবে, তখন দাউদ ভাগ পাবে।
মুম্বাইয়ের বিখ্যাত ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রিতে তখন দাউদের দাপট।





মধ্যপ্রাচ্যে শারজাহ কাপ চলে, আর দাউদের জুয়া খেলার বিজনেসও রমরমা হয়।
ম্যাচ ফিক্সিং কেন হয়?
এসব বেটিং যারা করে, জুয়া যারা খেলে, তারাই এই ম্যাচ ফিক্সিং করে।




ভারতের সাবেক ক্রিকেটার দিলিপ ভেন্সারকার ২০১৩ সালে এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, ১৯৮৬ সালে দাউদ ইব্রাহিম শারজাহ কাপ চলার সময় ইন্ডিয়ান ক্রিকেট দলের ড্রেসিংরুমে ঢোকে, এবং প্রতিটি ইন্ডিয়ান ক্রিকেটারকে একটা করে ব্রান্ড নিউ গাড়ি অফার করে যদি তারা ফাইনাল ম্যাচ পাকিস্তানকে হারাতে পারে।

ব্যাপারটা হল, দাউদ ইব্রাহিম ফাইনাল ম্যাচে ইন্ডিয়ার হয়ে বেট ধরবে। এজন্য ইন্ডিয়ার জেতাটা তার জন্য জরুরী।
সিম্পল হিসাব।

দাউদ ইব্রাহিমের আন্ডারওয়ার্ল্ড আশির দশকের শেষদিকে রীতিমত রমরমা। ওই যে বললাম, আশির দশকে আফগানিস্তানের যুদ্ধে দাউদ ইব্রাহিম অস্ত্র ব্যবসা করেছিলো, আর সেই সুবাদেই দাউদের সাথে পাকিস্তানি গোয়েন্দাসংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স, অর্থাৎ ISI এর সখ্যতা তৈরি হয়। আর আইএসআই এর সাথে দাউদের এই সম্পর্ক মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডকে একেবারেই বদলে দেবে।
সেই কাহিনী এবার বলছি।

১৯৯২ সাল। অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা নিয়ে ভারতে শুরু হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। সেই দাঙ্গায় দুই হাজারের উপর মানুষ মারা যায়। তবে বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশি হবে, কম নয়।
মুম্বাইয়ের অবহেলিত মুসলিম অধ্যুষিত দক্ষিণ অংশের এলাকাগুলোতেও দাঙ্গায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এবার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ড রীতিমত বদলে যায়।

দাউদ ইব্রাহিম যত অকাম কুকামই করুক, ভারতে মুসলিম পরিবারে জন্ম নেবার সুবাদে তার ভেতরও সেই সময় আইন্ডেন্টিটি ক্রাইসিস কাজ করেছিল। এছাড়া হাজি মাস্তানের দেখাদেখি দাউদ দক্ষিণ মুম্বাইয়ের মুসলিম অধ্যুষিত গরিব এলাকাগুলোতে “রবিন হুড” গীরি করতো।
মানুষ সমস্যায় পড়লে পুলিশের কাছে না গিয়ে দাউদের লোকেদের কাছে যায়। দাউদ এলাকার মুসলিম বেকার ছেলেপেলেদের জন্য কাজেরও ব্যবস্থা করে দেয়।
দক্ষিন মুম্বাইয়ের এসব মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাতে দাউদের বেশ জনপ্রিয়তা ছিল।
খেয়াল করে দেখুন, বিখ্যাত কলম্বিয়ান ক্রাইম বস পাবলো এসকোবার কিন্তু তার এলাকা মেডিলিনের মানুষের কাছে জনপ্রিয় ছিল। এখানে ভোটে দাঁড়িয়ে পার্লামেন্টের মেম্বারও হয়েছিল। ‘রবিন হুড’ রোল সেও প্লে করতো।
দুইটা কারণে।
নিজের এলাকার মানুষের কাছে একটা ভালো ইমেজ ধরে রাখতে। অর্থাৎ আমি চুরি করি আর যাই করি, তোমার জন্য করি। তোমাদের বিপদে আমি আছি, সুতরাং কোনোদিন আমার বিপদ হলে তোমরা আমার সাথে থাকবা।
আবার আরেকটা কারণ হল,
এই ধরণের হতদরিদ্র মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে তাদের উপকার করলে চরম লয়েল সাপোর্ট পাওয়া যায়। লয়েল সাপোর্টার তৈরি করা যায়।

তো যাই হোক, দাউদ সিদ্ধান্ত নেয়, সে মুম্বাই উড়িয়ে দেবে। ভারত সরকারকে উচিৎ শিক্ষা দেবে।
এরপর সে যা করে, সেটা রীতিমত ভয়ংকর।

