আমেরিকার বিখ্যাত Massachusetts Institute of Technology অর্থাৎ MIT-এর একটি নাম করা ক্যান্সার রিসার্চ ইন্সটিউট আছে।
নাম হল, Koch Institute for integrative Cancer Research.
বর্তমানে এই ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি দুনিয়ার সবচেয়ে নামকরা এবং উন্নত ক্যান্সার গবেষণাকেন্দ্র। ক্যান্সারের প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক আবিস্কার এবং পৃথিবী থেকে ক্যান্সার নির্মুল করার মত মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে।
ক্যান্সার গবেষণাতে কিছু যুগান্তকারী সাফল্য ইতিমধ্যে দেখিয়েছে এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
খুবই ভালো। তাই না? কিন্তু প্রদীপের নিচেই থাকে অন্ধকার।
যার ডোনেশনে এই উন্নত ক্যান্সার প্রতিষ্ঠানটি তৈরি হয়েছে, যার নামে এই প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়েছে, তার নাম ডেভিড কোখ।
Koch brothers হিসেবে পরিচিত দুই ভাইয়ের একজন।
এবং অগনিত আমজনতার ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার পরোক্ষ এবং ক্ষেত্রে বিশেষে প্রত্যক্ষ কারণও তিনি ও তাদের প্রতিষ্ঠান !
১৯৯২ সালে এই ভদ্রলোক মুত্রথলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।
বাঁচার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন ডেভিড কোখ। আমেরিকার সবচেয়ে নামকরা ডাক্তাররা মিলে তার চিকিৎসা করেছে। নিজে ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার পর ক্যান্সার রিলেটেড গবেষণায় তিনি টাকা ঢালা শুরু করেন।
Prostate cancer Foundation-এর বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সের একজন সদস্য হন তিনি।
সেই আমলের ৪১ মিলিয়ন ডলার ডোনেট করেন এই ফাউন্ডেশনে। ৫ মিলিয়ন ডলার ডোনেট করেন ন্যানোটেক গবেষণাতে।
২০০৬ সালে Johns Hopkins University of Medicine-এর ক্যান্সার রিসার্চ ইন্সটিটিউটের জন্য ২০ মিলিয়ন ডলার ডোনেশন দেন তিনি।
সেই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিল্ডিংটির নাম ‘David H. Koch Cancer Research Building’
২০০৭ সালে MIT-এর জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার ডোনেশন দিয়ে তৈরি করেন ১ লক্ষ ৮০ হাজার বর্গফুটের Koch Institute for integrative Cancer Research. যেটার কথা শুরুতেই বললাম।
একই বছর ৩০ মিলিয়ন ডলার ডোনেশন দেন Memorial Sloan Kettering Cancer center ফ্যাসিলিটির জন্য।
২০১৫ সালে এসে এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য ১৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ২৩ তলা একটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির David H. Koch Center for cancer care তৈরির কাজ নিয়েছেন তিনি। যেটার কাজ এখন চলমান।
(** আমাদের হুমায়ুন আহমেদের জীবনের শেষসময়ে ক্লোন ক্যান্সারের চিকিৎসা হচ্ছিলো এই Memorial Sloan Kettering Cancer Center হাসপাতালেই)
এছাড়াও ২০০৮ সালে University of Texas, Houston এর জন্য ২৫ মিলিয়ন ডলার ডোনেশন দিয়ে তৈরি করেন David Koch Center for applied Research in Genitourinary Cancers.
২০১৯ সাল নাগাদ আরো ২ বিলিয়ন ডলার ক্যান্সার, চিকিৎসা ও এমবুলেন্স সার্ভিসের কাজে ব্যয় করবেন ডেভিড কোখ।
এতোটুকু পড়ার পর যে কেউ বলবে, লোকটা অনেক উদার। মানবিক। দায়িত্ববান। সচেতন। একজন সম্মানিত নাগরিক। তাকে অবশ্যই শ্রদ্ধা করা উচিৎ।
তাহলে প্রশ্ন, খোদ নিজের দেশেই কেনো এই দুইভাই রীতিমত ভিলেন ইমেজ?
ওই যে বললাম, প্রদীপের নিচেই থাকে অন্ধকার।
এবার আসুন, মুদ্রার অন্যপিঠটাও দেখি।
ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট কার্টুনটি দেখেছেন ছোটবেলা?
ক্যাপ্টেন প্ল্যানেটের যে ভিলেনগুলো থাকে, তারা কি করে? হয়ত মনে আছে, তারা পরিবেশ দূষণ করে।
মানুষের জীবনের তোয়াক্কা না করে নদী নালা, খালবিল আবাদী জমি, বাতাস, পানি ধ্বংস করে।
ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট কার্টুনের সেই ভিলেনগুলোর দুনিয়াবি ভার্সন হিসেবে এই কোখ ভাইদের বিবেচনা করতে পারেন।
তারা কেবল আমেরিকার পরিবেশ নয়, পলিটিক্সকেও দুষিত করেছে। তারা একরকম আইনের উর্ধে। টাকা দিয়ে তারা যেমন আইন তৈরি করে, আবার টাকার জোরে আইন ভাঙ্গে। পলিটিসিয়ান, বিশেষ করে রিপাবলিকান পার্টি এখন একরকম কোখ ভাইদের পকেটে।
এদের অসংখ্য ফ্যাক্টরি থেকে নির্গত বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে ক্যান্সারসহ নানাবিধ রোগে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, সেটার সঠিক পরিসংখ্যান হয়ত নেই। তবে প্রতিবাদ হয়েছে জোরেসোড়ে। কোখ ভাইদের কাজকারবার কোনো গোপনীয় বিষয় নয়। একেএকে সকল কিছু নিয়েই আলোচনা হবে। শুরু করতে হবে একেবারে শুরু থেকে।
সবার আগে আলোচনা করা যাক, কোখ ভাই কারা; কোথাথেকে এসেছে; কি করে।
ফোর্বস ম্যাগাজিন অনুসারে কোখ ইন্ডাস্ট্রি আমেরিকার দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় প্রাইভেট কোম্পানি। যার রেভিনিউ ১২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। মাইক্রোসফটের রেভিনিউ যেখানে ৯৩ বিলিয়ন ডলার।
(** এখানে গুলিয়ে ফেলবেন না আশা করি। মাইক্রোসফট একটা পাবলিক কোম্পানি। কোখ ইন্ডাস্ট্রি একটা প্রাইভেট কোম্পানি। মাইক্রোসফটের শেয়ারের মালিক আমেরিকার যেকেউ হতে পারে। শেয়ার মার্কেটে গিয়ে জাস্ট মাইক্রোসফটের শেয়ার কিনতে হবে। কিন্তু কোখ বা কার্গিলের মত প্রতিষ্ঠান একেবারেই প্রাইভেট।
এজন্য মাইক্রোসফটের asset কত, সেটা সহজে পাওয়া গেলেও Koch industries Ltd এর asset হিসাব সঠিকভাবে জানা যায় না। স্পেকুলেশন করা যায় )
তো David Koch এবং তার ভাই চার্লস কোখ মিলে কোম্পানির ৮৪% মালিকানা হোল্ড করে। বাকিগুলো নিকট বন্ধুবান্ধব ও ব্যবসায়িক পার্টনারদের ভেতর।
ডেভিড কোখ এবং চার্লস কোখ দুইজনই দুনিয়ার সেরা ১০ শীর্ষ ধনীর লিস্টে আছেন। কারণ দুইজনের সম্পদের পরিমাণ আলাদা আলাদাভাবে এই মুহুর্তে ৪৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করে। অর্থাৎ দুইভাইয়ের মোট আছে ৮৯ বিলিয়ন ডলার। (বিল গেটসের সম্পদের পরিমাণ এখন ৭৯.৪ বিলিয়ন ডলার )
অর্থাৎ দুইভাইয়ের সম্পদ এক করলে তারা দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী।
Wait a minute !!!!
তারা দুই ভাই নয়। তারা আসলে চার ভাই।
তাদের অন্যদুই ভাই Bill Koch এবং ফেড্রিক কোখের সম্পদের পরিমাণ যথাক্রমে ২ এবং ৪ বিলিয়ন ডলার করে।
অর্থাৎ চার ভাইয়ের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ এই মুহুর্তে প্রায় ৯৫ বিলিয়ন ডলার।
সমস্যা হইলো, বিল আর ফেড্রিক এক গ্রুপ। এবং চার্লস আর কোখ আরেক গ্রুপ।
আপন মায়ের পেটের একই রকম চেহারার এই চার ভাইয়ের ভেতর দুইটা গ্রুপ। দুইভাই মিলে অন্য দুইভাইয়ের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। সেসব পরে বলবো।
শুরুতেই বলি। তাদের ব্যবসা শুরু হল কিভাবে।
ব্যবসা পেয়েছে তারা তাদের বাপের কাছ থেকে। উত্তরাধিকার সুত্রে।
চার ভাইয়ের বাবা ফ্রেড কোখ। (উচ্চারণ আসলে “কোওক” ) /kouk/
ফ্রেড কোখ ১৯২২ সালে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংএর উপর গ্রাজুয়েশন করেন MIT থেকে।
এরপর পেট্রোলিয়াম কোম্পানিতে চাকরি করেন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে।
একসময় নিজেই একটা ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মের মালিক হয়ে যান।
নাম Winkler-Koch Engineering Company
১৯২৭ সালে ফ্রেড কোখ অধিক কার্যকর thermal Cracking process উদ্ভাবণ করেন যেটা দিয়ে ক্রুড ওয়েল থেকে আরো সহজে গ্যাসোলিন বিয়োজিত করা যায়।
সেইসময় আমেরিকার অন্যান্য পেট্রো কোম্পানিগুলো ফ্রেড কোখ’কে ভয়ংকর প্রতিদ্বন্দ্বী এবং তাদের ব্যবসার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত করতে শুরু করে।
এটা অবশ্য দুনিয়ার সব জায়গার নিয়ম। যখন কোনো ছোট কোম্পানি খুব ভালো করা শুরু করে, তখন বড়বড় কোম্পানিগুলো সেই ছোট কোম্পানিকে থ্রেট মনে করে এবং সেটাকে ধ্বংস করার জন্য চেষ্টা করে। ফ্রেড কোখের হয়েছিলো সেই দশা।
জঙ্গলের বড় খাদকগুলোর সাথে টিকতে পারছিলেন না ফ্রেড কোখ। তাকে পেটেন্ট সঙ্ক্রান্ত নানান মামলা দিয়ে জর্জরিত করে রেখেছিলো আমেরিকার বড়বড় তেল গ্যাস কোম্পানিগুলো।
ফলে ফ্রেড কোখ বাধ্য হয়ে দেশের বাইরে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেন।
ফ্রেড কোখের কোম্পানি সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ডিল করে।
জোসেফ স্তালিনের সম্মতিতে ফ্রেড কোখ সোভিয়েত ইউনিয়নে পেট্রোলিয়ামের ডিস্ট্রিলিউশন প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠা করে। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে কোখের ব্যবসা। সোভিয়েত ইউনিয়নের ইঞ্জিনিয়ারদের ট্রেনিং দেবার দায়িত্ব পড়ে কোখের উপর। একসময় প্রায় ১৫ টি তেল শোধনাগার তৈরি হয় সোভিয়েত ইউনিয়নে। কোখের তত্ত্বাবধানে।
আরেক মার্কিন ব্যবসায়ী উইলিয়াম ডেভিসের সাথে মিলে কোখ হিটলারের জার্মানিতে জার্মানির তৃতীয় সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার তৈরি করেন। এই উইলিয়াম ডেভিস ছিলো অনেকটা হেনরি ফোর্ডের মতই এলিট ক্লাসের মার্কিন ধনুকুব, যারা হিটলারের নাৎসি বাহিনীর ফান্ডিং দিতো।
তো এভাবেই কোখের ব্যবসা একসময় বড় হয়। কোখ শক্তিশালি হতে শুরু করে। অনেক অর্থসম্পদের মালিক হয়ে যায়।
এবার আমেরিকাতে কিছু বিজনেস পার্টনারকে সাথে নিয়ে তিনি ১৯৪০ সালে তৈরি করেন Wood River Oil and Refining Company
এটাই পরবর্তীকালে Koch industries lnc হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
ফ্রেড কোখ একজন বর্ণবাদী ছিলো।
আমেরিকার তখনকার সিভিল রাইটস মুভমেন্টকে কমিউনিস্ট প্রোপাগান্ডা হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
কালো এবং সাদা চামড়ার ছেলেমেয়ে একসাথে স্কুলে যাবে, বিয়ে করবে, এসবের বিরোধি ছিলেন ফ্রেড।
ফ্রেডের ছেলেমেয়ে বড় হয়েছে যে গৃহপরিচায়িকার তত্ত্বাবধানে, সেই জার্মান মহিলা ছিলো হার্ডকোর নাৎসি।
ফ্রেড কোখের মৃত্যুর পর তার ছেলেরা কোখ ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্ব বুঝে নেয়।
কোখ ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান CEO এবং চেয়ারম্যান চার্লস কোখ MIT থেকে মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংএর উপর মাস্টার্স করেছেন।
আর ডেভিড কোখ MIT থেকেই কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংএর উপর এম,এস করেছেন।
অন্য দুইভাই বিল কোখ MIT থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংএর উপর এম,এস এবং ফেডরিখ কোখ বিখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পাস করা।
সমগ্র আমেরিকা জুড়ে কোখ ভাইদের রকমারি ব্যবসা।
মূল ব্যবসা পেট্রোলিয়ামের।
এছাড়া সারকারখানা, কাগজ, কেমিক্যালস, ম্যানুফ্যাকচারিং, টিস্যু পেপারসহ নানান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে কোখ ইন্ডাস্ট্রির মালিকানায়।
এক লক্ষের অধিক মানুষের কর্মসংস্থান করেছে কোখ ইন্ডাস্ট্রি।
অর্থবিত্ত তো অনেকের থাকে। কিন্তু কোখ ভাইরা আলোচিত তাদের ক্ষমতা ও প্রভাবের জন্য।
কোখ ভাইদের পলিটিক্যাল ইনফ্লুয়েন্স তাদের এতোটা আলোচিত করে রাখে। তারা তাদের অর্থ দিয়ে পলিটিসিয়ান পকেটে রাখে। তাদের ইচ্ছামত আইন পাস করায়। রিপাবলিকান পার্টির সবচেয়ে বড় ডোনার এই কোখ ভাইয়েরা। আপনি যদি রিপাবলিকান পার্টিকে কোখ ভাইদের পার্টি বলেন, তাহলে ভুল কিছুই বলা হবে না। মার্কিন কংগ্রেস আর সিনেটে যদি রিপাবলিকানরা মেজোরিটি থাকে, তাহলে কোখ ভাইয়েরা তাদের দিয়ে ইচ্ছামত আইন পাস করিয়ে নেয়।
তাদের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভয়ানক রকমের পরিবেশ দূষণ করে। এজন্য রিপাবলিকানরা যখন হাউজ মেজোরিটি থাকে, তখন US Environmental Protection agency, অর্থাৎ EPA-এর ফান্ডিং রিপাবলিকানরা একেবারেই কমিয়ে রাখে। এবং তাদের কর্মকান্ডকে নানানভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেকরে কোখ’দের মত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে অনৈতিক সুযোগ দিয়ে থাকে।
( ** এখানে একটা বিষয় মাথায় রাখা জরুরী। বিল গেইটস বা স্টিভ জবস যেধরণের ব্যবসার সাথে জড়িত, সেই ধরণের ব্যবসাতে খুব একটা পলিটিসিয়ানদের হাতে রাখার দরকার হয় না।
কারণ তারা টেকনোলজি বেজড প্রোডাক্ট তৈরি করতেছে, বাজারে বিক্রি করতেছে। ভোক্তাদের ভালো লাগলে তাদের প্রোডাক্ট কিনবে বা ইউজ করবে। ভালো না লাগলে করবে না। এখানে কারো ক্ষতি হচ্ছে না। কিন্তু পেট্রোলিয়াম বা রিয়েল স্টেট বা মিডিয়া বিজনেসের সাথে জড়িত থাকলে রাজণীতিবিদ হাতে রাখার দরকার হয়। এখানে আইনের ফাক ফোকড় ইউজ করার দরকার হয়। এজন্য দেখবেন এই ধরণের ব্যবসায়ীরা রাজনীতিবিদদের সাথে সখ্যতা বজায় রাখে। রাজনীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। পলিসিগুলোকে নিজেদের অনুকুলে আনার চেষ্টা করে। )
তো যেটা বলছিলাম।
কোখ ইন্ডাস্ট্রি আমেরিকার পলিটিক্সে ভয়ংকর প্রভাব তৈরি করেছে। পুঁজিবাদের স্বর্ণযুগের কার্নেগি, রকারফেলার বা মরগ্যানের মতন করে না হলেও, অনেকাংশে তাদের মতই।
আমেরিকার ABC চ্যানেলের এক ইন্টারভিউতে কোখ ইন্ডাস্ট্রির CEO Charles Koch প্রকাশ্যে বলেছিলেন,
“Koch industries lnc. has a philosophy that profits are above everything else.”