১৯৯৩ সালের মার্চ মাসের ১২ তারিখ।
• Mumbai Stock Exchange Building
• Passport Office
• Masjid- Mandvi Corporation Bank Branch
• Fisherman's Colony in Mahim causeway
• Zaveri Bazaar
• Plaza CinemaCentury Bazaar
• Katha BazaarHotel Sea Rock
• Terminal at Sahar Airport (now known as CSIA)
• Air India Building
• Hotel Juhu Centaur
• Worli
ভারতের মুম্বাই শহরের এই গুরুত্বপূর্ন স্থানগুলো সিরিজ বোমা হামলায় কেপে ওঠে। ২৫৭ জন মানুষ মারা যায়। ৭১৭ জন হতাহত হয়।
বোমা হামলা মুম্বাই শহর থমকে যায়।











এই হামলার ফলে আরেকটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয় গোটা ভারত জুড়ে। যার ফলে আরো মানুষের প্রাণ যায়।

দাউদ ইব্রাহিম দুবাইতে তার বিলাসবহুল বাড়িতে বসে এই হামলার অর্ডার দিয়েছিলো। আর সমগ্র হামলার প্লান তৈরি করেছিল দাউদের ডান হাত হিসেবে পরিচিত “টাইগার মেনন”
টাইগার মেনন এখনো ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টে আছে।



গাড়ি বোমা থেকে শুরু করে মোটর সাইকেল বোমা, ব্রিফকেস বোমা, এসব ব্যবহার করা হয়েছিলো এই হামলায়।
এটা ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা।

দাউদ ইব্রাহিমের যেসব ফুট সোলজার এই হামলাতে অংশগ্রহন করেছিল, এদের অধিকাংশ ছিল বেকার যুবক। বাবরি মসজিদ ধ্বংস পরবর্তী দাঙ্গার সেন্টিমেন্ট ব্যবহার করে এসব ছেলেদের রিক্রুট করা হয়েছিলো।
এই হামলা পরিচালনায় অংশগ্রহনকারী ফুট সোলজারদের দাউদ পাকিস্তানে বা দুবাইতে নিয়ে যেতে পারেনি। ভারতীয় পুলিশ তাদের কয়েকজনকে আটক করে। বাকিরা এনকাউন্টারে মরে, কেউ আবার আটকের হাত থেকে বাঁচতে আত্মহত্যা করে।
২০০৭ সালের মুভি Black Friday তে মুম্বাই হামলার পর পুলিশ যেভাবে হামলাকারি ফুট সোলজারদের ধরেছিল, সেটার উপর ভিক্তি করে বানানো। মুভিটি দেখতে পারেন।

দাউদ ভেবেছিলো এই হামলার পর ভারতের মুসলিমদের কাছে তার জনপ্রিয়তা বাড়বে। কিন্তু হয়েছে উল্টাটা। দাউদ ইব্রাহিম যে কত বড় সন্ত্রাসী, সেটাই বরং সবার সামনে আরো পরিস্কার হয়ে যায় এই হামলার পর।
ঠিক পাবলো এসকোবারও কলম্বিয়াতে এই একই ভুল করেছিল। বিশাল গাড়ি বোমা হামলা চালিয়ে কলম্বিয়ার রাজধানী কাঁপিয়ে দিয়েছিলো। প্রচুর নিরীহ মানুষ খুন করেছিল।


এখানে বলে রাখি, ভারতের নামকরা অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত এরেস্ট হয়েছিল এই মুম্বাই হামলার পর। Terrorist and Disruptive Activities (Prevention Act) এর অধিনে সঞ্জয় দত্ত এরেস্ট হয় অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে। পুলিশ অভিযোগ এনেছিল, সঞ্জয় দত্ত মুম্বাই হামলার কথা আগে থেকেই জানতো। পুলিশের অভিযোগ, মুম্বাই হামলার পর সৃষ্টি হওয়া দাঙ্গায় অস্ত্র সরবরাহ করার কাজটি সঞ্জয় দত্তকে দিয়ে করাতে চেয়েছিল দাউদ।
যাই হোক, সঞ্জয় দত্তের পাঁচ বছরের জেল হয় পরে। সঞ্জয় দত্তের বাবা তখন ভারতের এমপি।
http://www.dnaindia.com/india/report-here-s-why-sanjay-dutt-is-in-jail-2046779

মুম্বাই হামলার পর মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডে পরিবর্তন আসে। দাউদের ডি কোম্পানি’তে যেসব হিন্দু গ্যাং মেম্বার ছিল, তারা আলাদা হয়ে যায়। দাউদের আন্ডারওয়ার্ল্ডে ভাঙ্গন ধরে।
দাউদের একসময়কার ডান হাত ‘ছোট রাজন’ দাউদের শত্রু হয়ে যায়।



এরপর মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডে শুরু হয় মারামারি। দাউদের লোকেরা ছোট রাজনের লোকদের মারে। ছোট রাজনের লোকেরা দাউদের লোকদের মারে।
এই মারামারি আজও চলতেছে।

২০০০ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে নাটকীয় কায়দায় দাউদ ইব্রাহিমের লোকেরা ছোট রাজনকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। কিন্তু সে যাত্রায় ছোট রাজন অল্পের জন্য বেঁচে যান।