ব্যাপারটা আসলেই তেমন।
রিপাবলিকান দলের অনেক আইডিওলজির সাথে কোখ ভাইদের বিরোধ আছে। কিন্তু রিপাবলিকানদের লিমিটেড গভর্মেন্ট রুলস এন্ড রেগুলেশন আইডিয়াকে কোখ ভাইয়েরা পছন্দ করে।
জাস্ট এটাই মূল কারণ রিপাবলিকান দলের পেছনে কোখ ভাইদের এই নিরঙ্কুশ সমর্থনের।
রিপাবলিকান দল অনেক বেশি করাপ্টেড। সেটা NRA অর্থাৎ national Rifles association এর টাকা খেয়েই হোক, আমেরিকা ইসরাইলের লবিং AIPAC এর টাকা খেয়েই হোক অথবা কোখ ভাইদের টাকা খেয়েই হোক, রিপাবলিকান দলের অধিকাংশ পলিসি আসলে আমেরিকার বড়বড় ধনুকুব আর এলিট শ্রেনীদের স্বার্থ হাসিলের পলিসি।
ডেমোক্রেটরাও যে খুব ভালোকিছু, সেটাও না। ওয়াল স্ট্রিটের বড়বড় ফাইন্যান্সার, যেমন জর্জ সোরাস বা বড়বড় সিলিকন ভ্যালির টেকনোক্রেটরা ডেমোক্রেট দলের পেছনে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে। সেখানেও আর্থিক স্বার্থ জড়িত।
(** বার্নি স্যান্ডার্স বর্তমানে বহুল আলোচিত। এখানে মনে রাখতে হবে, বার্নি স্যান্ডার্স কিন্তু ইন্ডিপেন্ডেট পলিটিসিয়ান। উনি গতবছর ডেমোক্রেট পার্টিতে এসেছেন মুলত প্রেসিডেন্টসিয়াল নির্বাচনে নাম লিখানোর জন্য। উনি তার নীতির কারণে ডেমোক্রেটদের সাথেই তাল মিলিয়ে চলেন মাঝেমাঝে। কারণ রিপাবলিকানদের চেয়ে ডেমোক্রেট তার কাছে অনেক বেটার অপশন )
মার্কিন পলিটিসিয়ানদের ফান্ডিং দেবার জন্য কোখ ভাইয়েরা বেশকিছু সংগঠন বানিয়েছে।
যেমন Americans for prosperity,
American Commitment,
American Future fund,
American Energy alliance,
Libre Initiative Trust,
Public Notice,
Center to protect patient rights,
এই টাইপের ৮০+ সংগঠন আছে কোখ ভাইদের। এসব সংগঠনে তারা টাকা ডোনেট করে। লবিস্ট নিয়োগ করে। এরপর এসব প্রতিষ্ঠান আলাদা আলাদা এজেন্ডা নিয়ে পলিটিসিয়ানদের টাকা ঢালে। পলিসি তৈরি করে।
যেমন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান নমিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সদ্য বিদায়ী ক্যাম্পেইন ম্যানেজার কোরী লুইনডোস্কি ছিলেন Americans for Prosperity সংগঠনের একজন কর্মকর্তা। ঠিক একইভাবে জেব বুশ, মার্কো রুবিও সহ আরো যত বড়বড় রিপাবলিকান নেতা আছে, আপনি সবার সাথেই এমন কোনো না কোনো কোখ প্রতিষ্ঠানের লোকজন দেখবেন।
২০১২ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্টসিয়ান নির্বাচনের সময় কোখ ভাইয়েরা মোট ৪০০+ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিলো রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনিকে জেতাতে।
এবারের ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে তাদের ৯৯০ মিলিয়ন ডলার খরচ করার কথা ছিলো রিপাবলিকানদের জেতানোর জন্য।
কিন্তু সকল প্ল্যান প্রোগ্রাম ভেস্তে যাচ্ছে ডোনান্ড ট্রাম্প নমিনেশন জেতার কারণে। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনে এতো বিপুল অর্থ ইনভেস্ট করার সাহস কোখ ভাইরা পাবে কিনা সন্দেহ। অন্তত যতক্ষণ পর্যন্ত ট্রাম্প নির্বাচন পোলে হিলারির চেয়ে পিছিয়ে আছে, ততক্ষন পর্যন্ত কোখ ভাইরা এগোবে না। রিক্স নেবে না।
হিলারি আরেক করাপ্টেড পার্সন।
এজন্য ট্রাম্প নমিনেশন জেতার পর চার্লস কোখ হিলারিকে প্রোপজ করেছিলো নির্বাচনে ফান্ডিং দেবার। অর্থাৎ রিপাবলিকানদের বাদ দিয়ে ডেমোক্রেট হিলারিকে ফান্ডিং দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। বিনিময়ে keystone pipeline টাইপের কিছু ইস্যুতে হিলারি কোখ ভাইদের পক্ষে থাকবে, এটাই ছিলো তার সম্ভাব্য উদ্দেশ্য।
কিন্তু প্রথমে উত্তর না দিলেও ডেমোক্রেটদের ভেতর থেকে হিলারির উপর প্রেসার তৈরি হয়। সেইসাথে বার্নি স্যান্ডার্সের মত কট্টর কোখবিরোধি পলিটিসিয়ান তখন হিলারির বিরুদ্ধে প্রাইমারি নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করছিলেন। সুতরাং কোখ ভাইদের সমর্থন বা ডোনেশন গ্রহন করাটা হিলারির জন্য হতে পারতো আত্মঘাতি। সম্ভবত এই কারণেই হিলারি টুইট করেছিলো কোখ ভাইদের রিফিউজ করে।
নিচের ছবি ও লিংকে দেখতে পারেন। হিলারির করা ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ সালের টুইট।
https://twitter.com/hillaryclinton/status/724313224305360896
কোখ ভাইদের জন্য বিষয়টা শ্রেফ অপমানের।
আর ট্রাম্পের জন্য বিষয়টা ছিলো শ্রেফ বিনোদন। কোখ ভাইদের বাধ্য হয়েই এখন ট্রাম্পকে ডোনেশন দিতে হবে। অথবা ডোনেশন দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
ব্যাপারটা এখন hobson’s choice
অর্থাৎ হয় ট্রাম্পকে ফান্ডিং দাও। অন্যথায় একুল ওকুল দুইকুলই হারাবে।
তো কোখরা এখন ট্রাই করতেছে ট্রাম্পের দিকে মনোযোগ না দিয়ে সিনেট ও কংগ্রেসের দিকে মনোযোগ দিতে।
অর্থাৎ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা হিলারি, যেই হোক না কেনো, কংগ্রেস আর সিনেটে যদি রিপাবলিকান মেজোরিটি থাকে, তাহলে কোখ ভাইরা তাদের দিয়ে ইচ্ছামত পলিসি বা আইন পাস করিয়ে নিতে পারবে। কে প্রেসিডেন্ট হইলো না হইলো, সেটা ম্যাটার করবে না।
কোখ ভাইদের পরিবেশ দূষণের রেকর্ড জাহির করলে রীতিমত ভয় পাবেন।
টেক্সাসের Smithvile এলাকায় Koch Pipeline leak হয়ে প্রায় ১৭ হাজার গ্যালন অপরিশোধিত তেল পরিবেশে ছড়িয়ে পড়েছে তাদের তেল শোধনাগার থেকে।
এজন্য প্রায় ৫০+ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে হয়েছিলো কোখ ভাইদের।
এছাড়া গ্রিনপিসের ওয়েবসাইটে গেলে কোখ ভাইদের পরিবেশ দূষণ ও মানুষের জীবনমালের ক্ষতি করার আরো অনেক খতিয়ান পাওয়া যায়।
http://www.greenpeace.org/usa/global-warming/climate-deniers/koch-industries/koch-industries-pollution/
• A Koch-owned cellulose facility in Taylor County Florida was responsible for two successive-chlorine dioxide chemical leaks in May, 2014.
• Koch Pipeline Company spilled 17,000 gallons of crude oil (400 barrels) near Austin Texas in October, 2013. (যেটা বললাম)
A road had to be built to access the spill site for cleanup, which contaminated livestock ponds.
হাস্যকর ব্যাপার হল,
Months before the spill, Koch Pipeline was gifted it’s second annual “Environmental Performance Award”from the American Petroleum Institute, the top U.S. oil and gas lobbying organization.
• Subsidiaries of Koch Carbon have accumulated massive piles of petroleum coke in U.S. cities like Detroit and Chicago, where the toxic dust has blown into peoples’ homes from a 5-story-tall pile of pet-coke.
Petcoke is a byproduct of refining tar sands that is usually burned like coal.
• Facing “enormous” cleanup costs for soil and groundwater contamination and high crude oil prices,
Flint Hills announced in 2014 that it would permanently close its North Pole refinery outside of Fairbanks, Alaska. Koch blames contamination on the refinery’s previous owner, Williams Companies.
• Ongoing, permitted releases of hazardous chemicals including benzene, sulfuric acid, hydrogen cyanide from Koch’s oil refinery in Corpus Christi, Texas, where refinery communities experience high rates of illnesses known to be associated with the chemicals released.
• Millions of gallons of toxic paper mill waste from Koch-owned Georgia-Pacific facility in Crossett, Arkansas.
A 2011 complaint to regional and national Environmental Protection Agency offices, filed by Public Employees for Environmental Responsibility (PEER) and Ouachita Riverkeeper, alleged that Koch’s plant was
“Discharging 45 million gallons per day of paper-mill waste, including ammonia and chloride, and metals such as zinc, copper, and mercury.”
এবার দেখুন, পরিবেশ দূষণের জন্য ও জনদুর্ভোগ তৈরির জন্য কোখ ভাইরা কি পরিমাণ শাস্তির মুখোমুখি হয়েছে।
• In 2009, the US Justice Department and EPA announced in 2009 that Koch Industries’Invista subsidiary would pay a $1.7 million penalty and spend $500 million to fix environmental violations at facilities in seven states, in an agreement with the US EPA and Department of Justice.
• In May 2001, Koch Industries paid $25 million to settle with the US Government over a long-standing suit brought by Bill Koch – one of the brothers bought out in 1983 – for the company’s long-standing practice of illegally removing oil from federal and Indian lands.
The value of oil that brother Bill Koch accused Koch Industries of stealing was worth $133 million – over $255 million in 2014 dollars.
•
• In late 2000, the company was charged with covering up the illegal releases of 91 tons of the known carcinogen benzene from its refinery in Corpus Christi.
Initially facing a 97-count indictment and potential fines of $350 million, Koch cut a deal with then-Attorney General John Ashcroft to drop all major charges in exchange for a guilty plea for falsifying documents, and a $20 million settlement. Informing the federal case, a former Koch employee blew the whistle on the company for allegedly falsifying its emissions reports, downplaying the amounts of toxic chemicals it released.
• In 2000, the EPA fined Koch Industries $30 million for its role in 300 oil spills that resulted in more than three million gallons of crude oil leaking into ponds, lakes, streams and coastal waters.
• In 1999 a Koch subsidiary pleaded guilty to charges that it had negligently allowed aviation fuel to leak into waters near the Mississippi River from its refinery in Rosemount, Minnesota, and that it had illegally dumped a million gallons of high-ammonia wastewater onto the ground and into the Mississippi.
•
• In 1996, a rusty Koch pipeline leaked flammable butane near a Texas residential neighborhood.
Warned by the smell of gas, two teenagers drove their truck toward the nearest payphone to call for help, but they never made it.
Sparks from their truck ignited the gas cloud and the two burned alive. The National Transportation Safety Board determined that “the probable cause of this accident was the failure of Koch to adequately protect its pipeline from corrosion” and the ineffectiveness of Koch’s program to educate local residents about how to respond during a pipeline leak.
তাদের পরিবেশ দূষণের কারণে কত মানুষ নানাবিধ রোগে ভুগে মারা গেছে, কত মানুষের আর্থিক ও শারিরীক ক্ষতি হয়েছে,
সেটার সঠিক হিসাব না থাকলেও উপরের তথ্যগুলো থেকে সহজেই অনুমান করতে পারেন।
আমেরিকাতে ক্যান্সার চিকিৎসার খরচ কিন্তু কম নয়। প্রচুর।
কোখ ভাইদের পরিবেশ দুষণের কারণ যেসব মানুষ ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে, তারা কিন্তু কোখ ভাইদের ফান্ডিংএ চলা হাইফাই দামী মেডিকেল ফ্যাসিলিটিগুলোতে চিকিৎসা করার সুযোগ পাচ্ছে না।
এছাড়া পরিবেশ দূষণকারী ফ্রাকিং পদ্ধতিতে তেল তোলার কারণেও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।
আমেরিকা আর চীন মিলে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি কার্বন ইমিশনের জন্য দায়ী। পরিবেশ দুষনের জন্য দায়ী। গ্লোবাল ওয়ার্মিংএর জন্য দায়ী।
ভুক্তভুগী কিন্তু সবচেয়ে বেশি হচ্ছে বাংলাদেশের মত দেশগুলো।
উন্নতবিশ্বগুলো পরিবেশ দূষণ করে বাংলাদেশের মত দেশগুলোকে অল্পকিছু নগদ টাকা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। আর সেই নগদ টাকা পেয়েই আমরা অনেক খুশি।
আমেরিকার রিপাবলিকান পার্টি সরাসরি ক্লাইমেট চেঞ্জ ডিনাই করে। কারণ আর কিছুই না। কারণ হল, কোখ ইন্ডাস্ট্রির কাঁচা ডলারের লোভ।
নির্বাচনের ক্যাম্পেইন ফাইন্যান্সিংএর জন্য আমেরিকাতে আগে রুলস এন্ড রেগুলেশন ছিলো।
কোখ ভাইরা সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের টাকা খাইয়ে এবং টেড ওলসন নামের এক উকিল নিয়োগ করে সুপ্রিম কোর্ট থেকে citizen united রুল পাস করিয়ে নেয়। ফলে এখন একজন ধনুকুব যত ইচ্ছা অর্থ ডোনেট করতে পারে পলিটিক্যাল ক্যাম্পেইনে।
ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলি।
ধরুন, বাংলাদেশের দুইটা দল নির্বাচনে লড়তেছে। নির্বাচনের প্রচার প্রচারণায় প্রচুর টাকা লাগে।
তো ধরুণ, দুইটা দল নানান ব্যক্তিদের কাছ থেকে ডোনেশন নিয়ে ১০-১৫ কোটি টাকার ফান্ডিং করেছে। এখন হঠাৎ করে একজন ধনুকুব এসে যদি একটি দলকে একাই ১০০ কোটি ডলার ডোনেট করে, তাহলে কি হবে ভেবে দেখুন। নির্বাচনে একটি দল ১০-১৫ কোটি টাকার প্রচার প্রচারনা করবে।
আরেকটি দল ১১০-১১৫ কোটি টাকার ক্যাম্পেইন করবে।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই দ্বিতীয় দলটি এগিয়ে থাকবে। তার জেতার সম্ভাবনা অনেকবেশি হয়ে যাবে। এখন দলটি যদি জিতে যায়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই যেই ব্যক্তি ১০০ কোটি টাকা ডোনেট করেছিলো, সে দলটির কাছে আগ্রাধীকার পাবে। তাকে সবার আগে সুযোগ সুবিধা করে দেয়া হবে। তাই না?
তো আগে ডোনেশনের একটা লিমিট থাকলেও এখন আর নেই আমেরিকাতে। ফলে ২০১৬ নির্বাচনে কোখ ভাইয়েরা একাই ৯৯০ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড নিয়ে বসে আছে।
বাই দা ওয়ে, টেড ওলসন নামের সেই উকিল মুলত কোখ ভাইদের পার্সোনাল উকিল। অথচ আমেরিকার এতোবড় একটা পলিসি সে চেঞ্জ করে দিয়েছে।
কোখ ভাইদের আরো একটা ভয়াবহ উদ্দেশ্য হল আমেরিকাতে Public education বন্ধ করে দেয়া।
অর্থাৎ দেশের সকল স্কুল কলেজ প্রাইভেটাইজেশন করা।
এখন আমাদের দেশে ব্যাপারটি চিন্তা করে দেখতে পারেন।
আমাদের দেশের সকল সরকারি স্কুল কলেজ যদি প্রাইভেটাইজেশন হয়, তাহলে আমাদের বাংলাদেশে লিখাপড়ার সিস্টেমটা কেমন হয়ে যাবে, সেটা একবার ভেবে দেখুন।
বড়লোকের ছেলেরা শিক্ষাদিক্ষায় সুযোগ পাবে বেশি।
সেইসাথে equal opportunity এবং equal education বলে কিছুই থাকবে না। যার টাকা আছে, সে ভালো শিক্ষা পাবে।
যার টাকা নেই সে ভালো স্কুল কলেজের দেখা পাবে না।
আমেরিকাতে আরো বাজে একটা ব্যাপার হবে। সেটা হল, সাদা আর কালোরা আলাদা আলাদা স্কুলে পড়তে বাধ্য হবে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারনেই সাদা আর কালোরা আলাদা আলাদা স্কুলে যেতে বাধ্য হবে। আফটার অল, সাদারা আমেরিকাতে প্রিভিলেজড, ডমিনেটিং ফোর্স। আর কালোরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী।
কোখ ভাইরা প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে পাবলিক স্কুল সিস্টেমের বিরুদ্ধে।
বর্তমানে চলমান মার্কিন প্রেসিডেন্টিসিয়াল নির্বাচনে রিপাবলিকানরা common core education সিস্টেম নষ্ট করে state based local education সিস্টেম চালু করার কথা বলতেছে।
তারা ক্ষমতায় গেলে common core education বাতিল করবে। এটা মুলত কোখ ভাইদের একটা স্বপ্ন। অর্থাৎ লিখাপড়াকে প্রাইভেটাইজেশন করা।
এবার বলি, ইউনিভার্সিটিগুলোর কথা।
আমেরিকার নামকরা ইউনিভার্সিটিগুলো অধিকাংশই বেসরকারি। এখানে ডোনেশন অনেক বড় একটা ফ্যাক্টর। কোখ ভাইয়েরা আমেরিকার ১৫০+ ইউনিভার্সিটি এবং কলেজে ডোনেশন দেয় প্রতিবছর। এবং অনেক বড়বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তাদের ফাইন্যান্সিয়াল এগ্রিমেন্ট আছে।
ইন্টারনেটে সার্চ দিলেই দেখবেন Climate change is a hoax টাইপের আর্টিকেল পাবেন, যাতে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমুক প্রফেসর, তমুক প্রফেসরের গবেষণাপত্র দেখবেন যেখানে বলা হয়েছে আসলে ক্লাইমেট চেঞ্জ বলে কিছু নেই।
এই টাইপের প্রোপাগান্ডা সাইন্স পেপারগুলো কোখ ভাই টাইপের লোকেদের টাকা খেয়েই এসব প্রফেসরেরা পাবলিশ করে।
এছাড়া নানাবিধ কারণে ইউনিভার্সিটি প্রফেসর পকেটে রাখতে হবে।
পলিটিক্যাল সাইন্স প্রফেসর থেকে শুরু করে বড়বড় পলিটিক্যাল জার্নালে বা পেপারে কলাম লেখক বড়বড় ডিগ্রীধারী ব্যক্তি, সাংবাদিক ও অর্থনীতিবিদ’দেরও পে-রোলে রাখতে হয় রিপাবলিকানদের নানাবিধ এজেন্ডার পক্ষে একাডেমিক সাফাই গাওয়ার জন্য।
কোখ ভাইরা শ্রমিকের নুন্যতম মজুরী সীমা বাতিল করার পক্ষে।
তাদের যুক্তি হল, স্টেট বাই স্টেট মজুরী নির্ধারণ হবে পরিস্থিতি বুঝে।
অর্থাৎ কোনো স্টেটে যদি প্রতিঘন্টা ৪ ডলার মজুরিতে শ্রমিক খাটানো সম্ভব হয়, তাহলে খাটাবে। এখানে কোনো রুলস এন্ড রেগুলেশন থাকবে না।
কিন্তু ডেমোক্রটরা বা বার্নি স্যান্ডার্সরা বলে ভিন্ন কথা। তারা শ্রমিকের ১৫ ডলার প্রতি ঘন্টা ন্যুনতম মজুরির কথা বলে। অর্থাৎ শ্রমিক এক ঘন্টা খাটালে এই পরিমাণ অর্থ তাকে দিতেই হবে।