২০১৫ সালে ছোট রাজন গ্রেফতার হল ইন্দোনেশিয়ার বালি উপদ্বীপে। এখন ভারতের আদালতে তার বিচার চলতেছে।



ওদিকে দাউদ ইব্রাহিম কখনো দুবাই, কখনো পাকিস্তানে অবস্থান করে।
মার্কিন প্রশাসন তাকে মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসীর লিস্টে রেখেছে।
বর্তমান দুনিয়ার শীর্ষ ১০ মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তির তালিকাতে দাউদ ইব্রাহিম আছে তিন নাম্বারে।

শত কোটি টাকা তার মাথার মুল্য।
অথচ সে দিব্যি ঘুরে বেরাচ্ছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন দাউদ ইব্রাহিম এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
২০০৬ সালে দাউদ ইব্রাহিমের মেয়ে Mahrukh Ibrahim, এর সাথে বিয়ে হয় পাকিস্তানি ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াদাদের ছেলের।
এই বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল দুবাইয়ে। ধুমধাম করে এই বিয়ে হয়েছিল। এবং বিয়ের সময় ইন্টারপোল রেড এলার্ট জারি করে রেখেছিল। কিন্তু দাউদ সামহাউ সেই বিয়েতে এসেছিল।
টাকা থাকলে আর আইএসআই’এর মত এতো কুখ্যাত একটা গোয়েন্দা বাহিনী পকেটে থাকলে এসব হয়ত করাই যায়। ফিল্মি স্টাইলে।

দাউদ ইব্রাহিমের আরেক মেয়ে মেহরিনের বিয়ে হয় পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত এক মার্কিন নাগরিকের সাথে।
তার ছেলের বিয়ে হয়েছে লন্ডনের এক ধনুকুব ব্যবসায়ীর মেয়ের সাথে।


হাজি মাস্তান মুম্বাইয়ের বন্দর থেকে শুরু করেছিল তার কারবার। মুম্বাই বন্দর হয়েই ১৯৯৩ সালের বোমা হামলার জন্য প্রচুর পরিমাণ বোমা ও অস্ত্রসস্ত্র ভারতে ঢুকেছিল।
আবার এই ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলায় অংশগ্রহনকারী সন্ত্রাসীরাও মুম্বাইয়ে ঢুকেছিল সাগর দিয়ে।


লিখার শুরুতেই বলেছিলাম, রাকেশ রোশনের উপর গুলি চালিয়েছিলো আলী বুদেশ।
এই আলী বুদেশ প্রথম জীবনে ছিল একজন পকেটমার।




মুম্বাইয়ের বস্তি এলাকায় পকেটমারী ও ছিচকে চুরি করতো।
এরপর যা হবার, অর্থাৎ একসময় দাউদ ইব্রাহিমের লোকেদের নজরে এলো। এরপর দাউদ ইব্রাহিমের ডি কোম্পানিতে যোগ দিয়ে বড় গুন্ডা হয়ে গেলো।
একসময় দাউদ ইব্রাহিমের সাক্ষাৎপেতে সে দুবাই গেল। মুম্বাই মাফিয়াদের জন্য ইহা নাকি এক বিরাট সম্মান। অর্থাৎ দাউদ ইব্রাহিমের দেখা পাওয়া।

যাই হোক, একসময় বুদেশ দাউদ ইব্রাহিমের কিছু লোকজন নিয়ে আলাদা হয়ে গেল। বাহরাইনে ঘাটি গেড়ে সেখান থেকে অকাম কুকাম চালিয়ে যাচ্ছে সে।

দাউদ ইব্রাহিম তাকে হত্যার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে বহুদিন ধরে। দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছোট সাকিলের উপর দায়িত্ব পড়েছে আলী বুদেশকে শেষ করার।
কিন্তু এখন পর্যন্ত সে বুদেশ বেঁচে আছে।

আলী বুদেশও অন্যান্য মাফিয়াদের মত বলিউডের প্রতি ইন্টারেস্টেড। আফটার অল, ইনভেস্ট করার জন্য বলিউড সবসময় লোভনীয় জায়গায়। কাঁচা টাকা ইনভেস্ট করে নগদে প্রচুর কাঁচা টাকা কামানো যায়।

বলিউডে মাফিয়াদের এই প্রভাব, আজ পর্যন্ত আছে।
ওদিকে আফগানিস্তানে হেরোইনের রমরমা উৎপাদন হচ্ছে।
Golden Crescent আর golden Triangle এই দুইটা জায়গার নিয়ন্ত্রণে রাখা এশিয়ান মাফিয়া দলগুলোর জন্য মুল ব্যাটলফিল্ড।




( পরের পর্বে থাকবে অন্যকোনো দেশের অন্যকোনো মাফিয়া চক্র নিয়ে লিখা।
আমি বেশি ডিটেইলসে যাবো না। জাস্ট একটা ধারণা দিয়ে যাবো )

( চলবে......... )















No comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.