কোখ ভাইরা যেহেতু মালিক শ্রেনী, স্বাভাবিকভাবেই তারা এই রুলস এন্ড রেগুলেশন পছন্দ করে না। আমাদের বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি বাড়ানো নিয়েও কম কাহিনী হয়নি। মালিকপক্ষ আপ্রাণ চেষ্টা করে মজুরি কমিয়ে রাখতে। এতে তাদের বেশিবেশি লাভ হয়। সরকার যদিও শক্তহাতে শ্রমিকের মজুরি বাড়ানোর চেষ্টা করে।
যাই হোক, কোখ ভাইদের দৈনিক আয় ১৩ মিলিয়ন ডলার মাত্র। (per day)
কোখ ভাইয়েরা এক দিনে যে অর্থ আয় করে, সেই পরিমাণ অর্থ একজন ১৫ ডলার ঘন্টা প্রতি বেতন পাওয়া শ্রমিকের আয় করতে ৬৯০ বছর কাজ করা লাগবে।
কোখ ভাইয়েদের বিলাসী জীবন নিয়ে কমেডিয়ান জন স্টুয়ার্ট এবং স্টিভেন কোলবেয়ার বেশকিছু প্রতিবেদন করেছে।
কোখ ভাইদের সবচেয়ে জঘন্য পলিটিক্যাল ম্যানুপুলেশনের দৃষ্টান্ত সম্ভবত খুব সম্ভবত আমেরিকার ভোটিং রাইট রিলেটেড।
ভোটিং রাইট সাপ্রেশনের জন্য তাদের ফান্ডিংএ করা বেশকিছু লেজিসলেশন আমেরিকার নির্বাচনের ফলাফলে সুদুর প্রসারে প্রভাব রেখে চলেছে।
Koch Brothers, Exxonmobil এবং National rifle association (NRA) মিলে Alec অর্থাৎ American legislative exchange council বানিয়েছে, যার কাজ মুলত পলিটিসিয়ানদের অর্থ দিয়ে তাদের সুবিধামত আইন তৈরি করা। সমগ্র আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটগুলোতে এরা নানান ধরণের ভোটিং রাইট আইনকানুন বানিয়েছে।
অর্থাৎ ভোট দিতে আপনার আইডি কার্ড লাগবে। এবং সেই আইডি কার্ড করতে হলে নানান শর্ত পুরণ করতে হবে।
ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলি।
যেমন ধরুণ, কালো বর্ণের আমেরিকানরা তুলনামুলক অস্বচ্ছল পরিবারে জন্ম নেয়।
তাদের ভেতর স্বাভাবিক ভাবেই ক্রাইম করার প্রবনতা, গাজা টাইপের নেশার বস্তু সেবনের প্রবনতা বেশি থাকে।
সেইসাথে সমস্যা হইল, একজন কালো বর্ণের আমেরিকানকে পুলিশ সহজেই ছোটখাটো ক্রাইম করার জন্য গ্রেফতার করে জেলে ভরতে পারে।
কিন্তু একজন শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানকে পারে না।
এখন চিন্তা করে দেখুন, আপনার স্টেটে যদি একটা নিয়ম করা হয়, কোনো পুলিশি মামলা কারো বিরুদ্ধে অতীতে বা বর্তমানে থেকে থাকলে সে ভোটার আইডি কার্ড পাবে না, তাহলে ফলাফল কেমন হবে?
যা ভেবেছেন, ঠিক তাই।
অর্থাৎ তুলনামুলকভাবে প্রচুর কালো বর্ণের আমেরিকান ভোটার আইডি কার্ড পাবে না। ভোট দিতেও তারা পারবে না।
এবার উপরে যা বললাম, সেটার সাথে নিচের তথ্যগুলোকে কানেক্ট করূণ। দেখুন, কোনো অর্থ খুজে পান কিনা !!
আমেরিকার Bureau of Justice statistics এর প্রতিবেদন অনুসারে,
2013 সালে আমেরিকার প্রতি ১১০ জনের ১ জন জেলে গেছে কোনো না কোনো ক্রাইম করে। এবং প্রতি ৫১ জনের ১ জন প্যারোলে আছে।
যেমন এই মুহুর্তে আমেরিকার প্রায় ২৩ লক্ষ মানুষ জেলে আছে। যেখানে আমেরিকার জনসংখ্যা ৩১ কোটি।
অর্থাৎ প্রতি ১ লক্ষ মানুষের ভেতর প্রায় ৭০০ জন মানুষ জেলে আছে।
আমেরিকাতে দুনিয়ার মাত্র ৪.৪% মানুষ বসবাস করে। অথচ দুনিয়ার ২৩% কয়েদী আছে আমেরিকাতে।
দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি জেলখানাও আছে আমেরিকাতে।
এসব জেল খানাগুলোকে কাজেও লাগাচ্ছে বিভিন্ন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি। সস্তা শ্রম পাচ্ছে। অর্থাৎ কার্যত সেগুলো লেবার ক্যাম্প।
খোদ আমেরিকার ব্যুরো অফ জাস্টিস স্ট্যাটিস্টিক্স অনুসারে, প্রতি ১৫ জন কালোবর্ণের আমেরিকানদের ভেতর ১ জন,
প্রতি ৩৬ জন হিস্প্যানিকের ভেতর ১ জন,
এবং প্রতি ১০৬ জন শ্বেতাঙ্গ মার্কিনীর ভেতর ১ জন জেলে আছে।
আমেরিকার জনসংখ্যার ৩০% জনগণ অশ্বেতাঙ্গ।
অথচ আমেরিকার জেলখানাগুলোর ৬০% কয়েদী অশ্বেতাঙ্গ অর্থাৎ হয় কালো অথবা হিস্প্যানিক।
প্রতি ৩ জন কালোবর্ণের আমেরিকানের ভেতর ১ জন জীবনের কোনো না কোনো সময় পুলিশি মামলায় ফেঁসেছে বা ফাঁসার চান্স আছে।
১৯৮০ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রায় আড়াই কোটি মানুষ ড্রাগ রিলেটেড মামলায় গ্রেফতার হয়েছে।
আমেরিকার নেশাখোড়দের ভেতর কালোবর্ণের মানুষের সংখ্যা ১৪% হলেও ড্রাগ রিলেটেড মামলায় জেলে যাওয়া আসামীদের ভেতর কালোবর্ণের মানুষের সংখ্যা ৩৭%
এছাড়া কিশোর অপরাধের দিক দিয়েও কালোবর্ণের মানুষেরা জেলে বেশি যাচ্ছে।
এর জন্য দুইটা ব্যাপার দায়ী।
প্রথমত, কালো’রা আমেরিকার পিছিয়ে পড়া বা তুলনামুলক কম প্রিভিলেইজড জনগোষ্ঠী।
দ্বিতীয়ত, একই অপরাধ করে একজন শ্বেতাঙ্গের চেয়ে একজন কৃষ্ণাঙ্গের জেলে যাওয়ার প্রবাবিলিটি অনেক বেশি। এবং খুব মাইনর ক্রাইম করেও একজন কৃষ্ণাঙ্গ জেলে চলে যেতে পারে সহজেই। এর কারণ, law enforcement agency গুলোতে সাদা’দের তুলনামুলক প্রাধান্য।
এবার চিন্তা করূণ, ভোটার আইডি আইনে যদি উল্লেখ করে দেয়া হয়, যাদের নামে পুলিশি মামলা আছে, বা যারা অতীতে কোনো না কোনো সময়ে পুলিশি মামলায় ফেঁসে গেছিলো, তারা সরকারি চাকরিতে ঢুকতে পারবে না + ভোটার আইডি কার্ড পাবে না, তাহলে কি হতে পারে?
কারা সবচেয়ে বেশি ভোটিং রাইট থেকে বঞ্চিত হবে?
ঠিকই ধরেছেন।
কালোরা।
আমেরিকাতে রিপাবলিকানরা সর্বদা ভোটার আইডি আইন কঠিন থেকে আরো কঠিন করার চেষ্টা করে। কারণটা সহজেই বোধগম্য।
people with color, অর্থাৎ কালো এবং নন শ্বেতাঙ্গ অন্যান্য আমেরিকানদের ভেতর রিপাবলিকানদের জনপ্রিয়তা কম। ভোট কম।
এজন্য তারা কঠিন ভোটার আইডি আইনের পক্ষে।
এতে বিপুল পরিমাণ people with color অর্থাৎ নন শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান মানুষ ভোটারাধিকার প্রয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।
ফলাফল, রিপাবলিকানদের জয়ের সম্ভাবনা বাড়বে।
আবার ডেমোক্রেটরা সবার জন্য ভোটারাধিকার সহজ করার জন্য চেষ্টা করে। এর পেছনেও কোনো মহৎ উদ্দেশ্য নেই। আছে সেই ভোটের রাজনীতি। কালো এবং হিস্পেনিক জনতার ভোট ডেমোক্রেটরা বেশি পায়। সহজ হিসাব।
এজন্য ডেমোক্রেটরা ড্রাগস আইন সহজ করার চেষ্টা করে। গাজা টাইপের নানান মাদক দ্রব্যকে বৈধতা দেবার চেষ্টা করে। কারণ মারুয়ানা বা গাজা বৈধ করতে পারলে বিপুল পরিমাণ ভোটার পাবে তারা।
Koch brothers’ funded, ALEC এবং America for prosperity টাইপের প্রতিষ্ঠানগুলো সমগ্র আমেরিকাতে ভোটিং রাইট শক্ত করার জন্য লবিং করে।
এখানে বলে রাখি, আমেরিকান রাজনীতিতে লবিং একেবারে বৈধ।
অথচ ওই জিনিসটা আমাদের দেশে করলে সেটা একেবারেই অবৈধ।
ব্যাপারটা ক্লিয়ার করার জন্য, আরো একটা উদাহরণ দেয়া যাক।
ধরূণ, আপনি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হতে চাচ্ছেন। তো ভোটে দাঁড়িয়েছে।
অর্থমন্ত্রী হবার আগে আপনাকে ভোটে জিতে সংসদ সদস্য হতে হবে তো। তাই না?
তো আপনি ভোট করতেছে। ভোটের ক্যাম্পেনিং করতে বিপুল অর্থ খরচ করতে হবে আপনাকে। অন্যথায় জিতবেন কিভাবে?
আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী ভোটে জেতার জন্য কোটি কোটি টাকার প্রচারণা চালাচ্ছে। তো আপনাকেও তো চালাতে হবে। নাকি?
তো টাকা আসবে কোথাথেকে? আপনার বাপের তো আর জমিদারি নেই।
তো ধরূণ, একটি বিদেশি Car কোম্পানি আপনার নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে মোটা টাকা ডোনেশন দিলো। শর্তটা হল, আপনি ভোটে জিতলে অর্থমন্ত্রী হয়ে প্রথম বছরেই বিদেশী গাড়ির উপর আমদানি শুল্ক কমাবেন।
তো আপনি ভোটে জিতে গেলেন।
অর্থমন্ত্রী হলেন।
অর্থমন্ত্রী হয়ে আমদানি শুল্ক কমালেন। ব্যস, গাড়ি কোম্পানির বিক্রি বেড়ে গেলো। কারণ গাড়ির দাম কমে গেছে। বেশি মানুষ কিনতেছে।
সংসদে দাঁড়িয়ে আপনি নানান যুক্তি তর্ক তুলে ধরলেন। দেশের উন্নতির জন্য বিদেশি গাড়ির উপর শুল্ক কমানো কেনো দরকার, সেই মর্মে এক জালাময়ী ভাষণ দিয়ে জনগনকে ভুগোল বোঝালেন।
তো এটাই হল লবিং।
এটা বাংলাদেশে কেউ করলে, সেটাকে আমি আপনি দুর্ণীতি বলবো।
আমেরিকাতে এটা একেবারেই বৈধ।
এটাকে আপনি যদি দুর্ণীতি হিসেবে বিবেচনা করেন, তাহলে আমেরিকা নির্সন্দেহে দুনিয়ার সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ দেশের তালিকায় সবার উপরে থাকবে।
কারণ আমেরিকাতে এখন লবিং বিজনেস অন্যতম প্রফিটেবল বিজনেস।
ভুলে গেলে চলবে না, আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গরা ভোটারাধিকারের জন্য দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছে।
খুব বেশি আগের কথা না। মাত্র ছয় দশক আগেও আমেরিকাতে সাদা আর কালোদের জন্য আলাদা আলাদা স্কুল ছিলো, টয়লেট ছিলো, ট্রান্সপোর্টেশন ছিলো। সবই ছিলো আলাদা আলাদা।
সেই বিভেদ কাগজে কলমে মুছে গেলেও সেটা ধীরে ধীরে আবার ফিরে এসেছে। একটু ভিন্নভাবে। স্যাগগ্রিগেশন প্রসেসটা এবার হচ্ছে আরো সুক্ষভাবে।
আমাদের বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করলে ইউরোপ আমেরিকা থেকে নানান পর্যবেক্ষক দল আসে। দেশের নির্বাচন আবাধ, নিরপেক্ষ এবং সঠিক হয়েছে কিনা, সেই সার্টিফিকেট তারা দিয়ে থাকে। আমাদের দেশের পলিটিসিয়ানরা সেগুলোকে অনেক মুল্য দেন।
প্রশ্ন হল, আমেরিকার নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ হয়েছে কিনা, সেটা দেখার জন্য পর্যবেক্ষক আসে কোথা থেকে?
উত্তর হল, তাদের ভেতর থেকেই।
বাইরের কোনো দেশের পর্যবেক্ষক তারা ডাকে না।
True the vote টাইপের Koch funded প্রতিষ্ঠানগুলো আমেরিকার ভোটকেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ করে।
True the vote-এর প্রায় ১০ লক্ষ সেচ্ছাসেবক আছে, যারা মার্কিন সরকারের ছাড়পত্র নিয়ে সমগ্র আমেরিকাতে নির্বাচনী ভোটকেন্দ্রগুলো নজরদারি করে। বলাবাহুল্য, সেচ্ছাসেবকদের অধিকাংশ সাদা মার্কিনী। এদের বিরুদ্ধে নানান সময়ে কালোবর্ণের মানুষদের ভোটকেন্দ্র হয়রানী করার অভিযোগ এসেছে।
বিশেষ করে টেক্সাসের মত স্টেটগুলোতে black voter suppression করার কাজটি এরা ভালোমতই করে।
যে county গুলোতে কালো ভোটার বেশি, সেখানে ভোটিং বুথ বসাবে কম করে। ফলাফল, বেশি ভোট পড়বে না। সেইসাথে ভোটিং প্রসেসটাও slow করে দেবে।
ব্যাপারটাকে টিকেট কাউন্টারে প্রচন্ড ভিড়ের সময় টিকেট কাটার সাথে তুলনা করতে পারেন।
অথবা ঈদের আগে ব্যাংকের সামনে টাকা তোলার লাইনের সাথে তুলনা করতে পারেন।
বুথ বেশি হলে কিন্তু সময় কম লাগবে। হয়রানিও মানুষ কম হবে।
ভোট দিতে গিয়ে যদি এতো ভোগান্তিতে মানুষ পড়ে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই কেউ ভোট দিতে যাবে না। সহজ হিসাব।
আরো একটা জিনিস বেশ ভয়াবহ।
আমেরিকাতে General Election যেদিন হবে, সেইদিনটিকে তারা সরকারি ছুটি ঘোষণা করে না !!!
সেইদিনটি হবে একেবারে কর্মব্যস্ত দিন। ফলে, ওয়ার্কিং ক্লাস আমেরিকানদের জন্য ভোট দিতে যাওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।
এবার বার্নি স্যান্ডার্স দাবি জানিয়েছিলো, ২০১৬ সালের General Election day টাকে ছুটি ঘোষণা করতে।
কিন্তু ছুটি হবে বলে মনে হয় না।
এবার চিন্তা করে দেখুন। আপনি এক একজন শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান। আপনি মনেমনে রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক। আপনার ফ্যাক্টরিতে প্রচুর কৃষ্ণাঙ্গ কম বেতনে চাকরি করে। তো আপনার ধারণা, তারা সবাই ডেমোক্রেটদের ভোট দেবে। সুতরাং ভোটের দিন আপনি কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলেন। এমন ব্যবস্থা করলেন, যাতে তাদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগই না হয়।
এই টাইপের নানান কায়দায় ভোটার suppression হয়।
আমেরিকাতে জেনারেল ইলেকশনে ভোটার টার্ন আউট মাত্র ৪০-৬০% এর ভেতরে থাকে। আমেরিকান স্ট্যান্ডারে এটা কমই।
এর কারণ মুলত এই ভোটার সাপ্রেশন।
১৯৮১ সালের দিকে আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ জনতার পরিমাণ ছিলো ৮৪%
তখন রিপাবলিকান দলের পক্ষে ভোটে জিতে আসাটা যত সহজ ছিলো, এই ২০১৬ সালে এসে তত সহজ নয়।
এখন ৭২% আমেরিকান শ্বেতাঙ্গ। হিস্প্যানিকদের বাদ দিলে শ্বেতাঙ্গ আছে ৬৩%
রিপাবলিকানদের ভোটের সিংহভাগই আসে এই নন হিস্প্যানিক শ্বেতাঙ্গদের ভেতর থেকে।
অর্থাৎ ক্রমেই রিপাবলিকানদের জন্য ভোটে জেতাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
এজন্যে নানান ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে তারা। যার ভেতরে আছে voter right suppression, (যেটা নিয়ে উপরে বললাম) ... সেইসাথে আছে gerrymandering
Gerrymandering জিনিসটা কি?
এটা আশা করি অনেকেই জানেন। আমি বেশি ডিটেলসে যাবো না। যদি কেউ Gerrymandering না বোঝেন, তাহলে অন্তত এটা চিন্তা করুন, ঠিক যেকারণে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুইভাগ করা হল, সেটাই gerrymandering.
যেমন টেক্সাসে নন হিস্প্যানিক আমেরিকান এবং কালোবর্ণের মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে।
টেক্সাস রিপাবলিকানদের ঘাটি। সেখানকার স্টেট গভর্মেন্টও রিপাবলিকানদের দখলে। কিন্তু নন হিস্প্যানিক ও কালোবর্ণের মানুষ বাড়তে থাকলে একসময় টেক্সাসও ক্যালিফোর্নিয়ার মত ডেমোক্রেট ঘাটিতে পরিনত হবে। সুতরাং টেক্সাসের ভেতরে ইচ্ছামত gerrymandering করা হচ্ছে। লোকাল গভর্মেন্ট নির্বাচনে যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়াচ্ছে।
যেসব এলাকাতে সাদারা বেশি থাকে, সেগুলোকে ছোটছোট county তে ভাগ করা হচ্ছে। ফলে সাদাদের এলাকা থেকে নির্বাচিত আইনপ্রনেতার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। আর কালোদের বসবাসের এলাকাকে একসাথে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে কালোদের বসবাসরত এলাকা থেকে কম legislator আসে স্টেট গভর্মেন্টে।
এতোটুকু পড়ার পর হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন, বারাক ওবামা কি এসব জানেন না? তিনি কি এসব সমাধান করতে পারেন না? তিনি তো ডেমোক্রেট + একজন মিক্সড রেসের মানুষ। অর্থাৎ তার বাবা কৃষ্ণাঙ্গ আর মা শ্বেতাঙ্গ।
উত্তর হল, বারাক ওবামা যত সহজে একটা executive order জারি করে ইরাক বা সিরিয়ার মত একটি দেশকে ধ্বংস করে দিতে পারেন, তত সহজে নিজের দেশের সমস্যার সমাধান করতে পারেন না। কারণ নিজের দেশের ভেতর তার এতো ক্ষমতা নাই।
যেমন, বর্তমানে আমেরিকাতে কি হচ্ছে, সেটাই দেখুন। বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট। ওদিকে কংগ্রেস এবং সিনেট দখল করে আছে রিপাবলিকানরা।
বারাক ওবামা আজ প্রায় ৮ বছর ক্ষমতা থাকলেন। এখন পর্যন্ত একটা gun control law পাস করতে পারলেন না।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তার নিজ দেশে কখনোই ডিকটেটরের মত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাকে কংগ্রেস এবং সিনেট, সেইসাথে স্টেট গভর্নরদের সাথেও কাজ করতে হয়।
আর মার্কিন কংগ্রেস এবং সিনেট, সেইসাথে প্রতিটি স্টেট গভর্মেন্টে চলে লবিং অর্থাৎ টাকার খেলা।
দিনশেষে পুঁজিবাদী আমেরিকাতে পুঁজিপতিরাই মুল ক্ষমতায় থাকে।
একসময় ভ্যান্ডারবিল্ড, মরগ্যান, ফোর্ড, কার্নেগী, রকারফেলার, কোল্ট, ফোর্ডরা ছিলো।
এরপর এখন ল্যারি পেজ, সার্গে ব্রাইন, ব্লুমবার্গ, গেইটস, বাফেট, ট্রাম্প, এডেলসন, সোরাস আর কোখ ভাইদের রাজত্ব।
দিনশেষে আমেরিকাতে কি ধরণের আইন পাস হবে, আমেরিকার ভবিষ্যৎ কোনদিকে যাবে, এটা নির্ভর করে এসব ধনুকুবদের উপর।
কোনো ধনুকুব শ্রেনী ডেমোক্রেটদের পেছনে টাকা ঢালে। (যেমন সিলিকন ভ্যালির টেকনোক্রেটরা)
আবার আরেক ধনুকুব শ্রেনী রিপাবলিকানদের পকেটে টাকা ঢালে।
পলিটিসিয়ানরা জাস্ট পাপেট।
তাদের ডোনার আর স্পেশ্যাল ইন্টারেস্টের রাবার স্টাম্প।
এজন্য আপনি এতোশত shooting ইনসিডেন্টের পরও আমেরিকাতে শক্ত অস্ত্র আইন করতে দেখবেন না।
কারণ রিপাবলিকান, এবং সেইসাথে কিছু ডেমোক্রেট পলিটিসিয়ান রেগুলার NRA এর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা পায়।
আমেরিকার mass shooting ইনসিডেন্টে রেগুলার প্রতিবছর হাজার পঞ্চাশের উপর মানুষ মারা যায়। অথচ একটা শক্ত gun law কেউ করে না। কারণটা সবাই জানে।
বড়বড় অস্ত্র কোম্পানিগুলো এবং বিশেষ করে gun manufacturers কোম্পানিগুলো প্রতিবছর আমেরিকার ভেতরে অস্ত্র বিক্রি করে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয় করে। আমেরিকার মানুষের অস্ত্রের প্রতি ফ্যাসিনেশন অনেক পুরনো। শিকার করা এবং আত্মরক্ষার নাম দিয়ে অস্ত্র কেনা যায় সহজেই। একজন শ্বেতাঙ্গ মার্কিনীর জন্য দোকানে গিয়ে একটা AR-15 assault rifle কেনা ঠিক ততটাই সহজ, যতটা সহজ তার জন্য দোকানে গিয়ে একটা ফ্রিজ বা টেলিভিশন কেনা !
কোখ ভাইদের America for Prosperity টাইপের সংগঠন anti union আইনের জন্য লবিং করেছে। করে যাচ্ছে।
সেইসাথে আছে পুঁজিবাদের পোষা মিডিয়া।
শ্রমিকদের দাবিদাওয়া আদায় করার জন্য লেব্যার ইউনিয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। পুঁজিবাদীরা স্বাভাবিকভাবেই সেটা পছন্দ করে না।
মে দিবস, অর্থাৎ শ্রমিক দিবসের সেই রক্তে ভেজা ইতিহাস কিন্তু আমেরিকারতেই হয়েছিলো।
অথচ আজকের আমেরিকাতে শ্রমিকদের জন্য দাবিদাওয়া আদায় করা আরো কঠিন হয়ে গেছে।
ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে পঙ্গু করা হয়েছে। দুর্বল করা হয়েছে নানান আইন কানুনের ফাঁদে ফেলে।
একারণে আমেরিকাতে ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ড্রাস্ট্রিগুলো খুব সহজেই অতিরিক্ত লাভের আশায় আমেরিকা থেকে ফ্যাক্টরি সরিয়ে মেক্সিকো বা চীনের মত আরো সস্তা শ্রমের দেশে চলে যাচ্ছে। আমেরিকাতে প্রচুর মানুষ বেকার হচ্ছে। রাতারাতি হাজার খানেক শ্রমিক কর্ম হারালেও তারা দাবি আদায়ে রাস্তায় নামতে পারতেছেনা। নুন্যতম মজুরি বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে।
ওদিকে পুজিবাদী মিডিয়া শ্রমিকের স্বার্থের পক্ষে কেউ কথা বললেই তাকে কমিনিস্ট বা সোশ্যালিস্ট ট্যাগ দিচ্ছে। আমেরিকাতে এগুলো একরকম ‘গালি’
দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাদী আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেতরে চলা স্নায়ু যুদ্ধের সময় থেকে মিডিয়া যেভাবে সমাজতন্ত্রকে ডেমোনাইজ করেছে আমেরিকাতে, তাতে এটা স্বাভাবিক। এখনো সমাজতন্ত্র বলতে আমেরিকার মানুষ ভেনিজুয়েলা বা কিউবার উদাহরণ টানে। মিডিয়াতে বারবার দেখানো হয়, ভেনিজুয়েলার দুরাবস্থা। অথচ ফিনল্যান্ড বা ডেনমার্কের উদাহরণ মিডিয়াতে আসে না।
তবে স্রোতের বিপরীতে গিয়ে democrat socialist বার্নি স্যান্ডার্স কিন্তু ঠিকই আমেরিকানদের মন জয় করেছে।
বার্নি’কে তার প্রতিপক্ষরা ‘socialist’ বলে বলে গালি দিয়েছে। কিন্তু এতে বার্নির খুব ক্ষতি হয়নি।
বরং আমেরিকার মানুষ গুগল সার্চ দিয়েছে, “what is socialism?” লিখে।
বার্নির কারণে যদি আমেরিকার মানুষ “What is democratic socialism?” জিনিসটা সম্পর্কে একটা ধারনা পায়, সেটাও বা কম কি?
কোখ ভাইদের মত ধনুকুবের কাছে বার্নি স্যান্ডার্সের মত সোশ্যাল ডেমোক্রেট রীতিমত আতঙ্ক। এক বিভীষিকার নাম।
আমেরিকার তরুণ সমাজ সোশ্যালিজমের প্রতি ঝুঁকে যাক, এটা অন্তত জীবনেও পুঁজিপতিরা চাইবে না। তাহলে তাদের ক্যাপিটালিজমের স্বর্গ আমেরিকা আর তো আমেরিকায় থাকবে না।
সুতরাং ডেমোক্রেট হোক বা রিপাবলিকান, বার্নির মত সোশ্যালিস্টের উত্থান যে করেই হোক ঠেকাবে। সেটা মিডিয়া দিয়েই হোক বা গায়ের জোরে।
কোখ ভাইদের ফান্ডিং ইতিমধ্যে ৯০টি anti union বিল পাস করেছে ৩৬ টি স্টেটে।
মিডিয়া দিয়ে অনরবরত প্রচারনা চালানো হচ্ছে, union free environment শ্রমিকদের জন্য ভালো। অথচ বাস্তবে হচ্ছে উল্টো।
গত ৫০ বছর ধরেই আমেরিকার মিডিল ক্লাস ছোট হয়ে যাচ্ছে। ধনী গরিবের বৈষম্য বাড়তেছে প্রতিনিয়ত। গরিব আরো গরিব হচ্ছে, ধনী আরো ধনী হচ্ছে।
১০% মানুষের কাছে যত সম্পদ আছে, বাকি ৯০% মানুষের কাছেও তত সম্পদ নাই।
কোখ ভাইদের সবচেয়ে বড় শত্রু “without any doubt” বার্নি স্যান্ডার্স।
বার্নি স্যান্ডার্স গত তিন দশক ধরে কোখ ভাইদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলে যাচ্ছে।
যেমন কোখ ভাইরা আমেরিকা থেকে social security উঠিয়ে দেবার এবং retirement age বাড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বার্নি সরাসরি কোখ ভাইদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিলো তখন। কোখ ভাইদের দাবি, retirement age করতে হবে ৭০ বছর।
বার্নির কথা হল, ৭০ বছর রিটায়ারমেন্ট বয়স নির্ধারণ করা অন্যায়।
এতে করে তরুণ ছেলেমেয়েরা workforce হিসেবে কর্মক্ষেত্রে সহজে ঢুকতে পারবে না পুরনোদের রিপ্লেস করে।
অর্থাৎ তরুন জনতার জন্য কর্মক্ষেত্রে কমে যাবে। ফলাফল, কোখ ভাইদের মত ধনুকুবদের দুইদিক দিয়ে লাভ হবে। খোদ আমেরিকার তরুনেরাই যদি বেকার থাকে, তাহলে জব মার্কেটে চাপ থাকবে। ফলে তরুনদের কম বেতনে খাটানো যাবে। সেইসাথে বাইরের দেশ থেকে ইমিগ্রেন্ট কম আসবে আমেরিকাতে।
অর্থাৎ সুদুর প্রসারি চিন্তাভাবনা।
ওদিকে কোখ বাদ্রাররা ফক্স নিউজের মত চ্যানেলগুলোতে রিটায়ারমেন্ট বয়স বাড়ানোর পক্ষে পেইড বুদ্ধিজীবি ও পন্ডিতদের নিয়োগ দিয়েছে।
তারা রিটায়ারমেন্ট বয়স বাড়ানোর পক্ষে সাফাই গেয়েছে।
জর্জ মেসন ইউনিভার্সিটির মত বেশকিছু নামিদামি ভার্সিটিতে কোখ ফান্ডেড গবেষণাপত্র পয়দা করা হয়েছে। যেখানে আমেরিকার আমজনতাকে একাডেমিক এঙ্গেলে বোঝানো হয়েছে, রিটায়ারমেন্ট বয়স বাড়ানোটা কেনো জনকল্যানমুলক হবে।
ওইযে যেমন মাঝেমাঝে দেখবেন, সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, বা মদ খেলে শরীর ভালো থাকে, টাইপের আজব আজব সব বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল আমেরিকার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়। এগুলো যেমন টাকা খেয়ে গবেষণা রিপোর্ট তৈরি করা হয়,
কোখ ভাইদের টাকায় তেমন রিটায়ারমেন্ট বয়স রিলেটেড গবেষণাও প্রকাশ হয়েছিলো।
যেমন বছরখানেক আগে আমেরিকার আমজনতা ফেটে পড়ে Keystone XL pipeline বানানোর বিরুদ্ধে।
কোখ ভাইরা এই পাইপ লাইন বানাতে চাচ্ছিলো।
তারা কানাডা থেকে Tar Sand পাইপ লাইনে করে আমেরিকার ভেতর দিয়ে এনে অপরপ্রান্তের টেক্সাসে পেট্রোলিয়াম ফ্যাক্টরিতে নিয়ে আসতে চাচ্ছিলো।
Tar Sand হল চরম পরিবেশদূষণ সৃষ্টিকারি জ্বালানি।
Tar Sand থেকে পেট্রোলিয়াম প্রস্তুত করা যায়। কোখ ভাইয়েরা সেটা করতে চাচ্ছিলো।
সমস্যা হল, গোটা আমেরিকার উপর দিয়ে এই পাইপ লাইন আসবে, আমেরিকার একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে এই পাইপলাইন পৌছাবে, anyhow, anywhere যদি কখনো পাইপলাইন ফেটে Tar sand পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে, তবে সেটা হবে ভয়াবহ ব্যাপার।
পরিবেশের ভয়াবহ বিপর্জয় ঘটবে।
প্রায় ১০ হাজার মানুষ white house ঘেরাও করে এই Keystone XL pipeline এর বিরুদ্ধে।
এগিয়ে আসে বার্নি স্যান্ডার্স।
মানুষের তুমুল বিক্ষোভের মুখে শেষমেষ white house এই keystone XL pipeline এর কাজ বন্ধ (pending) রাখতে নির্দেশ দেয়। বলাবাহুল্য, কোখ ভাইয়েরা হাউজ মেজোরিটি রিপাবলিকানদের টাকা দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করে এই পাইপলাইন তৈরির কাজ চালিয়ে যাবার। কিন্তু কাজ হয়নি। জনতা ঠিকই প্রতিরোধ করেছে।
আজ যখন আমাদের বাংলাদেশে সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লাভিক্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বানানোর কাজ চলছে, তখন আমার সেই Keystone XL pipeline এর কথা মনে পড়ে।
আমাদের ভাগ্য খারাপ। আমাদের একটা বার্নি স্যান্ডার্স নাই।
কোখ ভাইয়েরা fox news টাইপের কনজার্ভেটিভ মিডিয়া দিয়ে আপ্রাণ প্রচার প্রচারণা চালিয়েছিলো Keystone pipeline-এর পক্ষে।
এই পাইপলাইন+রিফাইনারি তৈরি হলে বহু মানুষের চাকরিবাকরি হবে, এই পাইপলাইন অনেক সুরক্ষিত ও মজবুত হবে, ফলে পাইপ ফেটে পরিবেশ দূষণের কোন সম্ভাবনা নাই, এমন নানান ভুজুং ভাজুং মানুষকে গেলানোর চেষ্টা করেছিলো fox news.
ভাড়াটে পয়সার কাছে মাথা বিক্রি করা বুদ্ধিজীবি নিয়োগ করেছিলো। কিন্তু কাজ হয়নি।
বার্নি স্যান্ডার্সের মত পলিটিসিয়ানরা মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলো কোখ ভাইদের ছলচাতুরির ব্যাপারে।
কোখ ভাইদের বিরুদ্ধে বার্নি স্যান্ডার্সের লড়াই দীর্ঘদিনের।
এবারের চলমান মার্কিন প্রেসিডেন্টসিয়াল নির্বাচনে বার্নি স্যান্ডার্স ভুয়সী প্রশংসা পেয়েছিলো কোখ এবং wall-street কে আক্রমণ করে।
যাই হোক, ব্যক্তিজীবনে ডেভিড কোখ তিন সন্তানের জনক। তার স্ত্রীর নাম জুলিয়া।
অন্যদিকে চার্লস কোখ দুই সন্তানের জনক।
এই পোস্টটি লিখা মুলত কোখ পরিবার ও কোখ ভাইদের কর্মকান্ড নিয়ে হালকা ধারনা দেবার জন্য।
ব্রিফলি অনেকগুলো বিষয় এখানে তুলে আনার চেষ্টা করেছি।
চলমান মার্কিন নির্বাচনে কোখ ভাইদের ভুমিকা ডিসাইসিভ না হলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
ডেমোক্রেসি তখনই ভালো, যখন জনতা তাদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ পায়। যখন জনতা ক্ষমতার উৎস হয়।
সমস্যা হল, জনতাকে হতে হবে well informed এবং sensible... সুবিবেচক। নুন্যতম শিক্ষিত।
যতটুকু নলেজ থাকলে একজন আমজনতা ভালোমন্দের বিভেদ ধরতে পারবে, এবং নিজের ও দেশের জন্য কোনটা ভালো, সেটা বুঝতে পারবে,
অন্তত ততটুকু জ্ঞান একজন ভোটারের থাকা প্রয়োজন।
কিন্তু জনতার জ্ঞান বা দিনদুনিয়া সম্পর্কে ধ্যানধারণা আসে কোথাথেকে?
মিডিয়া থেকে। পত্রপত্রিকা থেকে। বুদ্ধিজীবিদের টক শো বা লিখা ব্লগ + বই থেকে।
এবার চিন্তা করুণ।
একটি দেশের এলিট শ্রেনী যদি সেই দেশের মিডিয়া নিয়ন্ত্রন করতে পারে, তাহলে তারা নিশ্চিতভাবেই সেই দেশের জনতার ব্রেনে ইচ্ছামত পারসেপশন, information, ঢোকানোর ক্ষমতা পেয়ে যাবে।
এসব নিউজ মিডিয়া ফলো করে জনতার দুনিয়া সম্পর্কে আইডিয়া হবে। ভালোমন্দের ধারনা তৈরি হবে।
এবং সেই ধারণা থেকেই তারা পলিটিসিয়ানদের এজেন্ডাকে কখনো সমর্থন দেবে, আবার কখনো উপেক্ষা করবে।
ফলে পলিটিসিয়ানরাও নিয়ন্ত্রিত হবে জনতা দ্বারা।
যেমন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব কথা বলে এবার নির্বাচনে রেকর্ড পরিমান ভোট পেয়ে রিপাবলিকান নমিনেশন জিতলো, এই ধরনের প্রস্তাব বা ইশতেহার নিয়ে যদি আজ থেকে ১৬ বছর আগে আমেরিকাতে ভোটে দাড়াতো, তাহলে খুব বাজে ভাবে হারতো।
অথচ গত ১৬ বছরে ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। ২০০১ এর পর থেকে অনরবরত মিডিয়া ব্যাশিং ইসলামোফোবিয়া এবং জেনোফোবিয়া বাড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন জনতার ভেতর। সেইসাথে ভীতি তৈরি করেছে। সবমিলিয়ে আরো বহুকিছুর স্বারমর্ম হল ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই উত্থান।
জনতার ভেতরে আগে থেকেই তৈরি হওয়া সেন্টিমেন্ট, পারসেপশন এবং পুঞ্জিভুত ক্ষোভকেই মুলত ট্রাম্প cash করতেছে এই নির্বাচনে।
এভাবে কখনো জনতাকে নিয়ন্ত্রন করে পলিটিসিয়ান তৈরি করা যায়।
আবার কখনো পলিটিসিয়ানদের দিয়ে জনতাকে ম্যানুপুলেট করা যায়।
জনতা এবং পলিটিসিয়ান একটি অপরটির পরিপুরক।
আর মিডিয়া, মোটা টাকা এবং স্পেশ্যাল ইন্টারেস্ট হল পাপেট মাস্টার।
এবং আমেরিকার পাপেট মাস্টারদের ভেতর সবচেয়ে আলোচিত হিসেবে কোখ ভাইদের নাম আসে সবার আগে।